বুধবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

একুশে ফেব্রুয়ারী ও শিরক বা পূজা।

একুশে ফেব্রুয়ারী ও শিরক বা পূজা। প্রথমেই আমি শিরক সম্পর্কে একটু ধারনা নিয়ে নেই। #শির্‌ক ইসলাম ধর্মে, শির্‌ক (আরবি: شرك širk) পৌত্তলিকতা বা বহুঈশ্বরবাদ চর্চা করার পাপকে বুঝায় অর্থাৎ শির্‌ক হল আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কাউকে উপাস্য হিসেবে সাব্যস্ত করা বা তার উপাসনা করা। শাব্দিকভাবে এর দ্বারা এক বা একাধিক কোন কিছুকে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব ও কর্তৃত্বের অংশীদার সাব্যস্ত করাকে বুঝায়। এটি তাওহিদের পরিপন্থী একটি বিষয়। ইসলামে শির্‌ক হল একটি অমার্জনীয় অপরাধ যদি না মৃত্যু নিকটবর্তী হবার পূর্বে আল্লাহ্‌র নিকট এই অপরাধের জন্যে ক্ষমা চেয়ে না নেয়া হয়। ইসলামের নির্ভরযোগ্য তথ্য অনুসারে, আল্লাহ্ তায়ালার কাছে ক্ষমা না চাইলেও মৃত্যুর পর নিজের বিচার অনুসারে তার ইবাদতকারীদের যে কোন ভুল ক্ষমা করতে পারেন, কিন্তু শির্‌কের অপরাধী দুনিয়াতে ক্ষমা না চাইলে কখনোই ক্ষমা করবেন না। আল্লাহ্ তায়ালা শির্কের বিপরীত তাওহিদের মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন এভাবে, বলঃ তিনিই আল্লাহ। একক/অদ্বিতীয়। আল্লাহ্ কারও মুখাপেক্ষী নন। তাঁর কোন সন্তান নেই এবং তিনিও কারও সন্তান নন, এবং তাঁর সমতুল্য কেহই নেই। সুরাতুল ইখলাস। #পূজা পূজা (সংস্কৃত: पूजा) হিন্দুদের পালনীয় একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান। হিন্দুধর্মতে, দেবতাগণ, বিশিষ্ট ব্যক্তি অথবা অতিথিদের পূজা করার রীতি প্রচলিত রয়েছে। স্থান ও কালভেদে বিভিন্ন প্রকার পূজানুষ্ঠান এই ধর্মে প্রচলিত। যথা, গৃহে বা মন্দিরে নিত্যপূজা, উৎসব উপলক্ষে বিশেষ পূজা অথবা যাত্রা বা কার্যারম্ভের পূর্বে কৃত পূজা ইত্যাদি।[১] পূজানুষ্ঠানের মূল আচারটি হল দেবতা ও ব্যক্তির আশীর্বাদ পাওয়ার জন্য তাঁদের উদ্দেশ্যে বিশেষ উপহার প্রদান। পূজা সাধারণত গৃহে বা মন্দিরে অনুষ্ঠিত হয়। পূজার বিভিন্ন প্রকারভেদও রয়েছে।[২] দুর্গাপূজা বা কালীপূজার মতো উৎসবগুলি প্রকৃতপক্ষে পূজাকেন্দ্রিক উৎসব। #একুশে_ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হল একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গসহ সমস্ত বাংলাভাষী অঞ্চলে পালিত একটি বিশেষ দিবস, যা ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দের ১৭ নভেম্বরে জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী [১] প্রতিবছর ২১শে ফেব্রুয়ারি বিশ্বব্যাপী পালন করা হয়। এটি শহীদ দিবস হিসাবেও পরিচিত। এ দিনটি বাঙালি জনগণের ভাষা আন্দোলনের মর্মন্তুদ ও গৌরবোজ্জ্বল স্মৃতিবিজড়িত একটি দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। ১৯৫২ সালে এইদিনে (৮ ফাল্গুন, ১৩৫৮, বৃহস্পতিবার) বাংলাকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ঢাকায় আন্দোলনরত ছাত্রদের ওপর পুলিশের গুলিবর্ষণে অনেক তরুণ ছাত্র শহীদ হন। যাঁদের মধ্যে রফিক, জব্বার, শফিউর, সালাম, বরকত উল্লেখযোগ্য এবং এই কারণে এ দিনটি শহীদ দিবস হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আসছে। ১৯৫২ সাল থেকে প্রতি বছর এ দিনটি জাতীয় শহিদ দিবস হিসেবে উদ্‌যাপিত হয়ে আসছে। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনায় ২১ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টা এক মিনিটে প্রথমে রাষ্ট্রপতি এবং পরে একাদিক্রমে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবৃন্দ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, শিক্ষকবৃন্দ, ঢাকাস্থ বিভিন্ন দূতাবাসের কর্মকর্তাবৃন্দ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন এবং সর্বস্তরের জনগণ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এসে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেন। এ সময় আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি গানের করুণ সুর বাজতে থাকে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর একুশে ফেব্রুয়ারি সরকারি ছুটির দিন হিসেবে ঘোষিত হয়। এদিন শহীদ দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে রেডিও, টেলিভিশন এবং সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। দেশের সংবাদপত্রগুলিও বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে। বাংলা একাডেমি ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে ঢাকায় একুশে বইমেলার আয়োজন করে। #সারসংক্ষেপ ৮ ফাল্গুন বা একুশে ফেব্রুয়ারী সম্পর্কে উপরে আলোচনা করা হয়েছে। আমাদের অধিকাংশ লোক আমরা দ্বিধাদন্দে থাকি যে এই যে একুশে ফেব্রুয়ারী পালিন এটা কি শিরক, পুজা বা বেদাত নাকি। আমি উপরে শিরক ও পূজার ব্যাক্ষা দিয়েছি, এখন আপনিই বলুন এটা কি কোন ভাবে শিরক বা পূজা হয় নাকি? আল্লাহ আমাদের জ্ঞ্যান দিয়েছেন বিবেচনা করার জন্য। এর জন্যই আমরা আশরাফুল মাখলুকাত। আমার মতে একুশে ফেব্রুয়ারী শিরক বা পূজা না। এটা বাংলা ভাষাভাষীদের একটা আবেগ ও ভালোবাসার জায়গা। পৃথিবীতে দ্বিতীয় আর এমন একটি জাতী নেই যারা ভাষার জন্য প্রান দিয়েছেন। এখন সেই শহীদদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশে তাদের জন্য মিনার স্থাপন (এখানে মিনারের ব্যাক্ষাও দেওয়া উচিৎ ছিলো) করে সেখানে ফুল দিলে সেটা কিভাবে শিরক হয়? আর ফুল দেওয়া মানেই কি পূজা। ফুল তো ভালোবাসার প্রতিক। অনেক সাহাবীগন তাদের স্ত্রীদের ফুল দিয়েছেন। প্রিয় নবী (সঃ) কে হিজরতের সময় ফুল ছিটিয়ে বরন করা হয়েছে। এখন অনেকে বলে যে শহীদ মিনার হচ্ছে কবর, কবরে ফুল দেওয়া শিরক, গোনাহ বা পূজা। হ্যা, কবরে ফুল দেওয়া গোনাহ। কিন্তু শহীদ মিনার কোন কবর না। যারা এটা ভাবছেন তারা ভুল ভাবছেন। এই যে আমি বাংলাভাষায় কথাগুলো লিখছি, আমি পারতাম না লিখতে যদি না তারা আন্দোলন করতো বা শহীদ। এই যে লিখতে পারছি তাদের উছিলায় এর জন্যেও কি তাদের জন্য ভালোবাসা প্রকাশ করতে পারবো না?

সোমবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

ওটা যে আমার ছায়া

অনেকদিন ধরেই একটি মাকড়শা তোমার ঘরের ঝুলবারান্দায় হাঁটতো- গভীর রাতে জোছনা-গোসল সেরে যখন স্বামীর সঙ্গে যুগলবন্দি ঘুমিয়ে পড়তে তখন সে জাল বুনতে শুরু করতো- মাঝে মাঝে ঘাড় উঁচিয়ে দেখতো তোমাকে, কখনো কাছে যাবার সাহস হয়নি। জাল বুনতে বুনতে... বুনতে... বুনতে... রাত ভোর হয়ে যেতো! রাতজাগা কান্ত মাকড়শা তখন নীল অপরাজিতার ঘ্রাণে ডুবসাঁতার দিতো তন্দ্রার ভেতরে। রোজ সকালে শলাঝাড়– দিয়ে সে জাল ঝেড়ে ফেলতে তুমি- মাকড়শা নিজেকে আবিষ্কার করতো নিচে সরু গলির পাশে- বেয়ে উঠতো আবার এক দুই তিন করে অনেকদিন... বড্ড উৎপাত... মহা যন্ত্রণা মনে হলো তোমার কাছে! এক জোছনাধোয়া মধ্যরাতে ধরা পড়লো সে আহা অসহায় মাকড়শা! ধূসর-বরণ মাকড়শা... বেদনায় নীল হয়ে যেতে যেতে তুমি বুঝেছিলে ঠিক, ওটা তোমার মধুর অতীত... ওটা যে আমার ছায়া...

রবিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

আধুনিক যুগে চিরন্তন সত্য কথা দিন শেষে টাকাই সব

আধুনিক যুগে চিরন্তন সত্য কথা দিন শেষে টাকাই সব, অনেক মানুষই বলেন টাকা দিয়ে সবকিছু কেনা যায় না, তবে পৃথিবীতে বেশিরভাগ মানুষের দুশ্চিন্তার কারণ হচ্ছে টাকা। একটা মানুষ দিন রাত এক করে দিতে পারে মাথার ঘাম পায়ে ফেটে পারে শুধুমাত্র অর্থ উপার্জনের জন্য, কেননা এটা দ্বারা নিজের মৌলিক চাহিদা সহ অন্য সব ধরনের ইচ্ছা আকাঙ্ক্ষা পূরণ করা সম্ভব, মানিব্যাগের ওজন যত বেশি হবে মনের মধ্যে চঞ্চলতা তত বেশি থাকে। যখন মানিব্যাগের ওজন হালকা হতে থাকে একজন যুবকের মাথায় ততই টেনশন জমা হতে শুরু করে, অর্থ এমন একটা জিনিস এটা যোগ্য এবং অযোগ্য দুই ধরনের মানুষের কাছেই থাকে কিন্তু মধ্যবর্তী মানুষ কখনোই চাহিদার মত অর্থ উপার্জন করতে পারে না। যদি এই সমাজ চিনতে হয় তাহলে খালি পকেটে এ শহরের রঙ্গমঞ্চে একদিন কাটালেই বোঝা যায় এখানে কত ধরনের ক্যারেক্টার কত ধরনের অভিনয়, পকেটে টাকা থাকলে সব কিছু যেমন সহজ মনে হয়, এটা অপরিচিত জায়গাতেও বেশ সাহস লাগে মনে হয় কোন সমস্যা হলে ফিরে আসা সম্ভব। মনে হয় দেশ-বিদেশ ঘুরে আসি, কাজের ফাঁকে বন্ধুদের সাথে তাহলে একটা সময় কাটাই, বিশেষ বিশেষ দিনে পরিবার প্রিয়জনদেরকে নিয়ে চমৎকার কিছু মুহূর্ত উপভোগ করা যায়, কিন্তু সত্যিকার অর্থে পরিবার বন্ধু বান্ধব কিংবা সমাজ সবাইকে চিনতে হলে খালি পকেটেই চেনা সম্ভব। কেননা অর্থ না থাকলে অপরিচিত জায়গা তো দূরের কথা নিজের পরিচিত মানুষরাই বিষাক্ত মনে হবে। অর্থের এক অদ্ভুত রকমের শক্তি রয়েছে, তার জন্য অন্যরকম একটা সম্মান বরাদ্দ থাকে। এবং অর্থহীন একজন মানুষের জন্য সব সময় অবহেলা কিংবা তুচ্ছ-তাচ্ছন্নতা বরাদ্দ থাকে। তাই নির্জিত এবং অসাধারণ এই কাগজের টুকরোটি একজন মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে।

মঙ্গলবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

ভ্যালেনটাইন ডে: ভালোবাসার উৎসব

প্রেম, ভালোবাসা, স্নেহের উৎসব ভ্যালেনটাইন ডে প্রতি বছরের মধ্যে বহুল প্রেমিক-প্রেমিকাদের মাঝে উৎসবপূর্ণ রকমে পালন করা হয়। এই উৎসবের মূল উদ্দেশ্য হলো ভালোবাসার আবিষ্কার ও সাংস্কৃতিক উন্নতি। সম্প্রতি এটি প্রবল কমার্শিয়ালাইজেশনের মুখে আসে, তবে এর সাহিত্যিক পেছনের সূত্রপাতের মূল বিষয়টি ছিল ভালোবাসা ও স্নেহের মূল্যায়ন। এই উৎসবটির আধিকারিক শুরু হলো শোষ্যপত্রিকা নির্মাতা সেন্ট ভ্যালেনটাইনের নামে। এর নিমিত্তে রোমান্টিক পরিবেশের মধ্যে ব্যক্তিগত মেসেজ প্রেরণের প্রথম প্রতীক হিসেবে এর কাজ করে। তবে, এর সত্যিক ইতিহাস প্রায় অজানা অবস্থায় থাকে। এই উৎসবের বৃহত্তম ইতিহাস বিভিন্ন সুপারস্টিশন, সাহিত্যিক গল্প, এবং সমাজের সাংস্কৃতিক প্রভাবের মধ্যে সনাক্ত হয়েছে। বাঙালি সমাজেও এই উৎসবের অভ্যন্তরীণ সাংস্কৃতিক প্রভাব অনেকটা প্রকাশ পায়। প্রতিবছর এই দিনটি বেশ উৎসবপূর্ণভাবে পালন করা হয়। প্রেমিক-প্রেমিকারা এই দিনটি ভালোবাসার আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়, এবং সাধারণত এদের মধ্যে উৎসবের আগে থেকেই পরিকল্পিত হয় বিশেষ অনুষ্ঠান ও উপহারের জন্য। বিভিন্ন ধরণের অনুষ্ঠানের সাথে, অনেকে ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে সেজে নিয়ে উঠেন কার্ড, ফুল, মিষ্টি, এবং সহজেই পাওয়া যায় এই উৎসবের সম্প্রতি সহজ হওয়া উপহারগুলি। বিশেষভাবে কোন সংগঠন অনুষ্ঠানে নিজের ব্যক্তিগত মূল্যায়নের সাথে এই প্রতীকটি নিয়ে এগিয়ে আসে। এই উৎসবের সাথে বিশেষ অর্থ যুক্ত হয় ভালোবাসার দিনের এবং এর অভিন্ন প্রকারের পালন করা হয় বাংলাদেশে। অনেকে এই দিনটি সামর্থ্যের সাথে মানের অভ্যন্তরীণ সাংস্কৃতিক মানের সাথে সম্পর্কিত মন্ত্রণা করেন। অন্যেরা ভালোবাসার উত্তরাধিকারী ব্যক্তিদের অভিবাদন করেন এবং এই সময়ে তাদের সাথে অভিবাদ মেটানোর প্রয়াস করেন। ভালোবাসার দিন আমাদের সবার জন্যে একটি মেধা এবং ভালোবাসার উপহার হিসেবে গণ্য হতে পারে। এটি সাধারণত কোন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির উত্সব প্রায় হলেও, এটি ভালোবাসার বিভিন্ন সূত্রগুলির জন্য একটি স্বাভাবিক অনুষ্ঠান হিসেবে মন্ত্রণা করা হয়। সাহিত্যিকভাবে, এই উৎসবের ইতিহাস আরো সুন্দর করে তুলে ধরা হয়েছে বিভিন্ন সাহিত্যিক গল্পে। বাংলা সাহিত্যে এই দিনটির উল্লেখ পাওয়া যায় অনেক কবিতা, গল্প, এবং উপন্যাসে। এই সাহিত্যিক প্রকল্পগুলি ভালোবাসার এবং মানুষের সম্পর্কের উপর একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করে। ভ্যালেনটাইন ডে বাংলাদেশের সমাজে একটি উপস্থিতির মধ্যে একটি সুন্দর ও অংশ হিসেবে গণ্য হয়। এটি ভালোবাসার জন্য একটি অবস্থানের সৃষ্টিকারী এবং সম্প্রতি বাংলাদেশের সমাজের মধ্যে গভীরভাবে প্রতিষ্ঠাত। এই উৎসবের আসরে একে অবশ্যই উৎসাহের সাথে মনান করা উচিত।

বৃহস্পতিবার, ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

সর্ব্বনাশি, আমি কি তোকে ভালোবাসি ?

ইদানিং তোমার কথাগুলো বদলে যাচ্ছে, সেই পরিচিত গন্ধে আমার আর ঘুম আসে না । লুকানো নেশার মত না পাওয়ার কষ্ট তোমাকে এখন কুরে কুরে খাচ্ছে, তোমার কবিতায় স্থান পেয়েছে অবসাদ, মৃত্যু আর প্রিয়ার সহাবস্থান, কোনদিন প্রেমের কবিতা তো তুমি লেখোই না । : ঠিক বলেছিস তুই, দেখছিস না আমার দরজায় পোঁতা আছে কালের শেষ খুঁটিটা - দৌড়ে পেরিয়ে গেলেই সব অতীত, ভবিষ্যতের স্বপ্ন শেষ । জানিস, এখন আমার একমাত্র সঙ্গী নৈ:শব্দ, আমার সাথে কথা বলে, কষ্ট পেলে আমাকে ভোলায়, বলে এবার তাহলে "একলা একলা পথ চলা"। আমি তো কোনদিন বন্ধুত্বের দাবী রাখিনি, শুধু রাত্রির কাছে চেয়েছিলাম - একটা সুন্দর ঘুম আর পরিযায়ী পাখিদের কাছে একটা রঙীন স্বপ্ন; তবু কেন উচ্ছাসের নদী শুধু একটানা বয়ে যায় দু-পাড়ের ছায়াছবি স্থির-নির্বাক হয়ে যায় ? আর আমি, এখনও ঘড়ির কাঁটার লেজ ধরে প্রাণহীন চর হয়ে পড়ে আছি তার অপেক্ষায়। আজ সকালের ডাকে একলা হেঁটে এলো - ভালোবাসার সীলমোহরে জড়ানো একটা খাম; ভিতরে পেলাম ফেলে আসা অভিমানের মোড়কে শুকিয়ে যাওয়া একটা লাল গোলাপ, হয়তো কোনদিন তোমার আগের লেখাগুলোর মতই সতেজ ছিল, রাতের পাহারাদারের মতই চিৎকার করে বলতো সব ঝুট্ হ্যায়, সব ঝুট্, মুখোশের আড়ালেই যত মিল ... আর কতদিন তুষার ঢাকা তুঁষের আগুন হয়ে জ্বলবে তোমার সেই কলঙ্কিনী বিরহিনী ব্যাথা ? বসেই থাকি, ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরির বুকে কান পেতে - একটা হঠাৎ বিস্ফোরণ যদি হয়ে ওঠে কবিতা । : আজকাল তুই বড্ডো অবুঝ হয়ে উঠেছিস - বুঝতে পারছিস না, এ হলো নেশা, শুধু নেশা, সর্বনাশা মারিজুয়ানার মতো নেশায় বুঁদ, ত্রিশটা শ্রাবনেও না মরে বেঁচে থাকা বিরহী হৃদয়ের ক্লান্তি, যদি একটা শান্তির ঘুম ... আজো অসমাপ্ত একটা ছবি, পাতাবিহীন গাছে লাল পলাশ, নগ্ন প্রেম, দাঁড়িয়ে আছে একঠায়, ক্যানভাসের পিছনে উঁকিমারা আকাশটা যেন জীবনের ডাকে উঠে যাওয়া মানুষটার একটা পোড়ানো হৃদয় । আর আমি, সিগারেটের ছাইয়ের মতো বসে আছি সেই পোড়া অবয়ব নিয়ে, দমকা হাওয়ায় ঝরে পরার অপেক্ষায় ... বুঝলাম হারিয়ে যাওয়া কোন কিছুই ফিরে আসে না শরীরের নিঃশ্বাসের মতো হারিয়ে যায় চিরতরে। আজ আমার কোন কিছুর জন্য অপেক্ষা নেই, সবই সয়, উচ্ছাসে ভরা প্রানোজ্জল তোমার লেখাগুলোর জন্যেও নয় । কে জানে বিকেলের কাছে ঝলসে যাওয়া দুপুরের কান্না তোমার ছোঁয়ায় কাগুজে নৌকায় ভেসে আসবে কিনা আমার কাছে ... : আজকাল শব্দের আকাশেও সূর্য অস্ত যায় - মাঝে মাঝে রাত বাড়লে চিন্তাগুলো আটকে থাকে দুটো দাঁড়ির মাঝে, হয়তো শব্দ খুঁজে বেড়ায় ভাবাবেগে । চোখের সামনে দোল খেতে খেতে চলে যায় বর্ণমালা মগজে কারফিউ, বাউলের একতাড়ায় কেবল দেঁহাতি সুর, আঙ্গুলের মেরদন্ডে উতরে যায় মহাকালের পথচলা প্রেমের কবিতা সেখানে কোমরের ডেনিম থেকে অনেক দুর। বিকেলের সূর্যরেখার বেস্ট স্ট্রোকগুলো যেখানে বনের ফাঁকে ফাঁকে হামাগুড়ি দিয়ে নেমে এসেছে, কিম্বা মোটা গাছের গুঁড়িতে আলপিন দিয়ে লেখাটা যেখানে এখনো "তোমারে বেসেছি ভালো“ বলছে, কিচিমিচি শব্দে যেখানে পাখিরা গাইতে চাইছে ভালোবাসার গান, মনের আলেয়ার আলোতে বরং সেখানেই না হয় বেঁধে নিস নিজেকে, জুতোর ফিতেবাঁধা রোদচশমার স্মৃতিতে ... আমি না হয় ততদিন ভালোবাসার সেলাইমেশিনে বুনে যাবো বন্ধুত্বের নকশিকাঁথা, এফোঁড়-ওফোঁড় করে ফুটিয়ে তুলবো সৃষ্টি-অবসাদ-মৃত্যু আর নিঃসঙ্গতা, ঢেকে ফেলবো প্রথম প্রেমের লাশটা আমার কবিতা তোমাকে দিয়ে ... আজকাল তোমার চিঠি না পেলে ভালো লাগে না, বিকেলের পড়ন্ত লালচা রোদে পিঠ দিয়ে ... না, কারোর জন্য কিছু বসে থাকে না, আমিও থাকি না, সময়-স্রোত-ইচ্ছা-স্বপ্ন, আমি না চাইলেও যায় চলে । এখন আমি আধবোজা চোখে বেশ দেখতে পাই তুমি আর তোমার বিরহ কে, একদম পাশাপাশি; সময়ে-অসময়ে বুকফাটা যন্ত্রনা অস্থির করে আমাকে, বলে - সর্ব্বনাশি, আমি কি তোকে ভালোবাসি ? : ঝিমিয়ে পড়া সময়টা যে বড্ডো বেমানান আমার কাছে, কখন যে মনের ফাঁক-ফোকরে তুই ঢুকে যাস্ আর গোলাপ হয়ে লুকিয়ে পড়িস মনের বাগানে, আমি হিসেব রাখতে পারি না বলপেন আর কাগজে। শুয়ে শুয়ে তাই ভাবি - সময় মানেই এগিয়ে চলা পাহাড় যেমন মিশে যায় নীলে দুই বাহু প্রসারিত করে, দুর্গম খাদ বেয়ে যেমন গড়িয়ে নামে উন্মত্ত ঝর্না রূপের অঝোর ধারায় আমার সবকিছু তছনচ করে; জানিস পাগলী, সেই ঝর্ণার বুকের মাঝে আছে একটা কষ্ট জমা পাথর, সময়ের সাথে একদিন রাশি রাশি বালিকণা হয়ে ভেঙে পড়বে তোর চোখের কোনে, তখন নাহয় ফেলে দিস ঠিকানা না রেখে । তোমার চিঠিগুলো হয়তো একদিন সমস্ত সৌরভ বিলিয়ে স্মৃতি হয়ে যাবে । কে জানে তোমার কথা ভেবে তার আগেই আমিই হয়তো শেয হয়ে যাব কোনদিন, সেদিন ঠাঁই নেব তোমার লেখায়, সাদা ক্যানভাসটা হয়ে উঠবে রঙিন ... একটাই অনুরোধ, শেষের সেদিন যেন কালি-কলমের এই সম্পর্কটা অটুট থাকে, ইতি টানলেই তো সব স্মৃতি বিস্মৃতি হয়ে যাবে । : জানিস, ইদানিং আমি বড্ডো স্বপ্ন দেখি ... একটাও স্বপ্ন সত্যি হবে না জেনেও আমি সত্য গোপন করে মগ্ন থাকি জীবনের গল্পে, তোর ছলনার মন-ভোলানো রূপে উন্মাদ হয়ে এই আমি - সারাটা জীবন ঘুঙুর পায়ে যাচ্ছি নেচে; চারিদিকে বিকটাকার নৈশব্দের নীল আগুন, রূপ-রস-বর্ণ-গন্ধ সব অদৃশ্য, স্বপ্নের মরুভুমিতে আত্ম অনুভুতির অর্থহীন মেঘ শুধু উড়ে চলেছে, আর আমি অন্ধকারে একা, উদ্দেশ্যহীন বিষন্ন ছায়াতে ... সম্বিত ফিরেই দেখি তোর পাশে আমারই মত একটা কে? বন্ধু ভেবে তোর প্রগলভতা - আপন মনে ভেসে চলেছিস নদী-পাহাড়-অরণ্য ভালোবাসার কথায়, হাঁসছিস কাঁদছিস, ওটাই তো আমি, তোর ছায়া, যাকে তুই ভালোবেসেছিস; তুই হয়তো তোর ভালোবাসাকে ভুলে যেতেই পারিস, কিন্তু তোর ছায়া, চেষ্টা করে দেখবি দুরে সরিয়ে দিতে পারিস কিনা? তখন না হয় আমি প্রেমের কবিতা লিখতে গিয়ে প্রেমহীন অন্ধকারে হাবুডুবু খেয়ে সাঁতরে খুঁজবো ডাঙা ... মনের অন্ত:পুরে আমার এখন বিষাদের নৃত্যনাট্য দ্রিমিতাক মাদলের ছন্দে শুধু অতীতের পটভুমি; তোমার ছোঁয়ায় যদি বদলে যায় এ জীবন, অনুভবে যদি ফিরে পাই সে অমরত্ব, তুমি তো অধরা নও, শুধু প্রেমের শিহরণ বাঘবন্দি নিয়মে বাঁধা মানবীয় এ শরীর একটিবার ছুঁয়ে যাবে, করে যাবে সমর্পন। কোথায় হারিয়ে গেছে সেই লেখাগুলো, হয়েছে অন্তর্ধান তাকে কি ডেকে নিয়ে গেছে আজ অন্য কোনো অভিমান ... :পাগলী, অরণ্যের মাদকতা - সে ফেলে আসা পথে, কুড়িয়ে নেওয়া যত ঝরে পড়া শব্দফল জমিয়ে রেখেছি যত্ন করে কলমের খাঁজে, যদি কখনো ভাসিয়ে দেয় তোর চোখের জলে .... আজ শহরের নির্জন রাস্তায় হাঁটছে আমার সব ভুল মনের অন্তর্বাস ছুঁয়ে আছে জমে থাকা যত জল, প্রতিটি অঙ্গে আজ শুধু অপেক্ষা -- দূরের বিলাসী হে মহিয়সী, আমি যে তার সুদুরের পিয়াসী। জানি সব শেষ হয়ে গেছে অথবা হয়নি শুরু কিছু, জীবনের নিরর্থকতা প্রেমহীন থেকে অর্থবহ হয় শুধু; তবু তহবিলে গচ্ছিত রাখি সব স্মৃতি, বিদগ্ধ জোনাক -- কালো রাত শেষ, আবার শুরু হবে নতুন প্রেমের সকাল । সর্ব্বনাশি, আমি কি তোকে ভালোবাসি ?

শুক্রবার, ২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

অথবা!!!

এখন রাত ৩ টা বেজে ০৭ মিনিট। যতই হয় রাত গভীর চারদিক থমথমে নিথর, শান্ত নীড় । একাকী র্নিঘুম রাত মিটিমিটি জোনাকীর সাথ, রাতদুপুরে যে যার মত সবাই নি:সঙ্গ চাঁদ তারাদের চলে রাতজুড়ে রঙ্গ । মাঝে মাঝে নিভে যায় চাঁদের উজ্জ্বল শিখা আকাশটা ঢেকে দেয় অবাঞ্চিত কুহেলিকা । রাতের গভীরতা জানান দেয় দেয়াল ঘড়ির শব্দটা নষ্ট কলের টিপ টিপ করে পানি পড়া বাড়িয়ে দেয় শঙ্কাটা । টিকটিক টিপটিপ শব্দগুলো যেন নি:শ্বাসের মতই উঠানামা করছে একাকিত্বের এই প্রহরে কেমন নি:সঙ্গতায় গলা শুকিয়ে আসছে । আঁধার যতই হোক না গভীর, যতই হই না ভয়ে অস্থির; তুমি আছ মনে, পাশে , আর ভাবনাতে বেশ কেটে যায় নিঝুম নির্ঘুম ঘুমের রাতে । বারান্দার গ্রীলে গিয়ে দাঁড়াই জোছনা ধরার প্রয়াসে বিফল হাত বাঁড়াই । তোমাকে এক মুঠো জোছনা দেব আজ পড়িয়ে দিব মাথায় তোমার, কেমন হবে এ সাজ ? অথবা!!!!!! চাঁদের নিচে ভেসে বেড়ানো সাদা মেঘের এক খন্ড শুভ্রতা তোমার হাতে দিব, নিবে কি? স্বপ্নটা করো না লন্ডভন্ড!! অথবা!!!!! আকাশের নীহারিকা, কয়েকটি উজ্জ্বল তারা তোমার খোপায় ফুলের মালা বানিয়ে দেব, দাওনা একটু সাড়া । সবই অর্থহীন স্বপ্ন, আঁধারের পাতাঝরার মতই সঙ্গী শুধু নীরবতা, কথা কয়ে যাই তার সাথে কতই !! ভুলে গেছ তুমি, দিয়েছ শুধুই অবসাদ জীবন জুড়ে শুধুই যেন এক বিষাদ মত দীর্ঘশ্বাস । ধীরে ধীরে প্রভাতের আলো জ্বলে রাতের যবনিকায় কাতর ক্রন্দন, সকল আশার কবর, ছুঁই যেন বারবার আলেয়ার শিখায় ।