বুধবার, ৪ নভেম্বর, ২০২০

ধারাবাহিক স্বপ্ন , পর্ব - দুই (২)

 


গল্প ঃ #ধারাবাহিক_স্বপ্ন

পর্ব - দুই (২)

( প্রেতাত্মার লেখা গল্প - Written by A R Shipon ) 

রাঙামাটি যাবো কি যাবো না ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরেছিলাম। গুম ভাংঙে দুপুর ১২ টার কিছুক্ষণ পর। ফ্রেস হিয়ে নিচে যাই। টং দোকানের এককোনায় বসে চা সাথে একটা বেনসন সুইচ আমার প্রতিদিনের নাস্তা, সারাদিনের এনার্জি। চা খাওয়া শেষে দোকানদার মামা জানিয়ে দেয় যে দোকানে আমার ৫০৯ টাকা বাকি পরে গেছে। দুইদিন পর দিয়ে দিবো বলে ফিরে আসি ফ্ল্যাটে। 

অনেকদিন হয় বেকার বসে আছি। হাত খরচ চালায় বন্ধুরা৷ যে বাসাটাতে থাকি সেটাও এক বন্ধুর। কিছু একটা করা উচিৎ। কিন্তু এই বিস্ফোরিত মন নিয়ে কি এখন কোন কাজে মন দেওয়া সম্ভব???  কিন্তু টাকারও তো বড্ড প্রয়োজন। 

টাকার কথা মনে আসতেই মনে পরলো শিলার ইভেন্ট এর কথা। ইভেন্ট এর কাজটা করলে তো ভালো অংকের একটা টাকা পাওয়া যাবে। শিলার কাছ থেকে তাহলে আপাতত কিছু টাকা ধার নিয়ে নেই। সেই মত শিলাকে ফোন দেওয়া। 

হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে শিলা বলে উঠলো "মামা কিছু ভাবছেন? মানে কিভাবে, কোন প্ল্যানে ইভেন্ট টা করবেন? অবশ্যই কিন্তু ভৌতিক হতে হবে। মনে আছে, চিটাগং এ যে ইভেন্ট টা করেছিলাম"। আমি প্রতুত্তরে বললাম " তুমি লেকে আসো। প্ল্যান নিয়ে আলোচনা করবো। আর ক্লায়েন্ট কি কিছু এডভ্যানস করছে?"।  শিলা আমাকে লেকে আসতে বললো, ওর আসতে ১০ মিনিট লাগবে।

শিলার ১০ মিনিট সম্পর্কে কি আপনাদের কোন ধারনা আছে?? আচ্ছা আমিই বলে দিচ্ছি। শিলা প্রথমে ১৫ মিনিটে সাওয়ার নিবে, তারপর ৪৫ মিনিট মুখে আটা ময়দা মাখবে। এরপর রিক্সায় উঠবে। ধরে নেওয়া যায় যে শিলার ১০ মিনিট মানে ১ঃ৩০ মিনিট এর সমান। যদিও পড়ির চাইতে ভালো। পড়ি বাইরে বের হতে হলে আগের দিন থেকে সাজুগুজু শুরু করে।

আমি সিদ্ধান্ত নিলাম যে এই ১ঃ৩০ মিনিটে আমি আমার রান্না শেষ করে ফেলতে পারো। আমি রান্নায় খুব একটা বাজে না। ছেলে হলেও রান্নার হাতটা ভালো। মাঝে মাঝে ভয় হয়, কবে জেনো হাবু ভাই এসে বলে পুট ইউর হ্যান্ড....... মানে তোমার রান্নার হাতটা একটু দেখবো। হাহাহাহাহা, একটু মজা করলাম আর কি। 

টিশার্ট, প্যান্ট চেঞ্জ করে আমি বাসা থেকে বের হলাম। ৮ তালা থেকে লিফটে নামছিলাম। আমি একা। হটাৎ লিফট বন্ধ হয়ে গেল। স্বাভাবিক, হয়তো বিদ্যুৎ চলে গেছে। 

লিফটের ভেতরে কেমন জেনো একটা গুমট পরিবেশ মনে হল, সু সু একটা বিশ্রি  শব্দ আমার কান ঝালাপালা করে দিচ্ছে। অন্ধকার সব সময় আমার প্রিয় হলেও কেনো জানি এখন আমার অন্ধকার ভিষণ ভয় লাগছে। আমি পকেট হাত দিয়ে মোবাইল বের করলাম লাইট জ্বালানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু মোবাইল থেকে সামান্য পরিমান আলোও আসছে না। আমি জোরে চিৎকার দেওয়ার চেষ্টা করেও বৃথা হলাম। এক মিটারের বাইরেও আমার চিৎকারের আওয়াজ গেছে কিনা সন্দেহ। ঘাম ঝরছে। আমি বসে পরলাম। লিফটে দেয়াল ঘেষে। চোখ বন্ধ করতে যাবো আর এই সময়ে খেয়াল করলাম আমার পেছনে হালকা আলো। আমি সেখান দ্রুত সরে গিয়ে তাকিয়ে হতবাক হয়ে তাকিয়ে দেখলাম।

লিফটের কাচের দেওয়ালে, যেখানে আয়নার মত। সেখানে আবছা আলোয় একটা মেয়ের পেছনের দিকের অংশ দেখা যাচ্ছে। চুল গুলো হাওয়ায় দুলছে। মেয়েটা ধিরে ধিরে সমুদ্রের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমি নির্বাক। এই মেয়েটা তো সেই মেয়ে যাকে গতকাল আমি স্বপ্নে দেখেছিলাম। ঐযে সাগরপাড়ে যে ভাসছিলো। আমি পারে নিয়ে আসলাম। মুখ দেখার সময় স্বপ্ন ভেংঙে গেলো। আজও তো মুখ দেখতে পাচ্ছি না। কিন্তু মেয়েটা কে? কি বোঝাতে চাচ্ছে? আমি কি স্বপ্ন দেখছি। মাথা ঘুরে জ্ঞ্যান হারিয়ে ফেললাম।

জ্ঞ্যান ফেরার পর নিজেকে আবিস্কার করলাম নিচে দারোয়ান এর রুমে। আমি নাকি জ্ঞ্যান হারিয়ে পরেছিলাম লিফটে। জিজ্ঞেস করে তাদের কাছ থেকে জানতে পারলাম যে বিদ্যুৎ যায়নি, লিফট বন্ধ হয়নি। তাহলে কি ঘটলো আমার সাথে?? এটাও কি আমার #ধারাবাহিক_স্বপ্নের একটা পর্ব স্বপ্ন ছিলো? স্বপ্ন কি করে এতো ভয়ংকর হতে পারে??

 প্রশ্নের উত্তর খোজার জন্য যথেষ্ট সময় তখন আমার হাতে ছিলো না। শিলা বারবার ফোন দিয়েই যাচ্ছিলো। 

শিলাঃ মামা কোথায় আপনি? আজ কি আপনি আটা ময়দা মাখা শুরু করলেন নাকি যে এতো দেরি হচ্ছে?

আমিঃ সরি। একটু লেট হয়ে গেলো। আমি এখনিই রিক্সায় উঠছি। তুমি ফুসকা অর্ডার দিয়ে খেতে থাকো। 

কলাবাগান থেকে রিক্সা নিয়ে ধানমন্ডি ৮ ব্রিজ পার হয়ে রবিন্দ্র সরবেরর কাসেম ভাই এর ফুসকার দোকানে শিলা। 

সামনে গিয়ে দেখি ৩ প্লেট ফুসকা শেষ। আমি গিয়ে বসলাম তখন ৪র্থ প্লেটের সর্বশেষ ফুসকাটি মুখে দিচ্ছে।

শিলাঃ এমন মনমরা, ফ্যাকাসে লাগছে কেনো??

আমিঃ কিছুনা, ক্ষুদা লেগেছে। 

শিলাঃ ফুসকা খান।  সকালেও কিছু খান নাই জানি।

আমিঃ নাহ, চা আর একটা বেনসন সুইচ দিতে বলো।

শিলার সাথে ইভেন্ট এর ব্যাপারে কথা শুরু হলো। তিলোত্তমা তৃতীয়া নামে এক সুন্দরী মেয়ে ইভেন্টের কাজ দিয়েছে। সাথে ১৫ লাখ টাকার একটা চেক। খুবই ছোট করে এই ইভেন্টে খুব হলে ১৫/২০ জন গেস্ট থাকবে। তিলোত্তমা তৃতীয়া মেয়েটার বিয়ে। 

শিলাঃ মামা এখন ইভেন্ট প্ল্যান বলেন।

আমিঃ খুবই সাধারণ প্ল্যান। যতটুকু জানি রিসোর্ট এর চারিদিকে পানি। রাংঙামাটি থেকে ট্রলারে বন্ধুকভাংঙা যেতে হবে। সেখানে একটা টিলার উপর রিসোর্ট। আসে পাসে সব পাহাড়ি, বিদ্যুৎ নেই, সোলার আর জেনারেটর আছে। গেস্টদের রাতে নিয়ে আসবো রিসোর্টে, পুরো রিসোর্ট টাকে ভূতের বাংলোর মত সাজাবো। 

শিলাঃ আগের বারের মত কি একটা গেট করবো?? ভূতের হা করা মুখ দিয়ে ঢুকবে।

আমিঃ নাহ। তোমার ইভেন্ট এর বাজেট খুব কম। আমরা গেট সাজাবো বিভিন্ন ধরনের পুতুল আর মানুষের কংকাল, মুন্ডু দিয়ে। গেস্ট পুতুলের সামনে গেলে পুতুল গুলো থেকে একটা ভয়ার্ত কান্নার শব্দ আসবে। ভয়ে পেছন গেলেই পা পরবে হাড়গোড় এর উপর। তারপর কংকাল দেখে অনেকেই মূর্ছা যাবে।

শিলাঃ ঐযে পুতুল জংগলটার মত? যেখানে অনেক পুতুল গাছে গাছে ঝোলানা আছে। যেগুলোতে কিনা বিভিন্ন মানুশের আত্তা বাস করে।

আমিঃ অনেকটা সেরকম। সেই সাথে একটা মেয়ে থাকবে। সেই মেয়েই হচ্ছে ইভেন্টের মূল আকর্ষন। আমরা লেজারে কাজগুলো করবো। হৃদয় এই বিষয়ে ভালো বোঝে।

মেয়েটার লেজার ছায়ার মত হবে। আমরা আমাদের সব প্ল্যানের কথা গেস্টদের বললেও এই প্ল্যান কাউকে বলবো না। সবার রুম এর আশে পাশে সহ বিভিন্ন জায়গায় ঘুরবে মেয়েটি। সবার মধ্যে ভয় বিরাজ করবে। আমদের কাছে বললে আমরা বলবো আমরা জানিনা। বলবো এইখানে একটা মেয়ের অতৃপ্ত আত্তা আছে। সেই আত্তা ঘোড়াঘুড়ি করছে। 

শিলাঃ ফিরে যেতে চাইলে?

আমিঃ আমরা গেস্টদের আনতে যাবো না। ঐখানে লোক ঠিক করা থাকবে তারা আনবে। ফিরে যেতে চাইলে বলবো এরা পিশাচ এরা আমাদের যেতে দিবে না। মুক্তির উপায় হিসেবে বলবো একই বিয়ের মঞ্চে তিলোত্তমা তৃতীয়ার বিয়ের সাথে সাথে ঐ অতৃপ্ত আত্তার বিয়েও দিতে হবে। তখন আরো প্ল্যান বের করে ফেলবো। এখন আমার কিছু টাকা প্রয়োজন, টাকা দাও।

শিলা আমার হাত ৫০০০০ টাকা তুলে দেয় দেয়। তারপর ওর জোরাজোরিতে জিগাতলা গিয়ে কাচ্চি খেয়ে বাসায় ফিরি৷ সাথে কিছু ঘুমের ঔষধ নেই। একটা গভীর ঘুমের বড্ড প্রয়োজন। যে ঘুমে #ধারাবাহিক_স্বপ্ন গুলো এসে আমাকে ডিস্টার্ব করবে না। যে ঘুমে মোহিনীর স্মৃতি গুলো আমাকে মাঝ রাতে কাদিয়ে তুলবে না। অনেক অনেক অনেক গভীর একটা ঘুমের প্রয়োজন। 

চলবে....................

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Thank you for your participation .