বুধবার, ৪ নভেম্বর, ২০২০

ধারাবাহিক স্বপ্ন, পর্ব - তিন (৩)

 

গল্প ঃ #ধারাবাহিক_স্বপ্ন

পর্ব - তিন (৩)

( প্রেতাত্মার লেখা গল্প - Written by A R Shipon ) 

সামান্য কিছু শপিং করে রাতে বাসায় ফিরি। দিনে লিফটে যে ঘটনা ঘটছে সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি চাই না, তাই সিঁড়ি বেয়ে উপরর উঠি। ওমা! ৮ তলা।

দুপুরে রান্না করা ছিলো, তাই রাতের রান্নার প্যারা নেই। চাবি দিয়ে দরজা খুলে দেখি আমার রুমে লাইট জ্বলছে। কিছুটা ভয় লাগছে। স্বভাবতই কিছু অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটে চলছে আমার সাথে। ভয় পাবারই কথা। দেখা গেলো রুমে ঢুকে দেখলাম সেই মেয়ে সাদা শাড়ি পরে মাথা ঘোমটা দিয়ে ঢেকে আমার বিছানার উপর বসে আছে। ঘোমটা খুলতেই সে কি বিভৎস চাহুনি। 

আমার ভয় কে কিক মেরে দিয়ে রুম থেকে বেরুলো জয়। আমি ছাড়াও আমার রুমের চাবি জয় আর হৃদয়ের কাছে আছে। ওরা মাঝে মাঝেই আসে।

জয় প্লেট নিয়ে বের হলো। রাত হয়ে গেছে বলে খাওয়া সেরে নিয়েছে। আজ রাত ও এখানেই থাকবে। 

জয় থাকা মানে আজ আর আমার ঘুম হবে না। সারা রাত প্যাচাল, মেয়েদের সাথে টাংকি মারা, এইসব আর কি। ও আমাকে নিয়ে মেয়েদের সাথে মজা করে, এখন আমি যদি ঔষধ খেয়ে চিতকাত হতে পরে থাকি তাহলে হয়তো খুব একটা ভালো হবে না। 

জয়কে জিজ্ঞেস করলাম যে হটাৎ কি মনে করে? উত্তরে বলল, স্ক্রিপ্ট নিয়ে আলোচনা, কাস্টিং, কস্টিউম, সেট, প্রপস এইসব নিয়ে আলোচনা। আমি ওর কাছ থেকে স্ক্রিপ্ট নিয়ে বারান্দায় এলাম। আর ওকে বললাম এক মফ কফি বানিয়ে আনতে। কথামত ও কফি বানিয়ে আনতে গেলো আর আমি বারান্দায় স্ক্রিপ্ট নিয়ে বসলাম। 

সময় নিয়ে মনোযোগ দিয়ে স্ক্রিপ্ট টা পড়লাম৷ স্ক্রিপ্টের গল্পটা এমন -

চারু বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষে পড়ে। খুব ভালো ছাত্রী, সেই সাথে দেখতে অপসারী। বন্ধুদের সাথে সে খুব মিশুক ও বিনয়ী। ভার্সিটিতে বন্ধু সার্কেলের অনেক ছেলেই চারুকে পছন্দ করে, প্রেম প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু চারু কারোর প্রেম প্রস্তাবেই সারা দেইনি। তবে চারু মনে মনে জোবায়েরকে কিছুটা পছন্দ করে আবার কিছুটা ভালো লাগাও আছে।

সেকেন্ড ইয়ারের ক্লাস শেষে চারু সবার পর বের হচ্ছে ঠিল সেই সময় শিবু চারুর সামনে এসে দাড়ায়। হুটু গেড়ে বসে চারুকে প্রেম নিবেদন করে। চারু সরাসরি শিবুকে না করে দেয়। চারু শিবুর প্রেম প্রস্তাবকে ফিরিয়ে দেয়, কিন্তু সে শিবুর ভালোবাসাকে অবমূল্যায়ন করে না। ইন্যদিকে চারুর বন্ধুরা শিবুকে নানান ভাবে হেয় করে। শিবু রাংগামাটির এক পাহাড়ি ছেলে। সেখান থেকে এই ঢাকায় এসে পড়ালেখা করছে। চারু শিবুকে জীবনসঙ্গী হিসেবে গ্রহন না করতে পারলেও বন্ধুত্বের প্রস্তাব দেয়। ধিরে ধিরে চারুর ফ্রেন্ড সার্কেলের সকলের সাথে শিবুর বন্ধুত্ব হয়। কিন্তু চারুর সাথে শিবুর বন্ধুত্ব মেনে নিতে কষ্ট হয় জোবায়েরের। একদিন সামান্য কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে জোবায়ের শিবুর গায়ে হাত তোলে। 

চারু জোবায়েরকে ধিরে ধিরে ভালোবেসে ফেলে কিন্তু শিবুর গায়ে হাত তোলা চারু পছন্দ করেনি। কিছুদিন চারু জোবায়েরের সাথে কথা বলেনি। একদিন জোবায়ের শিবুকে চারুর সামনে এনে শিবুর কাচ্ছে ক্ষমা চায়, শিবুকে ভালো বন্ধু হিসেবে মেনে নেয়।

চারু তার বান্ধবীদের জানায় যে সে জোবায়েরকে ভালবাসে। জোবায়ের এর জন্মদিনে সে তার ভালবাসার কথা জানাবে। এইতো দিন পাঁচেক পরেই জোবায়েরর জন্মদিন। 

পরেরদিন শিবু এসে বন্ধুদের আড্ডায় সকলে অনুরোধ করে তার গ্রামে যেতে, মানে রাঙামাটি। তাদের খুব বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান কঠিন চিবর্ধন এর নিমন্ত্রণ জানায়। বন্ধুরা সবাই রাজি হয়ে যায়। পাহাড়ের উপর এতোবড় আয়োজন সামনে দেখা কেউ মিস করতে চায় কি? জোবায়ের তার জন্মদিন সেখানে সেলিব্রেট করার প্ল্যান করে। আর চারু সেখানে পূর্নিমার রাতে জোবায়েরকে তার ভালবাসার কথা জানাবে।

শিবু সেখানে একটি রিসোর্ট ঠিক করে থাকার জন্য। রিসোর্ট এর নাম #স্বপ্ন। 

সবাই মিলে রাঙামাটি যায়। সেখান থেকে ট্রলারে বন্দুকভাঙা, তারপর শিবুর বাড়িতে দেখা করে রিসোর্টে। রাঙামাটি শহরের পর থেকে সব জায়গায় যেতে নৌকা বা ট্রলার ব্যাবহার করতে হয়। 

রিসোর্টে ভালোই আনন্দ উল্লাসে মেতে ছিল। কঠিন চিবর্ধন অনুষ্ঠান ভালই লাগে তাদের কাছে। কাপ্তাই লেক থেকে শত শত ফানুস উড়ানোর আনন্দই অন্যরকম।  পরের দিন রাত ১২ টার পর সবাই জোবায়ের রুমে এসে কেক কেট তার বার্থডে সেলিবেট করে যার যার রুমে ফিরে যায়। সকালে উঠে সারাদিন শুভলং সহ কয়েকটি ঝর্না দেখবে, রাতে চারু জোবায়েরকে তার ভালোবাসার কথা জানাবে এবং পরের দিন সকালে সবাই চলে যাবে। 

ভোরের কিছু আগে চারুর দুই জন বন্ধু চিৎকার দিয়ে উঠে। সবাই মিলে তাদের কাছে যায়। গিয়ে জানতে পারে কালো একটা ছায়া নাকি তাদের পা ধরে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলো। এরপর এক এক করে চারু আর জোবায়ের ছাড়া সকল বন্ধুই বলে যে এই কদিনে তাদের সাথে এমন অনেক ঘটনাই ঘটেছে। এবং প্রত্যেকবার তাদের হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। 

সকালে উঠে সবাই চলে যেতে চায়। কিন্তু জোবায়ের আর চারুর রিকোয়েস্ট এর জন্য সবাই আর একদিন থাকার স্বিদ্ধান্ত নেয়। সারাদিন ঘুড়ে বেড়ায়। রাত ১১.৩০ মিনিট। বন্ধুরা সবাই জোবায়ের আর চারুকে একলা রেখে চলে যায়। জোসনা রাতে চারু তার ভালোবাসার কথা জানাবে। কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ড করবে দুজনে। বাকি সবাই যার যার রুমে গিয়ে ঘুম দেয়। 

পরের দিন সকালে বন্ধুরা এসে দেখে জোবায়ের আর চারুর লাশ যার যার রুমে পড়ে আছে। শরীরে বিভিন্ন অংশ থেকে মাংশ নেই, দেহে রক্তের ছিটেফোটাও নেই। নখের আচরের দাগ। পুলিশি মামলার ভয়ে বন্ধুরা কাউকে না জানিয়ে লাশগুল রিসোর্টের পেছনে পুতে রেখে সেখান থেকে দ্রুত পালিয়ে আসে ঢাকায়। """

স্ক্রিপ্টের গল্প এখানেই শেষ। তবে আমার কিছুটা ধোয়াশা মনে হচ্ছে। গল্পটা অসম্পূর্ণ। অনেকটা আমার #ধারাবাহিক_স্বপ্ন এর মত। আমি বারান্দা থেকে রুমে এসে দেখি জয় ঘুমিয়ে পরেছে। আমার আর ঘুম টানছে না। অনেকদিন হয় রোদেলার সাথে দেখা করি না, অনেকদিন ছাদে যাওয়া হয় না। ড্রয়ার থেকে একটা শিশি বের করে, সম্পূর্ণ শেষ করে সিগারেটের প্যাকেট আর ফায়ার বক্স নিয়ে ছাদে যাই। এক কোনায় বসে সিগারেট জ্বালিয়ে তার সাথে সঙ্গম করতে করতে চাঁদ দেখি। অসম্ভব সুন্দর সেই চাঁদ। আচ্ছা চাঁদ বেশি সুন্দর নাকি রোদেলা, রোদেলা নাকি মোহিনী???

সত্যিকারের সুন্দর তো আমার ভালোবাসা। সেই ভালোবাসা যখন শূনের মাঝে তখন চাঁদ সুন্দর, যখন কল্পনার রাজ্য কলংকপুরে ভালবাসা খুজি তখন রোদেলা অপস্বরী, আর যখন কল্পনা থেকে বাস্তবতায় ফিরে আসি তখন মোহিনী। তবে কল্পনায় রোদেলা ধোকা দেয় না, যেমনটা বাস্তবে মোহিনী দেয়৷ আজ রোদেলা আসলে তাকে জিজ্ঞেস করবো কেন মোহিনী আমার সাথে এমন করল। তবে রোদেলা কি আসবে??

চলবে....................

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Thank you for your participation .