রবিবার, ১ নভেম্বর, ২০২০


 গল্প ঃ #ধারাবাহিক_স্বপ্ন

পর্ব - এক (১)

( প্রেতাত্মার লেখা গল্প - Written by A R Shipon )


হুট করেই এই ভৌতিক মধ্যরাতে ঘুম ভেংগে গেলো আমার। ভৌতিক মধ্যরাত???

হুম। ভৌতিক মধ্যরাত। গতকাল সারাদিন বৃষ্টি হয়েছে। গৌধুলী সন্ধ্যা পেরিয়ে রাতেও বৃষ্টি। এখন বৃষ্টি নেই, মেঘের গর্জন আছে, আছে নিস্তব্ধতা। সব মিলিয়ে ভৌতিক মধ্যরাত। ভৌতিক মধ্যরাতের নিস্তব্ধতা ভেংগে দিয়ে ঘড়ির কাটার ঠুক ঠুক ঠুক শব্দ আমাকে তার দিকে মনোযোগ নিয়ে নেয়। অন্ধকার ঘরে ঘড়ির কাটার ঠুক ঠুক ঠুক শব্দ আমার বেশ ভালো লাগে। এর আগেও অনেকবার মুগ্ধ হয়ে মাঝরাতে ঘড়ির কাটার শব্দ শুনেছি। ঘড়ির কাটার প্রতিটি শব্দ আমাকে মনে করিয়ে দেয় যে আমার সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে। ধরুন আমাদের জীবন শতকোটি ফ্রেমের টাইমলাইনে বন্দি। ঘড়ির একেকটা কাটা শব্দ করে এগুচ্ছে আর আমাদের জীবন থেকে এক একটি ফ্রেম শেষ হয়ে যাচ্ছে। একদিন সব ফ্রেম শেষ হয়ে যাবে। শেষ হয়ে যাবে জীবনের রংধনুর গল্প। কতশত গল্পই না আমাদের জীবনে। কত রকম ভালোবাসায় ঘিরে ব্যাস্ত এই জীবন।

ভালোবাসার কথা উঠতেই মনে পরে গেলো স্বপ্নের কথা। ঘুম ভেংগে যাওয়ার আগে স্বপ্ন দেখছিলাম।

জায়গাটা খুব সম্ভবত চট্টগ্রাম এর পতেংগা সি বিচে।

সামনে বিশাল সমুদ্র, আমি ঠায় দাড়িয়ে সমদ্রের ঢেউ গুনছি। পেছন থেকে একটি কোমল হাতের স্পর্শ অনুভব করি। পেছন ফিরে তাকাতেই এক মোহনীয় হাসি। একরাশ মুগ্ধতা রেখে গেলো হাসিখানা।

নীল ড্রেসের খুব সাধারণ সাজুগুজুতে ভয়ংকর সুন্দরী লাগছিলো তাকে। সে দুপা এগিয়ে আমার পাশে দাড়ায়। শক্ত করে আমার হাত জরিয়ে ধরে। দুজন মিলে আবার নতুন করে ঢেউ গোনা শুরু করি। তারপর হটাৎ এক ভয়ংকর ঝড় তেড়ে আসে। আমাদের উড়িয়ে নিয়ে যাবে এমন অবস্থা। আমি তাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরি। যেই আসুক না কেনো, কেউ তাকে আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিতে পারবে না কোনদিন।

ঝড় থেকে একটা কালো হাত এগিয়ে আসে। আগত্বক একটা কন্ঠস্বর ভেষে আসেঃ মোহিনীকে নিতে এসেছি, আমি তাকে নিয়ে যাবে। আমিও চিৎকার করে বলিঃ কোনদিনও সম্ভব নয়। আমি আমার মোহিনীকে কক্ষনই ছেড়ে দিবো না।।। আমি মোহিনীকে আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরি। ঝড়ো বাতাস বাড়তে থাকে, আমি আগলে রাখি মোহিনীকে। একসময় পাগল ঝড় হার মানে। সে চলে যায়। আমি শক্ত করে জরিয়ে ধরে আছি মোহিনীকে।

সব স্বাভাবিক হয়ে যায়। মোহিনী আমাকে দিকে তাকিয়ে আবার সেই মুগ্ধ করা হাসি। আমি বিমোহিত হই আবার। আবার বুকে জরিয়ে ধরি। কিছুক্ষন পর খেয়াল করি মোহিনী নেই। আমার শক্ত বাধন ছিন্ন করে মোহিনী পালিয়ে গেছে। কিন্তু কেনো? আমি তো তাকে ভালোবেসে শক্ত করে জরিয়ে ধরে রাখতে চেয়েছিলাম।

খুব কষ্ট হচ্ছিলো। এতোকষ্ট যে স্বপ্নেও সেটা সহ্য ক্ষমতার বাইরে চলে যায় আর সেই সাথে ভেংগে যায় আমার ঘুম। রেখে যায় এমন সব অসমাপ্ত #ধারাবাহিক_স্বপ্ন।

ভালোবাসা বা ভালোবাসি, কেনো ভালোবাসি???

কবিতা আওরাতে থাকি নিজের অজান্তে,


শুধু ভালোবাসি তাকে, আর শুধু সেই কারণে, কারণ যারা ভালবাসে তারা জানে না তারা কি ভালবাসে

অথবা কেন ভালবাসে, অথবা ভালবাসা কি।

ভালোবাসা হল সরলতা,

আর গোটা সরলতা ভাবনা চিন্তা করা নয়....

আবার ঘুমানোর বৃথা চেষ্টা করি। কিন্তু বুঝে গেছি যে আজ ওর ঘুম সম্ভব নয়। ঘুম আজকের মত মোহিনীকে অনুসরন করে ছায়ার মত পালিয়ে গেছে। আমি মোবাইলটা হাতে নিয়ে অন্ধকারের সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করে ফেসবুকে মনোযোগ দেই। ম্যাসেঞ্জার খালি পরে আছে। আগের মত এখন আর ম্যাসেঞ্জারে কেউ ডিস্টার্ব করার নেই। তাই আবার ফেসবুকের হোমপেজে গিয়ে স্ক্রলের পর স্ক্রল করে যাচ্ছিলাম। পড়ির একটা পোস্টে লাইক দেই। তার কিছুক্ষনই পরই পরি "দাদা" লিখে এসএমএস দেয়। তারপর ওর সাথে কথা চলে।

তুষার নাকি পড়িকে জানিয়েছে এখানে তুষার যে রিসোর্টে থাকে সেই রিসোর্টে ভূত আছে। তাই পরি বায়না ধরছে রিসোর্টে যেতে। আমি পরিকে স্বান্তনা দিয়েছি যে আমি যাবো। বিস্তারিত আরো জানতে বলেছি তুষারের কাছ থেকে। যদিও আমি জানি। এগুলো নিছক ফাইজলামি ছাড়া অন্য কিছু নয়। তবুও এই ডিপ্রেশন এর সময়টুকু অন্যকিছু নিয়ে মেতে থাকলে হয়তো খারাপ কাটবে না।

পড়ির সাথে কথা বলার সময়ই নক দেয় রনি। হটাৎ আজ এদের আমার কথা মনে পরেছে হয়তো। সচরাচর আমি নক না দিলে এরা নক দেয় না।

রনিঃ দাদা কি খবর তোমার???

আমিঃ এইতো, ভালোরে। তোর কি খবর?

রনিঃ এক্সাইটিং একটা নিউজ আছে দাদা।

আমিঃ কি সেটা???

রনিঃ ফোনে বলবো। আমি ফোন দিচ্ছি ম্যাসেঞ্জারে তোমাকে দাদা।

যেই কথা সেই কাজ। ম্যাসেঞ্জারর কল দেয় রনি। রনির সাথে আমার ১২ মিনিটের কথা হয়। এক্সাইটিং নিউজ হচ্ছে রনি একটা গল্প লেখা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে এবং বিজয়ী হয়। পুরস্কার হিসেবে ৩দিনের জন্য সম্পূর্ন খাওয়া দাওয়া সহ রিসোর্ট ফ্রি। যতখুশি ততজন। রনি চায় আমাদের গ্রুপের সবাইকে নিয়ে সেখানে যেতে। অনেকদিন আমাদের কারোর সাথে কারো দেখা হয় না।

আমি ভাবলাম বিষয়টি মন্দ নয়। তুষার ও ভূত গবেষণার জন্য যেতে বলেছে। সুতরাং খারাপ হবে না।

ম্যাসেঞ্জারে ঢুকে দেখি শিলার এসএমএস। "মামা একটা কাজ পেয়েছি৷ একটা ওয়েডিং এর ইভেন্ট প্ল্যান এবং ইভেন্ট সুন্দরমত নামিয়ে দিতে হবে।"

বিয়ের ইভেন্ট এর কথা শুনতেই মনে পড়ে গেলো ডার্ক লর্ডের কথা। ভুডোর সাথে সেই কত যুদ্ধই না করতে হয়েছিলো। পরে অবশ্য ডার্ক লর্ড গল্পটার ৫ টি পর্ব গল্প আকারে লিখেছিলাম।

শিলার এসএমএস এর রিপ্লে দেই। শিলা জানায় আমাকে তার সাথে তার ঐ কাজে হেল্প করতেই হবে। হৃদয় নাকি অলরেডি ইভেন্ট এর সব ব্যাবস্থা করেই ফেলেছে। এখন আমার সম্মতি পেলে রিসোর্ট আর বাসের টিকিট কাটবে।

ভালোই লাগছিলো, কতদিন পর কাছের এই মানুষগুলোর সাথে কথা হলো। আমি মোবাইলটা হাতে নিয়ে টেবিলের উপর থেকে সিগারেটের প্যাকেট আর ফায়ার বক্স নিয়ে বারান্দায় গিয়ে বসি। সিগারেটে আগুন ধরিয়ে চোখটা বন্ধ করি। সিগারেটে চুমু খাই, হারিয়ে যাই কল্পনায়।

আমি হাটছি সাগরের পাশের মেরিনড্রাইভ দিয়ে। এখন নিশ্চিত মধ্যরাত। কেউ নেই আসে পাসে৷ হালকা ঝিরিঝিরি বাতাস বয়ে চলছে। হটাৎ পেছন থেকে শিতল স্পর্শ । আমি জানি এটা কার স্পর্শ। মোহিনী। মোহিনী কাছে আসে আমার হাত ধরে আমার পাশে হাটতে থাকে। দুজনে পাশাপাশি হেটে চলছি। সাগরের ঢেউ এর গর্জন, ভরা পূর্নিমার চার আর মোহিনীর, সব মিলিয়ে অসম্ভব এক রোমান্টিক মুহুর্ত। হেটে চলছি। হটাৎ বা পাশে খেয়াল করে দেখে সমুদ্রে একটা মেয়ে ভাসছে। ডান পাশে মোহিনীকে দেখানোর জন্য তাকাতেই দেখি মোহিনী আবার হারিয়ে গেছে।

আমি দেরি করি না। খুব দ্রুত নেমে পরি সুমদ্রে। মেয়েটির কাছে যাই। সাদা শাড়ি পড়া। শরীরের কোন অংশ থেকে রক্ত বেরুচ্ছে। পানি লাল হয়ে যাচ্ছে। সবই পুর্নিমার আলোয় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। আমি চিৎকার করে সাহায্য পার্থনা করি। পরক্ষনেই মনে পরে এই মধ্যরাতে কে আমাকে সাহায্য করতে আসবে।

ভয় ভয় লাগছে। মেয়েটি উপর হয়ে আছে৷ আমি সেভাবেই অনেক কষ্টে টেনে পাড়ে উঠাই। ধিরে ধিরে উপর করার চেষ্টা করি। কিন্তু হটাৎ করেই এতো ভাড় লাগছে যে আমি কোনভাবেই উপড় করতে পারছি না। বাতাস এর বেগ বেড়ে গেলো, ক্ষিপ্ত হয়ে গেলো সমুদ্রের ঢেউ। কোথাও থেকে আর্তনাদের চিৎকার ভেসে আসছে। মনে হচ্ছে প্রকৃতি চাচ্ছে না আমি মেয়েটির মুখ দেখি। আমিও নাছর বান্দা। শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে মেয়েটিকে উপর করার চেষ্টা করি। এইতো, এইতো আর একটু। করেই ফেলেছি প্রায়। আধ মুখি দেখেই বোঝা যাচ্ছে মেয়েটি অসম্ভব সুন্দরী।

ক্রিং ক্রিং ক্রিং ক্রিং করে ফোনটা বেজে উঠে।

ধ্যাত। স্বপ্নটা শেষ। সিগারেট টানতে টানতে চোখ বন্ধ করার পর ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। তারপর ঘুমে দেখি আবার সেই ধারাবাহিক স্বপ্ন। কিন্তু এতো ভয়ংকর ছিলো কেনো স্বপ্নটা??

জয় এর ফোন। রাগ করে প্রথমবার কলটি রিসিভ করিনি। আর মিনিট খানেক পর ফোন দিকে হয়তো দেখতে পেতাম। দ্বিতীয়বারের কলে ফোনটি ধরি।

জয়ঃ দাদা ঘুমোচ্ছো??

আমিঃ এখন রাত ৩ঃ৪৬ মিনিট। এখন তো ঘুমানোরই সময়। তাই না?

জয়ঃ না মানে, একটু আগে অনলাইনে দেখলাম তাই ফোন দিলাম। খুব জরুরী একটা বিষয়।

আমিঃ কি জরুরী বিষয় সেটা বল।

জয়ঃ কিছুক্ষন আগে আমার বাসায় একটা মেয়ে এসেছিলো। নাম তিলোত্তমা তৃতীয়া। তার একটা স্ক্রিপ্ট আছে। হরর। সে চায় আমি একটা শর্ট ফিল্ম করে দেই। এডভান্স ৫লাখ টাকার চেক ও দিয়ে গেছে। সব ঠিকঠাক দাদা। স্ক্রিপ্ট, স্টোরি বোর্ড। এমনকি নায়িকাও রেডি। আমার ১২৮ নাম্বার প্রেমিকা আর কি।

আমিঃ ভালো তো। তুই করে ফেল। তুই তো বেশ কয়েকটি ভালো ভালো কাজ করেছিস। সাথে সাথে অনেক মেয়েও পটিয়েছিস। তোর এই সব ধান্দা বন্ধ কর। মেয়েবাজি কমা। কবে যে বিপদে পরবি কে জানে। তুই কর। আমার কোন হেল্প লাগলে আমাকে বলিস।

জয়ঃ দাদা দাদা। তুমি এটার ডিরেকশন দিবে। আর এডিটটাও তুমি করবে প্লিজ। রাংগামাটিতে শুটিং করতে হবে, তুমি সেখানে আগেও গিয়েছিলে। আর ভূত নিয়ে তো তোমার অনেক অভিজ্ঞতা। তাই তুমিই এই কাজটা করছো। এবং ফাইনাল।

আমিঃ কোথায় শুটিং??

জয়ঃ রাংগামাটির বন্ধুকভাংগা গ্রামে #স্বপ্ন নামে একটা রিসোর্টে।

আমিঃ স্বপ্ন রিসোর্ট??

জয়ের সাথে কথা শেষ করে আমি কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থাকি। একদিনে চারজন নক করলো এরা। চারজনের চারটি কাজ। অবাক করার বিষয় হচ্ছে প্রত্যেকের কাজই রাংগামাটি এবং রিসোর্ট কেন্দ্রিক। পড়ির বয়ফ্রেন্ড তুষার কাজ করে রাংগামাটির স্বপ্ন রিসোর্টে, রনি পুরস্কার হিসেবে এই রিসোর্টে থাকার সুজোগ পেয়েছে, শিলার বিয়ের ইভেন্ট করতে হবে এই রিসোর্টে আবার জয়ের শুটিং এই রিসোর্টে।

খটকা লাগছে, ভিষন খটকা। ২ বছর আগে বন্ধ করে দেওয়া ভূত গোয়েন্দা (Bhoot Detective Branch) এর সদস্য রনি, শিলা, পড়ি, জয়কে কোন না কোনভাবে কেউ আবার একসাথে করতে চাচ্ছে। এদের মাধমে আমাকেও কি চাচ্ছে সেইখানে নিয়ে যেতে?? কোন রহস্য আছে কি??? আমি দুপুর ভূত গোয়েন্দা শাখার প্রধান ছিলাম। অনেক ভৌতিক সমস্যা ও রহস্য উদঘাটন করেছি আমার টিম নিয়ে। সেই টিমের সবাইকে রাংগামাটি ডাকছে। যাবো কি যাবো না ভাবতে ভাবতে...............


(সম্পূর্ণ গল্পটি আমার বিকৃত মস্তিকের কল্পনা মাত্র। ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে। পরবর্তী পর্ব আগামীকাল অথবা পরশুদিন পোস্ট করা হবে।)

আইডির রিচ কম হওয়ায় পোস্ট রিচ কম হয়। তাই সকলের নিকট অনুরোধ ভালোলাগা বা মন্দ সেটা কমেন্টস করে জানাবেন। শেয়ার দিবেন। ধন্যবাদ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Thank you for your participation .