বৃহস্পতিবার, ৫ নভেম্বর, ২০২০

ধারাবাহিক স্বপ্ন, পর্ব - চার (৪)


 গল্প ঃ #ধারাবাহিক_স্বপ্ন

পর্ব - চার (৪)

( প্রেতাত্মার লেখা গল্প - Written by A R Shipon ) 

অনেক রাত হয়ে গেছে। রোদেলার এখনো আসার কোন খবর নেই৷ হয়তো অভিমান করেছে। মোহিনীকে পেয়ে রোদেলার সাথে দুপুর দেখা করেনি ঠিকমত। রাগ তো হবারই কথা। তবে কেনো জেন মনে হচ্ছে রোদেলা আসবে। আসলোও বটে।

নুপুরের রিনিঝিনি শব্দ। সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে এলো রোদেলা। সেই নীল শাড়ী, খোপায় বেলি ফুলের মালা, হাতে নীল চুড়ি, চোখে কাজল। অসম্ভব সুন্দরী রোদেলা। চোখ সরাতে পারছিলাম না। রোদেলা কাছে এসে আমার পাশে বসে মুচকি একটা হাসি দেয়। জিজ্ঞেস করে আমি কেমন আছি। উত্তরে বললা খুব একটা ভালো নেই। সে আমার উত্তর শুনে খিলখিলিয়ে হেসে বলে 

রোদেলাঃ হাহাহাহা। মোহিনীর প্রেমে ছ্যাকা খেয়েতো দেখছি একদম বাকা হয়ে  গেছ। 

আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলি। রোদেলা আমার দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষন। আমার হাতের উপর হাত রেখে বলে কষ্ট পেও না। এটা হবার ছিলো বলেই হয়েছে। সুধু সুধু এইসব ভেবে নিজেক কষ্ট দিও না। আমি প্রশ্ন করিঃ  "আচ্ছা রোদেলা, মোহিনী কি আমাকে সত্যিই ভালোবাসে না? তাহলে এর আগে যে ভালবাসতো, ভালোবাসার কি অতিত বর্তমান ভবিষ্যৎ হয়? আমার কাছে কেন জানি মনে হয় ভালবাসার কোন কাল নেই। ভালবাসলে তাকে সবসময় ভালবাসে। তাহলে আমার সাথে এমন হল কেন। " রোদেলা কিছুক্ষণ নিরব থাকে, তারপর দাড়িয়ে হাটতে হাটতে পেছন ফিরে আমার দিকে তাকয়ে বলে " তুমি যেটাকে মোহিনীর ভালোবাসা বলছো সেটা ভালবাসা নয়। মোহিনী কখনই তোমাকে ভালবাসেনি। আমিও তোমার সাথে একমত। ভালোবাসার কোন কাল নেই। ভালবাসি মানে ভালবাসি। সবসময়, সবকিছু এবং সবভাবে। আসলে মোহিনীর আবেগকে তুমি ভালবাসা বলছ। মোহিনী কখনই তোমাকে ভালবাসেনি।" আমি রোদেলার কথা শুনে আবার মাথা নিচু করি। চোখ দিয়ে নিজের অজান্তেই পানি চলে আসে। ভিষন কষ্ট হচ্ছে ভিতরটাতে। এইভাবে প্রতারিত হব বুঝতে পারিনি। আমি রোদেলাকে বললাম, " রোদেলা তুমি আমাকে তোমার সাথে নিয়ে যাবে? আমার এই জীবন আর ভাল লাগে না। আমি তোমার হয়ে থাকতে চাই, কল্পনাতেই থাকতে চাই, এই বাস্তবতা আমার আর ভালো লাগছে না।" 

রোদেলা হিহিহিহি করে হেসে আমার কাছে আসে। 

রোদেলাঃ আচ্ছা আমি যে তোমার জন্য এত সুন্দর করে সাজুগুজু করে আসলাম। তুমি আমার দিকে একটু ভাল করে তাকিয়েও দেখলা না। ওহ, তোমার তো এখন আবার লাল শাড়ি পছন্দ। মোহিনী লাল শাড়িতে তোমার সাথে দেখা করতে এসেছিল। তাই না? তাইতো আমাকে এখন নীল শাড়িতে ভাল লাগে না। 

আমিঃ তেমনটা নয়। নীল শাড়ী আমার বরবরই পছন্দ। তারপর তোমার ওই কাজলকালো চোখের ফিদা আমি। কিন্তু তুমি তো কল্পনা। আর মোহিনী আমার ভালবাসা। এখানে লাল বা নীল কোন ফ্যাক্ট না।

রোদেলা মুখ হটাৎ করে কালো করে ফেলে। অনেক সংকা আর ভয় কাজ করছে ওর মুখে। কিছু একটা হয়েছে। কি হয়েছে জিজ্ঞেস করতেই আমার দিকে তাকিয়ে বলল,

রোদেলাঃ তোমার সামনে বিপদ। যদি সাহস রেখে সামনে এগুতে পার তাহলে হয়ত বিপদ কেটে নতুন সূর্য হাসবে, আর না হয় পানিতে ডুবে মরবে।

আমিঃ বুঝলাম না কিছু। খুলে বল। 

রোদেলা বিরবির করতে করতে  সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে গেল। আমি একটা সিগারেট ধরিয়ে টানতে টানতে ভাবার এবং বোঝার চেষ্টা করলাম যে রোদেলা আসলে কি বলে গেল। কিছুই মাথায় আসছে না। হাটাহাটি করছি, আর পাগলের মত বিরবির করছি। হটাৎ খেয়াল করলাম। ছাঁদের একপাশে লুকিয়ে লুকিয়ে কে জেন আমায় দেখছে। আমি দৌড়ে সামনে গেলাম। আমার সামনের দেয়ালে একটা ছায়ামূর্তি। শাড়ী পড়া, খোলা চুল দুলছে। আমার হাত পা অসার হয়ে গেছে। আমি নড়তে পারছি না৷ আমি এটা কি দেখছি। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। ছায়ামূর্তিটা হাটা শুরু করলো। ছাদ বেয়ে শুন্যের উপর দিয়ে হেটে নিমিষে ভ্যানিস হয়ে গেল। আমার শরীর দিয়ে ঘাম বেরুচ্ছে। হাটতে পারছি না। কোন রকমে জয়কে ফোন দিয়ে বললাম আমি ছাদে।

বিশাল লেক, দুইপাশে ছোট ছোট পাহাড়, জ্বোৎনার আলো, অসম্ভব মায়াবী পরিবেশ। আমি একটা ট্রলারে করে যাচ্ছি। সামনে দাড়িয়ে প্রকৃতি দেখছি। তারপর ট্রলারটি গিয়ে একটা পাহাড়ের ঘাটে দাঁড়ায়। একটা শীতল স্পর্শ আমাকে কাধে। আমি স্পর্শের অনুভবেই বুঝে যাই এই আমার মোহিনী। তার দিকে তাকাতেই মোহিনী হাসি। ঘাটে তাকিয়ে দেখি একটা ভাঙাচোরা সাইনবোর্ড। লেখা স্বপ্ন। নামটা চেনা চেনা লাগছে। কোথায় জেন শুনেছি নামটা। আমতা আমতা করতে করতেই পরক্ষনে চোখ পরে সাইনবোর্ডের পেছনে এক ছায়ামূর্তির দিকে। আরে এ তো সেই ছায়ামূর্তি। ছাদের যে ছায়ামূর্তি দেখেছিলাম। আমি রাতের ঘটনা মোহিনীকে বলার জন্য পেছনে তাকাতেই দেখি আরো দুটো পুরুষ ছায়ামূর্তি  মোহিনীর দুই হাত ধরে দুজনে টেনে নিজেদের দিকে নিতে চাচ্ছে। মোহিনী চিৎকার করে বলছে দুপুর আমাকে বাচাও। কিন্তু আমি যে এক পা ও সামনে এগুতে পারছি না। নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছে। আবার সেই নাড়ি ছায়ামূর্তির দিকে তাকাই, সেই হাসছে। আমি আর সহ্য করতে পারছিলাম না। চিৎকার আর হাত পা নাড়ানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করলাম। চেষ্টায় ঘুম ভেঙে গেল। বুঝলাম স্বপ্ন দেখছিলাম। আবার সেই #ধারাবাহিক_স্বপ্ন। স্বপ্ন গুলো ইদানীং খুব বেশি জীবন্ত আর ভয়ংকর। 

খেয়াল করে দেখি আমি আমার রুমে সুয়ে আছি। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম দুপুর ২টা বাজে। পাশের রুমে অনেকগুলো মানুষের কথার শব্দ। হৃদয়ের কন্ঠটা কানে আসলো। আমি ছাদ থেকে কিভাবে এখানে আসলাম মনে  নেই। তবে আন্তাজ করতে পারছি যে জয়কে ফোন দেওয়ার পর হয়তো জয় উপরে গিয়ে আমাকে নিয়ে আসে। কিন্তু আমি কি জ্ঞ্যান হারিয়ে ফেলেছিলাম। হয়তোবা।

ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে এসে পাশের রুমে যাই। গিয়ে দেখি অনেকে এসেছে। আমাকে রুমে ঢুকতে দেখেই পরী সামনে এসে জিজ্ঞেস করে " দাদা কি হয়েছিলো? তুমি ছাদে জ্ঞ্যান হারালে কিভাবে?" আমি বললাম "দাড়া। আগে বসতে দে।"

এখানে আছে হৃদয়, জাহিদ, রনি, শিলা, জয়, শিফা, অর্নব, তাহমিদ, অনুপ, পরী।  জয় ওদের সবাইকে ফোন দিয়ে এনেছে। সকাল থেকে ওরা গল্প করছে। গল্পে গল্পে বেরিয়ে আসে যে তুষার যে রিসোর্টে জব করে,  রনির ফ্রি থাকার রিসোর্ট, শিলার ইভেন্ট এর রিসোর্ট এবং জয়ের শ্যুটিং এর রিসোর্ট একই। রিসোর্ট #স্বপ্ন। ওরা সবাই মহাখুশি। একসাথে সবাই মিলে অনেকদিন পর আবার আনন্দ ফূর্তি করা যাবে। কিন্তু কেউ একবারও ভাবছে না চারজনেরই মিলে যাওয়াটা কোন অস্বাভাবিক কিছুর ইংগিত দিচ্ছে। আসলে ওরা এতো বেশি ভাল যে কখনও আমার মত করে নেগেটিভ চিন্তাভাবনা করে না। আর তাই আমিও রাতের সত্যি ঘটনাটি লুকিয়ে মাথা ব্যাথা থেকে সেন্সলেস হবার ঘটনা বলে চালিয়ে দেই।

সবাই এখন খাতা কলম নিয়ে বসেছে। জয়ের এসিস্ট্যান্ট হিসেবে অনুপ আর জাহিদ কাজ করছে, আর শিলার জন্য তাহমিদ, হৃদয় আর শিফা। আর বাকি গুলো সবাইকে হেল্প করবে। সবশেষে সিধান্ত নেওয়া হয় আগামী পরশুদিন নভেম্বর ০৩ তারিখে রাতের বাসে রাঙামাটির উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়া হবে। মিটিং এর মাঝখানে অর্নব কাচ্চির অর্ডার করেছিল। যথাসময়ে কাচ্চি চলে আসে। মিটিং শেষে শুরু হয় কাচ্চি উৎসব। সবার খাওয়ার মাঝখানে হুট করে পরী বলে উঠে,

পরীঃ তোমরা কি কেউ খেয়াল করেছো যে বিভিন্নভাবে কেউ একজন আমাদের রাঙামাটির ঐ রিসোর্টে নিয়ে যেতে চাচ্ছে। তা না হলে এইভাবে কেমন করে মিলে যায়? আর তুষার আমাকে বলেছে ঐ রিসোর্টে ভূত আছে। আমি দাদাকে বলেছিলাম। আমার কেন জানি মনে হচ্ছে আমাদের সাথে প্যারানরমাল কিছু ঘটতে যাচ্ছে। 

পরীর কথা শুনে বাকি সবাই হেসে উঠে। বলে যে ওর মাথায় এখনো ভূত গোয়েন্দার প্যারা ঘুরে তাই সব কিছুতেই ভূত ভুত আর রহস্য খুজে। মাথা ঠিক নাই। ভূত গোয়েন্দার কথা শুনতেই মনে পরে গেল অতিত দিনগুলোর কথা। কত প্যারানরমাল রহস্য উদঘাটন করেছি এই ভূত গোয়েন্দাদের সাথে। আজ সব অতিত। ভূত গোয়েন্দা শাখা মানুষের মধ্যে পপুলার না হলেও ভূত বা আত্তিক জগতে এর ভাল নাম ডাক আছে। আর পরী ঠিকই ধরেছে। সামনে ভূত গোয়েন্দা শাখার এই প্রাত্তন সদস্যের সাথে ভয়ংকর প্যারানরমাল কিছু ঘটতে যাচ্ছে। যা গতকাল রাতের ঐ ছায়ামূর্তিকে দেখেই বুঝেছি। এখন আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে ভৌতুক রিসোর্ট #স্বপ্ন। জানিনা কি হয় সেখানে।

চলবে....................

(সম্পূর্ণ গল্পটি আমার বিকৃত মস্তিকের কল্পনা মাত্র। ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে। পরবর্তী পর্ব আগামীকাল অথবা পরশুদিন পোস্ট করা হবে।)

1 টি মন্তব্য:

  1. Lucky Club Casino Site | Casino Review 2020
    Lucky Club Casino, an online casino that welcomes new players, is part of the popular South African gaming group that has operated since 2015. Lucky License: CuracaoNumber of games: 200+ Rating: 4.3 · luckyclub ‎Review by LuckyClub

    উত্তরমুছুন

Thank you for your participation .