বৃহস্পতিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৭

সেই আমি
তোমায় নিয়ে আরেকটিবার কবিতা লিখবো,
তোমায় নিয়ে লেখা অকবিতাগুচ্ছের কবি হবো!
সেখানে হয়তো তোমায় পাবার আকাংখা থাকবে না,
কিন্তু তোমার প্রতি জমে থাকা ভালোবাসার ছাপ থাকবে!

জানো, তোমায় নিয়ে আমি আবারো কবিতা লিখবো?
থাকবে না সেই কবিতার অন্ত্যমিল,
থাকবে না কোন ছন্দমিল!
শুধু থাকবে তোমার আমার অমিল!

সেই আমি আবারও তোমায় নিয়ে লিখবো কবিতা!
আবারও ভুল করেই হয়তো ভালোবাসবো!
একটুখানি ভুল করে না হয়কষ্টই পাবো!

আবারও তোমায় নিয়ে কবিতা লিখবো!
আবারও আমি তোমার জন্য কবি হবো।

শনিবার, ৭ অক্টোবর, ২০১৭

অপ্সরী কন্যা


অপ্সরী কন্যা
লেখা : MD Asadur Rahman (Sh Ip On)
(সম্পুর্ন গল্প)
খুব নি:সংজ্ঞ দিন কাটছে আমার। তাই একটা সিধ্যান্ত নিয়েছি। আর সেটি হলো বিয়ে করবো। কিন্তু ঝামেলা হচ্ছে আমার বাবা মা কিছুতেই এই মূহুতে রাজি হচ্ছে না বিয়ে দিতে। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি পালিয়ে বিয়ে করবো। আর এখানেও একটা সমস্যা আছে। আমার কোন প্রেমিকা নেই। পালিয়ে যেতে হলে তো একটি প্রেমিকা দরকার তাই না? তাই ফেসবুকে পালিয়ে বিয়ে করার মত মেয়ে চেয়ে আমার এই বিজ্ঞাপন।


আমি মিটুল রহমান, পরি ঢাকা কলেজে অনার্স ৪র্থ বর্ষে। টুকটাক টিউশনি আর মাঝে মাঝে পত্রপত্রিকায় লেখালেখি করে নিজের খরচ নিজে চালাই।
যেই রকম পাত্রী চাই :
১ মেতে অবশ্যই সুন্দরী হতে হবে।
২ মেয়েকে আমার থেকে কম হলেও ১/২ ইঞ্চি লাম্বা হতে হবে।
৩ মেয়ের বাবা অনেক সম্পত্তি থাকতে হবে। (কথায় আছে না যে তোমার বাবা যদি সম্পদশালী না হয় তবে এটা তোমার কোন দোষ না, কিন্তু শশুর যদি সম্পদশালী না হয় তাহলে সেটা তোমার জন্য ধংশের বার্তা)
৪ মেয়ের রবিন্দ্রসংগীত গাওয়া জানতে হবে।
আপাতত এইটুকুই। আগ্রহী ললনারা ইনবক্সে যোগাযোগ করুন।

ঠিক এভাবেই মিটুল তার ফেসবুক ওয়ালে পোষ্ট করেছিলো। কিন্তু তেমন কোম রেসপন্স সে পায়নি। তবে অনেক কমেন্টস পরেছে তার পোষ্টে। সবাই বিষয়টি নিয়ে মজা করেছে। ফানি ভেবেছে। অথচ মিটুল কিন্তু সিরিয়াসলি পোষ্টটি করেছিলো।
এর বেশকিছুদিন পরের কথা। মিটুল রাত ৯ টার দিকে ধানমন্ডি লেকের এক কোনায় বসে আছে, আর কল্পনা করছ। সে বেশকিছুদিন যাবত কোন কিছু লিখতে পারছে না। প্রতিটি লেখকই একট সময় এই সমস্যায় পরে, শত চেষ্টা করেও লেখা বের করতে পারে না। আর তখন তারা বিভিন্ন উপায়ে লেখা বের করার চেষ্টা করে। মিটুলের ও একটা ওয়ে হচ্ছে সে নিরিবিলি বসে হাতে সিগারেট নিয়ে কল্পনা করে। তখন মাঝে মাঝে আবার সেই বন্ধ কল্পনার জগতের সদর দরজাটা খুলে যায় আবার।
মিটুল চুপ করে বসে চোখ বন্ধ করে সিগারেট টানছে। হটাত তার পাশে পানিতে ঝাপ দেওয়ার একটা শব্দ পায়। চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে একটি মেয়ে পানিতে ঝাপ দিয়েছে। হাত পা ঝেরে বাচার চেষ্টা করছে, তবে মনে হয় মেয়েটি সাতার জানে না। মিটুল চুপ করে দাঁড়িয়ে দেখছে, মিটুল এর আগে কখনো নিজ চোখে কারো মৃত্য দেখিনি এইবারই একটা চান্স সামনাসামনি কারো মৃত্য দেখার।
♦ এই মিয়া দেখতেছেন একটা মেয়ে ডুবে মারা যাচ্ছে আর আপনি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছেন?(পাসে এসে এক মহিলা তাকে বললো)
মিটুল : আমি তো তাকে মরতে বলিনি। সে সেচ্ছায় পানিতে ঝাপ দিয়েছে।
♦ আজিব মানুশ। নামুন নামুন, মেয়েটিকে বাচান।
মিটুল পানিতে লাফ দেয়। অল্প পানি সেখানে।
মেয়েটিকে মিটুল উপরে উঠায়। ততক্ষনে আসেপাশের সব মানুষ সেইখানে ভির করে ফেলেছে। পাশেও ঐ মেয়েটি এসে ঝাপিয়ে পরা মেয়েটির বুকে চাপ দিয়ে পানি বের করে জ্ঞ্যান ফিরিয়ে আনে অন্যান্য মুভির মত।
মেয়েটি জ্ঞ্যান ফেরার পর মিটুল সেখান থেকে চলে আসে। হেটে সামনের দিকে এগুচ্ছে। লেক পেরিয়ে ৩২ এর এক চায়ের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে এক কাপ চা আর একটা সিগারেট নেয়। তার সারাশরীর ভেজা।
চা আর সিগারেট টানছে মিটুল। হটাত পেছন থেকে কে জেনো মিটুলের কাধে হাত রাখে। পিছনে তাকিয়ে দেখে সেই মেয়েটি যে একটু আগে মরার জন্য পানিতে ঝাপ দিয়েছিলো এবং মিটুল তাকে বাচিয়ে আনলো।
♥ ধন্যবাদ আপনাকে আমাকে বাচানোর জন্য।
মিটুল : ধন্যবাদ কেনো? আপনার তো উচিত আমাকে গালি দেওয়া।
♥ ছি গালি দিবো কেনো?
মিটুল : আপনি মরতে গিয়েছিলেন, আর আমি আপনাকে মরতে দেইনি। মানে আপনি যেটা করতে চেয়েছিলেন সেই কাজে আমি বাধা দিলাম তাই আপনার উচিত আমাকে ইচ্ছে মত গালি দেওয়া, চাইলে মারতেও পারেন।
♥ হাহাহাহহাহাহাহাহা।
মিটুল : এইভাবে হাসবেন না। বুকের বা পাশে এমন হাসি দেখলে ক্যামন যেনো একটু ব্যাথা ব্যাথা লাগে।
♥ আমি ভিজে গেছি, বাসায় যেতে হবে। কিন্তু আমার কাছে কোনটাকা পয়সা নেই। আপনি কি আমাকে একটু বাসায় যেতে সাহায্য করবেন?
মিটুল : আমিও তো ভিজে গিয়েছি। আমাকেও বাসায় যেতে হবে। এককাজ করেন, আমি আপনাকে টাকা দিচ্ছি আপনি একটা সিএনজি নিয়ে চলে যান।
♥ ধন্যবাদ। আর হ্যা আপনার নাম্বারটি দিন। আমি পরে টাকা পাঠিয়ে দিব।
মিটুল : সরি আমি আমার নাম্বার দিতে পারবো না। আর আমাকে টাকাও ফেরত দিতে হবে না।
মিটুল মেয়েটির হাতে একটি ভেজা ৫০০ টাকার নোট দিয়ে চলে আসে সেখান থেকে।
বাসায় এসে ফ্রেস হয়ে, ড্রেস চেঞ্জ করে রাতের খাবার খেয়ে ঘুম দেয় মিটুল। পরেরদিন সকালে ক্লাস আছে।
দুদিন পর। মগবাজার রেলক্রসিং এর এক কোনায় বসে সিগারেট টানছে মিটুল।
পাসে হটাত একটি মেয়ে এসে বসে।
♥ কেমন আছেন আপনি?
মিটুল : ভালো। আপনি কে?
♥ ভুলে গেলেন আমাকে? ঐযে সেদিন ধানমন্ডি লেক থেকে আমাকে বাচালেন। ভুলে গেছেন?
মিটুল : ওহ, হ্যা। মনে পরেছে। তো আপনি এই রাতে এখানে কেনো? ভূতটুত নাকি আপনি? হটাত এসে হাজির হন।
♥ আমি অনু। আর ঐ সামনের ঐ ছয়তালা বাড়িটা আমাদের। একা একা লাগছিলো তাই ছাদে যাই। তারপর হটাত একটা আলো এইখানে পরে আর তারপর মনে হলো এটা আপনি। কনফিউশনে ছিলাম। কাছে এসে দেখলাম না ঠিকই আছে।
মিটুল : ওহ। ভালো। তো সেদিন মরতে গিয়েছিলেন কেনো?
অনু : বলতে চাচ্ছি না।
মিটুল : প্রেম ঘটিত? আচ্ছা বলতে যেহেতু চাচ্ছেন না তাহলে এখান থেকে চলে যান।
অনু : চলে যাবো কেনো? আমি বলবো না কারন এটা আমার পারসোনাল মেটার।
মিটুল : আমিও আপনার পাশে বসবো না। এটাও আমার পারসোনাল প্রবলেম। আল্লাহ হাফেজ।
মিটুল সেখান থেকে উঠে চলে যায়।
রবিন্দ্র সরবরে প্রায়ই ছোটখাটো কনসার্টের মত আয়োজন করে। আজই সেই রকম একটি আয়োজন। তবে ফোক গানের। লাইভ ফোক গান শুনতে খারাপ লাগে না। মিটুলের খুব খুব ভালো লাগে। এককোনে বসে পরলো সে। কিছুখন পর তার পাসে এসে বসলো অনু। অনু, ঐযে সেই মেয়েটি।
মিটুল : আপনি আবার এখানে?
অনু : আমার কি এখানে আশা নিষেধ নাকি?
মিটুল : আমি আপনার সাথে কথা বলতে ইচ্ছুক না।
(মিটুল দাঁড়িয়ে যাচ্ছে আর তখন অনু মিটুলের হাত চেপে ধরে)
অনু : প্লিজ উঠবেন না। আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
(মিটুল বসে পরে)
মিটুল : আমি আমার গতকালকের প্রশ্নের উত্তর না পেলে কোন কথা শুনবো না।
অনু : আমি বলবো আপনাকে সব কথা।
মিটুল : তাহলে বলেন, এতো প্যাচাচ্ছেন কেনো?
অনু : আচ্ছা সাহিত্যিক মানুষরা কি এতো ঝগড়াটে হয় নাকি। আমি তো জানতাম তারা খুব নরম মনের মানুষ হয়।
মিটুল : আমি সাহিত্যিক আপনাকে কে বললো?
অনু : আমি আপনার ফেসবুক ফ্রেন্ড। আর আমি সাতারও আপনার চেয়ে অনেক ভালো জানি।
মিটুল : মানে?
অনু : কিশের মানে?
মিটুল : ঐযে আপনি পানিতে সুইসাইড করার জন্য ঝাপ দিলেন। আবার পিছন থেকে একজন এসে বললো আপনাকে বাচাতে।
অনু : হাহাহহাহাহাহা।( হাসতে থাকে আর মিটুল চুপ করে তার হাসি দেখতে থাকে)
মিটুল : হাসবেন না, হাসলে আপনাকে দেখতে মোটেই ভালো লাগে না।
অনু : মিথ্যে কথা বলবেন না। আমার হাসি খুব সুন্দর, যে কোন ছেলেকে পাগল করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।
মিটুল : লেকে ঝাপ দেওয়ার রহস্য উন্মোচন করুন। তানাহলে চলে যাবো আমি।
অনু : আমি ইচ্ছে করে ঝাপ দিয়েছি, আর যে আপনাকে বলেছে আমাকে বাচাতে সে আমার বান্ধবী। কিন্তু আপনি প্রথমে আমাকে না বাচাতে এগিয়ে এসে দাঁড়িয়ে ছিলেন কেনো?
মিটুল : আমি কখনো সামনাসামনি কাউকে মরতে দেখিনি। তাই দাঁড়িয়ে সামনাসামনি কারো মৃত্য দেখার প্রথম অভিজ্ঞতা নেওয়ার চেষ্টা করছিলাম কিন্তু ঐ বদ মহিলা সব ভন্ডুল করে দিলো।
অনু : ( মাথার চুলে টান দিয়ে) ঈস আল্লাহ আমি যে কিভাবে এই রকম একটা পাষন্ড মানুষের প্রেমে পরলাম। এখন আল্লাহ তুমিই আমাকে রক্ষা করো।
মিটুল : কিহ? প্রেম! তাও আবার,,,,,
অনু: কেন আপনিই তো বলেছেন যে আপনি বিয়ে করবেন, মেয়ে খুজছেন। আর কেন আমি কি সুন্দরী না? যথেষ্ট সুন্দরী আমি। আর আপনার চেয়ে একটু হলেও আমি লাম্বা হবো আর আমার বাবার অনেক টাকা, ঢাকায় দুইটি বাড়ি আছে।
মিটুল : রবিন্দ্র সংগিত।
অনু : আমি গান গাইতে জানিনা। ( জানিনা বলে কেদে দেয় মেয়েটি)
মিটুল : আরে কাদছেন কেনো আপনি? কান্নার কি হলো এখানে।
অনু: (কাদতে কাদতে) আপনার মন মতো তো হতে পারলাম না। আমি গান জানিনা। কিন্তু আপনাকে অনেক ভালোবাসি, আপনার লেখাও অনেক ভালোবাসি।
মিটুল : বুঝলাম। কিন্তু ঐ পোষ্টটা যাস্ট একটা ফানি পোষ্ট। সিরিয়াসলি নেওয়ার মত কিছু নেই।
অনু : আমি কিচ্ছু জানিনা। আমি সুধু জানি আমি আপনার হতে চাই।
মিটুল : অনেক রাত হয়েছে। বাড়ি ফিরে চলুন।
অনু : প্লিজ আমাকে একটু দিয়ে আসবেন। অনেক রাত হয়ে গেছে। ভয় লাগছে।
মিটুল : চলুন।
মিটুল অনুকে মগবাজারের বাড়িতে দিয়ে আসে। তারপর সে তার নিজের বাসায় ফিরে। বাসায় ফিরে ঐ পোষ্টটি ডিলিট করে। আর মেয়েটিকে নিয়ে ভাবে। আসলে মেয়েটি কি চায়? মেয়েটিকি সত্যিই তাকে চায়, না চাইলে এইভাবে পানিতে ঝাপ দিবে কেনো? নাকি আবার আমার লেখা কোন গল্পের মত কোন ভৌতিক কিছু হতে চলছে। ধুর শালা কিচ্ছু ভালো লাগে না। মনে মনে বলছিলো মিটুল।
মিটুল ফোন হাতে নিয়ে বিছানায় সুয়ে ফেসবুকে ঢুকে। অপসরি কন্যা নামে একটি আইডি থেকে ফ্রেন্ড রিকোয়েষ্ট আসে। দেখে সে ইগনোর করে। তারপর ম্যাসেঞ্জারে গিয়ে দেখে সেখানেও চ্যাট রিকোয়েস্ট সেই অপসরি কন্যা আইডি থেকে। কিছুখন পর।
অপসরি কন্যা : hi
মিটুল সিন করে কিন্তু কোন রিপ্লে দেয় না।
অপসরি কন্যা একটি পিক পাঠায়। খোল চুল সামনের দিকে দিয়ে কাজল কালো বড় বড় চোখের লুক দিয়ে কালো শাড়ি পরে একটি মেয়ে।
আরে মেয়েটিতো সেই মেয়ে। কি জেনো নাম, অনামিকা না অনু তনু। ওহ হ্যা অনু।
অপসরি কন্যা : kotha boloben na?
মিটুল খান : কি বলবো?
অপসরি কন্যা : কিছু একটা।
মিটুল খান : আমার আইডির লিংক পেলেন কোথায়?
আপসরি কন্যা : আমি আপনার অনেক আগের একজন ভক্ত। আপনার পেজের নিয়মিত পাঠক। সেখান থেকে খুজে খুজে....
মিটুল খান : ওহ ভালো।
অপসরি কন্যা : আপনি কি খুজে পেয়েছেন?
মিটুল খান : কি?
অপসরি কন্যা : মেয়ে।
মিটুল খান : কোন মেয়ে? কিশের মেয়ে?
অপসরি কন্যা : আরে ঐ যে আপনি না বিয়ে করবেন সেই মেয়ে। পালিয়ে যাবেন।
মিটুল খান : নাহ পাই নি।
অপসরি কন্যা : আলহামদুলিল্লাহ।
মিটুল খান : আলহামদুলিল্লাহ কেনো?
অপসরি কন্যা : কারনটা আপনি ভালো করেই জানেন। এর আগে বলেছিলাম। আমি তো সুধু রবিন্দ্র সংগীত জানিনা, বাকি সবই তো ঠিক ছিলো তাই না।
মিটুল খান : জানিনা।
অপসরি কন্যা : আচ্ছা আপনি এতো জানিনা জানিনা করেন কেনো? আচ্ছা আচ্ছা শুনেন আগামীকাল ধানমন্ডি লেকে পিঠার মেলা। আপনি কি বিকেলে ফ্রি আছেন? আসতে পারবেন কি?
মিটুল খান : চেষ্টা করবো।
আপসরি কন্যা : আমি নীল শাড়ি পরে আসবো, চোখে কাজল দিবো, হাতে একমুঠো চুড়ি পরবো আর কপালে ছোট করে একটা টিপ। আর ঠিক বিকেল ৫ টায় আমি বটতলায় অপেক্ষা করবো আপনার জন্য।
মিটুল খান : আচ্ছা আমার বাড়িতে ফোন দেওয়ার সময় হয়েছে। এখন যেতে হবে। বাই।
ফোন হাত থেকে রেখে চিন্তায় মগ্ন মিটুল। আচ্ছা মেয়েটা শাড়ি, চুড়ি, টিপ, চোখা কাজল দিলে কেমন লাগবে দেখতে তো এমনিতেই অসম্ভব সুন্দরী। খুব লোভ লাগছে তাকে দেখার কিন্তু এভাবে যাওয়াটাও ঠিক হবে না।
ফোন বেজে উঠে মিটুলের, বাড়ি থেকে মা ফোন দিয়েছে।
হ্যালো আম্মু,
> ক্যামন আছো আব্বু?
আম্মু আমি ভালো আছি। তুমি ক্যামন আছো? বাসার সবাই ক্যামন আছে?
> আলহামদুলিল্লাহ্‌ আমরা সবাই ভালো আছি। আব্বু শুনো তোমাকে একটা কথা বলবো।
হ্যা আম্মু বলো।
> আব্বু তোমার জন্য একটা মেয়ে দেখেছি। সামনের মাসে বিয়ের তারিখ ঠিক করতে চাচ্ছি, দেখলো তোমার পছন্দ হবে।
কিন্তু কেনো আম্মু? এখন বিয়ে?
> তুমি তোমার যুথি আপুকে বলছো সে আমাদের বলেছে। আর তোমার আব্বু তোমার ফেসবুকের স্টাটাসও দেখেছে।
কিন্তু আম্মু
> কোন কিন্তু না আব্বু। তুমি ফেসবুক থেকে আবার অন্যকারো সাথে পালিয়ে বিয়েটিয়ে করো না। আমরা দুই একদিনের ভিতর তোমার বিয়ের ডেট ফাইনাল করছি।
আম্মু।
> আব্বু আমি এখন রাখি, চুলায় খাবার পুরছে। আল্লাহ হাফেজ।
আল্লাহ হাফেজ।
মায়ের কথাগুলো শোনার পর মিটুল বুকের ভিতর কিছুটা হাহাকার অনুভব করে। কিন্তু এমনটা তো হওয়ার কথা ছিলো না। দুদিন আগেই তো সে নিজেই বিয়ের জন্য পাগল হয়েছিলো। তাহলে আজ কি হলো তার। সে কে অপসরি কন্যার মায়ায় পরলো। অপসরি কন্যা মানে অনু। অনুকে নিয়ে মিটুলের কনফিউশন এখনো কাটেনি। মেয়েটি কি মানুষ নাকি কল্পনা? ভুত পেত্নী আর কাল্পনিক গল্প লিখতে লিখতে এখন সব কিছুতেই কল্পনার একটা ছায়া খোজে মিটুল।
পরের দিন। সারাদিন দোটানায় থেকে অবশেষে সিদ্ধান্ত নেয় যাবে অনুর সাথে দেখা করতে।
মিটুল ঠিক ৫:৩০ মিনিটে রবিন্দ্র সরবরের পাশে বটতলায় গিয়ে পৌছায়। অনু আগেই এসে হাজির। মিটুলকে দেখে কাছে এগিয়ে আসে অনু
অনু : তুমি জানো আমি কতক্ষন ধরে এখানে ওয়েট করছি? সব ছেলে গুলো আমার দিকে হা করে তাকিয়ে দেখছিলো। অসহ্য লাগছিলো, আসলে আমিতো একটু বেশিই সুন্দর তাই এমন।
মিটুল ও এখন অনুর দিকে তাকিয়ে আছে। গতকাল যখন মেয়েটি বলেছিলো সে শাড়ি, চুড়ি, কাজল পরবে তারপর থেকেই মিটুল তার মনে মনে মেয়েটিকে মনের জানালায় সাজিয়েছিলো। সাহিত্যিকেরা তাই করে। কিন্তু কল্পনার সেই অনুকে যতটা সুন্দরী লাগছিলো তার থেকেও এখন অনেক বেশি সুন্দরী লাগছে। এককথায় সত্যিই তাকে অপসরী লাগছে। ওহ অপসরী মানে হচ্ছে অপূর্ব সুন্দরী। খোলা চুলে..........
অনু : কি হলো আপনার? এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন কেন? (লজ্জা পেয়ে মৃদ কন্ঠে)
মিটুল : নাহ, কিছু না। চলুন মেলায় যাই। পিঠা খাই।
অনু : চলুন।
দুজনের মেলায় ঘুরে ফিরে, অনেক অনেক পিঠা খায়, মিটুল প্রত্যেকটা বিল দিতে চাইলেও অনু পাগলীর পাগলামীর জন্য সে একটি টাকাও খরচ করতে পারে না। হ্যা খরচ করেছে, সিগারেটের টাকাটা মিটুল দিয়েছে, অনু সিগারেট খাওয়া পছন্দ করে না তাই সে খুব রাগ করেছিলো। কিছুখন কথা বলে নি সে মিটুলের সাথে।
রাত ৯ টা প্রযন্ত একসাথে কাটিয়ে এরপর মিটুল অনুকে তার বাসায় এগিয়ে দিয়ে আসে। সেখান থেকে বাসার কাছে এসে মিটুল দোকান থেকে একটা সিগারেট কিনে ধরিয়ে ২/৩ টা টান দিয়ে ফেলে দেয়। আর নিচু কন্ঠে বলে অনু সিগারেট পছন্দ করে না।
মিটুলের মধ্যে কিছু একটা পরিবর্তন হয়েছে, কিছুটা না অনেকটা। বাসায় এসেই সে অপেক্ষায় ছিলো অনু তাকে নক করবে, করেছেও। সারারাত দুজনে ফোনে কথা বলে, একদম ভোর প্রযন্ত।
এভাবেই প্রায় প্রতিদিন চলতে থাকে, মাঝে মাঝে দেখা করা, ঘুরতে যাওয়া। বুঝতেই পারছেন বিষয়টি, তাদের মধ্যে ইতিমধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে এবং মিটুল তার পরিবার থেকে ঠিক করা বিয়েও ভেংগে দেয়। সে এখন অপসরী কন্যা অনুর প্রেমে পুরোদমে মগ্ন, অনু ছাড়া সে এখন কিছুই বুঝে না।
ভালোই চলছিলো তাদের প্রেম, দেখা করা, ঘুরতে যাওয়া আর মাঝে মাঝে পার্কের কোনায় বা কোন নামি দামি রেস্টুরেন্টের এক ঘেরাও করা পর্দার ভিতর দুটি দেহে এক হয়ে যেত। দুজোড়া ঠোট একে অপরের মধ্যে কিছু একটা খুজে পেত। সবই ভালোই চলছিলো।
বন্ধু জামান সব কিছুই জানতো। মেয়েটি অনেক ধনী পরিবারের মেয়ে, আর মিটুল গ্রামের মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। জামান বার বার মিটুলকে বলে মেয়েটির প্রতি বেশি দূর্বল না হতে। কারন সুন্দরী ধনীর দুলালীদের উপর নাকি বিশ্বাস করতে নেই বলে জামানের ধারনা। তাহলে উপায়?
জামান : মিটুল দোস্ত তুই বিয়ে কর।
মিটুল : ওকে এখন বিয়ে করতে রাজি হবে?
জামান : এখন যদি বিয়ে করতে রাজি না হয় তাহলে দেখিস ঐ মেয়ে তোকে জীবনেও বিয়ে করবে না। আসলে মেয়েটি তোকে নিয়ে গেম খেলছে।
মিটুল : জামান তুই আসলে বেশি কথা বলিস। আচ্ছা আমি ওর সাথে কথা বলে দেখি।
মিটুল অনুর সাথে কথা।
মিটুল : অনু তোমাকে একটা সিরিয়াসলি কথা বলতে চাই
অনু : হাহহাহা, তুমি কি আমার কাছ থেকে অনুমতি নিচ্ছো? তুমি কি পাগল? যা বলার বলে ফেলো বাবু।
মিটুল : আমি চাচ্ছি আমরা বিয়ে করবো।
অনু : ভালো কথা। চলো কালই করি?
মিটুল : আমি ফান করছি না।
অনু : আমি সিরিয়াসলি বলছি। আমরা তিন দিন বন্ধ আছে। আমি বাবাকে কে বলি যে আমি আমার বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যাচ্ছি। তারপর বিয়ে করে আমরা কোথাও ঘুরে আসি।
মিটুল : আচ্ছা তাহলে কালই বিয়ে হবে।
মিটুল জামানকে সব বলে। জামান সব বন্ধুদের সাথে কথা বলে বিয়ের ব্যাবস্থা করে এবং বিয়ে করে ওদের দুজনকে কক্সবাজার পাঠিয়ে দেয়। কক্সবাজারে তারা ৩ দিন ছিলো। কক্সবাজার থেকে ফিরে এসেই অনু একটা সুসংবাদ পায় আর সেটু হলো অস্ট্রেলিয়াতে তার স্কলারশিপ হয়ে গেছে। খুব শিঘ্রই তাকে চলে যেতে হবে অস্ট্রেলিয়া। অনু সাথে সাথেই মিটুলকে জানায়। মিটুল ফোনে খুব খুশি হয়েছে ভাব নিলেও সে আসলে খুব কষ্ট পায়। তার প্রিয়তমা তাকে ছেরে চলে যাবে। এটা মোটেই সুখকর কোন সংবাদ নয়।
ইদানিং অনু আর আগের মত মিটুলকে বেশি সময় দেয় না। এর মধ্যে দুই একবার কিছু সময় হোটেলে কাটিয়েছে। কিন্তু তখনও কেমন যেনো অগোছালো আর অন্যমনস্ক মনে হচ্ছিলো অনুকে। অনু কিছুটা চেঞ্জ হয়ে গেছে।
অনু মিটুলকে এখন আর আগে ফোন দেয় না। মিটুল ফোন দিলেও অল্প স্বল্প কথা বলে ফোন কেটে দেয়।
মিটুল আবার চেঞ্জ, ঠিক মত খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। রাতে ঠিক মত ঘুমও হয় না। গত দুইদিন অনুর সাথে কোন যোগাযোগ হয় না। ফেসবুক আইডি টাও অনু ডিএকটিভ করে রেখেছে।
এসব চিন্তা করতে করতে ঘুমিয়ে পরে মিটুল।
ক্রিং ক্রিং ক্রিং (জামানের ফোন)
মিটুল : হ্যালো
জামান : ফেসবুকে ঢুকিস না নাকি?
মিটুল : ফেসবুকে ঢুক আর অনুর আইডি টা দেখ।
(জামান ফোন কেটে দেয়)
মিটুল ফেসবুকে ঢুকে, কিন্তু অনু এখনো তার আইডি একটিভ করেনি।
মিটুল জামানকে ফোন দেয়।
মিটুল : অনুর আইডি তো ডিএকটিভ করা। কেনো কি হইছে বলতো।
জামান : অনুর আইডি ডিএকটিভ করা না, অনু তোকে ব্লকড করেছে ফেসবুকে।
মিটুল: ও আমাকে ফেসবুকে ব্লকড করবে কেনো? কি যে বলিস না তুই।
জামান : অনু এক মন্ত্রীর ছেলেকে বিয়ে করেছে, এবং সেই ছেলের সাথে আজ রাতে অস্ট্রেলিয়া চলে গেছে।
মিটুল : কি সব আলতু ফালতু কথা বলছিস এই সব অনু জিবনেও আমার সাথে এমন করতে পারে না।
জামান : তোর ম্যাসেঞ্জারে আমি ওর আর ওর জামাই এর পিক দিয়েছে আর ওর কিছু পোস্টের স্ক্রিনশট দিয়েছি। দেখ।
মিটুল ম্যাসেঞ্জারে ঢুকে জামানের দেওয়া সব পিক দেখে। তারপর অন্য একটি আইডি দিয়ে অপসরী কন্যা অনুর আইডি তে ঢুকে দেখে জামান ঠিক বলেছে। তারপর মিটুল অনুর ফোনেও ট্রায় করে।
সব কিছু মিটুলের কাছে এক দু:স্বপ্নের মত লাগছিলো। হটাত মাথা ঘুরিয়ে পরে যায়। সকালে নিজেকে বিছানার এককোনে আবিস্কার করে মিটুল। নতুন একটা আইডি খুলে অনুকে ফেসবুকে নক করে। কিন্তু সিন প্রযন্ত করে না সে।
মিটুল আবার চেঞ্জ হয়ে যায়। ছেড়ে দেওয়া সিগারেটটা কে আবার কাছে টেনে নেয়। নতুন সম্পর্ক হয় ইরাম আর স্যালের সাথে। এই সম্পর্ক ভিন্ন এক সম্পর্ক।
বেশিকিছুদিন পির অনুর আইডি থেকে মিটুলের ম্যাসেজের রিপ্লে আসে
অপসরী কন্যা : আমাকে ক্ষমা করে দিও মিটুল। আমি যা করেছি আমাদের ভালোর জন্যই করেছি। প্লিজ তুমি আমাকে আর নক করো না প্লিজ। আমার হ্যাজব্যান্ড জানলে সমস্যা হবে আমার। আমার সবকিছুই তো তুমি পেয়েছো। আর তোমার যদি কোন টাকা পয়সা লাগে আমাকে বলো, একটা একাউন্ট নাম্বার দাও আমি টাকা পাঠিয়ে দিব।
মিটুল অনুর এসএমএস পরে কিছুক্ষন হাসে, তারপর অনুকে ফেসবুকে ব্লকড করে। তারপর রুম থেকে বের হয়ে রওনা দেয় শ্যালের উদ্দ্যেশ্যে।
মিটুল সত্যিই চেঞ্জ হয়ে গেছে। অপসরী কন্যারা এমনি, প্রয়োজনে নিজেরাও চেঞ্জ হয় অন্যকেউ চেঞ্জ করে। নিজে চেঞ্জ হয় সুখের খোজে আর মিটুলদের মত ছেলেদের চেঞ্জ করে বানায় লেখক।
মিটুলরা আর বদলায় না, বদলাতেও চায় না।
সমাপ্ত
( পুরো গল্পটাই আমার কল্পনা । এর সাথে বাস্তবতার কোন মিল নাই )
আমার লেখা আরো গল্প পরতে চাইলে আমার পেইজ টি লাইক দিতে পারেন ।
https://www.facebook.com/arshipon15/

সোমবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

পেত্নীকন্যার বিয়ে

পেত্নীকন্যার বিয়ে
(সম্পুর্ন গল্প)
লেখা : MD Asadur Rahman (Sh Ip On)
বাবা : শুনলাম তুমি নাকি বিয়ে করতে চাচ্ছো?
দুপুর : না...... মানে
বাবা : মানুষ তো আর তুমি বিয়ে করবে না। তুমি তো সারাদিন ভুত পেত্নী নিয়ে থাকো। তো পেত্নী দেখবো নাকি তোমার জন্য?
মা : কি বলছো তুমি এইসব। ছেলে বড় হয়েছে বিয়ে করবে না?
বাবা : কি করে ছেলে যে বিয়ে করবে? চাকরি করে? ব্যাবসা করে?  টাকা ইনকাম করে?  বউ কে খাওয়াবে কি?
মা : আজ করছে না বলে কি কখনোই করবে না।
বাবা : না করবে না। টাকার পিছুনে ছুটতে হয় তারপর টাকা ধরা দেয় এমনি এমনি না। তোমার ছেলেতো ভুত পেত্নীর পিছনে ছুটছে। সে ভুত গোয়েন্দা, সে ভুতের গল্প লিখে। যাও কোন পেত্নী ধরে এনে পেত্নীর সাথে বিয়ে দাও তোমার ছেলেকে।
মা : হ্যা, পেত্নীর সাথেই বিয়ে দিবো তোমার সমস্যা?
বাবা : দেশের সব পেত্নী মরে গেছে। তোমার ছেলের আর বিয়ে হবে না। সারা জীবন গল্প লিখেই কাটাতে হবে। বিয়ে করতে হবে না।
মা : চুপ করো তুমি।
দুপুর রুম থেকে বের হয়ে যায়। বের হয়ে হাটা ধরে।
বাজারের পাশের ব্রিজে উপর বসে আছে দুপুর আর এমন সময়ে সেখানে আসে সজল।
সজল : কিরে কি হইছে তোর?  মনমরা করে বসে আছিস যে?
দুপুর : চিন্তা করছি।
সজল : কি চিন্তা?
দুপুর : আচ্ছা সত্যি কি ভুত পেত্নী আছে? থাকলে কোথায় গেলে তাদের পাওয়া যাবে?
সজল : হাহাহাহা। সেটাতো তুই ভালো জানিস। তুই না ভূত পেত্নী নিয়ে গল্প লিখিস।
দুপুর : সেগুলো তো আমার কল্পনা। বাস্তবে তো আর আছে কি?
সজল : থাকলে কি হতো?
দুপুর : থাকলে একটা পেত্নী বিয়ে করতাম।
সজল : হাহাহহাহাহা মজা পাইলাম।
দুপুর : কল্পনা খুব খারাপ জিনিশ রে মামা।
সজল : ঐ ঐটা কি রে? কি সরে গেলো এটা ?
দুপুর : কি?
সজল : মনে হলো একটঅকঘ্যতগতজ্ঞতগা ছায়া এখানে দাঁড়িয়ে ছিল। হটাত চলে গেলো এখান থেকে।
দুপুর : ধুর ঐটা তোর কল্পনা।
সজল : হতে পারে। আচ্ছা চল এখান থেকে, সমচা খাবো রিপন ভাইয়ের ।
দুপুর : চল।
দুপুর আর সজল চলে যায় সমচা খেতে।
শুনশান নিরব একটি শহর। গাড়িঘোরা, ল্যাম্পপোস্ট, পাকাবাড়ি, সবই আছে শহরে। শুধু মানুষের অভাব। মানুষের অভাবতো হবে কারন এটা যে ভুতের শহর।
শহরের পাকা রাস্তা ধরে যাচ্ছে। সামনে বিশাল একটা বাড়ি। ওহ একটি কথা বলা হয়নি। শহরটা একটু ভিন্ন ধরনের শহরটা আপনার আমার জন্য উল্টো। বুঝেননি তো। ধরেন আপনি দাড়ালেন। রাস্তার উপর। তখন এই শহরের বাড়িঘর, গাছ এমনকি রাস্তার গাড়ি গুলোও উল্টো করা।
যাই হোক সেই সুবিশাল উল্টো বাড়ির দরজা দিয়ে ঢুকে গেলো। হটাত শুন্য থেকে একজন ভেষে উঠলো। মাটি থেকে একটু উচু দিয়ে হাটছে সে। একটা রুমের ভিতর ঢুকে গেলো। তার নাম চিকুম্বা।
রুমের ভিতর চিকুম্বার মত আরো বেশ কয়েকজন।
চিকুম্বা : মহারাজ কি কোন বিষয় নিয়ে চিন্তিত?
মহারাজ : হ্যা।
চিকুম্বা : কি হয়েছে মহারাজ?
মহারাজ : আর বইলো না। পেত্নীকন্যা চৈতির বিয়ের বয়স হয়েছে। কিন্তু সে জের ধরেছে যে সে নাকই
ইি মানুষ বিয়ে করবে। কিন্তু মানুষ বলতে কি কিছু আছে?  এসব তো শুধু গল্প কবিতা কল্পনায় বিচরন করে। এখন বলো সেটা আমি কিভাবে ওকে বুঝাবো?
চিকুম্বা : কি যে বলেন মহারাজ। মানুষ বলতে অবশ্যই কিছু আছে। আমি নিজ চোখে দেখেছি।
মহারাজ : কি যে বলো না এই সব তুমি। তোমারও কি ইদানিং রাতে ঘুম হয় না বুঝি?
চিকুম্বা : মহারাজ আমি ঠিকই বলেছি। এইতো আমি আজ নিজ চোখে দেখে আসলাম। একটা মানুষ বলছিলো যে সেও নাকি ভূত পেত্নী বিয়ে করবে।
মহারাজ : ঠিক বলছো তো তুমি?
চিকুম্বা : জি মহারাজ, অবশ্যই ঠিক বলছি।
মহারাজ : তাহলে তুমি আগামীকাল এই ভুত রাজ্যে মানুষ হাজির করবে। আর না করতে পারলে তোমাকে আগুনে নিক্ষেপ করা হবে।
চিকুম্বা : ঠিক আছে মহারাজ।
চিকুম্বা চলে আসে সেখান থেকে।
অন্যদিকে দুপুর তার নিজের রুমে বেডের উপর সুয়ে আছে। মন খুব খারাপ। এপাস ওপাস করছে। হটাত তার মনে হলো তার রুমের জানালার পাশে কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে। ছায়া দেখা যাচ্ছে।
দুপুর বেড থেকে নেমে দাঁড়িয়ে থাকে কিছুখন। বোঝাই যাচ্ছে একজন মানুষের ছায়া। সে ধিরে ধিরে এগিয়ে যায় জানালার কাছে। আর ছায়াটাও ধিরে ধিরে পিছিয়ে যায়। দুপুর জানালার পর্দা সরিয়ে দেখে না কেউ নেই। তাহালে সে কিশের ছায়া দেখিতে পেলো? নাকি তার মনের ভুল। জানালা বন্ধ করে দেয়।
এই সব চিন্তা করতে করতে সে আবার তার বেডে এসে সুয়ে পরে। ঘুম ঘুম চলে এসেছে এবার।
দুপুর জেগো আছো?
দুপুর শুনতে পায় কে জেনো তাকে ডাকছে। দুপুর কোন উত্তর দেয় না। চুপ করে থাকে।
দুপুর জেগে আছো?
দুপুর এইবারও কোন উত্তর দেয় না। চুপ করে সুয়ে থাকে। এরপর অনেকক্ষন আর কোন সারা শব্দ নাই। আবার ঘুম ঘুম চোখ লেগে আসে। খুব জোরে একটা বাতাস এসে রুমের জানালা খুলে যায়। সোয়া থেকে উঠে বসে।
দুপুর বাইরে আসো
দুপুর : কে তুমি?
আমাকে তুমি চিনবে না।
দুপুর : আমি যদি তোমাকে নাই চিনি তাহলে এতো রাতে তোমার কথায় কেনো আমি বাইরে আসবো?
তুমি আমাকে না চিনলেও আমি তোমাকে চিনি। তুমি বাইরে আসো। কথা আছে।
দুপুর চুপ করে বসে কিছুখন চিন্তা করে। সে ভাবে কে সে, ভুত নাকি? নাকি ভুতের গল্প লিখতে লিখতে অবচেতন মন এই সব করছে। আচ্ছা যদি ভুতই হয়ে থাকে তবে মন্দ কি, সাক্ষাতের পর তাকে নিয়ে একটা গল্প লিখা যাবে।
দুপুর ধিরে ধিরে বাইরে বেড থেকে নেমে দরজা খুলে বাইরে আসে। বাইরে কেউ নেই। সব কিছুই নিরব।
দুপুর : কোথায় তুমি? আমি তোমাকে দেখতে পাচ্ছি না।
আকি তোমাকে এই মুহুর্তে দেখা দিতে পারবো না। আমি তোমাকে আমার সাথে নিয়ে যাবো।
দুপুর : কি বলছো এই সব?  আমি কেনো তোমার সাথে যাবো?  আমি কোথাও যাবো না। আমি ফিরলাম আমার ঘরে।
কথা শেষ করে রুমের দিকে পা বাড়ানোর সাথে সাথে দুপুরের শরীর ভাড়ি হতে শুরু করে। হাত পা ঠান্ডা হয়ে যায়, নড়াচড়া করতে পারে না আর কিছু পর জ্ঞ্যান হারিয়ে ফেলে। সব কিছু অন্ধকার হয়ে যায়।
দুপুরের জ্ঞ্যান ফিরে। একটা খোলা মাঠে, গাছ পালা  গুলো সব উল্টো হয়ে আছে। তার কিছুখন পর খেয়াল করে কিছু বাচ্চা ছেলে পেলে পা উল্টো দিক করে মাথা তার দিকে দিয়ে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আর বাচ্চা গুলো দেখতে অনেকটা মানুশের মত হলেও তাদের কান ও নাক গুলো আমাদের চেয়ে লম্বা। চোখ গুলোও অনেক বড় আর গোল, তবে চোখে ক্যামন জেনো একটা মায়া আছে। আর হ্যা কয়েকজনের আবার গায়ের লোম অনেক। লোমের কারনে কালো দেখাচ্ছে।
দুপুর এই অদ্ভুত প্রানীগুলো দেখে জোরে চিৎকার করে। সে আবার জ্ঞ্যান হারায়।
কিছুখন পর আবার জ্ঞ্যান ফিরে আসে। এবার আসে পাসে কেউ নেই তবে কিছুক্ষন পরেই আরেকজন তার মুখের সামনে আসে ঠিক আগের বাচ্চাগুলোর মত করে।
~ ভয় পেও না দুপুর। আমিই তোমাকে এখানে নিয়ে এসেছি।
দুপুর : তুমি কে? আর আমাকে তুমি কোথায় নিয়ে এসেছো?
~ আমি ভূত, আমার নাম চিকুম্বা। আর তুমি এখন আছো ভূত-পেত্নীদের শহর কলংকপুরে।
দুপুর : কিহ!  ভূত বলতে আবার কিছু আছে নাকি? আমি সব স্বপ্ন দেখছি।
চিকুম্বা : হাহাহাহহাহা (ভৌতিক হাসি) তুমি নিজে শত শত ভুতের গল্প লেখো আর তুমি বলছো ভূত বলতে কিছু আছে কিনা। অবশ্য আমাদের ভূত সমাজও বিশ্বাস করে না যে মানুষ বলতে কিছু আছে। আর সেই কারনেই তোমাকে এখানে নিয়ে আসা। তবে আরেকটা কারন ও আছে।
দুপুর : তুমি মিথ্যে বলছো।
চিকুম্বা : আচ্ছা দেখো আমি যদি মানুষ হতাম তাহলে কি এইভাবে উল্টো হয়ে থাকতে পারতাম। আবার দেখো তোমার মত দাড়াচ্ছি ( চিকুম্বা সোজা হয়ে মাটিতে পা দিয়ে দাঁড়ায়)।
দুপুর : আমাকে প্লিজ আমার বাসায় দিয়ে আসো। আমি এখানে থাকবো না।
চিকুম্বা : কি বলছো তুমি এই সব। তোমাকে যদি আমি মহারাজের সামনে উপস্থিত না করতে পারি তাহলে সে আমাকে অগ্নীকূপে নিক্ষেপ করবে। তারপর আমি অনন্তকাল জলতে থাকবো। আহ! সে কি যন্ত্রনা।
দুপুর : আমাকে দিয়ে কি করবে তুমি?
চিকুম্বা : এই তুমি না পেত্নী বিয়ে করতে চাও, আমি তোমার সব কথা শুনেছি। আর তাই তোমাকে নিয়ে এসেছি আমাদে ভূত মহারাজের পেত্নীকন্যার সাথে তোমার বিয়ে দিতে। সেও তোমার মত আরজি করেছে সে মানুষ ছাড়া বিয়ে করবে না। আর ঐদিকে ভূতমহারাজ মানুষে বিশ্বাস করে না, তাই চিন্তায় পরে যায়।  আর তখন আমি তার কাছে গিয়ে তোমার কথা আর তোমার পেত্নী বিয়ে করার ইচ্ছার কথা বলি। তারপর সে তোমাকে আনার অনুমতি দেয়।
দুপুর : সত্যি পেত্নী বলতে কিছু আছে?  সত্যি আমি পেত্নী বিয়ে করতে পারবো। (দুপুরের চোখে মুখে ভয় কেটে গিয়ে উচ্ছলতা প্রকাশ পায়)।
চিকুম্বা : হ্যা গো সত্যি বলছি আমি ।
দুপুর : তাহলে আমাকে এখনি নিয়ে চলো।
চিকুম্বা : হ্যা। অবশ্যই।
চিকুম্বা দুপুরকে নিয়ে যায় ভূতরাজের দরবারে। উল্টো করা দরজা দিয়ে ঢোকার সাথে সাথেই ভিতরে থাকা ভূত গুলো মানুষ মানুষ বলে চিৎকার করে দিকবেদিক ছোটাছুটি শুরু করে দেয়। তারা মানুষ দেখে ভয় পেয়ে যায়।
চিকুম্বা : ভয় নেই ভয় নেই আমি চিকুম্বা। আর আমার সাথের মানুষটি খুব ভালো। এই মানুষ কোন ভূত পেত্নীর ক্ষতি করে না। খুব ভালো। তোমরা ভয় পেয় না তো।
ভূতমহারাজ : তুতুতুতুতুতুতুতুমি সত্যি সত্যি মানুষ ধরে নিয়ে এসেছো?
চিকুম্বা : জি মহারাজ, আপনিই তো বলেছিলেন মানুষ ধরে না আনতে পারিলে আমাকে অগ্নীকূপে নিক্ষেপ করবেন।
ভুতমহারাজ : যাক যাক ভালো করেছে। আচ্ছা মানুষ এইভাবে উল্টো হয়ে আছে কেনো?
চিকুম্বা : মহারাজ এরা মানুষ, এরা এভাবেই থাকে। এদের কাছে আমরা উল্টো হয়ে আছি। যদিও আমরা চাইলেই তাদের মত সোজা হয়ে দাড়াতে পারি কিন্তু এরা পারে না।
এই কথা শুনে দরবারের অন্যান্য ভূত পেত্নীগন খিল খিল করে হেসে উঠে।
ভূতরাজ : আচ্ছা আপনি কি পেত্নী বিয়ে করতে রাজি আছেন হে মানুষ?  আর আপনার নাম আছে কি কোন?
দুপুর : আমার নাম দুপুর। আর জি ভুতরাজ আমি পেত্নী বিয়ে করতে রাজি আছি। তবে তাকে আগে আমি একবার দেখতে চাই।
ভুতরাজ : শুভ সংবাদ শুভ সংবাদ। তবে সমস্যা হচ্ছে পেত্নী আরজি ধরেছে সে কোন মানুষের সাথে ভাব করে বিয়ে করবে। তাই আপনাকে প্রথমে তার সাথে ভাব করতে হবে।
(দুপুর চিকুম্বার কানে কানে জিজ্ঞেস করে ভাব মানে কি, চিকুম্বা উত্তর দেয় মানুষরা যেটাকে প্রেম বলে সেটাকেই ভুতপেত্নীরা ভাব বলে)
দুপুর : কিন্তু সেটা কিভাবে সম্ভব?
চিকুম্বা : ভূতরাজ আপনি সেই বিষয় নিয়ে চিন্তা করবেন না। আমি তাদের মধ্যে ভাব সৃষ্টির ব্যাবস্থা করবো।
ভুতরাজ : শুভ সংবাদ শুভ সংবাদ। তাহলে তাই হোক। দুপুর নামের এই মানুষটির দেখভাল থেকে শুরু করে পেত্নীর সাথে ভাব করনো চিকুম্বার দায়িত্ব। তারপর এই ভুতরাজ্যের শহর কলংকপুরে পেত্নীকন্যা চৈতি আর মানুষ দুপুরের জাকজমক বিয়ের ব্যাবস্থা করা হবে। আজ তাহলে আমি এখানেই উঠি।
চিকুম্বা আর দুপুর সেখান থেকে চলে আসে।
অন্যদিকে পেত্নী কন্যা খুব চিন্তায় মগ্ন থাকে সারাদিন, কোথায় সে পাবে একজন মানুষ। যাকে সে বিয়ে করবে।
দুপুর আর চিকুম্বা কথা বলছে, কিভাবে পেত্নীদের সাথে প্রেম করতে হয়।
চিকুম্বা : পেত্নীরা ভাজা মাছ খুব পছন্দ করে, তুমি একটা কাজ করতে পারো তুমি একটা ভাজা ইলিশ মাছ নিয়ে পেত্নীর সামনে গিয়ে হাজির হও। তারপর তাকে তোমার মনের ভাবের কথা বলো।
দুপুর : আচ্ছা ভুতরা কি এইভাবেই প্রেমপ্রস্তাব করে পেত্নীদের?
চিকুম্বা : প্রেমপ্রস্তাব কি?...........  ওহ হ্যা বুঝেছি, ভাবপ্রদান তো?
দুপুর : হ্যা।
চিকুম্বা : ভুতরা হটাত গিয়ে পেত্নীদের সামনে হাজির হয় তারপর কিছু ঘুষ দিয়ে পেত্নীদের ভাবজমায়।
দুপুর : ঘুষ? তোমরাও ঘুষ দাও আর খাও?  ছি ছি ছি।
চিকুম্বা : ওহ দু:ক্ষিত। তোমরা যেটা উপহার বা গিফট বলো সেটাই আমাদের ভুত রাজ্যে ঘুষ বলে। আর তোমদের দুনিয়াতে যেই ঘুষ সিস্টেম আছে সেটা আমাদের এখানে নেই। বুঝলে?
দুপুর : হ্যা বুঝলাম। তো এখন আমাকে কি করতে হবে?
চিকুম্বা : দুপুর এখন ফার্স্ট তোমাকে পেত্নীর কাছে যেতে হবে। তাকে তোমার ভাবে ফেলতে হবে।
দুপুর : তাকে পাবো কোথায়?
চিকুম্বা : আমি নিয়ে যাবো।
দুপুর : সেটা কখন?
চিকুম্বা : বিকেলে পেত্নীকন্যা চৈতি দিঘীর ধারে আসে। তখন তুমি তার কাছে যাবে।
দুপুর : আচ্ছা ঠিক আছে।
পেত্নীকন্যার মনটা আজ তেমন একটা ভালোনা। প্রতিদিন দিঘীর ধারে যাওয়ার সময় সাথে দুই একজন সখা (বান্ধবী) নিলেও আজ সে একাই এসেছে। দিঘীর ধারে হাটছে। আর কল্পনা করছে তার স্বপ্নের মানুষটি কি সত্যিই তার কাছে কখনো আসবে, নাকি তাকে সারাজীবন একাই থাকতে হবে। ভাবতে ভাবতে একটি গাছের নীচে বসে। (আগেই বলেছি ভুত রাজ্যের প্রায় সবকিছুই উল্টো, গাছও উল্টো)
চিকুম্বা: দুপুর, এই দুপুর ঐ দেখো চৈতি।
দুপুর : চৈতি কে?
চিকুম্বা : আরে পেত্নীকন্যার নামই তো চৈতি। নিজের হবু বউ এর নাম ভুলে গেলে চলবে?
দুপুর : ওহ হ্যা। একদমই ভুলে গিয়েছিলাম। আচ্ছা আমি তাহলে তার সামনে যাই।
চিকুম্বা : আরে দারাও পেত্নীকন্যা কখনো মানূষ দেখেনি। তুমি এইভাবে উল্টো হয়ে তার সামনে দাড়ালে হয়তো ভয়ে জ্ঞ্যান হারিয়ে ফেলবে। আর তারজন্য ঘূষও নিতে হবে তো তাই না।
দুপুর : আমি তো ঠিকই আছে। উল্টো তো তোমরা।
চিকুম্বা : আমরা সবাই যার যার জায়গা থেকে ঠিকই আছি। এখন শুনো। তুমি তো আর আমাদের মত এইভাবে থাকতে পারবে না তাই আমি উপর থেকে তোমার পা ধরে তোমাকে সোজা করে ধরবো।
দুপুর : সোজা করে না, বলো উল্টো করে ধরবে।
চিকুম্বা : আচ্ছা যেটাই হোক। আর হ্যা, এইটা ধরো এইটার ভিতর কিছু তেলোপোকা আছে, পেত্নীরা খেতে খুব পছন্দ করে।
দুপুর : তেলেপোকা???  মেয়েরা দেখলে তো ভয়ে লাফিয়ে দৌড় দেয়।
চিমুম্বা : চৈতি কোন মেয়ে না, সে পেত্নীকন্যা। সুতরাং মানুষের সাথে মিলালে চলবে না।
দুপুর : ঠিক আছে।
চিকুম্বা দুপুরের পা ধরে মাথা নিচের দিকে দিয়ে গাছ থেকে পেত্নীর সামনে নিয়ে আসে। পেত্নীকন্যা চৈতি বসে ছিলো আনমনে। খেয়ালকরেনি এখনো দুপুরকে। আর দুপুর অপলক দৃষ্টুতে পেত্নীকে দেখছে।
আচ্ছা আপনার কি মনে হয় পেত্নী দেখতে কেমন? প্লিজ দয়া করে নিচের অংশটুকু পড়ার আগে আপনি কমেন্টস বক্সে পেত্নীর একটি বর্ননা দিন। কেমন হতে পারে পেত্নীকন্যা?  পেত্নীকন্য?????????

দুপুরের কল্পনায় ছিলো হয়তো পেত্নী দেখতে হবে ফর্সা, কিন্তু কুতসিত। চোখ গুলো থাকবে বাকাঝোকা, নাকটা হবে অনেক লম্বা, দাতগুলো বিশ্রি আর ভাংজ্ঞাচোরা, চুলোগুলো নরমালিই সবাই ভাববে এলোমেলো আর নখগুলো অনেক বড় বড়।
কিন্তু না, পেত্নীকন্যা চৈতি ঠিক তেমন না, আর তাই দুপুর অপলক, মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে চৈতির দিকে। আচ্ছা আমি একটু পেত্নী কন্যার বর্ননা দেই।
প্রথমে চোখ দুটো। গোল মুখে বড় বড় মায়াবী টলমলে চোখজোরা, চোখে কাজল পরছে, কানদুটোও একটু বড় আর খাড়া, দাতগুলো একদম সাদা, সামনের দুটো দাত একটু উচু। নাকটা একটু সামান্য খাড়া, আর হ্যা বড় বড় মায়াবী চোখে চশমা পরেছে। আমরা যেমন ছোটবেলায় নারিকেল পাতা দিয়ে চশমা বানাতাম, সেই নারিকেল পাতার চশমা পরা। মিলিয়ে অসাধারন।
চৈতি আনমনে হেসে উঠলো কিছু একটা ভেবে। আর তখন দুপুর খেয়াল করলো চৈতির আরেকটি সৌন্দর্য আছে আর সেটা হলো তার একটি দাত নেই, আর তার কারনে তার হাসিটা অসাধারন, গালে টোলও পরেছে দেখছি।
এই এই এই কে কে কে কে আপনি?
দুপুর : আমি দুপুর। এই নাও তোমার ঘুষ।
চৈতি : ঘূষ কেনো?
দুপুর : আমি তোমাকে দেখে তোমার ভাবে পরেগেছি। তোমাকে বিয়ে করতে চাই।
চৈতি : ছি ছি এতো বড় সাহস তোমার তুমি আমাকে  বিয়ের প্রস্তাব দাও, আমি মানুষ ছাড়া কাউকে বিয়ে করবো না।
দুপুর : আমি মানুষ, আমার নাম দুপুর।
চৈতি : মানুষরা কখনই এইভাবে সোজা হয়ে থাকে না। আর এইভাবে ভাব নিবেদন করে না। আর এইগুলা কি হ্যা?  (ঘুষের প্যাকট খুলে তেলোপোকা দেখে চিতকার দিয়ে জ্ঞ্যান হারিয়ে ফেলে)
চিকুম্বা এই পরিস্থিতি দেখে হতভম্ব হয়ে দুপুরের অয়া ছেরে দেয় আর দুপুর ধপাস করে নিচে পরে যায়। তারপর পেত্নীকন্যা চৈতির কাছে আসে এবং তার জ্ঞ্যান ফিরানোর চেষ্টা করে।
চিকুম্বাও নিচে চুলে আসে। উল্টো হয়ে সেও বিভিন্ন উপায়ে চৈতির জ্ঞ্যান ফিরানোর চেষ্টা করে।
দুপুর : ওর মুখে হালকা পানি ছিটিয়ে দিলেই জ্ঞ্যান ফিরে আসবে।
চিকুম্বা : তুমি এইভাবে ওর সামনে আসলে ও আবার জ্ঞ্যান হারাবে।
দুপুর : চুপ তুমি চুপ। আমাকে আমার মত কাজ করতে দাও। ও মানুষের সাথে প্রেম করতে চায়, কোন ভূতের সাথে নয়। সো আমাকে মানুষ হিসেবেই ওর সামনে দাড়াতে হবে।
চিকুম্বা : ভালো বলেছো। তোমরা মানুষরা আসলেই অনেক বুদ্ধিমান।
পানি ছিটিয়ে চৈতির জ্ঞ্যান ফিরিয়ে আনে।
দুপুর : আমি দু:ক্ষিত আপনাকে ভয় দেখানোর জন্য।
চৈতি : আমি পৃথিবী থেকে এসেছি, আমার নাম দুপুর। আমি একজন মানুষ।
চৈতি : (নিচু গলায় একট লজ্জামাখা মুখকরে) আপনি এই কলংকপুরে কেনো?
এরপর দুপুর শুরু থেকে শেষপ্রযন্ত সব খুলে বলে এবং অবশেষে পেত্নীকন্যা চৈতির সামনে হাটুগেরে বসে প্রেম নিবেদন করে এবং পেত্নীকন্যা চৈতিও খুশি মনে দুপুরের ভাবনিবেদন কবুল করে নেয়।
এরপর দুপুর আর পেত্নীকন্যা কলংকপুরের ভূতরাজ এর কাছে যায়। চৈতি মানুষ দুপুরকে বিয়ের ইচ্ছের কথা তার বাবাকে জানায় এর পর
ভুতরাজ ধুমধাম করে বিয়ের আয়োজন করে তাদের বিয়ে দিয়ে দেয়। শেষ হয় পেত্নীকন্যার বিয়ে। আর বিয়ের পর সংসারের পালা, মানুষ দুপুরের সাথে পেত্নী কন্যার সংসার। আবার কোন একদিন পেত্নীকন্যার সংসারের গল্প নিয়ে হাজির হবো। অপেক্ষা করুন, পেজে লাইক দিয়ে সাথে থাকুন। www.facebook.com/arshipon15/ ভালো লাগলে পেজে অবশ্যই লাইক দিবেন। এক লোকের গল্প ভালো লাগছিলো কিন্তু পেজে লাইক দেয় নাই, এরপরের দিন তার ঘাড় মটকে দিয়েছিলো পেত্নী। সো বি কেয়ারফুল। হাহাহাহাহাহাহাহাহাহা। আল্লাহ হাফেজ।

রবিবার, ২৩ জুলাই, ২০১৭

পাহারাদার ( রহস্য ভৌতিক গল্প ) লেখা ঃ Md Asadur Rahman (Sh Ip On)


#পাহারাদার ( রহস্য ভৌতিক গল্প )
লেখা ঃ Md Asadur Rahman (Sh Ip On)

হৃদয় এর সাথে কিছুদিন যাবত ১টা ঘটনা ঘটছে। কেউ কেউ বিশ্বাস করছে আবার অনেকেই না । না করার সংক্ষাটাঈ বেশি । বললে হয়তো আপনিও বিশ্বাস করবেন না । আচ্ছা বলি আমি । হৃদয় ইদানিং খেয়াল করছে যা কে জেনো তার পিছু পিছু ছায়ার মত ফলো করছে , কিন্তু পিছু বা আশে পাশে তাকালে কেউ নাই । দুদিন আগে টিবিলে সে ১টা নোটবই রেখেছিল, পরে দেখে সেটা তার রুমের বাইরে পরে আছে । তার স্পষ্ট মনে আছে সেটা সে টেবিলের উপরে রেখেছিল। ওইদিন বাসায় কেউ ছিল না। তাহলে কে বইটা সরালো ? আবার হটাত ঘুম ভাঙ্গে , চোখ মেলে দেখে যে ১টা ছায়া তার বিছানার পাশ থেকে সরে গেলো । আর সব চেয়ে বেশি ভয় পায় যে ঘটনাটির জন্য সেটা হলো সে প্রায়ই ছাদের ঠিক কোনায় এসে বসে। সেখানে বসে সে চারদিকে দেখে । ওইদিন এভাবে বসে দেখছিল । হটাত কে জেনো তাকে ধাক্কা দেয়, কোনরকমে নিজেকে কন্ট্রোল করে বেচে যায় । আর একটুর জন্য সে হারাতে বসেছিল তার এই মুল্যবান জীবনটি। এরপর সে এই বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত হয়ে পরে । বাবা মা কে জানালে তারা বলে এটা তার মনের ভুল। কোন কিছু নিয়ে হয়তো টেনশন করছে তাই তার মনে এমন হচ্ছে । হৃদয় তার বাবা মার কথা মেনে নিতে পারে না । কারন তার টেনশনের কিছু নাই । বন্ধুদের সাথে শেয়ার করার পর তারা এটা নিয়ে হাসাহাসি করে । তবে কেউ কেউ বিষয়টি সিরিয়াসলি দেখে । তাদের মধ্যে একজন সাফা। সাফা হৃদয়ের খুব কাছের বন্ধু। একসাথেই পড়ালেখা করে । অনেক সময় মনে হয় বন্ধুত্বের চেয়েও কিছুটা বেশি তাদের সম্পর্ক । আপাতত সেদিকে না যাই ।
সাফা তার দাদিকে হৃদয়ের সমস্যার কথাটি জানায় । দাদি এক হুজুরের সাথে হৃদয়কে কথা বলতে বলে । সাফা আর হৃদয় দুজনে একসাথে হুজুরের কাছে যায় । হুজুর হৃদয়ের সব কথা শুনে হৃদয়কে ১টা তামার তাবিজ দেয় আর বলে এটা যেন সে সব সময় তার সাথে রাখে ।
তাবিজ নেওয়ার পড় থেকে আর তেমন কোন সমস্যা হচ্ছে না হৃদয়ের । কিন্তু এখন আরেকটা সমস্যা রয়েই গেলো । সমস্যা হলো বন্ধুদের নিয়ে । যেমন অর্নব, অর্নব এখন হৃদয়কে ভুত ভাই বলে ডাকে । ওরা বিশ্বাস করে না যে সত্যিই এমন কিছু ঘটছিল হৃদয়ের সাথে ।
ক্লাস শেষে একদিন
অর্নব ঃ কিরে ভুত ভাই কি খবর তোর ?
সাফা ঃ অর্নব তুই সব সময় কেন ওর সাথে এমন করিস ?
অর্নব ঃ কেমন করলাম আমি ? বন্ধুর সাথে একটু মজা করতে পারি না ?
সাফাঃ এটা মজা না । টিটকারি ।
হৃদয়ঃ থাম তোরা ।
তানিম ঃ আচ্ছা হৃদয় তুই কি সত্যি ভুত বিশ্বাস করিস ? আছে কি ভুত ?
হৃদয়ঃ ভুত কি না যানি না । তবে প্যারানরমাল কিছু তো ১টা অবশ্যই আছে । হয়তো তার নাম ভিন্ন ।
মাহফুজ ঃ আজাইরা প্যাচাল নিয়ে আসছে আমার । এগুলা কিচ্ছু নাই ।
সাফা ঃ তুই জানিস কিচ্ছু নাই ?
মাহফুজ ঃ হ্যা জানি ।
তানিম ঃ তাহলে ১টা কাজ করি । মিম দের গ্রামের বাড়ি যাই চল । ঐ বাড়ি নাকি ভুত থাকে । পুরোনোদিনের জমিদার বাড়ি। আমরা ওইখানে গিয়ে দেখি যে ভুত দেখতে পাই কিনা । যাবি ?
হৃদয় ঃ আমি রাজি ।
সাফা ঃ হৃদয় গেলে আমিও যাবো ।
তানিম ঃ কিরে মাহফুজ যাবি না ?
মাহফুজ ঃ না যাওয়ার কি আছে । চল সবাইকে বলি । দেখি কে কে যায় ।
এরপর ওরা মিমের সাথে যোগাযোগ করে ১টা ডেট ফিক্সড করলো । এইতো আর মাত্র ২দিন পর । অর্নব, হৃদয়, সাফা, মিম, তানিম, সুমাইয়া, মাহফুজ, রাতুল আর নাসরিন যাবে । ঢাকা থেকে ১টা মাইক্রোবাস করে রওনা দেয় ওরা । সন্ধ্যার একটু পরে গাড়ি ছারে রাঙ্গামাটির উদ্দ্যেশে। ভুত দেখার উদ্দ্যেশে গেলেও আপাতত তাদের কাছে এটা ১টা পিকনিক ।
“গাড়িতে গান গাচ্ছে সবাই। চলনা ঘুরে আসি অজানাতে, যেখানে নদি এসে থেমে গেছে”
হাইওয়ে রোডে প্রচন্ড স্পিডে গাড়ী চলছে । জানালা খোলা, জানালা দিয়ে বাতাস ঢুকছে। বাতাসে সাফার চুল উরছে, সুমাইয়া আর মিম গান নিয়ে খুব ব্যাস্ত। নাসরিন মোবাইলে ব্যাস্ত । ছেলেগুলো সব গানে মেতে আছে । বাইরে ঘুটঘুটে অন্ধকার। মাঝে মাঝে পাশের গাড়ীগুলোর আলো দেখা যাচ্ছে, গাড়ির সংক্ষা কম । দুরের বাড়ি গুলোতে জোনাকপোকার মত আলো জলছে ।
গাড়ী চলছে তো চলছে প্রচন্ড স্পিডে আর গাড়ীর ভিতরে গান আর হই-হুল্লোর । হটাত গাড়ীটা আচমকা ব্রেক করে, সবাই ঝাকি খায়, ভয় পেয়ে যায় ।
সুমাইয়া ঃ এই ড্রাইভার ভাই কি হয়ছে ? কিভাবে গাড়ী চালান আপনি ?
ড্রাইভার ঃ হটাত ১টা কালো বিড়াল সামনে চলে এসেছিল তো তাই আফা ।
অর্নব ঃ ভাই দেখে শুনে গাড়ী চালান । দরকার হলে ধিরে ধিরে চালান ।
ড্রাইভার ঃ জি আচ্ছা।
গাড়ী আবার চলতে শুরু করে । প্রথম দিকে ধিরে ধিরে চললেও একসময় সেটার স্প্রীড আবার বারে। গাড়ির ভিতরে বেশ কয়েকজন ঘুমিয়ে গেছে । জেগে আছে হৃদয়, সাফা, তানিম, নাসরিন আর অর্নব ।
ড্রাইভার ঃ ভাই সামনে আরেকটা বিড়াল । ব্রেককরবো কি ?
হৃদয় ঃ প্রয়োজন নেই । আপনি চালিয়ে যান ।
সাফা ঃ কি বলিস তুই হৃদয় ? একটা অবুঝ প্রানীকে কেনো মারবো আমরা ?
সাফার কথা বলতে বলতে গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয় বিড়ালটি । ড্রাইভার চেষ্টা করে বাচানোর জন্য কিন্তু বিড়ালটা যেনো নিজে ইচ্ছে করেই গাড়ির নিচে পরলো মনে হয় । হাড়গোর ভাঙ্গার প্রচন্ড শব্দ হয় । শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায় বাকি সবার ।
মাহফুজ ঃ এই কি হলো ? কিশের শব্দ ?
নাসরিন ঃ গাড়ির নিচে বিড়াল চাপা পরেছে ।
সাফা ঃ ড্রাইভার গাড়ীটা থামান ।
ড্রাইভার গাড়ী থামায় ।
তানিম ঃ গাড়ী থামালি কেনো ?
সুমাইয়া ঃ একটা এক্সিডেন্ট হলো ।দেখতে হতে হবে না ।
সাফা, সুমাইয়া, রাতুল আর তানিম নামে গাড়ির বাইরে, দেখতে যায় ।
কিছুখন পর দৌড়ে ফিরে আসে ওরা।
অর্নব ঃ কিরে হাপাচ্ছিস কেনো ?
সুমাইয়া ঃ বাইরে কিছু নাই ।
অর্নব ঃ বাইরে কিছু নাই মানে ?
রাতুল ঃ আমি নিজের চোখে দেখেছিলাম যে বিড়ালটা গাড়ীর নিচে পরলো । আমি ড্রাইভারের পাশের সিটে । সো আমার ভুল হওয়ার কথা না । এক্সিডেন্ট হইছে ।
হৃদয় ঃ এক্সিডেন্ট তো হইছে আমিও দেখছি ।
সাফা ঃ কিন্তু এখানে তার কোন চিন্হ নেই । রাস্তা সম্পুর্ন পরিস্কার ।
তানিম ঃ এই তোরা সবাই গাড়ীতে উঠ এক্ষনি । বাইরে আর একমুহুর্তও না ।
সবাই গাড়ীতে উঠে বসে ।একজন আরেকজনের দিকে তাকাচ্ছে । কি হলো কিছুই বুঝতে পারছে না ।
ড্রাইভার ঃ ভাই আমরা মনে হয় কোন ভুতের খপ্পরে পরছি ।
মাহফুজ ঃ উল্টা পাল্টা কথা বলেন কেনো আপনি ? ভুত টুত কিছু নাই ।
ড্রাইভার ঃ ভাই পরছেন তো ক্ষপ্পরে , বুঝবেন একটু পরে ।
মিম ঃ দেখ দেখ, সামনে ১টা মানুশ দেখা যাচ্ছে মনে হয় । ঐ একটু দূরে ।
রাতুল ঃ হ্যা । ঐ দূরে ।
গাড়ি একটু কাছে । এখন অল্প আলোতে বুঝা যাচ্ছে যে একজন বৃদ্ধলোক খুব ধিরে ধিরে রাস্তা পার হচ্ছে ।
ড্রাইভার ঃ ভাই এইবার কি করুম ? সামনে পরলে কি দিমুনি উপর দিয়া উঠাইয়া ?
তানিম ঃ হ্যা অবশই ।
সুমাইয়া ঃ কি বলছিস তুই তানিম ? মানুষ মেরে ফেলবি ?
রাতুল ঃ তো তোমার জন্য কি করবো ? উনাকে বাচাতে গিয়ে আমরা বিপদে পরবো ?
মাহফুজ ঃ উনাকে মারবেন না ড্রাইভার । প্রয়োজনে গাড়ি থামিয়ে দিবেন ।
হৃদয় ঃ কখনোই না । গাড়ী থামবে না ।
অর্নব ঃ এই বৃদ্ধও হয়তো কোন অশুভ আত্তা হতে পারে ।
নাসরিন ঃ আমার মনে হয় গাড়ি না থামানোই ভালো ।
মিম ঃ ঠিক বলেছিস ।
সাফা ঃ তোরা সবাই লোকটাকে মেরে ফেলতে চাইছিস ।
লোকটা গাড়ির সামনে এসে পরে । গাড়ীর দিকে তাকায় । ড্রাইভার লোকটার উপর দিয়ে গাড়ী চালিয়ে দেয় । কড়মড় করে হাড্ডি ভাঙ্গার শব্দ শুনতে পায় সবাই । মিম গাড়ির পিছনে তাকায় । তারপর চিৎকার করে উঠে । মিমের চিৎকার শুনে বাকি সবাই পিছনের দিকে তাকায় । তাকানো পরে ওরাও ভয়ে চিৎকার করে উঠে । যেই বৃদ্ধ লোকটিকে এই মাত্র গাড়ী চাপা দিল, যার হাড় ভাঙ্গার শব্দ হলো সে ওদের গাড়ির পিছু পিছু দৌড়াচ্ছে । চোখ দিয়ে মনে হচ্ছে আগুন ঝরছে তার । ভয়ে ওরা চিৎকার করছে আর ড্রাইভারকে তারা দিচ্ছে গাড়ীর স্পীড আরো বারানোর জন্য ।
গাড়ি ভীষন স্পীডে চলছে । চলছে তো চলছেই। গাড়ীর ভিতরের সবাই ভয়ে শুকিয়ে গেছে । কিছু ১টা চাকার সাথে গেথে চাকা পাঞ্চার হয়ে যাওয়ার শব্দ । চাকা পাঞ্চার হয়ে থেমে যায় গাড়ী ।
সুমাইয়া ঃ থেমে গেলো কেনো ?
হৃদয় ঃ গাড়ীর চাকা পাঞ্চার হয়ে গেছে ।
নাসরিন ঃ এখন কি হবে তাহলে ?
অর্নব ঃ নেমে দেখি আগে ।
সুমাইয়া ঃ নাহ, তুমি নামবে না প্লিজ ।
সাফা ঃ আচ্ছা আমি নামছি, তোরা থাক ।
হৃদয় ঃ আমিও নামছি ।
ড্রাইভার ঃ ভাই আমরা সবাই একসাথে নামি ?
রাতুল ঃ ভালো বুদ্ধি । চল সবাই নামি।
এক এক করে সবাই নামে গাড়ী থেকে। গাড়ী থেকে নেমে দেখে পিছনের ১টা চাকা পাঞ্চার হয়ে গেছে। ১টা বড় গজালে আটকে গেছে ।
ড্রাইভার ঃ কি করবো ভাই এখন ? আশে পাশে তো কোন গ্যারেজ ও নাই ।
অর্নব ঃ হ্যা কি করা যায় ।
মিম ঃ দেখ কে জেনো এদিকে আসছে ।
নাসরিন ঃ হ্যা এদিকেই আসছে, হাতে ১টা বাতি ।
রাতুল ঃ ঐটা হারিকেন ।
লোকটা কাছে চলে আসে। বয়স্ক মোটামুটি, লুঙ্গি, চাদর গায়ে দেওয়া, হাতে ১টা হারিকেন আর লাঠি । লোকটা ওদের কাছে এসে দাঁড়ায় ।
অচেনা ঃ এতো রাতে আপনারা এখানে কি করেন ?
হৃদয় ঃ আমাদের গাড়ীটা নষ্ট হয়ে গেছে ।
অচেনা ঃ গাড়ী নষ্ট হয়ে গেছে ? আচ্ছা সামনে তো ১টা গ্যারেজ আছে সেখান থেকে না হয় লোক ডেকে নিয়ে আসেন ।
হৃদয় ঃ কোথায় সেটা ?
অচেনা ঃ এইতো সামনে । ড্রাইভার সাহেব চলেন আমার সাথে আমি দেখিয়ে দেই।
ড্রাইভার ঃ আচ্ছা চলেন ।
অর্নব ঃ ড্রাইভার আপনি একা যাবেন, আমি সাথে যাই ?
ড্রাইভার ঃ জি না ভাই । আপনি থাকেন সবার সাথে । আমি যাবো আর আসবো।
অচেনা ঃ আর ১টা কথা । এখানে বেশিখন থাকবেন না প্লিজ। জায়গাটা ভালো না । ভুত প্রেত আছে আরকি ।
মাহফুজ ঃ ভুত প্রেত মানে কি , এই সব কিচ্ছু নাই ।
অচেনা ঃ তাহলে থাকেন এখানে । আর যদি ভালো চান তাহলে ঐদিকে(হাত উচু করে ১টা জায়গা দেখায়) যান। ওইখানে রেল স্টেশন এর ১টা ঘর আছে সেখানে গিয়ে রেষ্ট নেন । আর শুনেন ঐটার উল্টা দিকে ১টা শ্বষান আছে । ভুলেও ঐ দিকে যাবেন না । ড্রাইভার আসেন ।
লোকটি ড্রাইভার কে নিয়ে চলে যায় । আর এদিকে এদের মধ্যে মাহফুজ ছাড়া সবাই যেতে চায় স্টেশনে ।
মিম ঃ তুই যাবি না কেনো , আমরা সবাই যেখানে যাবো তোকেও সেখানে যেতে হবে।
মাহফুজ ঃ একটা অচেনা লোক কোথায় না কোথায় যেতে বললো আর আমরা সবাই সেখানে যাবো । আমাদের বিপদে ফেলার জন্যও তো সেখানে যেতে বলতে পারে ।
সুমাইয়া ঃ সে আমাদের ভালোর জন্য বলেছে । বললই তো যে এখানে ভুত প্রেত আছে ।
মাহফুজ ঃ আচ্ছা তোরা কিভাবে শিউর হলি যে ঐ লোকটা ভুত বা কোন আত্তা না ।
অর্নব ঃ আজিব । সে তো আরো আমাদের আরো ভালো বুদ্ধি দিল আর আমাদের হেল্প করলো । আর তুই তো ভুত বিশ্বাস করিস না । চল এখন ভাই প্লিজ ।
অনেক কথার পর রাজী হয় মাহফুজ । হাটা শুরু করে । ১টা ক্ষেত পার হয়ে যেতে হবে রেল স্টেষন । হাটতে থাকে ওরা । হাটে আর গল্প করছে । চারদিকে ঘন অন্ধকার । কিছুটা চাদের আলোয় সামনের কিছু পথ দেখা যাচ্ছে । আর দুরের স্টেশনের লাইটের আলো । প্রায় আধ ঘন্টা হয়ে গেছে ওরা হেটে চলছে । হটাত হৃদয় বলে উঠে
হৃদয় ঃ এই একটা ব্যাপার খেয়াল করেছিস তোরা ?
রাতুল ঃ কি ব্যাপার ?
হৃদয় ঃ আমরা কতখন হবে হাটছি ?
সাফা ঃ আধ ঘন্টার বেশিতো হবেই ।
অর্নব ঃ আমরা আধ ঘন্টা ধরে হাটছি ঠিক কিন্তু আমাদের পথ একটুও আগাইনি । হাটা শুরুর আগে স্টেশনের লাইটটা যত দূর ছিল এখনো ঠিক ততদূর আছে ।
মিম ঃ আমরা কি তাহলে আবার কোন ভুতের ক্ষপ্পরে পরলাম?
মাহফুজ ঃ আমি আগেই বলেছিলাম যে ঐ অচেনা লোকের কথা বিশ্বাস করা ঠিক হবে না ।
নাসরিন ঃ এখন কি করবো আমরা ?
অর্নব ঃ আমরা যেদিকে হাটছিলাম সেদিকে না হেটে অন্যদিকে হাটি । দেখি কি হয় ।
অন্যদিকে ঘুরে হাটা শুরু করে । এবার পথ এগুচ্ছে । সামনে ১টা বিশাল বটগাছের মত দেখতে পায় । সেখানে গিয়ে থামে ওরা।
মিম ঃ আমরা এখানে রেষ্ট নেই কেমন ।
অর্নব ঃ হ্যা । রেষ্ট নেই।
হৃদয় ঃ কোন দিক থেকে যেন ১টা শব্দ আসছে ।
সাফা ঃ হ্যা।
নাসরিন ঃ ঐ দেখ কয়েকজন লোক কি নিয়ে যেন এদিকে আসছে মনে হচ্ছে।
রাতুল ঃ আচ্ছা ঐ লোকটা বলেছিল যে এখানে ১টা শ্বষান আছে । ওরা মনে হয় লাশ নিয়ে এদিকে আসছে ।
মাহফুজ ঃ কেউ হয়তো রাতে মারা গেছে তাই পোরাতে আসছে । চল তাদের কাছে গিয়ে সাহায্য চাই ।
অর্নব ঃ নট এ ব্যাড আইডিয়া।
মিম ঃ কিন্তু যদি ওরাও কোন আত্তা হয় ।
সাফা ঃ আগে চলতো ।
সবাই এগিয়ে যায় তাদের কাছে । কাছে গিয়ে ডাক দেয়। সব খুলে বলে । তারা জানায় যে তারা লাশটা পুড়িয়ে তাদের সাথে করে নিয়ে যাবে । এবং তাদের সাথে লোক কম । তারা হৃদয় দের কাছে সাহায্য চায় পোড়ানোর জন্য। সবাই মিলে শ্বষানে যায় । অর্নবরা কাঠ গুছিয়ে দিয়ে সাহায্য করে । লাশ কাঠের উপর সোয়ানো হয় । আগুন ধরিয়ে দেয় একজন কাঠে। পুরতে থাকে । একসময় খেয়াল করে যারা লাশটি পুরাতে এসেছিল তারা কেউ আর নেই । আগুনের ভিতর থেকে লাশটি উঠে বসে । হাসতে থাকে । এই দেখে ওরা চিৎকার দিয়ে পিছনে দৌড় দেয় । দৌড়াতে দৌড়াতে একটা নদীর পারে চলে আসে প্রায় । পিছনে ঐ চারজন যারা লাশ পোরানোর জন্য এসেছিল তার তারা করছে । এমন সময় মাহফুজ দাঁড়িয়ে যায় । পকেট থেকে সে তার সিগারেটের প্যাকেট বের করে সিগারেট ধরায় । আগুন দেখে পালিয়ে যায় ভুত গুলো । সামনে থেকে একজন দৌ্ড়ে আসে । ড্রাইভার দৌড়ে আসে । হাপাতে হাপাতে বলে
ড্রাইভার ঃ ভাইয়ারা আমাকে বাচান , আমাকে বাচান।
ড্রাইভারের শরির দিয়ে রক্ত পরছে ।
নাসরিন ঃ কি হয়েছে আপনার , রক্ত কেনো ?
ড্রাইভার ঃ ঐ বয়স্ক লোক ১টা ভুত । আমাকে মেরে খেয়ে ফেলতে চেয়েছিল। কোনরকমে জান নিয়ে বেচে এসেছি।
ফজরের আজান দিয়ে দেয় । সুর্য উঠে যায় । নদীপার থেকে রাস্তায় ফিরে আসে । এসে দেখে তাদের গাড়ী নেয় । প্রথমে তারা ঢাকা ফিরে যেতে চাইলেও ড্রাইভারের অবস্থা দেখে সিদ্ধান্ত নেয় যে তারা আগে মিমদের গ্রামের বাড়ী যাবে সেখানে থেকে ঢাকা ফিরে আসবে ।
দিনের আলো ফুটতে শুরু করে। আলো ফুটে উঠলে রওনা দেয় মিম দের বাড়ির উদ্যেশে।
মিম দের গ্রামে চলে এসেছে কিন্তু মিম তার গ্রামের বাড়ি চেনে না, আগেও কখনো আসেনি।
সাফা : এখন কি করবি মিম?
নাসরিন : তুই তো তোর বাড়িই চিনিস না ।
মিম : কাউকে জিজ্ঞেস করবো?
অর্ণব : হ্যা। দাদার নাম বলে জিজ্ঞেস কর।
মিম : হুম। ঠিক আছে।
রাতুল : দাদার নাম মনে আছে তো?
মিম : আর হ্যা আছে।
কিছুক্ষন মানুষের জন্য অপেক্ষার পর একজন পথচারি দেখে তাকে জিজ্ঞেস করে।
মিম : ভাই একটু শুনবেন?
পথচারি : জি আফা , বলেন।
মিম : আচ্ছা এখানে মেম্বার মোসাদ্দেক সাহেবের বাড়িটা কোন দিকে?
পথচারি : কোন মোসাদ্দেক? মেম্বারের নাম তো মোসাদ্দেক না।
মিম : উনি আগে মেম্বার ছিলেন। এখন না। উনি মারা গেছেন
পথচারি : ওহ, মোসাদ্দেক চাচা। তো মোসাদ্দেক চাচা কি হন আপনার?
মিম : আমার দাদা।
পথচারি : ওহ। আপনারা আইসা পরছেন। আমি খলিল। আপনার চাচা কালাম মেম্বার আমাকে পাঠায়ছে আপনাদের খোজার জন্য। আপনাদের তো আরো অনেক আগে আহনের কথা। তয় লেট হইলো যে, রাস্তায় কোন সমস্যা হয় নাই তো?
মিম : হ্যা হই....... ( মাহফুজ মিমের মুখে হাত চেপে তাকে থামিয়ে দেয়)
মাহফুজ : নাহ খলিল ভাই, কোন সমস্যা হয় নাই। আমদের কি আপনি বাড়ি নিয়ে যাবেন এখন?
খলিল : অবিশ্যি নিয়ে যাবো। তয় কোন বাড়ি আগে যাবেন?
মিম : কোন বাড়ি মানে?
খলিল : কালাম চাচার বাসায়, নাকি আপনার দাদা বাড়ি?
মিম : দাদা বাড়িই উঠবো।
খলিল : ওহ ভুতের বাড়ি।
কিহ! ভুতের বাড়ি? (সুমাইয়া আর নাসরিন একসাথে বলে উঠে)
খলিল : হা হা হা. ভয় পাইয়েন না। ওগুলা গ্রামের খারাপ লোকেরা বলে। আসলে কিছুই নাই। অনেক পুরান বাড়ি তো তাই হজ্ঞলে ভয় পায়।
হৃদয় : আচ্ছা এখন চলেন।
খলিল : চলেন।
সবাই হাটা শুরু করে। সামনে খলিল আর পিছনে তাকে ফলো করে মাহফুজ, রাতুল, মিম, নাসরিন, সাফা, হৃদয়, অর্ণব, সাফা ও ড্রাইভার।
ইটের রাস্তা ছেরে মাটির রাস্তায় হেটে চলছে সবাই ওরা। চারপাশে গাছ। অনেকটা জংগলের মত। চারপাশে কোন কোলাহল নেই, আছে কিছু পাখির কিচির মিচির শব্দ। মাঝে মাঝে দুই একটা করে বাড়িঘর দেখা যায়।
এভাবে হেটে চলছে সবাই। সবাই নিরব, এতো ঝামেলা পেরিয়ে হাটতে কারো ভালোই লাগছে না তার মধ্যে আবার কথা। তাই সবাই চুপচাপ হাটছে।
নিরবতা ভেংগে রাতুল জিজ্ঞেস করে
রাতুল : খলিল ভাই, রাস্তা আর কত দূর?
খলিল : এইতো চলে আসছি ভাই। এই যে শ্বষান পার হইলাম। তারপর কিছুদুর বাদে বায়ে একটা কবরস্থান। হেরপর সেই জমিদার বাড়ি।
মিম : আমার দাদার পূর্বপুরুষরা কি জমিদার ছিল?
খলিল : না আফা। লোক মুখে শোনা। এই খানের জমিদার বাড়ির সকলরে নাকি সাপে কামরাইয়া মাইরা ফেলছিল। এর পর এইখানে কেউ থাকতো না। তারপর আপনার দাদার বাপ, তিনি বানিজ্য করতেন। সেই বানিজ্য করার সময় এই এলাকায় আসে। এই বাড়িতে উঠে। অনেক দিন থাকে। আপনার দাদা হয়। আপনার দাদার বাপ এই বাড়িতে সাপের কামরে মইরা যায়। এর পর আপনার দাদা বড় হয় বিয়ে করে, বুইড়া বয়সে উনিও একদিন এই বাড়িতে সাপের কামরে মইরা যায়। এর পর থেকে আপনার চাচা এইখানে থাকে না। পাশে জমি কিনে বাড়ি উঠায়ছে। আর আপনার বাপ তো অনেক আগে থেকেই ঢাকা থাকে।
রাতুল : এই বাড়িতে আবার সাপ টাও থাকে নাকি?
খলিল : কিচ্ছু নাই ভাইজান। আমি সুন্দর করে সব পরিস্কার করে রাখছি।
মিম : আমরা মনে হয় চলে এসেছি, তাই না?
খলিল : হুম। চলে আইছি। এইটাই আপনাদের বাড়ি। আসেন সবাই রে রুমে নিয়ে সব দেখাই দিয়ে আসি।
খলিল সবাইকে বাড়ির ভিতরে নিয়ে যায়। এই বাড়িটির সম্পর্কে আপনাদের একটু ধারন দেই।
দোতালা বেশ চওরা একটু পুরোনো জমিদার বাড়ি। বাড়ির সামনে একটু খোলা জায়গা। পিছনে ও বাম পাশে জংগল। ডানেও জংগল, তবে তার আগে একটি দিঘি আছে। এই দিঘি নিয়েও অনেক ধরনের কথা প্রচলিত আছে যে এই দিঘিতে নাকি মৎস কুমারী আছে। মাঝে মাঝে ডাংগায় উঠে বসে থাকে। এই দিঘির পরে রয়েছে ছোট একটি কবরস্থান।
বাড়ির ছাদ থেকে পুরো এলকাটা দেখা যায়। এর চারপাশে জংগল। এর একটু পেরুলেই আবার গ্রাম। গ্রামটা খুব ঘনবসতি নয় আবার।
বাড়ির ভিতরে প্রথমে বড় একটি ড্রয়িং রুমের মত। তবে তেমন কিছুই নেই এখানে। মাত্র দুইটি আধমরা কাঠেত চেয়ার। পাশেই দোতালায় উঠার শিরি। খলিল নিচে সকলের জন্য আলাদা আলাদা করে রুন দেখিয়ে দেয়। কিন্তু ওরা সবাই মিলে বলে মাত্র পাশাপাশি দুইটি রুম দিতে। ছেলেরা সবাই এক রুমে আর মেয়েরা সবাই একরুমে। খলিল রুম দেখিয়ে দেয়। টয়লেট দিখে দেয়। বাড়িতে কারেন্ট নাই তাই মোমবাতি আর দেয়াশলাই দেয়। আর পর খাবার অনতে চলে যায় খলিল।
সাফা :কেমন ভুতুরে একটি বাড়ি।
নাসরিন : আমার ভয় লাগছে। আবার কারেন্ট ও নাই দেখি।
মীম : চলে যাবো নাকি ফিরে বুঝতেছিনা।
মাহফুজ : বেরাতে আসছি, ঘুরতে আসছি। পালিয়ে যেতে নয়। যা হবার হবে।
অর্নব : কিন্তু। গতরাতে যা হয়েছে তারপরেও কি আমাদের এখানে থাকা ঠিক হবে?
রাতুল : আমারও মনে হয় ফিরে যাওয়া উচিত।
হৃদয় : পাগল নাকি। ফিরে যাবো কেনো? আমরা কি ভিতু নাকি?
সাফা : যা ঘটছে তা কিন্তু অনেক এডভ্যাঞ্চার। তাই না?
মিম : হুম সেটা ঠিক।
সুমাইয়া : আমি থাকবো।
অর্নব : আচ্ছা আজকের দিনটা থাকি আমরা। পরেরটা পরে দেখা যাবে।
নাসরিন : আয় একটু ঘুরে দেখি বাড়িটা।
সবাই মিলে বাড়িটা ঘুরে দেখে। রুম গুলো খুব অগোছালো। অপরিস্কার ও বটে, দেখেই বোঝা যায় এখানে অনেকদিন ধরে কেউ থাকে না। নিচ তালায় ঘুরে দোতালায় যায়। এখানেও সব রুম ঘুরে সুধু একটু রুম ছাড়া। এউ রুমটা আসলে তালা দেওয়া।
তারপর ছাদে উঠে। ছাদে গিয়ে সকলের মন ভরে যায়। বিশাল খোলা ছাদ। ছাদের রেলিং গুলো কারুকাজ করা। ছাদ থেকে পুরো এলাকাটা দেখা যাচ্ছে। দিঘি, জংগল, জংগল পেরিয়ে বসতি। অসাধারন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।
সুমাইয়া : এই সবাই আয়, সেলফি তুলবো।
মিম : হ্যা হ্যা, ইটস সেলফি টাইম বেবি।
অর্নব : আয় আমি তোদের ছবি তুলে দেই।
সুমাইয়া : নাহ বেবি আমরা একসাথে তুলবো।
সবাই মিলে একসাথে সেলফি তুলে কয়েকটা। সুধু মাহফুজ ছাড়া।
রাতুল : মাহফুজ কোথায়? ওকে দেখছিনা যে।
নাসরিন : (চিৎকার দিয়ে) আল্লাহ। কেউ মাহফুজ কে ধর। ও তো পরে যাবে।
হৃদয় গিয়ে মাহফুজ কে পিছন দিকে টেনে ধরে।
মাহফুজ ছাদের একদম শেষ প্রান্তে দিঘির দিকে ছাদের রেলিং পেরিয়ে সামনের দিকে হাটছিল, পা বারাবে আর ঠিক এমন সময় হৃদয় ওকে পিছন থেকে টেনে ধরে।
হৃদয়: কি করছিলি তুই এই সব?
রাতুল : তুই আত্তহত্যা করে কি আমাদের জেলে পাঠাতে চাস নাকি?
মাহফুজ : মানে? কি বলছিস?
হৃদয় : আর একটু এগুলেই তো ছাদ থেকে পরে যেতি।
মাহফুজ : না, আমি তো। ( পিছনে তাকায়)
অর্নব : মাহফুজ কোন সমস্যা?
মাহফুজ : নাহ। চল সবাই রুমে যাই।
এরপর সবাই রুমে চলে আসে। ফ্রেস হয়। খলিল খাবার নিয়ে আসে। দুপুরের খাবার খায়।
খলিল চলে যায় আর বলে সন্ধ্যার আগে রাতের খাবার নিয়ে আসবে।
মাহফুজ অবশ্য খলিলকে কিছু টাকা দিয়ে দেয় কিছু সিগারেট, ম্যাচ, লাইট আর পানি কিনে আনার জন্য।
রেষ্ট নিয়ে সামান্য ঘুমিয়ে বিকেলে বের হয় ঘুরতে ওরা সবাই। দিঘির পাশে বসে আড্ডা দেয়, দিঘির পদ্ম নিয়ে কবিতা লিখে অর্নব
জলভরা দিঘি,ফোটা পদ্মফুল জলের বুকে ভেসে, হয়েছে আকুল।
ভিন্ন ভ্রমর বসে পাপড়ির ভাঁজে ঝরে যায় পদ্ম গোধুলীর সাঁঝে ।
মিম : মাহফুজ তুই অর্নবের কবিতা না শুনে ঐদিকে কি দেখছিস?
সুমাইয়া : কিরে তুই কি গ্রামে এসে লুকিয়ে লুকিয়ে কোন হাটুকন্যার প্রেমে পরলি নাকি?
মাহফুজ : তোরা কি কিছু দেখছিস না?
হৃদয় দাঁড়িয়ে আসে পাসে মনোযোগ দিয়ে তাকিয়ে দেখে, হৃদয়কে অনুকরন করে রাতুল ও তাই করে।
রাতুল : কই না তো আমি কিছু দেখছি না।
হৃদয় : আমিও না।
মাহফুজ মৃদ হেসে বলে আমিও না। এরপর সবাই মাহফুজকে পিঠে থাপ্পর দিয়ে আবার আড্ডায় জমে যায়।
সন্ধ্যা হওয়ার কিছু পরেই খলিল খাবার, সিগারেট, ম্যাচ, লাইট নিয়ে আসে আর সাথে ৩ টা হারিকেন।
হারিকেন গুলো জালিয়ে দেয়। আর অনেকগুলো মোমবাতিও জ্বালিয়ে দেয়। তারপর সে চলে যায়।
সন্ধ্যা সবাই আবার একরুমে বসে। আড্ডা দেয়। আড্ডা দেওয়া শেষ হুলে রাতের খাবার খেয়ে নেয়। তারপর আবার সবাই একসাথে বসে।
অর্নব : চল ছাদে যাই?
নাসরিন : নাহ, আমার ভয় লাগে।
সুমাইয়া : আরে কিশের ভয় পাগলী, আমরা আছি না।
মীম: ছাদটা কিন্তু খুব সুন্দর। অনেক বড়।
হৃদয় : বাইরে জোসনাও আছে।
মাহফুজ : নাসরিন তাহলে তুই থাক, আমরা সবাই ছাদ থেকে ঘুরে আসি।
নাসরিন : হুম। ভালো বুদ্ধি করেছিস। তোরা সবাই ছাদে যা, আমি নিচে থাকি আর ভুতের এসে আমার ঘাড় মটকে দিক। চল ছাদে চল।
সবাই ছাদে যায়। লাইট, হারিকেন আর মাহফুজ তার সিগারেট নিয়ে ছাদে যায়।
ছাদের একবারে মাঝখানে বসে গোল করে ওরা।
গানের কলি খেলছে। খেলাটা এমন যে সবাইকে দুই দলে বিভক্ত করে একদল থেকে একজন গান গাইবে সেই গানের শেষের অক্ষর দিয়ে প্রতিপক্ষ দলকে গান গাইতে হবে।
তাদের খেলা জমে উঠে। গানে গানে মুখরিত সেই ছাদ। জোসনার আলোয় আর গানে গানে মুখরিত।
হটাত সাফা সবাইকে থামতে বলে
সাফা : এই থাম।
হৃদয় : কি হয়েছে।
সাফা : চুপ করে শোন।
হৃদয় : আমি কিছু শুনতে পাচ্ছি না।
অর্নব : আমি পাচ্ছি। স্পষ্ট নুপুরের শব্দ।
মিম : কেউ নাচছে মনে হয়।
নাসরিন : এতো রাতে এই জনমানব শুন্য বাড়িতে কে থাকবে? আর কেই বা নাচবে?
রাতুল : চল নিচে নেমে দেখি। আমার মনে হচ্ছে নিচেই কোথাও হবে।
সুমাইয়া : কোথাও যাবো না। চুপ করে এখানে বসে থাক সবাই ।
মাহফুজ : চুপ করে বসেব থাকবো কেন?
নিচে গিয়ে দেখি কোথায় কি হচ্ছে।
রাতুল : আমি মাহফুজের সাথে যাবো।
হৃদয় : শব্দ টা মনে হয়ে বেরেছে।
সাফা : কেউ তবলাও বাজাচ্ছে মনে হয়।
মিম : আমার মনে হয় ভূত। আমাদের কি হবে।
মাহফুজ : আমি নিচ্ছে নামছি। যদি তুইও আমার সাথে যেতে চাস তাহলে লাইট নিয়ে আয়।
রাতুল : আমি যাবো।
সাফা : আমিও যাবো।
রাতুল, মাহফুজ, আর সাফা নিচে যাওয়ার জন্য উঠে গেটের কাছে যায়। তখন পিছন থেকে সুমাইয়া বলে।
সুমাইয়া : দারা। আমরা সবাই যাবো।
এরপর সবাই বের হয়। সুমাইয়া আর নাসরিন হারিকেন দুটি হাতে নেয়। আর সাফা, মাহফুজ, হৃদয়, অর্নব এর হাতে লাইট।
ধিরে ধিরে পা এগিয়ে নিচে নামে সবাই। সামনে মাহফুজ আর রাতুল। প্রথম রুমটাতে ঢুকে দেখে কেউ নাই। তারপর আরো ২টা রুম দেখে। কোথাও কেউ নাই। কিন্তু সেই নুপুর আর তবলার শব্দ ঠিকই আছে।
সাফা : সব রুমই তো দেখলাম। কোথাও তো কিছু নাই।
অর্নব : তাহলে শব্দ আসছে কোথায় থেকে।
রাতুল : আমরা কি সব রুম ঘুরে দেখিছি?
মিম : হ্যা ।
মাহফুজ : নাহ। একটা রুম তালা দেওয়া। মনে আছে?
নাসরিন : হ্যা। ঐ কোনার দিকে।
মাহফুজ : চল ঐখানে যাবো।
মিম : আমার ভয় লাগছে। চল রুমে ফিরে যাই ।
মাহফুজ : চুপ। সবাই একসাথে ঐ রুমে যাবো।
সবাই একসাথে রুমের সামনে যায়। ভিতরে ভিতরে এখন সবাই ভয় পাচ্ছে। কি হতে যাচ্ছে সামনে কেউ জানে না। রুমের যত কাছে আসে নুপুরের শব্দ ততই বারতে থাকে। এখন একদম কাছে চলে আসে। রুমের দরজার কাছে দারায়।
রাতুল : এই রুমের ভিতরেই কেউ আছে।
সাফা : দেখ ভিতরে আলো জ্বলছে। (দরজার নিচে আলো দেখা যায়)
মাহফুজ : ভিতরে কেউ আছেন? দরজা খুলুন প্লিজ।
মাহফুজ অনেকবার ডাকে, ওর সাথে অর্নব আর সাফাও ডাকে। কিন্তু ভেতর থেকে কোন শব্দ পাওয়া যায় না।
মাহফুজ : দরজা ভেঙে ফেলতে হবে।
রাতুল : হ্যা। চল।সবাই মিলে দরজা ধাক্কায় কিন্তু দরজা ভাংছে না। এর পর পাশ থেজে একটা বড় কাঠ এনে অনেকবার চেষ্টার পর তালা ভাংতে পারে।
হৃদয় : তালা তো ভাংলাম। কিন্তু এখন ভিতরে যাবে কে।
( হৃদয়ের কথা শেষ হতে না হতেও হাহাহাহাহা করে মিষ্টি একটা হাসির শব্দ শোনা যায়।
হৃদয় : আমি ভিতরে যাবো না। নিশ্চিত ভিতরে খারাও কিছু আছে।
আর্নব : আচ্ছা আমি আগে হাটছি তোরা আমার পিছু পিছু আয়।
মাহফুজ : চল।
অর্নব সবার আগে, হাতে লাইট। পাশে এসে দারায় মাহফুজ। হাত দিয়ে দরজা সরিয়ে দেওয়ার সাথে সাথে ভিতরের আলো নিভে যায়। লাইট জালিয়ে ভিতরে ঢুকে ওরা। সবাই ভিতরে ঢুকে।
সাফা : দেখছিস, কিছু নেই। সুধু সুধু ভয় পাস তোরা।
রাতুল : কিন্তু এতোখন তো ছিল কিছু একটা। আমরা সবাই স্পষ্ট শুনতে পেয়েছি।
সাফা : এখন তো আর নেই। এটাই যথেষ্ট। চল রুমে গিয়ে ঘুমাবো।
রাতুল : অর্নব দেখ তো মাহফুজ কই যাচ্ছে?
অর্নব : মাহফুজ কোথায় যাচ্ছিস?
মাহফুজ : একটা সাদা কাপর দিয়ে দেখ কি জেনো ঢাকা।
মিম : থাক না ঐটা ঐটার জায়গায়। কিছু ধরতে গিয়ে আবার কি নতুন বিপদ এসে হাজির হয় কে জানে।
নাসরিন : মিম ঠিক বলেছে। চল রুমে ফিরে যাই।
মাহফুজ : রহস্য বের করতেই হবে।
মাহফুজ সাদা কাপরে হাতদেয়। কাপর সরাতে যাবে আর এমন সময় একটা সাপ ফোস করে উঠে ওকে কামর দিতে চায়। কোন ভাবে ও হাতটা সরিয়ে ফেলে। তবে হাত সরানোর সময় কাপর টা উঠিয়ে নিয়ে আসে।
কাপর সরে যাওয়ার পর সেখানে একটা কলস দেখা যায়। আর সেই কলস চক চক করতে থাকে।
রাতুল : আরে এতো হিরে মনে হচ্ছে।
হৃদয় : হিরে পরে দেখ। আগে জানা বাচা। সাপটা তারা করছে। আর ভুমিকম্প হচ্ছে। বের হতে হবে।
পুরো বিল্ডিং কাপছে আর পিছিনে ছুটছে সাপটি। প্রথমে একটি হলেও এখন বেশ কয়েকটি সাপ তারা করছে। কোনরকমে শিড়ি বেয়ে নিচে নেমে বাড়িটি থেকে বের হয়। দিঘির ধারে যায় । লাইট জ্বালিয়ে দেখে নাহ আর কোন সাপ নেই। একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে সবাই।
অর্নব : কি বাচা বেচে গেলাম।
সাফা : আমরা সবাই ঠিক আছি তো?
মিম : হ্যা ঠিক আছি।
রাতুল : না নেই। মাহফুজ কোথায়?
মিম : হ্যা মাহফুজ কোথায়?
অর্নব আর হৃদয় মাহফুজ মাহফুজ করে চিৎকার করে। কিন্তু মাহফুজের কোন সারা শব্দ পাওয়া যায় না। উল্টো নাসরিনের চিৎকার শুনে পিছনে তাকিয়ে বাকি সবাই ও চিৎকার করে।
পিছনে তাকিয়ে দেখে দিঘির থেকে কেউ একজন উপরে উঠে আসছে। হ্যা একটি মেয়ে। শাড়ি পরা, তবে সে অর্ধেক মানুষ আর অর্ধেক মাছ। যাকে মৎস কুমারী বলে।
সাফা : আরে এতো মৎস কুমারী। কিন্তু এতো কুতসিত কেন?
সুমাইয়া : গলা থেকে রক্ত ঝরছে। এটা নিশ্চয় অনেক হিংস্র হবে।
মৎস কুমারী ধিরে ধিরে ওদের দিকে আসতে থাকে আর রাগে হুংকার ছুরে। চোখ জলজল করে। এসব দেখে ভয়ে ওরা পছনে জংগলের দিকে দৌড় দেয় যে যার মত করে।
মাহফুজের পিছনে একটি সাপ, তারিয়েই চলছে মাহফুজ কে। হটাত পিছন থেকে শিতল একটি হাতের পরশ থমকে দারায় মাহফুজ। পিছনে তাকিয়ে দেখে একটি বাচ্চা মেয়ে তার হাত ধরে আছে। আর সাপটি নেই।
মাহফুজ : কে তুমি? এই নির্জন জংগলে কি করো?
বাচ্চা মেয়ে : আমি খেয়া। আমি এই জংগলেই থাকি।
মাহফুজ : জংগলে থাকো মানে?
খেয়া : হ্যা। এখানে থেকে আমি আমার মাকে পাহাড়া দেই।
মাহফুজ : কিছুই বুঝতে পারলাম না।
খেয়া : আসুন, আমি আপনাকে সব বুঝিয়ে বলি। এখানে থাকা বিপদজনক।
মাহফুজ : চলো।
মাহফুজ খেয়ার পিছু পিছু চলছে। খেয়া মাহফুজকে এক হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছে।
খেয়া মাহফুজ কে নিয়ে একটি কবরের সামনে নিয়ে আসে।
মাহফুজ : তুমি আমাকে এখানে নিয়ে এলো কেন? এটা তো একটা কবরস্থান।
খেয়া : হ্যা। আমি এখানেই থাকি।
মাহফুজ : কিহ। মাথা খারাঅ এই মেয়ে তোমার। এই পিচ্চি মেয়ে নাকি এই কবরস্থানে থাকে। ভয়ে কখন মরে যাবে।
খেয়া : (খিক খিক করে হেসে)....... আমি মরে যাবো? হাহাহহাহা তাও আবার ভয়ে?
মাহফুজ : হাসছো কেনো তুমি?
খেয়া : আমি তো সেই কবেই মরে গেছি। আর এটা আমারই কবর।
খেয়ার কথা শুনে মাহফুজ দুই পা পিছিয়ে যায়। মৃদ ঘাম বের হতে থাকে কপাল থেকে। ভয় পেয়েছে সে একটু। কারন সে খেয়ার কথা শোনার পর খেয়ার দিকে ভালোভাবে তাকিয়ে দেখে খেয়া মাটি থেকে একটু উপরে শুন্যে দারিয়ে আছে।
খেয়া : ভয় পাবেন না। আমি আপনার কোন ক্ষতি করবো না।
মাহফুজ : না......... মানে কি বলবো বুঝতেছিনা।
খেয়া : আমার ও আমার মায়ের একটু সাহায্য দরকার আপনার সহ আপনাদের বন্ধুদের কাছে।
মাহফুজ : কি সাহায্য?
খেয়া : আমার মায়ের আত্তা অতৃপ্ত হয়ে এই দিঘিতে বাস করছে। তাকে মুক্ত করতে হবে।
মাহফুজ : আমরা কিভাবে কি করতে পারবো?
খেয়া : আমি সব বলছি।
মাহফুজ : হ্যা সব খুলে বলো।
খেয়া : আপনারা যেই বাড়িতে এসেছেন এটা একসময় এক জমিদার বাড়ি ছিল। আমার মা ছিলেন সেই জমিদারের একজন রক্ষিতা। জমিদার এর যখন ইচ্ছে হতো সে আমার মাকে শারিরিক ভাবে ব্যাবহার করতো।
মাহফুজ : হ্যা, জমিদাররা এই কাজ গুলো করতো।
খেয়া : এক সময় তাদের এই শারিরিক সম্পর্কের ফলে পৃথিবীতে আসি আমি। আমি আসার পরই আমাকে মেরে ফেলতে চায় আমার বাবা(জমিদার)। কিন্তু আমার মা আমাকে অনেক অনুনয় বিনয় এর মাধ্যমে আমাকে রক্ষা করে ছিলেন। কিন্তু আমার মা আমার ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় ছিলেন। তিনি কখনই চাননি যে আমিও তার মত অন্য কারো রক্ষিতা হই। তাই আমি যখন একটু বড় হই তখন সে জমিদারের কাছে বলে সে সেখান থেকে আমাকে নিয়ে অনেক দূরে চলে যাবে। তাই তার কিছু অর্থ দরকার। কিন্তু জমিদার দিতে নারাজ হয়।
মাহফুজ : তারপর?
খেয়া : তারপর মা আমাকে নিয়ে পালিয়ে যেতে চায় এবং আমরা জমিদারের কাছে ধরা পরি। ফলে জমিদার আমাকে মেরে ফেলে আর এইখানে আমাকে কবর দেয়।
মাহফুজ : কি মর্মান্তিক। তারপর কি হয়েছিল?
খেয়া : আমার মা খুব ভেঙে পরেছিল। খুব কষ্টও পেয়েছিল। এরপর তার মধ্যে প্রতিশোধের আগুন জলে উঠে। মা সিদ্ধান্ত নেন সে জমিদার আর তার বউকে খুন করে তাদের সমস্ত গয়না ও মুদ্রা নিয়ে দূরে কোথাও পালিয়ে যাবে।
মাহফুজ : সে কি পেরেছিল?
খেয়া : বলছি। এরপর একরাতে মা একটি ছুরি নিয়ে তাদের রুমে ঢুকে তারপর জমিদারের বউ এর পেটের ভিতর ছুড়ি ঢুকিয়ে দেয় আর জমিদারকে আঘাত করার আগেই সে জেগে যায়। ধস্তা ধস্তি শুরু হয়। মা পেরে উঠছিল না। একসময় মা জমিদারের পিছন দিক থেকে একটি কলসি দিয়ে আঘাত করে। আঘাতে ব্যাথা পেয়ে জমিদার শুয়ে পরে। আর মা টের পায় ঐ কলসিটির পাশের কলসিতেই রয়েছে অলংকার, অনেক অলংকার। মা সেই কলসি নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার প্ল্যান করে। অলংকার মায়ের খুব পছন্দের ছিল। বলা যায় অলংকারের উপর একরকম তার নেশা ছিল।
মা এই অলংকারের লোভে পরে। সে অলংকার ভর্তি এই কলস নিয়ে পালাতে চায় কিন্তু ততক্ষনে জমিদার মহলের সবাই টের পেয়ে যায় আর ছুটে আসে। মা ভাবে এখন সে ধরা পরে যাবে তাই সে সেই অলংকার ঐখানে একটা কাপর দিয়ে লুকিয়ে রেখে পালাতে চেষ্টা করে। পিছন থেকে জমিদার পা টান দিয়ে ধরে তখন মা ছুড়ি দিয়ে তার গলায় পোস দিয়ে খুন করে পালায়।
মাহফুজ : পালাতে পেরেছিল?
খেয়া : নাহ। পিছনে পিছনে রক্ষিরা তারা করেছিল। মা দৌড়াতে দৌড়াতে সামনের এই দিঘিতে পরে যায়। সাতার জানা ছিল তাই সে এখানেই মারা যায়।
মাহফুজ : বাকরুদ্ধকর একটি ঘটনা। এরপর?
খেয়া : এরপর থেকে মায়ের আত্তা এই দিঘিতেই আছে। দেহ তো সেই কবেই পচে জলের সাথে মিশে গেছে। তার আত্তা এখনো এখানে আছে। তার লুকিয়ে রাখা সেই অলংকারের কলসির অপেক্ষায়। ঐ কলসি পেলেই মায়ের অতৃপ্ত আত্তা তৃপ্তি পাবে। সে আমার কাছে চলে আসবে, আর আমাকে নিয়ে চলে যাবে স্বর্গে।
মাহফুজ : তো ঐ কলসি তো এখনো ঐখানে আছে। নিয়ে আসলেই তো হয়।
খেয়া : এতো সহজ না। সেই জমিদার আর তার বউ এর আত্তা বিষধর সাপ হয়ে সেখানে অলংকার পাহাড়া দিচ্ছে। তারা ঐ অলংকারের #পাহাড়াদার
কেউ ঐ রুমে ঢুকলেই তাদের দংশন করে মেরে ফেলে এও দুটি সাপ।
মাহফুজ : হ্যা, শুনেছি এখানে নাকি কয়েকজন সাপের কামরে মারা গেছে।
খেয়া : তো এখন আপনারাই পারেন আমার মায়ের অতৃপ্ত আত্তার মুক্তি দিতে।
মাহফুজ : কিন্তু কিভাবে? সেখানে গেলেই তো ঐ দুটো সাপ আমাদের কামড়ে মেরে ফেলবে।
খেয়া : নাহ । কামড়াবে না, একটা কাজ করতে হবে।
মাহফুজ : কি কাজ?
খেয়া : আমার কবরের কিছু অংশ খুরলেই একটি ওড়না পাবেন। সেই ওড়না টি নিয়ে দিঘিতে যাবেন। সেখানে আমার মা অর্ধ মানুষ ও অর্ধ মাছ হয়ে বাস করছে। সেখানে গেলেই সে আপনাদের আক্রমন করতে আসবে। তখন আমার এই ওড়নাটি দেখালে বুঝবে যে আমি আপনাকে পাঠিয়েছি। তারপর সে আপনাদের একটি ছড়ি দিবে। সেই ছুড়ি যেই ছূড়ি দিয়ে জমিদার আর তার বউ কে খুন করেছিল মা।
মাহফুজ : সেই ছূড়ি দিয়ে কি হবে?
খেয়া : ঐ রুমে গিয়ে যখন কলস টি আনতে যাবেন তখন ঐ সাপ দুটো আক্রমন করবে। আর আক্রমন করলে এই ছড়ি ওদের সামনে ধরলে ওরা ভয় পাবে। পিছু সরে যাবে। আর তখন আপনারা কলসটি নিয়ে চলে আসবেন। আর এনে দিঘির কাছে এসে মায়ের হাতে তুলে দিবেন। তারপর আমরা সবাই মুক্তি পাবো। আর যে যার কর্মফল অনুযায়ী স্বর্গ বা নরকে চলে যাবো।
মাহফুজ : আচ্ছা ঠিক আছে। আমি এখনি মাটি খুরছি।
মাহফুজ হাত দিয়ে মাটি খোড়া শুরু করে। এমন সময় দৌড়াতে দৌড়াতে পিছন থেকে ওরা সবাই চলে আসে। মাহফুজ কে এখেন দেখে দাঁড়িয়ে পরে।
অর্নব : তুই এখানে? আমরা তোকে সব জায়গায় খুজছি।
মিম : তোর কোন ক্ষতি হয় নাই তো?
মাহফুজ : আমি ঠিক আছে। তোরা সবাই ঠিক আছিস তো?
নাসরিন : হ্যা আমরা ভালো আছি। কিন্তু কতখন যে ঠিক থাকবো জানিনা।
হৃদয় : এখন কেউ নাই পিছনে। মনে হয় সেভ জোনে আছি।
সুমাইয়া : চল এখান থেকে। যত দ্রুত সম্ভব এখান থেকে চলে যাবো।
রাতুল : আমরা এখানে একটু বসি। আলো ফুটলেই চলে যাবো।
মাহফুজ : আমাদের আবার একটু ঐবাড়িতে যেতে হবে ।
অর্ণব : মাথা খারাপ তোর? আবার ঐ বাড়ি যাবো।
মাহফুজ : হ্যা। এই মেয়েটার জন্য। এর মায়ের জন্য আমরা আবার ঐবাড়িতে যাবো।
সাফা : কোন মেয়ে? এখানে তো আমরা ছাড়া আর কেউ নাই।
মাহফুজ : ওহ। তোরা মনে হয় ওকে দেখতে পাচ্ছিস না। আমি এখানে আসার পর থেকেই মনে হচ্ছিল যে কেউ একজন আমাকে ফলো করছে। এমন কি ছাদে একবার পিছন থেকে ওকে দেখেও ফেলেছিলাম। তারপর তোদের বলেছিলাম যে তোরা কি কাউকে দেখতে পাচ্ছিস নাকি।
সাজ্জাদ : হ্যা মনে পরেছে।
অর্নব : তো ঐ মেয়ের সাথে ঐবাড়িতে যাওয়ার সাথে সম্পর্ক কি?
মাহফুজ : দারা বলছি।
এরপর মাহফুজ খেয়ার সব কথা ওদের বলে। ওরা খেয়ার কথা শুনে ভিতরে ভিতরে খেয়ার জন্য মায়া সৃষ্টি হয়।
ওরা সবাই ঐবাড়িতে আবার যেতে রাজি হয়।
সবাই মিলে হাত দিয়ে খেয়ার কবরের উপর থেকে মাটি সরাতে থাকে। এবং কিছুখন পর সেখানে একটি ওড়না খুজে পায়। সেটি নিয়ে দিঘির কাছে যায়। দিঘির ঘাটলায় দাড়ানোর পরপরই দিঘিতে ঢেউ খেলতে থাকে। প্রচুর ঢেউএর গর্জন নিয়ে একটি অর্ধমানুশ ও অর্ধমাছ আকৃতির প্রায় কুতসিত মহিলাটি ওদের আক্রমন করতে আসে। আর সেই সময় অর্নব মাহফুজের কাছ থেকে ওড়না টি নিয়ে তার সামনে ধরে। মহিলাটি শান্ত হয়ে যায়।
মহিলা : তোমরা কে? আমার মেয়ের কাপর তোমরা পেলে কোথায়?
অর্নব : আপনার মেয়ে খেয়া আমাদের পাঠিয়েছে।
এরপর মাহফুজ, অর্নব, সুমাইয়া, সাফা, মিম, নাসরিন, রাতুল, হৃদয় পরিচয় দিয়ে সব খুলে বলে। তারপর খেয়ার মা তার সেই ছুড়িটি দেয় অর্নবের হাতে। সেই ছুড়ি নিয়ে ওরা আবার সেই জনিদার বাড়ির দিকে আগায়।
সুমাইয়া : অর্নব আমার খুব ভয় লাগছে। প্লিজ তুমি আমার হাত ধরো।
অর্নব সুমাইয়াকে নিজের বুকের কাছে টেনে নিয়ে ছোট্টকরে কপালে একটি চুমুখেয়ে সুমাইয়ার হাত ধরে এগিয়ে চলে।
সবার আগে হৃদয় আর রাতুল। মাঝখানে সাফা, মিম, নাসরিন,
আর সবার শেষে মাহফুজ, অর্নব আর সুমাইয়া।
জমিদার বাড়ি ঢোকার সময় ওদের ফেলে যাওয়া দুইটি টর্চলাইট দেখিতে পায়। সেই দুটি নিয়ে নেয় হৃদয় আর মাহফুজ।
ধিরে ধিরে ভিতরে ঢুকে। গা ছম ছম করছে ওদের সবার। কাররি জানা নাই কি হবে। বেচে ফিরতে পারবে নাকি।
শিড়ি বেয়ে দোতালায় চলে আসে। ঐ বড় রুমটির কাছে যায়। সেখানে যাওয়ার পরই শুনতে পায়।
সাফা : আচ্ছা তোরাও কি শুনতে পাচ্ছিস?
সুমাইয়া : হ্যা।
সাফা: মাহফুজ তোর গল্পে তো এই নুপুরের শব্দের কথা কিছু বলা নাই।
মাহফুজ : হ্যা এই ব্যাপারে তো কিছু বলেনি আমাকে।
হৃদয় : চল ভিতরে। দেখা যাক কি হয়।
অর্নব : হ্যা চল।
দরজায় ধাক্কা দেওয়ার সাথে সাথেই শব্দ বন্ধ হয়ে যায়। ওরা ভিতরে ঢুকে।
ধিরে ধিরে সেই কাপরের কাছে গিয়ে কলসি তে হার দেয়। আর ফোস করে উঠে সাপ। সুমাইয়া চিৎকার দিয়ে অর্নব কে জরিয়ে ধরে। মাহফুজ ছুড়ি বের একটি সাপকে আঘাত করে। আর সাথে সাথে সাপটি ছাই হয়ে যায়। তার কিছুখনের মধ্যেও অন্যসাপটির ও একই অবস্থা হয়।
রাতুল : এখন চল আমরা তারাতারী কাজ শেষ করি।
সাফা : হ্যা নিচে চল। আমার এই বাড়িতে একদমই ভালো লাগছে না।
সবাই রুম থেকে বের হয়ে নিচের দিকে চলে আসছে।
সাফা : এই শোন। নুপুরের শব্দটা মনে হচ্ছে আমাদের পিছু পিছু আসছে।
মিম : আমিও টের পাচ্ছি।
মাহফুজ ওর পকেট থেকে ফায়ার বক্স বের করে আর সিগাড়েট। তারপর সিগারেট ধরায়।
মাহফুজ : চল ভয় পাস নে।
ধিরে ধিরে সবাই হাটছে। ভয় ভয় লাগছে। কারন স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে কেউ একজন নুপুর পায়ে তাদের পিছু পিছু আসছে।
ওরা এখন জমিদার বাড়ির সদর দরজার একদম কাছে। বের হতে যাবে আর এমন সময় শুন্য থেকে একটি মিষ্টি কন্ঠ ভেষে আসে।
: একটু দারাও তোমরা।
অর্নব : কে কে? কে আপনি?
: আমি সিনথিয়া।
সাফা : কোকোকোকো..... কোন সিনথিয়া।
: আমি এই জমিদার বাড়ির জমিদার এর বউ এর ছোটবোন। জমিদারের শ্যালিকা।
রাতুল : তো আমরা এখন কি করতে পারি?
সিনথিয়া : আমার একটি নুপুর আপনারা নিয়ে যাচ্ছেন।
মাহফুজ : আমরা নিবো কেনো।
সিনথিয়া : আমার একটি নুপুর ঐ কলসের ভিতর। অন্যটি আমার পায়ে।
অর্নব : আপনি অদৃশ্য কেনো?
সুমাইয়া : আমি মৃত। আতি দেখতে পাচ্ছেন না। আমার অতৃপ্ত আত্তা আমার আরেকটি নুপুরের জন্য এখনো পৃথিবীতে অপেক্ষা করছে ।
মিম : আপনি মরলেন কিভাবে?
সুমাইয়া : আমি রুপে গুনে, ভরা যৌবনে পরিপুর্ন ছিলাম। বাবা মা মারা যাওয়ার পর আমি আমার এই বোনের কাছে চলে আসি। এখানে থাকাতে আমার উপর বাজে নজর পরে আমার দুলাভাই এই জমিদারের। আমার নুপুর পরে নাচার সখ ছিল। আমি খুব ভালো নাচতাম। এই জমিদার আমাকে একটি নুপুর দিয়ে বলে আমি নেচে তার মন গলাতে পারলে সে আরেকটি দিবে। আমি নাচি, এরপর সে আমার দেহের লোভে পরে আমার উপর ঝাপিয়ে পরে এবং বলে আমি তার মনের বাসনা পুরন করলে সে এই নুপুর জোরা গিফট করবে, আর না হয় মেরে ফেলবে।
আমি আমার ইজ্জত নষ্ট হতে দেয়নি। জানালা দিয়ে লাফ দিয়ে আত্তহত্যা করি। তখন আমার পায়ে এই নুপুরটি ছিল আর বাকিটি এই কলসিতে।
সুমাইয়া : আপনি কি এই নুপুরটি চাচ্ছেন?
সিনথিয়া : হ্যা। এটি পরেই আমি স্বর্গে যেতে চাই।
অর্নব কলসি থেকে বাকি নুপুরটি বের করে সামনে রাখে। একটি হাত অদৃশ্য থেক দৃশ্যমান হয়। হাতটি নুপুরটি নেয়। এরপর একটি পা, সে পায়ে একটি নুপুর আছে। সেম টু সেম। তারপর আরেকটি পা দৃশ্যমান হয়। এই একজোর পা দেখেই যে কোন ছেলের পাগল হওয়ার জন্য যথেষ্ট।
হাত দিয়ে নুপুর পায়ে পরে। নুপুর পরার সাথে সাথেই শাড়ি পরা এক অপসরি দৃশ্যমান হয়। সত্যিই অসাধারন সৌন্দর্য আর পাগল করা যৌবন মেয়েটির দেহে।
মেয়েটি মুচকি একটি হাসি দিয়ে নাচতে নাচতে বেড়িয়ে যায়। ওরা সবাই পিছন থেকে তাকিয়ে থাকে।
নাসরিন : চল, চল বাকি কাজটুকু শেষ করি।
রাতুল : হ্যা চল।
এরপর আবার দিঘিতে যায়। সেই মহিলাটি আবার ঢেউ তুলে ছুটে আসে। কলসিটি কাছে নিয়ে বুকে জরিয়ে ধরে। ধিরে ধিরে সেও পরিপুর্ন একটি মানুশে পরিনত হয়, কুতসিত মুখতার সৌন্দর্যে পুর্ন হয়ে উঠে। তারপর সেও সেই কলস নিয়ে খেয়ার কবরের দিকে এগুতে থাকে।
খেয়া কবরের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। এবার খেয়াকে সবাই ওরা দেখতে পাচ্ছে।
কবরের কাছাকাছি যাওয়ার পরপরই খেয়া দৌড়ে এসে তার মাকে জরিয়ে ধিরে। আর এমন সময় মাইকে বেজে উঠে ফজরের আজান। আর সব কিছু উধাও হয়ে যায়।
কিছুখন পরে আলো ফুটে উঠে। ওরা সেদিনই ফিরে আসে ঢাকায়। আর গত দিনগুলোয় ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলোর ব্যাক্ষ্যা খুজতে থাকে। আজ প্রযন্ত তারা খুজছে সেই দিনগুলোতে ঘটে যাওয়া ঘটনার ব্যাক্ষা।

(পুরো গল্পটাই আমার কল্পনা । এর সাথে বাস্তবতার কোন মিল নাই. গল্পটি সম্পর্কে আপনাদের মতামত জানাবেন)
আমার লেখা ভালো লাগলে গল্পটি শেয়ার করবেন আর আমার আরো গল্প পরতে চাইলে আমার পেইজ টি লাইক দিতে পারেন ।
https://www.facebook.com/arshipon15/