শুক্রবার, ২৩ জুলাই, ২০২১

ব্যর্থ প্রেমপত্র

 আমি চাঁদকে ভালোবাসি, চাঁদ আমায় ভালোবাসে বলে। আমি সূর্যকে ভালোবাসি, সূর্য আমাকে ভালোবাসে বলে। আমি তোমায় ভালোবাসি তুমি আমায় ভালোবাসো বলে। চাঁদ যেমন সূর্যের আলোয় নিয়ে বেঁচে থাকে, তেমনি আমি তোমার ভালোবাসা নিয়ে বেচে থাকবো। 


                                         I Love You

                                            (S+S)


♥♥♥ পৃথিবীর সবচাইতে রোমান্টিক ব্যর্থ প্রেমপত্র ♥♥♥

বুধবার, ২১ জুলাই, ২০২১

প্রেম বিস্মৃতি অথবা প্রস্থানের গল্প

 


প্রেম বিস্মৃতি অথবা প্রস্থানের গল্প

প্রেতাত্মার লেখা গল্প - Written by A R Shipon. 

প্রেম তো সূচির জীবনে এই প্রথম নয়, এর আগেও অনেকবার এসেছে, যদিও গ্রহণ করেছে মাত্র একটিকেই—তা-ও অনেক শঙ্কা আর ভীতি নিয়ে—এবং বিয়ে করে সুন্দর একটা সংসারও পেতেছে। অবশ্য বিয়ের আগেই অজস্র দ্বিধা আর সংশয় ঢুকে পড়েছিল সম্পর্কের ভেতরে। দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কগুলোতে দুজন মানুষ পরস্পরের কাছে নিজেদের অজান্তেই এমন খোলামেলা হয়ে পড়ে যে তখন মুগ্ধতাবোধের আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে প্রকৃত মানুষটি—ভালো-মন্দে, আলো-অন্ধকারে মেশানো মানুষটি। তখন সংশয় এসে ভিড় করে মনে—এই মন্দ আর অন্ধকারকে কি আমি ভালোবেসেছিলাম? আর এই প্রশ্নের তীব্রতায় আড়ালে পড়ে যায় তার সুন্দর-শুভ্র দিকগুলো। ধবধবে সাদা রংয়ের পোশাকে সামান্য একটু কালির দাগ যেমন তীব্রভাবে চোখে পড়ে, তেমনই শুভ্র প্রেমের ভেতরে সামান্য কালোটুকুও তীব্র প্রশ্ন হয়ে দেখা দেয়। তবে এসব দ্বিধা ও প্রশ্নগুলোকে বাইরে প্রকাশিত হতে দেয়নি সূচি, বরং নতুন করে তৈরি হওয়া আরও অনেক দ্বিধা এবং প্রশ্ন মনে এলেও সেগুলোকে মনের ভেতরেই চাপা দিয়ে রেখে নিরুপদ্রপ জীবন যাপন করতে চেয়েছে। এরকম করতে হয়। একটা সুস্থির-সামাজিক-নিরাপদ জীবন যাপন করতে হলে অনেক কিছু মেনে নিতে হয়, অনেক প্রশ্ন উত্থাপন না করে চুপ করে থাকতে হয়, অনেক দ্বিধা চেপে রাখতে হয়। কল্পনার প্রেম আর বাস্তবের প্রেম যেমন এক রকম নয়, তেমনই বিয়ে-পূর্ব এবং বিয়ে-পরবর্তী প্রেমও এক রকম নয়। এক রকম তো নয়ই, বরং একেবারে উল্টো বলে মনে হয় কখনো কখনো। সূচির অনেকবার মনে হয়েছে—আমিনের সঙ্গে তার ঠিক মেলে না। এটা যে বিয়ের পর ঘটেছে তা নয়, বরং প্রেম হওয়ার পর যখন সে বেশ ভালোভাবে চিনে নিল আমিনকে, তখন থেকেই মনে হয়েছে। কিন্তু এই প্রেম ছেড়ে দেওয়ার মতো মনের জোর তার ছিল না। সূচি বুঝে ফেলেছিল—আমিনের প্রতি যা সে বোধ করে তা প্রেম নয়, অবলিগেশন। দায়। কথাটা সে বলতে পারেনি কখনো। আমিনের ভেতরের অনুভূতিটাও তার অজানাই থেকে গেছে। তার যেমনটি মনে হয়, আমিনও কি সেরকমই ভাবে? মেলে না? সে-ও কি আমিনের কাছে অবলিগেশন হয়ে উঠেছিল? মুখ ফুটে বলতে পারেনি? এসব প্রশ্ন জটিল, নিজেকে ভেঙেচুরে দেয়, সূচি তাই নিজেকে খুব একটা আয়নার সামনে দাঁড় করাতে চায় না। জীবন তো চলে যাচ্ছে, কোথাও কোনো ছন্দপতন তো নেই। অন্তত বাইরে থেকে যারা দেখে তারা এরকমই ভাববে, মনের ভেতরে যা-ই থাকুক না কেন!

কিন্তু এই যে তার জীবনে দ্বিতীয়বারের মতো প্রেম এল, ঝড়ো প্রেম, বাধভাঙা প্রেম—এতে কি ছন্দপতন ঘটবে না? তার ছাপ বা ছায়া কি পড়বে না বাস্তব জীবনেও? সে তো টের পাচ্ছে, তার এতদিনের সাজানো-গোছানো লুকানো-ছাপানো মনটা আর নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকছে না, বাইরে আপাত শান্ত রূপের আড়ালে এতদিন পর্যন্ত যে অশান্ত-অতৃপ্ত রূপটিকে লুকিয়ে রেখেছিল, সেটি আর কোনো আড়াল রাখতে চাইছে না, ভীষণ কোনো দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু কেন সে এসব করছে? কেন সে ফিরিয়ে দিচ্ছে না এই অপরিণামদর্শী প্রেমটিকে? কেন প্রত্যাখ্যান করছে না নাফিসকে, ভয়ানক বিপর্যয়ের আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও? ছোটবেলা থেকেই সে দুশ্চিন্তায় ভোগা মানুষ, শঙ্কায় ভোগা মানুষ, কোনো একটা দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার দুর্ভাবনায় যন্ত্রণাকাতর মানুষ। সামাজিক প্রথা সে ভাঙতে চায়নি কোনোদিন, এমনকি ভাঙার সম্ভাবনা দেখলেও ভয়ে শিউরে উঠত। তার কী দোষ? সেই বয়ঃসন্ধিকালে, তার যখন প্রথম পিরিয়ড হলো, আচমকা রক্তপাত দেখে সে শিউরে উঠেছিল, ভয়ে কুঁকড়ে গিয়েছিল, কী অপরাধে তার এমন অবিশ্রান্ত বর্ষণ হচ্ছে বুঝতেই পারছিল না, কাউকে বলতেও পারছিল না অপরাধী সাব্যস্ত হবার আশঙ্কায়; তখন, মা কীভাবে যেন বুঝে গিয়েছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদের জবাবে সব কথা বলে দিয়েছিল সূচি। শুনে মা শান্তভাবে বলেছিলেন—'সব মেয়েরই এটা হয়।' তারপর, এরকম হলে কী কী করতে হয় শিখিয়ে দিতে দিতে বলেছিলেন—'এটা হলো বড় হওয়ার লক্ষণ। তুমি এখন বড় হয়ে গেছ। বাবা আর ভাই ছাড়া অন্য কোনো পুরুষ মানুষের কাছে যাবে না, কেউ তোমার গায়ে হাত দিলেই তোমার পেটে বাচ্চা এসে যাবে। আর বিয়ের আগে কোনো মেয়ের পেটে বাচ্চা এলে কী হয় জান তো? সেই মেয়েকে জ্যান্ত পুঁতে ফেলতে হয়, মনে থাকে যেন!' সে তীব্র আতংকে নীল হয়ে গিয়েছিল। এ কোন ধরনের শাস্তি! কেন তার এরকম হলো? কেন শুধু মেয়েদেরই এমন হয়? কেন ছেলেদের এই শাস্তি ভোগ করতে হয় না? কিন্তু এসব প্রশ্ন করার সাহস ছিল না তার, করবেই বা কাকে, মনের ভেতরেই গুমরে মরত। প্রতিমাসের ওই নির্দিষ্ট সময়টিতে সে একদম ভেঙে পড়ত আর সারা মাস আতংকে ভুগত—আবার আসছে ওই দিনগুলো—ভেবে। বহুদিন ধরে সে এই ধারণা বয়ে বেড়িয়েছে যে, ছেলেদের স্পর্শেই মেয়েদের পেটে বাচ্চা আসে। স্কুল-কলেজে সহশিক্ষা ছিল না, ছেলেদের সঙ্গে মেশার সুযোগ ঘটেনি, বাড়িতেও কাজিনদের এড়িয়ে চলত, দূরে দূরে থাকত, ডাকলেও কাছে যেত না, যদি ছোঁয়া লেগে যায়—এই ভয়ে! বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে সহপাঠী হিসেবে ছেলেদেরও পেলো, এই প্রথমবারের মতো, এত কাছাকাছি। খুব সাবধান থাকত সে, তবু কারও কারও সঙ্গে বন্ধুত্বও হয়ে গেল। অবশ্য ভুলেও একা ওদের সঙ্গে কখনো মিশত না সূচি, দু-একজন বান্ধবী সঙ্গে থাকতই। ততদিনে অবশ্য ভুলগুলো একটু একটু করে ভাঙতে শুরু করেছে, বান্ধবীরাই ভাঙিয়ে দিয়েছে, মায়ের ওই কথা শুনে হেসেই খুন হয়েছে কেউ কেউ, তারচেয়ে বেশি হেসেছে তার নির্বুদ্ধিতা দেখে। সে যে এতদিন ধরে এসব বিশ্বাস করে এসেছে, সেটিই তাদের হাসির কারণ। ভয় ভাঙার পরও অবশ্য সে ছেলেদের সঙ্গে সহজ হতে পারত না। কেউ দুষ্টুমি করেও ভালোলাগার কথা বললে সে কানে আঙুল দিত, কেউ প্রেমের কথা বললে ভয় পেত। ভাবত—প্রেমিক-প্রেমিকা যেভাবে গায়ে গা লাগিয়ে বসে থাকে, কবে যে পেটে বাচ্চা চলে আসে কে জানে! একটু ভয়ডরও নেই ওদের! 

এত ভীতি, এত শঙ্কা, এত সতর্কতা সত্ত্বেও তার জীবনে প্রেম এসেছিল। নিজের ইচ্ছেতে যতটা নয়, তারচেয়ে বেশি আমিনের ইচ্ছেতে। আমিন তার বছর পাঁচেকের সিনিয়র, ক্লাসের ফার্স্ট বয়, মানে খ্যাতিমান ছাত্র। এই ধরনের ছাত্রদের ব্যাপারে মেয়েদের একটু কৌতূহল থাকে বটে, কিন্তু কেউ তাদের সঙ্গে কোনোরকম সম্পর্কে জড়ায় না। এরা তো সাধারণত বোরিং-টাইপ হয়, আর এদের চেয়ে বহুগুণে উজ্জ্বল-আকর্ষণীয় ছেলেরা আশেপাশেই ঘুরে বেড়ায়, কেনই-বা এদের সঙ্গে জড়াবে? অবশ্য হিসাবি মেয়েদের কথা আলাদা। যারা একশ বছর পর কী হতে পারে আজই সেটা ভেবে বসে থাকে, তারা হয়তো এই ধরনের ছেলেদেরই পছন্দ করবে। সেটা স্বাভাবিকও। ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তা করতে হয় না এদের—নিশ্চিত উজ্জ্বল ভবিষ্যত্ তাদের জন্য উন্মুখ হয়ে অপেক্ষা করে থাকে। সূচি হিসাবি মেয়ে নয়। ভবিষ্যত্ দূরের কথা, আগামীকাল নিয়েই কোনো চিন্তাভাবনা নেই তার, যা হবার হবে—এরকমভাবে ছেড়ে দিয়ে বসে আছে। তার যাবতীয় চিন্তা বর্তমানকে ঘিরে, বর্তমানের যাবতীয় দুর্যোগ থেকে নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টায় ব্যয়িত। তবু আমিন যখন এসে তার ভালোলাগার কথা বলল, সে ভীষণ অবাক হয়েছিল। আমিন 'ভাই' যে তার দিকে কখনো তাকিয়ে দেখতে পারে, সে কখনো ভেবেই দেখেনি। সূচি প্রথম দিন কিছু বলেনি। আমিনও সময় নিয়ে চিন্তা করে হ্যাঁ-না কিছু একটা জানাতে বলেছে। কী জানাবে সে? মা জানলে মেরে ফেলবে না? না বোধ হয়। মেয়ের বিয়ে দিতে হবে না? এত ভালো ছেলে সে পাবে কোথায়? মা-র তো বর্তে যাওয়ার কথা! সূচি দু-চারদিন সময় নিল, তারপর সরাসরি কিছু না বলে আমিনের সঙ্গে মিশতে শুরু করল। মনের ভেতর থেকে ভয় বা শঙ্কা কোনোটাই কাটল না, তবু প্রেমটা হয়ে গেল। হয়ে যায় আর কি! বয়সের দোষ, সুঁই-সুতো পাশাপাশি থাকলে সম্পর্ক নির্মিত হবেই। অবশ্য তাদের সুঁই-সুতোর সম্পর্কটি হলো না, কিন্তু সূচি অচিরেই আবিষ্কার করল—তার শরীরের দিকে আমিনের ঝোঁকটা মারাত্নক। শান্ত-শিষ্ট-সুবোধ 'বালক' হিসেবে যাকে সবাই চেনে, সে যে সুযোগ পেলেই সূচির বুকে হাত দেয়, সেটা কি কেউ কল্পনা করতে পারবে? ব্যাপারটা অস্বাভাবিক নয়, বোঝে সূূচি, কিন্তু চিরদিনের লালিত শঙ্কা আর ভয় তাকে সংকুচিত করে রাখে। তাছাড়া, সবকিছুরই একটা শোভন-অশোভন রূপ আছে না? রিকশায় উঠেই রোদ নেই বৃষ্টি নেই হুড তুলে দিয়ে বুকে হাত দেবে, ক্যাাম্পাসে একটু আড়াল পেলেই বুকে হাত দেবে, পার্কে গিয়ে বসে লোকজনের খরদৃষ্টি উপেক্ষা করে বুকে হাত দেবে, মাঝে মাঝে বন্ধুবান্ধবের সামনেই চোখ ফাঁকি দিয়ে বুক ছুঁয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবে—এগুলো কী ধরনের ব্যাপার? সূচিকে একবার জিজ্ঞেস তো করেই না, এমনকি একবার ভেবেও দেখে না যে, সূচি এতে বিব্রতবোধ করছে কি না। নিজের সুখ মেটাতেই ব্যস্ত সে, অন্য কোনোদিকে নজর নেই। আর বুকের প্রতি অত লোভই বা থাকবে কেন? প্রেম হয়েছে, বিয়ে হবে, সব তো তোমারই, এখনই অত অস্থিরতার কী হলো? অবশ্য এর চেয়ে বেশিকিছু করার সুযোগ ছিল না। নিরাপদ জায়গা কোথায় যে দুজনে মিলিত হবে? তাছাড়া, সূচি এটা চাইতও না। আমিন মাঝে মাঝে কোনো বন্ধুকে বলতে চাইত কোনো একটা ব্যবস্থা করে দিতে, সূচি সাড়া দিত না। বলত—'এখন না লক্ষ্মীটি। আমি তো আর পালিয়ে যাচ্ছি না, হারিয়েও যাচ্ছি না। বিয়ের পর যত ইচ্ছে করো।' 

কিন্তু বিয়ে এত সহজে হলো না। বছর পাঁচেক সময় নিল আমিন, একটু গুছিয়ে নেয়ার নাম করে। ততদিনে সূচি মাস্টার্স ফাইনাল দেবে দেবে করছে, একের পর এক বিয়ের প্রস্তাব আসছে, সে নানা কৌশলে সেগুলো ফিরিয়ে দিচ্ছে। মাকে অবশ্য কিছু বলা যাচ্ছে না, যে প্রস্তাবই আসুক, সে হাসিমুখে বলছে—'তোমরা যেটা ভালো মনে কর, আমার কোনো আপত্তি নেই মা।' কিন্তু বাবাকে বলছে ভিন্ন কথা—'আমাকে জিজ্ঞেস না করে কাউকে কথা দিয়ো না বাবা।' বাবা জানতে চাইছেন তার পছন্দের কেউ আছে কি না, সে সরাসরি স্বীকার করছে না, অস্বীকারও করছে না। বাবার কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়ছে। স্ত্রীর বাড়াবাড়ি দুশ্চিন্তাকে তিনি অপছন্দ করেন ঠিকই, কিন্তু মেয়ে বড় হয়েছে, মাস্টার্স করছে, এরপর তো বয়সের দোষে বিয়ে দেওয়াই কঠিন হবে! অনেকদিন চেপে রেখে বাবার দুশ্চিন্তা কমানোর জন্য সূচি আমিনের কথা বলল তাকে, একদিন গোপনে গিয়ে কন্যার ভবিষ্যত্-জামাতাকে দেখে এলেন বাবা, পছন্দও করলেন, কিন্তু সূচির অনুরোধ রক্ষার্থে মাকে কিছু জানালেন না। বিয়ের প্রস্তাবগুলো একথা-সেকথা বলে তিনিই ফিরিয়ে দিতে লাগলেন। 

সূচি অনেকবার চেষ্টা করেছে আমিনকে বাসায় নিয়ে যেতে, অন্তত মা-বাবার সঙ্গে একবার কথা বলে আসুক—কিন্তু কিছুতেই তাকে রাজি করানো যায়নি। গেলেই নাকি বিয়ের জন্য চাপ দেবেন তারা, এখন কোনোভাবেই সেটি সম্ভব নয়। যদিও একটা ব্যাংকে বেশ ভালো পদে চাকরি করছে সে, কিন্তু তার টার্গেট বিশ্ববিদ্যালয়ে জয়েন করা, প্রথম স্থান দখল করা সত্ত্বেও নানা রাজনীতি করে তাকে ঠেকিয়ে রাখা হয়েছে, এর শেষ না দেখে সে অন্য কোনোকিছুতে মন দিতে পারবে না। অবশেষে যখন সেটা সম্ভবপর হলো, তখন সে সত্যিই এল বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে, দেরি করল না একটুও। জয়েন করতেই দেরি হয়ে গেছে, দু-বছর চাকরি করে ছুটি নিয়ে বাইরে যাবে পিএইচডি করতে, তারপর আবার দেশে ফিরে আসবে; বিয়েটা তাই তাড়াতাড়িই সেরে ফেলতে চায়। তার বুদ্ধিজীবী হওয়ার খুব শখ এবং সহজে এই স্বপ্ন পূরণের জন্য বাংলাদেশের মতো এমন খালি মাঠ নাকি আর কোথাও পাওয়া যাবে না। সবজিবাগানে যেমন কলাগাছকেও বড় দেখায়, এ দেশের অবস্থাও নাকি ওরকমই, আর সেজন্যই এ দেশে গণ্ডায় গণ্ডায় বুদ্ধিজীবী, সঙ্গে যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পরিচিতি থাকে তাহলে তো কথাই নেই। অবশ্য দু-বছরের মধ্যে তার বাইরে যাওয়া হলো না, একটা প্রমোশন নিয়েই যাই—এই কথা বলে চার বছর পর্যন্ত সময় নিল। তাদেরও বিয়ের চার বছর পার হলো। এর মধ্যেই সূচির যা বোঝার বোঝা হয়ে গেছে। লোকটা ভয়াবহ ধরনের ক্যারিয়ারিস্ট। ক্যারিয়ারের জন্য সব করতে পারে—কাউকে ল্যাং দেওয়ার দরকার হলে দেবে, গুঁতো দেওয়ার দরকার হলে দেবে, লাথি মারার প্রয়োজন হলে মারবে। পুরুষ হিসেবেও খুবই অদ্ভুত মানসিকতার মানুষ আমিন। সূচি সেটি বুঝে গিয়েছিল বিয়ের কয়েক মাস পরেই, যেদিন আমিন তার শরীর হাতড়াতে হাতড়াতে বলেছিল—'তোমার শরীর দেখলেই মনে হয়, এই শরীর বহুবার ব্যবহূত। আমার আগে কারও সঙ্গে সম্পর্ক ছিল নাকি তোমার?' শুনে শিউরে উঠেছিল সূচি। বলে কী লোকটা? এত সযত্নে শুচিতা রক্ষা করা চলা মেয়ে সে, এমনকি কারও স্পর্শের ভয়ে যে সবসময় কাতর হয়ে থাকত, তার শরীর কি না ব্যবহূত! ছি! ছিহ! এরকম করে কেউ ভাবতে পারে? হ্যাঁ, ছোটবেলা থেকেই, মানে বয়ঃসন্ধিকাল থেকেই তার শরীর একটু বাড়বাড়ন্ত। কৈশোর পেরোতে না পেরোতেই এবং কিছু বুঝে ওঠার আগেই সে আবিষ্কার করে উঠেছিল, তার স্তন বড় হয়ে উঠছে, নিতম্ব ছড়িয়ে পড়ছে, কটিদেশ ক্রমশ ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হচ্ছে। যৌবনে নিজের ভরভরন্ত শরীর দেখে সে নিজেই চিনতে পারত না। এ কি তার দোষ? দোষ তো নয়ই, বরং শরীরটা হয়ে উঠেছিল তার জন্য বিব্রতকর। পুরুষ মানুষদের লোলুপ চোখ থেকে নিজেকে বাঁচাতে ওড়না টেনে শরীর আড়াল করতে করতেই তার সময় ব্যয় হতো। সেই শরীর নিয়ে স্বামীর কাছ থেকে এই অপবাদ শুনতে হবে? নিজেকে তার অশুচি মনে হতো। অথচ এমন নয় যে, আমিন তার পৌরুষ দিয়ে তাকে খুব সুখী করতে পেরেছে। কখনো সূচির কথা ভাবেনি লোকটা। সূচি সুখী কি না, তৃপ্ত কি না, কোনটি তার পছন্দ কোনটি নয়—এসব নিয়ে আমিনের কখনো কোনো চিন্তাই ছিল না। চড়ুই পাখির মতো অল্পতেই নেতিয়ে পড়া এক অপগণ্ড পুরুষ সে, অথচ মুখে মুখে বাঘ শিকার করে বেড়াচ্ছে! যাহোক, বিয়ের দু-বছরের মাথায় তার কোলজুড়ে একটা বাচ্চা এল। স্বামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সূচি নিজেও একটা বহুজাতিক কোম্পানিতে ভালো পদে চাকরি করছে, সামাজিকভাবে তারা সুখী-সফল দম্পতি, কোথাও কোনো দাগ দেখা যায় না। যাবে কীভাবে? দাগ তো সব লেগে আছে মনে!

যাহোক, সামাজিক জীবনে কোনো দাগ-টাগ না রাখলেও সূচির মনের ভেতরে হাজারটা দ্বিধা তৈরি করে আমিন চলে গেল বিদেশে। আর দেরি করা যায় না। বিদেশি পিএইচডি না হলে আর চলছে না, এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গেছে, আরও কালক্ষেপণ করলে আর ট্রেন ধরা যাবে না। যাওয়ার সময় আমিন জানিয়ে গেল— 

বছরখানেক পর এসে তোমাদের নিয়ে যাব। 

দীর্ঘ সময়ের জন্য গেলে তো চাকরিটা ছাড়তে হবে, তুমি যদি ওখানে সেটেল করতে চাও তাহলে ছেড়ে দিয়েই যাব, নইলে কি চাকরি ছাড়াটা ঠিক হবে? —সূচি এই কথা বললে আমিন বললো— 

নাহ, তাহলে থাক। আমিই এসে ঘুরে যাব। সম্ভব হলে বছরদুয়েক পর তোমরা গিয়ে ঘুরে আসবে। বাইরে সেটেল করার জন্য তো এত সেক্রিফাইস করিনি।

সেক্রিফাইস?

সেক্রিফাইস নয়? ইউনিভার্সিটিতে জয়েন করার জন্য চার বছর অপেক্ষা করেছি। জীবন থেকে চারটা বছর ক্ষয়ে গেছে। বাইরে সেটেল করতে চাইলে তো পাস করেই চলে যেতাম। এমন তো নয় যে আমার সে সুযোগ ছিল না।

তা বটে। ভালো ছাত্রদের জন্য বাইরে পড়াশোনা করতে যাওয়া কোনো বিষয়ই নয়। আমিন চলে গেলে সূচি যেন একটু হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। বেশ খানিকটা ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল সে, এই চার বছরের দাম্পত্য-জীবনে। মাঝে মাঝে এরকম শারীরিক দূরত্ব থাকা ভালো। এই যেমন এতদিন পর সে যেন নিজের দিকে ফিরে তাকানোর সময় পেলো। আর মনে হলো, ছোটবেলা থেকে মায়ের নির্যাতন আর বিয়ের পর আমিনের নির্যাতন—এগুলো নিয়েই সে এতটা পথ পেরিয়ে এসেছে। শারীরিক নির্যাতন করেনি কেউ, কিন্তু ভয়াবহ মানসিক চাপে রাখার ব্যাপারে দুজনেরই কুশলতা অসাধারণ। সবসময় ভয়-শংকা-আতঙ্ক, অপরাধ না করেও অপরাধী হয়ে থাকা—এই ছিল তার এতদিনকার জীবন। এবার কিছুদিন নিজের মতো করে থাকা যাবে। বাচ্চাটা রাজপুত্রের মতো সুন্দর হয়েছে, ওকে নিয়েই মনের মতো করে একটা ছোট্ট রাজপ্রাসাদ বানাবে সে ঘরের কোণে।

কিন্তু সূচি তখনো জানত না যে তার সেই একান্ত ঘরে আরেকজন মানুষের প্রবেশ ঘটবে। সত্যি বলতে কি, নাফিসকে ভালো লাগলেও সে যে তার জীবনে এসে পড়বে সেটি কখনো ভাবেনি। সূচির সহকর্মী সে, সুদর্শন-সুপুরুষ, কোমল আর স্নিগ্ধ একজন মানুষ। দু-বছর ধরে তাদের এখানে জয়েন করেছে নাফিস, তার আগে আরেকটি বহুজাতিক কোম্পানিতে কাজ করে এসেছে, ফলে এখানেও পদটি বেশ ভালোই পেয়েছে। বয়সে তার সমানই হবে হয়তো কিংবা এক-দুবছরের বড়, এখনো বিয়েটিয়ে করেনি, আপাতত করার ইচ্ছেও নেই। সূচির সঙ্গে তার সম্পর্ক বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ অনেকদিন ধরেই, ফলে সে এতদিনে জেনে গেছে—প্রেমিকার বিয়ে হয়ে গেছে বলে আপাতত বিয়ের কথা ভাবছে না নাফিস। আরও কিছুদিন যাক, তারপর ইচ্ছে হলে করবে। নাফিস ভালো চাকরি করছে, ছেলেরা তো বিয়ে করতে সময় নেয় একটু গুছিয়ে ওঠার জন্যই, তাহলে কেন ওই মেয়েটির বিয়ে হলো, কেন হতে দিল সে—এ কথা আর জিজ্ঞেস করা হয়নি। করাটা হয়তো শোভনও নয়। কে জানে, তাদের প্রেমের সম্পর্কটিও শেষ পর্যন্ত অবলিগেশন হয়ে উঠেছিল কি না! যদি সেটি হয়ে থাকে এবং সচেতনভাবে দুজনে সংসার পাতার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে থাকে, তাহলে বলতেই হয়—তারা আমাদের চেয়ে অনেক আধুনিক মানুষ, ওরা পেরেছে, আমরা পারিনি—ভেবেছে সূচি। যাহোক, নাফিসকে তার বরাবরই খুব ভালো লেগেছে বটে, তবে বন্ধুতা ছাড়া অন্য কোনো সম্পর্কের কথা কখনো ভেবেছে বলে মনে পড়ে না। নাফিসের মুগ্ধ দৃষ্টিও তার চোখ এড়াত না। তবে এটা তো আর নতুন কিছু নয় তার জন্য। সেই কৈশোর থেকেই অজস্র মুগ্ধ চোখ, অসংখ্য লোভী চোখ, অনেক কামনার্ত চোখ দেখেছে সূচি। সে তাই ব্যাপারটাকে গুরুত্ব দেয়নি। বন্ধুত্বের কারণে মাঝে মাঝে অফিস শেষে দুজন কোথাও গিয়ে খেতে বসেছে, সুখ-দুঃখের গল্প করেছে, কিছুটা সময় কাটিয়ে যার যার ঠিকানায় ফিরে গেছে। কিন্তু নাফিস যেদিন কোনো ভণিতা না করে সরাসরি বলে ফেলল—'আমি বোধহয় তোমার প্রেমে পড়েছি, সূচি।'—সে দারুণ অবাক হয়েছিল। সে কি নাফিসের চোখে কখনো প্রেম দেখেছে? মনে তো পড়ে না। লোভ আর কামনা যেমন এক নয়, তেমনই প্রেম আর মুগ্ধতাও এক ব্যাপার নয়। কিন্তু নাফিসের মুখে প্রেমে পড়ার কথাটা শুনে তার বুক কেঁপে উঠল। কেন কাঁপল? সে কি মনে মনে এই প্রেমের জন্য অপেক্ষা করেছে? কেন করেছে? এর যুক্তি কী? 

শুনে সে রহস্যময়ীর মতো হেসে বলল—তাই নাকি? বুঝলে কী করে?

তোমার জন্য আমার মন কেমন করে।

এটুকুই?

আমি তো অত গুছিয়ে বলতে পারি না। কিন্তু এটুকু তো ছোট কোনো ব্যাপার নয়। সারাক্ষণ আমি তোমার কথা ভাবি, তোমাকে দেখার জন্য মন কাঁদে, ছুটির দিনগুলো যে কী বিশ্রী কাটে, সময়ই কাটতে চায় না। মনে হয় সপ্তাহের সাতদিনই কেন ওয়ার্কিং ডে হলো না, তাহলে তোমাকে প্রতিদিন দেখতে পেতাম!

তার শুনতে ভালো লাগছিল। একটু মজা করার জন্য বলল—ছুটির দিনে আমার বাসায় চলে এলেই পার।

চাইলেই কি পারা যায়? তোমার সঙ্গে আমার সম্পর্কটা তো ঠিক ওই পর্যায়ে যায়নি যে হুট করে তোমার বাসায় চলে যেতে পারি।

তা না হয় না পারলে, আমাকে আসতে বললেই তো পারতে!

এই যে বললাম। 

সূচি লজ্জা পায়। নিজের কথার ফাঁদে নিজে ধরা পড়ছে সে। কী সব বোকা বোকা কথা বলছিল! সূচি ভেবে দেখল—সেও অনেকদিন ধরেই কারণে-অকারণে নাফিসের কথা ভাবে। ভাবতে ভালো লাগে। কিন্তু কী ভাবে, কেন ভাবে—এইসব প্রশ্নে নিজের মুখোমুখি দাঁড়ায়নি কখনো। সূচি বুঝে গেছে—সে আসলে খুবই ভীতু মানুষ। যেখানে বিপদের সম্ভাবনা, যেখানে মন এলোমেলো হওয়ার আশঙ্কা, সেখান থেকে সে পালিয়ে পালিয়ে থাকে। কোনো ঝুঁকি নেয়ার সাহস হয় না। কিন্তু এখন যে ব্যাপারটা সামনে চলে এল! ফেরাবে কী করে? নাকি গ্রহণ করবে এই প্রেমকে? এই দোলাচলে দুলতে দুলতে কখন যে কী হয়ে গেল, বুঝতেই পারল না সূচি। প্রতিদিন দেখা হয়, তবু ছুটির দিনগুলোতে মন হুহু করতে থাকে। দুপুর পর্যন্ত কোনোভাবে থাকা গেলেও বিকেলে পাগল পাগল লাগে, নাফিসকে ফোন করে কোথাও আসতে বলে সে, কণ্ঠের আকুলতা না লুকিয়েই। এখন তার হাতে অনেক সময়। বাচ্চাটাকে দেখাশোনার জন্য একজন আয়া আছে, বাসাটাও বাবার বাসার কাছেই, অফিসে গেলে মা এসে ওকে নিজের কাছে নিয়ে যান, তেমন টেনশন করতে হয় না। আগে অফিস থেকে ফিরে বাকি সময়টুকু এবং ছুটির দিনগুলোর পুরো সময়টাই ছেলেকে দিত সে, এখন সেখানে ভাগ বসিয়েছে নাফিস, প্রবলভাবে, কোনোভাবেই যাকে ভুলে থাকা যায় না। প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত ফোনে কথা বলে তারা, সকালে দেখা হবে জেনেও দুজনের কথা যেন আর ফুরাতেই চায় না, সারাদিন অফিসে কেউ যেন বুঝতে না পারে—এমনভাবে দুজন দুজনের আশপাশে এসে পড়ে সুযোগ পেলেই। অফিস শেষে দুজন আলাদাভাবে বেরোয় ঠিকই, কিছুক্ষণ পরই কোথাও না কোথাও গিয়ে বসে আবার। কিন্তু ঠিক তৃপ্ত হওয়া যাচ্ছে না যেন, কোথায় যেন একটা অপূর্ণতা রয়েই যাচ্ছে! সূচি বুঝতে পারে, তার শরীর কথা বলতে শুরু করেছে, জেগে উঠতে শুরু করেছে, স্পর্শ চাইছে, গন্ধ চাইছে, হয়তো আরও অনেক কিছু চাইছে। এরকমভাবে সে আর কোনোদিন জেগে ওঠেনি জীবনে—না শরীরে, না মনে। একেই বোধ হয় প্রেম বলে! আমিনের সঙ্গে যা ছিল তা হয়তো প্রেম নয়, কিংবা হলেও এই দুই প্রেমের ধরন আলাদা। কিন্তু নাফিস এত সুবোধ বালক যে, তার চোখে মুগ্ধতা ছাড়া অন্য কোনোকিছু চোখে পড়ে না। লোভ না হয় না-ই থাকল, কামনা নেই কেন? সে কি চায় না সূচিকে? পাশাপাশি হাঁটার সময়, বা কাছাকাছি বসে থাকলেও সে এমন একটা শোভন দূরত্ব বজায় রাখে যেন স্পর্শ না লেগে যায়। হয়তো সে অন্য সব পুরুষের মতো নয়, হয়তো তার শোভন মনটি সবসময় এমনভাবে ক্রিয়াশীল থাকে যেন অন্য কেউ তার আচরণে আহত না হয়। কিন্তু সে কেন সূচির আকাঙ্ক্ষাগুলোকে বুঝতে পারছে না? নাকি বুঝতে পেরেও সাড়া দিচ্ছে না? সূচি কি নিজেই বলবে? এও কি সম্ভব? ধুর, এতটা হ্যাংলা সে হতে পারবে না। তার চেয়ে অপেক্ষা করা ভালো। একদিন না একদিন নাফিসকে বলতেই হবে। পুরুষ তো! সুন্দরী নারীর শরীর পাওয়ার এরকম সুবর্ণ সুযোগ সে হারাবে না। সূচির অপেক্ষা দীর্ঘ হলো না, কিছুদিনের মধ্যেই নাফিস বলল— 

চলো ঢাকার বাইরে থেকে একটু ঘুরে আসি।

কোথায় যাবে?

আশপাশেই কোথাও চলো। দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসব।

সারাদিন বাইরে বাইরে ঘুরব? সেই বয়স কি আর আছে?

না, শুধু ঘুরব কেন? ঢাকার আশপাশে কত কটেজ হয়েছে, গেস্ট হাউজ হয়েছে। নিরিবিলি সময় কাটানোর জন্য চমত্কার জায়গা। ওগুলোর কোনো একটাতে যাওয়া যায়। তোমার কোনো আপত্তি নেই তো?

সূচির মন আনন্দে নেচে উঠেছিল। এই তো ধরা দিয়েছ, পুরুষ! কতদিন আর মধু ফেলে দূরে থাকতে পারে মৌমাছি? কটেজে বা গেস্টহাউজে নিরিবিলি সময় কাটানোর অর্থ কি সে বোঝেনি? একটু লাজুক হেসে বলল—

তোমার সঙ্গে যেতে আপত্তি থাকবে কেন? কবে যাবে বলো।

তোমার সুবিধামতো কোনো ছুটির দিনে।

নাফিসের ইচ্ছেটা সে বুঝেছে বলেই সাবধান হতে হলো। বললেই তো আর যাওয়া যায় না। দুটো শরীর যখন উন্মুখ হয়ে থাকে মিলনের জন্য, তখন পুরুষের যতটা নয়, তারচেয়ে অনেক বেশি সাবধান হতে হয় নারীকে। নারীর শরীরের কত রংঢং—নিরাপদ সময়, ঝুঁকিপূর্ণ সময়—আরও কত কি হিসাব করতে হয়! সে নিশ্চয়ই মুহূর্তের ভুলে কনসিভ করার ঝুঁকি নেবে না, আবার সম্পর্কটি হওয়ার আগেই কাউকে নিরোধক ব্যবহারের প্রসঙ্গটিও বলা যায় না। তার চেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ হলো—মাসের ঝুঁকিমুক্ত কোনো এক সময়ে মিলিত হওয়া। সূচি নিজেই হিসাব-টিশাব করে একটা তারিখ ঠিক করল, এবং যা প্রত্যাশা করেছিল তা-ই হলো। ঘুরে বেড়ানো আর হলো না তাদের। নিজেই ড্রাইভ করে এসেছে, একটু রেস্ট নিয়ে ফ্রেশ হয়ে ঘুরতে বেরোবে—এই কথা বলে তাকে নিয়ে কটেজের রুমে গিয়ে ঢুকল নাফিস। এবং ঢুকেই দুহাত বাড়িয়ে কাছে ডাকল সূচিকে। সূচিও নিজেকে বাধা দিল না। নির্দ্বিধায় নাফিসের বুকের ভেতরে গিয়ে মুখ গুঁজল। যথার্থ প্রেমিকের মতো কানে কানে ফিসফিসিয়ে রোমান্টিকতা ছড়াল নাফিস, তারপর মুখ তুলে নিয়ে চুম্বন করল, চোখে চোখ রেখে জিজ্ঞেস করল— 

হয়ে যাবে নাকি একবার?

সূচি মৃদু হেসে বলল—তোমার ইচ্ছে।

শুধুই আমার ইচ্ছে? তোমার ইচ্ছে নেই? তাহলে থাক।

আমি কি তাই বলেছি?

তাহলে?

তুমি না বললে, ক্লান্ত?

হাহাহাহা... ওটা তো কথার কথা।

হুম! ফন্দি?

আমি ফন্দি করেছি?

করেছই তো।

ভালো করেছি। ফাঁদে পা যেহেতু দিয়েছই, চলো এবার—বলে সূচিকে কোলে তুলে বিছানায় নিয়ে গেল নাফিস।

তারপর যা ঘটল, সেটি ছিল সূচির জন্য অভাবনীয়। শরীরী আদর যে এত অসামান্য ব্যাপার হতে পারে, সে কখনো কল্পনাও করতে পারেনি। সারা শরীরে চুম্বনের ঝড় বইয়ে দিল নাফিস, আদর করল কোমলভাবে, আর প্রবেশ করল চিতাবাঘের ক্ষিপ্রতা নিয়ে। পাগল হয়ে উঠল সূচি, আর জীবনে এই প্রথমবারের মতো অনুভব করল—সঙ্গম কী তৃপ্তিদায়ক ব্যাপার! যথার্থ পৌরুষদীপ্ত যুবকের মতো সঙ্গীকে সর্বোচ্চ সুখ এনে দিল নাফিস। একবার নয়, কয়েকবার। সারাদিনে তারা আর বাইরে বেরোল না। দুপুরে খাবার আনতে বলল রুমেই। তারপর সন্ধ্যা পর্যন্ত ওখানেই রয়ে গেল। ওই খাবারের সময়টুকু ছাড়া বাকি সময়টা নাফিস এক মুহূর্তও সূচিকে ছাড়ল না। কখনো বুকে জড়িয়ে শুয়ে রইল, কখনো চুমুতে ভরিয়ে তুলল সারা শরীর, কখনো ধীরে হাত বুলিয়ে দিতে লাগল সারা গায়ে, আর যখন উত্থিত হলো তখন প্রবেশ করল ভেতরে। সূচিও পুরো সময়টি দারুণ উপভোগ করল, নাফিসকে বারবার জাগিয়ে তুলবার জন্য সবটুকু সহায়তা করল, আর তীব্র আনন্দে ভেসে গেল অচিন কোনো দেশে। মনে হচ্ছিল, এই প্রথমবারের মতো তার কুমারীত্ব হরণ হলো। শরীরী সম্পর্ক যে এত সুন্দর হতে পারে, এত আকর্ষণীয় হতে পারে, এত প্রেমময় হতে পারে, এত উত্তেজনাপূর্ণ হতে পারে, এত তৃপ্তিদায়ক হতে পারে, তার জানা ছিল না। নাফিস তাকে এক নতুন জগতের সন্ধান দিয়েছে যেন। অভিজ্ঞ পুরুষ, বোঝা যায়। নিশ্চয়ই প্রেমিকার সঙ্গে শরীরের সম্পর্ক ছিল! থাকুকগে। সেও তো একজনের স্ত্রী। কৌমার্য তো সে প্রত্যাশা করেনি, যেহেতু সে কুমারী নয়। কিন্তু এরকম চমত্কার যার পৌরুষ, তাকে ছেড়ে ওই মেয়েটি অন্য পুরুষের ঘর করবে কী করে? কথাটা মনে হতেই সূচির মন খারাপ হয়ে গেল খামোখা। কেন যে নাফিসের আগে একটা প্রেম ছিল, কেন যে সে-ই প্রথম হলো না ভেবে এই মন খারাপ। তার নিজেরও যে প্রথম নয়, সেটা প্রায় মনেই রইল না। অবশ্য নাফিস তাকে মন খারাপ করে থাকতে দিল না। আদর-সোহাগ, প্রেমে-ভালোবাসায় ভরিয়ে তুলল। 

একবার বাধাটি দূর হয়ে যাবার পর বিষয়টি নিয়ে দুজনের খোলামেলা কথা বলার দ্বিধাটুকু ঝরে পড়ল। নাফিস কোনো নিরোধক ব্যবহার করতে রাজি নয়, ওর নাকি রেইনকোট পরে গোসল করার অনুভূতি হয়! সূচিও কোনো পিলটিল খেতে চায় না বিরূপ প্রতিক্রিয়ার ভয়ে। অতএব মাসের নিরাপদ সময়ের জন্য উন্মুখ অপেক্ষা দুজনের। 

আনন্দেই কাটছিল সময়, কিন্তু নাফিস বোধ হয় এতে সন্তুষ্ট নয়, আরও পেতে চায়, আরও, হয়তো সেজন্যই একদিন সে বিয়ের কথা তুলল। সূচি আঁতকে উঠল।

না, না, বিয়ে কেন? বিয়ে নয়। 

কেন নয়? 

কেন বিয়ে? আমার সংসার আছে না?

আছে। কিন্তু সংসার ছেড়ে কি কেউ আসে না?

আসে। আমি আসব না।

কেন? তুমি কি আমাকে ভালোবাস না?

বাসি। কিন্তু সংসারের জন্য নয়।

কিসের জন্য?

ভালোবাসার জন্য ভালোবাসি। প্রেমের জন্য ভালোবাসি।

প্রেম তো পরিণতি চায়।

চায়। কিন্তু বিয়ে প্রেমের পরিণতি নয়, প্রেমের মৃত্যু।

অভিজ্ঞতা থেকে বলছ?

শুধু অভিজ্ঞতা নয়। বোঝাপড়াও বলতে পার।

কেন ও কথা বলছ?

প্রেম হলো চূড়ার সম্পর্ক, আর সংসার সমতলের। চূড়া অনেক সুন্দর, তুষারশুভ্র, বিপুল, রহস্যময়। আর সমতলে ধুলোকাদামাটি, নোংরা-আবর্জনা।

আরে বাপরে। একেবারে কবিদের মতো কথা বলছ!

কবিদের মতো কথা কি শুধু পুরুষরাই বলতে পারে? মেয়েরা পারে না?

নাফিস দুর্বল কণ্ঠে কিছুক্ষণ তর্ক চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করল, কিন্তু সূচি ছিল আত্মবিশ্বাসী, যুক্তিতে প্রখর। হার মানতে হলো নাফিসের। বিয়ে-সংসার ইত্যাদির ব্যাপারে স্পষ্ট অনিহার কথা জানিয়ে সূচি তার কাছ থেকে এরকম প্রতিশ্রুতি আদায় করে ছাড়ল যে, সে এই ধরনের কথা আর কোনোদিন বলবে না। 

বিয়েতে রাজি না হলেও শরীরী সম্পর্কে দারুণ নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল সূচি। মুখে কিছু না বললেও তার মন অস্থির হয়ে থাকত, অপেক্ষাকাতর সময়গুলোতে এক দিনকেও মনে হতো অনন্তকাল। কিন্তু তার এই আকুলতা, এই অস্থিরতা নাফিস আদৌ বুঝত কি না, সেটা বোঝার কোনো উপায়ই ছিল না। সে বরাবরের মতোই ধীর-স্থির, শান্ত, অটল। মানুষ তো এরকম একটা প্রেমে পড়লে একটু টলে যায়, একটু ঝুঁকে পড়ে, পড়তেই হয়, সোজা হয়ে হাঁটতে থাকা মানুষটিকেও সঙ্গীর আবেগে সাড়া দিতে গিয়ে একটু পিছিয়ে পড়তে হয়। নাফিসের যেন এগুলোর কিছুই হয়নি। সূচির আবেগটি এমন হয়ে উঠেছিল যে, সে প্রতিদিনই পেতে চাইত, আর নাফিস হয়তো মাসখানেক পরপর একদিন তাকে নিয়ে যেত কোথাও, সারাদিন ধরে মধু পান ও দান করে আবার আগের মতো হয়ে যেত। কিন্তু ওই একটা দিন এত আনন্দময়তায় ভরে উঠত যে সূচির মনে হতো—চিরকাল শরীর নিয়ে আতংকে ভুগে কতকিছুই না স্বেচ্ছায় হারিয়েছে সে। আমিন তো তাকে কিছুই দেয়নি, ক্লান্তি ছাড়া। স্বামীসঙ্গ তার কাছে যে কী রকম বিরক্তিকর হয়ে উঠেছিল তা সে শুধু নিজেই জানে। অথচ এই বিরক্তি সত্ত্বেও কখনো আশপাশে ফিরে তাকায়নি সূচি। কত পুরুষ কতভাবে তাকে মুগ্ধ করার চেষ্টা করেছে, প্রেম নিবেদন করেছে, একটু সহজ আচরণ করলে কতজন বন্ধুত্বের নামে শরীর নিয়ে ইঙ্গিত করেছে—সে সবসময়ই পাশ কাটিয়ে চলে এসেছে। প্রেমার্থীদের মধ্যে কতজনই তো সুপুরুষ আর আকর্ষণীয় ছিল। কেন সেসব আহ্বানে সাড়া দেয়নি সে?

এসব ভাবতে ভাবতে দিন কাটতে লাগল তার আর একসময় মনে হলো—দিন তো ফুরিয়ে যায়নি। দেখাই যাক না, ওই প্রেমিক পুরুষদের ভেতরে এখনো তার জন্য কাতরতা আছে কি না! যেসব পুরুষ তার দিকে ভালোলাগার চোখে তাকিয়েছিল, কামনার চোখে তাকিয়েছিল, এবং ব্যাপারগুলো গোপন না করে প্রেম জানাবার ছুতোয় তাকে জানিয়ে দিয়েছিল, অনেকটা খেলার ছলেই তাদের খুঁজে নিতে শুরু করল সূচি। নাফিস এই লোকগুলোর অধিকাংশকেই নামে চিনত। সূচি নানা সময়ে এদের গল্প তাকে বলেছে, সে-ও নানা দুষ্টুমি ও ঠাট্টা করে সূচিকে ক্ষেপিয়েছে। নাফিস অবাক হয়ে দেখল, সূচির জীবনে সেই লোকগুলোর প্রত্যাবর্তন ঘটছে এবং ব্যাপারটি লুকানোর কোনো চেষ্টাও সে করছে না। নানা যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের এই সম্পর্ক নবায়নের চিহ্ন রয়ে যেতে লাগল। নাফিস টের পেলো, সূচি তার ওপর থেকে মনোযোগ হারিয়েছে। কিন্তু এসব নিয়ে সূচির সঙ্গে কথাই বলা যায় না, একেবারে ঝংকার দিয়ে ওঠে। এমনকি নাফিসের মধুচন্দ্রিমার ডাকেও সে আর সাড়া দিতে চায় না আগের মতো। বরং এড়িয়ে যাবার হাজারটা কৌশল দক্ষতার সঙ্গে প্রয়োগ করে। বারবার মনোমালিন্য হতে লাগল তাদের। নাফিস কিছু জিজ্ঞেস করলেই—'আমি তোমার কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য নই'—বলে তীব্রভাবে তাদের এতদিনের প্রেমকে অস্বীকার করে বসতে লাগল।

নাফিসের মাঝে মাঝে মনে হয়—অনেক বড় কারণেও প্রেম ভাঙে না, কিন্তু কখনো কখনো ছোট্ট একটা শব্দও জানিয়ে দেয়—প্রেমটা আসলে নেই। এই যেমন 'জবাবদিহিতা' শব্দটি। প্রেম তো আসলে এক কমিটমেন্টের নাম, সেটি ভঙ্গ হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিলে সম্পর্কের খাতিরেই কথা-বার্তা বলে সেটি ঠিক করে নিতে হয়। কিন্তু ব্যাপারটিকে যদি কোনোপক্ষ 'জবাবদিহিতা' বলে মনে করে, তাহলে আর কথা এগিয়ে নেয়ার কোনো উপায় থাকে না। 

নাফিসের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হচ্ছে বুঝতে পেরেও সূচির আর কিছুই করার রইল না। সে যেন এক অবিশ্বাস্য স্রোতে গা ভাসিয়েছে, কোনোভাবেই ভেসে যাওয়া থেকে বাঁচাতে পারছে না। জড়িয়ে পড়ছে আরেকজনের সঙ্গে, কোনোভাবেই নিজেকে ফেরাতে পারছে না। মন যেন আর নিজের নিয়ন্ত্রণে নেই। একদিকে নিজের ভেতরে দোলাচল, অন্যদিকে নাফিসের ওইসব প্রশ্ন। সে তো নাফিসের কাছে নিজেকে বিক্রি করেনি, কেন এসব নিয়ে তার কাছে জবাবদিহিতা করতে হবে? —এরকমই মনে হতে লাগল সূচির। 

নতুন সম্পর্কে জড়িয়েও নাফিসকে হারানোর কথা ভাবতে পারত না সূচি, কিন্তু নাফিস কেনই-বা অপমান সয়েও পড়ে থাকবে? হয়তো সেজন্যই ধীরে ধীরে দূরে সরে যেতে লাগল সে। সূচি বুঝতে পেরেও কিছুই বলল না। যেতে চাইলে যাক, কেউ চিরজীবনের জন্য থাকতে আসে না। একজন গেলে আরও কতজন আসবে! কিন্তু যত পুরুষই আসুক, কাউকেই নাফিসের মতো মনে হয় না কেন? কেন মনে হয় এত প্রেম তাকে কেউ দেয়নি কখনো, এত ভালোবাসেনি তাকে কেউ কোনোদিন—না মনে, না শরীরে। এই প্রেম ভেঙে যাবার অনিবার্যতা মেনে নিয়েও সেটিকে সবচেয়ে মর্যাদাকর প্রেম হিসেবে ধরে রাখবার আকাঙ্ক্ষায় সে তাই একদিন নাফিসের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। বলল—

তুমিও জান আমিও জানি—আমাদের সম্পর্কটি আর আগের মতো নেই। তোমার সম্মান আমি রাখতে পারিনি, তোমার অসাধারণ প্রেমটির যথার্থ মর্যাদা দিতে পারিনি। এ আমারই অক্ষমতা। তুমি যেতে চাইলে যাও, কিন্তু আমাকে একটা সন্তান দিয়ে যাও। 

শুনে নাফিস হেসেই অস্থির হলো, বলল—তোমার স্বামী দেশের বাইরে, আর তুমি এখন কনসিভ করার কথা ভাবছ! হাহাহাহা।

ওটা নিয়ে তোমার ভাবতে হবে না। আমি বোকা নাকি? আগামী মাসে আমিন আসছে। তুমি দেবে কি না বলো। 

না, দেব না।

কেন দেবে না? ভালোবাসো না আমাকে?

বাসি। কিন্তু তুমি চলে যাবে, অন্য কাউকে ভালোবাসবে, এবং আমাকে ভুলে যাবে, যেমন ভুলে গেছ আমাদের প্রেমময় দিনগুলোর কথা। এটা স্বাভাবিক, এটাই নিয়ম। বিস্মৃতি অনিবার্য এবং মঙ্গলজনক। মানুষ ভুলে যেতে পারে বলেই বেঁচে থাকে, নইলে স্মৃতির ভারে আত্মহত্যা করত। আমি তোমাকে স্মৃতির বোঝা উপহার দিতে চাই না, স্মৃতির ভার বয়ে বেড়ানোর দায় দিতে চাই না। সন্তানটি রয়ে গেলে তোমাকে আজীবন আমার স্মৃতির দায় বয়ে বেড়াতে হবে। তুমি আর কোনোদিন প্রেমে পড়তে পারবে না...

ওটাই ছিল নাফিসের সঙ্গে তার শেষ কথপোকথন। সূচি বুঝতে পারেনি, নাফিস আসলে নিজের মর্যাদা রক্ষা করার সব ব্যবস্থাই তৈরি করছিল, এবং সেটি করার জন্য সূচির কাছ থেকে দূরে সরে যাবার কোনো বিকল্প ছিল না তার। কয়েকদিনের মধ্যেই সে শুনতে পেলো—নাফিস চাকরি ছেড়ে দিচ্ছে, সম্ভবত অন্য কোথাও জয়েন করছে, কোথায় তা বলেনি কাউকে। চলে যাবার সময় কুশল বিনিময় করল নাফিস যথার্থ করপোরেট ভঙ্গিতে, কেতাদুরস্ত কায়দায়। আর কিছুদিনের ভেতরে সূচি টের পেলো— নাফিস আসলে সব জায়গা থেকেই চলে গিয়েছে। ফোন নম্বর বন্ধ, ফেসবুক ইনঅ্যাক্টিভ, ই-মেইলেও সাড়াহীন।

এক তীব্র চরাচরব্যাপী হাহাকার ও শূন্যতা সূচির জীবনকে ঘিরে ধরল। তার এই প্রস্থানই সূচিকে বুঝিয়ে দিল— নাফিসের স্মৃতির ভার তাকে সারাজীবনই বয়ে বেড়াতে হবে।

শুক্রবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২১

টাইমবুক ৩


#টাইমবুক

(রহস্যময় কল্পবিজ্ঞান রূপগল্প)

পর্ব -  ৩ (তিন) (এই পর্বটি শুধু মাত্র প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য)

সৃষ্টিতে ঃ প্রেতাত্মার লেখা গল্প - Written by A R Shipon 


চোখ মেলতেই নিজেকে আবিস্কার করি হাসপাতালের বিছানায়। পাশ থেকে একজনের কান্নার শব্দ। বুঝতে পারলাম অনন্যা। কিন্তু ও কিভাবে জানলো আমি এখানে? বা আমাকে কে এখানে নিয়ে আসলো? বা অনন্যাকেই কে খবর দিলো। অনন্যার সাথে আমার তেমন কোন সম্পর্ক নয় যে অন্যকেউ জানবে তারপর সে অনন্যাকে খবর দিবে। এই তো গুনে গুমে মাস চারেক হবে আমাদের পরিচয়। 

মাথাটা আবার ঝিমঝিম করছে। চারপাশ  শুধু ঘুরছে আর ঘুরছে, ঠিক জীবনে প্রথম গঞ্জিকা সেবনেরর সেই পিনিকটা। আমি আঁকাসে উড়ছি নাকি আঁকাস আমার নিচে বুঝে উঠতে পারছি না। নূঁপুরের ঝংকার এর শব্দ। নিশ্চয় রৌদূসী। হ্যা। সেই রৌদূসী, যাকে প্রথম দেখেছিলাম লাল শাড়ীতে। রৌদূসী আমার আশপাশ দিয়ে দৌড়াচ্ছে। আর চিৎকার করে কিসব বলছে। আমি কাছে গেলাম। ওর কোমল হাত ধরে টেনে ধরলাম। থমকে দাঁড়ালো। আমার দিকে তাকিয়ে আবার সেই #হৃদমোহিনী_মায়াবিনী র মুচকি হাসি। একদম উন্মাদ হয়ে গেলাম আমি। রৌদূসীর কোমরে হাত রেখে নিজের কাছে টেনে নিলাম। জিজ্ঞেস করলাম তাকে

- তুমি না বলেছিলে আমি তোকে বুকে জড়িয়ে ধরিনি। এই বুকে টেনে নিলাম। আমার শক্ত করে জড়িয়ে ধরো।

রৌদূসী আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। আমিও দুহাত দিয়ে শক্ত করে জরিয়ে ধরি রৌদূসীকে। ঠোট দুটো আনমনেও রৌদূসীর ঠোটের উপর। আমার আকস্মিক চুম্বনে লজ্জাবতী রৌদূসীকে রুদ্র দীপ্ত সূর্যললনার চাইতেও বেশি সুন্দরী লাগছে। আমি দেখছি আর মনের তৃপ্তি মিটাচ্ছি। ওর জ্বিহ্বা আমার ঠোটের কামড়ে, 

এঁকি মেঘ থেকে নিচে পরে যাচ্ছে রৌদূসী। আমি চাইলেও ওকে ধরতে পারছি না। দিলাম লাফ, আমিও নিচে পরে যাচ্ছি...............

ধপাস করে হাসপাতালের বিছানা থেকে নিচে পরে গেলাম। অনন্যা সহ কয়েকজন নার্স এগিয়ে আসলো আমাকে ধরতে। অনন্যা নার্সদের বললো

- ডোন্ট টাচ হিম। 

নার্সরা হতভম্ব হয়ে পেছনে চলে গেলো। আমি এতো ব্যাথার মাঝেও কিছুটা আনন্দ খুজে পেলাম। মুচকি হাসলাম। অনন্যা বললো

- একদম হাসবে না বলছি। মৃত্যুর হাত থেকে ফিরে এসেছো। গুলিটা অন্য কোথাও লাগলে তুমি মারা যেতে। আমার সব শেষ হয়ে যেতো।

অনন্যা বলতে বলতে নিজে একাই আমাকে ধরে বিছানায় উঠায়। তারপর রুম থেকে চলে যায়।

রুমের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে বুঝতে পারি এখন রাত। জানালা দিয়ে সোজা চাঁদটা দেখা যাচ্ছে। জোসনা ছড়াচ্ছে। এই মুহুর্তে ছাঁদে থাকতে পারলে ভালো লাগতো, সাথে হালকা পিনিক, জন্ম নিত হয়তো নতুন কোন কবিতা। খুব মিস করছি রোদেলাকে, নাহ যতই বলি রোদেলার কথা আসলে প্রতিটা পলে, ক্ষনে রৌদূসী। 

ডাক্তার আসে, এসে আমাকে দেখে কিছু ঔষধ প্রেসক্রাইব করে যায়। আমি ডাক্তার কে বলি... 

- ডাক্তার সাহেব ভিষন ব্যাথা হচ্ছে, সহ্য করতে পারছি না। আমাকে গাড়ো একটা ঘুমের ইনসুলিন দিন। ব্যাথা নিতে পারছি না।

ডাক্তার আমার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকলো। মনেহলো ডাক্তারের মন গলাতে  পেরেছি। কিছুক্ষন পর নার্সকে একটা নোট দিয়ে চলে গেলেন। যাওয়ার আগে দরজা কাছাকাছি গিয়ে ফিরে এসে আমাকে কিছু একটা বলতে চেয়েও না বলে চলে গেলেন। 

কিছু মুহুর্ত পর নার্স আমাকে ইনজেকশন  দিলেন। ঘুমের। আবার আমি ঘুমাবো, ঘুম মানেই আমার পৃথিবী। ঘুম মানেই আমার কলংকপুর, ঘুম মানেই রোদেলা, ঘুম মানেই সুখ। তবে ইদানীং ঘুমের মাঝে রৌদূসী এসে ডিস্টার্ব করছে খুব। চলে যাবি একবারে যা, কল্পনায় জল্পনায়, ধ্যানে জ্ঞ্যানে, প্রতি মুহুর্তের প্রানে কেনো তোকেই থাকতে হবে রৌদূসী? ঘুম মানে তো স্বপ্ন, আমি ঘুমে সুখি হতে চাই, ঘুমে আমি গল্প কবিতা পয়দা করি। আচ্ছা

রৌদূসী তুমি কি শুনছো? দেখো পৃথিবী ঘুমিয়ে গেছে । আধার কাল রাতে, দেখ চাঁদটা কেমন জোসনা ছড়িয়ে যাচ্ছে তোমায় দেখে । তুমি অনুভব করতে পারছো? আজ চাঁদ কেন জোসনা বিলিয়ে যাচ্ছে? না না তোমার তো ঘুম ভাঙ্গেনি, তুমি তো বিভোর ভাবে স্বপ্ন দেখছো । তুমি তো চলে গেছো ঘুমের দেশে- তুমি স্বপ্ন দেখছো ঘুমের ঘরে .. দেখো আমিও স্বপ্ন দেখছি, আমার স্বপ্নে ঘুম নেই- আছে ঐ চন্দ্র আর জোসনা ভেজা এই রাত । যেদিন তুমি এসেছিলে সেদিনো স্বপ্ন দেখেছি, আজও আমি স্বপ্ন দেখছি । সেদিন তুমি আমার কাছে ছিলে আজ আর নেই, আছে এই যে একটু চোখের জল আর না বলা ভালবাসা । তোমার কি মনে আছে, তুমি যখন হাসতে, অবাক হয়ে আমি তোমাকে দেখতাম আর ভাবতাম কেন এত ভালবাসি তোমাকে? স্বপ্ন সাজাতাম দুজনে বসে নিরালায়, একটু দুষ্টামিতে ভরে উঠত তোমার চোখে জল - অপরাধীর মত যখন এসে ক্ষমা চাইতাম, একলা পেলে আমায় তুমি মিষ্টি সাজা দিতে । তুমি স্বপ্ন দেখতে ভালবাসতে, আর আমি তোমার স্বপ্ন সাজাতে .. তুমি ঘুমের দেশে তাতে কি? দেখ আজও আমি রাত্রি জাগে তোমার স্বপ্ন সাজাই চোখের জলে । একি হঠাৎ এই চাদনী রাতে ঝড় উঠল কেন - না তুমি রাগ করনা । এই দেখ আমি ভাল আছি, সুখে আছি- তুমি ঘুমাও, তুমি ঘুমাও - অনেক স্বপ্ন দেখ তুমি। আমি তোমার সব স্বপ্ন সাজিয়ে দেব, আমার চোখের জলে ভালবাসায় ।

আমি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পরি। পৃথিবী অন্ধকার। 


মাথায় হ্যাট, কালো স্যুট, মুখে চুরট, পায়ে বুট। অন্ধকারে এইটুকুই আবিষ্কার করতে  পারলাম যে হয়তো কোন ডিটেকটিভ, শার্লক ও হতে পারে। 

আমি ছাঁদে। আবছা অন্ধকারে ডিটেকটিভ লোকটাকে দেখে কৌতুহল জাগলো। পিছু নিলাম। 

এঁকি! সে তো আমার রুমের  তালা খুলছে। কি অদ্ভুত ব্যাপার। চাবি পেলো কোথায়?

প্রশ্ন নয়, এগিয়ে গিয়ে শালার ডিটেকটিভ  চোর ব্যাটাকে ধরতে হবে। কত বড় সাহস। 

আমি ধরতে যাবো, পেছন থেকে ঝাপটে ধরতে তার উপর ঝাপিয়ে পরলাম। একি আমি কিছু স্পর্শ করতে পারছি না। এই লোকটাকেও না। আমি কি মরে গেলাম? কিভাবে সম্ভব? গুলি লেগেছিলো বাহুতে। বাহুতে গুলি লাগলে কেউ মরে? আর আর তারপরেও তো আমি সুস্থ ছিলাম, স্বপ্ন দেখলাম, অনন্যার স্পর্শ, নার্স, ডাক্তার। তাহলে কিভাবে মরে গেলাম? মরার পরপরই কি প্রেতাত্মা হয়ে গেলাম? 

আর এই যে এই লোকটাকে চেনা চেনা লাগছে। কোথায় জেনো দেখেছি।। 

যাই হোক। লোকটি আমার উপস্থিতি টের পায়নি। দেখি ব্যাটা কি কি করে। 

লোকটি ধিরে ধিরে এগিয়ে গেলো। পুরো রুমটা এক নজরে দেখলো। তারপর সুইচবোর্ডের দিকে গেলো। সুইচবোর্ডের সবুজ বাতি জ্বলা কালো সুইচটা অফ করে দিলো। এতোক্ষন রুমের ভেতরে যে শুনশান নিরবতা বা অন্যরকম এক আলফা নিরবতা ছিলো সেটা ভেঙে স্বাভাবিক হয়ে গেলো। লোকটি বিছানার দিকে এগুলো। বিছানার দিকে তাকিয়ে আমি জেনো আকাশ থেকে পরলাম। বিছানায় আমিই সুয়ে আছি। আমি বুঝে উঠতে পারছিলাম আমি কোন মূহুর্তে আছি। আমার লাশ আমি দেখতে পাচ্ছি।

লোকটি টেবিল সহ আসেপাশের সব বই ঘাটলো। ঘেটে ঘেটে সব শেষ। তারপর আমার বিছানার উপর আসে। তখন আরেকটা জিনিস লক্ষ করলাম যে কালো সুইচটা টিপলে আসলে দেয়ালের চারপাশের দেওয়ালে যে বক্স থাকে সে বক্স গুলো একটা কালো আবরন তৈরি করে। ফলে বাইরের কোন শব্দ ভেতরে প্রবেশ করতে পারে না৷ লোকটা এসে ঐ সুইচটা অফ করায় সেটাই দেখতে পেলাম। 

লোকটা আমার বিছানার ভেতরে অনেক কিছু খুজলো, আমার বুকের উপর রাখা বইটাও নেরে চেরে দেখলো। তারপর আমার বালিশের নিচে হাত দিলে, সেখানে একটা সুইচে টিপ দিতেই একটা লকারের মত খুলে ভেসে আসলো একটা বই। 

আরে এইটা তো সেই বই টা। যে বইটা চুরি করতে এসেছিলো, #টাইমবুক। 

হটাৎ দরজা দিয়ে রৌদূসী দৌড়ে ঢুকে। লোকটা রৌদূসীর উপস্থিতিও লক্ষ করতে পারে না। রৌদূসী আমার কাছে গিয়ে আমাকে ধরে টানাটানি করে, আমার ঘুম ভাঙাতে চেষ্টা করে। আমার ঐ দেহের ঘুম ভেঙে যায়। আমি উঠে বসার পর লোকটিকে দেখতে পাই। উঠে গিয়ে জাপটে ধরি। লোকটি গুলি করে , আমি চিৎকার করে উঠি। 

চোখ খুলে নিজেকে আবিষ্কার করি হাসপাতালের বিছানায়। অনন্যা আমাকে এসে জরিয়ে ধরে বলছে " ভয় পেয়ো না দুপুর, আমি আছি। ভয় পেয়ো না। তুমি স্বপ্ন দেখছো।" 

আমি স্বাভাবিক হই। সকাল হয়ে গিয়েছে।

হাসপাতাল থেকে রিলিজ নিতে নিতে দুপুর গড়িয়ে যায়। অনন্যা আমাকে বাসায় নিয়ে আসে। বাসার ভেতরে ঢুকতেই আমার বুকটা কেঁপে উঠে। আমি অনন্যার হাতটা শক্ত করে ধরি। অনন্যা আমার বুকে এসে জড়িয়ে ধরে।

ছিঃ এ আমি কি করছি। অনন্যা আমার বন্ধু, ও আমাকে যেটাই ভাবুক আমার আমাকে ঠিক রাখতে হবে। 

আমি নিজেকে কন্ট্রোল করি। রুমটা এখন কেনো জানি মজে হচ্ছে খুব অচেনা।  যদিও দুদিন আগেই আমি নিজ হাতে রুমটা গোছালাম, কিন্তু অদ্ভুতভাবে খুব অচেনা লাগছে। অনন্যা নিজে রান্না করে। দুপুরের খাবার মোটামুটি বিকেলে একসাথে খাই। দুজনে গল্প করি। গোধূলি সন্ধ্যায় অনন্যা আমার কাধে মাথা রেখে সন্ধ্যার মৃত্যু অবলোকন করে। মধ্যরাতে অনন্যা আমাকে কফি করে দেয়। আমি জিজ্ঞেস করি " কখন যাবা বাসায় তুমি?"।  উত্তরে অনন্যা বলে..

- আমি কি তোমায় খুব ডিস্টার্ব করছি? (চোখ ছলছল) তুমি ডিস্টার্ব ফিল করলেও আমি এখানেই থাকবো যতদিননা তুমি সম্পূর্ণ সুস্থ হও। 

আমি অনন্যার কথাত বিপরীতে কিছু বললাম না। নিজেই মনে হয় চাচ্ছিলাম যে অনন্যা থেকে যাক, একাকিত্বটা ইদানীং বড্ড তারনা করছে। আমি ছাদে চলে আসি।

সিগারেট ফুকে কিছুক্ষন জোসনা দর্শন শেষে রুমে ফিরে আসি। অনন্যা বেডে সুয়ে আছে। তার পাশেই রাখা আমার বালিশ। দ্বিধাবোধ হচ্ছে অনন্যার পাশে সুতে। কিন্তু...  

অবশেষে বিছানায় যাই। অনন্যার অপরপাশে মুখ করে সুয়ে পরি।

অনন্যা নিঃসন্দেহে অসম্ভব সুন্দরী এবং পূর্ন যৌবনারম্ভ একটি কুমারী কন্যা। এক  বিছানায় তাকে না ছুয়ে থাকাটা নিজের সাথে বিশাল এক যুদ্ধের সমতুল্য। 

নিরবতা ভেঙে অনন্যা প্রশ্ন করলো..

- বাসরঘরে কে আগে লজ্জা ভাঙায়?

আমি স্তম্ভিত অনন্যার প্রশ্নে। উত্তরে বললাম জানিনা। আবার প্রশ্ন করলো...

- দৈহিক সম্পর্কের শুরু কোথা থেকে হয়? কোথায় এর তৃপ্ততা বেশি?

আমি উপর হয়ে সুয়ে আবার বললাম জানিনা। বুকের ভেতর ধরফর ধরফর করছে। হটাৎ অনন্যা আমার উপরে চলে এসে আমার ঠোটে তার ঠোট ছিয়ে দেয়। আমার মুখে কয়েকবার চুমু দিয়ে লজ্জায় আবার নিজের ঐখানে চলে যায়। 

- আমি তোমাকে ভালবাসি দুপুর। আমি জানি তুমি আমাকে ভালবাসো না। কিন্তু এই যৌবন আমি তোমার জন্যই..... 

কথাগুলো বলতে বলতেই আমার হাত নিয়ে ওর বুকের উপর রাখে। ২৭ বছরের পূর্ন যৌবনা পূরুষ আমি। স্বাভাবিক ভাবেই যৌনাকাঙ্ক্ষা ভূত আমার মাতায় চেপে বসে। অনন্যার বুকের নরম শীতল স্পর্শ অনুভব করি। অন্যরকম ভালোলাগা, হাত পা কাঁপছে। এর মধ্যেই অনন্যা আবার আমাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে চুমু দিতে থাকে। মুখ থেকে বুক পর্যন্ত। আমি বলি কি করছো? অনন্যা উত্তর দেয় শুধু কি ছেলেরাই পারে? মেয়েরা না?

অনন্যা আমার সারা শরীরে চুমু এঁকে দেয়। আমি নিজের প্রতি সম্পূর্ণ কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলি। আমিও অনন্যার মুক থেকে শুরু করে বুক পর্যন্ত চুমু এঁকে দেই। বুকের নরম অংশে মাথা রেখে সুখ উপভোগ করি। অনন্যা আমার জামা খুলে ফেলে আর আমিও মত্ত হয়ে উঠি অবৈধ এবং অবাধ যৌনাচারে। এটিই হতে যাচ্ছে আমার জীবনের প্রথম নাড়ী দেহ সংগম। কাল থেকে আমি আর আমার কুমারত্ব নিয়ে বুক ফুলিয়ে কথা বলতে পারবো না। হারিয়ে যাই এক অন্য সুখের ভূবনে। ক্লান্ত দুজন একসময় ঘুমিয়ে পরি নতুন এক সকালের অপেক্ষায়। 

চলবে........

পরবর্তী পর্ব আগামীকাল দেওয়া হবে। যাদের গল্পটি ভালো লেগেছে তার অবশ্যই লাইক, কমেন্টস, শেয়ার ও আমাকে ফলো করবেন পরবর্তী পর্ব পেতে। অগ্রিম ধন্যবাদ।

সোমবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২১

টাইমবুক (২)




#টাইমবুক

(রহস্যময় কল্পবিজ্ঞান রূপগল্প)

পর্ব - ২ (দুই)

সৃষ্টিতে ঃ প্রেতাত্মার লেখা গল্প - Written by A R Shipon 


ঘুম ভাঙে সকালে। গভীর একটা ঘুম হয়েছে। অনেকদিন হয় এতো গভীর ঘুম হয় না। আমি বেড থেকে নেমে গিয়ে ফ্রেসরুমে গিয়ে ফ্রেস হই। তারপর সেই কালো সুইচটার দিকে চোখ পরে। এখন কোন বাতি জ্বলছে না। কয়েকবার টেপাটেপি করার পরেও কোন কাজ হলো না। 

রেডি হয়ে বাইরে গেলাম। হোটেলে সকালের নাস্তা সেরে টিএসসি। বই মেলায় যাবো। অনন্যাও আসবে। আমি সময়ের কিছু আগেই পৌছে গেলাম। যদিও সচারাচর আমি টাইম মেইনটেইন করতে পারি না। আমি বসে আছি। কিছুবাদে অনন্যা এসে হাজির। 

অনন্যা ঃ এ আমি কি দেখছি? ১২ টায় আসার কথা। এখন ১১ঃ৪৭ মিনিট। আপনি স্যার এতো আগে? টাইম ট্রাভেল করছেন নাকি?

আমিঃ এই মানে কি?

অনন্যাঃ মানে কি আবার। তুমি জীবনে কোনদিন ঠিক সময়ে এসছো কোথাও? সব সময় লেট। তাই আজ আগে দেখে অবাক হবো না? আমার তো মনে হচ্ছে তুমি টাইম ট্রাভেল করে এসেছো আবার চলে যাবে।

আমিঃ আচ্ছা অনন্যা টাইম ট্রাভেল টা কি?

অনন্যাঃ বুদ্ধু একটা। এটাও জানো না? টাইম ট্রাভেল হচ্ছে সময় বা কাল পরিভ্রমণ। এর মাধ্যমে তুমি অতিতেও যেতে পারো আবার ভবিষ্যতেও যেতে পারো। কি মজার তাই না? আমি টাইম ট্রাভেল মেশিনটা পেলে অতিতে চলে যেতাম। সেখানে গিয়ে অতিতের সব ভুল গুলো শুধুরে নিতাম। 

আমিঃ বাকোয়াস সব কথা বার্তা। এটা আমরা সবাই জানি যে অতিতকে কখনো পরিবর্তন করা যায় না। ঠিক কি না?

অনন্যা ঃ হ্যা। 

আমিঃ তাহলে তুমি অতিতে গিয়ে কিভাবে তোমার ভুল গুলো ঠিক করবে? ধরো তুমি টাইম ট্রাভেল করে ছোটবেলায় ফিরে গেলে। সেখানে কিন্তু দুইটা তুমি থাকবে। একটা ছোট তুমি আর একটা বড় তুমি। মানে দুইটা সত্তা। কিভাবে দুইটা সত্তা একসাথে থাকতে পারে? আবার ধরো তুমি টাইম ট্রাভেল করে তোমার দাদা-দাদির বিয়ের অনুষ্ঠানে গেলে এবং তোমার দাদাকে হত্যা করলে। তোমার দাদাকে যদি হত্যা করো তাহলে তোমার সত্তা ভিত্তিহিন। আসলে টাইম ট্রাভেল বলতে কিছু নাই । যাস্ট কল্প কাহিনি। 

অনন্যা ঃ মনে করো, তুমি পৃথিবীতে দাঁড়িয়ে এক লক্ষ আলোকবর্ষ দূরের কোনো একটি নক্ষত্রকে টেলিস্কোপ দিয়ে দেখছো। এই মুহূর্তে তুমি যে জ্বলজ্বলে নক্ষত্রটি দেখছো সেটি কিন্তু নক্ষত্রটির বর্তমান অবস্থা না। আমরা কোনো বস্তু তখন দেখতে পাই যখন সেটি থেকে আলো এসে আমাদের চোখে পড়ে। অর্থাৎ, এক লক্ষ আলোকবর্ষ দূরে থাকা সেই নক্ষত্রটি থেকে আলো এসে পৃথিবীতে পৌঁছাতে এক লক্ষ বছর লেগেছে। তুমি এই মুহুর্তে নক্ষত্রটিকে যেমন দেখছো সেটি তোমার কাছে বর্তমান হলেও, নক্ষত্রটির কাছে সেটি এক লক্ষ বছর অতীতের ঘটনা।

এখন, কল্পনা করে নাও, সেই নক্ষত্রটি ব্ল্যাকহোলে হারিয়ে যাওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে সেখানে বাস করা একটি এলিয়েন ১ লক্ষ আলোকবর্ষ বা সেকেন্ড গতিতে পৃথিবীতে চলে আসলো। সে আসার পরও কিন্তু সে নক্ষত্রটিকে একই অবস্থায় দেখতে পাবে পৃথিবী থেকে। তারও এক লক্ষ বছর পর পৃথিবীবাসীরা সেই নক্ষত্রকে ব্ল্যাকহোলে হারিয়ে যেতে দেখবে। এতেই বোঝা যায় টাইম ট্রাভেল অসম্ভব কিছু নয়, হয়তো বিজ্ঞান খুব শিঘ্রই টাইম ট্রাভেল মেশিন আমাদের সামনে উপস্থাপন করবে।

আমিঃ তুমি একটু বেশি সাইন্স ফিকশন বই পড়ো আর মুভি দেখো। তাই মাথা গেছে।

অনন্যা ঃ চলো বই মেলা থেকে তোমাকে টাইম ট্রাভেল সম্পর্কিত কিছু বই কিনে দেই। 

আমি ঃ দরকার নেই। আমার নতুন বাসায় এমনিতেই টাইম ট্রাভেল এর বই দিয়ে ভরা।। 

কথা বলার এক ফাঁকে চোখ পরলো নীল শাড়ি পরা এক মেয়ের দিকে। মেয়েটি অপলক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ ছলছল করছে। সে আর কেউ না, রৌদূসী। আমি অনন্যাকে জিজ্ঞেস করলাম সামনে কি তুমি কাউকে দেখতে পাচ্ছো নীল শাড়ি পরা। অনন্যা উত্তর দিলো, না। তারমানে আমি আবার আমার কল্পনার জগৎ এ ফিরে যাচ্ছি। সেখানে রৌদূসী। কিন্তু আমি তো চাইনা আমার কল্পনায়, আমার স্মৃতিতে, আমার কলংকপুর এ একজন ছলনাময়ী থাকুক। 

আমি অনন্যাকে নিয়ে উঠে গেলাম। অনন্যা আমাকে কিছু বই কিনে দিলো গোয়েন্দা কাহিনি। তারপর দুজনে একসাথে লাঞ্চ শেষ করে সেখান থেকে রবিন্দ্র সরবরে কিছু সময় কাটিয়ে বাসায় ফিরে আসি। 

ওহ, আপনারা কেউ ভাববেন না যে অনন্যা আমার প্রেমিকা। হ্যা, সে আমাকে ভালোবাসে। কিন্তু আমি ভালোবাসি ছলনাময়ীকে। অনন্যা আমার যাস্ট ফ্রেন্ড। 

বাসায় এসেই চিটপটাং। বিকেলে একটা ঘুম দিয়ে সন্ধ্যায় উঠি। ফ্রেস হয়ে গরম গরম কফি হাতে নিয়ে ছাঁদে আসি। কফি আর সিগারেট। নিস্তব্ধ সন্ধাটা উপভোগ করছিলাম। খেয়াল করলাম পেছন দিয়ে কেউ একজন হাটছে। নূপুরের শব্দ। মোটামুটি কনফার্ম যে এটা রৌদূসী। একটু বাদেই হয়তো কাছে এসে অবান্তর কথাবলা শুরু করবে। কিন্তু না, সে আসলো না। পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখলাম ছলছল চোখে অভিমানী মুখ নিয়ে দূরে দাঁড়িয়ে আছে। তারপর চলে যায় সিঁড়ি বেয়ে নিচে।

আমিও সিগারেট শেষ করে রুমে ফিরে আসি। পিসি ঘাটাঘাটি করি। ফেসবুক ব্রাউজ, ইউটিউব, পর্নসাইট, কিছুই ভালো লাগছে না। মনে পরলো লোকটির বই এর কথা। অনন্যার কথা শুনে টাইম ট্রাভেল সম্পর্কে কিছুটা কৌতুহল জেগেছে। বই এর স্তুপ থেকে বাছাই করা শুরু করলাম, বেছে বেছে একটা হাতে নিলাম৷ পরিভ্রমণ তত্ব। এই একটি মাত্র বই বাংলাতে বাকি সবগুলোই ইংরেজি। ইংরেজি যে একদম বুঝিনা সেটা না। ইংরেজিতে যেটা বুঝতে ১ মিনিট সময় লাগবে বাংলাতে সেটা হয়তো ১০ সেকেন্ড। 

বিছানায় শুয়ে বই টা খুলে মুখের সামনে আনার সাথে সাথে বেড থেকে আচমকা একটা শব্দ হয়ে একটা লাইট জ্বলে উঠলো। লাইটটা এমনভাবে সেট হলো যে সেটার আলো আমার বইয়ের উপর পরলো এবং ঘরের অন্যান্য সকল বাতি নিভে গেলো।

প্রথমে অবাক হলেও পরে মনে পরলো এই বেডের মালিক ছিলেন একজন বিজ্ঞানী, হয়তো এটা তারই আবিষ্কার। ব্যাপারটা কিন্তু ভালোই। 

বই পড়তে পড়তে অনেকটা সময় কেটে গেলো। যতটুকু পরলাম তাতে টাইম ট্রাভেল সম্পর্কে এইটুকু বুঝতে পারলাম যে " এটি আসলে সময়ের (x,y,z)  অক্ষ বরাবর ভ্রমণ। আমরা সকলেই তিনটি মাত্রা সম্পর্কে অবগত,  দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং উচ্চতা। এই তিনটি মাত্রা বরাবর স্থান পরিবর্তন সম্ভব। তবে ন্যূনতম চতুর্মাত্রিক একটি ধারণা হচ্ছে সময়ের ধারণা। আজ পর্যন্ত এই চতুর্থ মাত্রা দিয়ে স্থান পরিবর্তন সম্ভব হয়নি। এই সময়ের অক্ষ বরাবর স্থান পরিবর্তনকে কালমাত্রিক সরণ বলা হয়। এক সময় থেকে আরেক সময়ে পরিভ্রমণকেও আমরা সময় ভ্রমণ বলে থাকি। এটি হতে পারে অতীতে ভ্রমণ, হতে পারে ভবিষ্যতে ভ্রমণ। 

খুব খুদা পেয়েছে। ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা ভাত বের করে একটা আস্ত আন্ডা ভেজে পেট পুজো করে আবার কফি আর সিগারেট হাতে নিয়ে বের হলাম ছাদে। কফিতে অবশ্য ১০ টা কিউপাইন ট্যাবলেট মেশানো আছে। নেশা মাথায় কবিতা আসবে, তবে ইদানীং আর ভালোবাসার কবিতা ভালো লাগে না। আচ্ছা টাইম ট্রাভেল নিয়ে কবিতা লিখলে কেমন হয়?

চেষ্টা তো করে দেখি, 

"

একদিন এখানেই বিবেকের ঘুম

ভেঙ্গেছিলো,

অথচ সেই বিবেক তবুও এলোমেলো !

কত চেতনার

সমুদ্রে তরী ভাসিয়ে কেটেছিলো সময়,

বাস্তবতার কষাঘাতে নিঃস্ব আজ

সে পরিচয় ৷

তাই

মাঝে মাঝে অতীতে ফিরে যেতে চাই,

ভাবছি টাইম মেশিনই একটা বানাই ৷

অগোছালো সব

কিছুকে নিমিষে সাজাই ৷

জীবনে সব ভ্রান্তির ক্যানভাস

আগুনে পোড়াই ৷"

হটাৎ পাশে এসে বসে রৌদূসী। কিছুক্ষন চুপ করে বসে থেকে আমায় বলে

রৌদূসী ঃ দূরে গিয়ে বসো। 

আমিঃ আমি দূরে গিয়ে বসবো কেন, তুমিই তো কাছে এসে বসেছো।

রৌদূসীঃ আমার পাশে বসতে তো ভালো লাগে না৷ যাও ঐ মেয়ের কাছে গিয়ে বসো। আর আমার কথাওতো রাখলে না।  দিব্যি বিড়ি সিগারেট ঘুমের ঔষধ খেয়ে যাচ্ছো।

আমিঃ আমি তোমার সব কথা রাখতে রাজি ছিলাম, সব ছাড়তে প্রস্তুত ছিলাম, বিনিময়ে তোমায় চেয়েছিলাম। ফলস্বরূপ  তুমি ধোকা দিয়েছো। আমার জীবনকে শুধু এলোমেলোই না, নষ্ট করে দিয়েছো।

রৌদূসী চুপ করে থাকে। তারপর পেছনে হাঁটা দেয়। আমার খুব ইচ্ছে করছিলো আমি একবার একটু পেছনে তাকিয়ে রৌদূসীকে দেখি। হৃদয়টাকে একটু প্রশান্তি দেই। কিন্তু এমন ধোকাবাজ মেয়ের প্রতি দিন দিন ঘৃনাটাও বেরে গেছে বা 

রৌদূসীঃ দুপুর, তুমি একটু সাবধানে থাকবে। তোমাকে নিয়ে আমার ভীষন ভয় হয়। 

রৌদূসী চলে যায়। আমার মাথাও ঝিম ঝিম করছে। কোনরকমে বিছানায় এসে সুয়ে পরি। তারপর নেশার ঘুম। 

ঘুমের মাঝে স্বপ্ন। বিশাল এক রুমে একটা মেশিনের সামনে আমি। হাতের ঘড়িতে সময় রাত ৩ টা। মেশিনে বসার একটা সিট আছে। আমি মেশিনে বসি। মেশিনের স্ক্রিনের আজকের তারিখ দেওয়া। পাশের সবুজ একটা বাটন চাপতে সবকিছু ঘোড়া শুরু করে। মাথা ঘুরছে। হটাৎ মেশিনটা একটা পার্কে নিয়ে আসে আমাকে । আমি মেশিনর স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখি এক বছর আগে চলে এসেছি, সময় বিকেল ৩ টা। মেশিন থেকে নিচে নেমে এদিক সেদিক তাকাতেই দেখি রৌদূসী তার ভালবাসার মানুষ শাকিলের ঠোটে চুম্বন এঁকে দিচ্ছে। মেজাজটা ভিষন গরম হয়ে গেলো। মেশিনের ভিতরে থাকা একটা পিস্তল এনে আমি দূর থেকে গুলি করলাম শাকিলকে লক্ষ করে। 


আচমকা শব্দে আমার ঘুম ভেঙে যায়। চোখ মেলতেই দেখি একজন অজ্ঞাত লোক আমার বেডের নিচ থেকে বের হলো। হাতে একটা বই । আমি জাপটে ধরলাম চিৎকার করলাম চোর চোর বলে। হাত দিয়ে তার মুখের মুখোশ খোলার চেষ্টা করলাম। উনি পকেট থেকে পিস্তল বের করলো। আমার বাহুতে গুলি করলো। তবে আমি তার হাতের বইটি ইতিমধ্যে আমার হাতে নিয়ে নিয়েছি। কোনভাবেই বই ছাড়লাম না। টেবিলের উপরে থাকা স্টিলের স্কেল দিয়ে তার দিকে কোপ দিলাম, প্রথম কোপটা মুখে লেগে কিছুটা কাটলো বোধহয়, তবে মুখোশ। তারপরেও কোপ দিলাম মাথায়। এবার ব্যাথা পেয়েছে। আর আসেপাশের লোকজনও সারা শব্দ দিচ্ছে। লোকটা আমাকে ঝাটকা মেরে ফেলে দিয়ে পালিয়ে গেলো।। 

আমি বুঝতে পারছি আমার চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। জ্ঞ্যান হারিয়ে ফেলবো, মারাও যেতে পারি। তবে তার আগে এই বইটি গোপন কোথাও সংরক্ষন করতে হবে। এর সাথে নিশ্চয়ই কোন রহস্য লুকিয়ে আছে। তানাহলে এই বই চুরি করতে আসবে কেন? কেনই বা সামান্য বই এর জন্য আমাকে গুলি করবে। 

আমি বইটি এক জায়গায় রাখলাম  তারপর চারিদিক অন্ধকার হয়ে এলো। লুটিয়ে পরলান ফ্লোরে। 


চলবে........

পরবর্তী পর্ব আগামীকাল দেওয়া হবে। যাদের গল্পটি ভালো লেগেছে তার অবশ্যই লাইক, কমেন্টস, শেয়ার ও আমাকে ফলো করবেন পরবর্তী পর্ব পেতে। অগ্রিম ধন্যবাদ। 

শুক্রবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২১

টাইমবুক (১)

 


#টাইমবুক
(রহস্যময় কল্পবিজ্ঞান রূপগল্প)
পর্ব - ১ (এক)
সৃষ্টিতে ঃ প্রেতাত্মার লেখা গল্প - Written by A R Shipon

চোখের সামনে আমার বইয়ের সমুদ্র ;
এক রাত, দু’রাত, হাজারো রাত কাটে বিনিদ্র এলোমেলো,
বই খুলে এই যে আমার বসে থাকা,
অনিশ্চিত ভবিষ্যত পানে ধীরে পায়ে এগিয়ে যাওয়া ।
সাদা পাতা খাতার কালো মেঘে পূর্ণ ।
তলে তলে লিখে যাই ; করে যাই হিমালয় চূর্ণ ।

পেছন থেকে হাত তালির শব্দ। পরক্ষনেই নূপুর এর ছন্দ, কেউ একজন এগিয়ে আসছে আমারই দিকে।

প্রায় তিনবছর আগের কথা, আমি এভাবেই ছাদে বসে থাকতাম। নাহ এভাবে না, ছাদের এক কোনে যেখানে সবচাইতে গাড় অন্ধকার থাকতো। তখন ছাদের কার্নিশ ঘেষে বসার মত সাহস ছিলো না, তবে এখন কারের মতই তখনো বিষন্ন ছিলাম। সেই বিষন্নতা কাটাতে নীল শাড়ীতে রোদেলা আসতো। সারাদিনের যতকথা, যত আক্ষেপ আর ভালবাসা তা পূর্ন করে দিয়ে চলে যেত। এখন আর কেউ আসে না। এখন আমার সাহস বেরেছে, এখন ছাদের কার্নিশে পা ঝুলিয়ে বসে থাকি। সিগারেট টানি, মাঝে মাঝে অন্য কিছুও থাকে। শুধু থাকে না পাশে বসে কেউ গল্প শোনানোর। এখন তো আগের থেকেও অনেক বেশি বিষন্ন, কিন্তু নুপুরের ছন্দ মাতিয়ে রোদেলা এখন আর আসে না। নূপুরের ছন্দ বলতেই মনে পরলো আমরা তো ছিলাম অন্যখানে। আচ্ছা কে আসছে....?

পেছনে নূপুরের শব্দ কানে ভাঁসছে, কেউ একজন আসছে আমি জানি। তবে সে আর যেই হোক রোদেলা না। কারন আমি নিজেই হত্যা করেছি রোদেলা। সে চাইলেও আর কোনদিন এখানে আসতে পারবে না। তাহলে পেছনে কে আসছে, কেউ তো নেই যে আমাকে ভালোবাসে। তাহলে কি কেউ আমাকে খুন করতে আসছে কেউ? ছাদের কার্নিস থেকে আস্তা ধাক্কা দিলেই ৭ তালা থেকে পড়ে থেতলে যাব। পোস্ট মর্টাম করলে ধরা পরবে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ছাদ থেকে পড়ে গেছে অথবা আত্তহত্যা। কতই সহজ তাই না আমাকে মেরা ফেলা?  হ্যা, আমাকে রৌদসী মেরেই ফেলেছে মনটাকে। এবার আসুক কেউ ছাঁদ থেকে ফেলে আমাকে খুন করে এই বিষন্ন ছলনাময়ী স্মৃতি থেকে মুক্তি দিক। আমি মুক্তির জন্য চোখ বন্ধ করলাম। নিজেকে জেনো সপে দিলাম শিকারির হাতে
♦ বাহ! কবিতাটা কিন্তু চমৎকার হয়েছে। কোথায়, আমাকে নিয়ে তো লেখোনি কোনদিন কবিতা।

আমি কিছুটা চমকে গেলাম। পেছনের মানষটির কন্ঠ রোদেলার নয়। তবে খুব পরিচিত, ভালোলাগা, মধুর একটি কন্ঠ। কিন্তু সে কেনো এখানে আসবে। যে ছলনা করে আমাকে স্বপ্ন দেখিয়েছে দূর সমুদ্র মাঝে আমায় নিয়ে রাজপ্রাসাদ গড়বে। অতঃপর আমায় নিয়ে সমুদ্রের মাঝপথে এসে ফেলে গেছে শাকিলের হাত ধরে সে কেনো আসবে। নাহ, আমি ভুল শুনেছি।

♦ না, তুমি ভুল শোননি। আমিই এসেছি। আমার ভয় লাগছে, আমিও তোমার মত এখানে তোমার পাশে দু পা নিচে দুলিয়ে বসবো। প্লিজ উঠাও না আমাকে।
আমি পেছনে তাকাই, খুব পরিচিত মুখ। দুধে আলতা গায়ের রঙে লাল শাড়ি, চোখে কাজল, হাতে লাল চুড়ি, খোলা চুল  আর হৃদবধ করা গাড়ো পারফিউম।
হ্যা, ভুল দেখছি না। রৌদূসী এসেছে।
রৌদূসী নিজেই চেষ্টা করে উঠে আমার পাশে বসে। আমি চুপ করে বসে আছি। কোন কথা নেই, শুনশান নিরবতা এর মাঝে জোনাক পোকার ডাকের শব্দ।
রৌদূসীঃ শাকিল, কি বিচ্ছিরি লাগছে না জোনাক পোকার শব্দ। কান ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছে আমার। প্লিজ ওদের থামাও তো একটু।
মনে মনে ভীষন রেগে গেলাম। আমার কাছে এসে সে তার ভালবাসার মানুষের নাম নিচ্ছে। তাও আবার আমাকেই সেই নামে ঢাকছে। এই মেয়েটা বুঝি আমাকে কষ্ট দিতে খুব ভালোবাসে।
রৌদূসী ঃ কথা বলছো না কেনো? প্লিজ!
আমি ঃ আপনি ভুল মানুশকে প্রশ্ন করেছেন। উত্তর আশা করেন কিভাবে?
রৌদূসীঃ মানে?
আমিঃ আমি দূপুর, শাকিল নই।
রৌদূসীঃ সরি, সরি। এই যে কান ধরছি।
রৌদূসী কান ধরে সরি বলে। তারপরেও আমি চুপ। খুব অভিমান জমেছে হৃদয়ে। কূপ থেকে তুলে এনে মাঝ সমুদ্রে ফেলে দিয়েছে। ভালবাসার নামে মিথ্যে ছলনা, অভিনয় করে আমার হৃদয়াত্তাকে হত্যা করেছে। তার সাথে কিসের কথা। কেনই বা সে আমার কাছে আসে।
রৌদূসীঃ আমি জানি তুমি অভিমান করে আছো। ভালবাসার নামে দীর্ঘ সময় তোমার সাথে টাইমপাস করে আমি আমার ভালবাসার মানুষকে পেয়ে তোমায় নির্দ্ধিধায় ছেড়ে দিয়েছি। একবারও পেছন ফিরে তাঁকায় নি। আমি জানি এটা অন্যায়। কিন্তু তুমি তো বোঝ ভালবাসার মানুষকে না পাওয়ার কষ্ট। আমি আমার ভালবাসার মানুষকে পেয়ে হাড়াতে চাইনি, তাই চলে গিয়েছি। বিশ্বাস করো আমার আর কিছুই করার ছিলো না।
আমিঃ আমি তোমার কাছে কৈফিয়ত চাই নি। এখানে এসেছো কেনো? তোমার ভালবাসা কি তোমাকে ফিরিয়ে দিয়েছে?
কথাগুলো বলার সময় আমার দারুন একটা ভাললাগা কাজ করছিলো। এইবুঝি আমার রৌদূসী ফিরে এসেছে। কিন্তু ভুল ভাঙলো পরক্ষনেই। রৌদূসী উত্তরে বললো'
নাহ সে আমায় ছেড়ে যায়নি৷ আমরা দুজন ভালোই আছি। শাকিল আমার অনেক কেয়ার করে, সময় দেয়।'
মনটা খারাপ হয়ে গেলো। আসলে সে আমার হবার নয়। আমার কপালটাই এমন, ভালোবাসা এই ছোট ভাঙাচোরা কপালে নেই। আমি আবার রৌদূসীকে প্রশ্ন করলাম
আমিঃ তাহলে আমার কাছে আবার এসেছো কেনো?
রৌদূসীঃ তুমিই তো সারাক্ষন ডাকো। এতো ডাক, এতো ভালোবাসা আমি অগ্রাহ্য করতে আর পারছি না। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি এখন থেকে প্রতিদিন তোমার কাছে আসবো। তোমার জীবনটা গুছিয়ে দিয়ে তারপরেই যাবো।
একদম
হাহাহাহাহাহাহাহা করে উন্মাদের মত হাঁসতে হাঁসতে আমি পেছনে পরে যাই। একটু হলেই সামনের দিকে পরে যেতাম। আর সামনে পরলেই হয়তো মৃত্যু, যার অপরনাম মুক্তি।
পেছনে পরলেও খুব একটা ব্যাথা পাইনি। আমার নিচেই ছিলো বই এর স্তুপ। আমি আসে পাসে তাকিয়ে দেখি রৌদূসী নেই৷ ভয়ে বোধহয় পালিয়ে গেছে।
আমি যে বইএর স্তুপের নিচে বসে আছে সেটা এই বাড়ির চিলোকোঠায় থাকা এক বৃদ্ধের বই। তিনি সপ্তাখানেক আগে মারা গেছেন করোনাতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন ভদ্রলোক। অবসরের পরে গৃহসংসার ত্যাগ করে এই বাড়ির চিলেকোঠায় উঠেছিলেন। বাড়িওয়ালার কাছে শুনেছি। উনি নাকি ছোট খাটো একজন বিজ্ঞানীও বটে। তিনি মারা যাবার পর ঐ চিলেকোঠা আমি ভাড়া নিয়েছি। ঘরের ভেতরের সব আসবাবপত্র  বাড়ীওয়ালা নিয়ে গেলেও ভদ্রলোকের বেড এবং সব বই আমি রেখে দিয়েছি বাড়ীওয়ালাকে অনেক অনুনয় বিনয়ের পরে৷ সেই বই গুলোই এইখানে।
আবার নূপুরের ছন্দ। রৌদূসী আবার আসছে। সামনে এসে হাটু গেড়ে বসে বইগুলো নাড়াচাড়া করছে। রৌদূসী বই খুব একটা পড়ে বলে আমার মনে হয় না। তবে অভিনয় ভালো জানে তো তাই কোন মূহুর্তে কি করতে হবে সেটা সে ভালোই জানে।
রৌদূসীঃ এই সব বই তো টাইম মেশিন নিয়ে মনে হচ্ছে। ব্যাটায় কি টাইমমেশিন বানাতে চাচ্ছিলো নাকি? বিজ্ঞানিও নাকি ছিলো সে।
আমিঃ সে বিজ্ঞানী ছিলো এই কথা কে বলেছে তোমাকে?
রৌদূসীঃ কে আবার, তুমিই তো বলছিলে মনে মনে।
আমিঃ আজিব। আমি মনে মনে বললে তুমি শুনবে কিভাবে? আমি তো আর চিৎকার করে বলিনি।
রৌদূসীঃ আমি তোমার মনের সব কথা জানি, তোমার মনের সবটুকু বুঝি।
আমিঃ সত্যিই যদি এতো মন বুঝো তাহলে এইটুকু বোঝ না যে এই মন তোমাকে কতটা ভালবাসে?
রৌদূসী চুপ করে আছে। নিচের দিকে মন কালো করে একটার পর একটা বই উল্টিয়ে পাল্টিয়ে নাম গুলো দেখছে। তারপর আমার দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে উত্তর দেয় " আমি শাকিলকে ভালবাসি, ভিষন ভালোবাসি।"
আমার তখন প্রতুত্তরে বলতে ইচ্ছে করছিলো তাহলে কোন অপরাধে আমার সাথে তিনবছরের বেশি সময় ধরে ভালবাসার নাটক করে আমাকে এইভাবে মেরে চলে গেলে। কিন্তু আমি বলিনি। আমি আমার ভালবাসার মানুষকে অপরাধী করতে চাই না। খুব ভালোবাসি যে আমি তাকে। সে শাকিলকে যতটা ভালবাসে তার থেকেও লক্ষ কোটি গুন বেশি ভালবাসি আমি তাকে।
আমি বইগুলো একটার উপর একটা রেখে গুছিয়ে সবগুলো বই চিলেকোঠার রুমে নেই। আজ প্রথমদিন এই চিলেকোঠায়, এবং আজই প্রথম রাত হবে এখানে আমার।
রুমের লাইট ফ্যানের সুইচ সব কিছুই অন্যরকম। উল্টো করে লাগানো। এর মাঝে একটা সুইচ আছে যেটা কালো রঙের সুইচ। সেই সুইচটার মধ্যেই আলো জ্বলবার কথা কিন্তু জ্বলছে না। মেজাজটা এইগুলা দেখে একটু খারাপ। খেয়াল করি চারদেয়ালে একটা বক্সের মত। বুঝলাম না বিষয়টি কি।
এতো না ভেবে কোন রকম হাত মুখ ধুয়ে এসে বিছানায় সুয়ে পরি। রাত একটার একটু বেশি হয়েছে বোধহয়। আজ এখানে প্রথম রাত, ঘুম এমনিতেও হবে না জানি, যদিও ১০ টা ঘুমের ট্যাবলেট ইতিমধ্যে পাকস্থলীতে ফেলে দিয়েছি।
বিছানার একপাশ থেকে আরেকপাশ হচ্ছি। কিন্তু ঘুম আসছে না। ঘুম আসবে কিভাবে, চোখ বন্ধ করলেই রৌদূসীর সাথে সে সুখময় দিনগুলোর স্মৃতি কল্পনায় ভেসে উঠে। আর ঘুম হয় না। এমনটা প্রায় প্রতিদিনই হয়। তারপর ঘুমের ঔষধ খেয়ে ঘুম দিতে হয়। তবে ইদানীং ঘুমের ঔষধও কাজ করছে না। এভাবে চললে হয়তো আর বড়জোড় ৫/৬ মাস সুস্থ থাকবো, তারপর কি হবে জানিনা।
এপাশ ওপাশ করতে করতে রাত দুইটা বেজে গেলো। মোবাইলে সময়টা দেখলাম। মোবাইল রাখার সময় আমার চোখ পরলো সুইচবোর্ডে৷ সেই কাল সুইচটাতে সবজ আলো জ্বলছে। আমি উঠে গিয়ে সুইচটা চাপলাম। আচমকা পুরো রুমটা গাড় অন্ধকার হয়ে গেলো। মোবাইল নিয়ে উঠি নাই। কোন রকম অন্ধের মত আন্দাজ করে বেডে গিয়ে সুয়ে পরি। বালিসের পাসে হাতাহাতি করেও মোবাইলটা খুজে পেলাম না। তবে খেয়াল করলাম বিছানাটা খুব আরামদায়ক লাগছে। চারিদিকে সকল ধরনের শব্দ বন্ধ হয়ে গেছে। তবে মৃদ একটা মধুর বাজনা বাঝছে একদম নিন্মস্বরে। আমি দুই হাত আর দুই পা ছড়িয়ে দিয়ে সুয়ে পরলাম। অদ্ভুত মিষ্টি একটা সাউন্ড, বৃষ্টি, ঝর্নার শব্দ, সমুদ্রের ঢেউ, পাখির ডাক, ঝড়াপাতার শব্দ। অসম্ভব মিষ্টি শব্দ। আমি এর আগে অনেকবার ইউটিউবে রিল্যাক্সিং স্লিপিং মিউজিক শুনেছি। কিন্তু এই শব্দ শুনিনি। আমার চোখ ঘুম ধরছে। আমি কল্পনা করছি। আবার মনে হচ্ছে আমি আলফা জিরোতে পৌছে যাচ্ছি। আমি কল্পনায় রৌদূসীর হাত ধরে অনেক উঁচু কোন জায়গায় গাছের ফাকা দিয়ে ঝড়াপাতার উপর দিয়ে রৌদূসীকে নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি ঝর্নার দিকে। তারপর সব অন্ধকার। আমি গাড়ো ঘুমে ঢলে পরলাম।
চলবে........
পরবর্তী পর্ব আগামীকাল দেওয়া হবে। যাদের গল্পটি ভালো লেগেছে তার অবশ্যই লাইক, কমেন্টস, শেয়ার ও আমাকে ফলো করবেন পরবর্তী পর্ব পেতে। অগ্রিম ধন্যবাদ।

মঙ্গলবার, ৩০ মার্চ, ২০২১

একটি ভৌতিক প্রেমের গল্প

 


#একটি_ভৌতিক_প্রেমের_গল্প
প্রেতাত্মার লেখা গল্প - Written by A R Shipon

মাহাদি ঃ দোস্ত আমার ১টা রিকুয়েষ্ট আছে তোর কাছে । বলবো ?

দুপুর ঃ ওহ তাই তো বলি বাসায় ডেকে এনে গরুর মাংশ দিয়ে জামাই আদর করে খিচুরি। আচ্ছা বল শুনি।

মাহাদিঃ তুই এটা কি বললি ? বাসায় আজ খিচুরি আর গরুর মাংশ রান্না হয়েছে। আর তোর পছন্দের খাবার এটা তাই তোকে নিয়ে আসলাম মিরপুরে।

দুপুরঃ ভনিতা না করে অনুরোধটা কি সেটা বল।

মাহাদিঃ শোন দোস্ত। নিলা আমাকে বলছে তোকে দিয়ে ১টা ভৌতিক প্রেমের গল্প লিখাতে। ভার্সিটির ম্যাগাজিনে ছাঁপাবে । তবে নামটা ওর হবে। দোস্ত করা যাবে কি?

দুপুর ঃ ২০০০টাকা লাগবে। দিবে ?

মাহাদি ঃ দোস্ত ও তরে টাকা দিবে । জানিসই তো ওর অনেক টাকা। বাবার গার্মেন্টস আছে।

দুপুরঃ খাবো না তোর খিচুরি । আমি গেলাম। ( উঠতে চায় কিন্তু মাহাদি ধরে ফেলে )

মাহাদিঃ দোস্ত দোস্ত লাগবে না গল্প। আরে গাধা আমি তো তোর সাথে মজা করলাম টাকা নিয়ে । দোস্ত জানিসই তো মায়াবতি চলে যাবার পর খুব ভেঙ্গে পরেছিলাম । হটাৎ নিলা আসে আমার জীবনে নতুন করে। আবার স্বপ্ন দেখা শুরু করি । আজ বিকেল ও বলতেছিল যে দুপুর ভাইয়া কে বলো আমাকে ১টা ভুতের গল্প লিখে দিতে আমি ম্যাগাজিনে আমার নামে ছাঁপাবো। ও দোস্ত ফান করে বলছে। আমিই সিরিয়াস হয়ে বলছি। রাগ করিস না দোস্ত । আমিই টাকাটা দিতে চাইছিলাম নিজের হয়ে।

দুপুর ঃ আর একটু খিচুরি আর মাংশ দে। খুব ভালো হইছে রান্নাটা।

খাবারের পর আড্ডা দিয়ে নিজের বাসায় ফিরে আসে দুপুর । পরেরদিন রাত প্রায় ৩টার একটু আগে দুপুর মাহাদিকে ফোন দেয়।

মাহাদিঃ ঐ হালারপুত এতো রাইতে ফোন দিছস কেন ?

দুপুরঃ তোর মেইল চেক কর সালা । তর নিলার গল্প পাঠায়ছি । “” একটি ভৌতিক প্রেমের গল্প “”

মাহাদি ঃ দেখতাছি মামা । তুই দাঁড়ায় থাক, নরবি না কিন্তু।

দুপুর ঃ মুরি দিয়া খা হালা । গুড নাইট ।

মাহাদি উঠে মেইলে গিয়ে গল্পটি দেখে। নীলা কে ফরওয়ার্ড করে। গল্পটা নিচে দেওয়া হলো ।

“” একটি ভৌতিক প্রেমের গল্প “”

মিরপুর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে পরে শাকিল, নিরব, আর মাহাদি। তিন জনেই ফিন্যান্সে পরে। নিয়মিত ক্লাস করে ওরা। ক্লাসের সবার সাথেই ভালো সর্ম্পক ওদের।
আজ সবাই ক্লাসে এসেছে শুধু শাকিল আসেনি। তবে ও ক্যাম্পাসে এসেছে নিরব ওকে দেখেছে। ক্লাস শেষ করে নিরব আর শাকিলকে খুজতে বের হয় । অবশেষে শাকিলকে শহীদ মিনারের পাশে বসে থাকতে দেখে।

মাহাদিঃ ওই দোস্ত তুই ক্লাস করলি না কেন ?

নিরবঃ অই তুই ঐ মেয়ের দিকে কি দেখস ?

শাকিলঃ দোস্ত আমি ক্র্যাস খাইছি মেয়েটার উপর । ওরে আমি ভালোবেসে ফেলছি ।

নিরব ঃ যা প্রোপসলজ কর। কাছে গিয়ে হাটু গেরে বল, অপসরি আমি তোমাকে ভালোবাসি।

মাহাদি ঃ দোস্ত মেয়েটা সত্যিই খুব ভংকর সুন্দরাই । যা প্রোপজ কর ।

যেই কথা সেই কাজ। কাছে গিয়ে হাটু গেরে বসে বলে দিল, রৌদূসী আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি। I love you। কথা গুলো শুনে মেয়েটি শুধু মুচকি একটু হেসে আপাতত প্রস্থান নেয় ।

দুই দিন পর ক্যাম্পাসে নবীনবরন অনুষ্ঠান । শাকিলের দুচোখ রৌদূসী কে খুজছে। কোথাও রৌদূসী নেই। আজ শাকিল আবার তাকে প্রোপজ করবে। নীল ১টা পাঞ্জাবি পরে এসেছে। রৌদূসী নেই তাই সে চলে যাচ্ছে এমন সময় মাহাদী বলে

মাহাদি ঃ শাকিল তোর রৌদূসী আসছে ।

পিছন ফিরে শাকিল দেখে রৌদূসী তার দিকেই যেন আসছে। আজব তো রৌদূসী ও নীল শাড়ি পরে এসেছে । রৌদূসী আরো অবাক করার মত ১টা কাজ করেছে । বলুনতো আপনারা কি করেছে রৌদূসী ? সত্যি কথা বলতে আপনারা কল্পনাও করতে পারবেন না কি করছে মেয়েটা। ঠিক আছে আমিই বলে দিচ্ছি । রৌদূসী শাকিলের কাছে গিয়ে হাটু গেরে বসে বলে দিল , শাকিল আমিও তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি । I love you too . শাকিল থ হয়ে দাড়িয়ে রইলো ।

এইভাবেই শুরু হয় তাদের ভালোবাসা। এর ভিতর শিপন নামের ১টা ছেলেও রৌদূসীকে ভালোবেশে ফেলে। কিন্তু রৌদূসী শিপনকে পাত্তা দেয় না। সে সুধু শাকিলকেই ভালোবাসে।

এর কিছুদিন পর হটাৎ একদিন রৌদূসীর মা শাকিলকে ফোন দিয়ে বলে যে রৌদূসী খুব অসুস্থ তুমি একটু আসো বাবা। শাকিল খবর পেয়ে ছুটে যায় রৌদূসীর বাসায় । গিয়ে দেখে রৌদূসী অসুস্থ । তার মায়ের কাছে থেকে শুনে যে ,

রৌদূসীর মা ঃ রৌদূসী নাকি হটাৎ করে কেমন যেন করতেছিল ২দিন ধরে । সবার সাথে আজব আজব বিহ্যাব করতেছিল । খুব রেগে যায় কথায় কথা । আজ সকালে তাকে ঘুম থেকে উঠাতে গেলে তার মাকে সে মারতে আসে , চোখ ২টা ভয়ংকর লাল হয়ে ছিল। সে তার ছোট ভাই রাহিলকে উচু করে ফেলে দেয়। আর কি সব আজেবাজে বকছিল তোমাকে নিয়ে। শাকিল বাবা আমার মনে হয় ওকে বদ জ্বিন আঁছর করছে। হুজুর নিয়ে এসেছিলাম সে ও তাই বলছে।

শাকিলঃ আন্টি।  আমি কি ওর সাথে একটু দেখা করতে পারি ?

রৌদূসীর মা ঃ হ্যা বাবা যাও।

শাকিল রুমে প্রবেশ করে দেখে রৌদূসী খাটের উপর বসে ১টা খাতায় কি যেন লিখছে। শাকিল কে দেখে রৌদূসী ভংকর হাসি দেয়। হাসিটা এতোটাই কুৎসিত ছিল যে শাকিল ভয়ে ২পা পেছনে চলে আসে।

আবার সাহশ করে সামনে এসে ওর পাসে বসে। এবার কিছুটা শান্ত হয়ে আছে রৌদূসী । শাকিল কয়েকবার রৌদূসীর সাথে কথা বলতে চায় কিন্তু সে কথা বলে না। শাকিল উঠে চালে যায়। যাওয়ার সময় শাকিলে উপর দেওয়ালের উপর ঝুলে থাকা ১টা ফুলের টব পরে আর রৌদূসী হাসতে থাকে । মাথায় কিছুটা কেটে যায় শাকিলের। শাকিল বাসায় চলে আসে ।

রাতে আজ শাকিল বাসায় একা, রুমে বসে ফেসবুকে দুপুরের সাথে চ্যাট করছে । শাকিল দুপুর কে তার বাসায় আসতে বলেছে । দুপুর আসছে , কাছাকাছি বলা যায়।

হটাৎ কলিংবেল বেজে উঠে । হয়তো দুপুর চলে এসেছে। শাকিল গিয়ে দরজা খুলে দেয়। খুলে সে অবাক দাঁড়িয়ে থাকে, রৌদূসী এসেছে । রৌদূসী আবার নীল রঙের শাড়ি পরে এসেছে , হাতে নীল চুরি , কপালে নীল টিপ , ঠোঁটে নীল লিপিষ্টিক । অসম্ভব সুন্দরী লাগছে রৌদূসী কে । রংধনুও হার মানবে আজ ওর কাছে ।

শাকিল ঃ তুমি এতো রাতে ?

রৌদূসী ঃ শাকিল আমাকে বাঁচাও প্লিজ । আমাকে ওরা মেরে ফেলবে। আমাকে বাঁচাও ।

শাকিল ঃ কি হইছে বাবু তোমার? আমাকে খুলে বলো প্লিজ?

রৌদূসী ঃ হ্যা বলবো, তার আগে চলো ছাঁদে যাই । চাঁদের আলোটা আজ খুব ভালো লাগছে ।

শাকিল ঃ আজ তো অমাবস্যার রাত। আচ্ছা যাই হোক, তোমার ভালো লাগছে তাহলে অবশ্যই ভালো। চলো।

২জন ছাঁদে যায় । রৌদূসী তার কথা বলছে

রৌদূসী ঃ জানো কেউ একজন আমার উপর কালোজাদু করছে । সে চায়না আমি তোমার হই । তোমাকে আমার কাছে থেকে আলাদা করতে চায়। ( এই বলে আফরিন শাকিলকে জরিয়ে ধরে )

শাকিলও জরিয়ে ধরে রৌদূসীকে । তবে সে বুঝতে পারে যে তাকে ছাঁদের একদম শেষ প্রান্তে নিয়ে এসেছে এক অদৃশ্য শক্তি।

রৌদূসী শাকিলকে ধাক্কা দিতে যাবে আর ঠিক সেই মুহুর্তে শাকিল রৌদূসী কে ঠেলে সরে আসে ।

রৌদূসী রাগে গরগর করতে থাকে । চোখ ২টা দিয়ে যেন আগুন ঝরবে এমন অবস্থা , চুল গুলো এলোমেলো হয়ে উড়ছে । শরীর দিয়ে ফেটে যেন রক্ত ঝরছে । পুরো পরিবেশ ভয়ানক অবস্থা। রৌদূসী দৌড় দিয়ে এসে শাকিলের উপর ঝাপিয়ে পরে, ওকে মেরে ফেলতে চায় এমন সময় দুপুর ছাক্বদে চিৎকারের শব্দ শুনে চলে আসে । এসে এই অবস্থা দেখে হাতের সিগারেট টা ছুরে মারে। আগুন দেখে পালিয়ে যায় ।

দুপুর ঃ ঐ ছেলেটা কে শাকিল ?

শাকিল ঃ রৌদূসী ।

দুপুর ঃ ঐটা ১টা ছেলে প্রেতাত্মা ছিল । তোকে মারতে আসছিল। বেঁচে গেছিস।

শাকিল ঃ থাংকস রে দোস্ত ।

তারপর শাকিল দুপুরকে সব খুলে বলে । পরেরদিন দুপুর শাকিক কে নিয়ে এক জ্বীন হুজুরের কাছে আসে।
হুজুর বলে রৌদূসীর উপর কেউ একজন প্রেত চালান করেছে । আর ঐ প্রেতাত্মা শাকিল আর রৌদূসী কে এক হতে দিবে না। প্রয়োজনে মারাত্তক কিছুও হতে পারে। আপাতত ১টা তাবিজ দিয়ে দেন হুজুর । ফিরে আসে বাসায় । শাকিল রাতে রৌদূসীর মা কে ফোন দিলে সে বলে রৌদূসী ভালো আছে । পরেরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে শাকিল ক্যাম্পাসে যায় । সেখানে শিপনের সাথে দেখা হয় । শিপনকে শাকিল সব খুলে বলে । শিপন শাকিলকে বলে আমার সাথে ১ ওঝার কাছে জেতে পারিস। সে তোর সব সমস্যা দূর করে দিবে । শাকিল কোন কিছু না ভেবেই যেতে রাজি হয়ে যায় । দুপুরের পর তারা রওনা হয় । সন্ধার দিকে গাজিপুরের সিমলা নামের এক গ্রামের এক পোড়া বাড়ীতে নিয়ে যায় । ধিরে ধিরে সন্ধ্যা রাতে পরিনত হয় ।

শাকিলঃ কিরে তোর ওঝা কোথায়?

শিপনঃ আসছে, অপেক্ষা কর।

এই বলে শিপম শাকিলকে রেখে বাইরে যায় ।

শাকিল ১টা ভাঙা চেয়ারে বসে আছে । পিছন থেকে শাকিলের মাথায় প্রচুর আঘাত এসে পরে। এক চিৎকার দিয়ে মাটিতে লটিয়ে পরে শাকিল।
ঐদিনের পর থেকে কেউ আর শাকিলের খোজ-খবর বা দেখা পায় না ।

২দিন পর রৌদূসী সুস্থ হয়ে যায়। এবং সে শাকিলের অতিতের সব স্মৃতি ভুলে যায় ।

কোন এক দিন শিপন রৌদূসীর বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠায় । ২ পরিবারের সম্মতিতেই ওদের বিয়ে হয় । খুব ভালোভাবেই শুরু করে দুজন তাদের নতুন সংসার । বছর প্রায় শেষের দিকে । শিপন আর রৌদূসীর ঘরে কিছুদিন পর নতুন সদস্য আসবে । শিপন চেষ্টা করে সব সময় রৌদূসী কে সময় দেবার । এর মাঝে হটাৎ করে একটা প্রবলেম শুরু হয় । একটা ছেলে রৌদূসীকে খুব ডিস্টার্ব করছে , সে বলে রৌদূসী নাকি তার প্রেমিকা। ছেলেটির নাম শাকিল। কিন্তু রৌদূসী তো শাকিল নামে কাউকে চেনেই না । সে শিপনকে ভালোবাসে, শিপন তার স্বামী। সে শিপজকে সব খুলে বলে। শিপক রৌদূসীকে ১টা তাবিজ এনে দেয় । তারপর থেকে ছেলেটা আর আসে না ।

রৌদূসীর একটু সন্দেহ হয়। তাবিজ আর ছেলেটার মধ্যের সম্পর্ক কি? রৌদূসী তার মা কে জিজ্ঞাস করে । তার মা তাকে তার বিয়ে আগের ঘটনা খুলে বলে । রৌদূসী কথা গুলে শুনে তার আগের কথা মনে পরে । অঝরে কেঁদে উঠে মেয়েটা । তারপর কিছুদিন খুজে ফিরে শাকিলকে । কিন্তু কোথাও পায় না ।

ইদানিং রৌদূসী শিপনের সাথে যেন কেমন খারাপ আচরন করছে ।

শিপম ঃ রৌদূসী কি হয়েছে তোমার ?

রৌদূসী ঃ কিছু না ।

শিপন ঃ কিছু তো একটা হয়েছে । বলো?

রৌদূসী ঃ আমার শাকিল কোথায়? আমার শাকিলকে এনে দাও। (কেঁদে কেঁদে বলে )

শিপন ঃ শাকিল কে?  আমি তাকে চিনি না ।
রৌদূসী ঃ তুমি জানো। তা না হলে আমাকে এই তাবিজ এনে দিছো কেনো ? প্লিজ আমার শাকিলকে এনে দাও আমি শাকিলের কাছে যাব।

শিপন ঃ (রেগে গিয়ে) শাকিলের কাছে যাবি তুই? শাকিলকে আমি মেরে ফেলছি। (বলে থাপ্পর দেয় রৌদূসীকে)

রৌদূসী ঃ কিহ! আমি তোমাকে পুলিশে দিব (।

শিপন ঃ আমাকে পুলিশে দিবি? কি প্রমান আছে তোর কাছে ? আর হ্যা , শাকিলই কি তোকে শুধু ভালোবাসতো ? আমি কি বাসি না?

রৌদূসী ঃ (শিপনের শার্টের কলার ধরে) আমি শাকিলের কাছে যাবো । তুই আমার শাকিলকে এনে দে ।

শিপনঃ হারামজাদি তুই শাকিলের কাছে যাবি ক? যা তাহলে ছাঁদ থেকে লাফ দে। তারপর তোর শাকিল এসে তোকে নিয়ে যাবে।

পরেরদিন সকালে শিপন রৌদূসীকে নিয়ে হসপিটালে যাওয়ার সময় গাড়ি ব্রেকফেল করে এক্সিডেন্টে শিপন আর  রৌদূসী দুজনে মারা যায় । মৃতদেহ পরে থাকে রাস্তায়। দেহ থেকে আত্তা বেড়িয়ে আসে শিপনের আত্তাকে কালোজামা পরা ৩জন এসে জোর করে ধরে নিয়ে যায় । দুরে দাড়িয়ে আছে শাকিলের আত্তা । রৌদূসীর আত্তা দৌড় দিয়ে শাকিলের আত্তার কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বলে

রৌদূসীর আত্তা ঃ জান আমি তোমার কাছে চলে এসেছি ।

শাকিলের আত্তা ঃ কিন্তু কেন তুমি এটা করলে ? গাড়ীর ব্রেক তুমি আগে থেকেই লুস করে দিয়েছিলে ।

রৌদূসীর আত্তা ঃ এটা ছারা তোমার কাছে আসার আমার আর কোন উপায় ছিল না ।

শাকিলের আত্তা ঃ কিন্তু তোমার বাচ্চা ? সে কেন অকালে প্রানটা হাঁরালো ?

রৌদূসীর আত্তা ঃ ঐটা আমার বাচ্চা না । ঐটা শিপনের বাচ্চা , আমি তো ঐটাকে পৃথিবীতে আনতে পারবো না ।

এরপর রৌদূসী আর শাকিলের আত্তা চলে যায় অন্য কোন জগতে । যেখানে হয়তো আর কোন শিপন বা কোন কালোজাদু তাদের ভালোবাসার মাঝে সমস্যা করবে না । এরপর থেকে শুরু হবে তাদের নতুন জীবন । তবে তারা আর মানুষ হয়ে সংসার না করতে পারলেও ভূত হয়ে খারাপ সংসার জীবন কাটাচ্ছে না তারা ।

“”সমাপ্ত””

গল্পটি পরে মাহাদি মনে মনে বলে শালা গল্পটি সত্যিই ফাটাফাটি হয়েছে । মাহদি দুপুর কে ফোন দেয়

দুপুর ঃ এতোরাতে আবার ফোন দিছিস কেন ?

মাহাদি ঃ দোস্ত গল্পটা খুব ভালো হয়েছে থ্যাংকস ।

দুপুর ঃ যা কোল বালিস নিয়ে ঘুমা । গুড নাইট ।

কথা শেষ করে দুপুর ঘুমাতে যায় ।

দরজায় টোকার শব্দ । ঘুম ভেঙ্গে যায় দুপুরের। ধিরে ধিরে গিয়ে দরজা খুলে দেয় । খোলার সাথে সাথে দুইটা ছেলে আর একটা মেয়ে রুমে ঢুকে পরে ।

দুপুর ঃ কে কে , কে তোমরা ?

প্রথম জন ঃ আমাদের চিনতে পারছো না ? হাহাহাহাহাহাহাহাহাহাহা ।

দ্বিতীয় জন ঃ আমি শাকিল ।
তৃতীয় জন ঃ আমি রৌদূসী আর ও শিপন।

বুঝলাম কিন্তু আমি তো তোমাদের চিনি না । কেন এতোরাতে একজন ভদ্রলোকের বাসায় এসে ডিস্টার্ব করছো?

শাকিল তুমি ভদ্রলোক? হাহাহাহাহা (ভৌতিক হাসি) তুমি একজন খুনি ।

দুপুর ঃ হোয়াট ? পাগল নাকী তোমারা ল?

রৌদূসী ঃ হাহাহাহা । পাগল না , আমরা আত্তা বা ভূত ও বলতে পারো।

দুপুরবম ঃ কি সব আজে বাজে বলছো ? ভূত বলতে কিছু নাই ।

শিপন ঃ ভুত বলতে কিছু নাই? তাহলে তুমি কেন আমাদের ভুত বানালে আর কেনো রৌদূসী আর শাকিলকে ভূতের সংসার দিলে। কেন রৌদূসীকে আমার বউ রাখলে না?

দুপুর ঃ কি বলছো তোমরা ? আমি কিছু বুঝতেছি না ।

রৌদূসী ঃ আমরা তোমার “” একটি ভৌতিক প্রেমের গল্প “” গল্পের শাকিল , শিপন আর রৌদুসী । তোমার সাথে আমাদের কিছু বোঝাপড়া আছে ।

শাকিল ঃ তুমি কেন আমাকে ঐ পোড়াবাড়ী নিয়ে গিয়ে আমার বন্ধু শিপনের হাতেই আমাকে মারলে? তুমি জানো কি পরিমান ব্যথা পেয়েছি আমি? আমি একটা পাথর নিয়ে এসেছি আমিও তোমাকে এখন সেইভাবে আঘাত করে মারবো ।

দুপুর ঃ আজব । কি বলো তোমরা? ঐটা একটা গল্প। (কথা শেষ হতে না হতেই শাকিল দুপুরে মাথায় আঘাত করে, মাটিতে বসে পরে দুপুর ) প্লিজ আমাকে কেউ বাঁচাও। আমি মরে যাচ্ছি ।

রৌদূসী ঃ না না । মরলে তো হবে না । তুমি আমার অনাগত বাচ্চাকে আমার হাত দিয়ে মারিয়েছো। আগে বলো কিভাবে একটা মা এই কথা বলতে পারে যে এই বাচ্চা এই বাচ্চা সে দুনিয়াতে আনতে পারবে না? সেটা তো শিপনের একার বাচ্চা না আমার ও বাচ্চা । কিন্তু তুমি আমাকে দিয়ে এই কথা বলিয়েছো আর আমাকে দিয়ে আমার বাচ্চাকে মারিয়েছো। (কেঁদে উঠে রৌদূসী)

দুপুর ঃ দুপুর তোমরা বুঝতেছো না কেন এটা শুধু একটা গল্প । প্লিজ তোমরা চলে যাও ।

শিপন ঃ আমাকে আমার বাচ্চা ফিরেয়ে দাও । তা না হলে আমি তোমাকে মেরে ফেলবো । ( বলে গলা টিপে ধরে দুপুরের)

রৌদূসী আর শাকিলও এসে গলাটিপে ধরে আর বলে কেনো তুমি আমাদের সবাই কে মেরে ফেললে? তোমার লেখার ক্ষমতা আল্লাহ দিয়েছে বলেই কি তুমি যা খুশি তাই করবে ? আজ তোমাকে মরতে হবে আমাদের হাতে ।

ধিরে ধিরে দুপুরের সব কিছু অন্ধকার হয়ে আসে।

এই দুপুর এই দুপুর কি হইছে তোর ? এমন করছিস কেন বাবা ?

দুপুর ঃ মা আমি কি স্বপ্ন দেখছিলাম এতক্ষন ?

মা ঃ হ্যা বাবা । বাবা তুই মনে হয় খারাপ কিছু দেখছিস। আমি তোর পাশে শুয়ে তোর মাথা বুলিয়ে দেই । তুই এই পানি টা খেয়ে ঘুমা আব্বু ।

মা কে জরিয়ে ধরে কাঁপতে কাঁপতে ঘুমিয়ে পরে দুপুর । পরের দিন থেকে দুপুরের টানা ২২দিন খুব জ্বর ছিল । আর গলায় হাতের দাগ থাকে । যদিও এই কথা সে আজকের আগে কারো সাথে শেয়ার করে নাই । এখনো প্রতি রাতে দুপুরের জ্বর আসে । ভয়ে মাঝে মাঝে এখনো গা শিউরে উঠে ।

................................. সমাপ্ত .................................

বুধবার, ৩ মার্চ, ২০২১

প্রেতাত্মা রহস্য

 #প্রেতাত্মা_রহস্য

প্রেতাত্মার লেখা গল্প - written by A R Shipon 


সকালে ঘুম থেকে উঠে চা খেতে খেতে পত্রিকা পড়া শিপনের প্রতিদিনের অভ্যাস । আজও চা খেতে খেতে পত্রিকা পড়ছে । হটাৎ শিপনের মুখ কালো হয়ে উঠলো । খবরের কাগজে বড় করে ছাপা হয়েছে , বরিশালের সরুপকাঠি গ্রামের জমিদার বাড়ীতে পর পর ৬ দিনে ৬ টি লাশ পাওয়া গেছে । জ়মিদার বাড়ীটি ভৌতিক বাড়ী নামে পরিচিত। লাশের শরীরে নখের আঁচর এর দাগ ছারা আর কোন চিহ্ন নেই । এবং লাশগুলো রক্তশুন্য । গ্রামের লোক জন বলছে , জমিদার বাড়ীর প্রেতাত্মারা কোন কারনে রেগে এই অঘটন ঘটাচ্ছে । এর কিছুদিন আগেও এখানে এই রকম ঘটনা ঘটেছে । অনেকে এখানে রাতে প্রেতাত্মাদের দেখেছে ।

পরেরদিন সকালে পত্রিকা আসতে দেরি হয়েছে । তাই চা খেতে খেতে ট্যাব টা হাতে নিয়ে ফেসবুকে ঢুকে শিপন । নটিফিকেশন চেক করার সময় শিপনের চোখে পড়ল সাদিয়া তাকে ১টা ছবি ট্যাগ করেছে । ১টা লাশের ছবি , সাথে হ্যাস ট্যাগে লেখা সরুপকাঠির জমিদারবাড়ীর প্রেতাত্মাদের হাতে পর পর ৭ দিনে ৭ লাশ । আতংকে কাটছে গ্রাম বাসির দিন কাল। আমারও খুব ভয় লাগছে ।

তারপর ই ফোন দেই সাদিয়াকে শিপন। সাদিয়ার কাছে সব কথা শুনে মিরাজ , নজরুল , জুয়েল এর সাথে কথা বলে । ওরা আজ রাতে বরিশাল যাবে। ও বলাই তো হয়নি শিপন , মিরাজ , সাকিল , জুয়েল , নজরুল, ইউসুফ ১টা ভৌতিক প্রাইভেট ডিটেক্টিভ ফার্ম চালায় । তবে এখন পর্যন্ত কোন সফল অপারেশন তারা চালাতে পারেনি । এবং জীবনে ভূতও দেখিনি তারা।

ফোনে সাদিয়াকে সব বলা ছিল । সাদিয়া শিপনের বন্ধু , সে বরিশাল মেডিকেল কলেজে পরে । শিপনরা সাদিয়াদের বাসায় উঠবে । 

সকাল ৮টার দিক ওরা সাদিয়াদের বাসায় এসে পৌছে । সাদিয়ার মা ওদের জন্য অনেক খাবারের আয়োজন করেছে। মহিলাটি সত্যি দারুন রান্না করছে , দুপুরের খাওয়া শেষে বলল মিরাজ। রেষ্ট নিয়ে ওরা বিকেলে সাদিয়াকে নিয়ে বের হলো জমিদার বাড়ি দেখতে। 

বাড়িটা দেখতে সত্যি ই খুব ভয়ংকর । অনেক পুরোনো দালান । প্রশাসন বাড়ির ভিতরটা দেখতে দিল না । দূর থেকে দেখে শিপনের দেখে মনে হলো সত্যি খুব ভয়ানক কিছু আছে এই বাড়িতে । আজ রাতে শিপন সহ বন্ধুরা এখানে আসবে এবং সারা রাত এখানে থাকবে । 

রাতের খাবার শেষ করে ১০টার সময় আসলো। বাড়ির চারপাশ ঘুরে দেখলো ওরা। তেমন কিছুই দেখতে পেল না । রাত ৩ টার দিকে সামান্য একটু শব্দ পেয়েছিল। ঘরের টিন এ কিছু ফেলে দিলে যে রকম শব্দ হয় সেই শব্দ। তাছারা আর কিছুই মনে হলো না । এভাবে ভোর ৫ টা পর্যন্ত ছিল ওরা ঐখানে। তারপর আযানের পর ফিরে এলো । বাসায় এসে ঘুম। ১১টার পর একেক জনের ঘুম ভাঙলো ওদের । সাদিয়া চা দেয় আর বলে কাল কি পেলে তোমরা?

শিপন ঃ কিছুই পাইনি , শুধু একটু লোহা বারি দিলে যে শব্দ হয় সেই শব্দ ।

সাদিয়া ঃ দেখলাতো প্রেতাত্মারা তোমাদের ধোকা দিয়ে ঠিকই আরো একজন মানুষ মেরে রেখে গেল । আবার চিঠিও দিয়ে গেছে ।

শিপন ঃ চিঠি ? কি লেখা চিঠিতে ?

সাদিয়া ঃ চিঠিতে লেখা আগামি এক সপ্তাহ প্রেতাত্মাদের রাজা মানুষের রক্ত শুধু খাবেই না সাথে সাথে সে রক্ত দিয়ে গোসল ও করবে। তাই সে গ্রামের মাদবর কে উদ্দেশ্যে বলেছে তাকে প্রতিদিন ২টা মানুষ দিতে হবে । 

( শিপন , মাহাদি , নজরুল ওরা একসাথে হেসে উঠে )

সাদিয়া ঃ আজকে যার লাশ পাওয়া গেছে সে একজন আফ্রিকান , তার শরীরেও কোন রক্ত ছিল না। আর প্রেতাত্মাদের চিঠি পরে সবাই গ্রাম ছেরে পালাচ্ছে । 

শিপন ঃ আফ্রিকান এখানে আসলো কিভাবে ? তাহলে তো লাশটা দেখে আসতে হয় । 

নাস্তা করার সময় সাকিল পেপাড় পরে বলছে কি নতুন এক মাদকদ্রব্য আসছে যেটা নাকি ভয়ঙ্কর ক্ষতিকারক । অল্পদিনেই ধংস করে দিতে পারে যুব সমাজ কে । এই নিয়ে কথা চলছে ওদের মাঝে ।

নাস্তা সেরে ওরা মর্গে যায় লাশ দেখতে , লাশ দেখে যেন শিপন আকাশ থেকে পরলো । হ্যা শিপন এই লোকটাকে চিনে , সে একজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ । সে বিভিন্ন ধরনের মাদক দ্রব্য আবিস্কার করে যুব সমাজ কে ধংস করছে । কিন্তু সে কিভাবে এখানে আসল । সে কাউকে কিছু বলল না । তারপর তারা চলে গেল সবাই।

বিকেলে নাস্তা করে শিপন আর সাদিয়া নদীর পাসে হাটতে গেছে । ২জন হাটছে আর কথা বলছে। শিপন সাদিয়াকে বলল আমি আজ একা জমিদার বাড়ীতে যাবো, তুমি কাউকে বলবে না । হাটতে হাটতে নদির পাসে একটা নৌকার কাছে গিয়ে আসে তখন নৌকা থেকে এক পাগল এসে কাঁমর দেই সাদিয়াকে। তারপর তারা দৌড়ে চলে আসে । সাদিয়া ব্যাথায় কেঁদেই চলছে। তারপর বলে ওই পাগলটা ঐখানেই থাকে । ওর জন্য ঐ পাসে কেউ যেতেই পারে না , গেলে কামড় দেয় আর দৌড়ানি দেয় । 

রাতে শিপন একা একা যায় ঐখনে । এখন প্রায় রাত ১২ টা। ঘুরতে ঘুরতে হটাৎ জোরে শব্দ শুরু হয় । প্রচন্ড ঝোড়ো হাওয়ার শব্দ । কিন্তু কোথা থেকে আসছে। মাঝে মঝে প্রেতাত্মার হাসি। শিপন এবার জমিদার বাড়ীর আরো কাছে গেল । শব্দ টা বাড়ির নিচ থেকে আসছে । বাড়ির চারপাস ঘুরেও কোন শব্দের উৎস পেল না । হাটতে হাটতে হটাৎ শিপন দেখে ২টা প্রেতাত্মা নদীর পার থেকে আসতেছে , কি যেন টেনে নিয়ে আসতেছে ওরা । শিপন পাসে ১টা ঝোপে লুকিয়ে যায় । 

প্রেতাত্মারা এসে ১টা লাশ রেখে আবার নদীর দিকে যেতে থাকে । শিপনও ওদের পিছু পিছু যায় । প্রেতাত্মা গুলো নৌকাতে গিয়ে বসে । রাত প্রায় ৩ টা বাজে তখন ১টা ছোট লঞ্চ আসে নদীর পারে ওই পাগলের নৌকার কাছে । পাগল দৌড় দিয়ে লঞ্চ থেকে নামা মানুষটার কাছে গিয়ে কথা বলা শুরু করে । আর ওই ২টা প্রেতাত্মা পাগলের নৈকাটা সরিয়ে দেয় । 

শিপন হটাৎ মুচকি হাসলো , কারন সে এখন বেপারটা বুঝে গেছে । সে বিস্তারিত সব সাদিয়াকে এস,এম,এস করলো এবং বলল যে নজরুলদের নিয়ে যেন ওরা তারাতারি এখানে চলে আসে আর পুলিশকে নিয়ে আসে । 

শিপন ধিরে ধিরে নৌকার কাছে এগুতে থাকে। শিপন ভয় পেয়ে যায়, কে যেন ওর পিছনে হাত রেখেছে । পেছনে চেয়ে দেখে সাকিল । 

শাকিল ঃ আমি তোমার পিছে পিছে অনেক আগেই এসেছি। চলো আমরাও ভিতরে গিয়ে দেখি।

শিপন ঃ চলো পাগল টার ব্যবস্থা করি ।

তারপর সাকিল পিছন থেকে গিয়ে পাগল টার মুখ আটকে ফেলে । শিপন এসে পাগল এর শরিরের গামছা আর দড়ি দিয়ে পাগল কে বেঁধে ফেলে । 

এরপর তারা নিচে নামে । একটা অন্ধকার সুরঙ্গ পথ । পা টিপে টিপে ১০ মিনিট হাটার পর আলো দেখতে পায় । এক কোনাতে গিয়ে চুপ করে বসে দেখে। … জমিদার বাড়ির নিচের পাতাল ঘর পুরোটা ১টা ল্যাব এর মত বানিয়ে রেখেছে । 

১টা লাশ থেকে মেশিন দিয়ে রক্ত বের করে নিচ্ছে ……। ওদের কথা বার্তায় যতটুকু বুঝা গেল ওরা মরা মানুষের রক্ত দিয়ে কোন ওষুধ বানায়।

না ওরা ড্রাগস বানাচ্ছে বলে সাকিল। ওই দেখ ওই আফ্রিকান , যে কিনা গত বছর ভারতে ধরা পরেছিল। 

শিপন ঃ সাকিল তুই এখনই বাইরে যা , গিয়ে ওদের ফোন দে। তারাতারি পুলিশ নিয়ে আসতে বল । 

সাকিল তারপর চলে যায় ।

কিছুক্ষন পর পেছন থেকে ২টা প্রেতাত্মা শিপনকে ধরে ফেলে । শিপনকে ল্যাব এর ভিতর নিয়ে আসে । এনে এক আগত্বক এর সামনে ফেলে দেই

লোকটা হাসতে হাসতে বলে …

আগত্বক ঃ স্বাগতম আপনাকে আমাদের এই প্রেতাত্মার রাজ্যে । আপনাকে ধন্যবাদ আপনি যুব সমাজের আমোদের গবেষনার জন্য সেচ্ছায় রক্তদান করতে আসার জন্য । যাই হোক এই মেশিন টা তে ঢোকানোর পরপরই আপনি মারা যাবেন তারপর আপনার রক্ত নিয়ে ফেলে দিয়ে আসা হবে , আর সবাই বুঝবে যে আপনাকে প্রেতাত্মারা। হা হাহাহাহাহাহাহ

আর হ্যা মারা যাওয়ার আগে একবার প্রেতাত্মাদের দেখে নিন 

তারপর প্রেতাত্তারা তাদের মুখোস খুলে ফেল , এরা আফ্রিকা থেকে এসেছে , অনেক লম্বা আর কালো । আফ্রিকান শিপন কে জোর করে ধরে মেশিনে ঢুকাবে আর এই সময় শিপন ঝাটকা দিয়ে ১টা লোহা দিয়ে মেশিনটার কাচ ভেঙ্গে ফেলে আর এক আফ্রিকানের মাথায় আঘাত করে ……

তারপরই একজন পিছন থেকে এসে শিপনের পিঠে ছুরি ঢুকিয়ে দেয় । শিপনের চোখ আবছা হয়ে আসে , লুটিয়ে পরে সে । 

২ দিন পর জ্ঞ্যান ফিরে শিপনের ঢাকার হাসপাতালে। ওর পাসে মাহাদি , নজরুল , ইউসুফ , সাকিল আর সাদিয়াকে দেখতে পায় । সাদিয়া ওদের সাথে ঢাকায় এসেছে । 

শিপন জ্ঞ্যান হারানোর পরপরই সাকিল মাহাদিদের সাথে পুলিশ নিয়ে আসে এবং ওদের ধরিয়ে দেই । আর শিপনকে হাসপাতালে নিয়ে আসে ।

পরে পত্রিকায় আসে ওই লোকগুলো মানুষের রক্ত দিয়ে ড্রাগস বানিয়ে দেশে বিদেশে ছড়িয়ে দিত তরুনদের মাঝে । আর যে আফ্রিকান টার লাশ পাওয়া গেছিল সে ই এই ড্রাগসের আবিস্কারক । সে যেন আর নতুন কিছু আবিস্কার করে এই ব্যবসা নষ্ট করতে না পারে তাই তাকেও মেরে ফেলে। 

পত্রিকা পড়ে শিপন হাসে । তখন সাদিয়া শিপনে বলে হাসছো কেন ? 

শিপন বলে প্রেতাত্মার রহস্য শুনে হাসলাম। এই প্রেতাত্মা গুলো আমাকে মেরেই ফেলেছিল প্রায় …।।

বৃহস্পতিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

হৃদমোহিনী মায়াবিনী



 প্রিয়তমা অতন্দ্রিলা,


আমি তোমাকে ছাড়া কখনো ভালো নেই। কখনো ভালো থাকবো কিনা জানি না। পূর্ব প্রতিজ্ঞা মতো একা থাকাটাই মনে হয় ভালো। তুমি তোমার মত ভালো থেকো। জানি না কি লিখবো, শুধু জানি, তোমার শুন্যতা অনুভব করছি, গভীর শুন্যতা। কষ্ট পাচ্ছি, ভীষণ কষ্ট।


তুমি আমাকে একটি প্রশ্ন করেছিলে। উত্তরের অপেক্ষা ও করনি! অন্য কারো বউ হবার খুব বেশি তাড়া? ঠিক আছে, তোমার সুখ কামনা করছি। জীবনের একটি সিদ্ধান্ত বাকী জীবনটা পুরোপুরি বদলে দিতে পারে। অবলীলায় তুমি ওই সব সিদ্ধান্ত নিতে পারো, কিন্তু আমি পারি না। পারি না বলেই কষ্ট পাই, যেমন এখন পাচ্ছি। আমি কষ্ট পাচ্ছি অতন্দ্রিলা, আমি কষ্ট পাচ্ছি। আমি আমার জীবনের বাকি অংশটুকুতে একজন ভিশন অসুখী মানুষের প্রতিবিম্ব দেখতে পাচ্ছি। আমার জন্য মায়া হচ্ছে, খুব। ভালো থেকো। তবে আমার মত জীবনটাকে জটিল করে ফেলোনা, বরং সহজ রেখো। নিজের যত্ন নিও আর সংসারে সুখী হও। তোমার সাথে সংসার করার স্বপ্নটা খুব ছিলো। সেই যে তোমার সাথে ছাড়া ছাড়ি হলো, তার পর তুমি আমার পাশে ছিলে না বহু দিন। তবু খুব কাছেই ছিলে সবটা সময়। কোন কথা হয়নি বহুকাল, কত কথা হতো মনে মনে! গল্প করতাম, ঘুরতাম, আরো কত কি! তোমার কোলে মাথা পেতে ঘুমাই, তোমার চুলে হাত ডুবাই, নাক ডুবাই, একান্তে সময় কাটাই ……..এখনো! তুমি ওসব বুঝবেনা অতন্দ্রিলা, তুমি বুঝবে না।


আমি আমাকে এই ভাবেই মানিয়ে নিয়েছিলাম, মানিয়ে নিয়েছি, মানিয়ে নিবোও। আমার অভ্যেস হয়ে গেছে। জানিনা কত কাল এই ভাবে পালাবো। আমারও ক্লান্তি হয়।

আমি কখনো ভাবতে পারিনি তুমি অন্য কারো হতে পারো। এখনো ভাবিনা। কারণ তোমার পাশে সব সময় আমাকেই দেখি। আপাতত ভেবে নিচ্ছি তুমি হারিয়ে যাচ্ছ, অভিমান করে অনেক অনেক দুরে চলে যাচ্ছ । তুমি কি পেলে আমি জানি না, তবে আমি শূন্যতা পেলাম। যত দিন এই পৃথিবীতে আমি নিঃশ্বাস নিবো, এই বোধ আমাকে ছাড়বে না, তাও আমি জানি। তুমি যে কখনো আমাকে ভুলে যাবে না, সেই বিশ্বাস আমার আছে। ভালোবেসে হউক, ঘৃনা করে হউক, মান অথবা অভিমান হউক, আমি বার বার তোমার কাছে ফিরে যাবো, তেমনি তুমিও আসবে আমার কাছে। ভালোবেসে কেউ কাউকে কখনো ভুলে যায় না। এই দুই জন দুই জনের ভিতরে থেকে যাবো আমাদের শেষ দিন পর্যন্ত। এই বোধটুকুই যথেষ্ট বেঁচে থাকার জন্য।

কেন যেন মনে হয়, জীবনের কোন এক ক্ষণে আমরা মুখোমুখি হোবো। জেনে নেবো দুজন দুজনের সাথে কি ভাবে ছিলাম এতো কাল। কতটা ঠকলাম আর কতটা ঠকালাম তাও জেনে নেবো। সেই পর্যন্ত ভালো থেকো।


——ইতি, তোমার রোহিঙ্গা পেটু।

সোমবার, ১৮ জানুয়ারী, ২০২১

DARK LORD (2)


 

Bhoot Detective Branch - BDB
(ভূত গোয়েন্দা শাখা)
সিরিজের ধারাবাহিক গল্প
গল্প ঃ #DARK_LORD
পর্ব ঃ ২ (দুই)A

 R Shipon 

লাঞ্চ শেষ করে সামান্য রেস্ট নিয়ে বের হয়েছে সবাই। লোকাল কার রেন্ট থেকে এই কদিনের চুক্তিতে একটা গাড়ি ভাড়া নেওয়া হয়েছে। সাথে একজন ড্রাইভার। ড্রাইভারের নাম রকি।
রকিঃ স্যার কোথায় যাবো এখন?
দুপুর ঃ স্যার না। ভাই বলবেন। এখন যাবো সানসেট পয়েন্ট এর ঐখানে যে রিসোর্ট আছে সেখানে। সেখানে স্পট ভিজিট করে যাবো হাটহাজারী শিকদার বাড়ি।
রকিঃ ওকে ভাইয়া।
গাড়ি ছুটে চলে। শহরের যানযট পেরিয়ে এগিয়ে চলে গাড়ি। ছোট্ট এই শহরে মারাত্মক জ্যাম। পোর্ট সিটি বলেই হয়তো।
পড়ির মন গতকাল থেকেই কেমন জেনো মনমরা। রাহাত গুনগুন করে গান গাইছে। জয় কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনছে। দুপুরের খাবারের পর ঘুম দেওয়া অর্নবের অভ্যাস, গাড়িতে উঠার সাথে সাথে ঘুমিয়ে পরে সে।
জয়ঃ রাহাত তো ভালো মুডে আছিস দেখছি।
রাহাতঃ আরে না। কি যে বলো।
জয়ঃ মনে মনে দিল্লিকা লাড্ডু খিলা হচ্ছে তাই না?
রাহাতঃ দাদা আমি কখন যাবো?
দুপুরঃ সানসেট পয়েন্ট থেকে ফেরার সময় আমাদের নামিয়ে দিয়ে জয় আর তুই যাবি। জয় তোকে গার্ড দিয়ে নিয়ে যাবে। জয় হব তোর এসিস্ট্যান্ট।
জয়ঃ আমি এসিস্ট্যান্ট?  বাহ
দুপুরঃ শুধু তাই না। রাহাত এমন ভাব করবি যে তুই অনেক বড় অফিসার। সাথে গাড়ি আছে। ভাবতে পারতেছিস তুই,  যে তুই তোর ফার্স্ট ডেট দিতে যাচ্ছিস গাড়ি নিয়ে এবং একজন এসিস্ট্যান্ট। জয় তুই কিন্তু ওকে স্যার স্যার বলে ডাকবি।
রাহাতঃ দাদা মজা নিও না। এমনিতেই আমার ভয় ভয় লাগছে।
জয়ঃ দাদা আমি তোমার কথার মর্যাদা রাখবো।
গাড়ি এসে সানসেট পয়েন্টের পাসের রিসোর্টে  থামে। সেখানে ঘুরে ঘুরে স্পটটা দেখে। লেক আছে। ছোট ছোট টিলার মাঝে খানে মাঠের মত।
দুপুরঃ এটা হবে আমাদের বেস্ট বিয়ের ইভেন্ট। সুন্দর একটা জায়গা।
পড়িঃ দাদা, এখানে পরিবেশটা ভৌতিক করে সাজালে কেমন হয়?
অর্নবঃ পাগল? একজন বিয়ে করবে, সে কিনা ভয়ে ভয়ে বিয়ে করবে। জীবনেও ক্লাইন্ট মানবে না।
দুপুরঃ পড়ির আইডিয়া টা দারুন। লেক, পাহাড়, জংগল এর মধ্যের রিসোর্টে ভৌতিক আমাজের বিয়ে। ইতিহাস হয়ে থাকবে। তোরা কিভাবে কি করতে হবে প্ল্যান কর। ক্লায়েন্টকে রাজি করানোর দ্বায়িত্ব আমার।
পড়িঃ থ্যাংক ইউ দাদা।
জয়ঃ অসাম হবে অসাম দাদা।
দুপুরঃ চল এখন। রাহাত এর ডেটিং এর দেরি হয়ে যাচ্ছে। জয় আর রাহাত আমাদের হাটহাজারী নামিয়ে দিয়ে তোর নিউমার্কেট যাবি। তোদের জন্য সময় বরাদ্দ এক ঘন্টা।
যথা সময়ে হাটহাজারীতে নামিয়ে দেয় পড়ি, অর্নব আর দুপুরকে। ড্রাইভার রকি রাহাত আর জয়কে নিয়ে রওনা দেয় নিউমার্কেটের দিকে। রাহাত রাহাকে ফোন দেয় যে সে আসছে। রাহাও রেডি হয়ে থাকে, কাছাকাছি আসলে রাহাতকে ফোন দিতে বলে ।
জয়ঃ কি রাহাত, খুব এক্সাইটেড তাই না?
রাহাতঃ কিছুটা ভয় ও আছে। প্রথম ডেটে যাচ্ছি, কিন্তু পকেটে মাত্র ৫০০ টাকা। দাদার কাছে টাকা চাইতেও ভুলে গেছি।
জয় তার ওয়ালেট থেকে ১০০০ টাকার একটি নোট বের করে রাহাতের হাতে গুজে দেয়। নিউমার্কেটের সামনে এসে রাহাত কল দেয় রাহাকে। রাহা ফুলকলির সামনে দাঁড়াতে বলে। কিছুক্ষন পর রাহা আসে। লাল শাড়িতে।  দুজনে একটা রেস্টুরেন্টে বসে। তাদের প্রথম দেখা, প্রথম স্পর্শ। রাহাতের হাতের নখ বড় হয়ে গিয়েছিলো, রাহা রাহাতের হাতের নখ কেঁটে দেয়। রাহা চামচ দিয়ে রাহাতকে খায়িয়ে দেয়। বাইরে জয় আর ড্রাইভার গাড়িতে বসে আছে। রাহাত রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে রাহার ভাগ্নির জন্য চকলেট কেনে। হটাৎ করে একটা লোক পেছন থেকে এসে তাকে ধাক্কা দেয়। কেমন জেনো শীতল স্পর্শ। লোকটির দিকে তাকায় রাহাত। চেনাচেনা, কিন্তু অচেনা।  রাহা পাশে ছিলো, অন্যরকম একটা ভালোলাগা কাজ করছিলো রাহাত এর মধ্যে তাই সে আর এই বিষয়টি নিয়ে মাথা ঘামায়নি।
রাহাকে নিয়ে গাড়ির কাছে এসে জয় এর সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। তারপর রাহাকে রিক্সায় উঠিয়ে দিয়ে বিদায় নেয়।
চিটাগং এর আলোরন রেস্টুরেন্টে মুরগির গিলা কলিজার মোগলাই খেতে দুপুর, পড়ি, অর্নব হাজির। জয়কে ফোন দিয়ে ওদেরও সেখানে আসতে বলে।
রেস্টুরেন্টের দোতালায় বসে সবাই। ড্রাইভার রকিও আসে।
পড়িঃ জয়দা, ক্লায়েন্ট রাজি হয়েছে।
জয়ঃ সত্যি? তার মানে ভৌতিক আবেশে বিয়ের আয়োজন। আহ কি যে একটা কাজ হবে না।
দুপুরঃ বর কনের দুজনের সাথে কথা বলে তাদের কনভেন্স করেছি। বলেছি প্ল্যান চ্যাটের  মঞ্চে বিয়ের মূল কাজ সম্পাদন হবে। ওয়েটার হিসেবে থাকবে ভূতেরা। খাবারের মেনুতেও থাকবে ভূতদের পছন্দের খাবার। কটেজ গুলোকে ভৌতিক বাড়ির মত সাজানো হবে। যারা গেস্ট আসবে তোদের সকলকে ঘোস্ট বানানো হবে। বড় সাজবে ভূত আর কনে সাজবে পেত্নী। এই ম্যাজিকেই রাজি হয়ে গেছে বড় ইয়াসিন আরাফাত আর কনে তানহা জান্নাত। এরা দুজনেই চিটাগং এর স্থানীয় এবং দুজনের অনেক থ্রিলার, সাসপেন্স মুভি দেখে।
রকিঃ আমি মনে হয় আপনাদের সাথে থেকে কাজ করে ভালোই মজা পাবো। আপনারা কি আমাকে সাথে নেবেন?
অর্নব ঃ কেনো নয়।
রকিঃ ধন্যবাদ।
দুপুরঃ রাহাত তোমার রাহার খবর কি? কখন থেকে আমাদের সাথে জয়েন করছে?
রাহাতঃ সরি দাদা। আমি ভুলে গিয়েছিলাম বলতে। আগামীকাল আমি ওকে নিয়ে আসবো।
পড়িঃ আবার ডেটিং দেবার ধান্দা।
দুপুরঃ কাল দিনে তোমার ছুটি নেই। অনেক কাজ আগামীকাল। কাজ শেষ করে যদি সময় পাও তাহলেই যাবে।
রাহাতঃ ঠিক আছে।
সবাই মিলে মুরগীর গিলা কলিজার মোগলাই খায়। কিন্তু দুপুর খেতে পারছে না। বারবার তার ঐ লোমওয়ালা পিশাচটির কথা মনে পরছে।
সবার খাওয়া শেষে গাড়ি নিয়ে রওনা দেয় গেস্ট হাউজের দিকে। গেস্ট হাউজে পৌছে ১০ টার দিকে। রাস্তা থেকে বিরিয়ানির প্যাকেট নিয়ে আসে। উপুরে উঠে সবাই ফ্রেস হয় একএক করে। পড়ি একা মাত্র একটি মেয়ে। তাই ও পাসের রুমের ওয়াশরুমে ফ্রেস হতে যায়।
ছেলেদের মধ্যে দুপুর সবার শেষে ফ্রেস হয়ে বের হয়।
রাহাতঃ দাদা খুদা লেগেছে। চল খাই।
দুপুরঃ পড়িকে বল সব গুছিয়ে ঠিক করতে।
অর্নবঃ পড়ি কোথায়?
দুপুরঃ পড়ি কোথায় মানে?  ও না ওয়াশরুমে ফ্রেস হতে গেছে।
জয়ঃ সে তো অনেকক্ষন হয়ে গেলো।
দুপুর দ্রুত পাসের রুমের ওয়াশরুমে কাছে যায়। ভেতর থেকে আটকানো। দুপুর পড়িকে কয়েকবার ডাক দেয়। কিন্তু সারা শব্দ নেই। ফিরে আসতে যাবে এমন সময় ভেতরে গুংগানোর শব্দ শুনতে পায়। দুপুর চিৎকার করে সবাইকে আসতে বলে। এরপর দুপুর আর জয়ের কয়েকটা লাথির পর ওয়াশরুমের দরজা ভেংগে যায়। বাথরুমের ফ্লোরে পড়ি পরে আছে। দুপুর গিয়ে ওকে তুলে।
দুপুর ঃ কি হয়েছে?
পড়িঃ দাদা ঐ পিশাচটা মেরে ফেলতে  চেয়েছিলো আমাকে।
দুপুর পড়িকে নিয়ে তাদের রুমে আসে। সোফায় বসায়। রাহাত পানি এনে দেয়।
দুপুরঃ কি হয়েছিলো?
পড়িঃ আমি ফ্রেস হয়ে বের হতে যাবো তখন দেখি বাইরে থেকে বাথরুমের দরজা লক করা। আমি চিৎকার করি। কিন্তু কেউ যে আমার চিৎকার শুনতে পাচ্ছিলো না সেটা বুঝতে পারি। তারপরেও দরজা ধাক্কাচ্ছিলাম আর চিৎকার করছিলাম। কোন কাজ হচ্ছিলো না। খেয়াল করলাম। পেছনে কেউ একজন দাড়িয়ে আছে। সঙ্গে সঙ্গে পেছনে ফিরে দেখি কেউ নেই। আবার ভাবলাম হয়তো হ্যালুসিনেশন। তাই বেসিনে গিয়ে মুখ ধুই। মুখ ধুয়ে আয়নার দিকে তাকিয়ে আমি আবার ভয়ে চিৎকার করি। রক্তাক্ত হয়ে আছে আমার মুখ। বেসিনের কল দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিল। আমি সেই রক্ত দিয়েই মুখ ধুয়েছি। আমি কাঁদছিলাম। তারপর হটাৎ আয়নায় লেখা ওঠে #DARK_LORD। আমি আরো ভয় পেয়ে যাই। তারপরেই পেছন থেকে একটু শীতল লোমওয়ালা অদৃশ্য কেউ আমাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে। আমি ঠান্ডা সহ্য করতে পারছিলাম না। শক্তি হারিয়ে দূর্বল হয়ে গোংগাতে থাকি। তারপর তোমার ডাক শুনতে পাই। এরপর তোমরা ভেতরে ঢুকো।
দুপুরঃ আচ্ছা তুই রেস্ট নে। তারপর খাওয়া দাওয়া করে ঘুমিয়ে পর।
সবাই বেশ কিছুখন নির্বাক হয়ে বসে থাকে। রাহাত উঠে সবার জন্য বিরিয়ানির প্যাকেট খুলে সবার সামনে দেয়। ডিনার শেষ করে। দুপুর পড়িকে একটা ঘুমের ট্যাবলেট খেতে বলে। যাতে ভয়টা কমে একটু ঘুম দিতে পারে।  সকাল থেকে আবার কাজ।
সবাই ঘুমিয়ে পড়ে। হটাৎ দুপুরের কানে আসে নুঁপুরের শব্দ। চুপ করে থেকে আরো একটু শিউর হয় সে। হ্যা, সত্যিই নুঁপুরের শব্দ। দুপুর বিছানা থেকে উঠে দেখে পড়ি আছে কিনা। পড়ি পড়ির যায়গায় শুয়ে আছে। তাহলে কে??? হটাৎ মনে পড়ে। কেয়ারটেকার সাগরের কথা। সাগর বলেছিলো। এই বাড়ির ছাদে রাতে একটা মেয়ে হেঁটে বেড়ায়। মাঝে মাঝে ছাদের উপর উদ্ভট শব্দ করে। কান্না করে।  কেউ কেউ সাহস করে ছাঁদে গিয়েছিলো মেয়েটিকে খুজতে। কিন্তু কেউ পায়নি। পরে সবাই ভয়ে এই বাসা ছেরে পালিয়েছে।
দুপুর বুঝে উঠতে পারছে না কি করবে।
উপরে যাবে নাকি অন্যদের মত আবার ঘুমিয়ে পরবে। তবে ঘুম আর তার আসবে না। এর চেয়ে ভালো সাহস করে উপরে উঠে যাওয়া।
দুপুর ধিরে ধিরে কোন রকম শব্দ না করে রুম থেকে বেরিয়ে ছাদে উঠে যায়। তখনও নুপুরের শব্দ আছে। দুপুর ছাদের মাঝখানে যায়। কিন্তু কোথাও কেউ নেই। ডানে তাকায়, বাঁয়ে তাকায়। সব শুন্য। জোঁসনা আছে, চারিদিকে ধোয়ার মত উড়ে বেরাচ্ছে কুয়াশা। দুপুর একটু সামনে এগিয়ে কার্নিশের কাছে যায়। হটাৎ পেছনের একপাশ থেকে অন্যপাশে নুঁপুরের শব্দ করে কে জেনো দৌড় দেয়। দুপুরও সেই দিকে দৌড় দেয়। কিন্তু কেউ নেই। আবার হটাৎ কার্নিশের দিক থেকে মায়াবী হাসির শব্দ। দুপুর আবার কার্নিসের দিকে ফিরে আসে।
দুপুরঃ কে তুমি? আমি তোমাকে একবার দেখবো। (বারবার বলে দুপুর)
আবার নুঁপুড় পায়ে দৌড়ানোর শব্দ, সাথে মায়াবী হাসি।
দুপুর ঃ প্লীজ বলো তুমি কে?
দুপুর ছাদের একপাশে দাঁড়ানো। খেয়াল করে চিলেকোঠার এক পাশ থেকে একটি মেয়ে বেরিয়ে আসছে। পেছন থেকে দেখতে পাচ্ছে সে। সাদা শাড়ি, কালো ব্লাউজ, বিশাল খোলা লম্বা লম্বা চুল। আঁচল মাটিতে আচরিয়ে যাচ্ছে। দুপুর ধিরে ধিরে মেয়েটির পেছনে আসতে থাকে। মনে হচ্ছে মেয়েটি অসম্ভব সুন্দরী। খুব করে একবার দেখতে ইচ্ছে করছে। মেয়েটি পেছন ফিরে তাকাচ্ছে না। সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। দুপুরও সামনে দিকে এগুচ্ছে।
দুপুরঃ কে তুমি? কি নাম তোমার? একবার পেছনে তাকাও।
মেয়েটি পেছনে তাকিয়ে মুচকি হাসি দেয়। অসম্ভব মায়াবী জাদুকরী চাহুনী তার।
দুপুরঃ কি নাম তোমার?
মেয়েটিঃ (অসম্ভব মিষ্টি গলায়) হৃদমোহিনী।
মেয়েটি নাম বলে আবার তার জাদুকরী খিলখিল হাসি দিয়ে, নুপুর পায়ে সামনের দিকে দৌড় দেয়। দুপুর হৃদমোহিনীর অপার সৌন্দর্যের যাদুতে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে সেও দৌড় দেয় হৃদমোহিনীর পেছনে।

হটাৎ পেছন থেকে এসে অর্নব দুপুরের হাত টেনে ধরে। আর একটু হলে ছাদ থেকে সোজা নিচে পরে যেত দুপুর। ঠিক নিচেই রয়েছে একটু মৃতকূপ। পরলে সরাসরি কূপে, হয়তো মৃত্যুও।
অর্নব ঃ দাদা তুমি কি করছো?
দুপুর স্তব্দ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অর্নব দুপুরকে ঝাকি দেয়। আর বলে দাদা কি হয়েছে তোমার?
মিনিট তিনেক পর দুপুর ঘোড় কেটে স্বাভাবিক হয়। বুঝতে পারে যে সে মারাত্মক বড় একটা বিপদ থেকে বেঁচে গেছে।
তারপর অর্নবকে না করে যে এই কথা সে জেনো আর কারো সাথে শেয়ার না করে। বাকিরা ভয় পেতে পারে। এবং সবাইকে ছাদে না আসার জন্য বলতে বলে।
এরপর রুমে এসে সুয়ে পরে। একপাতা সেডিল খেয়ে ঘুম দেয়।।

চলবে..............................  চলবে।

সম্পূর্ণ গল্পটি আমার বিকৃত মস্তিষ্কের কল্পনা। গল্পের সাথে বাস্তবতা মেলানোর চেষ্টা করবেন না। গল্পের ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন এবং আপনার মতামত দিবেন। ভালো লাগলে অনুপ্রেরণা দেবার জন্য শেয়ার করুন। নেক্সট পর্ব ইনশাআল্লাহ আগামীকাল দেওয়া হবে। আল্লাহ হাফেজ।

রবিবার, ১৭ জানুয়ারী, ২০২১

DARK LORD (ডার্ক লর্ড)

 


Bhoot Detective Branch - BDB
(ভূত গোয়েন্দা শাখা)
সিরিজের ধারাবাহিক গল্প
গল্প ঃ #DARK_LORD
পর্ব ঃ ১ (এক)
প্রেতাত্মার লেখা গল্প -  Written by A R Shipon

অদ্ভুতুরে এই শহরে প্রতিনিয়তই আনাগোনা রয়েছে হরেক রকমের ভূত, পেত্নী, প্রেতাত্মা, শাকচুন্নিদের। কেউ বিশ্বাস করে আবার কেউ করে না। কিন্তু দুপুরের দৃর বিশ্বাস ভুত প্রেত মানুষের আসেপাশেই রয়েছে। মানুষজাতী যেমন বিভিন্ন কার্যকর্মে লিপ্ত। ভালো কাজ, মন্দ কাজ, ক্রাইম। ঠিক তেমনি ভুতেরাও।
বারান্দায় বসে কফির মগে চুমুক দিতে দিতে ভাবছে দুপুর। দুপুরের ভুত প্রিতি বেশি। দিনরাত তার জল্পনা কল্পনা এই ভুত প্রেত নিয়েই। যদিও এখনো ভূতের কোন সুনির্দিষ্ট অস্তিত্ব তার সামনে ধরা দেয় নি। তবুও ভুত প্রেত আত্তার উপর রয়েছে তার অটল বিশ্বাস। 
দুপুরের ম্যাসেঞ্জারে রাহাত এর ফোন আসে। রাহাত দুপুরের এডি। দুপুর ওয়েডিং প্ল্যানিং, ইভেন্ট অরগানাইজড করে, সাথে সিনেমাটোগ্রাফি। দারুন ছবি তুলে সে।
রাহাতঃ ভাইয়া আজ আমাদের চিটাগং যাওয়ার কথা। টিকিট ও কাটা আছে। তুমি কি সব গুছিয়েছো?
দুপুরঃ ওহ! ভুলেই তো গিয়েছিলাম। আচ্ছা অর্নব আর পড়িকে কল দিয়ে রেডি হতে বল। ১২ঃ১৫ মিনিটে বাস ছাড়বে সবাইকে ১১ টায় কলাবাগান আসতে বলবি। সেখান থেকে ডিনার করে রওনা দিবো।
রাহাতঃ ঠিক আছে। কিন্তু আমাদের আলপোনা + মেয়ের সাজুগুজু মেহেদী দেবার জন্য আরেকজন লাগে তো।
দুপুরঃ এখন আবার আরেকজন পাবো কোথায়?
রাহাতঃ চিটাগং এ আমার এক ফ্রেন্ড আছে। নাম রাহা। তুমি বললে ওকে আমাদের সাথে নিতে পারি।
দুপুরঃ আচ্ছা ঠিক আছে। আসতে বলিস। আর ঠিক সময়ে চলে আসিস।
ফোন কেটে দিয়ে দুপুর কিচেনে আসে। কিচেন একটা মুরগী রাখা ছিলো। বুয়া ঠিক মত কাজ না করে ফেলে রেখে চলে গেছে। দুপুর মুরগীটা নিয়ে ফ্রিজে রাখতে যাচ্ছে। হটাৎ খেয়াল করে মুরগীর ভেতর থেকে অঝড়ে তাজা রক্ত বের হচ্ছে।
১১ টার সময় আনা মুরগীতে এখন তাজা রক্ত। কিভাবে সম্ভব। দুপুর মুরগীটি বেসিনে নিয়ে ভালোমত ধুয়ে আবার ফ্রিজে রেখে আসে। তারপর নিজের রুমে গিয়ে ঘুম দেয়।
ঘুন ভাংগে সন্ধায়। বুয়া আসেনি। তাই নিজেরই রান্না করতে হবে।
একটা কাজ করলে কেমন হয়। রাহাত, অর্নব, পড়িকে বাসায় আসতে বলি। বিরিয়ানি রান্না করি। বিরিয়ানি দিয়ে ডিনার সেরে রওনা দেওয়া যাক। তারপর যথামত সবাইকে এসএমএস দিয়ে রান্নার কাজ শুরু করে দুপুর। মুরগীটা আনা প্রয়োজন। দুপুর কিচেন থেকে ডাইনিং রুমে এসে ফ্রিজ খোলে। মুরগীটি নেই। ফ্রেজের গায়ে লাল তাজা রক্ত রক্তের মাখামাখি। কিছুটা বিচলিত হয় দুপুর। সাধারণত এই সময়ে দুপুরের এই বিষয়টিকে ভৌতিকভাবে বিশ্লেষণ করা উচিৎ ছিলো। কিন্তু সে নিজেকে শান্ত রাখলো।
হটাৎ  বারান্দায় সে কিছু একটার শব্দ পেলো। দৌড়ে বারান্দায় যায়। একটা লোক বারান্দা থেকে লাফানোর চেষ্টা করছে। দুপুর সজোড়ে দৌড়ে গিয়ে তাকে জাপরিয়ে ধরলো। হ্যাচকা টানে বারান্দা থেকে ড্রয়িং রুমে নিয়ে ফ্লোরে ফেলে দিয়ে জোরাজুরি করছে। লোকটির সারা শরীর গাড় লোমে আবৃত । হাতের নখগুলো বিশাল বড় বড়। লোকটি দুপুরকে তার বড় বড় নখ দিয়ে খামচাচ্ছে। আর বড় বড় দাত দিয়ে দুপুরকে কামড় দিতে চাচ্ছে।  দুপুর বুঝতে পারছে, একবার ধরা দিলে এই লোক তার শরীরের সমস্ত রক্ত খেয়ে ফেলবে। হয়তো এটা পিশাচ। সারাজীবন দুপুর যে ভূত পিশাচ দেখার অপেক্ষায় ছিলো আর আজ সেই পিশাচের আক্রমণের স্বিকার সে। লোকটির শরীর খুব ঠান্ডা। দুপুরকে এমনভাবে জাপড়ে ধরেছে যে দুপুরের শরীর শীতে কাবু হয়ে যাচ্ছে, নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কি করবে দুপুর বুঝছে না, হটাৎ মনে পরলো দুপুরের হাতে মুরগী কাটার ছুড়িটা রয়েছে। দুপুর ছুড়িটা দিয়ে পিশাচটির পিঠে ঢুকিয়ে দিয়ে টান দেয়। পিশাচটি অসম্ভব ভয়ানক চিৎকার দিয়ে দুপুরকে ছেড়ে উঠে বারান্দায় যায়। বারান্দা থেকে লাফ দেবার আগে দুপুরের দিকে ভয়ংকর একটা লুক দেয়। পিশাচের সেই ভয়ংকর মুখ দেখে দুপুর জ্ঞ্যান হারিয়ে ফেলে।
রাত প্রায় ৮টা বাজে।
এই সময়ে পড়ি, রাহাত অর্নব আসে। অনেকক্ষন কলিংবেল বাজানোর পরেও ভেতর থেকে দরজা খোলা হচ্ছে না। অর্নব তারাতারি জয়কে ফোন দেয়। জয় মাঝে মাঝে এখানে এসে থাকে, তাই জয়ের কাছে ডুপ্লিকেট চাবি আছে।
১০ মিনিটের মধ্যে জয় চলে আসে। সে পাশেই ছিলো। চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে দেখে দুপুর ড্রয়িং রুমের ফ্লোরে জ্ঞ্যান হারিয়ে পরে আছে। সবাই তারাহুরো করে পানি ডেলে জ্ঞ্যান ফিরিয়ে আনে। জ্ঞ্যান ফেরার পর দুপুর বেশ কিছুক্ষন চুপ ছিলো। তারপর সব ঘটনা খুলে বলে৷ খুলে বলে পিশাচটার কথা। কিন্তু কেউ বিশ্বাস করে না।
অর্নব ঃ দাদা আমি আগেই তোমাকে বলেছি তুমি এই সব উদ্ভটে ভুতের গল্পের বই পড়া বাদ দাও। তুমি যে মানুষিক সমস্যায় ভুগছো সেটা কি জানো???
দুপুরঃ আমি সত্যি বলছি। আমার স্পষ্ট সব মনে আছে।
জয়ঃ দাদা দুপুরে কি লাঞ্চ করেছিলে?
দুপুরঃ নাহ।
জয়ঃ না খেলে তো এমন অবস্থাই হবে।
পড়িঃ আমি গিয়ে রান্না করছি।
রাহাতঃ আমি দাদার ব্যাগ গুছিয়ে দিচ্ছি।
পড়িঃ দাদা আমি আগে তোমাদের জন্য কফি করে দিচ্ছি।
ঘন্টাখানেকের মধ্যে সব রান্নাবান্না শেষ করে ড্রয়িং টেবিলে বসে সবাই। জয় নিজেও চিটাগং যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
দুপুরঃ তোরা কেউ আমার কথা বিশ্বাস করছিস না তো। যা ফ্রিজে দেখ, রক্ত লেগে আছে।।
পড়ি ঃ আমি দেখেছি, কিচ্ছু নেই।
দুপুরঃ কিচ্ছু নেই।
দুপুর চেয়ার থেকে উঠে ফ্রিজ খুলে দেখে যে সত্যিই ফ্রিজে কোন রক্তের ছাপ নেই। দুপুর চিন্তা করতে থাকে। তাহলে কি জয়ের কথাই সত্যি। আমি ভূত প্রেত নিয়ে ভাবতে ভাবতে কি পাগলে হয়ে যাচ্ছি। আর ঘটনাটি হ্যালুসিনেশন ছিলো।
রাহাত ঃ দাদা খেতে আসো তো। ডিনার সেরে বাস কাউন্টারে যেতে হবে।।
দুপুর ডাইনিং টেবিলে এসে খাবার খায়। নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে।
রাত ১২. ২৫ মিনিটে বাস ছেড়ে দেয়। দুপুর ১০ টা ঘুমের ঔষধ মুখে গুজে দিয়ে পানি খেয়ে কম্বলটা মুড়ি দিয়ে সুয়ে পরে। বাকিরা গল্প গুজব করছে। অর্নব পড়িকে জ্বালাচ্ছে তার জন্য একটা গার্লফ্রেন্ড খুজে দেবার জন্য।
অর্নব ঃ দোস্ত তোর এতোগুলা কিউট বান্ধবী আর তুই আমার জন্য একটাও খুজে দিস না। আর কতদিন আমি এভাবে সিংগেল থাকবো বল?
পড়িঃ তুই মর। আর কয়ডা লাগে তোর? দুইদিন পর পর গার্লফ্রেন্ড চেঞ্জ করিস।
জয়ঃ অর্নব চেঞ্জ করে না, এক্সচেঞ্জ করে। হাহহাহাহা
এভাবে গল্পে গল্পে ছোট হতে থাকে রাস্তা। রাস্তের পাশের দোকান গুলো বন্ধ, অনেক দোকানে বাতি জ্বলছে। রাস্তার মাঝখানে সোডিয়াম আলোর বাতি, কিছুটা জোসনা। রাতের এই ব্যাস্ত শহড়ে একের পর এক দ্রুতগামী গাড়ি ছুটে চলছে। পড়ি আর অর্নব দুজনেই জানালার বাইরে তাকিয়ে আছে। হটাৎ একটা লড়ি পেছন থেকে তাদের সামনের বাসকে ধাক্কা দেয়। বাসটা সরে গিয়ে পাসের ওয়েতে দুমড়ে পরে যায়। আর ঐদিক থেকে মানে চিটাগং থেকে আসা একটা দ্রুতগামী লড়ি বাসটিকে আবার আঘাত করে। সংগে সংগে আসেপাসের সব বাস থেমে যায়। সব যাত্রীরাও নেমে আসে উদ্ধারে । দুপুরের ঘুম ভেংগে যায় চিৎকারে, সেও নিচে নেমে আসে। শুরু হয় বৃষ্টি, বর্জপাত। জোসনা কেটে আসে নিকষ কালো ভূতুড়ে অন্ধকার। অহতদের আহাজারি পুরো পরিবেশটাকে মৃত্যুপুরি বানিয়ে ফেলে।
রাহাতঃ দাদা এম্বুলেন্স কল করা উচিৎ।
দুপুর ৯৯৯ এ কল করে জরুরী সেবা চায়। ১৮/২০ মিনিটের মধ্যে এম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ চলে আসে। তারপর আহতদের উদ্ধার করে নিয়ে যায় হসপিটালে।
দুপুর নিজেদের বাসের দিকে ফিরে আসছে। হটাৎ মনে হয় পেছন থেকে কেউ তার দিকে তাকিয়ে আছে। সে পেছনে তাকায়। কেউ নেই। আবার সামনের দিকে মুখ নিয়ে আসে। সংজ্ঞে সংজ্ঞে আবার পেছনে ফিরে বিদ্ধস্ত বাসের সামনের আসে। নিচে একটা লাশ। লাশের হাত দেখে বোঝা যাচ্ছে এর সারা শরীরে লোমে আবৃত। লাশটি উপর হয়ে আছে। দুপুর টেনে বাসের নিচ থেকে লাশ বের করে। চিৎ করা লাশ টা উপর করার সংগে সংগে দুপুর চিৎকার দেয়। একি এতো তার নিজের লাশ। এই লাশের অবয়ব একদম তার নিজের মত।
দুপুরের চিৎকার শুনে পড়ি আর জয় কাছে আসে। সামনে গিয়ে লাশের দিকে তাকায়। পড়ি কোন কথা বলে না।
জয়ঃ দাদা লাশ দেখে ভয় পেয়েছো? নাকি তোমার পরিচিত?
দুপুরঃ আরে এতো আমার লাশ।
জয়ঃ যাচ্ছে তাই বলছো দাদা। এ তোমার লাশ হতে যাবে কেনো? এ লাশ তো মনে হচ্ছে এই বাসের ড্রাইভারের।
দুপুর আবার লাশের দিকে তাকায়। চমকে যায়। এখন আর সে তার নিজেকে দেখতে পাচ্ছে না। উঠে আসে সে। তাদের বাস ছাড়বে। বাসে উঠে বসে। জানালার পাশ দিয়ে তাকিয়ে আছে।  আবার চোখ পরে লাশটির দিকে লাশটি মুচকি হাসে। এই লাশটি বর্তমান মুখটিও তার পরিচিত। এইতো আজ বিকেলেই এই পিশাচটার সাথে তার একদফা হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়ে গেছে। আচ্ছা এই পিশাচটি কি মরলো?  নাকি সে তার রক্তখুদা মিটাতে এই রক্তবন্যার আয়োজন করলো? দুপুরের মাথা ঘুরছে। আবার ঘুম দরকার। ব্যাগের মধ্যের বাকি ১০ ঘুমের ঔষধও খেয়ে ফেললো।
ঘুম ভাংলো চিটাগং শহরে এসে। সেখান থেকে গাড়ি করে বিয়ে বাড়ি। বিয়ে বাড়ি থেকে তাদের জন্য একটি বাংলোর ব্যাবস্থা করা হয়েছে। সেই বাংলোতে উঠলো তারা।
বাংলো ন্যাশনাল মেরিটাইম ইনিস্টিউটের অধক্ষ্যের বাংলো। বাংলোতে নাকি ভূত আছে সে ভয়ে এখানে কেউ থাকে না। বাংলোর ভেতরে ঢুকেই নানা রকম তাবিজ দেখা গেলো।
অর্নব ঃ দাদা তুমি আর আমি কিন্তু এই বাংলোয় বসে ভূত নিয়ে রিসার্চ করতে পারবো। কি বলো?
জয়ঃ আমরা কাজ করতে আসছি। সারা দিন কাজ শেষে এসেই ঘুম। রিসার্চ করার দরকার হলে তোমরা কইরো।
দুপুরঃ পড়ি তোর কি হয়েছে? কথা বলছিস না যে?
পড়িঃ নাহ দাদা তেমন কিছু না। ভয় ভয় লাগছে। আমাকে কি একা থাকতে হবে?
দুপুরঃ রাহাত তোমার বন্ধু রাহা কোথায়? সে আসবে না?
রাহাতঃ আসলে দাদা রাহা আমার গার্লফ্রেন্ড। তার সাথে আমার আগে কখনো দেখা হয়নি। আজ বিকেলে দেখা করতে যাবো। তারপর বলে দেখি ও কি আমাদের সাথে থাকবে কিনা। এখানে না থাকলেও ও আমাদের সাথে কাজ করবে এটা কনফার্ম।
অর্নব ঃ বাহ বাহ। রাহাতের তাহলে কাজের সাথে ডেটিং ও হয়ে যাচ্ছে। যাও যাও। স্বার্থক হোক তোমার প্রেম।
পড়িঃ তোমরা কোন শব্দ পাচ্ছো? মনে হচ্ছে কোন জানোয়ার পশুর মাংশ টেনে টেনে খাচ্ছে আর খিল খিল করে হাসছে।
পড়ি এরুম সেরুম দৌড়াদৌড়ি করে। কিছুই পায় না।
দুপুরঃ গায়েজ, আমরা সবাই এক রুমে থাকছি। রুমটা অনেক বড়, আশাকরি সমস্যা হবে না। এখন রেস্ট নাও। বিকেলে আবার বিয়ে বাড়ি দেখতে যাবো। স্পট দেখে এসে রাতে প্ল্যান করবো ইভেন্টের। এখন রেস্ট।
রাহাতঃ দাদা আমাকে রাস্তা নামিয়ে দিও। আমি একটু নিউমার্কেটের দিকে যাবো রাহার সাথে দেখা করতে। ফার্স্ট টাইম ডেট। প্লিজ দাদা।
দুপুরঃ ওকে। কিন্তু একঘন্টার বেশি না।  এখন  রেস্ট।

চলবে..............................  চলবে।

সম্পূর্ণ গল্পটি আমার বিকৃত মস্তিষ্কের কল্পনা। গল্পের সাথে বাস্তবতা মেলানোর চেষ্টা করবেন না। গল্পের ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন এবং আপনার মতামত দিবেন। ভালো লাগলে অনুপ্রেরণা দেবার জন্য শেয়ার করুন। নেক্সট পর্ব ইনশাআল্লাহ আগামীকাল দেওয়া হবে। আল্লাহ হাফেজ।