শনিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

ভূত নগরে ভালোবাসা দিবসের ইতিহাস


#ভূত_নগরে_ভালোবাসা_দিবসের_ইতিহাস
(কাল্পনিক মজার গল্প)
লেখাঃ MD Asadur Rahman – Shipon

রনি, ভূত রাজদেরও মহারাজ। কলংকপূর নামের একটি ভূত রাজ্যের ও রাজা সে। এছাড়াও আরো বেশ কিছু ভূত রাজ্যের রাজারা তাকে সকল ভূত সম্প্রদায়ের মহারাজা হিসেবেই মানে। কলংকপূরের রাজদরবারে এক রুদ্ধশ্বাস বৈঠক চলছে। বৈঠকের মূল বিষয় হচ্ছে ভ্যালেনটাইন ডে। ভূতেরা যখন পৃথিবীতে ছিলো তখন কতই না আনন্দে ভ্যালেন্টাইন ডে পালন করতো। আর এখন ? এখন তো তাদের মধ্যে ভালোবাসাই হয় না। তো কিশের আবার ভ্যালেন্টাইন ডে। অন্যান্য রাজারা মহারাজের উপর তিব্র খোভ পূষে রেখেছেন। কারন মহারাজা তাদের অন্য সব কিছুর ব্যাবস্থা করলেও ব্যাবস্থা করেনি কোন ভালোবাসার।
রাজা অনুপঃ মহারাজ রনি, আমরা আপনাকে যথেষ্ট পরিমান সম্মান করি। আপনি আমাদের প্রায় সকল চাহিদাই পূরন করেছেন। কিন্তু
মহারাজ রনিঃ কিন্তু কি?
রাজা অনুপঃ কিন্তু আমাদের ভালোবাসা পাওয়া বা দেবার কোন ব্যাবস্থা করেননি।
রাজা আদিত্যঃ ভালোবাসা ছাড়া সকল কিছু বৃথা। আমাদের এবং আমাদের ভূতপ্রজাদের ভালোবাসার প্রয়োজন।
মহারাজ রনিঃ তো এখন আমি কি করতে পারি?
রানী অধরাঃ দেখুন মহারাজ কিভাবে আমাদের ভালোবাসা দেবার ব্যবস্থা করবেন সেটা আপনি জানেন। সঙ্গী ছাড়া সবকিছু পানসে লাগছে। আর ভালো লাগছে না। আপনি ব্যাবস্থা করে দিন। আর যদি না পারেন তাহলে বলে দিন। আমরা চলে যাই।
মহারাজ রনিঃ কোথায় যাবে ? আমি তোমাদের জন্য এতোকিছু করলাম আর তোমরাই কিনা আজ আমাকে ছেড়ে যেতে চাইছো?
রাজা আদিত্যঃ দেখুন আমরা কখনই অস্বিকার করিনি যে আপনি আমাদের জন্য কিছু করেননি। যথেষ্ট করেছেন। কিন্তু ব্যার্থতাও কম নয়। মানুষ ভালোবাসা পায়, কিন্তু আমরা পাই না। মহারণী অদ্রীতা তম্রিশা তৃষা আমাদের কথা দিয়েছে তাকে আমরা মহারানী হিসেবে মেনে নিলে তিনি আমাদের ভালোবাসা দিবেন।
মহারাজ রনিঃ বাহ বাহ। আদিক্ষ্যেতা তামাশা তৃষাকে আপনারা অলরেডি মহারানী বানিয়েই ফেলেছেন, তো বসে আছেন কেনো? চলে যান আদিক্ষ্যেতা তামাশা তৃষার কাছে।
রানী অধরাঃ জ্বি। আমরা চলে যাচ্ছি। আপনি ভালো থাকবেন।
এরপর এক এক করে সব রাজারা মহারাজের দরবার থেকে বেরিয়ে যায়। রাজা কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থেকে রুমে চলে যায়। রুমে গিয়ে এক প্রজাকে দিয়ে খবর পাঠায় ভূত ভূতজ্ঞানী তাহমিদকে। মহারাজ রনি তাহমিদকে খুব সম্মান করে। কোনরকম সমস্যার পরলেই ভূতজ্ঞানী তাহমিদকে সস্মানে ডেকে নিয়ে আসে। পৃথিবীতে বেচে থাকাকালিন সময়েও তাহমিদ রনিকে অনেকভাবে হেল্প করেছে।
ঐদিকে ভালোবাসা পাবার আশায় রাজা আদিত্য, অনুপ, নাজমুল, রানী অধরা সহ অন্যরাজারা বিভিন্ন রকমের মিষ্টি, হরেক রঙের ফূল নিয়ে মহারানী তৃষার কাছে আসে। তৃষা আগেই জানতো এরা আসবে। তৃষাও তার দরবার নানান রঙ এর ফুল দিয়ে সাজিয়েছে। তৃষা তাদের সাদরে গ্রহন করে নেন।
রানী অধরাঃ মহারানী তৃষা আমরা আপনার সান্নিধ্য পেয়ে ধন্য। আশাকরি খুব দ্রুত আমরা আমাদের ভালোবাসা পেয়ে যাবো।
মহারানী তৃষাঃ অবশ্যই আপনাদের মনের আশা পূরন করা হবে। চলুন আমার আতিথিয়েতা গ্রহন করবেন আপনারা।
এরপর সবাই তৃষার মুখোরুচক খাবারের আতিথেয়েতা গ্রহন করে। এরমধ্যে বেষ্ট ছিলো কচুর ভর্তা, তৃষা সেটা নিজ হাতে রান্না করেছে। খাবার দবার শেষ করে যে যার মত করে যার যার রাজ্যে ফিরে আসে। এবং তারা সবাই মহাখুশি যে ভ্যালেন্টাইনের আগেই ভালাবাসা বা সঙ্গী পেয়ে যাবে।
অন্যদিকে চিন্তিত মহারাজ রনি। তার এতোদিনের কষ্ট পরিশ্রমে গড়া সম্রাজ্য ভেংগে গেলো। এক পাজী, বদ মহিলার জন্য। এই মহিলা আসলে কি চায়? ভাবছে আনমনে রনি। ঠিক এই সময় এক প্রজা এসে খবর দেয় যে ভূতজ্ঞানী তাহমিদ এসেছেন। মহারাজ রনি নিজে যায় ভূতজ্ঞানী তাহমিদ এর কাছে। তাকে নিজে আবার তার নিজের রুমে নিয়ে আসেন।
ভূতজ্ঞানী তাহমিদঃ কোন সমস্যা রনি?
মহারাজ রনিঃ অনেক সমস্যা দাদা।
ভূতজ্ঞানী তাহমিদঃ কি সমস্যা বল?
মহারাজ রনিঃ অন্য রাজ্যের রাজাগন আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছেন। তাদের দাবি তাদের ভালোবাসা দেবার এবং পাবার ব্যাবস্থা করে দিতে হবে।
ভূতজ্ঞানী তাহমিদঃ দিস না কেন তাহলে ব্যাবস্থা করে?
মহারাজ রনিঃ দাদা কি যে বলো। ভালোবাসা কি ব্যাবস্থা করে দেওয়া যায়? এটা হয়ে যায়।
তাহমিদঃ বাহ! ভালো বলেছিস তো। তাহলে এক কাজ কর। তুইই বোঝা।
মহারাজ রনিঃ এভাবে বোঝাবুঝি করে হবে না।
তাহমিদ আর রনির কথা মাঝে হটাত হৈচৈ এর শব্দ শুনতে পায়। জানালার পাশে গিয়ে দেখে তার রাজ্যের প্রজাগন ভালোবাসা চাই, ভালোবাসা দিতে হবে, এই বলে স্লোগান দিচ্ছে।
মহারাজ রনিঃ দেখলে দেখলে পাগল গুলো কি করছে?
ভূতজ্ঞানী তাহমিদঃ শোন, তুই গিয়ে ওদের সামনে বল যে আগামী পরশুর মধ্যে তারা সবাই ভালোবাসা পেয়ে যাবে। প্রত্যেকে।
মহারাজ রনিঃ কি বলছো এই সব। আমি কিভাবে তারপর ম্যানেজ করে দিবো? আমি আমার প্রজাদের সাথে মিথ্যে বলি না।
ভূতজ্ঞানী তাহমিদঃ এতোবেশি বুঝিস কেন? যেটা বলছি সেটা কর।
মহারাজ রনি তার প্রজাদের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। এরপর ভূতপ্রজাদের উদ্যেশ্যে বলে যে দুই দিনের মধ্যে সে সকলকে ভালোবাসা দিবে। রাজার আশ্বাসে আশ্বস্ত হয়ে প্রজারা স্লোগান থামিয়ে ফিরে যায়।
রনি ফিরে আসলে তাহমিদ তাকে জানায় যে আগামীকালকের মধ্যে প্রত্যেক প্রজার কাছ থেকে ভূতডাটা নিতে। সে ভূতডাটায় তাদের প্রত্যেকের পছন্দ অপছন্দও উল্লেখ থাকতে হবে। এরপর তাদের ডাটা দেখে ম্যাচিং করিয়ে একজন পুরুষ এর সাথে একজন নাড়ী ভূতের বিয়ের ব্যাবস্থা কর। ব্যাস হয়ে গেলো।
মহারাজ রনিঃ বাহ! ব্যাপক আইডিয়া দিলে দাদা। আমি আজই সব ব্যাবস্থা নিচ্ছি।
তাহমিদ চলে যায়। দুইদিনের মধ্যে সব ভূত ডাটা সংগ্রহ করে এরপর এদের মধ্যে বিভিন্ন ম্যাচিং খুজে একজনের সাথে আরেকজনের বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। সবাই খুশি।
ইতিমধ্যে এই খবর পৌছে গেছে সেই সকল রাজাদের কাছে যারা কিনা মহারাজ রনিকে ফেলে মহারানী তৃষার কাছে চলে গিয়েছিলো। তারা খবর শোনার সাথে সাথেই তৃষার কাছে আসে।
রাজা আদিত্যঃ মহারানী। আমরা যে আশায় আপনার কাছে এসেছিলাম তার কি ব্যবস্থা হলো?
মহারানী তৃষাঃ সব ব্যাবস্থা করছি। একটূ ধৈর্‍্য ধরুন।
রানী অধরাঃ কোন ধৈর্‍্য ধরাধরির মধ্যে আমি নেই। আগামীকালকের মধ্যে আমরা ভালোবাসা না পেলে পূনরায় আমরা মহারাজ রনির কাছে ফিরে যাবো।
রাজা অনুপঃ আমি তো বলি আজই চলে যাই।
রাজা নাজমুলঃ নাহ, আরেকদিন সময় দিলাম। নাহলে ফিরে যাবো।
মহারানী তৃষাঃ তোমরা তো দেখি বড়ই অকৃতজ্ঞ ভূত। স্বার্থের জন্য সব করতে পারো। আচ্ছা যাও আগামীকাল রাতে সবাই আসবে। সবাইকে ভালোবাসা দেওয়া হবে।
এরপর সবাই চলে যায়। পেছন থেকে সুন্দরী পড়ীদের রানী পড়ী তৃষার কাছে এসে বলে
রানী পড়ীঃ এতো টেনশন নিচ্ছো কেন বনু? আমি আছিতো।
মহারানী তৃষাঃ হ্যা। একটু বুদ্ধি দাওতো বনু।
রানী পড়ীঃ শোন বনু। তোমার আর আমার রাজ্যের যেসকল ভূত ভুতুরা রয়েছে তাদের সাথে ওদের রাজের ভুত ভূতুদের বিয়ে দিয়ে দেই।
মহারানী তৃষাঃ নাহ নাহ। ঐ খাটাশ রনিটা বলবে ওকে আমি কপি করেছি। সেটা হতে পারে না।
রানী পড়ীঃ ধুর বোকা মেয়ে। ওকে আমরা কপি করবো কেন? শুনো পাগলীটা। আমরা আমাদের প্রজাদের সাজিয়ে গুজিয়ে ওদের সামনে প্রেসেন্ট করবো। ওরা আমাদের প্রজাদের দেখে মুগ্ধ হবে। এরপর তারা পছন্দ মত বাছাই করে নিবে।
মহারানী তৃষাঃ ওয়াও বনু ওয়াও। তোর মাথায় যে এতো বুদ্ধি কোথা থেকে আসে সেটা বুঝিনা।
রানী পড়িঃ আমি কি সব ব্যাবস্থা নেওয়া শুরু করবো?
মহারানী তৃষাঃ আবার জিগায় দেহি। যাহ সব ব্যাবস্থা লো।
রানী পড়িঃ হাহাহাহাহাহাহাহাহা।
রানী পড়ি সব ধরনের ব্যাবস্থা নেয়। সকল ভূত ভুতুদের সাজিয়ে গুছিয়ে পরিপাটি করে রাখে। রাত হতেই চলে আসে রানী অধরা সহ বাকি রাজা ও তাদের ভূতপ্রজারা। মহারানী তৃষার এই আয়োজন দেখে, শুনে, বুঝে মুগ্ধ হয় তারা। ভালোবাসা পছন্দ মত বেছে নিতে পারবে। যেটা মহারাহ রনির সাথে থাকলে কখনই সম্ভব হতো না। কি একটা ঝুলিয়ে দিতো কে জানে।
সবাই লাইন ধরে যে যার মত বেছে নিচ্ছে। এরমধ্যে একজন ভুতু আছে যে কিনা সবচেয়ে সুন্দরী ভূতু। নাম হিয়া। তাকে দেখেই প্রায় জ্ঞ্যান হারিয়ে ফেলে অনুপ আর আদিত্য। জ্ঞ্যান ফিরিলে এদের মধ্যে প্রায় মারামারি শুরু হয় হিয়াকে নিয়ে। একসময় এই মারামারি দুই রাজ্যের মধ্যে সেখানে যুদ্ধের পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। সব আয়োজন লন্ডভন্ড হয়ে যায়। যে যার মত ছুটে পালায়।

মহারানী তৃষাঃ কি হলো এটা? এর জন্যেই বলে মেয়ে মানুষের বুদ্ধি শুনতে নেই।
রানী পড়িঃ আরে বাবা! এখন আমার দোষ? আমি কি জানতাম ওরা একজন দিয়ে দুইজনে কারাকারি করবে?
মহারানী তৃষাঃ এখন কি করা যায় সেটা বল?
রানী পড়িঃ আমি কি জানি? যাও কোন পুরুষের কাছ থেকে বুদ্ধি নিয়ে আসো।
মহারানী তৃষাঃ ঠিক। তুই এখনি যাবি পৃথিবীতে। খুজে বের করবি একজন রোমান্টিক পুরুষকে। তারপর ধরে নিয়ে আসবি। সেই বুদ্ধি বাতিয়ে দিবে যে কি কি করতে হবে।
রানী পড়ী মহারানী তৃষার আদেশ মত নিজেই পৃথিবীতে আসে। দূর্ভাগ্য বসত সে আসে ধানমন্ডির রবিন্দ্র সরবরে। এখানে প্রায় মিনিট ২০ হাটাহাটি করেও পছন্দমত কোন রোমান্টিক পুরুষ খুজে পায় না। আনমনে হটাত বাতাসে উড়ে অন্য কোথাও যাওয়া শুরু করি পড়ি। এরপর হটাত খেয়াল করে লেকের উপর একটা ডিঙ্গি দুলছে। হয়তো ডুবে যাচ্ছে ভেবে নিচে নেমে কাছে আসে। নিচে নেমে তো অবাক, একটা ছেলে আর একটা মেয়ে ডিঙ্গিতে। ছি ছি ছি ছি ছি। এভাবে মেয়েটাকে চুমু খাচ্ছে। মনে হচ্ছে মেয়েটার ঠোট দুটো আজ ছিঁড়ে ফেলবে এই বদ ছেলেটা। যাই ওকে একটু স্বায়েস্তা করে আসি।
স্বায়েস্তা করার জন্য ডিঙ্গি উল্টিয়ে দেবার সিদ্ধান্ত নেয় পড়ি। যেই উল্টিয়ে দিতে যাবে তখন মনে পরলো আরে এই তো রোমান্টিক পুরুষ। দেখতে যেমন কিউট ঠিক তেমনে বেশ রোমান্টিক সেটাতো বোঝাই গেলো। পড়ি সাথে সাথে ডিঙ্গি উল্টিয়ে দিয়ে ছেলেটিকে তুলে নিয়ে আসে। তুলে নিয়ে হাজির হয় মহারানী তৃষার কাছে।

অন্যদিকে প্রথম কয়েকদিন মহারাজ রনির রাজ্যের সব ঠিকঠাক থাকলেও কিছুদিন পরেই শুরু হয় ঝামেলা। স্বামী স্ত্রীর মধ্যকার মিল হয় না কোনভাবেই। একজন আরেকজনকে জেনো সহ্য করতেই পারছে না। তাই প্রতিদিন এখন এই ভূত দম্পতীগুলোর মধ্যে কলহ বেড়েই চলছে। তাই সবাই মিলে আবার মহারাজ রনির রাজদরবারের সামনে এসে মিছিল। মুক্তি চাই, দিতে হবে। রনি আবার ভূতাজ্ঞিনি তাহমিদকে খবর দিয়ে আনলো। তাহমিদ নিজেও বুঝছিলো না এখন কি করতে হবে।
রনিঃ কি করবো দাদা? ব্যাপক মুশকিলে পরে গেলাম।
তাহমিদঃ আমিও বুঝতেছিনা কি করবো?
রনিঃ কি করবো? এক কাজ করি?
তাহমিদঃ কি?
রনিঃ অর্নবকে দিয়ে পৃথিবী থেকে দুইজন মানুষ ধরে আনি। এরা এদের শিক্ষা দিবে যে কিভাবে সংসার করতে হয়?
তাহমিদঃ আচ্ছা কর।
রনি তারবন্ধু ভবঘুরে অর্নব ভূতকে ডেকে পাঠায়। তারপর অর্নবকে সব বুঝিয়ে দেয় যে কিভাবে একজোরা ধরে নিয়ে আসতে হবে। অর্নব রনির কথামত পৃথিবীতে আসে। এসে শুনতে পায় যে তার বন্ধু হৃদয় মারা গিয়েছে। মশার কামড়ে মারা গিয়েছে। এটাও কি সম্ভব? কিভাবে কি হইলো জানতে এবং হৃদয়ের আত্তাকে তার সাথে নিয়ে যাওয়ার জন্য হৃদয়ের বাড়িতে গেলো। অনেক খোজাখুজি করে হৃদয়ের আত্তাকে বের করলো? কাদছিলো বেচারা।
অর্নবঃ কিরে ব্যাটা কাদছিস কেন?
হৃদয় ভূভূভূভূত্তত্তত্তত্তত্তত বলে চিৎকার দিয়ে জ্ঞ্যান হারিয়ে পরে গেলো। অর্নব হৃদয়ের দুই গালে ঠাস করে দুই চটকনা মেরে জ্ঞ্যান ফিরিয়ে আনলো।
হৃদয়ঃ তুই না মরে গেছিস? তুই আবার আসলি কিভাবে?
অর্নবঃ ন্যাকা। আমি মরে গেছি আর তুই বুঝি বেচে আছিস?
হৃদয়ঃ আমি কি মরে গেছি?
অর্নবঃ হ্যা। মরে গেছেন। তাও আবার মশার কামড়ে। আচ্ছা মশার কামড়ে মানুষ মরে কিভাবে?
হৃদয়ঃ আরে বলিস না। পরতেছিলা। হটাত দেখি দুটো মশা কিছুক্ষণ একসাথে থেকে দুইদিকে হাটা ধরলো। আমি ভাবলাম হয়তো ঝগড়া করে ব্রেকাপ করেছে। তাই একসাথে আবার এনে বই এর উপর রাখলাম। আবার দুইদিকে ছুটছে। আবার একসাথে করলাম। এইভাবে কয়েকবার করার পর একসময় আমার হাতে চাপা পরে মারা গেলো দুটি মশা। আরেকটি উড়ে চলে গেলো। এরকিছুক্ষন পর একঝাক মশা উড়ে এলো। এবং সেখান থেকে একটি মশা আমার কানের কাছে এসে বললো আমি নাকি কিউপিড একজনকে মেরে ফেললাম।
অর্নবঃ এটা আবার কি দেবতা?
হৃদয়ঃ কিউপিড মশার আকৃতি নিয়ে থাকতো। তারা স্বামী স্ত্রী। এরাই প্রতি ভ্যালেন্টাইন ডে তে উড়ে উড়ে দেখে পছন্দ অনুযায়ী জুটিকে পার্থনা করে কামড়ে দিতো আর সেই জুটির মধ্যে ভালোবাসা স্মৃষ্টি হয়ে যেত। কিন্তু এখন আমি তো একজন কে মেরে ফেলেছি। তাই সে অন্য সব মশা এনে আমাকে কামড়ে দেয়। লক্ষাধিক মশার আক্রমন মনে হয় আমি সইতে পারিনি। তাই অক্কা পেয়েছি।
অর্নবঃ যাক ভালো হইছে। এখন থেকে তুই আমার সাথে আমাদের ভূত রাজ্য #কলংকপূরে থাকবি। ফাইনাল।
হৃদয়ঃ চল। তবে যাবার আগে শেষবার আমার লাশটাকে দেখে যাই।
হৃদয় আর অর্নব যায় লাশের কাছে। কত্ত মানুষ হৃদয়ের জন্য কান্নাকাটি করছে। এসব দেখে হৃদয় আবার কান্না শুরু করে। অনেক মানুষের ভিড়ে অর্নবের চোখ পড়ে একটি জুটির উপর। একটি মেয়ে কাদছে আর তার জামাই রুমাল দিয়ে চোখ মুছে দিচ্ছে। আহ কি ভালোবাসা।
অর্নবঃ এই হৃদয় এদের চিনিস? এদের আমার সাথে নিয়ে যাবো। আমাদের রাজ্যে একটা সমস্যা হচ্ছে। এরাই পারবে সমাধান দিতে।
হৃদয়ঃ এটা ঝুম, আমার বান্ধুবী। আর ওর জামাই মামুন ভাই।
অর্নবঃ হবে। চল।
অর্নব ঝুম আর মামুনকে সিস্টেমে তার সাথে নিয়ে যায়। ফিরে মহারাজ রনির কাছে।
ঐদিকে পড়ি যে ছেলেকে ধরে নিয়ে আসে তার নাম জয়। জয়কে মহারানী তৃষা সব কিছু খুলে বলে। এরপর জয়কে বলে এর সমাধান দিতে।
জয়ঃ এরসমাধান এদের মধ্যে ভালোবাসা তৈরি করতে হবে। এরা ভূত জিবনে এসে হয়তো ভালোবাসা দেখেনি ভুতদের মধ্যে, হয়তো তাই তারা বুঝছে না কিভাবে ভালোবাসতে হবে।
রানী পড়িঃ বাহ! কি সুন্দর উক্তি।
মহারানী তৃষাঃ তাহলে এখন কি করতে হবে সেটা বলুন?
জয়ঃ আপনাদের ভূত জগতের এমন কোন পুরুষ আর মহিলার ভালোবাসা তৈরি করতে হবে যাদের ভালোবাসা দেখে এরা শিখবে। এমন জুড়ি হতে হবে যাদেরকে বাকি সবাই ফলো করে।
এরমধ্যে সেখানে এসে হাজির হয় রানী অধরা।
রানী অধরাঃ মহারানী তৃষা একটা ঝামেলা হয়ে গেছে। অনুপ আর আদিত্য এক হয়ে পিশাচরানী নওমীর সাথে হাত মিলিয়েছে। ওরা এখন আপনার এবং মহারাজ রনির রাজ্য আক্রমন করবে।
মহারানী তৃষাঃ এখন উপায়? কবে করবে?
রানী অধরাঃ আগামীকাল ভ্যালেন্টাইন ডে। সেদিনই করবে।
মহারানী তৃষাঃ কত ইচ্ছে ছিলো এইবার ভ্যালেন্টাইন ডে ঐ ভালোবাসা দিবসে ভূতর‍্যাজ্যে থাকবে আনন্দ। ফুর্তি আর খুশির জোয়ার, সবাই একে অপরকে ভালোবাসবে। আর এখন কিনা যুদ্ধ করতে হবে?
রানী পড়িঃ এখন কি করা যায়? যেহেতু মহারাজ রনির রাজ্যেও আক্রমন করবে তাহলে আমাদের উচিৎ তার সাথে হাত মেলানো। তাহলে আমাদের শক্তি বৃদ্ধি হবে। আমরা সহজেই জয়লাভ করতে পারবো।
মহারানী তৃষাঃ অসম্ভব। ঐ খাটাশের সাথে এক হয়? কখনো না। আমি একাই যুদ্ধ করবো।

অলরেডি মহারাজ রনির কাছেও যুদ্ধের বার্তা চলে এসেছে। সেই খুব টেনশনে আছে এটি নিয়ে। আবার বুদ্ধি চায় তার প্রিয় বড়ভাই তাহমিদ এর কাছে। তাহমিদ তৃষার সাথে এক হয়ে কাজ করতে বলে। কিন্তু এখানেও রনি তৃষার মত আপত্তি জানায় এক হয়ে কাজ করার জন্য। সে নিজে একাই যুদ্ধ করবে বলে ঘোষনা দেয়।
পরের দিন, ১৪ ফেব্রুয়ারী। দুপুর ১২ টার দিকে সবাই হাজির হয় পলাশির কুরুক্ষেত্রে। এখানেই যুদ্ধ হবে। পাশাপাশি অবস্থান করছে রনি আর তৃষা ভূতসৈন্যদল নিয়ে। আর তাদের ঠিক ঐপাড়ে অবস্থান করছে নওমী, আদিত্য, অনুপের দল।
হৃদয় ভূত জগতে একেবাড়েই নতুন। তারমধ্যে মশার কামড়ের ব্যাথা এখনো কমেনি। যুদ্ধ দেখে খুব ভয় পাচ্ছে। তারপাশের ঝুম, মামুন আর অর্নব। হটাত হৃদয় চিৎকার দিয়ে উঠে।
হৃদয়ঃ মশা মশা মশা।
ঝুমঃ মশা মশা করে চিৎকার করছিস কেন? মশা দেখে এতো ভয়?
হৃদয়ঃ এই মশাই আমাকে খুন করেছে আর তুই বলছিস মশা দেখে এতো ভয় পাওয়ার কি আছে। মর হারামী।
ঝুমঃ মরেছিই তো। তোর জন্য কাদতে কাদতে আমি স্ট্রোক করে মরে গেলাম। আমার মৃত্যু দেখে আমার বউ পাগল জামাই মামুনও স্ট্রোক করে মরে গেলো। এখন তুই আবার বলছিস মরতে?
হৃদয় পেছন দিকে দৌড় দেয়। মশাটিও ওর পেছনে আসতে থাকে। কাছে এসে কানে পাশে গিয়ে মশা বলে
মশাঃ আমি কি কিউপিড। ভয় পেও না। যদিও আমি আমার মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে এসেছিলাম। কিন্তু তোমার কথা শুনে আমার ভূল ভেংগেছে। তুমি ইচ্ছে করে আমাকে মারোনি। আচ্ছা এখন কাজের কথাই আসি। এই যুদ্ধ থামাতে হলে এখন ভালোবাসার প্রয়োজন। মহারাজ রনি এবং মহারানী তৃষার মধ্যে ভালোবাসা সৃষ্টি হলেই এই যুদ্ধ শান্তিতে পরিনত হবে।
হৃদয়ঃ কিন্তু এই দুজন তো একজন আরেকজনকে দেখতেই পারে না, আবার ভালোবাসা ?
কিউপিডঃ সেটার ব্যাবস্থা আমি করছি।
কিউপিড উড়ে গিয়ে মহারাজ রনির ঠোটে চুমু খায়, এরপর সেখান থেকে আবার উড়ে গিয়ে মহারানী তৃষার ঠোটে চুমু খায়। মহারাজ রনি এবং মহারানী তৃষা কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে। এরপর বাংলা সিনেমার মত দুজন দুজনের দিকে দৌড় আসে। কাছাকাছি এসে আবার থেমে যায়। মহারানী তৃষা একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে মহারাজ রনির বুকে ঝাপিয়ে পরে। মহারাজ রনি শক্তকরে চেপে ধরে মহারানী তৃষাকে। কপালে চুমু খায়।
এই সুন্দর দৃশ্য দেখে ভূত রাজ্যের বাকিরা মোহিত হয়। তাদের মনের ভিতর সুপ্ত ভালোভাসা আবার জেগে উঠে। বুঝতে পারে ভালোবাসা কি। সবাই অস্ত্র ফেলে দেয়। রাজা অনুপ, অদিত্য, নাজমুল ভুল বুঝতে পারে। যুদ্ধ থেকে সরে আসে। কিন্তু নওমী যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চায়। এরপর সবাই একহয়ে পিশাচিনি নওমী আর তার দলকে তাড়া দেয়। ভয় পেয়ে পালিয়ে যায়।
তাহমিদ আর পড়ি এসে মহারাজ রনি এবং মহারানী তৃষার বিয়ের ব্যাবস্থা করে। দুই রাজ্য সহ সকল রাজ্য এক হয়ে যায়।
সবাই মিলে খুব দ্রুত পুরো রাজ্য বর্নীল সাজে সাজায়। আজ মহারাজ এবং মহারানীর বিয়ে, সাথে ভালোবাসা দিবস। বিশাল আয়োজন। রাত ৮টায় বিশাল আয়োজন করা হয়। সেখানে বিয়ে হয়, হৈ হুল্লোড় হয়, ফুর্তি হয়। ভালোবাসা ভূত ভুতুরা পছন্দের ভুত ভূতুদের প্রেম নিবেদন করে। দুজন দুজনকে ভালোবাসতে পারবে মনে করলে তাড়া প্রেমের শপথে আবদ্ধ হয়। এভাবেই শুরু হয় ভূত নগর কলংকপুরে ভালোবাসা দিবসের উৎসব। সেই থেকে চলে আসছে, আজ অবধি চলছে।

ধন্যবাদ। সম্পুর্ন গল্পটিই কাল্পনিক। ভূল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো। এবং সবাইকে আমার পক্ষ থেকে ভালোবাসা দিবসের শুভেচ্ছা।

রবিবার, ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

ভৌতিক প্রেম প্রস্তাব


#ভৌতিক_প্রেম_প্রস্তাব
(অনুগল্প)
লেখাঃ MD Asadur Rahman – Shipon
কথা ছিল শীতের রাতে পায়ের উপর চাদর টেনে দেবো,
কথা ছিল ঝড়ের রাতে সজোরে আঁকড়ে ধরবো,
কথা সেসব কিছুই রাখা হল না,
কারণ আজ সে কথা অন্য কাউকে দিয়েছি ।
গত বসন্তে তোমার জন্য শহর খুঁজে পলাশ এনেছিলাম,
এই বসন্তে সব শুকনো ম্রিয়মান ।
ভেবেছিলাম চাতক পাখির মত মেঘের দিকে চেয়ে
একফোঁটা বৃষ্টির অপেক্ষায়
এমন এক গান লিখবো
যা শুধু তুমি শুনবে।
কিন্তু আজ কেন জানি গান লিখছি অন্যকারও জন্য ।
একযুগ ধরে অন্ধকারের হাত ধরে
আমি আর তুমি শুধু দেখলাম ।
কবিতা সাথে এক মগ চা না হলে কেমন জেনো জমে উঠে না। ফেসবুকে টুকটাক লেখালেখি করি। গুটিকয়েক ভক্তও জুটে গিয়েছে কপালে। তাদের জন্যেই এখন পর্যন্ত লেখালেখিটা চলছে।
কবিতা, চা আর ফেসবুক। তিনটিই একসাথে চালিয়ে যাচ্ছি। ফেসবুকে ম্যাসেজের রিপ্লে আর চায়ের কাপে চুমুক। ম্যাসেজের রিপ্লে দিতে হটাত খেয়াল করি একটি ম্যাসেজ নিচে আনরিড অবস্থায় পরে আছে। মায়াবিনী নন্দিনী নামের একটা ফেসবুক আইডি থেকে, ভাইয়া আপনার সাথে একটু কথা ছিলো।
আমি রিপ্লে দিলাম, জ্বি বলুন। ততক্ষনে অপরিচিতা নন্দিনী অফলাইনে চলে গিয়েছে। আমি কিছুক্ষণ বন্ধুদের সাথে দূরবার্তার মাধ্যমে আড্ডা দিয়ে বিছানায় এসে ঘুমিয়ে পরি। ঘুম ভাংগে সন্ধ্যার বেশ পরে। ফ্রেস হয়ে চা করে দুটো টোষ্ট বিস্কিট নিয়ে সন্ধ্যার নাস্তা সেরে ফেলি। তারপর পিসি ওপেন করি। একটা গল্প লিখবো। নিখাদ ভালোবাসার গল্প। ভূত টূত তো অনেক হলো। লিখা শুরু করলাম। ওহ। এর আগে ব্যাক স্ক্রিনে ইউটিউবে আমার পছন্দের গান এবং ফেসবুকটা ওপেন ছিলো। লিখার মাঝখানে খেয়াল করলাম মায়াবিনী নন্দিনী টেক্সট করেছেন।
মায়াবিনী নন্দিনী ঃ ভাইয়া আপনার নাম্বারটি দেওয়া যাবে। ডিস্টার্ব করবো না। যাস্ট একবার কথা বলে কেটে দিবো। আর ফোন করবো না।
আমি রিপ্লেতে আমার নাম্বারটি দিয়ে দিলাম। তার আগে মায়াবিনী নন্দিনীর আইডীতে ঢুকলাম। প্রোফাইল চেক করলাম যে কোন ভাবে পরিচিত কিনা বা কে হতে পারে সেটা জানার জন্য। নাহ। কিছুই পেলাম না। নিজেকে নিজে কয়েকবার প্রশ্ন করলাম কে হতে পারে? কি বলতে চায়? এমন করে কেউ তো আগে কখনো কিছু বলতে চায়নি বা এভাবে ফোন নাম্বারও চায়নি।
সে আমার রিপ্লে সিন করেছে। কিন্তু সে আর রিপ্লে করছে না। ভাবলাম হয়তো ফোন করবে। অধীর আগ্রহ নিয়ে ফোনের অপেক্ষায় কিছুক্ষণ বসে রইলাম। লিখা আর কিছু মাথায় আসছিলো না। উঠে গিয়ে রান্নায় মোনযোগ দিলাম। নিজের রান্না নিজেকেই করতে হয়। রান্না বান্না শেষ করে আবার লেখায় ফিরে আসলাম ৩ পাতা লেখা শেষে ৪ পাতায় যাবো তখন ফোন টা বেজে উঠলো। অপরিচিত একটি নাম্বার। বুঝে নিলাম মায়াবিনী নন্দিনী ফোন করেছে। কল রিসিভ করে
আমিঃ হ্যালো।
ওপার থেকে মিষ্টি কন্ঠেঃ হ্যালো। দুপুর ভাইয়া বলছেন ?
আমিঃ জ্বি। কে বলছেন?
ওপার থেকেঃ আমি অনন্যা।
আমিঃ কোন অনন্যা?
অনন্যাঃ আপনি কতজন অনন্যাকে চেনেন?
আমিঃ বেশ কয়েকটা।
অনন্যাঃ শুনি কে কে।
আমিঃ সরি।
অনন্যাঃ বললাম কোন কোন অনন্যা কে চেনেন?
আমিঃ দেখুন আমি আপনাকে চিনতে পারছি না। দয়াকরে আপনার পরিচয় দিন। আর পরিচয় ঠিক মত না দিতে চাইলে ফোন কেটে দিন। অযথা খেজুড়া আলাপ করার মত যথেষ্ট সময় আমার হাতে নেই।
অনন্যাঃ সরি ডিস্টার্ব করার জন্য। আমি অনন্যা, ফেসবুক আইডির নাম মায়াবিনী নন্দিনী। আচ্ছা ভাইয়া আপনি মনে হয় ব্যাস্ত। আমি পরে কোন একসময় ফোন দিবো। রাখি।
আমিঃ আরে না না। আগেই বললেই তো হতো যে আপনি মায়াবিনী নন্দিনী।
অনন্যাঃ আপনি কি আমার কলের অপেক্ষায় ছিলেন?
আমিঃ নাহ। এমন কেনো মনে হলো আপনার ?
অনন্যাঃ এই যে প্রথমে কিভাবে কথা বললেন তারপর মায়াবিনী নন্দিনী বলার পর স্বাভাবিক হলেন। তাই মনে হলো
আমিঃ নাহ! তেমন কিছু না। অযথা প্যাচাল আমার খুব একটা ভালো লাগে না।( মিথ্যে বললাম, আমি বেশির ভাগ সময়ই অযথা প্যাচাল পাড়ি)। আচ্ছা কি জেনো বলতে চাচ্ছিলেন আপনি।
অনন্যাঃ আমি যেটা বলতে চাচ্ছি সে কথাগুলোওতো অযথা।
আমিঃ মানে?
অনন্যাঃ মানে হচ্ছে। বলবো?
আমিঃ উফ! জ্বি বলুন।
অনন্যাঃ গতকাল ভোড়ের দিকে আমি একটা স্বপ্ন দেখেছি। অদ্ভুত একটা স্বপ্ন। আচ্ছা তার আগে আপনাকে বলে রাখি যে আমি আপনার লেখার অনেক বড় একজন ফ্যান। আপনার সব লেখাই আমার পড়া। কোন কোন লেখা কয়েক পড়া হয়েছে। #রোদেলা_কাব্য গল্পটা আমার পড়া এই পর্যন্ত ছোট গল্পের মধ্যে বেষ্ট। এরপর #একটি_মধ্যবিত্ত_ভৌতিক_গল্প এটিও অসাধারণ।
আমিঃ আপনি স্বপ্নে ফিরে আসুন। কি দেখলেন সেটি বলুন।
অনন্যাঃ জ্বি। আমি আমার রুমে সুয়ে আছি, কোল বালিশ জড়িয়ে। হটাত ঘুম ভেংগে গেলো। খেয়াল করলাম আমার রুম অসম্ভব সুন্দর গোলাপের সুঘ্রানে ভরে গেছে। প্রান ভরে নিঃশ্বাস নিলাম। অন্ধকার রুমে বা দিকের জানালার পাশে মৃদ আলো জ্বেলে উঠলো। ধোয়ার কুন্ডলী থেকে বেরিয়ে আসলো বিশালাকার এক লাল দৈত্য। আমি ভয়ে চিৎকার দেওয়ার চেষ্টা করলাম। কিন্তু জানেন কোন কাজই হলো না, গলা দিয়ে এক বিন্দু শব্দ বের হলো না। দৈত্য তার হাতের ঈশারায় আমাকে শুন্যে ভাসিয়ে নিয়ে এলো বাইরে। বাইরে হরেক রুমের ফুল দিয়ে একটি পালকি সাজানো। দৈত্য তার ভরাট কন্ঠে বললো আমাকে সেই পালকিতে চরে বসতে। আমি জবাবে বললাম, আমাকে পালকি করে কোথায় নিয়ে যাবেন? কোন উত্তর দিলো না। আমিও নড়ছি না। অবশেষে লাল দৈত্যটি আবার তার হাতের ঈশারায় আমাকে শুন্যে ভাসিয়ে নিয়ে পালকিতে বসালো। তারপর পালকিটি একা একা শুন্যে উড়তে লাগলো। পেছনে পেছনে দৈত্যটিও আছে। উকি দিয়ে দেখলাম আরকি।
আমিঃ তারপর পালকিটি কোথায় নিয়ে গেলো আপনাকে?
অনন্যাঃ প্লিজ আমাকে বলার সময় ডিস্টার্ব করবেন না। বলতে দিন।
আমিঃ আমি তো জানি কেউ কোন গল্প বলার সময় মাঝে মাঝে প্রশ্ন করতে হয়। তাতে এর ধারাবাহিকতা থাকে।
অনন্যাঃ আমি মোটেও গল্প বলছি না, আমি স্বপ্নে যা দেখেছি তাই বলছি। আর হ্যা, আমি সবার মত না। আমি আমার মত বলতে পছন্দ করি।
আমিঃ আচ্ছা ভাই সরি, আপনি বলুন।
অনন্যাঃ অন্ধকার কেটে ভোড়ের আলো ফুটে গেছে। আমি উকি দিয়ে নিচে তাকিয়ে দেখলাম মাঠা ঘাট, সবুজ গাছপালার উপর দিয়ে যাচ্ছি। নিশ্চয় এটা কোন গ্রাম। আমি বাইরে তাকিয়ে থাকলাম। প্রকৃতি দেখতে আমার ভালোই লাগছিলো। ভোড়ের গ্রাম বাংলা উপর থেকে দেখতে যে এতো সুন্দর সেটা আমার আগে জানাছিলো না।
আমিঃ যাক ভালোই, বিমান খরচ ছাড়া ফ্রিতে দেখে নিলেন।
অনন্যাঃ আবার?
আমিঃ অহ সরি।
অনন্যাঃ দূরে একটা বিশাল বাড়ি দেখা যাচ্ছে। পালকিটা ঠিক বাড়ির গেটের সামনে গিয়ে থামলো। পালকি থেকেই বরাবরের মত উকি দিয়ে দেখলাম বাড়িটিকে নানা রকম ফুল আর লাইট দিয়ে সাজানো হয়েছে। কিছুক্ষনের মধ্যেই কয়েকজন ফুলের ডালা নিয়ে আসে। আমাকে অতি আদরযত্নের সাথে পালকি থেকে নামায়। আমি অবাক হয়ে যাই। এদের মধ্যে আমার এবং আপনার আব্বু আম্মু সহ আমাদের দুজনের পরিবারের অনেকেই ছিলো।
আমি ঃ আপনি আমার বাবা মাকে কিভাবে চিনলেন? আপনি কি আমার পরিচিত?
অনন্যাঃ আচ্ছা আপনি এতো কথা বলেন কেনো? চুপ করে শুনুন।
আমিঃ জ্বি বলুন।
অনন্যাঃ আমাকে একটি রুমে নিয়ে গেলো। এরপর বউ এর সাজে আমাকে সাজানো হলো। জানেন অনেক সুন্দরী লাগছিলো আমাকে। আপনাকেও ।
আমিঃ আমিও ছিলাম আপনার স্বপ্নে?
অনন্যাঃ আপনি লাল একটি একটা শেরওয়ানী আর পাগড়ী পড়া ছিলেন। দেখতে কেমন জেনো ক্ষ্যাত ক্ষ্যাত লাগছিলো। তবুও মেনে নিলাম। যাক বিয়ে তো হচ্ছে আমার। সবাই হাজির। এর মধ্যে হটাত একটা কালো দৈত্য এসে হাজির। সে আমাকে বিয়ের আসর থেকে তুলে নিয়ে গেলো। আমি চিৎকার করতে থাকলাম। এরপর দেখি আম্মু এসে আমাকে জরিয়ে ধরে আছে। স্বপ্নটা এখানেই শেষ। এখন আপনি বলুন এর মানে কি?
আমিঃ এটা কি স্বপ্ন ছিল নাকি কোন গল্প? নাকি আজ প্রোপজাল ডে তে আপনি আমাকে প্রপোজ করছেন?
অনন্যাঃ দেখুন একটু বেশি এডভ্যান্স হবেন না। আমার বিএফ আছে। যাস্ট স্বপ্নটা দেখলাম তাই আস্ক করলাম।
আমিঃ আমাকেই নিয়ে দেখলেন কেনো?
অনন্যাঃ আজিব কথাবার্তা। আমি যদি জানতাম তাহলে কি এই ২৭ মিনিট ফোনের টাকা খরচ করে আপনার কাছে এর মানে জানতে চাইতাম?
আমিঃ ওহ আপনি এর মধ্যে দেখেও ফেলেছেন যে ২৭ মিনিট হয়ে গেছে।
অনন্যাঃ দেখেন আমিও অন্যান্য মেয়েদের মত কঞ্জুস টাইপের। নিজের টাকা খরচ করে বেশি কথা বলতে পারবো না। আমি কেনো এই রকম স্বপ্ন দেখলাম সেটা বলুন।
আমিঃ আপনি বলেছেন আপনি আমার প্রায় সব গল্প পরেছেন। আমার গল্প আপনার ভালো লাগে। আপনি সেখান থেকে নিজের মধ্যে আমাকে নিয়ে হয়তো ভেবেছেন। কোন এক ভাবার সময়ে কিছু সময়ের জন্য হয়তো আমাকে আপনার ভালো লেগেছলো। আমাকে নিয়ে হয়তো আপনি এমনটা কল্পনা করেছিলেন। তাই স্বপ্নে সেটাই দেখেছেন। আমরা জেগে থেকে যা ভাবি, করি, কল্পনা করি, দেখি তাই স্বপ্নে সিনেমার মত সামনে আসে।
অনন্যাঃ কালো দৈত্যটা তাহলে আমাকে নিয়ে গেলো কেনো?
আমিঃ কারন আমাদের মধ্যে বিয়ে সম্ভব নয়। আপনার বিএফ আছে, হয়তো সেই কালো দৈত্যটিই আপনার বিএফ।
অনন্যাঃ ওকে নিয়ে এভাবে বলবেন না। কষ্ট লাগে আমার।
আমিঃ হাহাহাহা। আপনি আসলেই কি চাচ্ছেন সেটা আপনি নিজেই জানেন না।
অনন্যাঃ এখন আমি কি করবো? আমার কেনো জেনো মনে হচ্ছে কালো দৈত্যটা না আসলেই ভালো হতো।
আমিঃ হাহাহাহাহা। শুনুন, আপনি আবেগে আছেন। আবেগ কে দূরে সরিয়ে ফেলে বিএফকে সময় দিন। সে আপনাকে যথেষ্ট পরিমান ভালোবাসে আর তাই কালো দৈত্য হয়ে এলোও সে এসে আপনাকে তার করে নিয়েছে।
অনন্যাঃ ধুরঃ তাহলে আমার স্বপ্নটা কি
আমিঃ আপনার স্বপ্নটা একটি ভৌতিক প্রেম প্রস্তাব।
অনন্যাঃ হাহাহাহা । দারুন নাম দিয়েছেন।
সেদিন অনন্যার সাথে আমার ১৯৭ মিনিট কথা হয়েছিলো। দিনটি ছিলো প্রপোজাল ডে। সারাদিনের চাপা একটি কষ্ট মনে ছিলো যে কেউ আমাকে প্রপোজ করলো না। দিনে শেষ সময়ে অনন্যার এই অদ্ভুদ এই ভৌতিক প্রেম প্রস্তাব আমার মনের কষ্টটা কিছুটা হলেও কমিয়ে দেয়। সেই দিনের পর থেকে আজ পর্যন্ত অনন্যার সাথে আর কথা হয়নি।
সমাপ্ত।