শুক্রবার, ২৮ জুন, ২০১৯

আমিই বাংলাদেশ, আমার ডাক নাম লজ্জ্বা।




#আমিই_বাংলাদেশ_আমার_ডাক_নাম_লজ্জ্বা।
লেখাঃ MD Asadur Rahman - Shipon

স্নিগ্ধ সন্ধ্যার ঝিরিঝিরি বাতাসে আমি আর তুমি বীচের পাশ দিয়ে হাটছি। হাতে হাত রেখে, খালি পায়ে। আমি তোমায় প্রশ্ন করলাম.
দুপুরঃ আচ্ছা আমরা কি দুজনে পাশাপাশি নাকি এটাও কল্পনা?
রোদেলাঃ হাহাহাহা। যার বসবাস তোমার কল্পনায়, তাকে সত্যি করে পেতে চাওয়াটা কি ঠিক?
দুপুরঃ তাহলে এতো বাস্তব অনুভূতি কেনো?  তোমার স্পর্শ, তোমার অস্তিত্ব,  তোমার শরীরের সুঘ্রা সব কিছুই তো জীবন্ত মনে হচ্ছে। কল্পনা হয় কিভাবে?
রোদেলাঃ কারন তুমি আমাকে অনেক বেশি ভালোবাসো। তাই
দুপুর ঃ আচ্ছা রোদেলা আমি কি ঘুমিয়ে আছি নাকি কোথাও জ্ঞ্যান হারিয়ে পরে আছি?
রোদেলাঃ সেটাতো আমি জানি না।
দুপুর ঃ তুমি আমার হাতটা শক্তকরে ধরো। যতখন না ঘুম ভাংগে ততখন  তোমায় পাশে রেখে হেটে চলি।
রোদেলার সেই মন ভোলানো মায়াবী মিষ্টি হাসি। অতঃপর হাত ধরে, রোদেলা তার মাথা দুপুরের কাধে চাপিয়ে বীচের পাশ দিয়ে হাটা শুরু করে। হেটে হেটে সামনের দিকে যায়।
হটাত তুমুল চিৎকার এর শব্দে ঘুম ভেংগে যায় দুপুরের। বিছানায় বসে চোখ ঢলতে ঢলতে খেয়াল করে পাশের রুমে কারা জেনো চিৎকার করছে। উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেয়।
পাশের রুমে একে অপরের সাথে জোরে জোরে চিৎকার করছে।
আমি গিয়ে চেচিয়ে বলি
দুপুরঃ এই, এই কে তোমরা?  কি চাও এখানে?  কত সুন্দর একটা স্বপ্ন দেখছিলাম। সব নষ্ট করে দিলে।
সবাই পেছন ফিরে আমার দিকে তাকায়। শ কি বিভৎস তাদের দেহ,  রক্তাক্ত,  মুখ একজনেরও চেনা যাচ্ছে না। একজন তো প্রায় অংগার।
একজনঃ আপনি স্বপ্ন দেখছিলেন, রোদেলাকে নিয়ে। আচ্ছা আমার স্বপ্ন কোথায়?  আমি কেন স্বপ্ন দেখতে পারি না?  কেন আমার পুরো শরীরে আগুনে পোড়ার ব্যাথা।
আরেকজন ঃ আমিও তো স্বপ্ন দেখেছিলাম অনেক বড় হবো, গান গাইবো, কবিতা লিখবো, সবাই আমাকে চিনবে।  তাহলে কেন লম্পটের দলেরা নিমিষেই আমার স্বপ্নগুলো ধুলিষ্যাৎ করে দিলো?
পেছন থেকে ব্যাথায় কোকরানো এক পিচ্চি ছেলে খুড়িয়ে খুড়িয়ে সামনে আসে।
ছেলেটিঃ দাদা সত্যি আমি চুরি করে নাই। আমি চুরি করি নাই। বারবার বলছি, কেউ শুনে নাই। পানি খাইতে চাইছিলাম পানিও দেয় নাই। মারতে মারতে মাইরাই ফেলাইছে আমাকে।
দুপুরঃ আমি কিছু বুঝতে পারছি না তোমরা কারা। এখানে কেনো এসেছো?
@ চিনছো না?
আমি নুসরাত। পাস থেকে আরেকজন, আমি বিষ্যজিৎ। এভাবে পর্যায়ক্রমে ঃ আমি তনু, আমি মুক্তমনা অভিজিৎ, আমি প্রকাশক দিপন, আমি রনি, আমি মিম, আমি কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা তারিক, আমি কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা আরিফ যার লাশ পেয়েছিলে বুড়িগঙ্গায়, আমি ছাত্রদল নেতা নুরু, আমি একরামুল আমি আমার মেয়ের সাথে ফোনে কথা বলার সময় ক্রসফায়ার নামে বিচারবহির্ভূত ভাবে হত্যা করে আমায়। আমি বাস চাপায় নিহত আবরার। পাশ থেকে বাকি সবাই চেচেয়ি উঠে। আমাদের পরিচয় চাও? আমরাও এদেরই মত, কেউ সত্যি বলতে গিয়ে খুন, গুম হয়েছি। কেউ ধর্ষনের স্বিকার হয়েছি, কেউ রাজনিতির মাঠে বলির পাঠা হয়েছি।
দুপুরের গলা শুকিয়ে আসছে। কি বলবে বা কি করা উচিৎ কিছু বুঝছে না।
দুপুরঃ আমি কি করতে পারি?
তনুঃ হাহাহাহাহা। তুমি কি করতে পারো?  আসলেই তো। তুমি কি করতে পারো?  কাপুরষ তো তোমরা।
মাথা নিচু করে রইলাম।
নুসরাত তার অংগার দেহ নিয়ে এসে পাশে দাড়ালো।
নুসরাতঃ ভাইয়া এক কাপ চা করে আনি। সবাই আজ তোমার সাথে গল্প করবো আমরা। আমি যাই। মিম তুই ও আয় আমার সাথে। ভিতরে খালা আগেই গিয়েছে।
নুসরাতের ভাইয়া ডাকায় আমার ছোট বোনের কথা মনে পরলো, যদি নুসরাতের যায়গায় আজ সে থাকতো।
রাজন ঃ ভাই আমি ভালো হাত পা টিপে দিতে পারি। একটু টিপে দেই?
দুপুরঃ নাহ। তুই বরং আমার কোলে বস। তোকে একটু আদর দেই।
রাজন ঃ ওরা না ভাই আমাকে খুব মারছিলো।
নুরুঃ দুপুর,  রাজনিতিটা সম্পূর্ন নোংরা হয়ে গেছে।  পারবি কি তুই ঠিক করতে?
দুপুরঃ দাদা আমি ছোট একটা মানুষ। আমি আমার রাজনিতি টুকু আমার আদর্ষের মধ্যে সিমাবদ্ধ রেখেছি। নোংরামিতে আমি নাই।
আমি সুমন। জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় সরকার দলের ছাত্র সংগঠনের কর্মি ছিলাম। জানো ছোট ভাই, আমার দলের লোকেরাই একদিন হুট করে হলে এসে আমি সহ আরো কয়েকজনকে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে হলের তিনতালা থেকে ছিটকে ফেলে দিলো। সেখানেই মৃত্যু আমার।
দুপুর ঃ আপনারা আমার কাছে হটাৎ সবাই একসাথে কেনো?  সত্যি বলতে আমি ভয় পাচ্ছি।
আরিফঃ হাহাহাহা। আমাদের দেখেই ভয়? তাহলে তোর কাছে কেন এসেছি? আমরা তো এসেছিলাম তোর কাছে সমাধান চাইতে। ্তুই মুক্তির মিছিল নিয়ে এগিয়ে যাবি আর তুই নিজেই কিনা ভয় পাচ্ছিস। এই সবাই চলো চলো, এও কাপুরষ। একে দিয়েও কিচ্ছু হবে না।
দুপুরঃ আমি সমাধান দেবার করার কে,  আমার কি কোন ক্ষমতা আছে যে মিছিল নিয়ে যাবো ঐ শাষকদের কাছে?  আমি নিজেই তো সরকারের প্রতিহিংসার স্বিকার।
একরামুলঃ তোমার সহ তোমাদের সেই শক্তি আছে, আমরা বিচার না পাই, তবে আর কোন ্বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডে জেনো এভাবে মরতে না হয় সে ব্যাবস্থা।
দুপুরঃ দেখো আমাদের কিছু করার নেই। আমরা বন্দী, ৫৭ ধারার কালো থাবায় চোখ থাকতেও অন্ধ, হাত থাকতেও লেখা আসে না।
সেই সময় একজন মধ্যবয়সী মহিলা নুসরাতের সাথে সাথে সবার জন্য চা বানিয়ে নিয়ে আসে। মধ্য বয়সী মহিলাটি দুপুরের হাতের চায়ের মগ হাতে তুলে দেয়।
দুপুরঃ আপনি কে? আপনাকে তো আগে দেখলাম না।
মহিলাঃ হাহাহাহাহা। আমি সুবর্নচরের সেই মহিলা। যে কিনা আপনাদের দলের প্রতিকে ভোট দেওয়ায় সন্তানদের সামনে { কেদে হাটু নিচু করে বসে পরে }
ক্রিং ক্রিং ক্রিং করে ঘরের কলিং বেল বেজে উঠে।
তনুঃ ভাইয়া আমি দেখি কে এসেছে।
দুপুরঃ নাহ নাহ। তোমরা এখানে কেউ দেখে ফেললে অন্যরকম একটা পরিস্থিতি তৈরি হবে।
সুমনঃ হাহাহাহা। এখন আমরা ছাড়া এখানে আর কেউ আসবে না। দেখো হয়তো পেট্রোল বোমাই পোড়া কোন মুখ,  ব্যার্থ কোন ছাত্র,  প্রশ্নপত্র না পাওয়া হত দরিদ্র, পিলখানার অসহায় সেনা অফিসার, বাসে ধর্ষিতা মাজেদা,  ছেলের সামনে ধর্ষিতা মা, ভাইয়ের সামনে ধর্ষিতা বোন, এমপির গুলিতে গুলিবিদ্ধ সৌরভ, গুম হওয়া সন্তানের নিরব কান্না নিয়ে কোন মা,  রানা প্লাজার ধুলোয় উড়া লাশের কেউ,  বন্ধু রাষ্ট্র ভারতের উপহার ফেলানি,  ধ্বসে পড়া ভবনের নিচে গলিত লাশের কেউ,  সাগর- রুনি, জন্মের আগেই গুলিবিদ্ধ নবজাতক শিশু এদের মধ্যেই হয়তো কেউ এসেছে।
দুপুরঃ আমার কাছে কেনো?
নুসরাতঃ একটু খানি আলোর আশায়। একটা মুক্তির মিছিলের ডাকের আহ্বানে।
দুপুরঃ আমিই কেনো? আরো কত মানুষ তো আছে।
আবরারঃ কারন তুমি বাংলাদেশ। তুমি তো সোনার বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখো তাই না। আমি দরজা খুলি।
দুপুরঃ আমিই দরজা খুলছি যেই আসুক।
দুপুর ধিরে ধিরে দরজার কাছে হেটে যাচ্ছে। পা কাপছে, শরীর বেয়ে ঘাম ঝরছে। কোন রকমে দরজা খুলে। খুলেই চিৎকার দিয়ে উঠে।
দুপুরঃ এ আল্লাহ, কি অবস্থা আপনার। কে করলো আপনার এই অবস্থা। এখানে আসছেন কেনো? আপনাকে তো এখনি ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে, না হলে মারা পরবেন আপনি।
ছেলেটি উন্মাদের মত হেসে উঠে। হাহাহাহাহাহাহাহাহাহাহাহা।
দুপুরঃ আপনি হাসছেন? কে আপনি?
ছেলেটিঃ ভিতরে এসে বলি?
দুপুরঃ আপনাকে হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে। অবস্থা খুবই খারাপ।
ছেলেটিঃ আমি অলরেডি মারা গিয়েছি।
ছেলেটি দুপুরকে পাশ কাটিয়ে ভিতরে ঢুকে যায়। সকলের সামনে গিয়ে উপস্থিত হয়।
রাজনঃ ভাইয়া আপনিও কি নতুন আইলেন নাহি? আহেন আহেন, বহেন।
নুসরাতঃ তো কে আপনি? কিভাবে মরলেন? পরিচয় দিন।
দুপুর কাপতে কাপতে রুমের ভিতর ঢুকে দেখে ছেলেটি সবার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। কিছু বলবে হয়তো। দুপুর ছেলেটির পাশে চুপ করে বসে পরে।
ছেলেটিঃ আমি রিফাত। তোমাদের মত আমিও সাধারন মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করতে পারিনি। আমাকে রাস্তায় প্রকাশ্যে সকলের সামনে আমারই পরিচিতরা আমাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। জানো, এতোগুলো মানুষ সামনে দাঁড়িয়ে ছিলো, কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেনি।
বিষ্যজিৎঃ কেন ভাই কেউ ভিডিও করে নাই? ফেসবুক লাইভ দেয় নাই? আমার সময় সাংবাদিক নামের, থাক এখানেও ৫৭ ধারা থাকতে পারে। ওরা ভিডিও করলো কেউ আমাকে বাচাতে আসল না। আচ্ছা দুপুর ভাই আপনাকে একটা প্রশ্ন করি?
দুপুরঃ {তোতলাতে তোতলাতে} জ্বি জ্বি বলুন।
বিষ্যজিৎঃ সাংবাদিক তারপর উকিল এরপর বিচারক হইতে হইলে শিক্ষিত হইতে হয় তাই না? অনেক পরতে হয় ?
দুপুরঃ হ্যা, তা তো অবশ্যই।
বিষ্যজিৎঃ তাহলে ঐ সাংবাদিকরা কেমন শিক্ষা পেয়েছিলো যে আমার জীবন রক্ষার চেয়ে ভিডিও করা বেশি প্রয়োজন ছিলো, ঐ উকিল কে কোন মা বাপ কেমন শিক্ষা দিয়ে জন্ম দিয়েছিলো যে সব প্রমান থাকার পরেও ওই খুনিদের পক্ষ নেয়। আর বিচারক তো্‌, , , , ,  আসামীরা এমপির পাশে দাঁড়ায় ছবি তুলে।
দুপুর; আসলে দেখুন আমাদের সমাজের বিচার ব্যাবস্থাটাই ভেঙ্গে গেছে তাই এমন ঘটনার সংক্ষা দিন দিন বেড়েই চলছে।
মিমঃ তাহলে আপনারা আছেন কেন? খুব তো ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন, দুই একদিন মানববন্ধন করতে পারেন। আর কোন বালটাই ফেলতে পারেন না।
তনুঃ পারে তো, খেলায় একটা ম্যাচ জিতলে সারা বাংলা একসাথে উদযাপন করতে পারে। অথচ ভাঙ্গাচোরা দেশটাকে ঠিক করতে এক হতে পারবে না। কেউ উচু স্বরে বলতে পারবে না আমি বাংলাদেশ, আমি আমার এমন অবস্থা চাই না, আমি সুস্থভাবে বাচতে চাই, সঠিক বিচার চাই, ভেজালমুক্ত খাদ্য চাই, নিরাপদ সড়ক চাই।
তারিকঃ পারবে কিভাবে? প্রত্যেকের রক্তের সাথে যার যার দলের অন্ধগৌরামী মিশে আছে। সত্য বলতে গেলেই তো দলের গায়ে লাগে, আর তখনি পিছুটান।
অভিজিৎঃ আমি একটু বলি। আমরা এখানে এসেছি সমাধানের জন্য। দুপুর সমাধান কি?
দুপুরঃ আমি কি জানি।
দিপনঃ তুমি জানো না কেন? তোমার বা তোমাদের কি কোন দায়বদ্ধতা নেই?
দুপুরঃ আমি একা কি করবো? আমি সত্যিই একা।
নুসরাতঃ আমরা তোমার সাথে আছি। চলো মুক্তির মিছিলে যাই। ভাঙ্গাচোরা বিচার ব্যাবস্থা, খাদ্যে ভেজাল, অগনত্রান্তিক দেশশাসন আর না। এসব থেকে মুক্তি চাই। আসো মুক্তির মিছিল বের করি। তুমি হবে আমাদের অধিনায়ক।
দুপুরঃ আমি লজ্জিত। আমি একা, আজ আমি বের হলে কালই আমার লাশ হয়তো বুড়িগঙ্গায়। বাংলাদেশটাই এমন।
নুরুঃ দুপুর বাংলাদেশ কে? বাংলাদেশের কি হাত আছে না পা আছে, নাকি সে নিজে কিছু করে? নাহ। আমরা প্রতিজনই বাংলাদেশ। আমি তুমি মানেই বাংলাদেশ, বাংলাদেশ মানেই তুমি আমি। সুতরাং এই মুক্তির মিছিলের ডাক তোমাকে দিতেই হবে। আমরা সবাই তোমার সাথে আছি।
দুপুরঃ আমি এসব পারবো না। আমি স্বস্তিতে বাচতে চাই।
রনিঃ হাহাহাহাহাহা। এটাকে বেচে থাকা বলে? হাসালে তুমি দুপুর। সারাদিন রোদেলা রোদেলা করতে করতে বাচার মানেটাই হয়তো তুমি ভুলে গেছে।

মিমঃ আমার সাথে হয়েছে, তোমার বোনের সাথে কাল হবে না এর গ্যারান্টি কি?
নুসরাতঃ আচ্ছা রোদেলাকে যদি এভাবে আমার মত করে পুরিয়ে মারতো বা এই যে এই মা, সুবর্নচরের মায়ের যায়গায় যদি তোমার মা থাকতো?
দুপুরঃ চুপ থাকবে তোমরা? আমি এগুলা কিচ্ছু শুনতে চাই না। বের হয়ে যাও তোমরা।
সবাই দাঁড়িয়ে যায়। দুপুরকে উদ্যেশ্য করে বলতে থাকে তোমাকে রাস্তায় নামতেই হবে, মুক্তি মিছিল বের করতেই হবে, তুমিই বাংলাদেশ-বাংলাদেশ মানেই তুমি।
কথাগুলো দুপুরের কানে তীব্র ভাবে আঘাত করছিলো। সে সুধু চিৎকার করে বলছিলো বের হয়ে যাও তোমরা বের হয়ে যাও।

ইলেকট্রিক শকে জ্ঞ্যান ফিরে দুপুরের। ফুটপাত দিয়ে হাটার সময় একটি বেপরোয়া বাস ফুটপাতে উঠে যায়। সেখান থেকে জ্ঞ্যানহীন আহত অবস্থায় দুপুরকে হসপিটালে আনা হয়। জ্ঞ্যান ফেরাতে ইলেকট্রিক শক দেওয়া হয়। এর এই অজ্ঞান অবস্থায় তার দেখা মিলে নুসরাত, তনু, আবরার, রিফাতের সাথে। তাদের কথাগুলো এখনো বাস্তবের মত স্পষ্ট কানে বাজছে। মুক্তির মিছিল চাই, আমি বাংলাদেশ - আমি বাচতে চাই। সত্যিই তো, আমিই বাংলাদেশ ! তবে আমার ডাক নাম লজ্জ্বা ! আমি আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া নুসরাত, আমি সুবর্নচরের চার সন্তানের ধর্ষিতা জননী,আমি তনু, আমি রাজন, আমি পেট্রোল বোমাই পোড়া মুখ, আমি ব্যার্থ ছাত্র, আমি প্রশ্নপত্র না পাওয়া হত দরিদ্র,  আমি স্রক দূর্ঘটনায় খুন হওয়া আবরার, আমি অবিরাম বাংলার মুখ, আমি লাল সবুজের কাফন, আমি পিলখানার অসহায় সেনা অফিসারের আঁধারে দাফন, আমি বাসে ধর্ষিতা মাজেদা, আমি ছেলের সামনে ধর্ষিতা মা, আমি ভাইয়ের সামনে ধর্ষিতা বোন, আমি এমপির গুলিতে গুলিবিদ্ধ সৌরভ, আমি স্ত্রীর সামনে কুপিয়ে খুন হওয়া রিফাত, আমি গুম হওয়া সন্তানের মায়ের নিরব কান্না, আমি রানা প্লাজার ধুলোয় উড়া লাশ, আমি বন্ধু রাষ্ট্র ভারত থেকে প্রতিদিন খাই বাঁশ,  আমি ধ্বসে পড়া ভবনের নিচে গলিত লাশের গন্ধ, আমি পদ্মার লঞ্চ ডুবি, আমি তাজরীনের অগ্নিকান্ড, আমি সাগর- রুনির মেঘ, আমি জন্মের আগেই গুলিবিদ্ধ নবজাতক শিশু, আমি ভূগর্ভস্থ জিহাদ, আমি বিরোধী ছাত্রসংগঠন নেতার নুরুর নিদীতে ভেসে থাকা লাশ,  চাপাতি হাতে সুযোগ পেলেই আমি সাজি জল্লাদ, আমি সাত খুণ শীতলক্ষ্যার পাড়ে, আমি ফেলানী, আমি ১৬ কোটি মানুষের ভাগ্য ঝুলে আছি কাঁটাতারে, আমি অন্ধ তাই বন্ধ আমার বিবেকের দরজা ।। সুতরাং, আমিই বাংলাদেশ, আমার ডাক নাম আমার লজ্জ্বা।



ধন্যবাদ। লেখাটা অনেকেরইগায়ে লাগবে, নিজের উপর বিপদও আসতে পারে। কিন্তু আর কতদিন এভাবে চুপ করে থাকবো? আর না। ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য অনুরোধ করছি।

শনিবার, ১৫ জুন, ২০১৯

ছেলে পটানো (রিভেঞ্জ)


#ছেলে_পটানো (রিভেঞ্জ)
লেখাঃ MD Asadur Rahman - Shipon

ভিষন মেজাজটা খারাপ হচ্ছে। সারা শরীর চুলকানী আর গনধোলাই এর ব্যাথার স্মৃতি কোনভাবেই ভুলতে পারছে না আসাদ। আচ্ছা এমনটা ঘটলো কিভাবে? কোন ষড়যন্ত্র তো নয়? কিন্তু খালিদের মত বলদের মত ছেলের মাথায় এই বুদ্ধি আসবে না। নিশ্চয় এর পেছনে কেউ আছে। কে থাকতে পারে? (খালি গায়ে বারান্দায় হাটতে হাটতে সেই কথাই ভাবছে আসাদ)
রাত প্রায় ১টা। খালিদের ফোনে কলের রিংটোন বেজে উঠে। আসাদের ফোন।
খালিদঃ হ্যা দোস্ত বল। এতো রাতে?
আসাদঃ দোস্ত আমার প্রেগন্যান্ট শ্বাশুড়ির ব্যাথা উঠেছে। এখনি হসপিটালে নিতে হবে। জলদি আমার বাসায় আয়।
খালিদ ঃ আসতেছি।
আসাদ এবং খালিদের বাসার দূরত্ব খুব একটা বেশি না। তাই অল্প কিছুক্ষন পরেই আসাদের বাসায় হাজির খালিদ। দরজা খুলে ভিতরে ঢোকায় খালিদকে আসাদ।
খালিদঃ তোর শ্বাশুড়ি কোথায়? হসপিটালে নিতে হবে নাকি?
আসাদঃ হুম। তার আগে তুই এই লুংগিটা পরে এসে বিছানায় বস।
খালিদঃ আজব কাজ কারবার। আগে কি অবস্থা বল।
আসাদঃ চুপ। যেটা বলছি সেটা কর।
খালিদ চুপ চাপ টয়লেটের ভেতর ঢুকে। টয়লেটের দরজা লাগাতে যায় তখন আসাদ বলে প্যান্ট চেঞ্জ করতে আবার দরজা লাগাতে হয় নাকি। খালিদ ও তাই ভাবে। খালিদ প্যান্ট খোলার পর মনে পরে যে লুংগিটা সে আসাদের বেডের উপর রেখে এসেছে।
খালিদ ঃ লুংগিটা দে মামা। ভুলে রেখে আসছি।
আসাদঃ হুম দিচ্ছি। আগে তোর প্যান্টটা দে। এখানে শুকাতে দেই।
খালিদঃ প্যান্ট তো ভিজে নাই।
আসাদঃ আরে ঘামে ভিজে গেছে। দে।
সহজ সরল খালিদ প্যান্ট দিয়ে দেয়, গায়ের টি শার্টও দেয়। কারন সেটা সত্যি ভিজে গেছে।
আসাদ প্যান্ট আর টিশার্ট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ভেতর থেকে খালিদ বার বার বলছে লুংগি দিতে। কিন্তু আসাদ দিচ্ছে না। অসহ্য হয়ে নগ্ন অবস্থাতেই বের হয় খালিদ। বের হয়ে তার চোখ ছানাবড়া। আসাদ একটা চেয়ারে বসে মোবাইল এই দিকে কাত করা। ভিডিও করছে নাকি?
খালিদ আবার টয়লেটের ভেতর ঢুকে যায়।
খালিদ ঃ দোস্ত তুই কি করছিস?
আসাদঃ ফেসবুক লাইভে আছি। একটু পর টয়লেটের ভিতর আসবো।
খালিদঃ তুই এমন করছিস কেন?
আসাদঃ কারন সেদিন পার্কে যে ঘটনাটা ঘটে আমার বিশ্বাস সেটা তোর কারসাজি।
খালিদঃ কোন কারসাজি নাই দোস্ত। আমরা কিছু করি নাই।
আসাদঃ আমরা কিছু করি নাই? তার মানে তোদের প্ল্যান করা। সত্যি করে বল। না হলে তোর নগ্ন ভিডিও কিন্তু ভাইরাল হয়ে যাবে।
খালিদঃ দোস্ত আমি কিছু জানিনা।
আসাদঃ মিম নামে কোন ফ্রেন্ড আসছিলো তোদের?
খালিদঃ নাহ।
আসাদঃ তাহলে আমাকে ঐ মেয়ের কাছে পাঠাইলি কেনো?
খালিদঃ দোস্ত তুই বল আমার মাথায় কি কোন দিন এতো খারাপ কুবুদ্ধি আসছে? আসে নাই। সব বুদ্ধি ঐ তৃষার। ঐ প্ল্যান করে আমাকে দিয়ে তোকে ডাকাইছে। মাইর খাওয়াইছে। তোর পিঠে চুকরা পাতার গুড়া দিয়েছে।
আসাদঃ বাহ বাহ। তো এখন বল কি করা যায়।
খালিদঃ আমি কিভাবে বলবো? আমার মাথায় তো খারাপ বুদ্ধি আসে না।
আসাদঃ চুপ শালা। তুই একটা মিনমিনা শয়তান। এখন যদি প্রমিজ করিস যে তৃষাকে সাহায্য করতে তুই আমাকে হেল্প করবি তাহলে আমি তোর প্যান্ট দিবো। আর এই ফেসবুক লাইভ কেটে দিবো। কি করবি?
খালিদঃ অবশ্যই করবো। তুই আমার জানের দোস্ত না।
আসাদ খালিদকে প্যান্ট দেয়। খালিদ কাদতে কাদতে বের হয়ে আসে।
খালিদঃ বল কি করতে হবে তোর জন্য?
আসাদঃ রিভেঞ্জ।
খালিদঃ মানে
আসাদঃ তৃষাকে উচিৎ শিক্ষা দিতে হবে। ওর সম্পর্কে সব বল।
খালিদঃ দেখ আমি তৃষার মত এতো কুবুদ্ধি নিয়ে চলি না যে, ওকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য তোকে বুদ্ধি দিতে পারবো।
আসাদঃ আমি তোর কাছে বুদ্ধু চাই নাই। তৃষার সম্পর্কে জানতে চাইছি। ওর ফুল ডিটেইলস। এরপর আমিই প্ল্যান করবো। আর আমি খুব ভালো করেই জানি তোর গোবর মাথায় কোন বুদ্ধি আসবে না।
খালিদঃ আচ্ছা আচ্ছা। আমি ওর সম্পর্কে তেমন কিছু জানিনা। সুধু জানি তুই যেমন মেয়ে পটাশ ও সেরকম ছেলে পটায়। ওর বিয়ে ঠিক হয়েছিলো ওর খালাতো ভাই এর সাথে। পরে বিয়ে টা ভেংচে যায়। তৃষা বলে ও ভেংচি দেয়েছে। আর অরিক বলে অরিক। ওরা খালাতো ভাই বোন। প্রেম করছে অনেকদিন। অরিক ভালো বলতে পারবে।
আসাদঃ অরিককে পাবো কোথায় এখন?
খালিদঃ অরিক আমাদের পাশের বাড়ি। ওকে ফোন দিয়ে আসতে বলবো।
আসাদঃ বল। বল যে আমার শ্বাশুড়ি প্রেগনেন্ট। জরুরী অক্সিজেন প্রয়োজন। ওর অক্সিজেন নিয়ে আসতে বল।
খালিদ অরিককে ফোন দেয়। অরিক বিপদের কথা শুনেই আর কিছু ভালোমত না শুনে চলে আসে।
অরিক হাতে একটা বেলুন নিয়ে আসাদের রুমে ঢুকে। খালিদ অরিককে আসাদকে দেখিয়ে পরিচয় করিয়ে দেয়।
আসাদঃ অরিক তোমার হাতে কি?
অরিকঃ (ফ্যাল ফ্যাল করে হেসে) হেহেহেহেহ, অক্সিজন।
আসাদঃ ওহ। আচ্ছা আসলে তোমাকে অন্য একটা কাজে ডেকেছি। তুমি তৃষাকে চিনোতো?
অরিকঃ কোন তৃষা? ঐ হিসু বিবি?
আসাদঃ হিসু বিবি মানে? আরে তোমার এক্স গফ, বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো যার সাথে। পরে যে তোমাকে রিজেক্ট করে দিয়েছে।
অরিকঃ ধুর। কে আমাকে রিজেক্ট করেছে? আমি করেছি ওকে। একশ একটা প্রেম করে। শিপন, রনি, হৃদয়, অর্নব, তাহমিদ, এজাজ, শ্রেয়াস, অনিক, এত্তো এত্তো বয়ফ্রেন্ড ওর।
আসাদ ঃ ওহ এর জন্য তুমি বিয়ে ভেংগে দিয়েছো?
অরিকঃ নাহ। এগুলা আমি মেনে নিয়েছিলাম। বিয়ের আগে টুকটাক প্রেম থাকেই।
আসাদঃ এত্তোগুলা ছেলের নাম বললা, এরপরও বলো যে টুকটাক?
অরিকঃ আসাদ, আমি তোমার ফ্রেন্ডলিষ্টেও আছি। তুমিও ওর চেয়ে কম না।
আসাদঃ আচ্ছা আচ্ছা থামো। এরপর বলো।
অরিকঃ আসলে ওর একটা সমস্যা আছে।
খালিদঃ কি সমস্যা রে?
অরিকঃ ও বিছানায় হিসু করে। তাও আবার প্রতিদিন।
আসাদঃ ধুর। এটা তো একটা গল্পে বলেছে। ঘেমে গিয়ে এরকম হয়।
অরিকঃ বুদ্ধ একটা। ওর রুমে ফ্যান আছে। তার মধ্যে চিকনি একটা মেয়ে। চিকন মেয়েরা কি এতো ঘামে? ও প্রতিদিন রাতে বিছানায় হিশু করে। তাই আমাদের আত্তীয়স্বজন সবাই ওকে এক নামে হিসু বিবি বলেই জানে।
আসাদঃ ওহ এই তাহলে কাহিনি। এর জন্য বিয়ে করোনি?
অরিকঃ হুম। হিসুর গন্ধ আবার আমি একবারে সহ্য করতে পারি না।
আসাদঃ শুনো। ও আমার সাথে একটা বাজে কাজ করেছে। প্রতিশোধ নিতে চাচ্ছি। কিভাবে করবো বলো?
অরিকঃ প্রেম করে ছ্যাকা দাও।
খালিদঃ দোস্ত দারুন আইডিয়া দিয়েছে কিন্তু। তুই ও মেয়ে পটাস, তৃষাও ছেলে পটায়। দুজনে ভালো মিলবে।
আসাদঃ তুই চুপ বেঈমান। অরিক বুদ্ধিটা খারাপ না। তাহলে কিভাবে শুরু করা যায়?
অরিক ফেসবুকে নক করো।
খালিদঃ তোর ফেক আইডি থেকে কর। রিয়েল আইডি থেকে করলে চান্স দিবে না। তোকে সহ্য করতে পারে না।
আসাদঃ হুম। আরাধ্য কথন আইডি থেকে।
আরাধ্য কথন আইডি থেকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায় আসাদ। কিছুখন পর রিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট করে। আসাদ ম্যাসেজ দেয়। কিন্তু রিপ্লে করে না। এভাবে বেশ কিছুদিন ম্যাসেজ দেয়, সব পোষ্টে লাইক কমেন্ট করে কিন্তু কোন রেসপন্স নেই। আসাদ একটা জিনিস খেয়াল করে যে তৃষা মাঝে মাঝেই শাড়ি পরে ছবি আপলোড দেয় আর ক্যাপশন দেয় আম্মুর শাড়ি।
একদিন রাতে আসাদ আবার তৃষাকে ম্যাসেজ দেয়। ম্যাসেজ টা এমন
আরাধ্যঃ আপনার তো জাহান্নামে যাওয়া উচিত।
কিছুক্ষনের মধ্যেই রিপ্লে আসে তৃষার কাছ থেকে
অদ্রিতাঃ হোয়াই?
আরাধ্যঃ একটা মেয়ে মানুষ কেনো এতো সুন্দরী হবে। সুন্দর এর তো একটা লিমিট থাকা উচিত তাই না? তার মাধ্যে শাড়িতে আপনাকে, উফ! অসম্ভব, বেসম্ভব সুন্দরী লাগে।
অদ্রিতাঃ ধন্যবাদ।
আরাধ্যঃ আচ্ছা একটা প্রশ্ন করি?
অদ্রিতাঃ জ্বি করুন।
আরাধ্যঃ আপনার শাড়ি পরা সব ছবির ক্যাপশনে দেখলাম আম্মুর শাড়ি। আপনার কি কোন শাড়ি নেই?
অদ্রিতাঃ নাহ। আম্মুর অনেক শাড়ি তাই ওগুলোই পরি।
আরাধ্যঃ আচ্ছা আমি যদি আপনাকে একটা শাড়ি গিফট করি আপনি কি নিবেন?
অদ্রিতাঃ অবশ্যই না। কেনো নিবো আপনার শাড়ি?
আরাধ্যঃ বন্ধু মনে করে।
আসাদ বেশ কয়েকদিন অনেক অনুনয় বিনয় কর শাড়ি দেবার পারমিশন পায়। মেয়েরা গিফট পেলে তারাতাড়ি পটে যায়। এই ভেবেই এই গিফট দেবার ধান্দা করে আসাদ। এভাবেই ওকে পটিয়ে প্রতিশোধ নিবে।
রাস্তা দিয়ে যাবার সময় এক টোকাই হটাত আসাদের সামনে এসে দাঁড়ায়। ভাই আমার কাছে একটা শাড়ি আছে, ভালো শাড়ি, চুরি করছি। ৫০ টাকা দেন। নিয়ে ভাবিকে দিয়েন।
আসাদঃ ধুর মিয়া। বিয়ে করছি নাকি। অন্য কাউকে দেখো।
টোকাই পেছন দিকে যেতেই আসাদ ফিরে ডাক দিয়ে ৫০ টাকা দিয়ে শাড়িটা নিয়ে নেয়। এরপর আড়ং এর এক বন্ধুর দোকান থেকে একটা শপিং ব্যাগ জোগার করে সেটা তৃষার এড্রেসে পাঠিয়ে দেয়। পাঠানোর সময় খালিদ, অরিক, পাশেই ছিলো।
আসাদ অপেক্ষা করছিলো মেয়েটি নিশ্চয় শাড়িটা পেয়ে খুব খুশি হয়ে পরে ছবি তুলে আপ দিবে। সাথে সুন্দর একটা ক্যাপশন। হয়তোবা শাড়িটা পেয়ে আরাধ্যের প্রেমেও পরে যেতে পারে তৃষা।
দুইদিন পর। সন্ধ্যায় চায়ের দোকানে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে আসাদ। ঠিক তখন সেখানে আসে খালিদ আর অরিক।
অরিকঃ এই দেখেন। তৃষা আপনার দেওয়া শাড়ি পরে ছবি আপ দিয়েছে।
আসাদঃ তাই নাকি। দেখি দেখি।
আসাদ ঢুকে দেখে হ্যা শাড়ি পরে সত্যিই পিক আও দিয়েছে, কিন্তু ক্যাপশন চেঞ্জ হয় নি। আগের সেই ক্যাপশন, আম্মুর শাড়ি।
আসাদ ঃ মনডা চাচ্ছে মেয়ের বাসায় গিয়া শাড়িটা খুইলা নিয়া আসি। তবে শাড়িটাতে কিন্তু ওকে অনেক বেশি সুন্দর লাগছে।
অরিকঃ প্রেমে পরে গেলেন নাকি ভাই?
আসাদঃ কিছুটা। সারাজীবন এমন একটা মেয়েই খুজছিলাম যে কিনা এমন পাগলী টাইপের হবে। আচ্ছা আমি যাই।
আসাদ চলে আসে। রাতে একটা কবিতা লিখে তৃষাকে পাঠায়। এরপর ব্লক দেয় তৃষাকে। কবিতাটা এমন ছিলো।
আমার ওই সরলতায় হয়তো তোমার
আমার জন্য ভালোবাসা নেই,
তোমার প্রতরণায় আমার অভিযোগও নেই,
হতে পারে তা দ্বিধাহীন নির্বোধ কোন অনুভূতি,
তবুও যেনো ভালোবাসি তোমায়,
অনেক ভালোবাসি,
জেনো সেদিন অপূর্ণতায় হলেও
নতুন করে আবারও ভালোবাসবো,
এই আমার নির্লোভ ওই সরল স্বীকারোক্তি।

তৃষার চোখে পরে ম্যাসেজটা। কবিতাটা পরার পর গিল্টি ফিল করে। আরাধ্য আইডি থেকে তাকে ব্লক করা হয়েছে। সরি বলার কোন ওয়ে নাই। সেই রাতে তৃষার ঘুম হয় না। পরপর তিন রাত ঘুমহিন তৃষা। এবং এই তিনরাত সে বিছানায় হিসু করেনি। তৃষার মা ভেবেছে হয়তো তৃষার এই হিসু রোগ সেরে গিয়েছে। তাই খুশিতে, ঠ্যালায়, ঘোরতে সকল আত্তীয়স্বজনদের আবার দাওয়ার করে। সবাই আসে। আসে তৃষার ফুপাতো বোন পরি। তৃষার পরির কাছে সব খুলে বলে। পরি তার আইডি থেকে আরাধ্যের আইডিতে ঢুকে। আরাধ্যের আইডিতে কবিতার ছড়াছড়ি। তৃষা এই প্রথম কবিতার প্রেম পরে যায়। পরির আইডি থেকে তৃষা অনেক অনুনয় বিনয় করে সরি বলে, এবং আনব্লক করার রিকোয়েস্ট করে।
আরাধ্য তৃষাকে আনব্লক করে। কিন্তু ম্যাসেজ দেয় না। তৃষা আরাধ্যর আইডিতে ম্যাসেজ দেয় কিন্তু আরাধ্যর আইডি থেকে আসাদ রিপ্লে দেয় না। সেই মজা নিচ্ছে। কারন সে জানে তৃষা ছেলে পটানোতে ওস্তাদ। আসাদের ভয় লাগে যদি সে সত্যি সত্যি তৃষার ফাদে পরে যায়।
যাই হোক এক সময় না পেরে আসাদ রিপ্লে দেয়। কথা চালাচালি হয়। একদিন তৃষা আরাধ্যকে বলে ফোন দিতে। আরাধ্য তৃষার নাম্বারে ফোন দেয়। ১০১ মিনিট কথা বলে সে রাতে। এবং অলৌকিক ভাবে দুজন দুজনের মিষ্টি কথায় প্রেমে পরে যায়। পরের দিন দুজনের দেখা করার কথা। তৃষা সফল ছেলে পটাতে পেরে, কিন্তু আসাদ রিভেঞ্জ নিতে গিয়ে নিজেই তৃষার ফাদে আটকা পরেছে। এখন সকালে দেখা যাক কি হয়।
মিষ্টি একটা সকালে পাখির কলকাকলি ঘুম ভাংগে তৃষার। মিষ্টি একটা হাসি দেয় সে, দুপুর ১২ টায় আরাধ্যের সাথে তার দেখা করার কথা। এই ভেবেই সব কিছু তার কাছে ভালো লাগছে। জীবনে এতো প্রেম করলেও এইবারের টা জেনো অন্যরকম। দরজায় কড়া নারার শব্দ। উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেয় তৃষা। বাইরে দাঁড়িয়ে আছে অরিক।
তৃষাঃ তুমি?
অরিকঃ হুম, আমি। আব্বু-আম্মুও এসেছে।
তৃষাঃ হটাৎ?
অরিকঃ আমাদের বিয়ের কথা ফাইনাল করতে। এখন তো আর তোমার হিসু রোগ নেই। সো বিয়ে করতে তো আর সমস্যা নেই। আর এর জন্য সব ক্রেডিট আসাদের। ওর......
তৃষাঃ আসাদের ক্রেডিট মানে?
অরিক তৃষাকে আসাদ এবং আসাদের ফেক ফেসবুক আইডি আরাধ্যের সব গল্প খুলে বলে। তৃষা কেদে দেয়।
নিচে তৃষা আর অরিককে ডাকা হয়। আজ সন্ধ্যায় ওদের বিয়ে।
১১ঃ৩০ বাজে। আসাদ তৃষার কাছে যাবে। কিন্তু তৃষা এখনো জানে না যে আসাদই আরাধ্য। জানলে তখন সে ব্যাপারটা কিভাবে নিবে বুঝছে না শিপন।
হটাত করেই হুরুমুর করে আসাদের ঘরে ঢুকে পরে তৃষা।
আসাদঃ তুমি?
তৃষাঃ মিথ্যুক কোথাকার। চিট। সব কিছু নিয়ে কি চিট করা ঠিক। এভাবে প্রতিশোধ টা কি না নিলেই হতো না?
আসাদঃ সরি, তবে প্রতিশোধ নিতে চাইলেও পরে আমি.....
তৃষাঃ চুপ করো কচু। এই নাও আমার বিয়ের কার্ড। সন্ধ্যায় আমার বিয়ে। চলে এসো। আসলে খুব খুশি হবো। আর জামাই এর নাম কার্ডে দেওয়া আছে।
তৃষা চলে যায়। আসাদ বিছানায় সুয়ে পরে। চোখ বেয়ে পানি পরছে।
দুপুরের পরে খালিদ আসাদের বাসায় আসে। অরিক এর কাছ থেকে জানতে পারে যে আজ ওদের বিয়ে। তাই দেরি না করে আসাদের কাছে চলে আসে। এখানে এসে আসাদের মুখে তৃষার আসা এবং বিয়ের কার্ড দেওয়ার কথা শুনে।
খালিদঃ বিয়ে ফাইনাল হলো সকালে, ও তোর এখানে আসলো ১২ টার আগে। এর মধ্যে কার্ড ছাপানো শেষ? কার্ডটি খুলে দেখেছিস?
আসাদ ঃ নাহ।
খালিদঃ খুলে ভিতরে দেখ তো।
আসাদ খুকে দেখে ভেতরে কোন বিয়ের কার্ড নেই। আছে একটা চিরকুট।
আমাদের তৃষিত ভালোবাসা সমর্পন করে আবার নতুন আলোর পথে হেঁটে যাই,
আমার খোলা চুলের ঘ্রাণের মাঝে তোমার সুপ্ত সুখ গুলো তুমি খুঁজে নেবে!
ভাবনার সুখ দুয়ার গুলো দেখো পুবের আলোর সাথে সাথে কেমন উজ্জ্বল হয়ে গেছে ,
তোমার নীরব হাত বাড়িয়ে কাছে টেনে একটি কথা বলা-
বলো কখনো এ হাত ছেড়ে যাবে না ওই দূর নীলিমার মায়ার মতো,
বলো যাবেনা- তোমাতে ওই আলো আঁধারির মাঝে নিজেকে সমর্পন !
অপেক্ষায় রইলাম।
ইতি
রক্তমূখী নীলা।

খালিদঃ দেখ মেয়েটা তোকে ভালোবাসে।
আসাদঃ সেটা তো বুঝলাম। এখন কি করবো?
খালিদঃ পালিয়ে যা।
আসাদঃ কিভাবে কি করবো? কোন কিছু ভালো মত না বলেই তো চলে গেলো। আর এই পত্রে কোথাও বলা আছে। আচ্ছা তুই বল এখন কি আমি গুন্ডাদের মত ওকে তুলে নিয়ে আসবো?
খালিদঃ আচ্ছা অরিক তো আমাকে যেতে বলছে। আমি ঐখানে গিয়ে তৃষার সাথে কথা বলে সব সেট করছি। সন্ধ্যায় তুই তৃষার বারান্দার সামনে আসবি। তারপর ঐখান থেকে পালিয়ে যাবি।
আসাদঃ থ্যাংক ইউ দোস্ত। যা যা এখনি বের হ।
খালিদ তৃষাদের বাসায় যায়। আসাদ হৃদয়, রনি, অনিকসহ ওদের বলে রাখে বিয়ের ব্যাবস্থা করতে।
সন্ধ্যায় আসাদ তৃষাদের বাড়ির সামনে গিয়ে ঘোড়াঘুরি করে। তৃষার বারান্দার সামনে এসে শিষ দেয় কিন্তু কোন সারাশব্দ নেই। প্রায় একঘন্টা এভাবে দাঁড়িয়ে ভিতরে সংকেত দেওয়ার কিন্তু কোন লাভ হয়না। এরপর ঢিল মারে জানালায়। কয়েকটা ঢিল মারার পর একটা বড় ঢিল মারে আর তখনি অরিক বারান্দায় আসছিলো আর ঢিলটা ওর মাথায় গিয়ে লাগে। সাথে সাথে চিৎকার করে পরে যায়। পেছন থেকে তৃষাও আসে। একটা শাড়ি বেধে বারান্দা দিয়ে নেমে আসে।
তৃষাঃ চলো পালাই। বুদ্ধুটার চিৎকারে বাসার সবাই এদিকে চলে আসছে। দেখে ফেলবে আমাদের।
আসাদঃ চলো।
দুজনে দৌড় দেয়। ইতিমধ্যে তৃষার গুন্ডার মত দেখতে বাবা ওদের দেখে ফেলে। সে লোকজন এবং দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ওদের তারা করে। ধরা পরে যাবার মত অবস্থায় পেছন থেকে একটা গাড়ি এসে ওদের সামনে দাঁড়ায়।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
হৃদয়ঃ মামা উঠো।
আসাদ আর তৃষা গাড়িতে উঠে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। বিয়ে করে, তারপর হানিমুনে সেই গাড়িতে সবাইকে নিয়ে কক্সবাজার।
(পুরো গল্পটিই আমার কল্পনা, বাস্তবতার সাথে এর কোন মিল নেই, তবে মিল থাকলে ভালো হইতো)