শনিবার, ৭ অক্টোবর, ২০১৭

অপ্সরী কন্যা


অপ্সরী কন্যা
লেখা : MD Asadur Rahman (Sh Ip On)
(সম্পুর্ন গল্প)
খুব নি:সংজ্ঞ দিন কাটছে আমার। তাই একটা সিধ্যান্ত নিয়েছি। আর সেটি হলো বিয়ে করবো। কিন্তু ঝামেলা হচ্ছে আমার বাবা মা কিছুতেই এই মূহুতে রাজি হচ্ছে না বিয়ে দিতে। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি পালিয়ে বিয়ে করবো। আর এখানেও একটা সমস্যা আছে। আমার কোন প্রেমিকা নেই। পালিয়ে যেতে হলে তো একটি প্রেমিকা দরকার তাই না? তাই ফেসবুকে পালিয়ে বিয়ে করার মত মেয়ে চেয়ে আমার এই বিজ্ঞাপন।


আমি মিটুল রহমান, পরি ঢাকা কলেজে অনার্স ৪র্থ বর্ষে। টুকটাক টিউশনি আর মাঝে মাঝে পত্রপত্রিকায় লেখালেখি করে নিজের খরচ নিজে চালাই।
যেই রকম পাত্রী চাই :
১ মেতে অবশ্যই সুন্দরী হতে হবে।
২ মেয়েকে আমার থেকে কম হলেও ১/২ ইঞ্চি লাম্বা হতে হবে।
৩ মেয়ের বাবা অনেক সম্পত্তি থাকতে হবে। (কথায় আছে না যে তোমার বাবা যদি সম্পদশালী না হয় তবে এটা তোমার কোন দোষ না, কিন্তু শশুর যদি সম্পদশালী না হয় তাহলে সেটা তোমার জন্য ধংশের বার্তা)
৪ মেয়ের রবিন্দ্রসংগীত গাওয়া জানতে হবে।
আপাতত এইটুকুই। আগ্রহী ললনারা ইনবক্সে যোগাযোগ করুন।

ঠিক এভাবেই মিটুল তার ফেসবুক ওয়ালে পোষ্ট করেছিলো। কিন্তু তেমন কোম রেসপন্স সে পায়নি। তবে অনেক কমেন্টস পরেছে তার পোষ্টে। সবাই বিষয়টি নিয়ে মজা করেছে। ফানি ভেবেছে। অথচ মিটুল কিন্তু সিরিয়াসলি পোষ্টটি করেছিলো।
এর বেশকিছুদিন পরের কথা। মিটুল রাত ৯ টার দিকে ধানমন্ডি লেকের এক কোনায় বসে আছে, আর কল্পনা করছ। সে বেশকিছুদিন যাবত কোন কিছু লিখতে পারছে না। প্রতিটি লেখকই একট সময় এই সমস্যায় পরে, শত চেষ্টা করেও লেখা বের করতে পারে না। আর তখন তারা বিভিন্ন উপায়ে লেখা বের করার চেষ্টা করে। মিটুলের ও একটা ওয়ে হচ্ছে সে নিরিবিলি বসে হাতে সিগারেট নিয়ে কল্পনা করে। তখন মাঝে মাঝে আবার সেই বন্ধ কল্পনার জগতের সদর দরজাটা খুলে যায় আবার।
মিটুল চুপ করে বসে চোখ বন্ধ করে সিগারেট টানছে। হটাত তার পাশে পানিতে ঝাপ দেওয়ার একটা শব্দ পায়। চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে একটি মেয়ে পানিতে ঝাপ দিয়েছে। হাত পা ঝেরে বাচার চেষ্টা করছে, তবে মনে হয় মেয়েটি সাতার জানে না। মিটুল চুপ করে দাঁড়িয়ে দেখছে, মিটুল এর আগে কখনো নিজ চোখে কারো মৃত্য দেখিনি এইবারই একটা চান্স সামনাসামনি কারো মৃত্য দেখার।
♦ এই মিয়া দেখতেছেন একটা মেয়ে ডুবে মারা যাচ্ছে আর আপনি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছেন?(পাসে এসে এক মহিলা তাকে বললো)
মিটুল : আমি তো তাকে মরতে বলিনি। সে সেচ্ছায় পানিতে ঝাপ দিয়েছে।
♦ আজিব মানুশ। নামুন নামুন, মেয়েটিকে বাচান।
মিটুল পানিতে লাফ দেয়। অল্প পানি সেখানে।
মেয়েটিকে মিটুল উপরে উঠায়। ততক্ষনে আসেপাশের সব মানুষ সেইখানে ভির করে ফেলেছে। পাশেও ঐ মেয়েটি এসে ঝাপিয়ে পরা মেয়েটির বুকে চাপ দিয়ে পানি বের করে জ্ঞ্যান ফিরিয়ে আনে অন্যান্য মুভির মত।
মেয়েটি জ্ঞ্যান ফেরার পর মিটুল সেখান থেকে চলে আসে। হেটে সামনের দিকে এগুচ্ছে। লেক পেরিয়ে ৩২ এর এক চায়ের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে এক কাপ চা আর একটা সিগারেট নেয়। তার সারাশরীর ভেজা।
চা আর সিগারেট টানছে মিটুল। হটাত পেছন থেকে কে জেনো মিটুলের কাধে হাত রাখে। পিছনে তাকিয়ে দেখে সেই মেয়েটি যে একটু আগে মরার জন্য পানিতে ঝাপ দিয়েছিলো এবং মিটুল তাকে বাচিয়ে আনলো।
♥ ধন্যবাদ আপনাকে আমাকে বাচানোর জন্য।
মিটুল : ধন্যবাদ কেনো? আপনার তো উচিত আমাকে গালি দেওয়া।
♥ ছি গালি দিবো কেনো?
মিটুল : আপনি মরতে গিয়েছিলেন, আর আমি আপনাকে মরতে দেইনি। মানে আপনি যেটা করতে চেয়েছিলেন সেই কাজে আমি বাধা দিলাম তাই আপনার উচিত আমাকে ইচ্ছে মত গালি দেওয়া, চাইলে মারতেও পারেন।
♥ হাহাহাহহাহাহাহাহা।
মিটুল : এইভাবে হাসবেন না। বুকের বা পাশে এমন হাসি দেখলে ক্যামন যেনো একটু ব্যাথা ব্যাথা লাগে।
♥ আমি ভিজে গেছি, বাসায় যেতে হবে। কিন্তু আমার কাছে কোনটাকা পয়সা নেই। আপনি কি আমাকে একটু বাসায় যেতে সাহায্য করবেন?
মিটুল : আমিও তো ভিজে গিয়েছি। আমাকেও বাসায় যেতে হবে। এককাজ করেন, আমি আপনাকে টাকা দিচ্ছি আপনি একটা সিএনজি নিয়ে চলে যান।
♥ ধন্যবাদ। আর হ্যা আপনার নাম্বারটি দিন। আমি পরে টাকা পাঠিয়ে দিব।
মিটুল : সরি আমি আমার নাম্বার দিতে পারবো না। আর আমাকে টাকাও ফেরত দিতে হবে না।
মিটুল মেয়েটির হাতে একটি ভেজা ৫০০ টাকার নোট দিয়ে চলে আসে সেখান থেকে।
বাসায় এসে ফ্রেস হয়ে, ড্রেস চেঞ্জ করে রাতের খাবার খেয়ে ঘুম দেয় মিটুল। পরেরদিন সকালে ক্লাস আছে।
দুদিন পর। মগবাজার রেলক্রসিং এর এক কোনায় বসে সিগারেট টানছে মিটুল।
পাসে হটাত একটি মেয়ে এসে বসে।
♥ কেমন আছেন আপনি?
মিটুল : ভালো। আপনি কে?
♥ ভুলে গেলেন আমাকে? ঐযে সেদিন ধানমন্ডি লেক থেকে আমাকে বাচালেন। ভুলে গেছেন?
মিটুল : ওহ, হ্যা। মনে পরেছে। তো আপনি এই রাতে এখানে কেনো? ভূতটুত নাকি আপনি? হটাত এসে হাজির হন।
♥ আমি অনু। আর ঐ সামনের ঐ ছয়তালা বাড়িটা আমাদের। একা একা লাগছিলো তাই ছাদে যাই। তারপর হটাত একটা আলো এইখানে পরে আর তারপর মনে হলো এটা আপনি। কনফিউশনে ছিলাম। কাছে এসে দেখলাম না ঠিকই আছে।
মিটুল : ওহ। ভালো। তো সেদিন মরতে গিয়েছিলেন কেনো?
অনু : বলতে চাচ্ছি না।
মিটুল : প্রেম ঘটিত? আচ্ছা বলতে যেহেতু চাচ্ছেন না তাহলে এখান থেকে চলে যান।
অনু : চলে যাবো কেনো? আমি বলবো না কারন এটা আমার পারসোনাল মেটার।
মিটুল : আমিও আপনার পাশে বসবো না। এটাও আমার পারসোনাল প্রবলেম। আল্লাহ হাফেজ।
মিটুল সেখান থেকে উঠে চলে যায়।
রবিন্দ্র সরবরে প্রায়ই ছোটখাটো কনসার্টের মত আয়োজন করে। আজই সেই রকম একটি আয়োজন। তবে ফোক গানের। লাইভ ফোক গান শুনতে খারাপ লাগে না। মিটুলের খুব খুব ভালো লাগে। এককোনে বসে পরলো সে। কিছুখন পর তার পাসে এসে বসলো অনু। অনু, ঐযে সেই মেয়েটি।
মিটুল : আপনি আবার এখানে?
অনু : আমার কি এখানে আশা নিষেধ নাকি?
মিটুল : আমি আপনার সাথে কথা বলতে ইচ্ছুক না।
(মিটুল দাঁড়িয়ে যাচ্ছে আর তখন অনু মিটুলের হাত চেপে ধরে)
অনু : প্লিজ উঠবেন না। আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
(মিটুল বসে পরে)
মিটুল : আমি আমার গতকালকের প্রশ্নের উত্তর না পেলে কোন কথা শুনবো না।
অনু : আমি বলবো আপনাকে সব কথা।
মিটুল : তাহলে বলেন, এতো প্যাচাচ্ছেন কেনো?
অনু : আচ্ছা সাহিত্যিক মানুষরা কি এতো ঝগড়াটে হয় নাকি। আমি তো জানতাম তারা খুব নরম মনের মানুষ হয়।
মিটুল : আমি সাহিত্যিক আপনাকে কে বললো?
অনু : আমি আপনার ফেসবুক ফ্রেন্ড। আর আমি সাতারও আপনার চেয়ে অনেক ভালো জানি।
মিটুল : মানে?
অনু : কিশের মানে?
মিটুল : ঐযে আপনি পানিতে সুইসাইড করার জন্য ঝাপ দিলেন। আবার পিছন থেকে একজন এসে বললো আপনাকে বাচাতে।
অনু : হাহাহহাহাহাহা।( হাসতে থাকে আর মিটুল চুপ করে তার হাসি দেখতে থাকে)
মিটুল : হাসবেন না, হাসলে আপনাকে দেখতে মোটেই ভালো লাগে না।
অনু : মিথ্যে কথা বলবেন না। আমার হাসি খুব সুন্দর, যে কোন ছেলেকে পাগল করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।
মিটুল : লেকে ঝাপ দেওয়ার রহস্য উন্মোচন করুন। তানাহলে চলে যাবো আমি।
অনু : আমি ইচ্ছে করে ঝাপ দিয়েছি, আর যে আপনাকে বলেছে আমাকে বাচাতে সে আমার বান্ধবী। কিন্তু আপনি প্রথমে আমাকে না বাচাতে এগিয়ে এসে দাঁড়িয়ে ছিলেন কেনো?
মিটুল : আমি কখনো সামনাসামনি কাউকে মরতে দেখিনি। তাই দাঁড়িয়ে সামনাসামনি কারো মৃত্য দেখার প্রথম অভিজ্ঞতা নেওয়ার চেষ্টা করছিলাম কিন্তু ঐ বদ মহিলা সব ভন্ডুল করে দিলো।
অনু : ( মাথার চুলে টান দিয়ে) ঈস আল্লাহ আমি যে কিভাবে এই রকম একটা পাষন্ড মানুষের প্রেমে পরলাম। এখন আল্লাহ তুমিই আমাকে রক্ষা করো।
মিটুল : কিহ? প্রেম! তাও আবার,,,,,
অনু: কেন আপনিই তো বলেছেন যে আপনি বিয়ে করবেন, মেয়ে খুজছেন। আর কেন আমি কি সুন্দরী না? যথেষ্ট সুন্দরী আমি। আর আপনার চেয়ে একটু হলেও আমি লাম্বা হবো আর আমার বাবার অনেক টাকা, ঢাকায় দুইটি বাড়ি আছে।
মিটুল : রবিন্দ্র সংগিত।
অনু : আমি গান গাইতে জানিনা। ( জানিনা বলে কেদে দেয় মেয়েটি)
মিটুল : আরে কাদছেন কেনো আপনি? কান্নার কি হলো এখানে।
অনু: (কাদতে কাদতে) আপনার মন মতো তো হতে পারলাম না। আমি গান জানিনা। কিন্তু আপনাকে অনেক ভালোবাসি, আপনার লেখাও অনেক ভালোবাসি।
মিটুল : বুঝলাম। কিন্তু ঐ পোষ্টটা যাস্ট একটা ফানি পোষ্ট। সিরিয়াসলি নেওয়ার মত কিছু নেই।
অনু : আমি কিচ্ছু জানিনা। আমি সুধু জানি আমি আপনার হতে চাই।
মিটুল : অনেক রাত হয়েছে। বাড়ি ফিরে চলুন।
অনু : প্লিজ আমাকে একটু দিয়ে আসবেন। অনেক রাত হয়ে গেছে। ভয় লাগছে।
মিটুল : চলুন।
মিটুল অনুকে মগবাজারের বাড়িতে দিয়ে আসে। তারপর সে তার নিজের বাসায় ফিরে। বাসায় ফিরে ঐ পোষ্টটি ডিলিট করে। আর মেয়েটিকে নিয়ে ভাবে। আসলে মেয়েটি কি চায়? মেয়েটিকি সত্যিই তাকে চায়, না চাইলে এইভাবে পানিতে ঝাপ দিবে কেনো? নাকি আবার আমার লেখা কোন গল্পের মত কোন ভৌতিক কিছু হতে চলছে। ধুর শালা কিচ্ছু ভালো লাগে না। মনে মনে বলছিলো মিটুল।
মিটুল ফোন হাতে নিয়ে বিছানায় সুয়ে ফেসবুকে ঢুকে। অপসরি কন্যা নামে একটি আইডি থেকে ফ্রেন্ড রিকোয়েষ্ট আসে। দেখে সে ইগনোর করে। তারপর ম্যাসেঞ্জারে গিয়ে দেখে সেখানেও চ্যাট রিকোয়েস্ট সেই অপসরি কন্যা আইডি থেকে। কিছুখন পর।
অপসরি কন্যা : hi
মিটুল সিন করে কিন্তু কোন রিপ্লে দেয় না।
অপসরি কন্যা একটি পিক পাঠায়। খোল চুল সামনের দিকে দিয়ে কাজল কালো বড় বড় চোখের লুক দিয়ে কালো শাড়ি পরে একটি মেয়ে।
আরে মেয়েটিতো সেই মেয়ে। কি জেনো নাম, অনামিকা না অনু তনু। ওহ হ্যা অনু।
অপসরি কন্যা : kotha boloben na?
মিটুল খান : কি বলবো?
অপসরি কন্যা : কিছু একটা।
মিটুল খান : আমার আইডির লিংক পেলেন কোথায়?
আপসরি কন্যা : আমি আপনার অনেক আগের একজন ভক্ত। আপনার পেজের নিয়মিত পাঠক। সেখান থেকে খুজে খুজে....
মিটুল খান : ওহ ভালো।
অপসরি কন্যা : আপনি কি খুজে পেয়েছেন?
মিটুল খান : কি?
অপসরি কন্যা : মেয়ে।
মিটুল খান : কোন মেয়ে? কিশের মেয়ে?
অপসরি কন্যা : আরে ঐ যে আপনি না বিয়ে করবেন সেই মেয়ে। পালিয়ে যাবেন।
মিটুল খান : নাহ পাই নি।
অপসরি কন্যা : আলহামদুলিল্লাহ।
মিটুল খান : আলহামদুলিল্লাহ কেনো?
অপসরি কন্যা : কারনটা আপনি ভালো করেই জানেন। এর আগে বলেছিলাম। আমি তো সুধু রবিন্দ্র সংগীত জানিনা, বাকি সবই তো ঠিক ছিলো তাই না।
মিটুল খান : জানিনা।
অপসরি কন্যা : আচ্ছা আপনি এতো জানিনা জানিনা করেন কেনো? আচ্ছা আচ্ছা শুনেন আগামীকাল ধানমন্ডি লেকে পিঠার মেলা। আপনি কি বিকেলে ফ্রি আছেন? আসতে পারবেন কি?
মিটুল খান : চেষ্টা করবো।
আপসরি কন্যা : আমি নীল শাড়ি পরে আসবো, চোখে কাজল দিবো, হাতে একমুঠো চুড়ি পরবো আর কপালে ছোট করে একটা টিপ। আর ঠিক বিকেল ৫ টায় আমি বটতলায় অপেক্ষা করবো আপনার জন্য।
মিটুল খান : আচ্ছা আমার বাড়িতে ফোন দেওয়ার সময় হয়েছে। এখন যেতে হবে। বাই।
ফোন হাত থেকে রেখে চিন্তায় মগ্ন মিটুল। আচ্ছা মেয়েটা শাড়ি, চুড়ি, টিপ, চোখা কাজল দিলে কেমন লাগবে দেখতে তো এমনিতেই অসম্ভব সুন্দরী। খুব লোভ লাগছে তাকে দেখার কিন্তু এভাবে যাওয়াটাও ঠিক হবে না।
ফোন বেজে উঠে মিটুলের, বাড়ি থেকে মা ফোন দিয়েছে।
হ্যালো আম্মু,
> ক্যামন আছো আব্বু?
আম্মু আমি ভালো আছি। তুমি ক্যামন আছো? বাসার সবাই ক্যামন আছে?
> আলহামদুলিল্লাহ্‌ আমরা সবাই ভালো আছি। আব্বু শুনো তোমাকে একটা কথা বলবো।
হ্যা আম্মু বলো।
> আব্বু তোমার জন্য একটা মেয়ে দেখেছি। সামনের মাসে বিয়ের তারিখ ঠিক করতে চাচ্ছি, দেখলো তোমার পছন্দ হবে।
কিন্তু কেনো আম্মু? এখন বিয়ে?
> তুমি তোমার যুথি আপুকে বলছো সে আমাদের বলেছে। আর তোমার আব্বু তোমার ফেসবুকের স্টাটাসও দেখেছে।
কিন্তু আম্মু
> কোন কিন্তু না আব্বু। তুমি ফেসবুক থেকে আবার অন্যকারো সাথে পালিয়ে বিয়েটিয়ে করো না। আমরা দুই একদিনের ভিতর তোমার বিয়ের ডেট ফাইনাল করছি।
আম্মু।
> আব্বু আমি এখন রাখি, চুলায় খাবার পুরছে। আল্লাহ হাফেজ।
আল্লাহ হাফেজ।
মায়ের কথাগুলো শোনার পর মিটুল বুকের ভিতর কিছুটা হাহাকার অনুভব করে। কিন্তু এমনটা তো হওয়ার কথা ছিলো না। দুদিন আগেই তো সে নিজেই বিয়ের জন্য পাগল হয়েছিলো। তাহলে আজ কি হলো তার। সে কে অপসরি কন্যার মায়ায় পরলো। অপসরি কন্যা মানে অনু। অনুকে নিয়ে মিটুলের কনফিউশন এখনো কাটেনি। মেয়েটি কি মানুষ নাকি কল্পনা? ভুত পেত্নী আর কাল্পনিক গল্প লিখতে লিখতে এখন সব কিছুতেই কল্পনার একটা ছায়া খোজে মিটুল।
পরের দিন। সারাদিন দোটানায় থেকে অবশেষে সিদ্ধান্ত নেয় যাবে অনুর সাথে দেখা করতে।
মিটুল ঠিক ৫:৩০ মিনিটে রবিন্দ্র সরবরের পাশে বটতলায় গিয়ে পৌছায়। অনু আগেই এসে হাজির। মিটুলকে দেখে কাছে এগিয়ে আসে অনু
অনু : তুমি জানো আমি কতক্ষন ধরে এখানে ওয়েট করছি? সব ছেলে গুলো আমার দিকে হা করে তাকিয়ে দেখছিলো। অসহ্য লাগছিলো, আসলে আমিতো একটু বেশিই সুন্দর তাই এমন।
মিটুল ও এখন অনুর দিকে তাকিয়ে আছে। গতকাল যখন মেয়েটি বলেছিলো সে শাড়ি, চুড়ি, কাজল পরবে তারপর থেকেই মিটুল তার মনে মনে মেয়েটিকে মনের জানালায় সাজিয়েছিলো। সাহিত্যিকেরা তাই করে। কিন্তু কল্পনার সেই অনুকে যতটা সুন্দরী লাগছিলো তার থেকেও এখন অনেক বেশি সুন্দরী লাগছে। এককথায় সত্যিই তাকে অপসরী লাগছে। ওহ অপসরী মানে হচ্ছে অপূর্ব সুন্দরী। খোলা চুলে..........
অনু : কি হলো আপনার? এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন কেন? (লজ্জা পেয়ে মৃদ কন্ঠে)
মিটুল : নাহ, কিছু না। চলুন মেলায় যাই। পিঠা খাই।
অনু : চলুন।
দুজনের মেলায় ঘুরে ফিরে, অনেক অনেক পিঠা খায়, মিটুল প্রত্যেকটা বিল দিতে চাইলেও অনু পাগলীর পাগলামীর জন্য সে একটি টাকাও খরচ করতে পারে না। হ্যা খরচ করেছে, সিগারেটের টাকাটা মিটুল দিয়েছে, অনু সিগারেট খাওয়া পছন্দ করে না তাই সে খুব রাগ করেছিলো। কিছুখন কথা বলে নি সে মিটুলের সাথে।
রাত ৯ টা প্রযন্ত একসাথে কাটিয়ে এরপর মিটুল অনুকে তার বাসায় এগিয়ে দিয়ে আসে। সেখান থেকে বাসার কাছে এসে মিটুল দোকান থেকে একটা সিগারেট কিনে ধরিয়ে ২/৩ টা টান দিয়ে ফেলে দেয়। আর নিচু কন্ঠে বলে অনু সিগারেট পছন্দ করে না।
মিটুলের মধ্যে কিছু একটা পরিবর্তন হয়েছে, কিছুটা না অনেকটা। বাসায় এসেই সে অপেক্ষায় ছিলো অনু তাকে নক করবে, করেছেও। সারারাত দুজনে ফোনে কথা বলে, একদম ভোর প্রযন্ত।
এভাবেই প্রায় প্রতিদিন চলতে থাকে, মাঝে মাঝে দেখা করা, ঘুরতে যাওয়া। বুঝতেই পারছেন বিষয়টি, তাদের মধ্যে ইতিমধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে এবং মিটুল তার পরিবার থেকে ঠিক করা বিয়েও ভেংগে দেয়। সে এখন অপসরী কন্যা অনুর প্রেমে পুরোদমে মগ্ন, অনু ছাড়া সে এখন কিছুই বুঝে না।
ভালোই চলছিলো তাদের প্রেম, দেখা করা, ঘুরতে যাওয়া আর মাঝে মাঝে পার্কের কোনায় বা কোন নামি দামি রেস্টুরেন্টের এক ঘেরাও করা পর্দার ভিতর দুটি দেহে এক হয়ে যেত। দুজোড়া ঠোট একে অপরের মধ্যে কিছু একটা খুজে পেত। সবই ভালোই চলছিলো।
বন্ধু জামান সব কিছুই জানতো। মেয়েটি অনেক ধনী পরিবারের মেয়ে, আর মিটুল গ্রামের মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। জামান বার বার মিটুলকে বলে মেয়েটির প্রতি বেশি দূর্বল না হতে। কারন সুন্দরী ধনীর দুলালীদের উপর নাকি বিশ্বাস করতে নেই বলে জামানের ধারনা। তাহলে উপায়?
জামান : মিটুল দোস্ত তুই বিয়ে কর।
মিটুল : ওকে এখন বিয়ে করতে রাজি হবে?
জামান : এখন যদি বিয়ে করতে রাজি না হয় তাহলে দেখিস ঐ মেয়ে তোকে জীবনেও বিয়ে করবে না। আসলে মেয়েটি তোকে নিয়ে গেম খেলছে।
মিটুল : জামান তুই আসলে বেশি কথা বলিস। আচ্ছা আমি ওর সাথে কথা বলে দেখি।
মিটুল অনুর সাথে কথা।
মিটুল : অনু তোমাকে একটা সিরিয়াসলি কথা বলতে চাই
অনু : হাহহাহা, তুমি কি আমার কাছ থেকে অনুমতি নিচ্ছো? তুমি কি পাগল? যা বলার বলে ফেলো বাবু।
মিটুল : আমি চাচ্ছি আমরা বিয়ে করবো।
অনু : ভালো কথা। চলো কালই করি?
মিটুল : আমি ফান করছি না।
অনু : আমি সিরিয়াসলি বলছি। আমরা তিন দিন বন্ধ আছে। আমি বাবাকে কে বলি যে আমি আমার বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যাচ্ছি। তারপর বিয়ে করে আমরা কোথাও ঘুরে আসি।
মিটুল : আচ্ছা তাহলে কালই বিয়ে হবে।
মিটুল জামানকে সব বলে। জামান সব বন্ধুদের সাথে কথা বলে বিয়ের ব্যাবস্থা করে এবং বিয়ে করে ওদের দুজনকে কক্সবাজার পাঠিয়ে দেয়। কক্সবাজারে তারা ৩ দিন ছিলো। কক্সবাজার থেকে ফিরে এসেই অনু একটা সুসংবাদ পায় আর সেটু হলো অস্ট্রেলিয়াতে তার স্কলারশিপ হয়ে গেছে। খুব শিঘ্রই তাকে চলে যেতে হবে অস্ট্রেলিয়া। অনু সাথে সাথেই মিটুলকে জানায়। মিটুল ফোনে খুব খুশি হয়েছে ভাব নিলেও সে আসলে খুব কষ্ট পায়। তার প্রিয়তমা তাকে ছেরে চলে যাবে। এটা মোটেই সুখকর কোন সংবাদ নয়।
ইদানিং অনু আর আগের মত মিটুলকে বেশি সময় দেয় না। এর মধ্যে দুই একবার কিছু সময় হোটেলে কাটিয়েছে। কিন্তু তখনও কেমন যেনো অগোছালো আর অন্যমনস্ক মনে হচ্ছিলো অনুকে। অনু কিছুটা চেঞ্জ হয়ে গেছে।
অনু মিটুলকে এখন আর আগে ফোন দেয় না। মিটুল ফোন দিলেও অল্প স্বল্প কথা বলে ফোন কেটে দেয়।
মিটুল আবার চেঞ্জ, ঠিক মত খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। রাতে ঠিক মত ঘুমও হয় না। গত দুইদিন অনুর সাথে কোন যোগাযোগ হয় না। ফেসবুক আইডি টাও অনু ডিএকটিভ করে রেখেছে।
এসব চিন্তা করতে করতে ঘুমিয়ে পরে মিটুল।
ক্রিং ক্রিং ক্রিং (জামানের ফোন)
মিটুল : হ্যালো
জামান : ফেসবুকে ঢুকিস না নাকি?
মিটুল : ফেসবুকে ঢুক আর অনুর আইডি টা দেখ।
(জামান ফোন কেটে দেয়)
মিটুল ফেসবুকে ঢুকে, কিন্তু অনু এখনো তার আইডি একটিভ করেনি।
মিটুল জামানকে ফোন দেয়।
মিটুল : অনুর আইডি তো ডিএকটিভ করা। কেনো কি হইছে বলতো।
জামান : অনুর আইডি ডিএকটিভ করা না, অনু তোকে ব্লকড করেছে ফেসবুকে।
মিটুল: ও আমাকে ফেসবুকে ব্লকড করবে কেনো? কি যে বলিস না তুই।
জামান : অনু এক মন্ত্রীর ছেলেকে বিয়ে করেছে, এবং সেই ছেলের সাথে আজ রাতে অস্ট্রেলিয়া চলে গেছে।
মিটুল : কি সব আলতু ফালতু কথা বলছিস এই সব অনু জিবনেও আমার সাথে এমন করতে পারে না।
জামান : তোর ম্যাসেঞ্জারে আমি ওর আর ওর জামাই এর পিক দিয়েছে আর ওর কিছু পোস্টের স্ক্রিনশট দিয়েছি। দেখ।
মিটুল ম্যাসেঞ্জারে ঢুকে জামানের দেওয়া সব পিক দেখে। তারপর অন্য একটি আইডি দিয়ে অপসরী কন্যা অনুর আইডি তে ঢুকে দেখে জামান ঠিক বলেছে। তারপর মিটুল অনুর ফোনেও ট্রায় করে।
সব কিছু মিটুলের কাছে এক দু:স্বপ্নের মত লাগছিলো। হটাত মাথা ঘুরিয়ে পরে যায়। সকালে নিজেকে বিছানার এককোনে আবিস্কার করে মিটুল। নতুন একটা আইডি খুলে অনুকে ফেসবুকে নক করে। কিন্তু সিন প্রযন্ত করে না সে।
মিটুল আবার চেঞ্জ হয়ে যায়। ছেড়ে দেওয়া সিগারেটটা কে আবার কাছে টেনে নেয়। নতুন সম্পর্ক হয় ইরাম আর স্যালের সাথে। এই সম্পর্ক ভিন্ন এক সম্পর্ক।
বেশিকিছুদিন পির অনুর আইডি থেকে মিটুলের ম্যাসেজের রিপ্লে আসে
অপসরী কন্যা : আমাকে ক্ষমা করে দিও মিটুল। আমি যা করেছি আমাদের ভালোর জন্যই করেছি। প্লিজ তুমি আমাকে আর নক করো না প্লিজ। আমার হ্যাজব্যান্ড জানলে সমস্যা হবে আমার। আমার সবকিছুই তো তুমি পেয়েছো। আর তোমার যদি কোন টাকা পয়সা লাগে আমাকে বলো, একটা একাউন্ট নাম্বার দাও আমি টাকা পাঠিয়ে দিব।
মিটুল অনুর এসএমএস পরে কিছুক্ষন হাসে, তারপর অনুকে ফেসবুকে ব্লকড করে। তারপর রুম থেকে বের হয়ে রওনা দেয় শ্যালের উদ্দ্যেশ্যে।
মিটুল সত্যিই চেঞ্জ হয়ে গেছে। অপসরী কন্যারা এমনি, প্রয়োজনে নিজেরাও চেঞ্জ হয় অন্যকেউ চেঞ্জ করে। নিজে চেঞ্জ হয় সুখের খোজে আর মিটুলদের মত ছেলেদের চেঞ্জ করে বানায় লেখক।
মিটুলরা আর বদলায় না, বদলাতেও চায় না।
সমাপ্ত
( পুরো গল্পটাই আমার কল্পনা । এর সাথে বাস্তবতার কোন মিল নাই )
আমার লেখা আরো গল্প পরতে চাইলে আমার পেইজ টি লাইক দিতে পারেন ।
https://www.facebook.com/arshipon15/