সোমবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

পেত্নীকন্যার বিয়ে

পেত্নীকন্যার বিয়ে
(সম্পুর্ন গল্প)
লেখা : MD Asadur Rahman (Sh Ip On)
বাবা : শুনলাম তুমি নাকি বিয়ে করতে চাচ্ছো?
দুপুর : না...... মানে
বাবা : মানুষ তো আর তুমি বিয়ে করবে না। তুমি তো সারাদিন ভুত পেত্নী নিয়ে থাকো। তো পেত্নী দেখবো নাকি তোমার জন্য?
মা : কি বলছো তুমি এইসব। ছেলে বড় হয়েছে বিয়ে করবে না?
বাবা : কি করে ছেলে যে বিয়ে করবে? চাকরি করে? ব্যাবসা করে?  টাকা ইনকাম করে?  বউ কে খাওয়াবে কি?
মা : আজ করছে না বলে কি কখনোই করবে না।
বাবা : না করবে না। টাকার পিছুনে ছুটতে হয় তারপর টাকা ধরা দেয় এমনি এমনি না। তোমার ছেলেতো ভুত পেত্নীর পিছনে ছুটছে। সে ভুত গোয়েন্দা, সে ভুতের গল্প লিখে। যাও কোন পেত্নী ধরে এনে পেত্নীর সাথে বিয়ে দাও তোমার ছেলেকে।
মা : হ্যা, পেত্নীর সাথেই বিয়ে দিবো তোমার সমস্যা?
বাবা : দেশের সব পেত্নী মরে গেছে। তোমার ছেলের আর বিয়ে হবে না। সারা জীবন গল্প লিখেই কাটাতে হবে। বিয়ে করতে হবে না।
মা : চুপ করো তুমি।
দুপুর রুম থেকে বের হয়ে যায়। বের হয়ে হাটা ধরে।
বাজারের পাশের ব্রিজে উপর বসে আছে দুপুর আর এমন সময়ে সেখানে আসে সজল।
সজল : কিরে কি হইছে তোর?  মনমরা করে বসে আছিস যে?
দুপুর : চিন্তা করছি।
সজল : কি চিন্তা?
দুপুর : আচ্ছা সত্যি কি ভুত পেত্নী আছে? থাকলে কোথায় গেলে তাদের পাওয়া যাবে?
সজল : হাহাহাহা। সেটাতো তুই ভালো জানিস। তুই না ভূত পেত্নী নিয়ে গল্প লিখিস।
দুপুর : সেগুলো তো আমার কল্পনা। বাস্তবে তো আর আছে কি?
সজল : থাকলে কি হতো?
দুপুর : থাকলে একটা পেত্নী বিয়ে করতাম।
সজল : হাহাহহাহাহা মজা পাইলাম।
দুপুর : কল্পনা খুব খারাপ জিনিশ রে মামা।
সজল : ঐ ঐটা কি রে? কি সরে গেলো এটা ?
দুপুর : কি?
সজল : মনে হলো একটঅকঘ্যতগতজ্ঞতগা ছায়া এখানে দাঁড়িয়ে ছিল। হটাত চলে গেলো এখান থেকে।
দুপুর : ধুর ঐটা তোর কল্পনা।
সজল : হতে পারে। আচ্ছা চল এখান থেকে, সমচা খাবো রিপন ভাইয়ের ।
দুপুর : চল।
দুপুর আর সজল চলে যায় সমচা খেতে।
শুনশান নিরব একটি শহর। গাড়িঘোরা, ল্যাম্পপোস্ট, পাকাবাড়ি, সবই আছে শহরে। শুধু মানুষের অভাব। মানুষের অভাবতো হবে কারন এটা যে ভুতের শহর।
শহরের পাকা রাস্তা ধরে যাচ্ছে। সামনে বিশাল একটা বাড়ি। ওহ একটি কথা বলা হয়নি। শহরটা একটু ভিন্ন ধরনের শহরটা আপনার আমার জন্য উল্টো। বুঝেননি তো। ধরেন আপনি দাড়ালেন। রাস্তার উপর। তখন এই শহরের বাড়িঘর, গাছ এমনকি রাস্তার গাড়ি গুলোও উল্টো করা।
যাই হোক সেই সুবিশাল উল্টো বাড়ির দরজা দিয়ে ঢুকে গেলো। হটাত শুন্য থেকে একজন ভেষে উঠলো। মাটি থেকে একটু উচু দিয়ে হাটছে সে। একটা রুমের ভিতর ঢুকে গেলো। তার নাম চিকুম্বা।
রুমের ভিতর চিকুম্বার মত আরো বেশ কয়েকজন।
চিকুম্বা : মহারাজ কি কোন বিষয় নিয়ে চিন্তিত?
মহারাজ : হ্যা।
চিকুম্বা : কি হয়েছে মহারাজ?
মহারাজ : আর বইলো না। পেত্নীকন্যা চৈতির বিয়ের বয়স হয়েছে। কিন্তু সে জের ধরেছে যে সে নাকই
ইি মানুষ বিয়ে করবে। কিন্তু মানুষ বলতে কি কিছু আছে?  এসব তো শুধু গল্প কবিতা কল্পনায় বিচরন করে। এখন বলো সেটা আমি কিভাবে ওকে বুঝাবো?
চিকুম্বা : কি যে বলেন মহারাজ। মানুষ বলতে অবশ্যই কিছু আছে। আমি নিজ চোখে দেখেছি।
মহারাজ : কি যে বলো না এই সব তুমি। তোমারও কি ইদানিং রাতে ঘুম হয় না বুঝি?
চিকুম্বা : মহারাজ আমি ঠিকই বলেছি। এইতো আমি আজ নিজ চোখে দেখে আসলাম। একটা মানুষ বলছিলো যে সেও নাকি ভূত পেত্নী বিয়ে করবে।
মহারাজ : ঠিক বলছো তো তুমি?
চিকুম্বা : জি মহারাজ, অবশ্যই ঠিক বলছি।
মহারাজ : তাহলে তুমি আগামীকাল এই ভুত রাজ্যে মানুষ হাজির করবে। আর না করতে পারলে তোমাকে আগুনে নিক্ষেপ করা হবে।
চিকুম্বা : ঠিক আছে মহারাজ।
চিকুম্বা চলে আসে সেখান থেকে।
অন্যদিকে দুপুর তার নিজের রুমে বেডের উপর সুয়ে আছে। মন খুব খারাপ। এপাস ওপাস করছে। হটাত তার মনে হলো তার রুমের জানালার পাশে কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে। ছায়া দেখা যাচ্ছে।
দুপুর বেড থেকে নেমে দাঁড়িয়ে থাকে কিছুখন। বোঝাই যাচ্ছে একজন মানুষের ছায়া। সে ধিরে ধিরে এগিয়ে যায় জানালার কাছে। আর ছায়াটাও ধিরে ধিরে পিছিয়ে যায়। দুপুর জানালার পর্দা সরিয়ে দেখে না কেউ নেই। তাহালে সে কিশের ছায়া দেখিতে পেলো? নাকি তার মনের ভুল। জানালা বন্ধ করে দেয়।
এই সব চিন্তা করতে করতে সে আবার তার বেডে এসে সুয়ে পরে। ঘুম ঘুম চলে এসেছে এবার।
দুপুর জেগো আছো?
দুপুর শুনতে পায় কে জেনো তাকে ডাকছে। দুপুর কোন উত্তর দেয় না। চুপ করে থাকে।
দুপুর জেগে আছো?
দুপুর এইবারও কোন উত্তর দেয় না। চুপ করে সুয়ে থাকে। এরপর অনেকক্ষন আর কোন সারা শব্দ নাই। আবার ঘুম ঘুম চোখ লেগে আসে। খুব জোরে একটা বাতাস এসে রুমের জানালা খুলে যায়। সোয়া থেকে উঠে বসে।
দুপুর বাইরে আসো
দুপুর : কে তুমি?
আমাকে তুমি চিনবে না।
দুপুর : আমি যদি তোমাকে নাই চিনি তাহলে এতো রাতে তোমার কথায় কেনো আমি বাইরে আসবো?
তুমি আমাকে না চিনলেও আমি তোমাকে চিনি। তুমি বাইরে আসো। কথা আছে।
দুপুর চুপ করে বসে কিছুখন চিন্তা করে। সে ভাবে কে সে, ভুত নাকি? নাকি ভুতের গল্প লিখতে লিখতে অবচেতন মন এই সব করছে। আচ্ছা যদি ভুতই হয়ে থাকে তবে মন্দ কি, সাক্ষাতের পর তাকে নিয়ে একটা গল্প লিখা যাবে।
দুপুর ধিরে ধিরে বাইরে বেড থেকে নেমে দরজা খুলে বাইরে আসে। বাইরে কেউ নেই। সব কিছুই নিরব।
দুপুর : কোথায় তুমি? আমি তোমাকে দেখতে পাচ্ছি না।
আকি তোমাকে এই মুহুর্তে দেখা দিতে পারবো না। আমি তোমাকে আমার সাথে নিয়ে যাবো।
দুপুর : কি বলছো এই সব?  আমি কেনো তোমার সাথে যাবো?  আমি কোথাও যাবো না। আমি ফিরলাম আমার ঘরে।
কথা শেষ করে রুমের দিকে পা বাড়ানোর সাথে সাথে দুপুরের শরীর ভাড়ি হতে শুরু করে। হাত পা ঠান্ডা হয়ে যায়, নড়াচড়া করতে পারে না আর কিছু পর জ্ঞ্যান হারিয়ে ফেলে। সব কিছু অন্ধকার হয়ে যায়।
দুপুরের জ্ঞ্যান ফিরে। একটা খোলা মাঠে, গাছ পালা  গুলো সব উল্টো হয়ে আছে। তার কিছুখন পর খেয়াল করে কিছু বাচ্চা ছেলে পেলে পা উল্টো দিক করে মাথা তার দিকে দিয়ে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আর বাচ্চা গুলো দেখতে অনেকটা মানুশের মত হলেও তাদের কান ও নাক গুলো আমাদের চেয়ে লম্বা। চোখ গুলোও অনেক বড় আর গোল, তবে চোখে ক্যামন জেনো একটা মায়া আছে। আর হ্যা কয়েকজনের আবার গায়ের লোম অনেক। লোমের কারনে কালো দেখাচ্ছে।
দুপুর এই অদ্ভুত প্রানীগুলো দেখে জোরে চিৎকার করে। সে আবার জ্ঞ্যান হারায়।
কিছুখন পর আবার জ্ঞ্যান ফিরে আসে। এবার আসে পাসে কেউ নেই তবে কিছুক্ষন পরেই আরেকজন তার মুখের সামনে আসে ঠিক আগের বাচ্চাগুলোর মত করে।
~ ভয় পেও না দুপুর। আমিই তোমাকে এখানে নিয়ে এসেছি।
দুপুর : তুমি কে? আর আমাকে তুমি কোথায় নিয়ে এসেছো?
~ আমি ভূত, আমার নাম চিকুম্বা। আর তুমি এখন আছো ভূত-পেত্নীদের শহর কলংকপুরে।
দুপুর : কিহ!  ভূত বলতে আবার কিছু আছে নাকি? আমি সব স্বপ্ন দেখছি।
চিকুম্বা : হাহাহাহহাহা (ভৌতিক হাসি) তুমি নিজে শত শত ভুতের গল্প লেখো আর তুমি বলছো ভূত বলতে কিছু আছে কিনা। অবশ্য আমাদের ভূত সমাজও বিশ্বাস করে না যে মানুষ বলতে কিছু আছে। আর সেই কারনেই তোমাকে এখানে নিয়ে আসা। তবে আরেকটা কারন ও আছে।
দুপুর : তুমি মিথ্যে বলছো।
চিকুম্বা : আচ্ছা দেখো আমি যদি মানুষ হতাম তাহলে কি এইভাবে উল্টো হয়ে থাকতে পারতাম। আবার দেখো তোমার মত দাড়াচ্ছি ( চিকুম্বা সোজা হয়ে মাটিতে পা দিয়ে দাঁড়ায়)।
দুপুর : আমাকে প্লিজ আমার বাসায় দিয়ে আসো। আমি এখানে থাকবো না।
চিকুম্বা : কি বলছো তুমি এই সব। তোমাকে যদি আমি মহারাজের সামনে উপস্থিত না করতে পারি তাহলে সে আমাকে অগ্নীকূপে নিক্ষেপ করবে। তারপর আমি অনন্তকাল জলতে থাকবো। আহ! সে কি যন্ত্রনা।
দুপুর : আমাকে দিয়ে কি করবে তুমি?
চিকুম্বা : এই তুমি না পেত্নী বিয়ে করতে চাও, আমি তোমার সব কথা শুনেছি। আর তাই তোমাকে নিয়ে এসেছি আমাদে ভূত মহারাজের পেত্নীকন্যার সাথে তোমার বিয়ে দিতে। সেও তোমার মত আরজি করেছে সে মানুষ ছাড়া বিয়ে করবে না। আর ঐদিকে ভূতমহারাজ মানুষে বিশ্বাস করে না, তাই চিন্তায় পরে যায়।  আর তখন আমি তার কাছে গিয়ে তোমার কথা আর তোমার পেত্নী বিয়ে করার ইচ্ছার কথা বলি। তারপর সে তোমাকে আনার অনুমতি দেয়।
দুপুর : সত্যি পেত্নী বলতে কিছু আছে?  সত্যি আমি পেত্নী বিয়ে করতে পারবো। (দুপুরের চোখে মুখে ভয় কেটে গিয়ে উচ্ছলতা প্রকাশ পায়)।
চিকুম্বা : হ্যা গো সত্যি বলছি আমি ।
দুপুর : তাহলে আমাকে এখনি নিয়ে চলো।
চিকুম্বা : হ্যা। অবশ্যই।
চিকুম্বা দুপুরকে নিয়ে যায় ভূতরাজের দরবারে। উল্টো করা দরজা দিয়ে ঢোকার সাথে সাথেই ভিতরে থাকা ভূত গুলো মানুষ মানুষ বলে চিৎকার করে দিকবেদিক ছোটাছুটি শুরু করে দেয়। তারা মানুষ দেখে ভয় পেয়ে যায়।
চিকুম্বা : ভয় নেই ভয় নেই আমি চিকুম্বা। আর আমার সাথের মানুষটি খুব ভালো। এই মানুষ কোন ভূত পেত্নীর ক্ষতি করে না। খুব ভালো। তোমরা ভয় পেয় না তো।
ভূতমহারাজ : তুতুতুতুতুতুতুতুমি সত্যি সত্যি মানুষ ধরে নিয়ে এসেছো?
চিকুম্বা : জি মহারাজ, আপনিই তো বলেছিলেন মানুষ ধরে না আনতে পারিলে আমাকে অগ্নীকূপে নিক্ষেপ করবেন।
ভুতমহারাজ : যাক যাক ভালো করেছে। আচ্ছা মানুষ এইভাবে উল্টো হয়ে আছে কেনো?
চিকুম্বা : মহারাজ এরা মানুষ, এরা এভাবেই থাকে। এদের কাছে আমরা উল্টো হয়ে আছি। যদিও আমরা চাইলেই তাদের মত সোজা হয়ে দাড়াতে পারি কিন্তু এরা পারে না।
এই কথা শুনে দরবারের অন্যান্য ভূত পেত্নীগন খিল খিল করে হেসে উঠে।
ভূতরাজ : আচ্ছা আপনি কি পেত্নী বিয়ে করতে রাজি আছেন হে মানুষ?  আর আপনার নাম আছে কি কোন?
দুপুর : আমার নাম দুপুর। আর জি ভুতরাজ আমি পেত্নী বিয়ে করতে রাজি আছি। তবে তাকে আগে আমি একবার দেখতে চাই।
ভুতরাজ : শুভ সংবাদ শুভ সংবাদ। তবে সমস্যা হচ্ছে পেত্নী আরজি ধরেছে সে কোন মানুষের সাথে ভাব করে বিয়ে করবে। তাই আপনাকে প্রথমে তার সাথে ভাব করতে হবে।
(দুপুর চিকুম্বার কানে কানে জিজ্ঞেস করে ভাব মানে কি, চিকুম্বা উত্তর দেয় মানুষরা যেটাকে প্রেম বলে সেটাকেই ভুতপেত্নীরা ভাব বলে)
দুপুর : কিন্তু সেটা কিভাবে সম্ভব?
চিকুম্বা : ভূতরাজ আপনি সেই বিষয় নিয়ে চিন্তা করবেন না। আমি তাদের মধ্যে ভাব সৃষ্টির ব্যাবস্থা করবো।
ভুতরাজ : শুভ সংবাদ শুভ সংবাদ। তাহলে তাই হোক। দুপুর নামের এই মানুষটির দেখভাল থেকে শুরু করে পেত্নীর সাথে ভাব করনো চিকুম্বার দায়িত্ব। তারপর এই ভুতরাজ্যের শহর কলংকপুরে পেত্নীকন্যা চৈতি আর মানুষ দুপুরের জাকজমক বিয়ের ব্যাবস্থা করা হবে। আজ তাহলে আমি এখানেই উঠি।
চিকুম্বা আর দুপুর সেখান থেকে চলে আসে।
অন্যদিকে পেত্নী কন্যা খুব চিন্তায় মগ্ন থাকে সারাদিন, কোথায় সে পাবে একজন মানুষ। যাকে সে বিয়ে করবে।
দুপুর আর চিকুম্বা কথা বলছে, কিভাবে পেত্নীদের সাথে প্রেম করতে হয়।
চিকুম্বা : পেত্নীরা ভাজা মাছ খুব পছন্দ করে, তুমি একটা কাজ করতে পারো তুমি একটা ভাজা ইলিশ মাছ নিয়ে পেত্নীর সামনে গিয়ে হাজির হও। তারপর তাকে তোমার মনের ভাবের কথা বলো।
দুপুর : আচ্ছা ভুতরা কি এইভাবেই প্রেমপ্রস্তাব করে পেত্নীদের?
চিকুম্বা : প্রেমপ্রস্তাব কি?...........  ওহ হ্যা বুঝেছি, ভাবপ্রদান তো?
দুপুর : হ্যা।
চিকুম্বা : ভুতরা হটাত গিয়ে পেত্নীদের সামনে হাজির হয় তারপর কিছু ঘুষ দিয়ে পেত্নীদের ভাবজমায়।
দুপুর : ঘুষ? তোমরাও ঘুষ দাও আর খাও?  ছি ছি ছি।
চিকুম্বা : ওহ দু:ক্ষিত। তোমরা যেটা উপহার বা গিফট বলো সেটাই আমাদের ভুত রাজ্যে ঘুষ বলে। আর তোমদের দুনিয়াতে যেই ঘুষ সিস্টেম আছে সেটা আমাদের এখানে নেই। বুঝলে?
দুপুর : হ্যা বুঝলাম। তো এখন আমাকে কি করতে হবে?
চিকুম্বা : দুপুর এখন ফার্স্ট তোমাকে পেত্নীর কাছে যেতে হবে। তাকে তোমার ভাবে ফেলতে হবে।
দুপুর : তাকে পাবো কোথায়?
চিকুম্বা : আমি নিয়ে যাবো।
দুপুর : সেটা কখন?
চিকুম্বা : বিকেলে পেত্নীকন্যা চৈতি দিঘীর ধারে আসে। তখন তুমি তার কাছে যাবে।
দুপুর : আচ্ছা ঠিক আছে।
পেত্নীকন্যার মনটা আজ তেমন একটা ভালোনা। প্রতিদিন দিঘীর ধারে যাওয়ার সময় সাথে দুই একজন সখা (বান্ধবী) নিলেও আজ সে একাই এসেছে। দিঘীর ধারে হাটছে। আর কল্পনা করছে তার স্বপ্নের মানুষটি কি সত্যিই তার কাছে কখনো আসবে, নাকি তাকে সারাজীবন একাই থাকতে হবে। ভাবতে ভাবতে একটি গাছের নীচে বসে। (আগেই বলেছি ভুত রাজ্যের প্রায় সবকিছুই উল্টো, গাছও উল্টো)
চিকুম্বা: দুপুর, এই দুপুর ঐ দেখো চৈতি।
দুপুর : চৈতি কে?
চিকুম্বা : আরে পেত্নীকন্যার নামই তো চৈতি। নিজের হবু বউ এর নাম ভুলে গেলে চলবে?
দুপুর : ওহ হ্যা। একদমই ভুলে গিয়েছিলাম। আচ্ছা আমি তাহলে তার সামনে যাই।
চিকুম্বা : আরে দারাও পেত্নীকন্যা কখনো মানূষ দেখেনি। তুমি এইভাবে উল্টো হয়ে তার সামনে দাড়ালে হয়তো ভয়ে জ্ঞ্যান হারিয়ে ফেলবে। আর তারজন্য ঘূষও নিতে হবে তো তাই না।
দুপুর : আমি তো ঠিকই আছে। উল্টো তো তোমরা।
চিকুম্বা : আমরা সবাই যার যার জায়গা থেকে ঠিকই আছি। এখন শুনো। তুমি তো আর আমাদের মত এইভাবে থাকতে পারবে না তাই আমি উপর থেকে তোমার পা ধরে তোমাকে সোজা করে ধরবো।
দুপুর : সোজা করে না, বলো উল্টো করে ধরবে।
চিকুম্বা : আচ্ছা যেটাই হোক। আর হ্যা, এইটা ধরো এইটার ভিতর কিছু তেলোপোকা আছে, পেত্নীরা খেতে খুব পছন্দ করে।
দুপুর : তেলেপোকা???  মেয়েরা দেখলে তো ভয়ে লাফিয়ে দৌড় দেয়।
চিমুম্বা : চৈতি কোন মেয়ে না, সে পেত্নীকন্যা। সুতরাং মানুষের সাথে মিলালে চলবে না।
দুপুর : ঠিক আছে।
চিকুম্বা দুপুরের পা ধরে মাথা নিচের দিকে দিয়ে গাছ থেকে পেত্নীর সামনে নিয়ে আসে। পেত্নীকন্যা চৈতি বসে ছিলো আনমনে। খেয়ালকরেনি এখনো দুপুরকে। আর দুপুর অপলক দৃষ্টুতে পেত্নীকে দেখছে।
আচ্ছা আপনার কি মনে হয় পেত্নী দেখতে কেমন? প্লিজ দয়া করে নিচের অংশটুকু পড়ার আগে আপনি কমেন্টস বক্সে পেত্নীর একটি বর্ননা দিন। কেমন হতে পারে পেত্নীকন্যা?  পেত্নীকন্য?????????

দুপুরের কল্পনায় ছিলো হয়তো পেত্নী দেখতে হবে ফর্সা, কিন্তু কুতসিত। চোখ গুলো থাকবে বাকাঝোকা, নাকটা হবে অনেক লম্বা, দাতগুলো বিশ্রি আর ভাংজ্ঞাচোরা, চুলোগুলো নরমালিই সবাই ভাববে এলোমেলো আর নখগুলো অনেক বড় বড়।
কিন্তু না, পেত্নীকন্যা চৈতি ঠিক তেমন না, আর তাই দুপুর অপলক, মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে চৈতির দিকে। আচ্ছা আমি একটু পেত্নী কন্যার বর্ননা দেই।
প্রথমে চোখ দুটো। গোল মুখে বড় বড় মায়াবী টলমলে চোখজোরা, চোখে কাজল পরছে, কানদুটোও একটু বড় আর খাড়া, দাতগুলো একদম সাদা, সামনের দুটো দাত একটু উচু। নাকটা একটু সামান্য খাড়া, আর হ্যা বড় বড় মায়াবী চোখে চশমা পরেছে। আমরা যেমন ছোটবেলায় নারিকেল পাতা দিয়ে চশমা বানাতাম, সেই নারিকেল পাতার চশমা পরা। মিলিয়ে অসাধারন।
চৈতি আনমনে হেসে উঠলো কিছু একটা ভেবে। আর তখন দুপুর খেয়াল করলো চৈতির আরেকটি সৌন্দর্য আছে আর সেটা হলো তার একটি দাত নেই, আর তার কারনে তার হাসিটা অসাধারন, গালে টোলও পরেছে দেখছি।
এই এই এই কে কে কে কে আপনি?
দুপুর : আমি দুপুর। এই নাও তোমার ঘুষ।
চৈতি : ঘূষ কেনো?
দুপুর : আমি তোমাকে দেখে তোমার ভাবে পরেগেছি। তোমাকে বিয়ে করতে চাই।
চৈতি : ছি ছি এতো বড় সাহস তোমার তুমি আমাকে  বিয়ের প্রস্তাব দাও, আমি মানুষ ছাড়া কাউকে বিয়ে করবো না।
দুপুর : আমি মানুষ, আমার নাম দুপুর।
চৈতি : মানুষরা কখনই এইভাবে সোজা হয়ে থাকে না। আর এইভাবে ভাব নিবেদন করে না। আর এইগুলা কি হ্যা?  (ঘুষের প্যাকট খুলে তেলোপোকা দেখে চিতকার দিয়ে জ্ঞ্যান হারিয়ে ফেলে)
চিকুম্বা এই পরিস্থিতি দেখে হতভম্ব হয়ে দুপুরের অয়া ছেরে দেয় আর দুপুর ধপাস করে নিচে পরে যায়। তারপর পেত্নীকন্যা চৈতির কাছে আসে এবং তার জ্ঞ্যান ফিরানোর চেষ্টা করে।
চিকুম্বাও নিচে চুলে আসে। উল্টো হয়ে সেও বিভিন্ন উপায়ে চৈতির জ্ঞ্যান ফিরানোর চেষ্টা করে।
দুপুর : ওর মুখে হালকা পানি ছিটিয়ে দিলেই জ্ঞ্যান ফিরে আসবে।
চিকুম্বা : তুমি এইভাবে ওর সামনে আসলে ও আবার জ্ঞ্যান হারাবে।
দুপুর : চুপ তুমি চুপ। আমাকে আমার মত কাজ করতে দাও। ও মানুষের সাথে প্রেম করতে চায়, কোন ভূতের সাথে নয়। সো আমাকে মানুষ হিসেবেই ওর সামনে দাড়াতে হবে।
চিকুম্বা : ভালো বলেছো। তোমরা মানুষরা আসলেই অনেক বুদ্ধিমান।
পানি ছিটিয়ে চৈতির জ্ঞ্যান ফিরিয়ে আনে।
দুপুর : আমি দু:ক্ষিত আপনাকে ভয় দেখানোর জন্য।
চৈতি : আমি পৃথিবী থেকে এসেছি, আমার নাম দুপুর। আমি একজন মানুষ।
চৈতি : (নিচু গলায় একট লজ্জামাখা মুখকরে) আপনি এই কলংকপুরে কেনো?
এরপর দুপুর শুরু থেকে শেষপ্রযন্ত সব খুলে বলে এবং অবশেষে পেত্নীকন্যা চৈতির সামনে হাটুগেরে বসে প্রেম নিবেদন করে এবং পেত্নীকন্যা চৈতিও খুশি মনে দুপুরের ভাবনিবেদন কবুল করে নেয়।
এরপর দুপুর আর পেত্নীকন্যা কলংকপুরের ভূতরাজ এর কাছে যায়। চৈতি মানুষ দুপুরকে বিয়ের ইচ্ছের কথা তার বাবাকে জানায় এর পর
ভুতরাজ ধুমধাম করে বিয়ের আয়োজন করে তাদের বিয়ে দিয়ে দেয়। শেষ হয় পেত্নীকন্যার বিয়ে। আর বিয়ের পর সংসারের পালা, মানুষ দুপুরের সাথে পেত্নী কন্যার সংসার। আবার কোন একদিন পেত্নীকন্যার সংসারের গল্প নিয়ে হাজির হবো। অপেক্ষা করুন, পেজে লাইক দিয়ে সাথে থাকুন। www.facebook.com/arshipon15/ ভালো লাগলে পেজে অবশ্যই লাইক দিবেন। এক লোকের গল্প ভালো লাগছিলো কিন্তু পেজে লাইক দেয় নাই, এরপরের দিন তার ঘাড় মটকে দিয়েছিলো পেত্নী। সো বি কেয়ারফুল। হাহাহাহাহাহাহাহাহাহা। আল্লাহ হাফেজ।