রবিবার, ২৬ আগস্ট, ২০১৮

ধ্যাত্তেরিকা

প্রথমে একটু ভনিতা দিয়ে শুরু করি। কিছুদিন হয় নিজের পারসোনালিটি চেঞ্জ করার দারুন এক ইচ্ছে জাগে মনে।  আর কত এই ছ্যাকা খাওয়া ঘ্যানর ঘ্যানর প্যানর প্যানর।  এই পারসোনালিটি চেঞ্জ করতে চাওয়া আর চেঞ্জ হওয়ার প্রয়োজনিয়তা নিয়ে আমি খুব ভাবতেও বসেছিলাম। আর কোন কিছু গভীর ভাবে ভাবতে চাওয়া মানেই আমার কাছে ঘুমের ৩/৪ টা ট্যাবলেট খেয়ে ঝিম ধরে বসে অথবা সুয়ে থাকা।  আচ্ছা সেই ভাবা থেকেই আজকের এই লেখার শুরু।  কিন্তু সময়ের সাথে সব চেঞ্জ হয়।  আমার না হয় চেঞ্জ হওয়ার ইচ্ছে টাই চেঞ্জ হলো। তাই হইতোবা সকলের থেকে একটু দূরে, ছদ্মবেশে।

আমার মতে কবিতা দুই ধরনের হয়৷ এক ঃ  ভালো লাগছে না, ধ্যাত্ত্যেরিকা একটা কবিতা লিখে ফেলি।  দুই ঃ কাউকে কল্পনা করে বা নিদ্রিষ্ট কিছু কল্পনা করে তাকে নিজের মত সাজিয়ে গুছিয়ে মনের মত করে প্রকাশ করা।
আমি সেকেন্ড টাইপের টা বেশি লিখি। আমার যত লেখা সব একজনাকেই নিয়ে৷
আমার লেখা কবিতা স্বার্থক কারন সে একবারের জন্যেও হলেও আমার কবিতায় মুগ্ধ হয়েছিলো। আমি নাকি তার দেখা সেরা কবি। সে এখন আর আমার কবিতা পরে না, আমায় দেখে না। থাক পরে ছিলো তো৷ আমি তাই feel good.... এবার কবিতাটা পরে কিছুটা হেসে " ধ্যাত" টা আমার কমেন্টেসে ভরেই থাকুক। আর তেরিকাটা না হয় এবার বাদই দিলাম। আর হ্যা, প্রিয়া তুমি যদি এই লেখা পরে থাকো তাহলে অবশ্যই ধ্যাত্তেরিকা কমেন্টস টা কিন্তু চাই। সুধু তোমার কাছ থেকে।

আমার প্রিয়তমা শুধু আমাকেই খোজে
না খোজে না, সে নিজেকে অন্যের বুকে গোজে।
কিংভূত কিমাকার থেকে সব দূরে
আলতো বেসুরো আমার দুনিয়া।
একা সিব ছেড়ে ছুড়ে।
হটাত আবেশে বৃদ্ধ অলস কিছু ব্যালকনি এসে
ধ্রুবতারা মেখে নিয়ে রাত জাগা চুলে
ক্লান্ত চোখ জোর করে খুলে
আবার আর একটিবার পাশ ফিরে শুলে
হয়তোবা হারিয়ে যায় এসব ক্ষনিকের ভূলে।

শুক্রবার, ১০ আগস্ট, ২০১৮

অপেক্ষায় তোমার



জেনো রাখো
আবার আমি হারিয়ে গেলাম
স্বপ্ন ভরা তোমার সুন্দর এই পৃথিবী থেকে।
আমি চলে গেলাম
তোমারই চলার পথ থেকে।
জানিনা খুজবে কিনা। যদি খোঁজ আমায়
পেয়ে যাবে দু পা বাড়ালেই।
আর যদি এই মোহময় পৃথিবীতে
নাই বা খোজ, নাই বা ভালোবাসো আমায়,
আর আমার ভালোবাসা যদি সত্যি হয়
তাহলে মৃত্যুর পরের জগতে তুমি আমার।

তোমার অশান্ত মনে যদি আবার
খোঁজে আমায়,
আমাকে দেবার জন্য
তোমারই ভালোবাসাটা রেখ
আমারই জন্য সবকিছুর উপরে তোলে।

আর যদি আমার শব্দ শুনতে চাও
এসো তুমি বৃষ্টির কাছে
শুনতে পাবে তোমায় নিয়ে রচিত
ভালবাসার গল্পকবিতা গুলো।

যদি আমার বেদনা বুঝতে চাও
এসো তুমি তোমার আমার প্রিয় লেকের ধারে
বুঝবে তাহলে আমার হৃদয়ের নীরব কান্নার ভাষা।

যদি আমার মমত্ব জানতে চাও
এসো তুমি সরবরের বট বৃক্ষের নীচে
অনুভব করবে আমার হৃদয়ে
তোমার প্রতি বিশালতা কত !

যদি তুমি আমার কষ্ট জানতে চাও
তাকিও মেঘলা আকাশের দিকে
দেখবে আমার হৃদয়ে
তোমারই জন্য
ভালোবাসার যন্ত্রনা আছে কতটা।

যদি আমার প্রেম চাও
চলে এসো জ্যোৎস্না রাতের
সরবরের খোলা আকাশের নীচে
পেয়ে যাবে আমার হৃদয়ের
মিষ্টি প্রেমের আলো।

যদি আমার ভালাবাসা চাও
এসে তুমি ছোট্টদিনের স্মৃতিতে ফিরে
বুঝতে পারবে
আমার ভালোবাসার
পাগলমো কতটা।

যদি আমার স্পর্শ চাও
এসো তুমি ধানমন্ডি ৮ এর চায়ের দোকানে
প্রতিটা কাপে আমার স্পর্শ পাবে।
আনন্দ পাবে হৃদয়ের মাঝে।

যদি আমার বুকে মাথা রাখতে চাও
চলে এসো স্কুল জীবনের কল্পনায়
জানবে তখন
আমার ভালোবাসা কতটা নির্মল।

যদি হারাতে চাও আমার সাথে
এসো তুমি প্রিয় নির্মল গ্রামে
দেখবে তখন
তোমার প্রিয়র তোমার প্রতি ভালোবাসা আর পাগলামী।

বুধবার, ৮ আগস্ট, ২০১৮

স্বপ্ন, দুঃস্বপ্ন অথবা গল্প


স্বপ্ন, দুঃস্বপ্ন অথবা গল্প
লেখাঃ MD Asadur Rahman – Shipon


নিজেকে খুব একা একা লাগছে আসিফের। ভালোবাসার মানুষকে হারানোর অনুভুতি কখন মুখের দুই চার বাজ্যে প্রকাশ করা সম্ভন না। আসিফও পারেনি। আচ্ছা এটা কি ভালোবাসা? এটা তো সুধু একতরফা ভালোবাসা। প্রায় ১০ বছর হয় আসিফ একাই আসিফাকে ভালোবেসে গেছে।
হাসছেন তাই না? আসিফ আসিফা। আমিও হেসেছিলাম

আরিফঃ আরে ব্যাটা এক ছ্যাকা খেয়ে দেবদাস হয়ে গেলি নাকি?
রুদ্রঃ শোন মামা একটা গেছে তো কি হইছে, আরেকটা আসবে।
আসিফঃ আমি ওকে কখনই ভুলতে পারবো না।
আরিফঃ তাহলে ওকে বাসা থেকে উঠিয়ে নিয়ে আসি।
আসিফঃ মজা নিস না। খুব কষ্ট হচ্ছে। একটা বিড়ি দে।
ইমরুলঃ এভাবে কাদছিস কেন?
আসিফঃ বুঝবিনা।
রুদ্রঃ বিয়ে হইলো কবে?
আসিফঃ আমার সাথে কথা শুরু হওয়ার কিছুদিন আগেই।
ইমরুলঃ শ্বশুরবাড়ি কোথায়? ও কি শ্বশুরবাড়ী থাকে?
আসিফঃ কাবিন হয়েছে। এখনো শ্বশুরবাড়ি যায় নাই।
আরিফঃ এখনো সময় আছে, ওকে বল চলে আসতে।
আসিফঃ ও কেন আসবে? আমি ওকে ভালোবাসি, ও তো আমাকে ভালোবাসে না। ও ওর স্বামীকেই ভালোবাসে।
আরিফঃ স্বাভাবিক।
রুদ্রঃ কিশের স্বাভাবিক। তুই না বলছিলি যে ও তোকে ভালোবাসতো।
আসিফঃ ভালোবাসতো বলি নাই, বলছি ছোট সময়ে ও আমাকে পছন্দ করতো।
রুদ্রঃ এখন করে না?
আসিফঃ জানিনা।
ইমরুলঃ মামা আমি বলি তুই ওকে বল তোর কাছে চলে আসতে। যেহেতু ছোট সময়ে তোকে পছন্দ করতো তারমানে তুই ওর ফার্স্ট লাভ। তুই ওকে ফিরে পেতে চা। ওর কাছে নিজের ভালোবাসা দাবি কর। দেখবি চলে আসবে।
আসিফঃ মামার বাড়ির মোয়া তো যে চলে আসবে। আমি যাই।
আরিফঃ হুম, বাসায় গিয়েই তো ঘুমের ঔষধ খেয়ে সব ভুলে যাবার চেষ্টা করবি। তুই কি জানিস ধিরে ধিরে তুই মৃত্যুকে টেনে আনছিস?
আসিফঃ ঐটাই তো চাই আমি। গেলাম।
বাসায় গিয়ে ঘুমের ঔষধ ৬টা গিলে ঘুমিয়ে পরে আসিফ। গভীর ঘুম। এতো ঘুম যে পাশের ফ্ল্যাটের প্রতিবেশির মৃত্যতে তার স্বজনদের কান্নাও আসিফের ঘুম ভাঙাতে পারলো না।

ইমরুলের ফোনঃ
ইমরুলঃ মামা কোথায় তুই?
আসিফঃ এইতো বাসায়। কেন?
ইমরুলঃ এই মুহুর্তে তুই কোথায়? মানে চেয়ারে বসা নাকি বিছানায় সোয়া নাকি ছাদের রেলিং এর পাশে দাঁড়ানো?
আসিফঃ পিসির সামনে বসে আছি।
ইমরুল ঃ আচ্ছা মামা শোন।
আসিফঃ ভনিতা না করে কি বলবি বল?
ইমরুলঃ আসিফা তো চলে আসছে।
আসিফঃ মানে? কি বলছিস তুই?
ইমরুলঃ হ্যা ঠিকই বলছি। আমরা ওকে বুঝিয়েছি যে তুই ওকে কতটা ভালোবাসিস। তারপর ও তোর কাছে চলে এসেছে।
আসিফঃ কোথায় এখন?
ইমরুলঃ ধানমন্ডি ৩২ এ আছি আমরা সবাই। তুই মেস থেকে মামাদের নিয়ে আয়, উনাদের সাহায্য লাগবে।
আসিফঃ আচ্ছা আমি সবাইকে নিয়ে আসছি।
আসিফ তার ফ্ল্যাট থেকে সালাউদ্দিন, ইকবাল, বিশিষ্ট এডোভোকেট আবু সাইদ, শিপন আর হাবিবকে নিয়ে যায়।
আসিফ আসিফাকে দেখে কেদে দেয় বোকার মত। আর আসিফের কান্না দেখে বাকিরা সবাই হেসে দেয়।
শিপনঃ এই বোকা ছেলে কাদে কেন? দেখো মামা তোমার আসিফা তোমার কাছে চলে এসেছে। ইশ এইভাবে যদি আমার রোদেলা আমার কাছে চলে আসতো।
আবু সাইদঃ ধুর শিপন ভাই, সব সময় আপনার ছ্যাকা খাওয়া কাহিনি শুনতে ভালো লাগে না। এখন আনন্দের সময়। চলেন আগে ওদের বিয়ের ব্যাবস্থা করি।
শিপনঃ হুম। এডভোকেট আবু সাইদ থাকতে বিয়ে পরানো নিয়ে টেনশন কিশের?
সাইদ ঃ সুধু বিয়ে পরালেই হবেনা, আগে যেহেতু কাবিন হয়েছিলো আরেকজনের সাথে তাকে আগে ডিভোর্স লেটার পাঠাতে হবে তারপর বিয়ে। আচ্ছা চলেন আগে কোর্টে যাই তারপর দেখা যাবে।
সবাই মিলে কোর্টি গিয়ে রাতে আসিফের বিয়ের কাজ শেষ করে বাসায় নিয়ে আসে। আপাতত তাদের ফ্ল্যাটেই উঠায়। শিপন আর ইকবাল এ কয়দিন পাশের রুমে থেকে আসিফের থাকার ব্যবস্থা করে।
বাসর ঘর সাজায় হাবীব আগেই চলে এসেবাসর ঘরে আসিফা। যদি আনুষ্ঠানিক ভাবে বিয়ে হতো ওদের তাহলে হয়তো বাসর ঘরটা অনেক অনেক ফুল দিয়ে সাজানো থাকতো, দামী একটা খাট থাকতো। কিন্তু ভালোবাসার পাওয়ার জন্যে দুজনেই এই পাওয়াটুকু সেক্রিফাইজ করেছে, তবে হাবীব কিন্তু বাসর ঘর খারাপ সাজায়নি। কয়েকটা ফুল দিয়ে আর বিছানাটা পরিস্কার করে আগেই রেখে দিয়েছে। বাসার ঘরে দুজনে একসাথেই প্রবেশ করে তাই সিনেমা বা অন্যান্য গল্পের মত বধু আগেই সেজে গুজে বসে ছিলো অতঃপর স্বামীর প্রবেশ করার পর স্ত্রী কাছে এসে পায়ে ধরে সালাম করে এই রিতিটুকু এখানে হলো না। দুজন দুজনকে জরিয়ে ধরলোআসিফা কাদছে হাওমাও করে আর আসিফের চোখ দিয়ে পানি পরছে কিন্তু শব্দ হচ্ছে না। আসিফ আসিফাকে কান্না থামাতে বলে, কিন্তু আসিফ যতবারই আসিফাকে থামতে বলে আসিফার কান্নার বেগ ততই বারতে থাকে। আসিফ হটাত করে আসিফার ঠোটে চুমু দিয়ে দেয়। এর পর আবার দুজনের ঠোট এক হয়ে যায়। দুজন দুজনকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে। এখন মনের প্রেমের সাথে শরীরের প্রেম চলছে তাই এখান থেকে এখন আমরা বিদায় নেই।
৬দিন পর আসিফ আসিফাকে নিয়ে তার এক বোন আর দুলাভাই এর সাথে সাবলেটে মিরপুর উঠে। ভালোই চলছে দুজনের। আসিফ একটা প্রাইভেট ফার্মে  চাকরি করছে, মাসে ১৯০০০ টাকা স্যালারী পায় আর রোদেলা একটা কোচিং সেন্টারে ক্লাস নিয়ে ১০/১২০০০ এর মত পায়। এই দিয়ে দুজন আর গ্রামে বাবা-মা, ভাই-বোনের সংসার ভালোই চলছে। প্রতি শুক্রবার বিকলে দুজনে সারাদিন বাইরে থাকে। সকালে বের হয়ে ধানমন্ডি স্টার কাবাবে খাসীর পায়া দিয়ে নাস্তা, তারপর রবিন্দ্র সরবরে এসে দুধ চা, হাটাহাটি, দুপুর হলেই বসুন্ধরা এসে লাঞ্চ করে সিনেপ্লেক্সে টিকিট কেটে মুভি দেখা। মুভি দেখা শেষে টুকটাক শপিং বের হয়ে আবার রবিন্দ সরবরে গিয়ে গরুর চাপ দিয়ে লুচি, আবার চা। অতঃপর বাসায় ফেরা।
এইভাবে বছর খানেক পার হয়। আসিফা প্রেগনেন্ট হয়, কিছুদিন পরই বাচ্চা হবে তাই আসিফের ও এখন অনেক দায়িত্ব। আসিফার দেখাশোনা করা, নতুন অতিথির জন্য টাকা পয়সা জমানো, আগে আগে বাসায় ফেরা, আসিফাকে ডাক্তার দেখানো সব কিছু একজন আদর্ষ স্বামীর মত পালন করে আসিফ।
আসিফ এবং আসিফার কোল জুরে মহান আল্লাহ ফুটফুটে এক কন্যা সন্তান দেয়। আসিফের মা নাম রাখে আশফিয়া। বাবা মার পরম মমতায় আশফিয়া বড় হতে থাকে। খুব সুখেই কাটছে তাদের সংসার।
একদিন ওরা তিনজনে শপিং এ যায়। শিপনের হাতে শপিং এর ব্যাগ, রোদেলার কোলে আশফিয়ারাস্তা পার হচ্ছে। আসিফের পিছনেই ছিলো আসিফা আর আশফিয়া। রাস্তা পার হচ্ছে আর এমন সময় হটাত একতা বাইক এসে আসিফার উপর দিয়ে উঠিয়ে দেয়। আশফিয়া ছিটকে পরে যায়। আসিফার মাথায় আঘাত পেয়েছে, মাথা থেকে রক্ত ঝরছে। আসিফ স্তব্ধ, চীৎকার করে সাহায্য চাইবে কিন্তু মুখ দিয়ে কোন শব্দ বের হচ্ছে না তার। আসিফার কাছে গিয়ে বসে আসিফাকে ধরে, পিছনে আশফিয়া কান্না করছে। আসিফ এখন কি করবে কিছু বুঝছে না। কেউ এগিয়েও আসছে না। আসিফার শরীর ধিরে ধিরে শীতল হয়ে যায়। আসিফ খুব জোরে চিৎকার করে............
ঘুম ভেঙ্গে যায় আসিফের। আসিফ স্বপ্ন দেখছিলো। বিছানা থেকে লাফ দিয়ে উঠে। তার বুকটা ধরফর করছে। কি ভয়ানকই না ছিলো স্বপ্নের শেষ দৃশ্যটা। আসিফ আবার শুয়ে পরে।এপাশ থেকে ওপাশ হয়। একপাশ থেকে আরেকপাশে হাত রাখারপরই নরম তুলতুলে কিছু স্পর্শ পায়। চমকে উঠেমাথা থেকে কাথা শরীরে পাশে চেয়ে দেখা মাত্রই চিৎকার দিয়ে উঠে।
কে কে কে,
বাবা-
বাবা মানে, এই পিচ্চি তুমি কে?
আসিফ অনেক ভয় পাচ্ছে, সারা শরীর দিয়ে ঘাম ঝরছে। সে ভূতুরে একটা ভয় পাচ্ছে। কয়েকবার চিৎকার করার পরও তাকে কেউ সাহায্য করতে এগিয়ে আসিনি। আসিফ একটু সাহস সঞ্চার করে বাচ্চাটার সামনে যায়। বাচ্চাটির সামনে গিয়ে তো আসিফ আরো অবাক হয়ে যায়, কারন এই বাচ্চাটি হলো সেই বাচ্চা যাকে আসিফ স্বপ্নে দেখেছে। মানে স্বপ্নের আসিফ আর আসিফার কন্য আশফিয়া।
বাচ্চাটি হটাত কান্না শুরু করে, ধিরে ধিরে বাচ্চার কান্না বাড়তে থাকে আর কান্নার সাথে সাথে বাবা বাবা বলছে।
আসিফ কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না, কাছে গিয়ে মেয়েটিকে কোলে নেয়। কোলে নেওয়ার পর অন্যরকম একটা ভালোলাগা আর ভালোবাসা অনুভব করে। মেয়েটির সম্ভবত খুদা লেগেছে, কিন্তু সে এই পিচ্চির খাবার এখন কোথায় পাবে?
আসিফ চকলেট বিস্কিট চিপস খেতে পছন্দ করে। ব্যাগ থেকে চকলেট আর বিস্কিট বের করে দেয় মেয়েকে। কিছুটা শান্ত হয়।
আসিফ চিন্তায় পরে গেছে এখন কি করবে সে
_- কি করবো এখন আমি? বাইরে একে নিয়ে গেলে সবাই জিজ্ঞেস করবে এই বাচ্চা কার? কবে বিয়ে করছো? বউ কোথায় তোমার? মা ছাড়া মেয়েকে কিভাবে মানুষ করবে? আর কতকি প্রশ্ন যে আসবে ঠিক নাই। আবার আমি তো বাচ্চা পালতেও পারবো না, তবে ওর মুখের বাবা ডাকটি বারবার শুনতে ইচ্ছে করছে। কোলে নিয়ে বুকে জরিয়ে ধরে আদর করতে ইচ্ছে করছে।
আসিফ মেয়েটি কাছে যায়। দুই হাত দিয়ে মেয়েটি দুইগাল টেনে দিয়ে বলে
_- বাবুটা আমার। বাবা বলো, বাবা বলো বাবুটা। চকলেট এনে দিবো আরো।
আশফিয়া বাবা বলে খিক খিক করে হেসে দেয়। আর আসিফ সেই হাসির মায়ায় পরে যায়। কিন্তু কি করবে আসিফ বুঝে উঠতে পারছে না। আসিফ স্বর্নাকে ফোন দেয়। সে আসিফের খুব কাছের বন্ধু।
স্বর্না ঃ কিরে আছিইপ্পা?
আসিফঃ কেমন আছিস?
স্বর্নাঃ ভালো। তো হটাত করে ফোন দিলি যে?
আসিফঃ একটা ইনফরমেশন জানার ছিলো।
স্বর্নাঃ বল কি জানতে চাস?
আসিফঃ তোর বাচ্চার বয়স দুই বছর না?
স্বর্নাঃ হ্যা। কেনো?
আসিফঃ আচ্ছা তোর বাচ্চাকে তুই কিভাবে মানুষ করছিস? কি খাওয়াচ্ছিস? কান্নাকাটি করলে কিভাবে শান্ত করছিস?
স্বর্নাঃ কেন রে? বাচ্চা দত্তক নিবি নাকি? তাইলে আমারটাকে নিয়ে যা। আমি আর পারছি না।
আসিফ আর স্বর্না কথা বলে, বাচ্চা মানুষকরার ১০১ টা কলা স্বর্না আসিফকে বুঝিয়ে দেয়।
আশফিয়া চকলেট আর বিস্কিট খেয়ে ঘুমিয়ে পরে। আর আসিফ এই সুজোগে বাইরে গিয়ে সেখান থেকে আশফিয়ার জন্য দুধ, সেরেলাক, চকলেট আর জুস নিয়ে আসে।
আসিফ, হাবিব আর ইমরুল একসাথে একটা ফ্ল্যাট নিয়ে থাকে। তিন রুমে তিনজন।
ঘুম ভেংগে যায় আশফিয়ার, ঘুম ভাঙ্গার সাথে সাথেই চিৎকার করে কান্না শুরু করে আশফিয়া। আসিফ কোলে নিয়ে হাটাহাটি করে কান্না থামাতে চায়। কিন্তু পারে না, আসফিয়া আরো জোরে চিৎকার করে উঠেআসিফ আশফিয়াকে একটা জুস দেয়। পাইপটা মুখে ঢুকিয়ে দেয়। কান্না থামিয়ে এবার আশফিয়া জুস খাওয়া শুরু করে।
আসিফের রুমের দরজায় টোকা দেয় কেউ একজন,
আসিফঃ কে ?
হাবিবঃ আরে বেটা কে মানে? দরজা খুল।
আসিফঃ ঘুমাচ্ছি, পরে আসিস।
হাবিবঃ তোর রুমে বাচ্চা কান্নার শব্দ পেলাম মনে হয়। দরজা খুল।
আসিফঃ আরে মোবাইলের রিংটোনের শব্দ।
হাবিবঃ দরজা খুলতে বলছি খোল।
আসিফ দরজা খুলে দেয়, কিন্তু হাবিবকে ভিতরে ঢুকতে দিতে চায় না। হাবিব জোর করে ঢুকে যায়। ঢুকেই দেখে বিছানার উপর একটা বাচ্চা।
হাবিবঃ মামা এইটা কে?
আসিফঃ কেউ না। তুই যা তোর রুমে।
হাবিবঃ আরে অনেক কিউট তো। আবার তোর মত দেখতেও দেখি।
আসিফঃ ঘটনা হচ্ছে।
হাবিবঃ বল
আসিফঃ স্বপ্নে দেখলাম আমার আর আসিফার বিয়ে হয়েছে। তারপর আমাদের বাচ্চা হয়েছে। সংসার ভালোই চলছিলো। তারপর শপিং করে রাস্তা পার হবার পর আসিফা এক্সিডেন্ট করে। এক্সিডেন্টে ও মারা যায়। বাচ্চা টা থেকে যায় আর কান্না করতে থাকে। এরপর ঘুম ভেংগে যায়। এরপর থেকেই সেই স্বপ্নের আশফিকা মানে এই মেয়েটি আমার পাশে।
হাবিবঃ তুই বাসায় আসার আগে কোন বার থেকে এসেছিস?
আসিফঃ নাহ। তবে ঘুমের আগে ঘুমের ঔষধ খেয়েছিলা ৬/৭ টা।
হাবিবঃ নাহ তুই মদ খেয়ে বা বাইরে ডেটওভার গাজা খেয়েছিলি তারপর রাস্তা দিয়ে হেটে আসার সময় এই বাচ্চাটিকে নিয়ে এসেছিস।
আসিফঃ আরে নাহ। আমি কসম করে বলছি।
হাবিবঃ চল বাচ্চাটাকে রাস্তায় রেখে আসি, যেখান থেকে এনেছিস সেখানে।
আসিফঃ তোর কি মাথা খারাপ যে তুই আমার মেয়েকে রাস্তায় ফেলে আসতে চাচ্ছিস?
হাবিবঃ পাগল হয়ে গেছে নাকিস তুই? কি বলবি এই মেয়েকে নিয়ে তুই সবার কাছে? যে এই মেয়ে তোর, মেয়েকে স্বপ্নে পেয়েছি, এটা আমার আর আসিফার মেয়ে। পাগলাগারদে যাওয়ার সখ হয়েছে।
আসিফঃ হাবিব আমি কি করবো বুঝতেছি না।
হাবিবঃ হয় রাস্তায় ফেলে রেখে আয় বা কোন এতিমখানায় দিয়ে আয়।
আসিফঃ আমি পারবো না।
হাবিবঃ আচ্ছা আমিই রেখে আসছি।
হাবিব কথাটি বলে আশফিয়াকে নিয়ে বের হয়ে যায়, আর আশফিয়া চিৎকার করে কাদতে থাকে। কান্নার শব্দ গুলো বিষের মত লাগছিলো আসিফের
আসিফের খুব কষ্ট হচ্ছে। ইচ্ছে করছে বুকের বা পাশটা কেটে ছিড়ে ব্যাথা কমাই।
হাবীব বাড়ি ফিরছে না। ফোনও বন্ধ দেখাচ্ছে। এদিকে আসিফও সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে যে যাই বলুক না কেন আশফিয়াকে সে তার কাছেই রাখবে, হ্যা তার মেয়ে তার কাছেই থাকবে, তাকেই বাবা বলে ডাকবে। তাতে যে যাই বলুক আর যে যাই প্রশ্ন তুলুক তাতে।
হাবীবের জন্য বেশ কিছুক্ষন অপেক্ষা আর থাকতে না পেরে নিজেই বের হয় হাবীবকে খোজার জন্য। সরি হাবীব না, আশফিয়ার জন্য।
রাত ৩টা পর্যন্ত রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে আশফিয়াকে আর হাবীবকে খুজে কোথাও পায় না আসিফ। ক্লান্ত শরীর নিয়ে বাসায় ফিরে দেখে হাবীব বাসায় চলে এসেছে।
আসিফঃ হাবীব আমার মেয়ে কোথায়?
হাবীবঃ আসিফ তুই কি পাগল হয়ে গেছিস? রাস্তা থেকে একটা পিচ্চি মেয়েকে তুলে নিয়ে এসে নিজের মেয়ে বলছিস।
আসিফঃ সাবধানে কথা বল। ও আমার মেয়ে। আমার মেয়ে কোথায়?
হাবীবঃ বেশি বেরে গেছিস তুই। যাহ বসুন্ধরার সামনে রেখে আসছি। নিয়ে আয় তোর মেয়েকে।
আসিফ কথাটা শোনার সাথে সাথেই বের হয় যায়। রাস্তায় গাড়ি না পেয়ে দৌড়ে দৌড়ে বসুন্ধরার সামনে যায়। কিন্তু কোথাও খুজে পায় না আশফিয়াকে। এদিকে হাবীব ও চলে আসে, তারও এখন মায়া লাগছে পিচ্চি মেয়েটির জন্য।
আসিফঃ হাবীব আমার মেয়েকে কোথায় রেখেছিস?
হাবীবঃ এখানেই তো রেখে গিয়েছিলাম। অনেক চকলেট আর চিপস দিয়ে গিয়েছিলা।
আসিফ ঃ নেই তো এখানে
হাবীবঃ চাল সামনে গিয়ে খুজি।
আসিফঃ চল।
দুজনে সামনে যায়। আশেপাশে কেন জানি আজ কোন লোকজন নেই। বসুন্ধার পাশের গলি থেকে দুইটা লোক বেরিয়ে আসে। হাতে রক্ত মাখা। দেখেই বুকটা কেপে উঠে আসিফের। আসিফ দৌড় দিয়ে গলির ভিতরে যায়। একটা চায়ের টং দোকানের পিছন থেকে মৃদ কাকুতির শব্দ আসছে। আসিফ টং এর পিছনের দিকে গিয়ে দেখে একটা আশফিয়ার দেহ কাপছে। শরীরে কোন জামা কাপর নেই। মুখ আর যৌনাজ্ঞ দিয়ে অঝড়ে রক্ত ঝরছে। মাত্র ২ বছরের বাচ্চাটি। পশুগুলো একা পেয়ে ...............
আসিফ চিৎকার করে কেদে দেয়। হাবীব দৌড়ে কাছে চলে আসে। হাবীব ও চিৎকার শুরু করে।
আসিফের চিৎকারে যেনো আকাশ বাতাস ভারি হয়ে যাচ্ছে।

আসিফ, এই আসিফ কি হইছে তোমার।
আসিফঃ আআআআআআআআ(চিৎকার) আমার আশফিয়া, আমার কলিজার টুকরা।
শিপনঃ আসিফ তুমি স্বপ্ন দেখছিলে মামা। প্লিজ থামো।
আসিফঃ ওরা আমার মেয়ে, আমার আশফিয়াকে খুন করে ফেলেছে।
শিপনঃ মামা তুমি স্বপ্ন দেখছিলে। এগুলা স্বপ্ন। পানি খাও তুমি।
আসিফঃ মামা আমার আশফিয়া।
শিপন আসিফকে জরিয়ে ধরে। একটু সান্ত করে পানি খায়িয়ে বারান্দা থেকে হাটিয়ে নিয়ে আসে।
মাঝে মাঝে সারাদিনের চিন্তাভাবনা গুলোই আমাদের স্বপ্নে ফিরে আসে। অবাস্তব হয়ে, ভালোলাগা নিয়ে আবার কখনো গভীর যন্ত্রনা নিয়ে।
আসিফ ছোট থেকেই আসিফাকে ভালোবাসে, ছোট থেকে এই পর্যন্ত তাকেই চেয়ে এসেছে আর নিজের করে ভেবে নিয়েছে কল্পনা। আসিফ, আসিফা আর কল্পনার মিশ্রনে আশফিয়ার জন্ম। আশফিয়ার জন্ম গভীর ভালোবাসা থেকে। আর সেই ভালোবাসা আর ভালোবাসার কষ্টগুলো ঘুমের ঔষধে মুছে দেওয়ার ব্যার্থ চেষ্টার ফলাফল এই স্বপ্নে, দুঃস্বপ্নে বা গল্পেও বলতে পারেন। আচ্ছা আপনিই বলুন এটা কি? স্বপ্নে, দুঃস্বপ্ন নাকি গল্প?
(পুরো গল্পটাই আমার কল্পনা, বাস্তবতার সাথে এর বিন্দু পরিমান মিল নেই। লেখায় ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য অনুরোধ করা হলো। আমার লেখা আরো গল্প পরতে চাইলে আমার পেজ থেকে পরতে পারেনঃ https://www.facebook.com/arshipon15/ )
সমাপ্ত।