#আমিই_বাংলাদেশ_আমার_ডাক_নাম_লজ্জ্বা।
লেখাঃ MD Asadur Rahman -
Shipon
স্নিগ্ধ সন্ধ্যার ঝিরিঝিরি বাতাসে আমি আর তুমি
বীচের পাশ দিয়ে হাটছি। হাতে হাত রেখে, খালি পায়ে। আমি তোমায় প্রশ্ন করলাম.
দুপুরঃ আচ্ছা আমরা কি দুজনে পাশাপাশি নাকি এটাও
কল্পনা?
রোদেলাঃ হাহাহাহা। যার বসবাস তোমার কল্পনায়, তাকে সত্যি করে
পেতে চাওয়াটা কি ঠিক?
দুপুরঃ তাহলে এতো বাস্তব অনুভূতি কেনো? তোমার স্পর্শ,
তোমার
অস্তিত্ব, তোমার শরীরের সুঘ্রান সব কিছুই তো জীবন্ত মনে হচ্ছে। কল্পনা হয় কিভাবে?
রোদেলাঃ কারন তুমি আমাকে অনেক বেশি ভালোবাসো।
তাই
দুপুর ঃ আচ্ছা রোদেলা আমি কি ঘুমিয়ে আছি নাকি
কোথাও জ্ঞ্যান হারিয়ে পরে আছি?
রোদেলাঃ সেটাতো আমি জানি না।
দুপুর ঃ তুমি আমার হাতটা শক্তকরে ধরো। যতখন না
ঘুম ভাংগে ততখন তোমায় পাশে রেখে হেটে চলি।
রোদেলার সেই মন ভোলানো মায়াবী মিষ্টি হাসি।
অতঃপর হাত ধরে, রোদেলা তার মাথা দুপুরের কাধে চাপিয়ে বীচের পাশ
দিয়ে হাটা শুরু করে। হেটে হেটে সামনের দিকে যায়।
হটাত তুমুল চিৎকার এর শব্দে ঘুম ভেংগে যায়
দুপুরের। বিছানায় বসে চোখ ঢলতে ঢলতে খেয়াল করে পাশের রুমে কারা জেনো চিৎকার করছে।
উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেয়।
পাশের রুমে একে অপরের সাথে জোরে জোরে চিৎকার
করছে।
আমি গিয়ে চেচিয়ে বলি
দুপুরঃ এই, এই কে তোমরা? কি চাও এখানে? কত সুন্দর একটা স্বপ্ন দেখছিলাম। সব
নষ্ট করে দিলে।
সবাই পেছন ফিরে আমার দিকে তাকায়। ঈশ কি বিভৎস তাদের দেহ, রক্তাক্ত,
মুখ একজনেরও
চেনা যাচ্ছে না। একজন তো প্রায় অংগার।
একজনঃ আপনি স্বপ্ন দেখছিলেন, রোদেলাকে নিয়ে। আচ্ছা আমার স্বপ্ন কোথায়? আমি কেন স্বপ্ন
দেখতে পারি না? কেন আমার পুরো শরীরে আগুনে পোড়ার ব্যাথা।
আরেকজন ঃ আমিও তো স্বপ্ন দেখেছিলাম অনেক বড় হবো,
গান
গাইবো, কবিতা লিখবো, সবাই আমাকে চিনবে। তাহলে কেন লম্পটের দলেরা নিমিষেই আমার
স্বপ্নগুলো ধুলিষ্যাৎ করে দিলো?
পেছন থেকে ব্যাথায় কোকরানো এক পিচ্চি ছেলে
খুড়িয়ে খুড়িয়ে সামনে আসে।
ছেলেটিঃ দাদা সত্যি আমি চুরি করে নাই। আমি চুরি
করি নাই। বারবার বলছি, কেউ শুনে নাই। পানি খাইতে চাইছিলাম
পানিও দেয় নাই। মারতে মারতে মাইরাই ফেলাইছে আমাকে।
দুপুরঃ আমি কিছু বুঝতে পারছি না তোমরা কারা।
এখানে কেনো এসেছো?
@ চিনছো
না?
আমি নুসরাত। পাস থেকে আরেকজন, আমি
বিষ্যজিৎ। এভাবে পর্যায়ক্রমে ঃ আমি তনু, আমি মুক্তমনা
অভিজিৎ, আমি প্রকাশক দিপন, আমি রনি,
আমি
মিম, আমি কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা তারিক, আমি কোটা
সংস্কার আন্দোলনের নেতা আরিফ যার লাশ পেয়েছিলে বুড়িগঙ্গায়, আমি
ছাত্রদল নেতা নুরু, আমি একরামুল আমি আমার মেয়ের সাথে ফোনে কথা বলার
সময় ক্রসফায়ার নামে বিচারবহির্ভূত ভাবে হত্যা করে আমায়। আমি বাস চাপায় নিহত আবরার। পাশ থেকে বাকি সবাই চেচেয়ি উঠে।
আমাদের পরিচয় চাও? আমরাও এদেরই মত, কেউ সত্যি বলতে
গিয়ে খুন, গুম হয়েছি। কেউ ধর্ষনের স্বিকার হয়েছি, কেউ
রাজনিতির মাঠে বলির পাঠা হয়েছি।
দুপুরের গলা শুকিয়ে আসছে। কি বলবে বা কি করা
উচিৎ কিছু বুঝছে না।
দুপুরঃ আমি কি করতে পারি?
তনুঃ হাহাহাহাহা। তুমি কি করতে পারো? আসলেই তো। তুমি
কি করতে পারো? কাপুরষ তো
তোমরা।
মাথা নিচু করে রইলাম।
নুসরাত তার অংগার দেহ নিয়ে এসে পাশে দাড়ালো।
নুসরাতঃ ভাইয়া এক কাপ চা করে আনি। সবাই আজ
তোমার সাথে গল্প করবো আমরা। আমি যাই। মিম তুই ও আয় আমার সাথে। ভিতরে খালা আগেই গিয়েছে।
নুসরাতের ভাইয়া ডাকায় আমার ছোট বোনের কথা মনে
পরলো, যদি নুসরাতের যায়গায় আজ সে থাকতো।
রাজন ঃ ভাই আমি ভালো হাত পা টিপে দিতে পারি।
একটু টিপে দেই?
দুপুরঃ নাহ। তুই বরং আমার কোলে বস। তোকে একটু
আদর দেই।
রাজন ঃ ওরা না ভাই আমাকে খুব মারছিলো।
নুরুঃ দুপুর, রাজনিতিটা সম্পূর্ন নোংরা হয়ে
গেছে। পারবি কি তুই ঠিক করতে?
দুপুরঃ দাদা আমি ছোট একটা মানুষ। আমি আমার
রাজনিতি টুকু আমার আদর্ষের মধ্যে সিমাবদ্ধ রেখেছি। নোংরামিতে আমি নাই।
আমি সুমন। জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় সরকার দলের ছাত্র সংগঠনের কর্মি ছিলাম।
জানো ছোট ভাই, আমার দলের লোকেরাই একদিন হুট করে হলে এসে আমি
সহ আরো কয়েকজনকে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে হলের তিনতালা থেকে ছিটকে ফেলে দিলো। সেখানেই
মৃত্যু আমার।
দুপুর ঃ আপনারা আমার কাছে হটাৎ সবাই একসাথে
কেনো? সত্যি
বলতে আমি ভয় পাচ্ছি।
আরিফঃ হাহাহাহা। আমাদের দেখেই ভয়? তাহলে
তোর কাছে কেন এসেছি? আমরা তো এসেছিলাম তোর কাছে সমাধান চাইতে। ্তুই মুক্তির মিছিল নিয়ে এগিয়ে যাবি আর তুই নিজেই কিনা ভয় পাচ্ছিস। এই
সবাই চলো চলো, এও কাপুরষ। একে দিয়েও কিচ্ছু হবে না।
দুপুরঃ আমি সমাধান দেবার করার কে, আমার কি কোন ক্ষমতা আছে যে মিছিল নিয়ে যাবো ঐ শাষকদের কাছে? আমি নিজেই তো সরকারের প্রতিহিংসার
স্বিকার।
একরামুলঃ
তোমার সহ তোমাদের সেই শক্তি আছে, আমরা বিচার না পাই, তবে
আর কোন ্বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডে জেনো এভাবে মরতে না হয় সে ব্যাবস্থা।
দুপুরঃ দেখো আমাদের কিছু
করার নেই। আমরা বন্দী, ৫৭ ধারার কালো থাবায় চোখ থাকতেও অন্ধ, হাত থাকতেও লেখা আসে
না।
সেই সময় একজন মধ্যবয়সী
মহিলা নুসরাতের সাথে সাথে সবার জন্য চা বানিয়ে নিয়ে আসে। মধ্য বয়সী মহিলাটি
দুপুরের হাতের চায়ের মগ হাতে তুলে দেয়।
দুপুরঃ আপনি কে? আপনাকে
তো আগে দেখলাম না।
মহিলাঃ হাহাহাহাহা। আমি
সুবর্নচরের সেই মহিলা। যে কিনা আপনাদের দলের প্রতিকে ভোট দেওয়ায় সন্তানদের সামনে {
কেদে হাটু নিচু করে বসে পরে }
ক্রিং ক্রিং ক্রিং করে
ঘরের কলিং বেল বেজে উঠে।
তনুঃ ভাইয়া আমি দেখি কে
এসেছে।
দুপুরঃ নাহ নাহ। তোমরা
এখানে কেউ দেখে ফেললে অন্যরকম একটা পরিস্থিতি তৈরি হবে।
সুমনঃ হাহাহাহা। এখন আমরা
ছাড়া এখানে আর কেউ আসবে না। দেখো হয়তো পেট্রোল বোমাই পোড়া কোন মুখ, ব্যার্থ কোন ছাত্র, প্রশ্নপত্র না
পাওয়া হত দরিদ্র, পিলখানার অসহায় সেনা অফিসার, বাসে ধর্ষিতা মাজেদা, ছেলের সামনে ধর্ষিতা মা, ভাইয়ের সামনে ধর্ষিতা বোন, এমপির গুলিতে
গুলিবিদ্ধ সৌরভ, গুম হওয়া সন্তানের নিরব কান্না নিয়ে কোন মা, রানা প্লাজার ধুলোয়
উড়া লাশের কেউ, বন্ধু
রাষ্ট্র ভারতের উপহার ফেলানি, ধ্বসে পড়া ভবনের নিচে গলিত লাশের কেউ, সাগর- রুনি, জন্মের আগেই গুলিবিদ্ধ নবজাতক শিশু এদের মধ্যেই হয়তো কেউ
এসেছে।
দুপুরঃ আমার কাছে কেনো?
নুসরাতঃ একটু খানি আলোর
আশায়। একটা মুক্তির মিছিলের ডাকের আহ্বানে।
দুপুরঃ আমিই কেনো? আরো কত
মানুষ তো আছে।
আবরারঃ কারন তুমি
বাংলাদেশ। তুমি তো সোনার বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখো তাই না। আমি দরজা খুলি।
দুপুরঃ আমিই দরজা খুলছি যেই আসুক।
দুপুর ধিরে ধিরে দরজার কাছে হেটে যাচ্ছে। পা
কাপছে, শরীর বেয়ে ঘাম ঝরছে। কোন রকমে দরজা খুলে। খুলেই চিৎকার দিয়ে উঠে।
দুপুরঃ এ আল্লাহ, কি অবস্থা আপনার। কে করলো
আপনার এই অবস্থা। এখানে আসছেন কেনো? আপনাকে তো এখনি ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে,
না হলে মারা পরবেন আপনি।
ছেলেটি উন্মাদের মত হেসে উঠে। হাহাহাহাহাহাহাহাহাহাহাহা।
দুপুরঃ আপনি হাসছেন? কে আপনি?
ছেলেটিঃ ভিতরে এসে বলি?
দুপুরঃ আপনাকে হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে। অবস্থা
খুবই খারাপ।
ছেলেটিঃ আমি অলরেডি মারা গিয়েছি।
ছেলেটি দুপুরকে পাশ কাটিয়ে ভিতরে ঢুকে যায়। সকলের সামনে গিয়ে উপস্থিত হয়।
রাজনঃ ভাইয়া আপনিও কি
নতুন আইলেন নাহি? আহেন আহেন, বহেন।
নুসরাতঃ তো কে আপনি?
কিভাবে মরলেন? পরিচয় দিন।
দুপুর কাপতে কাপতে রুমের
ভিতর ঢুকে দেখে ছেলেটি সবার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। কিছু বলবে হয়তো। দুপুর ছেলেটির পাশে
চুপ করে বসে পরে।
ছেলেটিঃ আমি রিফাত।
তোমাদের মত আমিও সাধারন মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করতে পারিনি। আমাকে রাস্তায় প্রকাশ্যে
সকলের সামনে আমারই পরিচিতরা আমাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। জানো, এতোগুলো মানুষ সামনে
দাঁড়িয়ে ছিলো, কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেনি।
বিষ্যজিৎঃ কেন ভাই কেউ ভিডিও করে নাই? ফেসবুক লাইভ দেয় নাই? আমার সময় সাংবাদিক নামের,
থাক এখানেও ৫৭ ধারা থাকতে পারে। ওরা ভিডিও করলো কেউ আমাকে বাচাতে আসল না। আচ্ছা
দুপুর ভাই আপনাকে একটা প্রশ্ন করি?
দুপুরঃ {তোতলাতে তোতলাতে}
জ্বি জ্বি বলুন।
বিষ্যজিৎঃ সাংবাদিক তারপর উকিল এরপর বিচারক হইতে হইলে শিক্ষিত হইতে হয় তাই না? অনেক
পরতে হয় ?
দুপুরঃ হ্যা, তা তো
অবশ্যই।
বিষ্যজিৎঃ তাহলে ঐ সাংবাদিকরা কেমন শিক্ষা পেয়েছিলো যে আমার জীবন রক্ষার চেয়ে ভিডিও
করা বেশি প্রয়োজন ছিলো, ঐ উকিল কে কোন মা বাপ কেমন শিক্ষা দিয়ে জন্ম দিয়েছিলো যে
সব প্রমান থাকার পরেও ওই খুনিদের পক্ষ নেয়। আর বিচারক তো্, , , , , আসামীরা এমপির পাশে দাঁড়ায় ছবি তুলে।
দুপুর; আসলে দেখুন আমাদের
সমাজের বিচার ব্যাবস্থাটাই ভেঙ্গে গেছে তাই এমন ঘটনার সংক্ষা দিন দিন বেড়েই চলছে।
মিমঃ তাহলে আপনারা আছেন
কেন? খুব তো ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন, দুই একদিন মানববন্ধন করতে পারেন। আর কোন
বালটাই ফেলতে পারেন না।
তনুঃ পারে তো, খেলায় একটা
ম্যাচ জিতলে সারা বাংলা একসাথে উদযাপন করতে পারে। অথচ ভাঙ্গাচোরা দেশটাকে ঠিক করতে
এক হতে পারবে না। কেউ উচু স্বরে বলতে পারবে না আমি বাংলাদেশ, আমি আমার এমন অবস্থা
চাই না, আমি সুস্থভাবে বাচতে চাই, সঠিক বিচার চাই, ভেজালমুক্ত খাদ্য চাই, নিরাপদ
সড়ক চাই।
তারিকঃ পারবে কিভাবে?
প্রত্যেকের রক্তের সাথে যার যার দলের অন্ধগৌরামী মিশে আছে। সত্য বলতে গেলেই তো
দলের গায়ে লাগে, আর তখনি পিছুটান।
অভিজিৎঃ আমি একটু বলি।
আমরা এখানে এসেছি সমাধানের জন্য। দুপুর সমাধান কি?
দুপুরঃ আমি কি জানি।
দিপনঃ তুমি জানো না কেন?
তোমার বা তোমাদের কি কোন দায়বদ্ধতা নেই?
দুপুরঃ আমি একা কি করবো?
আমি সত্যিই একা।
নুসরাতঃ আমরা তোমার সাথে
আছি। চলো মুক্তির মিছিলে যাই। ভাঙ্গাচোরা বিচার ব্যাবস্থা, খাদ্যে ভেজাল,
অগনত্রান্তিক দেশশাসন আর না। এসব থেকে মুক্তি চাই। আসো মুক্তির মিছিল বের করি।
তুমি হবে আমাদের অধিনায়ক।
দুপুরঃ আমি লজ্জিত। আমি
একা, আজ আমি বের হলে কালই আমার লাশ হয়তো বুড়িগঙ্গায়। বাংলাদেশটাই এমন।
নুরুঃ দুপুর বাংলাদেশ কে?
বাংলাদেশের কি হাত আছে না পা আছে, নাকি সে নিজে কিছু করে? নাহ। আমরা প্রতিজনই
বাংলাদেশ। আমি তুমি মানেই বাংলাদেশ, বাংলাদেশ মানেই তুমি আমি। সুতরাং এই মুক্তির
মিছিলের ডাক তোমাকে দিতেই হবে। আমরা সবাই তোমার সাথে আছি।
দুপুরঃ আমি এসব পারবো না।
আমি স্বস্তিতে বাচতে চাই।
রনিঃ হাহাহাহাহাহা। এটাকে
বেচে থাকা বলে? হাসালে তুমি দুপুর। সারাদিন রোদেলা রোদেলা করতে করতে বাচার মানেটাই
হয়তো তুমি ভুলে গেছে।
মিমঃ আমার সাথে হয়েছে,
তোমার বোনের সাথে কাল হবে না এর গ্যারান্টি কি?
নুসরাতঃ আচ্ছা রোদেলাকে
যদি এভাবে আমার মত করে পুরিয়ে মারতো বা এই যে এই মা, সুবর্নচরের মায়ের যায়গায় যদি
তোমার মা থাকতো?
দুপুরঃ চুপ থাকবে তোমরা?
আমি এগুলা কিচ্ছু শুনতে চাই না। বের হয়ে যাও তোমরা।
সবাই দাঁড়িয়ে যায়।
দুপুরকে উদ্যেশ্য করে বলতে থাকে তোমাকে রাস্তায় নামতেই হবে, মুক্তি মিছিল বের
করতেই হবে, তুমিই বাংলাদেশ-বাংলাদেশ মানেই তুমি।
কথাগুলো দুপুরের কানে
তীব্র ভাবে আঘাত করছিলো। সে সুধু চিৎকার করে বলছিলো বের হয়ে যাও তোমরা বের হয়ে
যাও।
ইলেকট্রিক শকে জ্ঞ্যান
ফিরে দুপুরের। ফুটপাত দিয়ে হাটার সময় একটি বেপরোয়া বাস ফুটপাতে উঠে যায়। সেখান
থেকে জ্ঞ্যানহীন আহত অবস্থায় দুপুরকে হসপিটালে আনা হয়। জ্ঞ্যান ফেরাতে ইলেকট্রিক
শক দেওয়া হয়। এর এই অজ্ঞান অবস্থায় তার দেখা মিলে নুসরাত, তনু, আবরার, রিফাতের
সাথে। তাদের কথাগুলো এখনো বাস্তবের মত স্পষ্ট কানে বাজছে। মুক্তির মিছিল চাই, আমি বাংলাদেশ
- আমি বাচতে চাই। সত্যিই তো, আমিই বাংলাদেশ ! তবে আমার ডাক নাম লজ্জ্বা ! আমি
আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া নুসরাত, আমি সুবর্নচরের
চার সন্তানের ধর্ষিতা জননী,আমি তনু, আমি রাজন, আমি পেট্রোল
বোমাই পোড়া মুখ, আমি ব্যার্থ ছাত্র, আমি প্রশ্নপত্র না পাওয়া হত দরিদ্র, আমি স্রক দূর্ঘটনায়
খুন হওয়া আবরার, আমি অবিরাম বাংলার মুখ, আমি লাল সবুজের
কাফন, আমি পিলখানার অসহায় সেনা অফিসারের আঁধারে দাফন, আমি বাসে ধর্ষিতা মাজেদা, আমি ছেলের সামনে
ধর্ষিতা মা, আমি ভাইয়ের সামনে ধর্ষিতা বোন, আমি এমপির গুলিতে গুলিবিদ্ধ সৌরভ, আমি স্ত্রীর সামনে কুপিয়ে খুন হওয়া রিফাত, আমি গুম হওয়া সন্তানের মায়ের
নিরব কান্না, আমি রানা প্লাজার ধুলোয় উড়া লাশ, আমি বন্ধু রাষ্ট্র ভারত থেকে প্রতিদিন খাই বাঁশ, আমি ধ্বসে পড়া
ভবনের নিচে গলিত লাশের গন্ধ, আমি পদ্মার লঞ্চ
ডুবি, আমি তাজরীনের অগ্নিকান্ড, আমি সাগর- রুনির
মেঘ, আমি জন্মের আগেই গুলিবিদ্ধ নবজাতক শিশু, আমি ভূগর্ভস্থ জিহাদ, আমি বিরোধী
ছাত্রসংগঠন নেতার নুরুর নিদীতে ভেসে থাকা লাশ, চাপাতি হাতে
সুযোগ পেলেই আমি সাজি জল্লাদ, আমি সাত খুণ
শীতলক্ষ্যার পাড়ে, আমি ফেলানী, আমি ১৬ কোটি
মানুষের ভাগ্য ঝুলে আছি কাঁটাতারে, আমি অন্ধ তাই
বন্ধ আমার বিবেকের দরজা ।। সুতরাং, আমিই বাংলাদেশ,
আমার ডাক নাম আমার লজ্জ্বা।
ধন্যবাদ। লেখাটা অনেকেরইগায়ে লাগবে, নিজের উপর
বিপদও আসতে পারে। কিন্তু আর কতদিন এভাবে চুপ করে থাকবো? আর না। ভুল ত্রুটি ক্ষমা
সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য অনুরোধ করছি।