শুক্রবার, ২৮ জুন, ২০১৯

আমিই বাংলাদেশ, আমার ডাক নাম লজ্জ্বা।




#আমিই_বাংলাদেশ_আমার_ডাক_নাম_লজ্জ্বা।
লেখাঃ MD Asadur Rahman - Shipon

স্নিগ্ধ সন্ধ্যার ঝিরিঝিরি বাতাসে আমি আর তুমি বীচের পাশ দিয়ে হাটছি। হাতে হাত রেখে, খালি পায়ে। আমি তোমায় প্রশ্ন করলাম.
দুপুরঃ আচ্ছা আমরা কি দুজনে পাশাপাশি নাকি এটাও কল্পনা?
রোদেলাঃ হাহাহাহা। যার বসবাস তোমার কল্পনায়, তাকে সত্যি করে পেতে চাওয়াটা কি ঠিক?
দুপুরঃ তাহলে এতো বাস্তব অনুভূতি কেনো?  তোমার স্পর্শ, তোমার অস্তিত্ব,  তোমার শরীরের সুঘ্রা সব কিছুই তো জীবন্ত মনে হচ্ছে। কল্পনা হয় কিভাবে?
রোদেলাঃ কারন তুমি আমাকে অনেক বেশি ভালোবাসো। তাই
দুপুর ঃ আচ্ছা রোদেলা আমি কি ঘুমিয়ে আছি নাকি কোথাও জ্ঞ্যান হারিয়ে পরে আছি?
রোদেলাঃ সেটাতো আমি জানি না।
দুপুর ঃ তুমি আমার হাতটা শক্তকরে ধরো। যতখন না ঘুম ভাংগে ততখন  তোমায় পাশে রেখে হেটে চলি।
রোদেলার সেই মন ভোলানো মায়াবী মিষ্টি হাসি। অতঃপর হাত ধরে, রোদেলা তার মাথা দুপুরের কাধে চাপিয়ে বীচের পাশ দিয়ে হাটা শুরু করে। হেটে হেটে সামনের দিকে যায়।
হটাত তুমুল চিৎকার এর শব্দে ঘুম ভেংগে যায় দুপুরের। বিছানায় বসে চোখ ঢলতে ঢলতে খেয়াল করে পাশের রুমে কারা জেনো চিৎকার করছে। উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেয়।
পাশের রুমে একে অপরের সাথে জোরে জোরে চিৎকার করছে।
আমি গিয়ে চেচিয়ে বলি
দুপুরঃ এই, এই কে তোমরা?  কি চাও এখানে?  কত সুন্দর একটা স্বপ্ন দেখছিলাম। সব নষ্ট করে দিলে।
সবাই পেছন ফিরে আমার দিকে তাকায়। শ কি বিভৎস তাদের দেহ,  রক্তাক্ত,  মুখ একজনেরও চেনা যাচ্ছে না। একজন তো প্রায় অংগার।
একজনঃ আপনি স্বপ্ন দেখছিলেন, রোদেলাকে নিয়ে। আচ্ছা আমার স্বপ্ন কোথায়?  আমি কেন স্বপ্ন দেখতে পারি না?  কেন আমার পুরো শরীরে আগুনে পোড়ার ব্যাথা।
আরেকজন ঃ আমিও তো স্বপ্ন দেখেছিলাম অনেক বড় হবো, গান গাইবো, কবিতা লিখবো, সবাই আমাকে চিনবে।  তাহলে কেন লম্পটের দলেরা নিমিষেই আমার স্বপ্নগুলো ধুলিষ্যাৎ করে দিলো?
পেছন থেকে ব্যাথায় কোকরানো এক পিচ্চি ছেলে খুড়িয়ে খুড়িয়ে সামনে আসে।
ছেলেটিঃ দাদা সত্যি আমি চুরি করে নাই। আমি চুরি করি নাই। বারবার বলছি, কেউ শুনে নাই। পানি খাইতে চাইছিলাম পানিও দেয় নাই। মারতে মারতে মাইরাই ফেলাইছে আমাকে।
দুপুরঃ আমি কিছু বুঝতে পারছি না তোমরা কারা। এখানে কেনো এসেছো?
@ চিনছো না?
আমি নুসরাত। পাস থেকে আরেকজন, আমি বিষ্যজিৎ। এভাবে পর্যায়ক্রমে ঃ আমি তনু, আমি মুক্তমনা অভিজিৎ, আমি প্রকাশক দিপন, আমি রনি, আমি মিম, আমি কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা তারিক, আমি কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা আরিফ যার লাশ পেয়েছিলে বুড়িগঙ্গায়, আমি ছাত্রদল নেতা নুরু, আমি একরামুল আমি আমার মেয়ের সাথে ফোনে কথা বলার সময় ক্রসফায়ার নামে বিচারবহির্ভূত ভাবে হত্যা করে আমায়। আমি বাস চাপায় নিহত আবরার। পাশ থেকে বাকি সবাই চেচেয়ি উঠে। আমাদের পরিচয় চাও? আমরাও এদেরই মত, কেউ সত্যি বলতে গিয়ে খুন, গুম হয়েছি। কেউ ধর্ষনের স্বিকার হয়েছি, কেউ রাজনিতির মাঠে বলির পাঠা হয়েছি।
দুপুরের গলা শুকিয়ে আসছে। কি বলবে বা কি করা উচিৎ কিছু বুঝছে না।
দুপুরঃ আমি কি করতে পারি?
তনুঃ হাহাহাহাহা। তুমি কি করতে পারো?  আসলেই তো। তুমি কি করতে পারো?  কাপুরষ তো তোমরা।
মাথা নিচু করে রইলাম।
নুসরাত তার অংগার দেহ নিয়ে এসে পাশে দাড়ালো।
নুসরাতঃ ভাইয়া এক কাপ চা করে আনি। সবাই আজ তোমার সাথে গল্প করবো আমরা। আমি যাই। মিম তুই ও আয় আমার সাথে। ভিতরে খালা আগেই গিয়েছে।
নুসরাতের ভাইয়া ডাকায় আমার ছোট বোনের কথা মনে পরলো, যদি নুসরাতের যায়গায় আজ সে থাকতো।
রাজন ঃ ভাই আমি ভালো হাত পা টিপে দিতে পারি। একটু টিপে দেই?
দুপুরঃ নাহ। তুই বরং আমার কোলে বস। তোকে একটু আদর দেই।
রাজন ঃ ওরা না ভাই আমাকে খুব মারছিলো।
নুরুঃ দুপুর,  রাজনিতিটা সম্পূর্ন নোংরা হয়ে গেছে।  পারবি কি তুই ঠিক করতে?
দুপুরঃ দাদা আমি ছোট একটা মানুষ। আমি আমার রাজনিতি টুকু আমার আদর্ষের মধ্যে সিমাবদ্ধ রেখেছি। নোংরামিতে আমি নাই।
আমি সুমন। জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় সরকার দলের ছাত্র সংগঠনের কর্মি ছিলাম। জানো ছোট ভাই, আমার দলের লোকেরাই একদিন হুট করে হলে এসে আমি সহ আরো কয়েকজনকে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে হলের তিনতালা থেকে ছিটকে ফেলে দিলো। সেখানেই মৃত্যু আমার।
দুপুর ঃ আপনারা আমার কাছে হটাৎ সবাই একসাথে কেনো?  সত্যি বলতে আমি ভয় পাচ্ছি।
আরিফঃ হাহাহাহা। আমাদের দেখেই ভয়? তাহলে তোর কাছে কেন এসেছি? আমরা তো এসেছিলাম তোর কাছে সমাধান চাইতে। ্তুই মুক্তির মিছিল নিয়ে এগিয়ে যাবি আর তুই নিজেই কিনা ভয় পাচ্ছিস। এই সবাই চলো চলো, এও কাপুরষ। একে দিয়েও কিচ্ছু হবে না।
দুপুরঃ আমি সমাধান দেবার করার কে,  আমার কি কোন ক্ষমতা আছে যে মিছিল নিয়ে যাবো ঐ শাষকদের কাছে?  আমি নিজেই তো সরকারের প্রতিহিংসার স্বিকার।
একরামুলঃ তোমার সহ তোমাদের সেই শক্তি আছে, আমরা বিচার না পাই, তবে আর কোন ্বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডে জেনো এভাবে মরতে না হয় সে ব্যাবস্থা।
দুপুরঃ দেখো আমাদের কিছু করার নেই। আমরা বন্দী, ৫৭ ধারার কালো থাবায় চোখ থাকতেও অন্ধ, হাত থাকতেও লেখা আসে না।
সেই সময় একজন মধ্যবয়সী মহিলা নুসরাতের সাথে সাথে সবার জন্য চা বানিয়ে নিয়ে আসে। মধ্য বয়সী মহিলাটি দুপুরের হাতের চায়ের মগ হাতে তুলে দেয়।
দুপুরঃ আপনি কে? আপনাকে তো আগে দেখলাম না।
মহিলাঃ হাহাহাহাহা। আমি সুবর্নচরের সেই মহিলা। যে কিনা আপনাদের দলের প্রতিকে ভোট দেওয়ায় সন্তানদের সামনে { কেদে হাটু নিচু করে বসে পরে }
ক্রিং ক্রিং ক্রিং করে ঘরের কলিং বেল বেজে উঠে।
তনুঃ ভাইয়া আমি দেখি কে এসেছে।
দুপুরঃ নাহ নাহ। তোমরা এখানে কেউ দেখে ফেললে অন্যরকম একটা পরিস্থিতি তৈরি হবে।
সুমনঃ হাহাহাহা। এখন আমরা ছাড়া এখানে আর কেউ আসবে না। দেখো হয়তো পেট্রোল বোমাই পোড়া কোন মুখ,  ব্যার্থ কোন ছাত্র,  প্রশ্নপত্র না পাওয়া হত দরিদ্র, পিলখানার অসহায় সেনা অফিসার, বাসে ধর্ষিতা মাজেদা,  ছেলের সামনে ধর্ষিতা মা, ভাইয়ের সামনে ধর্ষিতা বোন, এমপির গুলিতে গুলিবিদ্ধ সৌরভ, গুম হওয়া সন্তানের নিরব কান্না নিয়ে কোন মা,  রানা প্লাজার ধুলোয় উড়া লাশের কেউ,  বন্ধু রাষ্ট্র ভারতের উপহার ফেলানি,  ধ্বসে পড়া ভবনের নিচে গলিত লাশের কেউ,  সাগর- রুনি, জন্মের আগেই গুলিবিদ্ধ নবজাতক শিশু এদের মধ্যেই হয়তো কেউ এসেছে।
দুপুরঃ আমার কাছে কেনো?
নুসরাতঃ একটু খানি আলোর আশায়। একটা মুক্তির মিছিলের ডাকের আহ্বানে।
দুপুরঃ আমিই কেনো? আরো কত মানুষ তো আছে।
আবরারঃ কারন তুমি বাংলাদেশ। তুমি তো সোনার বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখো তাই না। আমি দরজা খুলি।
দুপুরঃ আমিই দরজা খুলছি যেই আসুক।
দুপুর ধিরে ধিরে দরজার কাছে হেটে যাচ্ছে। পা কাপছে, শরীর বেয়ে ঘাম ঝরছে। কোন রকমে দরজা খুলে। খুলেই চিৎকার দিয়ে উঠে।
দুপুরঃ এ আল্লাহ, কি অবস্থা আপনার। কে করলো আপনার এই অবস্থা। এখানে আসছেন কেনো? আপনাকে তো এখনি ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে, না হলে মারা পরবেন আপনি।
ছেলেটি উন্মাদের মত হেসে উঠে। হাহাহাহাহাহাহাহাহাহাহাহা।
দুপুরঃ আপনি হাসছেন? কে আপনি?
ছেলেটিঃ ভিতরে এসে বলি?
দুপুরঃ আপনাকে হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে। অবস্থা খুবই খারাপ।
ছেলেটিঃ আমি অলরেডি মারা গিয়েছি।
ছেলেটি দুপুরকে পাশ কাটিয়ে ভিতরে ঢুকে যায়। সকলের সামনে গিয়ে উপস্থিত হয়।
রাজনঃ ভাইয়া আপনিও কি নতুন আইলেন নাহি? আহেন আহেন, বহেন।
নুসরাতঃ তো কে আপনি? কিভাবে মরলেন? পরিচয় দিন।
দুপুর কাপতে কাপতে রুমের ভিতর ঢুকে দেখে ছেলেটি সবার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। কিছু বলবে হয়তো। দুপুর ছেলেটির পাশে চুপ করে বসে পরে।
ছেলেটিঃ আমি রিফাত। তোমাদের মত আমিও সাধারন মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করতে পারিনি। আমাকে রাস্তায় প্রকাশ্যে সকলের সামনে আমারই পরিচিতরা আমাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। জানো, এতোগুলো মানুষ সামনে দাঁড়িয়ে ছিলো, কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেনি।
বিষ্যজিৎঃ কেন ভাই কেউ ভিডিও করে নাই? ফেসবুক লাইভ দেয় নাই? আমার সময় সাংবাদিক নামের, থাক এখানেও ৫৭ ধারা থাকতে পারে। ওরা ভিডিও করলো কেউ আমাকে বাচাতে আসল না। আচ্ছা দুপুর ভাই আপনাকে একটা প্রশ্ন করি?
দুপুরঃ {তোতলাতে তোতলাতে} জ্বি জ্বি বলুন।
বিষ্যজিৎঃ সাংবাদিক তারপর উকিল এরপর বিচারক হইতে হইলে শিক্ষিত হইতে হয় তাই না? অনেক পরতে হয় ?
দুপুরঃ হ্যা, তা তো অবশ্যই।
বিষ্যজিৎঃ তাহলে ঐ সাংবাদিকরা কেমন শিক্ষা পেয়েছিলো যে আমার জীবন রক্ষার চেয়ে ভিডিও করা বেশি প্রয়োজন ছিলো, ঐ উকিল কে কোন মা বাপ কেমন শিক্ষা দিয়ে জন্ম দিয়েছিলো যে সব প্রমান থাকার পরেও ওই খুনিদের পক্ষ নেয়। আর বিচারক তো্‌, , , , ,  আসামীরা এমপির পাশে দাঁড়ায় ছবি তুলে।
দুপুর; আসলে দেখুন আমাদের সমাজের বিচার ব্যাবস্থাটাই ভেঙ্গে গেছে তাই এমন ঘটনার সংক্ষা দিন দিন বেড়েই চলছে।
মিমঃ তাহলে আপনারা আছেন কেন? খুব তো ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন, দুই একদিন মানববন্ধন করতে পারেন। আর কোন বালটাই ফেলতে পারেন না।
তনুঃ পারে তো, খেলায় একটা ম্যাচ জিতলে সারা বাংলা একসাথে উদযাপন করতে পারে। অথচ ভাঙ্গাচোরা দেশটাকে ঠিক করতে এক হতে পারবে না। কেউ উচু স্বরে বলতে পারবে না আমি বাংলাদেশ, আমি আমার এমন অবস্থা চাই না, আমি সুস্থভাবে বাচতে চাই, সঠিক বিচার চাই, ভেজালমুক্ত খাদ্য চাই, নিরাপদ সড়ক চাই।
তারিকঃ পারবে কিভাবে? প্রত্যেকের রক্তের সাথে যার যার দলের অন্ধগৌরামী মিশে আছে। সত্য বলতে গেলেই তো দলের গায়ে লাগে, আর তখনি পিছুটান।
অভিজিৎঃ আমি একটু বলি। আমরা এখানে এসেছি সমাধানের জন্য। দুপুর সমাধান কি?
দুপুরঃ আমি কি জানি।
দিপনঃ তুমি জানো না কেন? তোমার বা তোমাদের কি কোন দায়বদ্ধতা নেই?
দুপুরঃ আমি একা কি করবো? আমি সত্যিই একা।
নুসরাতঃ আমরা তোমার সাথে আছি। চলো মুক্তির মিছিলে যাই। ভাঙ্গাচোরা বিচার ব্যাবস্থা, খাদ্যে ভেজাল, অগনত্রান্তিক দেশশাসন আর না। এসব থেকে মুক্তি চাই। আসো মুক্তির মিছিল বের করি। তুমি হবে আমাদের অধিনায়ক।
দুপুরঃ আমি লজ্জিত। আমি একা, আজ আমি বের হলে কালই আমার লাশ হয়তো বুড়িগঙ্গায়। বাংলাদেশটাই এমন।
নুরুঃ দুপুর বাংলাদেশ কে? বাংলাদেশের কি হাত আছে না পা আছে, নাকি সে নিজে কিছু করে? নাহ। আমরা প্রতিজনই বাংলাদেশ। আমি তুমি মানেই বাংলাদেশ, বাংলাদেশ মানেই তুমি আমি। সুতরাং এই মুক্তির মিছিলের ডাক তোমাকে দিতেই হবে। আমরা সবাই তোমার সাথে আছি।
দুপুরঃ আমি এসব পারবো না। আমি স্বস্তিতে বাচতে চাই।
রনিঃ হাহাহাহাহাহা। এটাকে বেচে থাকা বলে? হাসালে তুমি দুপুর। সারাদিন রোদেলা রোদেলা করতে করতে বাচার মানেটাই হয়তো তুমি ভুলে গেছে।

মিমঃ আমার সাথে হয়েছে, তোমার বোনের সাথে কাল হবে না এর গ্যারান্টি কি?
নুসরাতঃ আচ্ছা রোদেলাকে যদি এভাবে আমার মত করে পুরিয়ে মারতো বা এই যে এই মা, সুবর্নচরের মায়ের যায়গায় যদি তোমার মা থাকতো?
দুপুরঃ চুপ থাকবে তোমরা? আমি এগুলা কিচ্ছু শুনতে চাই না। বের হয়ে যাও তোমরা।
সবাই দাঁড়িয়ে যায়। দুপুরকে উদ্যেশ্য করে বলতে থাকে তোমাকে রাস্তায় নামতেই হবে, মুক্তি মিছিল বের করতেই হবে, তুমিই বাংলাদেশ-বাংলাদেশ মানেই তুমি।
কথাগুলো দুপুরের কানে তীব্র ভাবে আঘাত করছিলো। সে সুধু চিৎকার করে বলছিলো বের হয়ে যাও তোমরা বের হয়ে যাও।

ইলেকট্রিক শকে জ্ঞ্যান ফিরে দুপুরের। ফুটপাত দিয়ে হাটার সময় একটি বেপরোয়া বাস ফুটপাতে উঠে যায়। সেখান থেকে জ্ঞ্যানহীন আহত অবস্থায় দুপুরকে হসপিটালে আনা হয়। জ্ঞ্যান ফেরাতে ইলেকট্রিক শক দেওয়া হয়। এর এই অজ্ঞান অবস্থায় তার দেখা মিলে নুসরাত, তনু, আবরার, রিফাতের সাথে। তাদের কথাগুলো এখনো বাস্তবের মত স্পষ্ট কানে বাজছে। মুক্তির মিছিল চাই, আমি বাংলাদেশ - আমি বাচতে চাই। সত্যিই তো, আমিই বাংলাদেশ ! তবে আমার ডাক নাম লজ্জ্বা ! আমি আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া নুসরাত, আমি সুবর্নচরের চার সন্তানের ধর্ষিতা জননী,আমি তনু, আমি রাজন, আমি পেট্রোল বোমাই পোড়া মুখ, আমি ব্যার্থ ছাত্র, আমি প্রশ্নপত্র না পাওয়া হত দরিদ্র,  আমি স্রক দূর্ঘটনায় খুন হওয়া আবরার, আমি অবিরাম বাংলার মুখ, আমি লাল সবুজের কাফন, আমি পিলখানার অসহায় সেনা অফিসারের আঁধারে দাফন, আমি বাসে ধর্ষিতা মাজেদা, আমি ছেলের সামনে ধর্ষিতা মা, আমি ভাইয়ের সামনে ধর্ষিতা বোন, আমি এমপির গুলিতে গুলিবিদ্ধ সৌরভ, আমি স্ত্রীর সামনে কুপিয়ে খুন হওয়া রিফাত, আমি গুম হওয়া সন্তানের মায়ের নিরব কান্না, আমি রানা প্লাজার ধুলোয় উড়া লাশ, আমি বন্ধু রাষ্ট্র ভারত থেকে প্রতিদিন খাই বাঁশ,  আমি ধ্বসে পড়া ভবনের নিচে গলিত লাশের গন্ধ, আমি পদ্মার লঞ্চ ডুবি, আমি তাজরীনের অগ্নিকান্ড, আমি সাগর- রুনির মেঘ, আমি জন্মের আগেই গুলিবিদ্ধ নবজাতক শিশু, আমি ভূগর্ভস্থ জিহাদ, আমি বিরোধী ছাত্রসংগঠন নেতার নুরুর নিদীতে ভেসে থাকা লাশ,  চাপাতি হাতে সুযোগ পেলেই আমি সাজি জল্লাদ, আমি সাত খুণ শীতলক্ষ্যার পাড়ে, আমি ফেলানী, আমি ১৬ কোটি মানুষের ভাগ্য ঝুলে আছি কাঁটাতারে, আমি অন্ধ তাই বন্ধ আমার বিবেকের দরজা ।। সুতরাং, আমিই বাংলাদেশ, আমার ডাক নাম আমার লজ্জ্বা।



ধন্যবাদ। লেখাটা অনেকেরইগায়ে লাগবে, নিজের উপর বিপদও আসতে পারে। কিন্তু আর কতদিন এভাবে চুপ করে থাকবো? আর না। ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য অনুরোধ করছি।

শনিবার, ১৫ জুন, ২০১৯

ছেলে পটানো (রিভেঞ্জ)


#ছেলে_পটানো (রিভেঞ্জ)
লেখাঃ MD Asadur Rahman - Shipon

ভিষন মেজাজটা খারাপ হচ্ছে। সারা শরীর চুলকানী আর গনধোলাই এর ব্যাথার স্মৃতি কোনভাবেই ভুলতে পারছে না আসাদ। আচ্ছা এমনটা ঘটলো কিভাবে? কোন ষড়যন্ত্র তো নয়? কিন্তু খালিদের মত বলদের মত ছেলের মাথায় এই বুদ্ধি আসবে না। নিশ্চয় এর পেছনে কেউ আছে। কে থাকতে পারে? (খালি গায়ে বারান্দায় হাটতে হাটতে সেই কথাই ভাবছে আসাদ)
রাত প্রায় ১টা। খালিদের ফোনে কলের রিংটোন বেজে উঠে। আসাদের ফোন।
খালিদঃ হ্যা দোস্ত বল। এতো রাতে?
আসাদঃ দোস্ত আমার প্রেগন্যান্ট শ্বাশুড়ির ব্যাথা উঠেছে। এখনি হসপিটালে নিতে হবে। জলদি আমার বাসায় আয়।
খালিদ ঃ আসতেছি।
আসাদ এবং খালিদের বাসার দূরত্ব খুব একটা বেশি না। তাই অল্প কিছুক্ষন পরেই আসাদের বাসায় হাজির খালিদ। দরজা খুলে ভিতরে ঢোকায় খালিদকে আসাদ।
খালিদঃ তোর শ্বাশুড়ি কোথায়? হসপিটালে নিতে হবে নাকি?
আসাদঃ হুম। তার আগে তুই এই লুংগিটা পরে এসে বিছানায় বস।
খালিদঃ আজব কাজ কারবার। আগে কি অবস্থা বল।
আসাদঃ চুপ। যেটা বলছি সেটা কর।
খালিদ চুপ চাপ টয়লেটের ভেতর ঢুকে। টয়লেটের দরজা লাগাতে যায় তখন আসাদ বলে প্যান্ট চেঞ্জ করতে আবার দরজা লাগাতে হয় নাকি। খালিদ ও তাই ভাবে। খালিদ প্যান্ট খোলার পর মনে পরে যে লুংগিটা সে আসাদের বেডের উপর রেখে এসেছে।
খালিদ ঃ লুংগিটা দে মামা। ভুলে রেখে আসছি।
আসাদঃ হুম দিচ্ছি। আগে তোর প্যান্টটা দে। এখানে শুকাতে দেই।
খালিদঃ প্যান্ট তো ভিজে নাই।
আসাদঃ আরে ঘামে ভিজে গেছে। দে।
সহজ সরল খালিদ প্যান্ট দিয়ে দেয়, গায়ের টি শার্টও দেয়। কারন সেটা সত্যি ভিজে গেছে।
আসাদ প্যান্ট আর টিশার্ট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ভেতর থেকে খালিদ বার বার বলছে লুংগি দিতে। কিন্তু আসাদ দিচ্ছে না। অসহ্য হয়ে নগ্ন অবস্থাতেই বের হয় খালিদ। বের হয়ে তার চোখ ছানাবড়া। আসাদ একটা চেয়ারে বসে মোবাইল এই দিকে কাত করা। ভিডিও করছে নাকি?
খালিদ আবার টয়লেটের ভেতর ঢুকে যায়।
খালিদ ঃ দোস্ত তুই কি করছিস?
আসাদঃ ফেসবুক লাইভে আছি। একটু পর টয়লেটের ভিতর আসবো।
খালিদঃ তুই এমন করছিস কেন?
আসাদঃ কারন সেদিন পার্কে যে ঘটনাটা ঘটে আমার বিশ্বাস সেটা তোর কারসাজি।
খালিদঃ কোন কারসাজি নাই দোস্ত। আমরা কিছু করি নাই।
আসাদঃ আমরা কিছু করি নাই? তার মানে তোদের প্ল্যান করা। সত্যি করে বল। না হলে তোর নগ্ন ভিডিও কিন্তু ভাইরাল হয়ে যাবে।
খালিদঃ দোস্ত আমি কিছু জানিনা।
আসাদঃ মিম নামে কোন ফ্রেন্ড আসছিলো তোদের?
খালিদঃ নাহ।
আসাদঃ তাহলে আমাকে ঐ মেয়ের কাছে পাঠাইলি কেনো?
খালিদঃ দোস্ত তুই বল আমার মাথায় কি কোন দিন এতো খারাপ কুবুদ্ধি আসছে? আসে নাই। সব বুদ্ধি ঐ তৃষার। ঐ প্ল্যান করে আমাকে দিয়ে তোকে ডাকাইছে। মাইর খাওয়াইছে। তোর পিঠে চুকরা পাতার গুড়া দিয়েছে।
আসাদঃ বাহ বাহ। তো এখন বল কি করা যায়।
খালিদঃ আমি কিভাবে বলবো? আমার মাথায় তো খারাপ বুদ্ধি আসে না।
আসাদঃ চুপ শালা। তুই একটা মিনমিনা শয়তান। এখন যদি প্রমিজ করিস যে তৃষাকে সাহায্য করতে তুই আমাকে হেল্প করবি তাহলে আমি তোর প্যান্ট দিবো। আর এই ফেসবুক লাইভ কেটে দিবো। কি করবি?
খালিদঃ অবশ্যই করবো। তুই আমার জানের দোস্ত না।
আসাদ খালিদকে প্যান্ট দেয়। খালিদ কাদতে কাদতে বের হয়ে আসে।
খালিদঃ বল কি করতে হবে তোর জন্য?
আসাদঃ রিভেঞ্জ।
খালিদঃ মানে
আসাদঃ তৃষাকে উচিৎ শিক্ষা দিতে হবে। ওর সম্পর্কে সব বল।
খালিদঃ দেখ আমি তৃষার মত এতো কুবুদ্ধি নিয়ে চলি না যে, ওকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য তোকে বুদ্ধি দিতে পারবো।
আসাদঃ আমি তোর কাছে বুদ্ধু চাই নাই। তৃষার সম্পর্কে জানতে চাইছি। ওর ফুল ডিটেইলস। এরপর আমিই প্ল্যান করবো। আর আমি খুব ভালো করেই জানি তোর গোবর মাথায় কোন বুদ্ধি আসবে না।
খালিদঃ আচ্ছা আচ্ছা। আমি ওর সম্পর্কে তেমন কিছু জানিনা। সুধু জানি তুই যেমন মেয়ে পটাশ ও সেরকম ছেলে পটায়। ওর বিয়ে ঠিক হয়েছিলো ওর খালাতো ভাই এর সাথে। পরে বিয়ে টা ভেংচে যায়। তৃষা বলে ও ভেংচি দেয়েছে। আর অরিক বলে অরিক। ওরা খালাতো ভাই বোন। প্রেম করছে অনেকদিন। অরিক ভালো বলতে পারবে।
আসাদঃ অরিককে পাবো কোথায় এখন?
খালিদঃ অরিক আমাদের পাশের বাড়ি। ওকে ফোন দিয়ে আসতে বলবো।
আসাদঃ বল। বল যে আমার শ্বাশুড়ি প্রেগনেন্ট। জরুরী অক্সিজেন প্রয়োজন। ওর অক্সিজেন নিয়ে আসতে বল।
খালিদ অরিককে ফোন দেয়। অরিক বিপদের কথা শুনেই আর কিছু ভালোমত না শুনে চলে আসে।
অরিক হাতে একটা বেলুন নিয়ে আসাদের রুমে ঢুকে। খালিদ অরিককে আসাদকে দেখিয়ে পরিচয় করিয়ে দেয়।
আসাদঃ অরিক তোমার হাতে কি?
অরিকঃ (ফ্যাল ফ্যাল করে হেসে) হেহেহেহেহ, অক্সিজন।
আসাদঃ ওহ। আচ্ছা আসলে তোমাকে অন্য একটা কাজে ডেকেছি। তুমি তৃষাকে চিনোতো?
অরিকঃ কোন তৃষা? ঐ হিসু বিবি?
আসাদঃ হিসু বিবি মানে? আরে তোমার এক্স গফ, বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো যার সাথে। পরে যে তোমাকে রিজেক্ট করে দিয়েছে।
অরিকঃ ধুর। কে আমাকে রিজেক্ট করেছে? আমি করেছি ওকে। একশ একটা প্রেম করে। শিপন, রনি, হৃদয়, অর্নব, তাহমিদ, এজাজ, শ্রেয়াস, অনিক, এত্তো এত্তো বয়ফ্রেন্ড ওর।
আসাদ ঃ ওহ এর জন্য তুমি বিয়ে ভেংগে দিয়েছো?
অরিকঃ নাহ। এগুলা আমি মেনে নিয়েছিলাম। বিয়ের আগে টুকটাক প্রেম থাকেই।
আসাদঃ এত্তোগুলা ছেলের নাম বললা, এরপরও বলো যে টুকটাক?
অরিকঃ আসাদ, আমি তোমার ফ্রেন্ডলিষ্টেও আছি। তুমিও ওর চেয়ে কম না।
আসাদঃ আচ্ছা আচ্ছা থামো। এরপর বলো।
অরিকঃ আসলে ওর একটা সমস্যা আছে।
খালিদঃ কি সমস্যা রে?
অরিকঃ ও বিছানায় হিসু করে। তাও আবার প্রতিদিন।
আসাদঃ ধুর। এটা তো একটা গল্পে বলেছে। ঘেমে গিয়ে এরকম হয়।
অরিকঃ বুদ্ধ একটা। ওর রুমে ফ্যান আছে। তার মধ্যে চিকনি একটা মেয়ে। চিকন মেয়েরা কি এতো ঘামে? ও প্রতিদিন রাতে বিছানায় হিশু করে। তাই আমাদের আত্তীয়স্বজন সবাই ওকে এক নামে হিসু বিবি বলেই জানে।
আসাদঃ ওহ এই তাহলে কাহিনি। এর জন্য বিয়ে করোনি?
অরিকঃ হুম। হিসুর গন্ধ আবার আমি একবারে সহ্য করতে পারি না।
আসাদঃ শুনো। ও আমার সাথে একটা বাজে কাজ করেছে। প্রতিশোধ নিতে চাচ্ছি। কিভাবে করবো বলো?
অরিকঃ প্রেম করে ছ্যাকা দাও।
খালিদঃ দোস্ত দারুন আইডিয়া দিয়েছে কিন্তু। তুই ও মেয়ে পটাস, তৃষাও ছেলে পটায়। দুজনে ভালো মিলবে।
আসাদঃ তুই চুপ বেঈমান। অরিক বুদ্ধিটা খারাপ না। তাহলে কিভাবে শুরু করা যায়?
অরিক ফেসবুকে নক করো।
খালিদঃ তোর ফেক আইডি থেকে কর। রিয়েল আইডি থেকে করলে চান্স দিবে না। তোকে সহ্য করতে পারে না।
আসাদঃ হুম। আরাধ্য কথন আইডি থেকে।
আরাধ্য কথন আইডি থেকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায় আসাদ। কিছুখন পর রিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট করে। আসাদ ম্যাসেজ দেয়। কিন্তু রিপ্লে করে না। এভাবে বেশ কিছুদিন ম্যাসেজ দেয়, সব পোষ্টে লাইক কমেন্ট করে কিন্তু কোন রেসপন্স নেই। আসাদ একটা জিনিস খেয়াল করে যে তৃষা মাঝে মাঝেই শাড়ি পরে ছবি আপলোড দেয় আর ক্যাপশন দেয় আম্মুর শাড়ি।
একদিন রাতে আসাদ আবার তৃষাকে ম্যাসেজ দেয়। ম্যাসেজ টা এমন
আরাধ্যঃ আপনার তো জাহান্নামে যাওয়া উচিত।
কিছুক্ষনের মধ্যেই রিপ্লে আসে তৃষার কাছ থেকে
অদ্রিতাঃ হোয়াই?
আরাধ্যঃ একটা মেয়ে মানুষ কেনো এতো সুন্দরী হবে। সুন্দর এর তো একটা লিমিট থাকা উচিত তাই না? তার মাধ্যে শাড়িতে আপনাকে, উফ! অসম্ভব, বেসম্ভব সুন্দরী লাগে।
অদ্রিতাঃ ধন্যবাদ।
আরাধ্যঃ আচ্ছা একটা প্রশ্ন করি?
অদ্রিতাঃ জ্বি করুন।
আরাধ্যঃ আপনার শাড়ি পরা সব ছবির ক্যাপশনে দেখলাম আম্মুর শাড়ি। আপনার কি কোন শাড়ি নেই?
অদ্রিতাঃ নাহ। আম্মুর অনেক শাড়ি তাই ওগুলোই পরি।
আরাধ্যঃ আচ্ছা আমি যদি আপনাকে একটা শাড়ি গিফট করি আপনি কি নিবেন?
অদ্রিতাঃ অবশ্যই না। কেনো নিবো আপনার শাড়ি?
আরাধ্যঃ বন্ধু মনে করে।
আসাদ বেশ কয়েকদিন অনেক অনুনয় বিনয় কর শাড়ি দেবার পারমিশন পায়। মেয়েরা গিফট পেলে তারাতাড়ি পটে যায়। এই ভেবেই এই গিফট দেবার ধান্দা করে আসাদ। এভাবেই ওকে পটিয়ে প্রতিশোধ নিবে।
রাস্তা দিয়ে যাবার সময় এক টোকাই হটাত আসাদের সামনে এসে দাঁড়ায়। ভাই আমার কাছে একটা শাড়ি আছে, ভালো শাড়ি, চুরি করছি। ৫০ টাকা দেন। নিয়ে ভাবিকে দিয়েন।
আসাদঃ ধুর মিয়া। বিয়ে করছি নাকি। অন্য কাউকে দেখো।
টোকাই পেছন দিকে যেতেই আসাদ ফিরে ডাক দিয়ে ৫০ টাকা দিয়ে শাড়িটা নিয়ে নেয়। এরপর আড়ং এর এক বন্ধুর দোকান থেকে একটা শপিং ব্যাগ জোগার করে সেটা তৃষার এড্রেসে পাঠিয়ে দেয়। পাঠানোর সময় খালিদ, অরিক, পাশেই ছিলো।
আসাদ অপেক্ষা করছিলো মেয়েটি নিশ্চয় শাড়িটা পেয়ে খুব খুশি হয়ে পরে ছবি তুলে আপ দিবে। সাথে সুন্দর একটা ক্যাপশন। হয়তোবা শাড়িটা পেয়ে আরাধ্যের প্রেমেও পরে যেতে পারে তৃষা।
দুইদিন পর। সন্ধ্যায় চায়ের দোকানে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে আসাদ। ঠিক তখন সেখানে আসে খালিদ আর অরিক।
অরিকঃ এই দেখেন। তৃষা আপনার দেওয়া শাড়ি পরে ছবি আপ দিয়েছে।
আসাদঃ তাই নাকি। দেখি দেখি।
আসাদ ঢুকে দেখে হ্যা শাড়ি পরে সত্যিই পিক আও দিয়েছে, কিন্তু ক্যাপশন চেঞ্জ হয় নি। আগের সেই ক্যাপশন, আম্মুর শাড়ি।
আসাদ ঃ মনডা চাচ্ছে মেয়ের বাসায় গিয়া শাড়িটা খুইলা নিয়া আসি। তবে শাড়িটাতে কিন্তু ওকে অনেক বেশি সুন্দর লাগছে।
অরিকঃ প্রেমে পরে গেলেন নাকি ভাই?
আসাদঃ কিছুটা। সারাজীবন এমন একটা মেয়েই খুজছিলাম যে কিনা এমন পাগলী টাইপের হবে। আচ্ছা আমি যাই।
আসাদ চলে আসে। রাতে একটা কবিতা লিখে তৃষাকে পাঠায়। এরপর ব্লক দেয় তৃষাকে। কবিতাটা এমন ছিলো।
আমার ওই সরলতায় হয়তো তোমার
আমার জন্য ভালোবাসা নেই,
তোমার প্রতরণায় আমার অভিযোগও নেই,
হতে পারে তা দ্বিধাহীন নির্বোধ কোন অনুভূতি,
তবুও যেনো ভালোবাসি তোমায়,
অনেক ভালোবাসি,
জেনো সেদিন অপূর্ণতায় হলেও
নতুন করে আবারও ভালোবাসবো,
এই আমার নির্লোভ ওই সরল স্বীকারোক্তি।

তৃষার চোখে পরে ম্যাসেজটা। কবিতাটা পরার পর গিল্টি ফিল করে। আরাধ্য আইডি থেকে তাকে ব্লক করা হয়েছে। সরি বলার কোন ওয়ে নাই। সেই রাতে তৃষার ঘুম হয় না। পরপর তিন রাত ঘুমহিন তৃষা। এবং এই তিনরাত সে বিছানায় হিসু করেনি। তৃষার মা ভেবেছে হয়তো তৃষার এই হিসু রোগ সেরে গিয়েছে। তাই খুশিতে, ঠ্যালায়, ঘোরতে সকল আত্তীয়স্বজনদের আবার দাওয়ার করে। সবাই আসে। আসে তৃষার ফুপাতো বোন পরি। তৃষার পরির কাছে সব খুলে বলে। পরি তার আইডি থেকে আরাধ্যের আইডিতে ঢুকে। আরাধ্যের আইডিতে কবিতার ছড়াছড়ি। তৃষা এই প্রথম কবিতার প্রেম পরে যায়। পরির আইডি থেকে তৃষা অনেক অনুনয় বিনয় করে সরি বলে, এবং আনব্লক করার রিকোয়েস্ট করে।
আরাধ্য তৃষাকে আনব্লক করে। কিন্তু ম্যাসেজ দেয় না। তৃষা আরাধ্যর আইডিতে ম্যাসেজ দেয় কিন্তু আরাধ্যর আইডি থেকে আসাদ রিপ্লে দেয় না। সেই মজা নিচ্ছে। কারন সে জানে তৃষা ছেলে পটানোতে ওস্তাদ। আসাদের ভয় লাগে যদি সে সত্যি সত্যি তৃষার ফাদে পরে যায়।
যাই হোক এক সময় না পেরে আসাদ রিপ্লে দেয়। কথা চালাচালি হয়। একদিন তৃষা আরাধ্যকে বলে ফোন দিতে। আরাধ্য তৃষার নাম্বারে ফোন দেয়। ১০১ মিনিট কথা বলে সে রাতে। এবং অলৌকিক ভাবে দুজন দুজনের মিষ্টি কথায় প্রেমে পরে যায়। পরের দিন দুজনের দেখা করার কথা। তৃষা সফল ছেলে পটাতে পেরে, কিন্তু আসাদ রিভেঞ্জ নিতে গিয়ে নিজেই তৃষার ফাদে আটকা পরেছে। এখন সকালে দেখা যাক কি হয়।
মিষ্টি একটা সকালে পাখির কলকাকলি ঘুম ভাংগে তৃষার। মিষ্টি একটা হাসি দেয় সে, দুপুর ১২ টায় আরাধ্যের সাথে তার দেখা করার কথা। এই ভেবেই সব কিছু তার কাছে ভালো লাগছে। জীবনে এতো প্রেম করলেও এইবারের টা জেনো অন্যরকম। দরজায় কড়া নারার শব্দ। উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেয় তৃষা। বাইরে দাঁড়িয়ে আছে অরিক।
তৃষাঃ তুমি?
অরিকঃ হুম, আমি। আব্বু-আম্মুও এসেছে।
তৃষাঃ হটাৎ?
অরিকঃ আমাদের বিয়ের কথা ফাইনাল করতে। এখন তো আর তোমার হিসু রোগ নেই। সো বিয়ে করতে তো আর সমস্যা নেই। আর এর জন্য সব ক্রেডিট আসাদের। ওর......
তৃষাঃ আসাদের ক্রেডিট মানে?
অরিক তৃষাকে আসাদ এবং আসাদের ফেক ফেসবুক আইডি আরাধ্যের সব গল্প খুলে বলে। তৃষা কেদে দেয়।
নিচে তৃষা আর অরিককে ডাকা হয়। আজ সন্ধ্যায় ওদের বিয়ে।
১১ঃ৩০ বাজে। আসাদ তৃষার কাছে যাবে। কিন্তু তৃষা এখনো জানে না যে আসাদই আরাধ্য। জানলে তখন সে ব্যাপারটা কিভাবে নিবে বুঝছে না শিপন।
হটাত করেই হুরুমুর করে আসাদের ঘরে ঢুকে পরে তৃষা।
আসাদঃ তুমি?
তৃষাঃ মিথ্যুক কোথাকার। চিট। সব কিছু নিয়ে কি চিট করা ঠিক। এভাবে প্রতিশোধ টা কি না নিলেই হতো না?
আসাদঃ সরি, তবে প্রতিশোধ নিতে চাইলেও পরে আমি.....
তৃষাঃ চুপ করো কচু। এই নাও আমার বিয়ের কার্ড। সন্ধ্যায় আমার বিয়ে। চলে এসো। আসলে খুব খুশি হবো। আর জামাই এর নাম কার্ডে দেওয়া আছে।
তৃষা চলে যায়। আসাদ বিছানায় সুয়ে পরে। চোখ বেয়ে পানি পরছে।
দুপুরের পরে খালিদ আসাদের বাসায় আসে। অরিক এর কাছ থেকে জানতে পারে যে আজ ওদের বিয়ে। তাই দেরি না করে আসাদের কাছে চলে আসে। এখানে এসে আসাদের মুখে তৃষার আসা এবং বিয়ের কার্ড দেওয়ার কথা শুনে।
খালিদঃ বিয়ে ফাইনাল হলো সকালে, ও তোর এখানে আসলো ১২ টার আগে। এর মধ্যে কার্ড ছাপানো শেষ? কার্ডটি খুলে দেখেছিস?
আসাদ ঃ নাহ।
খালিদঃ খুলে ভিতরে দেখ তো।
আসাদ খুকে দেখে ভেতরে কোন বিয়ের কার্ড নেই। আছে একটা চিরকুট।
আমাদের তৃষিত ভালোবাসা সমর্পন করে আবার নতুন আলোর পথে হেঁটে যাই,
আমার খোলা চুলের ঘ্রাণের মাঝে তোমার সুপ্ত সুখ গুলো তুমি খুঁজে নেবে!
ভাবনার সুখ দুয়ার গুলো দেখো পুবের আলোর সাথে সাথে কেমন উজ্জ্বল হয়ে গেছে ,
তোমার নীরব হাত বাড়িয়ে কাছে টেনে একটি কথা বলা-
বলো কখনো এ হাত ছেড়ে যাবে না ওই দূর নীলিমার মায়ার মতো,
বলো যাবেনা- তোমাতে ওই আলো আঁধারির মাঝে নিজেকে সমর্পন !
অপেক্ষায় রইলাম।
ইতি
রক্তমূখী নীলা।

খালিদঃ দেখ মেয়েটা তোকে ভালোবাসে।
আসাদঃ সেটা তো বুঝলাম। এখন কি করবো?
খালিদঃ পালিয়ে যা।
আসাদঃ কিভাবে কি করবো? কোন কিছু ভালো মত না বলেই তো চলে গেলো। আর এই পত্রে কোথাও বলা আছে। আচ্ছা তুই বল এখন কি আমি গুন্ডাদের মত ওকে তুলে নিয়ে আসবো?
খালিদঃ আচ্ছা অরিক তো আমাকে যেতে বলছে। আমি ঐখানে গিয়ে তৃষার সাথে কথা বলে সব সেট করছি। সন্ধ্যায় তুই তৃষার বারান্দার সামনে আসবি। তারপর ঐখান থেকে পালিয়ে যাবি।
আসাদঃ থ্যাংক ইউ দোস্ত। যা যা এখনি বের হ।
খালিদ তৃষাদের বাসায় যায়। আসাদ হৃদয়, রনি, অনিকসহ ওদের বলে রাখে বিয়ের ব্যাবস্থা করতে।
সন্ধ্যায় আসাদ তৃষাদের বাড়ির সামনে গিয়ে ঘোড়াঘুরি করে। তৃষার বারান্দার সামনে এসে শিষ দেয় কিন্তু কোন সারাশব্দ নেই। প্রায় একঘন্টা এভাবে দাঁড়িয়ে ভিতরে সংকেত দেওয়ার কিন্তু কোন লাভ হয়না। এরপর ঢিল মারে জানালায়। কয়েকটা ঢিল মারার পর একটা বড় ঢিল মারে আর তখনি অরিক বারান্দায় আসছিলো আর ঢিলটা ওর মাথায় গিয়ে লাগে। সাথে সাথে চিৎকার করে পরে যায়। পেছন থেকে তৃষাও আসে। একটা শাড়ি বেধে বারান্দা দিয়ে নেমে আসে।
তৃষাঃ চলো পালাই। বুদ্ধুটার চিৎকারে বাসার সবাই এদিকে চলে আসছে। দেখে ফেলবে আমাদের।
আসাদঃ চলো।
দুজনে দৌড় দেয়। ইতিমধ্যে তৃষার গুন্ডার মত দেখতে বাবা ওদের দেখে ফেলে। সে লোকজন এবং দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ওদের তারা করে। ধরা পরে যাবার মত অবস্থায় পেছন থেকে একটা গাড়ি এসে ওদের সামনে দাঁড়ায়।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
হৃদয়ঃ মামা উঠো।
আসাদ আর তৃষা গাড়িতে উঠে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। বিয়ে করে, তারপর হানিমুনে সেই গাড়িতে সবাইকে নিয়ে কক্সবাজার।
(পুরো গল্পটিই আমার কল্পনা, বাস্তবতার সাথে এর কোন মিল নেই, তবে মিল থাকলে ভালো হইতো)

সোমবার, ২৭ মে, ২০১৯

#অদ্ভুত_এক_ভালোবাসার_গল্প।

#অদ্ভুত_এক_ভালোবাসার_গল্প।
লেখাঃ MD Asadur Rahman - Shipon

#এক
বসন্ত চলে এসেছে। সরবরের সুবিশাল কৃষ্ণচূড়া গাছগুলো মাথা উচু করে যেন রক্তিম লালাভ ছড়াচ্ছে। গাছের পাতা আর ফুল মৃদ বাতাসেই হেলেদুলে পরছে।
খুব ভোড়েই দুপুর এসে উপস্থিত। রোদেলা আসবে। পুরনো একটি পেস্ট কালারের টিশার্ট, জিন্স আর পুরোনো এক জোরা স্যান্ডেল। হাতে সাদামাটা একটি ঘড়ি। রোদেলার সাথে অনেক অনেক দিন পর দেখা। তাই ক্লিন সেভ করতেও ভুলেনি দুপুর।
৩২ এর লেকের পাশ দিয়ে হেটে হেটে সরবরের চলে আসে দুপুর। একা, এখনো রোদেলা আসেনি। তাই সে এদিক সেদিক ঘোড়াঘুরি করছে। সরবরের পাশেই বটতলায় দুটো মেয়ে বেলি ফুলের মালা গাথছে। দুপুর কিছুক্ষন তাদের পাশে গিয়ে দাড়ালো। চুপ করে তাদের মালাগাথা দেখছে।
দুপুর ঃ মামুনীরা তোমাদের মালা কি বিক্রি হবে?
মেয়েটিঃ জ্বে দাদা ভাই। একজোরা ৫০ টাকা। আফনে নেবেন?
দুপুর ঃ হ্যা। আমি একজোড়া নিবো। তবে সাথে গোলাপ হলে ভালো হতো।
পাশের মেয়েটিঃ গোলাফ আইনা দেয়ন যাইবো। জোরা ৫০ টাকা। আর আমি আইনা দিমু রুবি খালার থিকা, তাই আমার কনভ্যান্স ২০ টাকা দেওন লাগবো।
দুপুরঃ হাহাহা। আচ্ছা দিবো। তুমি আমার জন্য ২ জোরা গোলাপ নিয়ে আসো। নাহ ৫ জোরা।
মেয়েটি ৫০০ টাকার একটি নোট নিয়ে ভো দৌড় দেয়। অন্যমেয়েটির কাছ থেকে বেলি ফুলের মালা বেছে নেয় দুপুর। কিছুক্ষন পরেই একগুচ্ছ গোলাপ নিয়ে ঐ মেয়েটি হাজির।
মেয়েটিঃ ন্যান দাদা ভাই।
দুপুর ঃ থ্যাংক ইউ।
মেয়েটিঃ আপনারও কি গার্লফ্রেন্ড আছে?
দুপুরঃ (কিছুখন চুপ থেকে) নাহ! ভালোবাসা আছে। (দুপুরের সেই মন ভোলানো মুচকি হাসি)
দুপুর লেকের কাছে এসে পানিতে পা ভিজিয়ে আছে। আর মনে মনে কবিতা আওরানোর চেষ্টা করছে।
আর দেখা হবে না,
সোনালি সকাল
দেখা হবে না তোমার হাসি ভরা মুখ,
আলতা পায়ে নদীর ঘাটে,
হবেনা আর কোনদিন দেখা হবেনা।।
একদিন চলে যাবে ছেলেটি,
সব মায়ার বাঁধন ছিন্ন করে,
ঘুমিয়ে যাবে অন্ধকার পৃথিবীতে,
আর জাগা হবে না নির্ঘুম রাত।।
স্বপ্ন গুলো হয়ে যাবে একা,
তাদের নিয়ে চোখের পর্দার সামনে
আর রাখা হবে না কোনদিন।।
হবে না আর ছোঁয়া তোমার হাত দুটি,
রাখা হবেনা চোখে চোখ,
হবেনা আর দেখা লম্বা কেশ ছেড়ে দিয়ে,
পা ঝুলিয়ে বসে থাকা নদীর পাড়ে,
হবেনা আর কোনদিন দেখা হবেনা।।

দুপুরের ফোন বেজে উঠে।
দুপুরঃ হ্যালো।
রোদেলাঃ (মিষ্টি গলায়) কোথায় তুমি?
দুপুরঃ এইতো লেকের ধারে বসে আছি।
রোদেলাঃ এই দিকে আসো। চা খাবো।
দুপুর পানি থেকে উঠে স্যান্ডেল পরে হেটে চলে আসে চায়ের দোকানের কাছে।  কালো পারের নীল রঙের শাড়ি, হাতে এত্তোগুলো নীল চুড়ি, চোখে কাজল। আসমানের হুরপরীর কার্বন কপি জেনো এই সরবরে নেমে এসেছে।
রোদেলাঃ কি হলো। কিছু বলছো না যে। চুপ করে দাঁড়িয়ে আছো।
দুপুরঃ দেখছি।
রোদেলাঃ দেখো। আমি চা খাই। (চা এর বিল দেবার জন্য ব্যাগে হাত দেয়)
দুপুর ঃ এই দাড়াও আমি নিচ্ছি।
দুপুর এগিয়ে যায়। পে ফার্স্ট। দুপুর যখন প্রথম এখানে এসেছিলো তখন চা খেয়েছিলো ৮ টাকা দিয়ে, এরপর ১০, ১০ থেকে ১৫, আর আজ ৫৫ টাকা।
দুই কাপ চা নিয়ে দুপুর আর রোদেলা এক কোনার টেবিলে বসে। দুজন মিলে চা খাচ্ছে আর গল্প করছে। হটাৎ অবেলার বৃষ্টি শুরু হয়। রোদেলা দ্রুত তার ব্যাগ থেকে ছাতাটা বের করে দুপুরের একদম গা ঘেষে বসে। এক ছাতায় দুজন। দুপুর অপলক দৃষ্টিতে রোদেলার দিকে তাকিয়ে আছে।
রোদেলাঃ এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো? আমার লজ্জা লাগছে।
দুপুরঃ এখন তো বসন্ত, বৃষ্টি হবার কথা না। তুমি ছাতা নিয়ে এসেছিলে কেনো?
রোদেলাঃ তুমি হয়তো টিভি, নিউজ কিছু দেখো না। আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে সমুদ্রে ৩ নম্বর বিপদ সংকেত দিয়েছে, ঘুর্নিঝড় হবে। ঢাকায় বৃষ্টির আশংকা আছে। তাই ছাতা নিয়ে বের হয়েছি।
দুপুরঃ ওহ। আচ্ছা রোদেলা তোমার মনে আছে?
রোদেলাঃ কি?
দুপুর ঃ এই রকম এক হটাৎ বৃষ্টির দিনে রাস্তায় আমি ভিজে যাচ্ছিলাম। সামনে ছিলে তুমি। ব্যাগ থেকে তোমার ছাতাটি বের করে এনে আমাকে দিয়ে আবার সামনে দৌড় দিয়ে তোমার বান্ধবীর ছাতার নিচে ঢুকেছিলে।
রোদেলাঃ কত সুন্দর ছিলো সেই দিনগুলো। কিন্তু হটাৎ.......
দুপুরঃ ভুল বোঝাবুঝিতে কৈশোর, যৌবন ভেস্তে গেলো আমার ভালোবাসার।
রোদেলাঃ আমাকে নিয়ে যাবে?
দুপুরঃ নিয়ে যাবো মানে! পালাতে চাচ্ছো নাকি?
রোদেলাঃ হুম। তবে তোমার কল্পনায়। তুমি শৈশব এর তোমার আমার সব স্মৃতি দিয়ে আমাকে গল্প বলবে, আমাদের ভালোবাসার গপ্প। শৈশব, তারন্য, যৌবন। এখানে সুখ থাকবে, কষ্ট থাকবে, ব্যাথা থাকবে, থাকবে মিলন। আমাদের এক হবার গল্প। অদ্ভুত এক ভালোবাসার গল্প।
দুপুরঃ শর্ত আছে।
রোদেলাঃ শর্ত?  আমি তোমার কাছে একটা জিনিস চাইলাম তাতেও শর্ত?
দুপুরঃ হুম। আমার কাধে মাথা রাখতে হবে। হাত ধরে থাকতে হবে। খুব কাছে বসতে হবে, জেনো তোমার শরীরের সুঘ্রানটা আমি পাই।
রোদেলাঃ পাজি ছেলে। আচ্ছা তুমি যে এই গোলাপ আর বেলি ফুলের মালা এনেছো, তো কার জন্য? তোমার গার্লফ্রেন্ড আসবে নাকি?
দুপুরঃ ওহ সরি টুকিপুকিটা।
দুপুর গোলাপের গুচ্ছটা রোদেলার হাতে দেয় আর বেলি ফুলের মালা নিয়ে রোদেলার পেছনে এসে তার খোপায় পড়িয়ে দেয়।
রোদেলাঃ থ্যাংক ইউ। বাট আর কিছু নেই?
দুপুরঃ হুম আছে। এই নাও তোমার চকলেট।
রোদেলা দুপুরকে ধরে চুমু খেতে যায়, কিন্ত এক অদৃশ্য তাকে বাধা দেয়। ফিরে আসে
রোদেলা। চলো জাহাজ বাড়ির ঐ দিকটাতে বসি। ঐদিকে বসবো। আর তুমি আমাকে নিয়ে তোমার কল্পনার রাজ্যে হারিয়ে যাবে। ঠিক আছে?
দুপুরঃ জো হুকুম মহারানী।
জাহাজবাড়ীর ঐদিকটা একটু কোলাহলমুক্ত, পাখির পায়চারি আছে। পছন্দমত একটা জায়গা দেখে বসে পরে। রোদেলা দুপুরের হাত শক্তকরে ধরে ওর কাধে মাথা রাখে।
#দুই
ভালোলাগা শুরুটা সেই ছোট্ট থেকে। রোদেলা প্রাইমেরি স্কুলে যাওয়ার সময় থেকেই দুপুরের কেন জানি বার বার রোদেলাকে দেখতে ইচ্ছে করতো। স্কুলে গিয়ে খুজে খুজে ওকেই দেখতো। এরপর সকালে মসজিদের মাদ্রাসায় পড়ার ছলে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতো। রোদেলা দুপুরের অন্যান্য বন্ধুদের সাথে কথা বললেও দুপুরের সাথে খুব একটা কথা হতো না। রোদেলার সামনে গেলে দুপুরের বুক ধরফর করতো, ঘাম ঝড়তো, হাত-পা কাপতো। এরমধ্যেও মাঝে মাঝে দুই একবার কথাও হয়।
রোদেলার প্রতি দুপুরের দুর্বলতা তার বন্ধুরা ধিরে ধিরে জানতে পারে। একজন থেকে আরেকজন এভাবে সার্কেলের প্রায় সকলেই জেনে যায় যে দুপুর রোদেলাকে ভালোবাসে।
ঐ সময়টা এমন ছিলো যে একজন আরেকজন ভালোবাসা মানে মহাপাপ। কোনভাবে বাড়িতে জানাজানি হলে মার খেতে খেতে হয়তো মরেই যেতে হবে। এভাবে ভয়ে ভয়ে বছর দুই কেটে যায়। মাঝে মাঝে কথা হয়। চোখাচোখি হয়। কবিতার আদানপ্রদান হয়। তারপর প্রাইমারী স্কুল শেষ করে হাইস্কুলে রোদেলা। আর দুপুরও সেই একই স্কুলে। প্রতিদিন যাওয়া আর আসার সময় দুপুর রোদেলার পিছু পিছু। দুপুরের কাজিনরাও একসাথে পরতো। রোদেলা মাঝে মাঝে ওদের সাথে একসাথে স্কুলে যায়। আর সেই দিনটি দুপুরের সবচাইতে সুখের দিন হতো। কারন সে রোদেলার পাশাপাশি হাটতে পারতো, ওর কথা খুব কাছ থেকে শুনতে পেত। খুব মিষ্টি করে কথা বলে মেয়েটি।
এখনো মাদ্রাসার পড়া শেষ হয়নি। দুপুরে খুব সকালে ঘুম থেকে উঠা এটা তার জন্য খুব বড় একটা শ্বাস্তির মত। কিন্তু রোদেলাকে দেখার নেশা তাকে প্রতিদিন সকালে মাদ্রাসায় নিয়ে যেত। প্রায়ই লেট করে ঢুকতো।
গেট দিয়ে ঢোকার সময় মুচকি একটা হাসি দিতো। রোদেলা সেই হাসির জন্যই জেনো অপেক্ষা করতো। মাদ্রাসায় গিয়ে পড়ার চেয়ে রোদেলার দিকেই দুপুর বেশি তাকিয়ে থাকতো। মাদ্রাসা শেষে রোজ দুপুর আগে বাসায় এসে একটা গান ছাড়তো স্পিকারে। রোদেলার জন্য। শুধু রোদেলার জন্য।
রোদেলা নিঃসন্দেহে আশেপাসের ১০ গ্রামের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে। তাই এলাকার প্রায় অনেক ছেলেই রোদেলার পেছনে ঘুরতো। দুপুর তার এক কাজিনকে দিয়ে রোদেলার কাছে প্রেম প্রস্তাব পাঠায়। রোদেলা প্রথমে না করে দেয়। কিন্তু দুপুর আবারও পাঠায়। এভাবে পেছনে লেগে থাকে। একসময় রোদেলার হাবভাবও প্রকাশ পায় যে সেও দুপুরকে পছন্দ করে।
একদিন স্কুলের পেছনে দুপুর দাঁড়িয়ে আছে। তখন তার সামনে এসে দাঁড়ায় শাওন( রোদেলার কাজিন)।
শাওন ঃ দুপুর তোমার সাথে কথা আছে।
দুপুরঃ হ্যা বল শাওন।
শাওনঃ তুমি নাকি রোদেলাকে ভালোবাসো? সত্যি, নাকি পোলাপাইন ছড়াইতাছে?
দুপুরঃ পোলাপাইন ছড়াচ্ছে যে আমরা প্রেম করি। আসলে তেমন কিছু না। তবে আমি রোদেলা কে ভালোবাসি।
শাওন ঃ দেখো সত্যি করে বলো। ভালোবাসি ভালোবাসি বলে পরে আবার ছেরে দিয়ে অন্য মেয়ের পেছনে ঘুরবে না তো?
দুুপুরঃ তোর কি আমাকে ঐরকম মনে হয়?
শাওনঃ নাহ। দেখো ভাই। ঐ মেয়েটা খুব ভালো, নম্র, ভদ্র, শান্ত-শিষ্ট। ওরে কষ্ট দিও না।
শাওনঃ কষ্ট দিও না মানে?  ও কি আমাকে ভালোবাসে নাকি? ও তো সওদাগর এর কাছে বলছে যে ও আমাকে সহ্যই করতে পারে না। এমনকি আমাকে জুতার বাড়ি নাকি দিতে চাইছে।
শাওনঃ ধুর।  ও তোমাকে ভালোবাসে। কিন্তু তুমি যদি ওরে ছেরে দাও তাহলে দেইখো তোমার খারাপ হইবো। ও ভয় পায় যদি তুমি ওকে ছেরে দাও কোনদিন।
এরপর দুপুর শাওনকে নিয়ে হোটেলে নিয়ে ইচ্ছে মত সিংগাড়া খাওয়ায়।
এরপর বেশ কয়েকদিন দুপুর খেয়াল করে যে রোদেলা ওর ক্লাসের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থেকে, দুপুরের দিকে তাকিয়ে থাকে।
রোদেলা তার কাছের বান্ধবী বিথীর কাছে বলে যে সে দুপুরকে পছন্দ করে। বিথি তার প্রেমিক আরিফের কাছে একথা বলে দেয়। বিথি একটু বাড়িয়ে বলে যে রোদেলা আর দুপুর প্রেম করছে। আরিফের বন্ধু মামুন রোদেলাকে পছন্দ করে। আরিফ মামুনের কাছে এসে বলে। মামুন দুপুরের ফ্রেন্ড জুয়েলের মাধ্যমে দুপুরকে জানায় যে দুপুর যদি রোদেলার পিছনে ঘুরে তাহলে তাকে মাইর খেতে হবে।
জুয়েলঃ দোস্ত, মামুন তো তোকে থ্রেট দিছে। তুই যদি রোদেলার পেছনে আবার ঘুরস তাহলে নাকি ও তোকে রাস্তার সবার সামনে মারবে।
দুপুরঃ মারা কি এত্তো সহজ? ও মারলে কি আমি ওকে ছেরে দিবো নাকি?? ওর চোদ্দগুষ্টি শেষ কইরা ফালামু। আর মরে গেলোও তো রোদেলার পিছু আমি ছাড়বো না। আমি ওকেই বিয়ে করবো।
জুয়েলঃ দেখ কি করবি। তবে সাবধানে। তোর বাড়িতে জানাজানি হইলে কিন্তু তুই বাড়িতেও মাইর খাবি।
সেদিন বিকেলে। এলাকার রাস্তার মোর দিয়ে দুপুর যাচ্ছিলো। আসে পাসে মানুষজন কম। হটাৎ মামুন আর ওর সাথে রোদেলার এক কাজিন কামরুল এসে সামনে দাঁড়ায়। হাতে একটা লাঠি।
মামুনঃ কিরে রোমিও তুই নাকি আমার চোদ্দগুষ্টি শেষ করে দিবি?
দুপুরঃ তুই নাকি আমাকে মারবি?
মামুন ঃ হ্যা মারবোই তো। রোদেলার পিছনে ঘুরলে মাইরা লুরা বানাই দিমু। আর তুই বাট্টু ওর মত মেয়ের পেছনে ঘুরস ক্যান? চুল রে ভাই। ঐ তুই নিজেরে আয়নায় কখনো দেখছস? (মামুন কষিয়ে দুপুরের গালে চড় দেয়, বিকট শব্দ হয়, আসে পাশের সবাই তাকিয়ে থাকে)
দুপুর মাথা নিচু করে বাসায় ফিরে আসে। এরপর দুই দিন স্কুলে যায়না। বাসা থেকেও খুব একটা বের হয়না। এদিকে রোদেলা দুপুরকে খুজে কোথাও পায় না। কোথায় না পেয়ে ওর এক বন্ধু সজিবকে দুপুরের খোজে পাঠায়। সজিব দুপুরদের বাসার সামনে আসে। দুপুরকে বাসা থেকে ডেকে বাইরে আনে।
শিপনঃ সজিব তুই এখানে?
সজিবঃ কাকা তুমি কই থাকো?  তোমারে না দেখে তো একজন পাগল হয়ে যাচ্ছে।
দুপুরঃ কে?
সজিবঃ কে আবার? রোদেলা। তোমাকে নাকি মামুন চড় মারছে?
দুপুরঃ ( মাথা নিচু করে) হুম।
সজিবঃ কামরুল গিয়ে রোদেলার কাছে এই কথা বলছে। এটা শুনে তো রোদেলার চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে গেছে। অনেক কাদছে মেয়েটা। এরপর থেকে তোমাকে খুজতেছে। কিন্তু না পেয়ে আমাকে পাঠাইছে।
দুপুরঃ সত্যি ও আমার জন্য কাদছে( মুখে সুখের হাসি)
সজিবঃ হ্যা কাকা সত্যি। এখন ২৫ টাকা দাও। স্পিড খামু।
দুপুরঃ তুই আনোয়ার এর দোকান থেকে আমার নাম বলে খেয়ে নে। আমি টাকা দিয়ে দিবোনে।
সজিব চলে যায়। পরের দিন রোদেলা সকালে দুপুরের ভাগনি সুমির কাছে আসে। একসাথে স্কুলে যায়। ফ্রি টাইমে সুমির সাথেই থাকে। সুমি আগে থেকেই দুপুরকে আব্বু বলে ডাকতো। এর আগে সে রোদেলাকে কয়েকবার আম্মু বলে ডাকাতে রোদেলা সুমিকে ঝাড়ি দিয়েছিলো।  কিন্তু এখন আর দেয় না।
সুমিঃ আম্মু কি করো?
রোদেলাঃ কিছুনা। আপনার আব্বু কোথায়?
সুমিঃ আব্বু তো ফুটবল খেলে।
রোদেলাঃ ধুর। ফুটবল খেলা আমার একদম পছন্দ না।
সেদিন স্কুল থেকে ফেরার সময়।
রোদেলা আর তার বান্ধবী বিথী একসাথে। আর পেছনে দুপুর। হটাৎ বৃষ্টি শুরু হয়। দুপুরের কাছে কোন ছাতা নেই। ভিজে যাচ্ছে। রোদেলা তার ব্যাগ থেকে নিজের ছাতাটি বের করে ফুটিয়ে পেছনে এসে দুপুরের হাতে দিয়ে আবার সামনে দৌড়ে গিয়ে বিথীর ছাতার নিচে আশ্রয় নেয়। মাঝে মাঝে পেছনে ফিরে দুপুরের দিকে তাকায়। এভাবে বাসা পর্যন্ত পৌছায়। ছাতাটি আর ফেরত দেওয়া হয়নি।
পরের দিন স্কুল বন্ধ। হটাৎ সন্ধ্যায় সওদাগর দুপুরের কাছে এসে বলে রোদেলার মা তোর আর তোর ফ্যামিলিকে নিয়ে অনেক খারাপ কথা বলছে।
দুপুরঃ কেনো?
সওদাগর ঃ রোদেলা তোর জন্য একটা চিঠি লিখছিলো। সেটা ধরা খাইছে ওর মার হাতে। শুনলাম ওর বাবা নাকি তোর বাবার কাছে বিচারও দিবে।
সওদাগর চলে যায়। দুপুর ভয় পেতে থাকে। নিশ্চয় রোদেলার বাবা মা রোদেলাকে মারছে। আর ওর বাবা যদি দুপুরের বাবার কাছে বিচার দেয় তাহলে তো তার অবস্থাও খারাপ হবে।
এশার নামাজের পর দুপুর তার মার ফোন রিচার্জের জন্য বাজারে যায়। ঐ সময় রোদেলার বাবা পেছন থেকে দুপুরকে ডাক দেয়।
রোদেলার বাবাঃ কি শুনি এই সব?
দুপুরঃ না মানে
রোদেলার বাবাঃ আমি যতটুকু জানি তুমি খুব ভালো ছেলে, তোমার বাসার সবাই খুব ভালো। এমন কিছু জানি আর না শুনি। তাহলে তোমার বাবার কাছে বিচার দিবো কিন্তু।
দুপুরঃ আচ্ছা আর করবো না।
দুপুর তখনকার মত বেচে যায়। কিন্তু বাসায় আসার পরই দুপুরের বাবা দুপুরকে মারতে আসে এই ব্যাপার নিয়ে। মাইর ও খায় কিছু। তবে বাড়িতে সবাই থাকার কারনে খুব একটা মাইর খেতে হয় না। তবে এটাই তার জীবনের সবচেয়ে বেশি মাইর খাওয়া।
দুপুর নিজের রুমে সুয়ে কাদতে কাদতে নিজেকে প্রশ্ন করে রোদেলার বাবা বললো যে এরপর কিছু করলে বিচার দিবে অথচ সে আগেই বিচার দিয়ে দিছে।
নাহ! সেদিন সে বিচার দেয় নি। মামুন, কামরুল আর সওদাগর মিলে দুপুরের বাবার কাছে বিচার দিয়েছিলো। এমনকি রোদেলা চিঠি নিয়ে ধরা খায়নি। সে কামরুলকে বিশ্বাস করে তার হাতে দিয়েছিলো রোদেলাকে দেবার জন্য।
কামরুলঃ সওদাগর মামা এই দেখ রোদেলা আর দুপুরের লাইন তো হয়ে গেছে। ওরা দুজন দুজনকে ভালোবাসে।
সওদাগর ঃ দেখি।
ঠিক সেই সময় মামুন সেখানে আসে। চিঠি দেখে সে একটা প্ল্যান করে। ওদের দুইজনকে নিয়ে রোদেলার বাসায় গিয়ে ওর মাকে সব বলে দেয়।
এরপর থেকে রোদেলা আর দুপুরের দিকে তাকায় না, এভোইড করে চলে,  সুমির সাথেও কথা বলে না।
দুপুর জোর করে সুমিয়ে কয়েকবার রোদেলার কাছে পাঠেলেও সে কোন পাত্তা দেয় না। দুপুরের অনুরোধে সুমি আবার যায়।
সুমিঃ রোদেলা একবার শুনো প্লিজ।
রোদেলা ঃ দেখেন আমি আপনাকে তো বলছি, আমি এখন এই সব প্রেম ট্রেম এর মধ্যে যাবো না।
সুমিঃ দুপুর তোমাকে অনেক ভালোবাসে।
রোদেলাঃ তাহলে অপেক্ষা করতে বলেন। আমার ইন্টার পরিক্ষার পরে সে জেনো নিজে আমার সামনে এসে তার ভালোবাসার কথা আমাকে জানায়।
সুমি ফিরে এসে দুপুরকে জানায়। দুপুর রোদেলার কথা মত অপেক্ষা করতে থাকে।
দুপুর ইন্টার পরিক্ষা দিবে সামনে। রোদেলা ক্লাস নাইনে পরে। স্কুলের এক সিনিয়র ছেলের সাথে বন্ধুত্ব হয় রোদেলার। সেই বন্ধু রোদেলাকে ভালোবাসে। ছেলেটা স্কুলের অনেকগুলো মেয়ের সাথে ইতিমধ্যে প্রেম করেছে।
দুপুর প্রায়ই স্কুলের যেতো। দূর থেকে রোদেলাকে দেখতো। আর বুকের ভিতের ধরফর ধরফর করা, হাত পা কাপা অনুভব করতো।
কিছুদিন পর রোদেলার ছেলে বন্ধুটার সাথে রোদেলার একটি ছবি এলাকায় ভাইরাল হয়। ফটোসপে এডিট করা। এই নিয়ে রোদেলাকে তার বাড়ি থেকে অনেক সমস্যায় পরতে হয়। এবং ছড়ানো হয় যে দুপুর এই ছবি এডিট করে সবার মাঝে ছড়িয়েছে। রোদেলাও তাই বিশ্বাস করে এবং দুপুরকে ঘৃনা করতে থাকে।
ইন্টারের পর দুপুর ঢাকা চলে আসে। আসার সময় সওদাগর দুপুরকে একটি চিঠি হাতে দেয়।
দুপুরঃ এটা কি?
সওদাগর ঃ চিঠি। তোকে দেওয়া রোদেলার চিঠি। আমাকে ক্ষমা করিস। আমি বুঝতে পারিনি তুই ওকে এতোভালো বাসিস।
দুপুর বাসে উঠে চিঠি খুলে। চিঠিটা এমন ছিলো
আমি চাদকে ভালোবাসি, চাঁদ আমায় ভালোবাসে বলে। আমি সূর্যকে ভালোবাসি, সূর্য আমাকে ভালোবাসে বলে। আমি তোমায় ভালোবাসি তুমি আমায় ভালোবাসো বলে। চাঁদ যেমন সূর্যের আলোয় নিয়ে বেচে থাকে, তেমনি আমি তোমার ভালোবাসা নিয়ে বেচে থাকবো।

I Love You
(S+S)

রোদেলাও অনেক ঝড় উপেক্ষা করে মাধ্যমিক পাশ করে ঢাকা চলে আসে। আর ঘৃনা করতে থাকে দুপুরকে। দুপুর এরপর বেচে থাকে রোদেলার সেই ভালোবাসার চিঠি নিয়ে। আর রোদেলা জীবনের ঝড় থেকে বেচে ফেরা মেয়ে সংগ্রাম করে জীবনে বড় হতে থাকে। এইভাবেই  পরিসমাপ্তি ঘটে একটি অদ্ভুত ভালোবাসার গল্প
#তিন
(সরবরে শিপনের কাধে রোদেলা মাথা রেখে)
রোদেলা ঃ থাপ্পর দিবো তোমাকে একটা। এখানে গল্প শেষ মানে? তোমাকে না বললাম গল্পে শৈশব, তারন্য, যৌবনের  সুখ, কষ্ট, ব্যাথা, ভালোবাসা, অভিমান থাকবে আর সবশেষে রোদেলা দুপুরের অদ্ভুত ভালোবাসার মিলন থাকবে, আমাদের এক হবার গল্প হবে এটি।
শিপনঃ  ও আছে তাই। আচ্ছা ঠিক আছে। একটি অদ্ভুত ভালোবাসার গল্প তৈরি করি তাহলে।
রোদেলা আবার দুপুরের কাধে মাথা রাখে, দুপুরের বাহু শক্ত করে জরিয়ে ধরে। দুপুর মাথা ঘুরিয়ে রোদেলার চুলে সুঘ্রান নিয়ে আবার হারিয়ে যায় পুরোনো স্মৃতিতে জমে থাকা একটি অদ্ভুত ভালোবাসার গল্পে।

দুপুর এবং রোদেলা এখন দুজনেই ঢাকা। কোন এক শুত্র থেকে জানতে পারা যে রোদেলা এখন ঢাকা। কোন কলেজ, বাসা কোথায় সব খোজ খবর নেয় দুপুর। প্রতিদিন রোদেলার কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে দুপুর। দেখা পায় না। হটাৎ একদিন এক বোরখা পরা মেয়ের চোখে চোখ পরে দুপুরের। এ নিশ্চয় আমার রোদেলা। মনে মনে বলে দুপুর। কাছে যায়
দুপুরঃ রোদেলা দাঁরাও ।
রোদেলাঃ তুমি আমার আবার পিছু নিয়েছো?
দুপুরঃ আমি তোমাকে ভালোবাসি।
রোদেলাঃ হাহাহা। ভালোবাসি। আমার যেই ক্ষতিটা করছো তুমি এরপরেও ভালোবাসি বলতে লজ্জা লাগে না?
দুপুরঃ বিশ্বাস করো আমি কিছু করি নাই।
রোদেলাঃ চুপ। আর একটা কথা বললে আমি চিৎকার করে মানুষ ডাকবো।
দুপুর মাথা নিচু করে পেছনে ফিরে আসে। এরপরেও দুপুর প্রায় দিনই রোদেলার কলেজের সামনে যেতো। প্রায় টানা দুবছর। এরপর কলেজ লাইফ শেষ হয়। রোদেলার ইতিমধ্যে আরেকজনের সাথে একরকম রিলেশনে জরিয়ে গেছে। তাই দুপুর আর তাদের মধ্যে কাটা হয়ে থাকতে চায় না। ফিরে আসে।
কিন্তু দুপুর ভালোবাসা তো আর তুচ্ছ না। খুব খোজ করে রোদেলার আইডি খুজে বের করে। আইডির নাম টুকিপুকি। দুপুর ফ্রেন্ড রিকোয়েষ্ট পাঠায়। কিন্তু রোদেলা এক্সেপ্ট করে না। দুপুর ম্যাসেজ দেয়, রিপ্লে আসে যাস্ট হেট ইউ হেট ইউ হেট ইউ।
দুপুর আর ডিস্টার্ব করে না। রোদেলা কোন একভাবে জানতে পারে যে দুপুরের কোন দোষ ছিলো না। রোদেলা ফেসবুক ফ্রেন্ড রিকোয়েষ্ট এক্সেপ্ট করে।
দুপুর নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলো না। খুশিতে সে রোদেলাকে ম্যাসেজ দেয়।
দুপুরঃ হ্যালো।
রোদেলাঃ কেমন আছো?
দুপুরঃ ভালো। তুমি?
রোদেলাঃ মোটামুটি। কিছু বলবে?
দুপুরঃ হুম। অনেক কথা বলার আছে।
রোদেলাঃ বলো।
দুপুর সব ঘটনা এক এক করে খুলে বলে। রোদেলাকে বুঝতে পারে।
রোদেলাঃ আমি সব বুঝতে পারছি। কিন্তু এখন আর কিছু করার নেই। আমি এনগেইজড।
দুপুরঃ একটা সত্যি কথা বলবে?
রোদেলাঃ কি?
দুপুরঃ ভালোবাসো আমাকে ?
রোদেলাঃ একসময় খুব ভালোবাসতাম।
দুপুরঃ এখন বাসো না?
রোদেলাঃ জানিনা। তবে প্লিজ তুমি সারাজীবন আমার পাসে পাসে থাকবে, যে যাই বলুক আমাকে ছেড়ে চলে যাবে না। যদিও আমাদের হয়তো কখনো মিল হবে না। প্রমিজ করো।
দুপুরঃ প্রমিজ করলাম।
রোদেলাঃ আমরা প্রেম করবো। যখন বুড়ো হয়ে যাবো তখন। মাঝে মাঝে রবিন্দ্র সরবরে দেখা করবো। সরবরের চা আমার খুব পছন্দের।
দুপুরঃ ঠিক আছে। তাহলে আমাদের আর এক হওয়া হচ্ছে না?
রোদেলাঃ আমি প্রমিজ করছি এ জীবনে না হলেও পরকালে আমি তোমার হব। শুধুই তোমার। আর আমার ভুল বোঝার জন্য ক্ষমা করে দিও। যখন বুড়ী হবো তখন কিন্তু প্রেম করবো। অনেক ভালোবাসবো তোমাকে। হয়তো এই ভালোবাসা অদ্ভুত ভালবাসা। আমি ঘুমাবো। আল্লাহ হাফেজ।

#চার
(সরবরের দুপুরের পাশে রোদেলা। রোদেলা দুপুরের মাথায় ঠোয়া দেয়)
রোদেলাঃ আমি সুখ চেয়েছি, তোমার হতে চাচ্ছি। আর তুমি আমাকে দূরে ঠেলে দিচ্ছো কেন?
দুপুরঃ তুমি কি পারবে আমার হতে?
রোদেলাঃ গল্পে যাও। দেখি কি হয়।

রোদেলা আর দুপুরের এখন প্রায়ই ফেসবুকে কথা চলতে থাকে। মাঝে মাঝে কথাও হয় ফোনে। ঝগড়া হয় ব্রাজিল আর্জেন্টিনা সাপোর্ট করা নিয়ে।
রোদেলা আর দুপুর প্রায় ৯ বছর পর দেখা করতে যাচ্ছে। সরবরে। দুপুর একজোড়া বিড়াল ছানা নিয়ে এসেছে রোদেলার জন্য। রোদেলা দুপুরের জন্য চকলেট। এইদিন সারাদিন তাদের গল্প হয়, ভাবের আদান প্রদান হয়। এরপরেও আরো বেশ কয়েকবার তাদের দেখা হয়। গিফট দেওয়া নেওয়া হয়। সম্পর্ক গভীর হতে থাকে।
রোদেলার সাথে তার প্রেমিক মারুফের সম্পর্ক এখনো চলছে। কিন্তু সে এখন দুপুরের প্রতি সেই ছোটবেলার সেই ভালোবাসা ফিল করে। দুপুর তার জন্য যা করেছে সে এই পৃথিবীর অন্য কোন পুরুষ করতে পারবে না। রোদেলা দ্বিধাদন্দে আছে। এমন সময় দুপুর রোদেলাকে মিট করতে বলে। নীল শাড়ি, কাজল পরে আসতে বলে। স্থান সরবরে।
পরেরদিন সকালবেলা ..........
৩২ এর লেকের পাশ দিয়ে হেটে হেটে সরবরের চলে আসে দুপুর। একা, এখনো রোদেলা আসেনি। তাই সে এদিক সেদিক ঘোড়াঘুরি করছে। সরবরের পাশেই বটতলায় দুটো মেয়ে বেলি ফুলের মালা গাথছে। দুপুর কিছুক্ষন তাদের পাশে গিয়ে দাড়ালো। চুপ করে তাদের মালাগাথা দেখছে।
দুপুর ঃ মামুনীরা তোমাদের মালা কি বিক্রি হবে?
মেয়েটিঃ জ্বে দাদা ভাই। একজোরা ৫০ টাকা। আফনে নেবেন?
দুপুর ঃ হ্যা। আমি একজোড়া নিবো। তবে সাথে গোলাপ হলে ভালো হতো।
পাশের মেয়েটিঃ গোলাফ আইনা দেয়ন যাইবো। জোরা ৫০ টাকা। আর আমি আইনা দিমু রুবি খালার থিকা, তাই আমার কনভ্যান্স ২০ টাকা দেওন লাগবো।
দুপুরঃ হাহাহা। আচ্ছা দিবো। তুমি আমার জন্য ২ জোরা গোলাপ নিয়ে আসো। নাহ ৫ জোরা।
মেয়েটি ৫০০ টাকার একটি নোট নিয়ে ভো দৌড় দেয়। অন্যমেয়েটির কাছ থেকে বেলি ফুলের মালা বেছে নেয় দুপুর। কিছুক্ষন পরেই একগুচ্ছ গোলাপ নিয়ে ঐ মেয়েটি হাজির।
মেয়েটিঃ ন্যান দাদা ভাই।
দুপুর ঃ থ্যাংক ইউ।
মেয়েটিঃ আপনারও কি গার্লফ্রেন্ড আছে?
দুপুরঃ (কিছুখন চুপ থেকে) নাহ! ভালোবাসা আছে। (দুপুরের সেই মন ভোলানো মুচকি হাসি)
দুপুর লেকের কাছে এসে পানিতে পা ভিজিয়ে আছে। আর মনে মনে কবিতা আওরানোর চেষ্টা করছে।
দুপুরের ফোন বেজে উঠে।
দুুপুরঃ হ্যালো।
রোদেলাঃ (মিষ্টি গলায়) কোথায় তুমি?
দুপুরঃ এইতো লেকের ধারে বসে আছি।
রোদেলাঃ এই দিকে আসো। চা খাবো।
দুপুর পানি থেকে উঠে স্যান্ডেল পরে হেটে চলে আসে চায়ের দোকানের কাছে।  কালো পারের নীল রঙের শাড়ি, হাতে এত্তোগুলো নীল চুড়ি, চোখে কাজল। আসমানের হুরপরীর কার্বন কপি জেনো এই সরবরে নেমে এসেছে।
রোদেলাঃ কি হলো। কিছু বলছো না যে। চুপ করে দাঁড়িয়ে আছো।
দুপুরঃ দেখছি।
রোদেলাঃ দেখো। আমি চা খাই। (চা এর বিল দেবার জন্য ব্যাগে হাত দেয়)
দুপুর ঃ এই দাড়াও আমি নিচ্ছি।
দুপুর এগিয়ে যায়। পে ফার্স্ট। দুপুর যখন প্রথম এখানে এসেছিলো তখন চা খেয়েছিলো ৮ টাকা দিয়ে, এরপর ১০, ১০ থেকে ১৫, আর আজ ৫৫ টাকা।
দুই কাপ চা নিয়ে দুপুর আর রোদেলা এক কোনার টেবিলে বসে। দুজন মিলে চা খাচ্ছে আর গল্প করছে। হটাৎ অবেলার বৃষ্টি শুরু হয়। রোদেলা দ্রুত তার ব্যাগ থেকে ছাতাটা বের করে দুপুরের একদম গা ঘেষে বসে। এক ছাতায় দুজন। দুপুর অপলক দৃষ্টিতে রোদেলার দিকে তাকিয়ে আছে।
রোদেলাঃ এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো? আমার লজ্জা লাগছে।
দুপুরঃ এখন তো বসন্ত, বৃষ্টি হবার কথা না। তুমি ছাতা নিয়ে এসেছিলে কেনো?
রোদেলাঃ তুমি হয়তো টিভি, নিউজ কিছু দেখো না। আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে সমুদ্রে ৩ নম্বর বিপদ সংকেত দিয়েছে, ঘুর্নিঝড় হবে। ঢাকায় বৃষ্টির আশংকা আছে। তাই ছাতা নিয়ে বের হয়েছি।
দুপুরঃ ওহ। আচ্ছা রোদেলা তোমার মনে আছে?
রোদেলাঃ কি?
দুপুর ঃ এই রকম এক হটাৎ বৃষ্টির দিনে রাস্তায় আমি ভিজে যাচ্ছিলাম। সামনে ছিলে তুমি। ব্যাগ থেকে তোমার ছাতাটি বের করে এনে আমাকে দিয়ে আবার সামনে দৌড় দিয়ে তোমার বান্ধবীর ছাতার নিচে ঢুকেছিলে।
রোদেলাঃ কত সুন্দর ছিলো সেই দিনগুলো। কিন্তু হটাৎ.......
দুপুরঃ ভুল বোঝাবুঝিতে কৈশোর, যৌবন ভেস্তে গেলো আমার ভালোবাসার।
রোদেলাঃ আমাকে নিয়ে যাবে?
দুপুরঃ নিয়ে যাবো মানে! পালাতে চাচ্ছো নাকি?
রোদেলাঃ যদি যেতে চাই। আমার হাত শক্ত করে ধরতে পারবে না? সারা জীবন তোমার ভালোবাসায় আগলে রাখতে পারবে না। এমপ্ন কোথায় নিয়ে যেতে পারবে না। যেখানে কেউ আমাদের এই অদ্ভুত ভালোবাসায় বাধা দিবে না। আমাদের সুখের সংসারে কেউ ঝামেলা করতে আসবে না। আমাদের দুটো বেবি হবে।
দুপুর রোদেলার সামনে হাটু গেরে বসে
দুপুরঃ জীবনের চেয়েও তোমাকে খুব ভালোবাসি তোমাকে। একবার সুজোগ দাও, দেখো কতটা ভালোবেসে আগলে রাখি।
রোদেলা কাদতে কাদতে দুপুরকে জরিয়ে ধরে বলে। চলো, আমাকে নিয়ে যাও তোমার ভালোবাসার রাজ্যে।

#পাঁচ
সরবরে
রোদেলা দুপুরের কাধ থেকে মাথা সরিয়ে ফেলে।
রোদেলাঃ চুপ দুপুর চুপ। আমি আর পারছি না।(রোদেলার চোখ দিয়ে পানি ঝরছে, ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদছে)
দুপুরঃ খুব কষ্ট দিয়ে ফেললাম?
রোদেলা দুপুরের দিকে বেশকিছুক্ষন অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। দুপুর বুঝতে পারে এই দৃষ্টিতে, এই চোখের পানিতে দুপুরের জন্য রোদেলার কতটা ভালোবাসা রয়েছে।
রোদেলাঃ আমি উঠি।
দুপুরঃ কোথায় যাবে?
রোদেলাঃ আজ আমার একমাত্র মেয়ের একমাত্র ছেলে, মানে আমার নাতীর জন্মদিন। ওর নাম দুপুর। আমার কলিজার টুকরা, আমার জানের জান । ওর কাছে যাবো। এই গোলাপ আর চকলেট ওকে দিবো, সাথে ছোট একটা একুরিয়াম। এই অদ্ভুত ভালোবাসার স্মৃতিগুলো আমার বর্তমান ভালোবাসাকেই দেই। এর মাঝেই হয়তো সুখ খুজে পাবো।
দুপুরঃ ঠিক আছে।
রোদেলাঃ তুমি কিন্তু একটা বিয়ে করে নিলেই পারতে। একা একা কিভাবে?
দুপুরঃ দুপুর এখনো তার রোদেলার অপেক্ষায় আছে। হয়তো চুল দাড়ী পেকে গেছে, কিন্তু ভালোবাসা কমেনি। হয়তো এই অদ্ভুত ভালোবাসার গল্পের মত আমার জীবনের গল্পটাও সত্যি হয়ে যেতে পারে।
রোদেলা আবার অপলক দৃষ্টিতে দুপুরের দিকে তাকিয়ে থাকে, চোখ দিয়ে পানি ঝরছে। দুপুর হাত দিয়ে পানি মুছে দেয়। রোদেলা উলটো ঘুরে হাত দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে সেখান থেকে চলে যায়। দুপুর রোদেলার চলে যাওয়া দেখে। আর তার অদ্ভুত গল্পের সমাপ্তি টানে।

(পুরো গল্পটি আমার কল্পনা, বাস্তবতার সাথে এর কোন রকম মিল নেই।)

সোমবার, ১৩ মে, ২০১৯

প্রেতাত্তার লেখা দশটি ধারাবাহিক গল্প


#প্রেতাত্তার_লেখা_দশটি_ধারাবাহিক_গল্প
MD Asadur Rahman – Shipon এর লেখা ১০ টি ছোট বড় ধারাবাহিক গল্পের সব পর্বের লিংক একত্রে দেওয়া হলো। রহস্য, ভৌতিক, রুপকথা, রোমান্স ও সাসপেন্স লেখা যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনি পড়ুন এবং শেয়ার করে অন্যদের পড়ার সুজোগ করে দিন। এবং বানান ভুলের জন্য অগ্রিম ক্ষমাপার্থী। গল্প গুলো যথাক্রমে ঃ
১ – #পিশাচ_দম্পতি
২ – #ডেভিল_হানটার্স --- (রহস্য গল্প )
৩ – #পিশাচ_কুমার
৪ – #ভুত_রাজ্য_ভ্রমন
৫ – #পাহারাদার ( রহস্য ভৌতিক গল্প )
৬ – #অদৃশ্য_পুরুষ
৭ – #রাজকুমারী_লাইলা
৮ – #রাহিকা_রাহা
৯ – #রত্নদ্বীপ (রহস্য, রোমাঞ্চকর, ভৌতিক গল্প)
১০ – #প্রেমের_পাগলামী


#পিশাচ_দম্পতি
১ম পর্ব ঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.596680877187872/596680887187871/?type=3&theater
২য় পর্ব ঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.596680877187872/596681513854475/?type=3&theater
৩য় পর্ব ঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.596680877187872/596681690521124/?type=3&theater
শেষ পর্ব ঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.596680877187872/596681880521105/?type=3&theater

#ডেভিল_হানটার্স --- (রহস্য গল্প )
১ম পর্ব ঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.596688077187152/596688097187150/?type=3&theater
২য় পর্ব ঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.596688077187152/596688703853756/?type=3&theater
৩য় পর্ব ঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.596688077187152/596689077187052/?type=3&theater
৪র্থ পর্ব ঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.596688077187152/596689370520356/?type=3&theater
৫ম পর্ব ঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.596688077187152/596689693853657/?type=3&theater
৬ষ্ঠ পর্ব ঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.596688077187152/596689977186962/?type=3&theater
শেষ পর্ব ঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.596688077187152/596690420520251/?type=3&theater

#পিশাচ_কুমার
১ম পর্বঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.603547926501167/603547933167833/?type=3&theater
২য় পর্বঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.603547926501167/604440086411951/?type=3&theater
৩য় পর্বঃ
https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.603547926501167/608434332679193/?type=3&theater
৪র্থ পর্বঃ
https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.603547926501167/609261935929766/?type=3&theater
৫ম পর্বঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.603547926501167/611001982422428/?type=3&theater
৬ষ্ঠ পর্বঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.603547926501167/612861245569835/?type=3&theater
শেষ পর্বঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.603547926501167/614131138776179/?type=3&theater

#ভুত_রাজ্য_ভ্রমন
১ম পর্ব ঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.615741718615121/615741731948453/?type=3&theater
২য় পর্ব ঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.615741718615121/617479158441377/?type=3&theater
শেষ পর্ব ঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.615741718615121/624572604398699/?type=3&theater

#পাহারাদার ( রহস্য ভৌতিক গল্প )
১ম পর্ব ঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.637289529793673/637289583127001/?type=3&theater
২য় পর্ব ঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.637289529793673/637325769790049/?type=3&theater
৩য় পর্ব ঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.637289529793673/700891030100189/?type=3&theater
৪র্থ পর্ব ঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.637289529793673/702683563254269/?type=3&theater
শেষ পর্ব ঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.637289529793673/708593425996616/?type=3&theater


#অদৃশ্য_পুরুষ
১ম পর্বঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.668453590010600/668453613343931/?type=3&theater
২য় পর্বঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.668453590010600/668454366677189/?type=3&theater
৩য় পর্বঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.668453590010600/668454900010469/?type=3&theater
৪র্থ পর্বঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.668453590010600/668455270010432/?type=3&theater
৫ম পর্বঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.668453590010600/668455596677066/?type=3&theater
৬ষ্ঠ পর্বঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.668453590010600/668456200010339/?type=3&theater
৭ম পর্বঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.668453590010600/668458990010060/?type=3&theater
৮ম পর্বঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.668453590010600/668459313343361/?type=3&theater
৯ম পর্বঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.668453590010600/668459726676653/?type=3&theater
১০ম পর্বঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.668453590010600/668462093343083/?type=3&theater
১১তম পর্বঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.668453590010600/668464476676178/?type=3&theater
১২ তম পর্বঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.668453590010600/668465573342735/?type=3&theater
১৩ তম পর্বঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.668453590010600/678565552332737/?type=3&theater
১৪ তম পর্বঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.668453590010600/678565955666030/?type=3&theater
১৫ তম পর্বঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.668453590010600/678566162332676/?type=3&theater
১৬ তম পর্বঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.668453590010600/678566325665993/?type=3&theater
শেষ পর্ব ঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.668453590010600/678566888999270/?type=3&theater


#রাজকুমারী_লাইলা

১ম পর্বঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.923688374487119/923688387820451/?type=3&theater
২য় পর্বঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.923688374487119/924105397778750/?type=3&theater
৩য় পর্বঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.923688374487119/924622764393680/?type=3&theater
৪র্থ পর্বঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.923688374487119/925607740961849/?type=3&theater
৫ম পর্বঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.923688374487119/926690850853538/?type=3&theater
৬ষ্ঠ পর্বঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.923688374487119/927244740798149/?type=3&theater
৭ম পর্বঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.923688374487119/928334544022502/?type=3&theater
৮ম পর্বঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.923688374487119/929079630614660/?type=3&theater
৯ম পর্বঃ  https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.923688374487119/930679023788054/?type=3&theater
১০ম পর্বঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.923688374487119/931147953741161/?type=3&theater
১১তম পর্বঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.923688374487119/932484560274167/?type=3&theater
শেষ পর্ব ঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.923688374487119/933105020212121/?type=3&theater


#রাহিকা_রাহা
১ম পর্বঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.972484596274163/972484619607494/?type=3&theater
২য় পর্বঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.972484596274163/972485469607409/?type=3&theater
৩য় পর্বঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.972484596274163/972486359607320/?type=3&theater
৪র্থ পর্বঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.972484596274163/975547405967882/?type=3&theater
৫ম পর্বঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.972484596274163/976775532511736/?type=3&theater
৬ষ্ঠ পর্বঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.972484596274163/978712292318060/?type=3&theater
৭ম পর্বঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.972484596274163/981043595418263/?type=3&theater
৮ম পর্বঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.972484596274163/984532838402672/?type=3&theater
৯ম পর্বঃ  https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.972484596274163/988049018051054/?type=3&theater
১০ম পর্বঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.972484596274163/993895560799733/?type=3&theater
১১তম পর্বঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.972484596274163/994517340737555/?type=3&theater
১২ তম পর্বঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.972484596274163/997372317118724/?type=3&theater
১৩ তম পর্বঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.972484596274163/999750356880920/?type=3&theater
১৪ তম পর্বঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.972484596274163/1000930906762865/?type=3&theater
শেষ পর্ব ঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.972484596274163/1002592299930059/?type=3&theater

#রত্নদ্বীপ (রহস্য, রোমাঞ্চকর, ভৌতিক গল্প)
১ম পর্বঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.1035263576662931/1035263593329596/?type=3&theater
২য় পর্বঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.1035263576662931/1036004599922162/?type=3&theater
৩য় পর্বঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.1035263576662931/1037382013117754/?type=3&theater
৪র্থ পর্বঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.1035263576662931/1038025473053408/?type=3&theater
৫ম পর্বঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.1035263576662931/1038026726386616/?type=3&theater
৬ষ্ঠ পর্বঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.1035263576662931/1038594192996536/?type=3&theater
৭ম পর্বঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.1035263576662931/1041446726044616/?type=3&theater
৮ম পর্বঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.1035263576662931/1043130772542878/?type=3&theater
৯ম পর্বঃ  https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.1035263576662931/1044927399029882/?type=3&theater
১০ম পর্বঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.1035263576662931/1044928385696450/?type=3&theater
১১তম পর্বঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.1035263576662931/1046052012250754/?type=3&theater
১২ তম পর্বঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.1035263576662931/1046671915522097/?type=3&theater
১৩ তম পর্বঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.1035263576662931/1049571808565441/?type=3&theater
শেষ পর্ব ঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.1035263576662931/1050283568494265/?type=3&theater



#প্রেমের_পাগলামী
১ম পর্বঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.611588295697130/611588309030462/?type=3&theater
শেষ পর্বঃ https://www.facebook.com/arshipon15/photos/a.611588295697130/613318725524087/?type=3&theater

নেক্সট গল্প #দ্যা_ডার্ক_লর্ড পেতে সবার আগে পেজটি লাইক দিয়ে সি ফার্স্ট দিয়ে রাখুন।

( সব গুলো গল্পটাই আমার কল্পনা । এর সাথে বাস্তবতার কোন মিল নাই )
আমার লেখা আরো গল্প পরতে চাইলে আমার পেইজ টি লাইক দিতে পারেন । ধন্যবাদ।

বুধবার, ১৩ মার্চ, ২০১৯

একুরিয়াম

#একুরিয়াম
(কাল্পনিক গল্প)
প্রেতাত্মার লেখা গল্প - Written by A R Shipon

কলিংবেলের ক্রিং ক্রিং শব্দে ঘুম ভাঙে দুপুরের। চোখ মোঁচড়াতে মোঁচড়াতে গিয়ে দরজা খুলে দেয় দুপুর। দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে একজন মধ্যবয়সী পুরুষ। পরনে লাল টিশার্ট, হাতে একটি পার্সেল।
দুপুরঃ কাকে চাচ্ছেন?
ব্যক্তিঃ দুপুর সাহেব আছে?
দুপুরঃ জ্বি, আমিই দুপুর।
ব্যক্তিঃ আমি কুরিয়ার থেকে ডেলিভারি এজেন্ট রিয়াজ। আপনার নামে একটি পার্সেল আছে।
দুপুরঃ আমার পার্সেল? কে পাঠিয়েছে?
ডেলিভারি এজেন্টঃ নীলা নামের এক মেয়ের কাছ থেকে এসেছে।
ডেলিভারি এজেন্ট দুপুরের হাতে পার্সেলটি দিয়ে ডেলিভারি বিলে সই নিয়ে চলে যায়। দুপুর পার্সেলটি নিয়ে এসে টেবিলের উপরে রেখে বিছানায় গিয়ে আবার সুয়ে পরে। লুটিয়ে পরে গভীর ঘুমে।

অতল পানির নীচে তলিয়ে যাচ্ছে দুপুর। একদম তলানিতে নেমে আসে। নিচে পাথর আর পাথর। মাঝে মাঝে কয়েকটা মৃত গাছ। গাছ গুলো হাত দিয়ে স্পর্শ করে। আরে গাছ গুলোতো প্লাস্টিকের। এরচেয়েও অবাক হয় পানির অতলে শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে কোন কষ্টই হচ্ছে না দুপুরের। কিভাবে সম্ভব? ইচ্ছে হলেই মাছের মত সাঁতরে এপাশ ওপাশ করতে পারছে। আজিব ব্যাপার! কি হচ্ছে আমার সাথে? নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করলো দুপুর।
সাঁতরে উপরে উঠার চেষ্টা, মানে পানি থেকে বায়ুতে আসার চেষ্টা করে উপরে উঠছে। হটাৎ সামনে দিয়ে একটা কিছু ভেঁসে যায়। অর্ধেক মাছ আর অর্ধেক নাড়ী। থমকে যায় দুপুর। মৎস কন্যা? দুপুর মৎস কন্যার পিছু নেয়। মৎস কন্যা একটা গাছের পেছনে লুকায়। দুপুর সেখানে গিয়ে মৎস কন্যার সামনে দাঁড়ায় ।
একি কান্ড, এই এই, একে তো খুব চেনা চেনা লাগছে। কে কে কে এটা?
মৎস কন্যাঃ আমাকে চিনলে না?
দুপুরঃ হ্যা চিনেছি।
মৎস কন্যাঃ কে আমি?
দুপুরঃ রোদেলা
মৎস কন্যাঃ হাহাহাহাহাহাহাহা। আর কত নাম দিবে আমার? রোদেলা, ত্বরন্বীতা, নীলা, অতন্দ্রীলা, রূপন্তী হাহাহাহাহাহাহাহাহাহাহা
দুপুরঃ যতদিন ভালোবেসে যাবো ততদিন। আচ্ছা নাম গুলোকি তোমার পছন্দ না?
মৎস কন্যাঃ আচ্ছা, একসময় তুমি আমাকে ভুলে যাবে তাই না?
দুপুরঃ তুমি তো আমাকে ভুলেই গেছো?
মৎস কন্যাঃ মোটেও না। ভুলে গেলে কি আর এখানে নিয়ে আসতাম তোমাকে?
দুপুরঃ আচ্ছা তুমি এখানে কেনো? আর আমিই বা এখানে কিভাবে এলাম?
মৎস কন্যাঃ তুমি একুরিয়াম খুব পছন্দ করো। একটা একুরিয়ামের শখ ছিলো তোমার। আমাকে বলেছিলে। আমি তোমাকে একটা একুরিয়াম গিফট করতে চেয়েছিলাম। তুমি তখন মানা করেছিলে। আমি তোমাকে ভুলিনি। তোমার একুরিয়ামের মৎসকুমাড়ী হয়ে এলাম।  আরে একুরিয়ামে কি আমি একা একা থাকবো? মোটেও না, তাই তোমাকেও নিয়ে এলাম। কেমন হলো? হাহাহাহাহাহাহাহাহাহাহা।
দুপুরঃ তোমার ভূবন ভোলানো হাসি, কিভাবে বাঁচবো সারাজীবন তোমাকে ছাড়া, বলতে পারো কি?
মৎস কন্যাঃ আজিব, আমি তো তোমার সাথে থাকবো বলেই মৎস কন্যা হয়ে তোমার জীবনে ফিরে এলাম।
দুপুরঃ খুব মজা নিচ্ছো তাই না? খুব তো নিজের ভালোবাসার মানুষের হাত ধরে চলে গেলে। সুখেই আছো তাই না?
রোদেলা কোন কথা বলে না। মন খারাপ করে চুপ করে মাথা নিচু করে ফেলে। হয়তো কাঁদছে, কিন্তু এই একুরিয়ামের পানির মাঝে মিশে যাচ্ছে রোদেলার চোখের নোনা জল। তাই দেখতে পাচ্ছি না।
হটাৎ রোদেলার পেছন দিক থেকে একটা নীল তিমি এসে ওকে হ্যাচকা টান দিয়ে নিয়ে ছুটে চলে। দুপুর রোদেলাকে উদ্ধার করার জন্য সাঁতরে পিছু তাড়া করার জন্য চেষ্টা করে। হাত পা যথা সম্ভব চেষ্টা করেও এক সুতা পরিমান এগুতে পারে না। বারংবার চেষ্টা করে, হাত পা ধরে রেখেছে বেশ কয়েকজন। এমনটাই মনে হচ্ছে দুপুরের। দুপুর ভিষন মানুষিক কষ্টে চিৎকার করে উঠে।

জামান এসে দুপুরের উপরের এক বালতি পানি ঢেলে দেয়। স্বপ্ন ভেঙে যায় দুপুরের। হুরুমুর করে উঠে বসে দুপুর।
জামানঃ কিরে আজও নিশ্চয় স্বপ্ন দেখে চিৎকার করছিলি? কেউ একজন অথবা কোন এক দানব বা দৈত, নাহ তোর তো আবার ভূত আছে সেই ভূত এসে তোকে আটকে রেখে রোদেলাকে নিয়ে চলে যাচ্ছে। কিন্তু তুই কিছুই করতে পারছিস না। তারপর কিছুই না পেরে চিৎকার করে কান্না শুরু করলি। তাই তো?
দুপুর বিরক্তিভরা মুখ নিয়ে জামানের দিকে তাকালো।
জামানঃ থাক ভাই। ভয় পাইছি আমি। এভাবে তাকাইস না। গোসল করে এসে খেয়ে নে।
দুপুর বিছানা ছেড়ে উঠে গিয়ে বাথরুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে ফিরে আসে। ডাইনিং টেবিল থেকে নাস্তা নিয়ে বারান্দায় গিয়ে বসে। নাস্তা শেষ করে কফির মগ হাতে নেয়। তখনই মনে পরে সকালে একটা পার্সেল এসেছে তার নামে। নীলা নামে একজন পাঠিয়েছে। মগ হাতে নিয়েই রুমে ফিরে টেবিলের উপরে রাখা পার্সেলটাতে হাত দেয়।
পার্সেলের উপড়ে বড় করে লেখাঃ সাবধানে ধরুন, ভিতরে কাঁচের জিনিস ।
দুপুর। উপরের র‍্যাপিং টা খুলে ফেলে। একটা কার্টুন টেপ দিয়ে মোড়ানো। টেপ খুলে ফেলে। কার্টুন খুলতেই একটা ছোট কাচের একুরিয়াম, একুরিয়ামের ভিতরে একটা স্বচ্ছ পলিথিনে ৩টা মাছ, আরেকটা পলিথিনে কিছু পাথর আর প্লাস্টিকের কয়েকটা গাছ।
এরমধ্যে জামান চলে আসে।
জামানঃ কিরে, সকাল সকাল কে তো কি পাঠাইলো। (কাছে এসে) ওয়াও! একুরিয়াম? মাছ? দাঁড়া পানি ভরে নিয়ে আসি।
দুপুর একুরিয়াম রেখে উঠে গিয়ে বাইরে চলে যাই, একটা কাজ আছে। ফিরতে ফিরতে রাত হয়। রুমে ফিরে দেখে কম্পিউটার টেবিলের উপর একুরিয়ামটা সাজানো। নিশ্চই জামানের কাজ। জামান পাথর, প্লাস্টিকের গাছ সাজিয়ে তার মধ্যে পানি ঢেলে তারপর মাছ ৩টি দিয়ে আমার টেবিলে সাজিয়ে রেখেছে। আমি হাত দিয়ে একুরিয়াম টা ধরলাম, দুটো মাছ একসাথে আছে আর একটি মাছে একটু দূরে। একটু পরপর কাছে এসে পেছন থেকে দুজনকে ঠেলে গুতো দিচ্ছে।
পেছন থেকে সালাউদ্দিন আর জামান এসে।
সালাউদ্দিনঃ এই নে, বিরিয়ানী রান্না করেছি।
দুপুরঃ হটাৎ বিরিয়ানি?
সালাউদ্দিনঃ আজ জামানের আনিকার জন্মদিন সেই উপলক্ষে।
জামানঃ ধুর, চাপা মারে। আজ ওর সাথে আছমা নামের একটা মেয়ের সম্পর্ক হইছে সেই উপলক্ষে।
দুপুরঃ ধুর বাল। যাই হোক, বিরিয়ানি হইছে আর কিছু লাগছে না।
সবাই খাওয়া শুরু করে। সালাউদ্দিন প্রতিবারের মত জামান আর দুপুরের প্লেটে হানা দেয়। কিছুক্ষণ খুনশুটি হয়। আবার সবার আগে সালাউদ্দিনেরই খাওয়া শেষ। হাত ধুয়ে এসে রুমে ঢুকে
সালাউদ্দিনঃ কিরে এই একুরিয়াম আনলি কবে?
জামানঃ আনেনি। নীলা গিফট করেছে।
সালাউদ্দিনঃ নীলাটা আবার কে?
জামানঃ ঐ একজনই । সেই ছোট থেকে দেখে আসছি একমেয়ের ওড়নার পিছে পরে আছে। কত নাম যে দিলোও।
সালাউদ্দিনঃ ওহ হ্যা। কিন্তু ও মেয়ের না বয়ফ্রেন্ড আছে, বিয়ে কিছুদিন পর?
জামানঃ তো কি? ভালোবাসা আবার বিয়ে টিয়ে মানে নাকি? দোস্ত রোদেলা এখন তোর কাছে ফিরে আসলে মেনে নিবি না তুই?
দুপুর চুপ করে থাকে।
সালাউদ্দিনঃ হাহাহাহাহাহা
জামানঃ কিরে বল শালা। ও ফিরে আসলে মেনে নিবি না।
দুপুরঃ ও আসবে না।
জামানঃ আসবে না এমন কোন কথা নেই। আসতেও পারে, আসলে কি করবি?
দুপুরঃ সবটুকু উজার করে দিয়ে কাছে টেনে নিবো।
জামানঃ দ্যাটস মাই দোস্ত।
সালাউদ্দিনঃ আচ্ছা একুরিয়ামে ৩টা মাছে কেন?
দুপুর আর জামান একুরিয়ামের দিকে তাকায়
জামানঃ একটা রোদেলা, একটা দুপুর আর একটা ঐ ছেলে।
সালাউদ্দিনঃ হাহাহাহাহাহাহা। কি কম্বিনেশন রে ভাই। দুটো মাছ একসাথে আছে, এইদোটো রোদেলা আর তার বয়ফ্রেন্ড, আর যেটা একটু দূরে আছে সেটা দুপুর।
জামানঃ ধুর শালা। যেটা একা সেটা ঐ ছেলে। কারন ঐ ছেলে ওদের ভালোবাসার মাঝে এসে উড়ে এসে জুরে বসেছে............
দুপুরঃ থাম তোরা। আর প্লিজ এখন যা। সারাদিন অনেক কাজ করেছি, ভালো লাগছে না। ঘুমোবো।
জামান আর সালাউদ্দিন বুঝতে পারে ওদের কথায় দুপুর কষ্ট পেয়েছে। মেয়েটিকে অনেক বেশি ভালোবাসে দুপুর। ওরা দুজন চলে যায় রুম থেকে। দুপুর ফ্রেশ হয়ে একুরিয়ামের কাছে আসে। তিনিটি মাছ, পাথর, প্লাস্টিকের গাছ। ভোড়ের স্বপ্নের সাথে মিলে যাচ্ছে।
স্বপ্নে একটা নীল তিমি এসে রোদেলাকে হ্যাচকা টান মেরে নিয়ে যায়। এই দূরে থাকা মাছটিই মনে হয় সে, আর সেই মনে হয় রোদেলার বয়ফ্রেন্ড।
দুপুর ড্রয়ার থেকে ধাড়ালো ছুড়িটা বের করে। একুরিয়াম থেকে ৩ নম্বর মাছটি, যেটি দূরে দূরে থাকে, মাঝে মাঝে এসে দুজনের ভিতরে ঢুকে যায়। দুপুর সেই মাছটিকে একুরিয়াম থেকে তুলে নেয়। টেবিলের উপর রেখে ছুড়ি দিয়ে কুচি কুচি করে কেটে মনের ভিতরের যন্ত্রনা, ক্ষোভ মেটায়। একটা পিশাচ টাইপের হাঁসি হেসে একুরিয়ামে একটা চুমু দিয়ে বারান্দায় চলে যায়। একটা সিগারেট টেনে এসে বেডে সুয়ে পরে। কিছুক্ষনের মধ্যেই ঘুমিয়ে পরে।

আবার সেই অতল পানি। নীল তিমিটা মৎস কন্যা রোদেলাকে নিয়ে যাচ্ছে। দুপুর শত চেষ্টা করেও এগুতে পারছে না। এরপর আবার চেষ্টা করে, বাধা ভেঙ্গে পিছু নেয় নীল তিমির। কিছুদূর যাওয়ার পর থেমে যায় নীল তিমি। মুক্ত করে মৎস কন্যা রোদেলাকে।
মৎস কন্যা রোদেলাঃ দুপুর তুমি আর এসো না আমাদের মাঝে। আমাদের ভালো থাকতে দাও। তোমার আর আমার মধ্যে নতুন করে কিছু আর সম্ভব নয়।
ঠিক সেই সময় উপর থেকে একটা ছুড়ি পরে দুপুরের সামনে। ছুড়িটা খুব চেনা। দুপুরের টেবিলের ড্রয়ারে থাকে সব সময়। দুপুর ছুড়িটা হাতে তুলে নেয়। নিজের গায়ে নিজ পোস দিয়ে ক্ষত বিক্ষত করে। নিজেকে টুকরো টুকরো করে। নীল তিমিটা পিশাচ হাসী হাসতে থাকে। মৎস কন্যা রোদেলা মাথা নিচু করে আছে, হয়তো তার চোঁখ বেয়ে নোনা জল বের হচ্ছে কিন্তু এই একুরিয়ামের অতল জলে সেই নোনা জল মিশে যাচ্ছে।
দুপুরের ঘুম ভেঙ্গে যায়। একুরিয়ামের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। কিছুক্ষণ একদৃষ্টিতে একুরিয়ামের দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর ড্রয়ার থেকে আবার ছুড়িটা বের করে। বের করে হাতে কেটে কিছু একটা লেখে। তারপর নিজেই নিজের হাত এবং পায়ের রগ কেটে দেয়। প্রচন্ড ব্যাথা, ব্যাথা মৃত্যু যন্ত্রনায় পরিনত হয়। একসময় রোদেলাকে মুক্তি দিয়ে দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে চলে যায়।
সকালে জামান রুমে ঢুকে দেখে ফ্লোর, বিছানা রক্ত দিয়ে ভেসে গেছে। চিৎকার দিয়ে সালাউদ্দিনকে ডাকে। দুজনে মিলে হসপিটালে নিয়ে যায়। কিন্তু প্রানপাখি তো আরো আগেই উড়ে গিয়েছে।
দুপুরের হাতের লেখাটা ছিলোঃ রোদেলা আমি চলে যাচ্ছি তোমায় ছেড়ে। বাধা হয়ে আর না। তুমি কথা দিয়েছিলে শেষ দেখা দেখতে আসবে আমায়। আমি অপেক্ষায় রইলাম। আমার জানাজার আগে হয়তো আমি তোমার মুখটি দেখতে পাবো।

.........সমাপ্ত..........

সম্পূর্ন গল্পটাই আমার বিকৃত মস্তিস্কের কল্পনা বা দুষ্টামি অথবা ফাইজলামী। বাস্তবতার সাথে একো কোন রকম মিল নেই। গল্পে ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য অনুরোধ করা হল।