শুক্রবার, ১৯ মে, ২০১৭

অদৃশ্য পুরুষ । : MD Asadur Rahman ( Sh Ip On) ।


অদৃশ্য পুরুষ
(সম্পুর্ন গল্প)
লেখা : MD Asadur Rahman ( Sh Ip On)


আমি বারবার বলেছি আপনি আমার পিছু পিছু আসবেন না। তবু কেনো আপনি আমার পিছু পিছু আসছেন?
কোন একজনের সাথে এভাবেই কথা বলছিল নিধা। খুব শান্তশিষ্ট, উজ্জ্বল স্যামবর্নের অসাধারন একটি মেয়ে। অনেক মায়া ভরা মেয়েটার মুখ। সব সময় কপালে ১টা নীল রঙের ছোট্ট টিপ আর হাতে একগুচ্ছ চুরি থাকবেই আর চোখে হালকা করে কাজল।
মেয়েটাকে ইদানিং একটা ছেলে খুব ডিস্টার্ব করছে। খুবই বজ্জাত একটা ছেলে।
নীধা : আচ্ছা আপনি কেনো আমার সাথে এমন করছেন বলুন তো?
ছেলেটা : ভালোবাসি তাই?
নীধা : হাহ  ♥!!!!! ভালোবাসেন আমাকে?
ছেলেটা : হ্যা, খুব।
নীধা : কি নাম আপনার?
ছেলেটা : আমার নাম ফারহিন।
নীধা : ফারহিন তো মেয়েদের নাম। আপনি এই নাম রেখেছেন কেনো?
ফারহিন : হাহাহাহহাহা। আমি রাখিনি, আমার পিতামাতা রেখেছেন।
নীধা: আচ্ছা যাই হোক ভালো। আপনি আমার পিছু পিছু আসবেন না। মানুশ দেখলে খারাপ বলবে আমাকে। ভাববে আমি ১টা বাজে মেয়ে।
ফারহিন : না। সেই রকম কিছু হবে না।
নীধা : কেনো হবে না?
ফারহিন : কারন কেউ আমাকে দেখতে পাচ্ছে না।
নীধা : মানে। মজা করার আর জায়গা পান না?
ফারহিন : আমার কথা বিশ্বাস না হলে আশে পাশে তাকিয়ে দেখুন। সবাই আপনার দিকে তাকিয়ে হাসছে।
নীধা আশেপাশে তাকায়। সত্যিই তো। আশে পাশের মানুশজন ওর দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। আর মুচকি মুচকি হাসছে। নীধা এগুলো দেখে সেখান থেকে এক দোরে বাড়ী চলে আসে।
বারান্দায় বসে চুলে তেল দিচ্ছে নীধা। হটাত রাস্তায় তাকিয়ে দেখে যে ফারফিন নামের ওই ছেলেটা নিচে থেকে তার দিকে তাকিয়ে আছে। ফারহিন নীধার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি একটা হাসি দেয়। হাতের ইশারায় নীধাকে বোঝাতে চাচ্ছে যে সে উপরে আসতে চাইছে। নীধাও ইশারায় না জানায়। ফারহিন সেখান থেকে চলে যায়। ফারহিনের চলে যাওয়া দেখে নীধা হাপ ছারে।
হটাত পিছন থেকে ফারহিন প্রবেশ করে বারান্দায়।
নীধা : তুমি এখানে আসছো কেনো? বাবা দেখলে আমাকে একদম জানে মেরে ফেলবে।
ফারহিন : হা হা হা হা। ভয় পেও না। আমাকে তুমি ছাড়া কেউ দেখতে পায় না। কতবার বলবো আর।
নীধা : সত্যিই কি তাই?
ফারহিন : হ্যা রে ভাই।
নীধা : বিশ্বাস হয় না।
ফারহিন : ওয়েট।
ফারহিন বারান্দায় থাকা টবের বোতলটা ফেলে দেয়। টব ফ্লোরে পরে ভেঙে যায় আর শব্দ হয়। শব্দ পেয়ে নীধার মা বারান্দায় আসে।
মা : কি রে কি হয়ছে?
মা বারান্দায় ঢুকে পরে
মা : টব ভেঙেছিস কেনো?
নীধা : আমি ভাংগিনি মা।
মা : তুই ভাঙিসনি মানে? তুই ছাড়া আর কে আছে এখানে?
নীধা : আচ্ছা মা তুমি যাও এখন, আমি সব পরিস্কার করছি।
মা চলে যায়।
নীধা : তুমি সত্যিই তো অদৃশ্য।
ফারহিন : আগে থেকেই বলছি।
নীধা : তুমি কি ভুত?
ফারহিন : নাহ। আমি মানুষ।
নীধা : তাহলে তুমি অদৃশ্য কেনো।
ফারহিন : কোন একজন কালোযাদু করেছে আমার উপর। কালোযাদু করে আমাকে অদৃশ্য করে রেখেছে।
নীধা : কে করেছে? তার লাভ কি?
ফারহিন : সেগুলো কিছুই জানি না।
নীধা : কি জানো তুমি? আর আমার কাছেই আসছো কেনো?
ফারহিন : তোমাকে ভালোবাশি তাই।
নীধা : আচ্ছা কেউ তোমাকে দেখে না, সুধু আমি তোমাকে দেখতে পাচ্ছি। কেনো?
ফারহিন : আমি যতটুকু জানি আমাকে শুধু ২জন ব্যেক্তিই দেখিতে পাবে। ১জন হলো যে আমাকে কালো জাদু করেছে সে, আর অপর জন হলো সে যে আমাকে এই অভিশাপ থেকে মুক্তি দেওয়ার ক্ষমতা রাখে.
নীধা : তার মানে আমি আপনাকে মুক্তি করবো?
ফারহিন : এমন তো হতে পারে আপনিই আমাকে অদৃশ্য করে রেখেছেন।
নীধা: কি বলছেন এই সব? আমি কেনো এমন করুবো।
ফারহিন : হাহাহাহাহাহাহহা মজা করলাম। আসলে আপনাকে হটাত একদিন রবিন্দ্র সরবরে দেখি। সেদিন থেকেই আপনাকে ফলো করি। ভালোবেসেও ফেলি। প্রথমে ভাবতাম আপনি আমাকে দেখতে পাননা। কিন্তু পরে দেখলাম না আপনি আমাকে দেখতে পান। তারপর থেকেই আমি আপনাকে ডিস্টার্ব করছি।
নীধা : আচ্ছা আপনি কি করতেন?
ফারহিন : কার্টুন বানাতাম, গল্প লিখতাম, ভুতের গল্প লিখতাম ফেসবুকে।
নীধা : তাই? তো আপনার লেখা পাবো কোথায়?
ফারহিন : www.facebook.com/arshipon15/ এখানে গেলে আমার লেখা সব গল্প পাবেন.
নীধা : ঠিক আছে পরবো।
ফারহিন : আচ্ছা আমি কি আপনাকে খুব ডিস্টার্ব করছি?
নীধা : নাহ। আপনার সাথে কথা বলতে আমার ভালোই লাগছে।
এভাবে চলতে থাকে কথা। কথা শেষে চলে যায় ফারহিন। পরের দুই দিন ফারহিন আর নীধার দেখা কথা হয় না। নীধা ফারহিন কে মিস করতে থাকে। মনে মনে খুজে ফিরে। যে ছেলেটা বিগত কয়েকদিন দিন রাত তার পিছু পিছু ঘুরছিল আজ দুইদিন হয় তার কোন খোজ খবর নাই।
সন্ধ্যার দিকে নীধা রবিন্দ্র সরবরে যায়। এক কোনায় গিয়ে চুপ করে বসে থাকে। একটা সময় তার চোখে পানি চলে আসে।
ঠিক সেই সময় ফারহিন এসে পাসে বসে নীধার। নীধা ফারহিনকে দেখে দাঁড়িয়ে চোখ মুছে সেখান থেকে চলে যেতে চায়। ফারহিন হাত টেনে ধরে।
ফারহিন : কি হয়ছে তোমার?
নীধা : কিছু হয় নাই।
ফারহিন : তাহলে কাদছো কেনো? আর চলেই যাচ্ছো কেনো?
নীধা : যাবো না তো কি করবো? কার জন্য বসে থাকবো।
ফারহিন : আমার জন্য।
নীধা : আপনার জন্য? হাহাহা। আপনার কাছে কি আমার কোন মুল্য আছে? আমি কেমন আছি, কোথায় আছি এই দুই দিন কোন খোজ খবর নিয়েছিলেন?
ফারহিন : ও বাবা তাই নাকি, এর জন্য তুমি কাদছিলে। সরি আমি। আমি আসলে একটা কাজে ঢাকার বাইরে গিয়েছিলাম।
নীধা ফারহিনের বুকে মাথা গুজে জরিয়ে ধরে। আর এদিকে আশেপাশের লোকজন নীধাকে দেখে হাসছে।
ফারহিন : এই পাগলি, এই দেখো তোমাকে দেখে সবাই হাসছে।
নীধা : হাসুক।
মানুশ জন নীধাকে পাগল ভাবে। কারন তারাতো সুধু নীধাকেই দেখতে পাচ্ছে ফারহিনকে না।
নীধা : তোমার লেখা গল্প পরলাম, এতো আবেগ আর মায়া কেনো তোমার গল্পে?
ফারহিন : আমার গল্প গুলোই আমার জীবন, খুব মায়া আর ভালোবাসা নিয়ে সাজাই তাই হয়তো এমন।
নীধা : ঢাকার বাইরে গিয়েছিলে কেনো?
ফারহিন : এক ত্রান্তিকের সাথে বলতে। বেটা একটা ভিতুর। আমি ডাকি কিন্তু আমাকে সে না দেখে ভয়ে প্রায় মরার মত অবস্থা।
নীধা : তার কাছে কেনো?
ফারহিন : আমার এই সমস্য নিয়ে তার কাছে গিয়েছিলাম সমাধানের জন্য।
নীধা : কি বললো সে?
ফারহিন : বললো যে খুব বড় যাদুকর কোন এক খারাপ উদ্দ্যেশ্যে আমার উপর তার এই জাদু প্রয়োগ করেছে।
নীধা: সমাধান কিছু বলেছে?
ফারহিন : সামনের সপ্তাহের পুর্নিমার রাতে সে ধ্যানে বসবে। তখন সব বলবে।
নীধা : আমি যাবো তোমার সাথে।
ফারহীন : আচ্ছা ঠিক আছে।
এরপর শুরু হয় তাদের প্রেমালাপ, রোমান্স আরো কত কি। কিন্তু বেশিক্ষন আর টিকতে পারলো না। আশেপাশের পথ শিশুরা এসে নীধাকে ডিস্টার্ব করা শুরু করে। এরপর  ঐখান থেকে চলে যায়।
কিছুদিন পর এক বিকেলে ফারহিন নীধার বাসায় এসে হাজির হয়। সে নীধাকে জানায় যে তাকে আজ রাতেই ত্রান্তিকের কাছে যেতে হবে।
নীধা : আজ
লেখা : MD Asadur Rahman ( Sh Ip On)রাতেই যাবে?
ফারহিন : হ্যা। আজ শেষ রার দিকে ধ্যানে বসবে বাবা।
নীধা : আমি যাবো তোমার সাথে।
ফারহিন : তোমার বাসায় সমস্যা হবে না?
নীধা : নাহ, হবে না। আমি রেডি হয়ে আসছি।
নীধা রেডি হয়ে আসলে ওরা রওনা দেয়। বাসের টিকিট কাটে ২টা। তারপর বাসে উঠে বসে। জানালার পাশে বসে ফারহিন।
আগন্তক : আপা একটু ওই পাশের সিটে গিয়ে বসবেন?
নীধা : কেনো? দেখছেন না ওইখানে একজন বসে আছে।
আগন্তুক : আপু ওই সিটটা খালি তো।
নীধা : ( নীধার মনে পরে যে ফারহিন কে সে ছাড়া আর কেউ দেখতে পাচ্ছে না)। সরি, আমি ২টা সিটেরই টিকিট কেটেছি। এই টা আমার টিকিট।
আগন্তক : ঠিক আছে বুঝলাম। কিন্তু বাসে আর কোন সিট খালি নেই। যদি একটু বসতে দিতেন। তা নাহলে পুরো পথ আমাকে দাঁড়িয়ে যেতে হবে।
নীধা : দাঁড়িয়ে যাবেন। আমার পাশে বসা যাবে না, দুক্ষিত।
আগন্তুক : ওহ, ঠিক আছে।
ফারহিন আর নীধা কথা বলছে। নীধা ফারহিনের কাধে মাথা রেখে গল্প করছে। বাসের আসেপাশের লোকগুলো প্রথমে সাধারন কিছু ভাবলেও পরে তারা খুব কৌতূহলী হয়ে নীধার দিকে তাকিয়ে থাকে। অনেক হাসাহাসি করে বলছে : মাথায় সমস্যা আছে মেয়েটার।
আগন্তুক : এক্সকিউজমি।
নীধা : জি, আবার কি হলো?
আগন্তক : কার সাথে কথা বলছেন আপনি?
নীধা : আমার একটা ভুত আছে, নাহ নাহ জীন। তার সাথে কথা বলতেছি। আপনার কোন সমস্যা?
আগন্তক : নাহ মানে, সবাই আপনাকে পাগল ভাবছে।
নীধা : আমি তো পাগল না। আমি পাগলী। হইছে এবার? যান সামনে গিয়ে দারান।
ছেলেটি চলে যায়। ফারহিন নীধাকে বলে আচ্ছা একটু মজা করি। সবার মধ্যে দেখো কি ঝামেলা পাকাই। এই বলে ফারহিন উঠে যায়। উঠে গিয়ে একদম সামনের সিটে বসা এক লোকের মাথায় টোকা দেয়। লোকটা উঠে পিছনের সিটের লোকটার দিকে তাকায়, তারপর বসে পরে। ফারহিন আবার লোকটার মাথায় টোকা দেয়। এবার একটু জোরে করে। খুব ব্যাথা পায় লোকটা। লোকটা উঠে দাঁড়িয়ে পিছনের সিটের লোকটাকে মারতে থাকে। প্রায় এই রকম ভাবে বাসে আরো কয়েকজনের সাথে এমন করে ফারহিন। একসময় পুরো বাসের অর্ধেক এমন ঝামেলা আর মারামারি শুরু করে। আর ফারহিন আর নীধা দুজনে মনের সুখে শান্তিতে কথা বলে।
রাত ১০ টার দিকে বাস থামে। বাস থেকে নেমে রিকশা নেয়। একদম ত্রান্তিক বাবার বাড়ির সামনে গিয়ে থামে রিকশা।
নীধা : ভাড়া কত আপনার?
রিকশাচালক : ৬০ টাকা আফা।
নীধা : এই নিন।
রিকশাচালক : আফা রিশকায় তো আফনে একাই আইলেন। তয় কথা কইলেন কার সাথে সারা রাস্তায়?
ফারহিন রিকশায়ালার মাথায় জোরে একটা টোকা দেয়।
রিকশাচালক : ওই কিডা? কিডা মারলো আমারে? একবাপের পোলা হইলে সামনে আয় আমার?
নীধা : হাহাহাহাহাহাহাহা। ভাই সে একবাপেরই পোলা। আর আমি সারা রাস্তা জুরে তার সাথে কথা বলতে বলতে এসেছি।
রিকশাচালক : ভুভুভুভুভুততততততত
চলে যায় রিকশাচালক রিকসা ফেলে। নীধা আর ফারহিন ওই বাড়িতে ঢুকে।
খুব নির্জন একটি বাড়ি। কাঠ আর টিনের দোতালা একট বাড়ি। সামনে বাগান। পাশে একটা ছোট পুকুর। দোতালার রুমে গিয়ে বসে ফারহিন আর নীধা।
১১ টার দিকে ত্রান্তিক বাবা উপরে আসে। নীধা উঠে সালাম দেয়।
নীধা : আসসালামু আলাইকুম
ত্রান্তিক : অলাইকুম আসসালাম। তুমি কে মা?
নীধা : আমি নিধা। ঢাকা থেকে এসেছি। ফারহিনের সাথে।
ফারহিন : ভালো আছেন বাবা?
ত্রান্তিক : ওহ তুমি। আমি তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। রাত ২টার দিকে আসনে বসবো।
ফারহিন : আচ্ছা বাবা।
ত্রান্তিক : আচ্ছা আমি ওদের বলে দিচ্ছি তোমাদের খাবার দাবার দিতে। খেয়ে দেয়ে রেস্ট নাও। আজ তোমার উপর দিয়ে অনেক ধকল যাবে।
ফারহিন : আচ্ছা ঠিক আছে।
ত্রান্তিকের দুজন শিষ্য এসে ফারহিন আর নিধাকে একটা ছোট রুমে নিয়ে যায় সেখানে তারা ফ্রেস হয়ে রাতের খাবার খায়।
রাত ২টার আগে একজন শিষ্য এসে একটা কালো কাপর নীধার হাতে দেয় আর বলে যে সেটা ফারহিনকে পরাতে। ওইটা পরে আসন ঘরে আসতে বলে।
ফারহিন কালো কাপরটা পরে আসন ঘরে আসে। সাথে নীধা। ফারহিন এর দেহ অদৃশ্য, সুধু তার কালো কাপরটা যেন শুন্যে ভাসতেছে।
পুরো আসন ঘর মোটা মোটা মোমবাতি জালিয়ে রাখা হয়েছে। আসনের সামনে ২টা মাথার খুলি আর কিছু হাড্ডি। আর সামনে আগুন জলছে। ত্রান্তিক জোরে জোরে মন্ত্র পরছে আর কিছু ১টা আগুনে ছুরে মারছে।
ত্রান্তিক : ফারহিন তুমি এই লাল সার্কেলের ভিতর এসে বস। আর মামুনি তুমি এখানে থাকতে চাচ্ছো? যদি থাকতে চাও তাহলে এই জামাকাপর চেঞ্জ করে আমাদের কালো পোষাক পরতে হবে।
নীধা : আমি থাকতে চাচ্ছি। আমাকে পোষাক দিন।
ত্রান্তিক : তুমি ভয় পেতে পারো। অনেক ঝামেলা হবে।
নীধা : আমি ভয় পাবো না বাবা।
নীধা পাশের রুম থেকে জামা চেঞ্জ করে এসে ত্রানিকের মহিলা শিষ্য দের পাশে এসে বসে। এর কিছুখন পর ত্রান্তিক আবার মন্ত্র পাঠ শুরু করে। জোরে জোরে মন্ত্র পরছে। বেশ কিছু খন এভাবে মন্ত্র পরতে থাকলো। ত্রান্তিকে শব্দ ছাড়া পুরো ঘরে আর কোন শব্দ নেই। গা ছম ছম একটা ভাব, ভুতুরে পরিবেশ। সবাই ধিরে ধিরে তাদের চোখ বন্ধ করে ফিল করার চেষ্টা করতে লাগলো। ফারহিনেরও চোখ বন্ধ। ফারহিনের শরীর বেয়ে ঘাম ঝরছে। নীধা দেখছে ফারহিন কে। কিছুখন পর সেও চোখ বন্ধ করে।
ত্রান্তানা ফিক্কা আসলু জা হুরহুরহুর কামারাক্ষু কিমা ত্রান্তা আত্তিকা আত্তিক আন হাম হাম মন্ত্র পরে চলছে ত্রান্তিক। সবার চোখ বন্ধ। ঝিম একটা পরিবেশ। ত্রান্তিকের মন্রের শব্দ বারতে থাকে। হটাৎ মৃদ বাতাস শুরু হয়। বাতাস বেরে ঝরে পরিনত হয়। সে অনেক ঝোরো হাওয়া। নিধার মনে হচ্ছিল যে এই বাতাস তাকে হয়তো উড়িয়ে নিয়ে যাবে। ইচ্ছে করছিল একবার চোখটা খুলে দেখতে যে ফারহিনের কি অবস্থা। কিন্তু আগেই বলা ছিল ত্রান্তিকের মন্ত্র পরার এই সময় চোখ খোলা যাবে না।
ঝড়ো বাতাসের সাথে এবার শুরু হয় ভুমিকম্পনের মত কাপন। মনে হচ্ছে এই মুহুর্তেই বুঝি পুরো বাড়িটা ভেঙে পরবে। আবার কারা জেনো ঢিল মারছে দোতালা বাড়ির টিনের চালে। আচ্ছা কোনটা ঢিল তো আবার জানালা ভেঙে আমার মাথায় এসে লেগে মাথা ফাটিয়ে দিবে না তো, ফারহিনের ও তো লাগতে পারে। এভাবেই মনে মনে কথা বলছিল নীধা। নীধা ভয় পেতে শুরু করে।
একটু পরই ধিরে ধিরে সব কমতে শুরু করে। ঢিল, কম্পন, ঝড়ো বাতাস সব কমে যায়। ত্রান্তিকের মন্ত্রও একটা সময় থেমে যায়। সুনসান নিরবতা এখন রুমটির ভিতর।
ধিরে ধিরে নীধা চোখ খুলে। চোখ খুলেই সে ত্রান্তিককে দেখতে পায়। পাশেই ফারহিন, আর ফারহিন এর ঠিক বিপরিতে বসে আছে একজন। নিধা তাকে দেখা মাত্র চিৎকার করে উঠে।
ত্রান্তিক : এই চুপ(চিৎকার করে)
নীধা থেমে যায়। জরো সরো হয়ে বসে।
ফারহিনের বিপরিত দিকে বসে আছে মানুশ সাদৃশ্য একটা দানব। উচ্চতায় ১০/১২ ফিটের কম হবে না। একদম উলঙ্গ দেহ। সারা শরির দিয়ে রক্ত ঝরছে। জিহ্বা ৩/৪ ইঞ্চি বের হয়ে আছে। চোখ ৩টি, আর চোখ দিয়ে রক্ত ঝরছে। মাথার কিছু অংশে চুল আছে। একদম বৃশ্রি অবস্থা আর ভয়ংকর। তার লাল চোখ দিয়ে নীধার দিকে তাকানোই নীধা ভয় পেয়ে চিৎকার করে।
ত্রান্তিক : কেমন আছো হে কিম্বারু(দানব)
কিম্বারু : রক্ত চাই আমি রক্ত। তাজা রক্ত। রক্ত ছাড়া কিম্বারু ভালো থাকে না।
ত্রান্তিক তার একশিষ্যের দিকে তাকায়। শিষ্যটি উঠে গিয়ে একটি ছাগল নিয়ে সার্কেলের ভিতর ঢুকে।
ত্রান্তিক দাঁড়িয়ে ছাগলটিকে এক কোপে ঘার নামিয়ে ফেলে। গল গল করে রক্ত ঝরছে। কিম্বারু এক কুতসিত হাসি দিয়ে লাফিয়ে পরে রক্তের উপর। চেটে চেটে রক্ত খাওয়া শুরু করে। সে কি ভয়ানক দৃশ্য। আস্তে আস্তে সব রক্ত চুষে খায় কিম্বারু। খাওয়া শেষ হলে সে আবার আগের জাগায় এসে বসে। মুখ দিয়ে রক্ত ঝরছে।
কিম্বারু : কি কারনে আমাকে আমন্ত্রন আর ভোজের আয়োজন?
ত্রান্তিক : তোমার সামনে বসা ছেলেটিকে দেখতে পাচ্ছো?
কিম্বারু : হ্যা, একটি ছেলে বসে আছে কালো একটি কাপর পরে।
ত্রান্তিক : ছেলেটিকে তুমি দেখতে পাচ্ছো কিন্তু আমি দেখতে পাচ্ছি না। কোন এক কালো জাদু তাকে অদৃশ্য করে রেখেছে বলে আমার ধারনা। তোমাকে এর কারন আর সমাধান এর উপায় বের করে দিতে হবে।
কিম্বারু : ওহ এই ব্যাপার। এটা ব্যাপারি না। আচ্ছা আমি এখনি দেখছি।
কিম্বারু ফারহিনের একটা হাত ধরে। তারপর সে চোখ বন্ধ করে ফারহিনের হাতে জোরে চাও দেয়।
ফারহিন চিৎকার করে উঠে। ফারহিনের কালো জামায় আগুন ধরে যায়। আগুনে পুরে জায় তার কাপর। দেহের সব রগ ফুলে ফেপে উঠে। মনে হচ্ছে রগ গুলো এখনি তার দেহ থেকে বের হয়ে আসবে। চোখ দিয়ে রক্ত ঝরছে। এই দৃশ্য একমাত্র নীধাই দেখতে পাচ্ছে। ফারহিনের এই কষ্ট দেখে নীধার চোখ দিয়ে পানি ঝরতে থাকে। ইচ্ছে করে তার কিম্বারুকে দা টা দিয়ে মাথা ফাটিয়ে দিতে। কিন্তু কিম্বারু তো যা করছে ফারহিনের জন্যই করছে। নীধা নিজেকে খুব অসহায় মনে করছে। আল্লাহই ভালো জানে কি খবর দিবে কিম্বারু, সমাধানের পথটাই কেমন হবে।
জোরে করে পুরো বাসাটা আবার ঝাকি দেয়। বিদ্যুৎ চমকের মত আলো জলতে থাকে।
হটাত করে কিম্বারু চিৎকার দিয়ে উঠে। কিম্বারুর চিৎকার এর পরেই ফারহিন চিৎকার শুরু করে। দুজনের চিৎকার এ মনে হচ্ছিল যেন আকাশ ভেংে পরছে।
কিম্বারু ফারহিনের হাত ছেরে দেয়। সাথে সাথেই ফারহিন জ্ঞ্যান হারিয়ে পরে যায়।
ত্রান্তিকের দুইজন শিষ্য এসে ফারহিনকে জ্ঞ্যান ফেরানোর চেষ্টা করে।
ত্রান্তিক : বলো ব্যাপারটা কি?
কিম্বারু : ঘটনা খুব ভয়াবহ। মনুষ জাতী নিয়ে নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে।
ত্রান্তিক : কি হয়েছে খুলে বল।
কিম্বারু : তোমাদের এই পৃথিবীকে অন্ধকার রাজ্য বানানোর চেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে লিলিথ।
ত্রান্তিক : লিলিথ টা কে?
কিম্বারু : এই পৃথিবীর বর্তমানে সবচেয়ে ক্ষমতাশীল আর ভয়ংকর কালো যাদুকর।
ত্রান্তিক : এর থেকে সমাধান?
কিম্বারু : সমাধানের পথটা খুব কঠিন আর ভয়ংকর। অনেক মানুশকে মরতে হবে।
ত্রান্তিক : সমাধানের পথটা বলো।
কিম্বারু : সম্পুর্ন সমাধান এখনো আমার হাতে নেই। তবে আপাতত লিলিথকে খুজে বের করতে হবে। আর খুজে বের করতে হবে সেই মেয়েটিকে যার জন্ম এই ছেলের জন্মতারিখ, জন্ম সময় এর সেম সময় যার জন্ম। সুধু সেই মেয়েটাই এই ছেলেকে দেখতে পাবে।
ত্রান্তিক : মেয়েটা এখানেই আছে।
কিম্বারু : মেয়েটার সাথে ছেলেটার বিয়ের ব্যাবস্থা করতে হবে। বিয়ের পরের দিন এক বৃদ্ধা আসবে। সেই বৃদ্ধাই সমাধানের আসল পথ বলে দিতে পারবে ।
ত্রান্তিক : বিয়ে দিয়ে দেই তাহলে।
কিম্বারু : এই রকম পূর্নিমার রাতে ওদের বিয়ে দিতে হবে। এর মাঝে এই বিয়ে ভাঙার চেষ্টা করতে পারে লিলিথ। বুদ্ধিমান হলে এই লিলিথ কে চিনতে পারবে। তবে লিলিথ এতো সহযে ধরা দেওয়ার পাত্রী নয়।
ত্রান্তিক : সামনের সপ্তাহে আমি ওদের বিয়ে দিতে চাই।
কিম্বারু : দাও। এখন আমার যেতে হবে। আমার আর কোনো প্রয়োজন হলে আমাকে ডেকো।
কিম্বারু হাওয়ার সাথে মিশে চলে যায়। ত্রান্তিকও তার রুমে ফিরে। ফারহিনের জ্ঞ্যান ফিরলে তাকে দুজন শিষ্য ধরে নিয়ে রুমে দিয়ে আসে। এর পর ঘুমের রাজ্যে ঘুরতে যায় সবাই। ঘুম শেষে উঠে দেখে রুমের ভিতরে একটা চেয়ারে ত্রান্তিক বসে আসে।
নীধা: বাবা আপনি কষ্ট করে এলেন যে। আমাদের ডাকলেই তো আমরা চলে আসতাম।
ত্রান্তিক : রাতে অনেক পরিশ্রম গিয়েছে তোমাদের উপর তাই ভাবলাম ঘুম থেকে তুলে নতুন করে আর কষ্ট দিব না।
নীধা : না বাবা কিশের কষ্ট। আপনি আমাদের যে উপকার করছেন উল্টো আপনি কষ্ট করছেন।
ত্রান্তিক : তুমি কি কাল রাতের ঘটনা ফারহিনকে সব বলেছো?
নীধা : না বাবা কিছু বলা হয়নি এখনো। আমি কি ওকে বলবো? ও ঘুমিয়ে আছে।
ত্রান্তিক : বলাটা দরকার।
নীধা : আচ্ছা বাবা আমি ওকে জাগিয়ে সব বলছি।
নীধা ফারহিন কে ডেকে তুলে। তারপর গতরাতের কিম্বারুর সব কথা খুলে বলে। ফারহিন সব মনোযোগ দিয়ে শুনে বাবাকে প্রশ্ন করে।
ফারহিন : আচ্ছা বাবা, দুনিয়াতে এতো মানুশ থাকতে লিলিথ কেনো আমাকে বেছে নিল?
ত্রান্তিক : এই প্রশ্নের জবাব পেতে হলে আগে তোমাদের বিয়ে দিতে হবে। তোমাদের বাসরের পরেই বৃদ্ধা। সেই তোমার সব প্রশ্নের উত্তর আর এই সমস্যার সমাধান দিতে পারবে।
ফারহিন : তাহলে আমরা বিয়ে করে ফেলি।
ত্রান্তিক : পৃনিমার রাতে বাসর হবে এমন দিন দেখে বিয়ে দিতে হবে। সেই সাথে বিভিন্ন গ্রহ উপগ্রহের সখ্যতা যাচাই করে দিনটি একটি শুভ দিন হতে হবে। সেই হিসেবে সামনের সপ্তাহের রবিবারের দিনটা শুভ। তোমরা তত দিন এখানে থাকো। বিয়ের পর বৃদ্ধার পরামর্শ মত কাজ করতে হবে।
ফারহিন : ঠিক আছে।
নীধা : নাহ ঠিক নেই। আমি আমার পরিবারের অমতে বিয়ে করবো না।
ফারহিন : কি বলো এইসব। তোমার বাবা মা কোনদিন ই এখন আমার আর তোমার বিয়ে মেনে নিবে না।
নীধা : বুঝিয়ে বলবে ঠিকই মেনে নিবে। ফারহিন তুমি বুঝছো না কেনো বিয়েটা সারা জীবনের ব্যাপার। বাবা মার অমতে বিয়ে করা কখনোই ঠিক না।
ত্রান্তিক : আচ্ছা দেখো তোমরা কি করবে। আমি উপরে যাচ্ছি। উপরে সকালের নাস্তার ব্যাবস্থা করা হয়েছে। তোমরা আসলে একসাথে নাস্তা করবো।
ত্রান্তিক রুম থেকে বের হয়ে উপরে চলে যায়।
ফারহিন নীধাকে বুঝাতে চেষ্টা করে। কিন্তু নীধা কোনভাবেই পরিবারের অমতে বিয়ে করার পক্ষে মত দেয় না। ফারহিন কিছুখন চুপ করে থাকে। তারপর নীধার কাছে এসে নীধার ঠোটে ছোট একটা চুমু খেয়ে নীধাকে তার বুকে টেনে নিয়ে বলে।
ফারহিন : খুব ভালোবাসিরে পাগলি তোকে। খুব।
নীধা : আমি তোমাকে খুব বেশি ভালোবাসি। আর ভালোবাসি বলেই এতোদুর তোমার সাথে এসেছি। প্লিজ তুমি আমাকে বোঝার চেষ্টা করো। আমাকে প্লিজ ভুল বুঝো না।
ফারহিন : ঠিক আছে। যেভাবে ভালো মনে কর তুমি। কিন্তু তোমার বাবা মা যদি মেনে না নেয়?
নীধা : মেনে নিবে। আমি বুঝাবো। আর কোন কারনে যদি মেনে না নেয় তাহলে তোমার হাত ধরে পালিয়ে যাবো। ঠিক আছে?
ফারহিন নিধার কপালে চুমু খেয়ে বলে
ফারহিন : আচ্ছা ঠিক আছে। আমরা নাস্তা করে ত্রান্তিক বাবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ঢাকার চলে যাবো।
ফারহিন আর নীধা উপরে আসে। বাবার সাথে নাস্তা করার সময় তাকে জানায় ঢাকা ফিরে যাওয়ার কথা।
ঢাকা ফিরে এসে নীধার বাসায় আসে দুজন। ফারহিনকে কেউ দেখতে পায় না। সেই সুবিধা নিয়ে ফারহিন নীধার বাসায় থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। খাবার দাবার লুকিয়ে লুকিয়ে রুমে এনে দিবে নীধা ফারহিনের জন্য।
হাতে সময় খুব কম। তাই আজ রাতেই নীধা নিধার বাবা মা কে সব জানানোর সিদ্ধান্ত নেয়। সেই মত রাতে সে তার বাবা মা কে তার আর ফারহিনের কথা জানায়। সব কথা শুনে নীধার বাবা বলে
বাবা : তোমার মাথায় সমস্যা আছে। আমার মনে হয় তোমাকে মানুষিক রোগ বিশেষজ্ঞ দেখাতে হবে।
নীধা : বাবা আমি সত্যি বলছি। আমি ওকে ভালোবাসি। আমি ওকেই বিয়ে করবো।
মা : মামুনি। আমার মনে হয় ফারহিন তোমার কল্পনা। আমরা তোমাকে ভালো ডাক্টার দেখাবো।
নীধা : নাহ মা। এই দেখো ফারহিন এখানেই আছে। ফারহিন প্লিজ কথা বলো।
ফারহিন কোন কথা বলে না। অদৃশ্য ফারহিন চুপ করে বসে আছে সোফায়।
নীধা : কি হলো তোমার? তুমি কথা বলছো না কেনো?
বাবা : মামুনি ফারহিন নামে কেউ নেই। সব তোমার কল্পনা।
নীধা : ফারহিন তুমি কি আমার সাথে মজা নিচ্ছো? আমাকে পাগল ভাবছে সবাই সেটা তোমার মজা লাগছে তাই না? ভালো।
ফারহিন সোফা থেকে উঠে সামনের টিভি একটি কালো কাপর দিয়ে ঢাকা ছিল। সেই কাপরটা নিজের গায়ে জরায়। আর নিধার বাবা মা দেখছে যে ওই কাপোড়টা শূণ্যে একা একা আসছে তাদের সামনে। নীধার বাবা ভয়ে ঢেকুর তুলছে। আর সেই সময়
ফারহিন : আমি ফারহিন। আমি নীধাকে আর নীধা আমাকে ভালোবাসে। আমারা বিয়ে করতে চাই।
ফারহিন এর কথা শুনে নীধার বাবা ভয়ে জ্ঞ্যান হারিয়ে ফেলে। এই অবস্থা দেখে ফারহিন কালো কাপরাটা সোফার উপর রেখে চলে যায়। আর নীধা আর নীধা মা তার বাবাকে নিয়ে বিছানায় শুয়েই পানি দিয়ে জ্ঞ্যান ফেরানোর চেষ্টা করে।
অন্যদিকে
সুন্দরবনের গভীর জংগল। মিটমিট করে আগুন জলছে। গাছের উপরে কাঠ, বাস, আর গোলপাতা দিয়ে বানানো বাসা। অনেকটা জংলীদের মত করে। এমন বেশ কয়েকটি বাড়ি আছে এখানে। ছোট্ট একটা গ্রামের মত। গ্রামের মাঝখানে একটা গোলাকার বাসা। এই বাসার সামনে একটা চিতায় মানুষ পোরানো হচ্ছে। একজন মধ্য বয়সী সুন্দরী মহিলা কালো একটি কাপর পরে চিতার চারপাশে হাটছে আর মন্ত্র পরছে। একসময় পোরানে।শেষ হলে সে তার বাসার ভিতর চলে আসে। বাসার ভিতর ছোট একটা আসনের ব্যাবস্থা আছে। এখানেও সামনে ছোট একটা চারকোনা গর্তের ভিতর আগুন জলছে, পাশে ১টা হাড়িতে পানি, মানুশের খুলি, হাড় সহ অনেক ধরনের ত্রন্তিয় জিনিশপত্র। সে আসনে বসার পর তাকে চারপাশে ঘিরে বেশ কয়েকজন বসে। সে কিছু মন্ত্র ত্রন্ত্র পরে আগুনে ওই পানির পাত্র থেকে কিছু পানি নিয়ে ছুরে মারে। আর দাও দাও করে আগুন বেরে যায়।
তার শিষ্য দের মধ্য থেকে একজন বলে।
কাবিল : অন্ধকার জগতের মহারানী লিলিথ। আমার সম্মান গ্রহন করুন।
ওহ পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়নি তো এই মধ্য বয়সী মহিলাটির সাথে। উনিই লিলিথ। অন্ধকার জগতের মহারানী বলে সবাই একে তাকে। এই পৃথিবীকে তার অশুভ শক্তির আয়ত্তে আনার চেষ্টায় যে সব সময় ব্যাস্ত। এই লিলিথই ফারহিন কে অদৃশ্য করে রেখেছেন।
লিলিথ মাথা নেরে তার শিষ্যের সম্মান গ্রহন করেন।
কাবিল : রানী ফারহিন এক ত্রান্তিকের সাথে দেখা করেছে। সেই ত্রান্তিক তাকে বিয়ে করতে বলেছে সেই মেয়েটিকে, যার সংগম করলে ফারহিনের কাছে আসবে মুক্তিবুড়ি। আর তাকে পথ দেখাবে মুক্ত হওয়ার। আর সে মুক্ত হলে আমাদের সব প্ল্যান নষ্ট হয়ে যাবে। এই পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাবে কালো যাদু আর যাদুকর।
লিলিথ : কোনভাবেই এই বিয়ে হতে দেওয়া যাবে না।
কাবিল : কি করবো রানী?
লিলিথ তার পাশ থেকে ১টা হাড্ডি হাতে নিয়ে পানির পাত্রের উপর জোরে জোরে মন্ত্র পরে।
পানীর উপর ভেষে উঠে নীধার রুম। সেখানে বিছানায় বসে আছে নীধা, আর ওর কোলে মাথা রেখে সুয়ে আছে ফারহিন। নীধা মাথা নিচু করে ফারহিনকে চুমু খায়। এই দেখে লিলিথ রেগে গরগর করতে থাকে।
লিলিথ : নাহ নাহ নাহ। কোন ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। কাবিল তুমি এখনি ওদের আলাদা করার ব্যাবস্থা করো।
কাবিল : কিভাবে?
লিলিথ : যেভাবেও হোক ফারহিনের সাথে ওই নীধার সংগমের আগে অন্য কারো সাথে তার দৌহিক মিলন করাতে হবে। তুমি প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নাও।
কাবিল : জি মহারানী।
কবিল বিদায় নিয়ে সেখান থেকে হাওয়ার সাথে মিশে যায়।
আবার ফিরে আসি নীধা আর ফারহিনের কাছে।
ফারহিন : তোমার বাবা মা তো মেনে নিবে না আমাদের। কি করা যায় এখন?
নীধা: আমি আবার একটু কথা বলে দেখি।
( ফারহিন বসে নীধাকে জরিয়ে ধরে। চুমু দেয়। নীধার ঠোটে চুমু দিতে দিতে নীধাকে বিছানায় সুয়িয়ে ফেলে )
নীধা : এই কি করছো তুমি। বিয়ের আগে এইসব কিছু না প্লিজ।
ফারহিন : তোমাকে খুব আদর করতে ইচ্ছে করছে।
নীধা : ইচ্ছে করলেও কিছু করার নাই। আমি বিয়ের আগে এইসব কিচ্ছু করবো না।
ফারহিন : আচ্ছা ঠিক আছে সুন্দরী।
নীধার রুমের দরজায় কড়া নারে কেউ। নীধা দরজা খুলে দেখে তার মা।
মা : তুমি কার সাথে কথা বলছো?
নীধা : কোথায়?. কেউ তো নেই এখানে। কার সাথে কথা বলবো?
মা : আমি তোমার মা। আমার সাথে মিথ্যে বলো না। ওই ভুতটা তোমার সাথে আছে তাই না? ওকে বের করে দাও বাসা থেকে।
নীধা : মা আমি ওকে ভালোবাসি। আমি ওকে বিয়ে করবো।
মা : একটা ভুতের সাথে প্রেম করছো আবার বলছো তুমি তালে বিয়ে করবে? তোমার মাথা নষ্ট হয়ে গেছে।
নীধা : মা তুমি ওকে ইনসাল্ট করে কথা বলতে পারো না। আর ও ভুত না। ও একটা মানুষ, কিছু খারাপ মানুষ ওর ওপর জাদু করে ওকে অদৃশ্য করে রেখেছে।
মা : তাই বলে তুমি এখন তাকে নিজের রুমে এনে নষ্টি ফষ্টি করবে? তোমার এতো অধ:পতন।
নীধা : আমি ওকে গেষ্ট রুমে রেখে আসছি।
মা : যাও তাই করো।
মা চলে গেলে নীধা ফারহিনের দিকে তাকিয়ে থাকে। কিছুখন পর মাথা নিচু করে বলে
নীধা : ফারহিন
ফারহিন : আচ্ছা আমি তাহলে গেষ্ট রুমে গিয়ে সুয়ে থাকি।
ফারহিনের কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই নীধা ফারহিনকে জরিয়ে ধরে। তারপর সে ফারহিনকে গেষ্ট রুমে রেখে এসে নিজের রুমে সুয়ে পরে।
কাবিল একটা মেয়ের সাথে কথা বলছে একটি ছাদে। মেয়েটির নাম রুমানা। সে লিলিথ এর একজন অন্ধভক্ত। লিলিথ রুমানাকে অনেক মন্ত্র ত্রন্ত শিখিয়েছে। কাবিল এর মত রুমানাও ফারহিনকে দেখতে পায়। সেই ক্ষমতা লিলিথ রুমানাকে বানিয়ে দিয়েছে। কাবিল আর রুমানা কথা বলছে। তাদের উপর দায়িত্ব পরেছে ফারহিন আর নীধার বিয়ে ভাঙানোর
রাত মোটামুটি গভীর হয়েছে। এমন সময় নীধার রুমের দরজায় নক করে কেউ। নীধা দরজা খুলে দেখে ফারহিন।
নীধা : তুমি আবার? কোন সমস্যা?
ফারহিন : হ্যা।
নীধা : কি হয়েছে বাবু?
ফারহিন : আমার তোমাকে চাই।
নীধা : আমি তোমারি।
ফারহিন : আমি তোমাকে আরো কাছে পেতে চাই। দজনের শরীর এককরে আদিম খেলার সুখ নিতে চাই।
নীধা  :( একটু রেগে গিয়ে) ফারহিন আমি তোমাকে একবার বলেছি যে বিয়ের আগে এগুলা আমার পক্ষে সম্ভব না। তারপরেও তুমি কেনো বারবার এই কথা বলছো।
ফারহিন : আমি তোমাকে আর তুমি আমাকে ভালোবাসো। সুতরাং এতে কোন বাধা নেই।
বলেই ফারহিন নীধাকে জরিয়ে ধরে জোর কোরে বিছানায় সুয়িয়ে ফেলে। জোর করে নীধার সাথে দৌহিক মিলন করতে চায়। নীধা বাধা দিলে জোর করে নীধার গালে চর মারে ফারহিন। আবার বাধা দিলে নীধার চুল ধরে টেনে নীধাকে বিছানা থেকে ফেলে দেয়। নীধা কোন রকমে সেখান থেকে বের হয়ে তার মায়ের রুমে যাবার জন্য রুম থেকে বের হয়। গেষ্ট রুমের পরেই নীধার মায়ের রুম। দৌড়ে গেষ্ট রুম পার হচ্ছে আর এমন সময় তার চোখে পরে গেষ্ট রুমের দরজা খোলা। কাছে গিয়ে দেখে ফারহিন এখানে। সুধু তাই নয় সাথে একটি মেয়েও আছে। যে মেয়েকে ফারহিন চুমু খাচ্ছে। আর দুজনেই প্রায় অর্ধনগ্ন।
নীধা ধিরে ধিরে দরজা পাস করে কাছে যায়। কাছে গিয়ে
নীধা : এই তুমি কে?
মেয়েটা পিছন ফেরে তাকায়। সাথেও ফারহিনও।
মেয়েটা কে দেখে নীধা যেন আকাশ থেকে পরলো। অবিকল নীধার মত দেখতে, এমনকি নীধা যে জামাকাপর পরে আছে সেই মেয়েটিও সেম জামা কাপড় পরা। নীধা আবার বলে এই মেয়ে তুমি কে। নীধার কথা শোনার সাথে সাথেই মেয়েটি জানালা দিয়ে লাফ দেয়। জানালার লোহা ভেদ করে উধাও হয়ে যায়।
নীধার আর বুঝতে বাকি থাকে না যে কি হয়েছে এতক্ষন । জাদুকরীনি লিলিথ তাদের বিয়ে ভাঙার জন্য এই সব করছে। নীধা ফারহিনকে সব খুলে বলে আর ফারহিনও বলে যে হটা ও নীধার রুপ ধরে এসে বলে যে সে ফারহিনের আদর চায় আর ফারহিনও নীধা মনে তার দৌহিক ভালোবাসা দিতে থাকে।
ফারহিন : প্লিজ আমাকে ভুল বুঝো না। আমি তো তোমাকে ভেবেই।।।।।
নীধা : আমি যদি ঠিক সময়ে না আসতাম তাহলে আল্লাহই জানে কি হতো।
ফারহিন : আমি তোমাকে প্রমিস করছি আমি বিয়ের আগে তোমাকে আর উল্টা পাল্টা কিছু বলবো বা করবো না।
নীধা : আমার মনে হয়, আমাদের ত্রান্তিক বাবার কাছেই থাকা উচিত। আর খুব তারাতারি বিয়েটাও করে ফেলা উচিত।
ফারহিন : হ্যা ঠিক বলেছো। ভোর হলেই আমরা ত্রান্তিক বাবার কাছে চলে যাব। কেমন?
নীধা : হ্যা। তাই হবে।
সকালে বাসে উঠে ত্রান্তিক বাবার উদ্দেশ্যে। চলে আসে বাবার কাছে। বাবার দরবারে গিয়ে হাজির হয়।
নীধা : আসসালামু আলাইকুম বাবা। কেমন আছেন?
ত্রান্তিক : ওলাইকুম আসসালাম। আমি তোমাদের কথাই ভাবছিলাম। কোন সমস্যা হয়নি তো এর মধ্যে?
ফারহিন : সমস্যা একটু হয়েছিল।
ত্রান্তিক : সমস্যা হওয়ার ই কথা। কাবিল আর রুমানাকে তোমাদের পিছনে লাগানো হয়েছে। তোমাদের আলাদা করার জন্য। সাবধানে থাকতে হবে তোমাদের।
নীধা : আপনি যেভাবে বলবেন সেইভাবেই হবে বাবা।
ত্রান্তিক : আচ্ছা আগে ফ্রেশ হয়ে রেষ্ট নাও। তারপর দোতালায় গিয়ে কথা হবে। আজ আবার কিম্বারুকে ডাকতে হবে। অনেক কিছু জানতে হবে।
এরপর ফারহিন ও নীধা রেষ্ট নিতে রুমে চলে যায়। দুপুরের খাবারের সময় ত্রান্তিক ওদের জানায় যে সন্ধায় কিম্বারুকে ডাকা হবে।
লিলিথ তার ওই পানির পাত্র দিয়ে দেখছে ফারহিন, নীধা আর ত্রান্তিককে। পাশে আছে কাবিল আর রুমানা।
লিলিথ : ত্রান্তিক ব্যাটা বেশি বেরেছে।
কাবিল : খুব বেশি। ওর জন্য মনে হয় আমাদের সব আশা নষ্ট হয়ে যাবে।
লিলিথ : কক্ষনো না। ওকে শায়েস্তা করতে হবে।
কাবিল : ওকে তো আমরা কিছু করতে পারবো না। যা করার আপনাকে করতে হবে।
লিলিথ : ওর ব্যাবস্থা আমিই করবো। কিন্তু তোমরা তো কিছুই করতে পারলে না।
রুমানা : মহারানী। আমরা চেষ্টা করেছি। কিন্তু
লিলিথ : কিশের কিন্তু। এতো রুপ আর ভরা যৌবন দিয়ে কি লাভ হলো তাহলে? একটা পুচকে ছেলেকে তোর দেহের মায়ায় ফেলে তার সাথে শুতে পারলি না।
রুমানা : না মানে। আমি আবার চেষ্টা করছি মহারানী।
লিলিথ : যে ভাবেই হোক ফারহিন কে ওই মেয়ের শরীরের স্বাদ নিতে দেওয়া যাবে না। আর বিয়ে হলে তো আমরা ধংশই হয়ে যাবো।
কাবিল : আপনি চিন্তা করবেন না মহারানী। আমরা সব সমস্যা সমাধান করে ফেলবো।
রুমানা : হ্যা। আমরা ওদের কখনো এক হতে দিব না।
লিলিথ : আর একটা কথা। ছেলেটাকি এখনো লেখালেখি করে? ওকে লিখতেও দেওয়া যাবে না। আবার নতুন করে কি লিখে কে জানে। যাও এখন তোমরা।
সন্ধ্যা হয়ে গেছে। ত্রান্তিকের বাড়ির দোতালায় বসে আছে সবাই। ত্রান্তিকের সামনে আগুন জলছে। একটু সামনে বায়ে বসে আছে ফারহিন। ফারহিনকে আবার সেই কালো কাপর পরানো হয়ছে। তার ওই কাপরটাই সবাই দেখতে পাচ্ছে সুধু নীধা ছাড়া। নীধাই একমাত্র ত্রান্তিককে দেখতে পায়। আর চারপাশে বসে আছে ত্রান্তিকের শিষ্য বৃন্দ।
ত্রান্তিক বাবা মন্ত্র পরা শুরু করে। অনেকখন মন্ত্র ত্রন্ত্র পরার পর শুরু হয় আগেরবারে মত ঝড়ো হাওয়া, একটুপর টিনের চালের উপর ঢিল, পুরো বাড়ি এখন কাপছে। মনে হচ্ছে এখনি ভেংে পরবে বাড়িটি। নীধা চোখ বন্ধ করে আছে। গতবার সে খুব ভয় পেলেও এবার সে ভীত না।
কিছুখন পর ফারহিনের উল্টো দিকে ধোয়া থেকে বের হয়ে আসে কিম্বারু। এসে সে ত্রান্তিকের কাছে চায় রক্ত। ত্রান্তিকের এক শিষ্য একটি পাঠা তার সামনে নিয়ে আসে। আর ত্রান্তিক পাঠার গলার উপর ছুরি চালিয়ে দেয়। কিম্বারু খুশি মনে চেটেপুটে খায় পাঠার তাজা রক্ত।
কিম্বারু : আবার আমাকে ডাকলে যে?
ত্রান্তিক : পুরোনো সমস্যা। নতুন কোন তথ্য আছে কি?
কিম্বারু : হুম আছে।
ত্রান্তিক : নতুন করে ছক কাটছে লিলিথ। এই দুজনের ক্ষতি করতে চায় সে
তবে মেয়েটাকে এখন ওরা জানে মারবে না তবে ওদের কাজের শেষ মুহুর্তে হয়তো ওকে বলি দিতে চাইবে।
ত্রান্তিক : মেয়েটাকে এখন ওরা জানে মারবে না কেনো।
কিম্বারু : সে সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে ওই বুড়ি।
ত্রান্তিক : বুড়িটাকে?
কিম্বারু : মুক্তিবুড়ি। এই ছেলে আর মেয়ের বিয়ে হলে সেই বুড়ি আসবে ওদের কাছে। ফারহিনকে মুক্তি দিবে অদৃশ্যের অভিশাপ থেকে আর পথ দেখাবে এই ভয়ংকর ষড়যন্ত্র থেকে পৃথিবীকে মুক্তি দেবার।
ফারহিন : আচ্ছা আমাকে এভাবে অদৃশ্য করে রাখছে কেনো? আর আমিই কি এমন করেছি যে আমিই মুক্তি দিতে পারবো।
কিম্বারু : তুমিই এই সমস্যার সৃষ্টি করেছো আবার তোমার দারাই হবে সমাধান।
ফারহিন : কিন্তু কিভাবে?
কিম্বারু : তুমি তো গল্প লিখো? ভুত প্রেত নিয়ে তাই না?
ফারহিন : হ্যা লিখি। সুধু ভুত প্রেত নয়। সব ধরনের গল্প লিখি।
কিম্বারু : তোমার ওই গল্পের ভিতরই লুকিয়ে আছে এই পৃথিবীকে অন্ধকার জগতে রুপান্তরের সুত্র আর তোমার গল্পেই আছে এর থেকে সমাধানের মুক্তি।
ফারহিন : আমার কোন গল্পে? আমার লেখা ভুত প্রেত নিয়ে তো অনেক গল্প?
কিম্ভারু : আমি আর কিছু জানি না। তবে তুমি সবই জানতে পারবে। তুমি ওই মেয়েটাকে বিয়ে কর। সব সমাধান নিয়ে আসবে তখন মুক্তি বুড়ি। তবে বিয়ের পথটা এতোটা সহজ হতে দিবে না লিলিথ। সবাধানে থাকতে হবে তোমাদের।
ফারহিন : আমার মাথায় কিচ্ছু ধুকছে না।
কিম্বারু : থাকো তোমরা। আমার অনেক কাজ। এখন আমাকে যেতে হবে।
আবার ঝড়ো হাওয়া বাতাস আর কাপুনী দিয়ে ধোয়ার মাঝে মিশে যায় কিম্বারু। ত্রান্তিক ফারহিনের দিকে তাকায়।
ত্রান্তিক : ফারহিন কি গল্প লিখতে তুমি?
ফারহিন : অনেক ধরনের গল্প। তবে ভুত প্রেত আর অশুভ আত্তা দের নিয়েই বেশি লিখি।
ত্রান্তিক : তোমার গল্পের ডায়েরি টা আমাকে দাও।
ফারহিন : আমি ডায়রীতে লিখতাম না। সব গল্প ফেসবুকে।
ত্রান্তিক : ফেসবুকে তো একসাথে পাওয়া যাবে না। গল্প গুলো দেখা দরকার। তাহলে হয়তো অনেক কিছু বুঝতে পারতাম।
ফারহিন : বাবা আমার ফেসবুকের পেজে সব গল্প আছে একসাথে।
ত্রান্তিক : তোমার ফেসবুক পেজের লিংকটা দাও।
(ত্রান্তিক তার একশিষ্যকে বলে তার মোবাইলটা দিতে, শিষ্য মোবাইল এগিয়ে দেয়)
ফারহিন: www.facebook.com/arshipon15/ আমার এই পেজ, নাম MD Asasur Rahman (Sh Ip On)।
ত্রান্তিক পেজে ঢুকে। সে গল্প গুলো খুজতে শুরু করলো। এমন সময় হটাত খুব বেশি জোরে ঝরো হাওয়া শুরু হয় সেই সাথে বৃষ্টি। বাড়ির চারপাশ থেকে দেয়ালে কারা যেনো আঘাত করছে। খুব শব্দ হচ্ছে। ঝড়ো বাতাসে টিনের একটা চাল উরে যায়। বাতাসে মোমবাতি আর ত্রান্তিকের সামনের যে আগুন জলছিলো সেটিও নিভে যায়। আগুন নিভে যাওয়ার সাথে সাথে ত্রান্তিক সহ তার সকল শিষ্য মন্ত্র পরা শুরু করে। চিৎকার করে মন্ত্র পরছে। এমন সময় শুরু হয় চারদিক বিকট এক হাসির শব্দ। এক মেয়ের কুতসিত হাসির শব্দ। আর মনে হচ্ছে বাড়িঘর উলটে যাচ্ছে। ঘরের সব জিনিসপত্র এক পাশ থেকে আরেক পাশে যাচ্ছে।
ত্রান্তিক বাবা মন্ত্র পরেই চলছে। একসময় তার সামনে একা একাই আবার আগুন জলে উঠে। কিছু সব কিছু থেমে গিয়ে পরিবেশটা শীতল হয়ে যায়। ত্রান্তিক চোখ খুলে আসে পাসে সব কিছু দেখে। উপরে একটি চাল উরে গেছে। দেয়ালে সাজিয়ে রাখা অনেক কিছু নিচে পরে আছে। ত্রান্তিক তার সামনে রাখা তার মোবাইলটি হাতে নেয়। পাওয়ার লক বাটুনে ক্লিক করে দেখে যে তার ফোনের ডিসপ্লে নাই। ডিসপ্লের কাচ ভেঙে আছে। ত্রান্তিক মুচকি একটা হাসি দেয়। হাসি দিয়ে সেখান থেকে উঠে যায়। নীধা আর ফারহিনও চলে আসে। রাতে একবার ত্রান্তিক ফারহিন আর নীধার কাছে আসে।
ত্রান্তিক : তোমারা সাবধানে থাকবে খুব। তোমাদের উপর আবার আক্রমণ করতে পারে।
ফারহিন : আচ্ছা কিম্বারু চলে যাওয়ার পর কি হয়েছিল?
ত্রান্তিক : লিলিথ এসেছিল। আমাকে সাবধান করে দিয়ে গেল। তবে এটা শিউর তোমার গল্পের ভিতরই সব আছে। এখন সুধু সেটা খুজে বের করতে হবে।
ফারহিন: বুঝলাম না কবে কি লিখলাম।
ত্রান্তিক : আর এই কালো কাপরটা তুমি সব সময় তোমার গায়ে রাখবে। যাতে আমি আর আমার শিষ্যরা তোমাকে দেখতে পাই। আর বিপদে আপদে পুরলে তোমাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসতে পারব। বিপদ তোমার কাছে আসবেই। সাবধানে থাকতে হবে তোমাদের।
ত্রান্তিক চলে যায়। ফারহিন আর নীধা কিছুখন একসাথে বসে গল্প করে। একটু আধটু রোমান্স করে। তারপর যার যার রুমে ফিরে শুয়ে পরে।
রাত আনুমানিক ২টার বেশি বাজে। নীধার ঘুম ভেঙে যায় কিছু একটা পরার শব্দে। বিছানা থেকে নেমে জানালার কাছে আসে। বৃষ্টি হচ্ছে গুরি গুরি। বাইরের ডালিম গাছের তলায় কিছু একটা নারাচারা করছে। সাদা রঙের বড় ধরনের পাখি মনে হচ্ছে। নীধা ভাবলো বাইরে গিয়ে দেখা দরকার। হয়তো কোন পাখি ডানায় আঘাত পেয়ে উরতে না পেরে পরে আছে। তাকে সাহায্য করার দরকার।
আল্লাহ প্রদত্ত মেয়েদের এই নরম আর ভালোবাসা নীধার মধ্যেও ব্যাপক আকারে আছে। তাই সে মাথায় একটা গামছা দিয়ে বাইরে যায় পাখিটাকে বাচাতে।
ফারফিন গভীর ঘুমে হারিয়ে আছে। এই বাড়ির অন্য সবাই ও ঘুমে আচ্ছন্য। এই বৃষ্টি বাদল দিনে গভীর ঘুম আসাটাই স্বাভাবিক। আর ঘুমে স্বপ্ন । ফারহিন ও স্বপ্ন দেখছে।
সাগরের মাঝে অসম্ভব সুন্দর একটা দিপ। ছোট বড় নারিকেল গাছ দিয়ে সুন্দর করে কেউ একজন সাজিয়েছে এই দ্বিপটি। ফারহিন আর নীধা দ্বিপের একপাশ দিয়ে হাটছে। জোসনা রাত। চাদের আলোয় কি যে এক অসাধারন মুহুর্ত ৈতরি হয়েছে সেটা লিখে বলা সম্ভব না, কল্পনায় দেখেনিন।
ফারহীন আর নীধা হাত ধরে হাটছে। একপাশে সমুদ্র আর একপাশে নারিকেল গাছের শাড়ি। কিছুদুর এগিয়ে বড় দুইটা পাথরের টুকরো। সেখানে এসে ফারহিন টেনে নীধাকে কাছে আনে। নীধার কোমরে হাত দিয়ে তার ঠোট ঠোট মিলিয়ে চুমু খেতে থাকে। গভীর চুমুতে মগ্ন দুজন।
হটাত পেছন একটু মাঝ বয়সী সুন্দরী মহিলা এসে ফারহিনের মাথায় আঘাত করে। সব কিছু ঘোলা ঘোলা দেখা শুরু করে ফারহিন। শরীরটাও দুর্বল হতে থাকে। আর সেই মহিলাটি জোর করে নীধাকে নিয়ে যাচ্ছে। নীধা আপ্রান চেষ্টা করছে তার হাত থেকে ছুটে আসার জন্য, কিন্তু পারছে না। ফারহিন জোরে চিৎকার করে বলছে : ছেরে দাও নীধাকে। কেউ নীধাকে বাচাও। কেউ এগিয়ে আসছে। একসময় ফারহিন এর চোখে সব কিছু অন্ধকার হয়ে যায়।
ফারহিনের চিৎকার শুনে ত্রান্তিকের দুই একজন শিষ্য চলে এসেছে। এমনকি ত্রান্তিক নিজেও উপর থেকে নেমে নিচে ফারহিনের রুমে চলে এসেছে।
ফারহিন চিৎকার করছেই
ত্রান্তিক কাছে এসে ফারহিনের মুখে পানি দেয়। ফারহিনের ঘুম আর স্বপ্ন দুটোই ভেংগে যায়।
ত্রান্তিক : দু:স্বপ্ন দেখছিলে মনে হয়।
ফারহিন : মনে হয়। একজন মহিলা এসে আমার কাছ থেকে আমার নীধাকে কেরে নিয়ে চলে গেলো।
ত্রান্তিক : এই বাড়ীর ভিতর কেউ ঢুকতে পারবে না। বাড়িটা বন্দক করা আছে। তুমি নিশ্চিন্ত থাকতে পারো।
ফারহিন : আপনারা কি আমার চিৎকার শুনে এখানে এসেছেন?
ত্রান্তিক : হ্যা। তুমি খুব জোরে চিৎকার করছিলে।
ফারহিন : আপনারা আমার চিৎকার শুনে এখানে চলে এলেন কিন্তু নীধা তো আমার পাশের রুমেই। ও কি টের পাই নি।
ত্রান্তিক : সেটাই তো।
ফারহিন ছুটে গিয়ে নীধার রুমেরর সামনে আসে। রুমে কেউ নেই। ফারহিন নীধা নীধা করে চিৎকার করে ডাকে। কিন্তু কোন সারা শব্দ নেই। ত্রান্তিকের সব শিষ্য একসাথে নেমে খুজে নীধাকে। কিন্তু কোথাও তাকে খুজে পাওয়া যায় না।
দুপুরের পরে ত্রান্ত্রিক আবার ধ্যানে বসে। মন্ত্র পরে ডাকে কিম্বারুকে। কিম্বারু প্রতিবারের মত ঝর আর কম্পন দিয়ে হাওয়ায় মিশে আসে কিম্বারু। তারপর কিম্বারুর তাজা রক্ত পান করা।
কিম্বারু : কি ব্যাপার? আবার আমাকে তলব?
ত্রান্তিক : নীধা কে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না।
কিম্বারু : আমি আগেই বলে গিয়েছিলাম যে সাবধানে থাকতে। এই দুজনকে আলাদা করতে ওরা সব ধরনের অপচেষ্টা করবে।
ফারহিন : নীধা এখন কোথায় আছে? কেমন আছে?
ত্রান্তিক : দেখো তো নীধা কোথায় আছে?
কিম্বারু চোখ বন্ধ করে রাখে কিছুখন। চোখ খুলে
কিম্বারু : নীধাকে লিলিথ উঠিয়ে নিয়ে গেছে। নীধা এখন লিলিথের আরামখানায় আছে।
ফারহিন : ওকে কিভাবে মুক্ত করা যায়?
লিলিথ : সেটা অনেক দুরুহ ব্যাপার। ওর আরামখানা শহরের ভিতর কোন একস্থানে। সেখানে লিলিথ তার কালো জাদু নিয়ে গবেষনা করে। লিলিথ কে ও নিয়ে তাই করবে।
ফারহিন : ঠিকানাটা দাও।
কিম্বারু : শহরের কোন এক শ্বষানের পাশে এক পুরোনো বাড়ি। পাশে নদী আছে।
ফারহিন : জায়গার নাম? বাড়ির ঠিকানা? (চিৎকার করে)
ত্রান্তিক : ওগুলো ও বলতে পারবে না।
কিম্বারু : এই সমাধান ও তোমার গল্পে আছে। তোমার গল্পের মাঝেই আছে সে কোথায় এখন।
ফারহিন : আমার গল্প গল্প গল্প। কি আছে গল্পে?
আমার ফিরে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে। আমি চলে যাচ্ছি।
কিম্বারু চলে যায়। ফারহিন কাদতে থাকে।
ত্রান্তিক : আমরা শহরে যাবো
ফারহিন : শহরের কোথায় খুজবো।
ত্রান্তিক : তোমার গল্পে। ওইখানে গেলেই খুজে পাওয়া যাবে।
ফারহিন : আচ্ছা যাবো।
ওইদিকে লিলিথের আরামখানায় নীধা। একটা বিশাল রুমের ভিতর। কিচির মিচির শব্দ ভেষে আসছে। নীধা উঠে গিয়ে রুমটা ঘুরে ঘুরে দেখে। আসে পাশে ছোট ছোট খাচার ভিতর আদ্ভুত প্রজাতির প্রানি আটকে রাখা আছে। তারি কিচিরমিচির শব্দ করছে। আরো একটু সামনে এগিয়ে দেখা গেলো একটি বিশালাকার মুর্তি। সামনে কয়েকধরনের ফুল সাজিয়ে রাখা। আর কিছু হার ও মাথার খুলি।
পিছন থেকে দরজা খুলে একজন মেয়ে ঢুকে।
নীধা : কে আপনি?
মেয়ে : আমি? আমি অশরীরী।
নীধা : দিব্যি তোমাকে দেখা যাচ্ছে।
মেয়ে : হাহাহহাহা। হ্যা দেখা যাচ্ছে। কিন্তু কিছুদিন পর আর তোমরা আমাকে কেউ দেখতে পাবে না। আমি তখন হব অশরীরী। আমার সকল সাধ তখন পুর্ন হবে।
নীধা : কে তুমি সেটা বলো।
মেয়ে : আমি রুমানা। অন্ধকার জগতের মহারানী লিলিথের সহকারি।
নীধা : ওহ তুমিই সেদিন গিয়েছিলে আমাদের বাড়িতে আর আমার ফারহিনের কাছে। ওর দিকে তাকালে চোখ উঠিয়ে ফেলবো।
রুমানা নীধার গালে চর মারে। ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়।
রুমানা : ফারহিন কখনই তোর না। ও আমার হবে। আর তোর রক্ত দিয়ে আমরা পাবো মহাশক্তি। পৃথিবি হবে অন্ধকার জগতের রাজধানী।
নীধা : কখনোই সম্ভব হবে না। ফারহিন সেটা হতে দিবে না, ত্রান্তিক আর ফারহিন মিলে এই পৃথিবিকে তোদের হাত থেকে মুক্ত করবে।
রুমানা আবার নীধার গায়ে আঘাত করে। পরে গিয়ে নীধা মুর্তির সামনে পরে। আর জ্ঞ্যান হারিয়ে ফেলে।
ত্রান্তিক আর ফারহিন ঢাকা আসে। ঢাকা এসে পুরান ঢাকার বিক্ষাত বিউটি বোডিং এ উঠে। এই বোডিং টি নিয়েও অনেক ধরনের ভৌতিক কথা প্রচলিত আছে। ত্রান্তিক ইতিপুর্বে বেশ কয়েকবার এখানে এসেছেন এই বোডিং এর বেশ কিছু সমস্যা সমাধান করতে। এই বোডিং থেকে বুড়িগংজ্ঞা দেখা যায়।
বোডিং এর ম্যানেজারের কাছ থেকে ২টা রুম ভাড়া নেন ত্রান্তিক।
ম্যানেজার : বাবা আপনি তো একা এসেছেন, ২টা রুম দিয়ে কি করবেন?
ত্রান্তিক : আমি একা না
ম্যানেজার : আর কেউ আসবে?
ত্রান্তিক : নাহ। ও আপনি বুঝবেন না।
কথা শেষ করে ত্রান্তিক শিড়ি বেয়ে উপরে উঠে যায়। আর ফারহিন ত্রান্তিকের পিছু পিছু। ফারফিন বেশ কয়েকবার ত্রান্তিককে তার বাসায় উঠার অনুরোধ করলেও সে যেতে রাজি হননি।
ত্রান্তিক আর ফারহিনের রুম পাশাপাশি। সারাদিন শেষে রাতের খাবার খেয়ে ত্রান্তিক তার রুমে গিয়ে শুয়ে পরেছেন। এমন সময় তার দরজায় করা নারে ফারহিন। দরজা খুলে দিলে ভিতরে আসে সে।
ফারহিন : বাবা আমার মনে পরেছে।
ত্রান্তিক : কি মনে পরেছে?
ফারহিন : গল্পের কথা?
ত্রান্তিক : মানে?
ফারহিন : কিম্বারু বলেছিল যে আমার গল্পে আছে নীধা কোথায় আছে সেই ঠিকানা। সে বলেছিল যে ঢাকার কোন শ্বষানের আশে পাসে। আমার একটা গল্পে এই এখানের একটা শ্বষানের ঘটনা ছিল।
ত্রান্তিক : ( খুব আগ্রহ নিয়ে) আমাকে একটু ঘটনা টা বলবে?
ফারহিন : গল্পটা ছিল পিশাচ নিয়ে। তারা এই এই শহরটাকে নিজেদের দখলে নিতে চায়। খুন করে, রক্ত খায়। সেখানে গল্পের নাইকাকেও মেরে ফেলে। তারপর অনেক কিছু ঘাটাঘাটি করে বের করে সমাধানের উপায়।
ত্রান্তিক : সমাধান টা কি ছিল?
ফারহিন : মনে পরছে না। তবে এই খানের এই শ্বষান আর পাশে থাকা কালি মন্দিরের কিছু ১টা দিয়ে তারা রক্ষা করে। কিন্তু গল্পের শেষ টুকু মনে পরছে না।
ত্রান্তিক : তোমার গল্পটা তো তোমার পেজেই পাওয়া যাবে? লিংক টা আবার বলো।
ফারহিন : হ্যা, পিশাচ দম্পত্তি গল্পটির নাম। আর পেজ লিংক : www.facebook.com/arshipon15/.
ত্রান্তিক : তুমি তোমার রুমে যাও। আমি গল্পটি পরে আসছি।
গতবার ফারহিনের পেজে ঢুকতে গিয়েছিল তখন প্রবলেম হয়েছিল। তার মোবাইলটাও নষ্ট হয়ে যায়। তাই এবার ত্রান্তিক বাবা আগে থেকেই প্রস্তুতি নেয়। রুমের ভিতর শিদুর দিয়ে একটা সার্কেল আকেন। এবং সেটার ভিতর বসে মোবাইলটি সহ। তারপর চোখ বন্ধ কিছুখন মন্ত্র পরে। একসময় সার্কেলটা আগুনে পরিনত হয়। ত্রান্তিক মন্ত্র পরা থামিয়ে চোখ খুলে। মোবাইলটা হাতে নেয় এবং ফারহিনের লিংকে ঢুকে। পেজের এলব্যাম থেকে পিশাচ দম্পত্তি গল্প পরা শুরু করে। পর্ব এক ভালো মতই শেষ করে। এর পর পরের পর্ব পরার মাঝামাঝি সময়ে হটাত তার চোখ পরে সার্কেলের বাইরে। বাইরে তাকিয়ে দেখে একটি বিশালাকার অদ্ভুত প্রানী সার্কেলের বাইরে হাটা হাটি করছে আর রাগে গরগর করছে। একটু পর সেখানে এমন আরো কিছু আসে। একটা মুন্ডুবিহিন মানুশ সার্কেলের ভিতর ঢোকার চেষ্টা করে। কিন্তু যে পা ভিতরের দিকে ঢোকানোর চেষ্টা করে সংগে সংগে আগুন ধরে যায়। ত্রান্তিক এই সব দেখে মুচকি হাসি দিয়ে আবার গল্পে মনোযোগ দেয়।
রাত ২টার ও কিছু পরে পর শেষ গল্প পরা। মোবাইল হাত থেকে নামিয়ে চোখ বন্ধ করে আবার মন্ত্র পরা শুরু করে। তারপর সার্কেলের আগুন নিভে যায় এবং আসে পাশের অদ্ভুদ প্রানীগুলো উধাও হয়ে যায়।
ত্রান্তিক ফারহিনের রুমের সামনে গিয়ে দেখে দরজা খোলা এবং ফারহিন নেই। বোডিং এর আসে পাশে খোজা খুজে করেও কোথায় পায় না ফারহিনকে। চিন্তায় পরে যায়।
ফারহিন অন্ধকার রাস্তা দিয়ে হাটছে। আসে পাশে কেউ নেই। শুধু দুই একটি কুকুর ছাড়া। হাটতে হাটতে গ্রামের দিকে চলে আসে। আর একটু পথ এগুলেই শ্বষান ঘাট। সেখানেই যাচ্ছে ফারহিন।
কাচা মাটির রাস্তা দিয়ে হাটছে। হটাত পেছন থেকে একজন ফারহিনের ঘারে হাত দেয়। ভয় পেয়ে যায় ফারহিন। ভুত টুত আসলো নাতো আবার।
পিছনে তাকিয়ে দেখে সাদা ১টা সেন্ডূ গেঞ্জি আর ধুতি পরে একলোক তার দিকে তাকিয়ে আছে।
ফারহিন : কে আপনি? কি চাই?
লোকটি : আগুন হবে ভাই আগুন?
ফারহিন : (ভীত কন্ঠে) আমি আগুন পাবো কোথায়?
লোকটি : আগুন মানে দেশলাই? হবে নাকি? বিড়ি ধরাবো একখানা।
ফারহিন : না না নেই। আমি এই সব খাই না।
লোকটি : ওহ তাই বলেন। তা বাবু এতো রাত করে এই দিকে কোত্তায় যাচ্চেন? যায়গাটাতো বেশি একটা ভালা না। শ্বষান এলাকা, ভুত টুত থাকে আরকি। মাঝে মাঝে মাইনশের ঘার মটকাই দেয়।
ফারহিন : আমি এই সামনে যাবো। শ্বষানের পাশে কালি মন্দিরে। আর আমি ভুত প্রেতে ভয় পাই না, বুঝলেন। আমাকে ভয় দেখাবেন না।
লোকটি : ভুত ভয় পাননা? খুব ভালো। সাহসী পুরুষ।
ফারহিন : আপনি এখানে কি করছেন?
লোকটি : আর কইয়েন না গো, পারার এক দাদা মারা গেছে। তারে শ্বষানে পুরাইতে আইছি।
ফারহিন : এতো রাতে? আর আপনি একা কেনো? লাশ কই? আর লোকজন কই?
লোকটি : বিক্কালে মাইরছে। সব কাজ শেষ করতে করতে দেরি হুইয়া গেলো। আর ওইযে বট গাছের নিচে সবাই বইসা আছে লাশ নিয়ে। আমগো একজন অসুস্থ হইয়া পরছে। ৩ জনে লাশ বিবার পারতাছিলাম না।
ফারহিন : ওহ এই ব্যাপার।
লোকটি : আপনি কি আমগো একটু সাহায্য করবেন? লাশ টা আমগো সাথে ধইরা নদীর পারে ওই শ্বষান প্রযন্ত নিয়া দেন।
ফারহিন : আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে। চলেন।
ফারহিন ওই লোকের পিছু পিছু বটগাছ তলায় যায়। সেখানে আরো দুজন লোক বসা ছিল। ঠিক এই লোকটির মত।
লাশের খাটিয়ার পিছনের দিকে ফারহিন ধরে। তারপাশে একজন। লাশ নিয়ে ধীর গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। আর ফারহিন মনে মনে নীধার কথা ভাবছে। কোথায় আছে? কেমন আছে? কি করছে? এই সব ভাবছে। এমন সময় হটাত তার মনে পরে নীধা ছাড়া তো কেউ তাকে দেখতে পায় না। তাহলে এই লোকগুলো কিভাবে তাকে দেখতে পাচ্ছে?
ফারহিন তার পাশের লোকটির দিকে তাকায়, তারপর তার সামনের দুজনের দিকে।
অবাক হয়ে যায় ফারহিন। এই তিনজন লোকর চেহারা একরকম। এমনকি জামা কাপরও একরকম। পায়ের দিকে তাকানোর পরে চোখ ছানাবরা হয়ে যায় ফারহিনের। মাটি থকে ২ ইঞ্চি উপর দিয়ে হাটছে লোকগুলো। আর পা উল্টো দিকে। তারমানে এই লোকগুলো মানুশ না, এরা ভুত।
ফারহিন খুব ভয় পেয়ে যায়। লাশের খাট ফেলে উল্টো দিকে দৌড় দেয়। দৌড়ে শ্বষানের কাছে নদীর পারে আসে। পেছনে তাকিয়ে দেখে তার পিছনে চার জন মাটি থেকে একটু উচু দিয়ে দৌড়ে আসছে। তিন জন থেকে চারজন। তারমানে লাশও উঠে এসেছে। ফারহিনের একদম কাছে চলে আসে ভুত গুলো। ফারহিন নদীতে লাফ দেয়। ভুত গুলো ফারহিনকে ধরে ফেলে। কিছুখন পানিতে চুবায়, তারপর নদির পারে বালির মধ্যে পুতে ফেলতে থাকে। আর এমন সময় সেখানে হাজির হয় ত্রান্তিক। ত্রান্তিককে দেখে ভুতে গুলো ত্রান্তিকের দিকে আগাচ্ছে তখন ত্রান্তিক মন্ত্র পরা শুরু করে আর ভুত গুলো সব উধাও হয়ে যায়।
ত্রান্তিক ফারহিনকে উদ্ধার করে। ফারহিন জ্ঞ্যান হারিয়ে ফেলেছিল। ত্রান্তিক পানি দিয়ে ফারহিনের জ্ঞ্যান ফিরিয়ে আনে।
ফারহিন : আমি বেচে আছি?
ত্রান্তিক : হ্যা। বেচে আছো।
ফারহিন : ওই ভুত গুলো আমাকে মেরেই ফেলেছিল। আমি নীধাকে খুজতে এসেছিলাম। আমার মনে হচ্ছিল নীধা আমার আসে পাশেই আছে। তাই ওকে খুজতে বের হয়েছিলাম। আর বের হয়ে ভুতের খপ্পরে পরি।
ত্রান্তিক : নীধা তোমার পাশেই আছে। আমি খুজে পেয়েছি ।
নদীর পার থেকে দুজনে ছুটে আসে কালী মন্দিরে। কালী মন্দিরের ঠিক বা পাশে মন্দির থেকে ১০/১২ হাত দূরে পুরোনো ১টা বাড়ির দিকে পা বাড়ায় ত্রান্তিক, আর পিছনে রয়েছে ফারহিন।
অন্ধকার ঘর। কিছু ১টা কিচিরমিচির শব্দ কান ঝালাপালা করে ফেলছে। ধিরে ধিরে রুমের ভিতর প্রবেশ করে। মাকড়শা এমন ভাবে বাসা বেধেছে যে দেখে মনে হচ্ছে হাজার বছর ধরে এই ঘরে কোন মানুষের প্রবেশ নেই।
ফারহিন : এটা কোথায় আসলাম আমরা? এখানে নীধা নেই। দেখেই তো মনে হচ্ছে হাজার বছর হবে এখানে কেউ আসে না।
ত্রান্তিক : তোমার কি মনে হয় যে নীধাকে এমন কোথাও রাখবে যে যেখানে মানুশ বিচরন করে?
ফারহিন : সেটা ঠিক। তাই বলে এখানে।
একটু পর ছোট করে একটা ডাক শুনতে পায় ওরা।
*** ফারহিন ***
ফারহিন আর ত্রান্তিক পাশে ফিরে তাকায়। আলতো জোসনা আলোয় দেখা যায় নীধাকে। মাটিতে লূটিয়ে পরে আছে একটা মুর্তির পায়ের কাছে।
ফারহিন দৌড় দিয়ে নীধার কাছে যেতে চায়। কিন্তু নীধা একটা সার্কেলের ভিতর ছিল। ফারহিন যেই সেই সার্কেলের ভিতর ঢুকতে যায় তখনি বিদ্যুতের মত শক লেগে দূরে ছিটকে পরে।
ত্রান্তিক : দারাও। ব্ল্যাক সার্কেলে আটকে রাখা হয়েছে।
ফারহিন : তাহলে এখন উপায়?
ত্রান্তিক : দেখি কিছু করতে পারি কিনা.
ত্রান্তিক সেখানে জোরাসন দিয়ে বসে পরে। তারপর কিছু মন্ত্র পরা শুরু করে। বেশ কিছু খন মন্ত্র পরার পর পাশে থেকে ছোট ১টা টিনের টুকরো নিয়ে নিজের হাত কেটে রক্ত বের করে সেই রক্ত সার্কেলের রেখার উপর দেয়। ধিরে ধিরে সার্কেলটি মুছে যায়, আর ফারহিন ভিতরে ঢুকে।
ফারহিন : কেমন আছো নীধা?
নীধা : আমাকে বাচাও, আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাও প্লিজ। আমি আর পারছি না।
ফারহিন : হ্যা আমরা তোমাকে নিতেই এসেছি শোনা।
এই বলে সে নীধাকে জরিয়ে ধরে। নীধাকে জরিয়ে ধরার সাথে সাথে পুনরায় আবার সার্কেলটি তৈরি হয়। এর আগে সার্কেলের রঙ ছিল সাদা। এবার দুপাশে লাল আর মাঝ খানে কালো।
ফারহিন : ত্রান্তিক বাবা আমার মনে হয় আবার আপনাকে মন্ত্র পরে সার্কেল ব্রেক করতে হবে।
ত্রান্তিক : সেটা মনে হয় সম্ভব না। এটা যে সে সার্কেল নয়। সার্কেলের ভিতরে বসে সম্ভব না এটা ভাঙা। আমাদের আসলে ওরা বন্দি করেছে।
ফারহিন : বন্দি? বন্দি করে মানে?
ত্রান্তিক : এতোখন নীধাকে আটকে রেখেছিল আর এখন ট্র্যাপে ফেলে আমাদের সহ এখানে বন্দিয়া করে ফেলেছে।
ফারহিন : এখন তাহলে উপায়?
ত্রান্তিক : আমার কোন শিষ্য যদি কোন ভাবে খবর পায় তাহলে
নীধা : মুক্তির উপায় আছে।
ফারহিন : কি?
নীধা : এখান থেকে মুক্তির উপায় আছে।
ত্রান্তিক : কিভাবে?
নীধা : এই মুর্তির পায়ের নিচে আছে ১টা সাদা কাপর। সেই কাপর দিয়ে এই দাগ মুছলেই সব সার্কেলের দাগ মুছে যাবে।
নীধার কথা শুনে সাথে সাথে ফারহীন মুর্তি সরানোর চেষ্টা করে। কিন্তু শত চেষ্টা করেও ফারহিনের পক্ষে সম্ভব হয় না। এবার ত্রান্তিক চেষ্টা করে সেও ব্যার্থ হয়। তারপর ত্রান্তিক , ফারহিন আর নীধা মিলেও চেষ্টায় ও একই ফলাফল।
তারপর ত্রান্তিক তার জাদুবিদ্যা প্রয়োগ করে এবং তার আঙুল দিয়ে মুর্তিটি পিছন দিকে ধাক্কা ফেয় আর সেটা সরে যায়। বাইরে বৃষ্টি শুরু হয়, সাথে একের পর এক বর্জপাত। ত্রান্তিক সাদা কাপড়টি উঠায় এবং সেটা দিয়ে সার্কেলে স্পর্শ করার সাথে তার সারা শরীরে আগুন লেগে যায়।
ফারহিন : একি হলো?
ত্রান্তিক : আমাকে বাচাও, পানি দাও
ফারহিন অনেক চেষ্টা করে ত্রান্তিককে বাচানোর, কিন্তু কোনভাবেই বাচানো সম্ভব হয় না ত্রান্তিককে।
নীধা হাহাহাহাহা করে হাসতে থাকে।
ফারহিন : নীধা তুমি হাসছো? ত্রান্তিক বাবা আগুনে পুরে মারা গেছে আর তুমি হাসছো?
নীধা : হাহাহাহা আগুনে পুরে নয়, অভিশাপে পুরে মরেছে।
ফারহিন : মানে?
নীধার চেহারা পরিবর্তন হয়ে যায়। এটা আসলে নীধা না। রুমানা নীধার বেশে এসেছিল।
ফারহিন : তুমি নীধা সেজে আমাদের ধোকা দিলে,
রুমানা : এই ব্যাটা বেশি বেড়ে গিয়েছিল। কোনভাবেই শায়েস্তা করতে পারছিলাম না ব্যাটাকে। তাই এই নাটক। এই পবিত্র মুর্তির রক্ষনাবেক্ষনের চাদর দিয়ে এই কালোজাদুর অপবিত্র সার্কেল রেখা স্পর্শ করায় মুর্তির অভিশাপে ও পুরে মরলো।
ফারহিন : আমার নীধা কোথায়?
রুমানা : সারাদিন নীধা নীধা করো কেনো। এই আমি তোমাকে পাবার জন্য এতো কিছু করি তবু কেনো আমার প্রতি তোমার ভালোবাসা জন্মে না।
ফারহিন : আমি নীধাকে ভালোবাসি।
রুমানা : আর আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমার সব তোমার, সুধু তোমার। আমার কাছে আস।
নীধা ধিরে ধিরে ফারহিনের কাছে আসে, সে তার পরনের সব কাপর খুলে ফেলে।
রুমানা : এই ঘরে এখন সুধু তুমি আর আমি। আর কেউ নেই। আসো আমরা দুজন দুজনে মিশে যাই
। দুটি দেহে যে সুখ আছে তা ভাগাভাগি করে নেই।
ফারহিন : নাহ নাহ সেটা সম্ভব না।
রুমানা ধিরে ধিরে ফারহিনের কাছে আসে। সে এখন সম্পুর্ন উলংগ। ফারহিন ধিরে ধিরে রুমানার দেহের অবয়বে মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছে। সে রুমানার প্রতিটি অংগ ছোট দৃষ্টিতে দেখছে। অনেকটা লোভে পরে গেছে ফারহিন রুমানার এই টগবিগে যৌবনে। ফারহিন নিজেই এবার রুমানাকে কাছে টেনে নেয়। রুমানার সারা গায়ে চুমু দেয়। জরিয়ে ধরে রুমানাকে গরাগরি খায়। আর কিছুখনের মধ্যেই দজুনে হয়তো মেতে উঠবে নারীপুরুষের সেই আদিম খেলায়।
ফারহিন আর রুমানা বিবস্ত্র অবস্থায় জরিয়ে গরাগরা খাচ্ছে।
ঠিক এমন সময় এই অন্ধকার রুমে ঢুকে তিন জন। তিনজনের মাথায় হ্যাট, হাতে লাঠি আর পেছনে ব্যাগ।
ফারহিন আর রুমানার কাকুতি টের পায় এই তিনজন।
১ম জন : আচ্ছা তোরা কি কোন শব্দ পাচ্ছিস?
২য় জন : হ্যা পাচ্ছি তো।
৩য় জন : ভুত মনে হয় আজ আমরা সত্যি সত্যিই পেয়ে গেলাম।
২য় জন : কিন্তু ভুত এমন শব্দ করবে কেনো?
৩য় জন : চেনা চেনা লাগছে আওয়াজটা।
১ম জন : চেনা তো লাগবেই তোমার কাছে। সারাদিন তো তুমি মোবাইলে এই আওয়াজ শুনো।
২য় জন : ওহ হ্যা তাই তো।
৩য় জন : ওয়াও আজ লাইভ দেখবো। কি কপাল আমার।
তিন জন আরো একটু এগিয়ে যায়। গিয়ে দেখে জোসনার মৃদ আলোয় ফারহিন আর রুমানার অবাধ্য মিলন এর পূর্ব মুহুর্ত।
এর মধ্যে হটাৎ এই তিনজনের ভিতর কোন একজনের হাতে লাঠি পরে শব্দ হয়। রুমানা পিছন ফিরে তাকায়। তার চোখ লাল, নীল হতে থাকে। আবছা আন্ধকারে সেটা খুব ভয়ানক লাগছিল। রুমানা আর ফারহিন উঠে দারায়। রুমানা ঐ তিন জনের কাছে আসতে থাকে। এই তিনজন ও কম সাহশী নয়। ওরাও তিন জন এগিয়ে আসে। রুমানা নিজের রুপ মুহুর্তে পরিবর্তন করে ফেলে এক হিংস্র জানোয়ারের রুপ নেয়। আর তখনি ফারহিন জ্ঞ্যান হারিয়ে ফেলে। তিনজনের মধ্যে প্রথমজন একটু এগিয়ে আসে তার লাঠি উচু করে। জানোয়ারটি ১ম জনের উপরে ঝাপিয়ে পরে। কিন্তু সে সরে গিয়ে লাঠি দিয়ে আঘাত করে জানোয়ারটির পিঠে। আবার ঘুরে হানা দেয়। এবার আর ১ম জন সরে যেতে পারলো না। তাকে শুয়িয়ে ফেললো। আঘাত করতে থাকলো।
পেছন থেকে ২য় জন তার ব্যাগ থেকে একটা ছোট মশালে আগুন জালিয়ে জানোয়ারটির উপর ছুরে দিতে চাইলে জানোয়ারটি ১ম জনকে ছেরে দিয়ে দূরে গিয়ে আবার রুপ চেঞ্জ করে এক ভয়াবহ রুপ ধারন করে। সাদা কাপরের এক মহিলা। চোখ দিয়ে রক্ত ঝরছে, হাতের নখ গুলো বড় আর ছোট হচ্ছে, চুল গুলো আকাশে উরছে আর রাগে গরগর করছে।
এটাই রুমানাএ আসল রুপ। রুমানা আবার তাদের উপর হামলা চালায়। ২য় জনকে আঘাত করে তার হাতের কিছু অংশ কেটে ফেলে।
২য় জন : কাকা প্লিজ আমাকে বাচাও। ও মেরে ফেলবে আমাকে।
৩য় জন : এ মনে হচ্ছে খুব হিংস্র আর ভয়ংকর ভুত। এখন কি করবো আমরা?
১ম জন : ওর ওষূধ আমার কাছে আছে।
১ম জন তার ব্যাগ থেকে ছোট একটা হাড় বের করে এনে রুমানার সামনে ধরে. রুমানার সামনে ধরার সাথে সাথে সেই হাড় থেকে নীলাভ একটা আলো বের হতে থাকে। সেই আলোতে রুমানা চিৎকার শুরু করে। তারপর জানালা দিয়ে লাফ দিয়ে পালিয়ে উধাও হয়ে যায়।
৩য় জন : যাক বড্ড বাচা বাচলাম। জীবনে প্রথম ভুত দেখলাম, ভুত যে এতোটা ডেঞ্জারাস আগে জানা ছিল না।
১ম জন : কথা কম বলে ওকে ধর। আর ব্যাগ থেকে ফার্স্টএইড বের করে হাতের কাটা জায়গায় ব্যান্ডেস করে দে ওর। আর আমি ওইটাকে দেখি। ঐটাও কি আবার ভুত প্রেত নাকি কে জানে।
৩য় জন ২য় জনের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয় আর ১ম জন অনেক চেষ্টা করব ফারহিনের জ্ঞ্যান ফিরিয়ে আনে।
ফারহিন : তোমারা কারা? আমার নীধা কোথায়?
২য় জন : আমরা ভুত গোয়েন্দা। ভুত প্রেত নিয়ে আমাদের কারবার।
৩য় জন : নীধা টা কে? ওই ভুত টা যার সাথে তুমি খেলা করছিলে?
ফারহিন : কোন ভুত? আর আমি আবার খেলা ধুলা করলাম কখন?
৩য় জন : দেখা মামা ওরে কিন্তু এইবার আমার পিডায়তে ইচ্ছে করছে। পিডাম নি একবার ক?
১ম জন : মাথা গরম করিস না তো মামা। থাম তুই। আমি কথা বলছি।
তোমার নাম কি?
ফারহিন : আমি ফারহিন।
১ম জন : যেই মেয়েটার সাথে সেক্স করছিলে সে কে? মানে ও তো একটা ভুত কিন্তু ওর সাথে তোমার কি? তুমি তো ভুত নও। ভুত হলে ওই নীল আলো সহ্য করতে পারতে না।
ফারহিন : কোন মেয়ের সাথে আমি সেক্স করলাম। আর আমি সেক্স নীধা ছাড়া অন্য কারো সাথে সেক্স করলে এই দুনিয়া ধংশ হিয়ে যাবে।
১ম জন : মানে কি? আএ সেক্স প্রযন্ত যেতে না পারলেও কাছা কাছা চলে গিয়েছিলে।
ফারহিন : আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। ওরা ত্রান্তিককে মেরে ফেলেছে.
১ম জন : কোন ত্রান্তিক? লাশ কই?
ফারহিন ওদের ত্রান্তিকের লাশ দেখায়, আর আগের সব ঘটনা খুলে বলে, আর ওরাও ওদের দেখা সব ঘটনা খুলে বলে ফারহিনকে।
ফারহিন : ধন্যবাদ তোমাদের তোমার শুধু আমাকেই নয় এই পৃথিবীটাকেও অভিশপ্ত হওয়া থেকে বাচিয়েছ। আচ্ছা তোমাদের সাথে পরিচয়ই তো হয় নি।
১ম জন : আমি দুপুর।
২য় জন : আমি কৌশিক
৩য় জন : আসফাক ভুত গোয়েন্দা।
ফারহিন : ভুত গোয়েন্দা? ইন্টেরেস্টিং।
দুপুর : হুম। আমাদের একটা প্রাইভেট ঘোষ্ট ডিটেকটিভ ফার্ম আছে যার নাম " ভুত গোয়েন্দা " আমাদের ফেসুবকে অফিসিয়াল একটা গ্রুপও আছে যার নাম * ভুত গোয়েন্দা ( ভৌতিক গল্প) সেখানে অনেক ধরনের গল্প পাবেন আর আমাদের রোমাঞ্চকর ভৌতিক অভিযানের গল্প।
ফারহিন : আরে আমি তো ওই গ্রুপে গল্প লিখতাম। আমার অনেক শুভাকাংখি ও আছে ওই গ্রুপে।
আসফাক : তাই নাকি? আপনার কোন পেইজ আছে? যেখান থেকে গল্প কালেক্ট করে গ্রুপে দিতে পারবো?
ফারহিন : হ্যা আছে তো। www.facebook.com/arshipon15/ লিখে সার্চ দিলেই পাবে।
দুপুর : আচ্ছা আপনিই কি শিপন যে আমার পড়ি নীল তরন্নিতা গল্পটি লিখেছেন?
ফারহিন : হ্যা। আমিই। আচ্ছা একটা খটকা থেকে গেলো।
কৌশিক : কি খটকা আবার?
ফারহিন : আমাকে তো ওরা অদৃশ্য করে রেখেছে। কেউ আমাকে দেখিতে পায় না। কিন্তু তোমরা কিভাবে আমাকে দেখতে পেলে?
আসফাক : আপনি অদৃশ্য হতে যাবেন কেন। আমরা তো আপনাকে দেখিতে পাচ্ছি।
ফারহিন : বিশ্বাস হচ্ছে না আমার কথা?
কৌশিক : নাহ। অপনি এখন একটু বেশিই চাপা মারছেন। আপনার অধিকাংশ কথা আমার চাপা মনে হচ্ছে। পৃথিবী অভিশপ্ত হবে, আপনি অদৃশ্য, কিম্বারু, লিলথ এগুলা গল্পেই ভালো। আমাদের কাছে এই চাপা মারবেন না। চাপা মারার জায়গা এটা না।
ফারিহিন : ভোর হয়ে গেছে চলো বাইরে যাই আরর প্রমান করে দেই।
দুপুর : হ্যা সেটাই, বাইরে চলেন।
সবাই মিলে বাইরে যায়। একটা হোটেলে গিয়ে চারজন বসে সকালের নাস্তা করার জন্য। আসফাক হোটেল বয়কে ডেকে নাস্তা দিতে বলে সবাইকে।
হোটলে বয় নাস্তা দেয়।
কৌশক : ওই পিচ্চি তোরে না বলছি সবাইকে নাস্তা দিতে। তুই ৩ টা দিলি আর একজন কে কি চোখে দেখিস না?
পিচ্চি : ভাই আপনি কি বলছেন এইসব। আফনারা তো ৩জনই।
পিচ্চির কথা শুনে ৩জন একসাথে ফারহিনের দিকে তাকায়। পিচ্চি চলে যায়।
দুপুর : তার মানে তুমি সত্যিই বলছো।
ফারিহিন : হ্যা। আমি সত্যিই বলছি।
আসফাক : তুমি অদৃশ্য, রুমানা ডাইনি, নীধা তোমার প্রেমিকা। আর এই সব নিয়ে চলছে গেম। এগুলা সবই সত্যি?
ফারহিন : হ্যা সব সত্যি। আর এখন আমাকে নীধাকে খুজে বের করতে হবে।
দুপুর : আচ্ছা তুমি এখন কোথায় যাবে?
ফারহিন : জানিনা.
দুপুর : এক কাজ করো। তুমি আমাদের সাথে চলো।
কৌশিক : আমরা তোমাকে হেল্প করবো নীধাকে খুজে পেতে।
আসফাক : আর আমরা তোমার সাথে থাকতে চাই তোমার এই যুদ্ধে।
ফারহিন ওদের পেয়ে খুব খুশি হয়। এই মুহুর্তে এমন সাপোর্ট খুব দরকার ছিল তার। তানা হলে সে একয়া হয়ে পরতো। কিন্তু ফারহিনের মনে প্রশ্ন একটা উকি দিয়েই যায় যে ওরা কিভাবে ওকে দেখতে পাচ্ছে। কোন স্পেশাল ক্ষমতা না থাকলে তো সম্ভভ না খাল চোকে তাকে দেখা। তাহলে কি ওদের কি কোন স্পেশাল শক্তি আছে।
জানতে চাইলে পরবর্তি পর্বের জন্য অপেক্ষা করুন আর গল্প সম্পর্কে আপনার মতামত দিন।
ফারহিন কে নিয়ে হাজির হয় দুপুর তার অফিসে। অফিস বলাটা আসলে ঠিক হবে না। এটা একটা গুপ্ত গুহা। কলাবাগানের একটা পুরোনো ভুতের বাড়ির বেসমেন্টের ও নিচে ছোট একটা রুম। ভুতুরে রুম। অন্ধকার আর সেতসেতে। লাইট জ্বালালেও মনে অন্ধকার থেকে যায়। এটাই দুপুর, আসফাক আর কৌশিকের ভুত গোয়েন্দা অফিস।
ফারহিন : এটা অফিস? দারুন তো। ভালো গল্প লেখা যাবে তোমার এই আস্তানা নিয়ে।
আসফাক : ফারহিন তোমাকে কিছুদিন এখানেই থাকতে হবে। সমস্যা হবে কি বেশি?
ফারহিন : আরে নাহ। সমস্যা হবে কেনো।
দুপুর : আমদের বাসা এখানেই। আর আমরাও এখানে মাঝে মাঝে থাকবো।
কৌশিক : আচ্ছা দুপুর হয়ে গেছে। এখন আমার বাসায় যেতে হবে। দুপুরে আবার আসবো। চিন্তা করো না।
দুপুর, কৌশিক আর আসফাক চলে যায়। ফারহিন গভীর একটা ঘুম দেয়। হটাত দরজা কড়ার শব্দ।
ফারহিন গিয়ে দরজা খুলে দেয়।
দুপুর, আসফাক আর কৌশিক এসেছে।
দুপুর : কেমন আছো ফারহিন?
ফারহিন : নীধার কথা খুব মনে পরছে।
আসফাক : আচ্ছা নীধা এখন কোথায় থাকতে পারে?
ফারহিন : লিলিথ ওকে নিয়ে গেছে।
কৌশিক : লিলিথ টা কে?
দুপুর : ভুলে গেলি? ফারহিন বলেছিল যে লিলিথ হলো সে যে এই পৃথিবীটাকে অন্ধকার রাজ্যে পরিনত করতে চায়।
কৌশিক : ওহ হ্যা। মনে পরেছে।
ফারহিন : লিলিথ কোন এক জংগলে থাকে। সেখানে তার আলাদা একটা ছোট রাজ্যের মত আছে।
আসফাক : জংগলটা কোথায়?
ফারহিন : আমি জানি না।
দুপুর : তাহলে এখন কি ভাবে জানা যায়? কোন পথ তো অবশ্যই আছে। সেটা কি?
ফারহিন : ত্রান্তিক বাবা বলেছিল একবুড়ি মা আসবে আমার কাছে সে সব বলে দিবে।
দুপুর : তো এখন?
ফারহিন : আমার লেখা গল্পতেই নাকি সব আছে। সেখানেই আছে নাকি সব সমাধান ও সমস্যা। এবং অন্ধকার জগতের পথ সৃষ্টির পথটিও।
কৌশিক : আচ্ছা একটা কাজ করি আমরা।
আসফাক : কি কাজ?
কৌশিক : আমরা ফারহিনের সব গল্প গুলো পরি।
দুপুর : ভালো বুদ্ধি। এখনি ভুত গোয়েন্দা গ্রুপে গিয়ে পরা শুরু করি একেক জন একটা।
তিনজন তিনজনের সেলফোন বের করে ফেসবুকে ঢুকে গ্রুপে গল্প পরা শুরু করে। কিন্তু এতো বড় একটা গ্রুপে একজন লেখকের গল্প পাওয়া তো টাফ।
দুপুর : ফারহিন তোমার লেখা তো সব একসাথে এখানে পাচ্ছি না?
ফারহিন : এক কাজ করো তোমরা আমার পেজ Md. Asasur Rahman (Shipon) বা এই লিংকেwww.facebook.com/arshipon15/ গিয়ে দেখো ।
আবার পরা শুরু করে তিনজন। পরছে তো পরছেই।
মাঝখান থেকে হটাত আসফাক উঠে বলে
আসফাক: এই সবাই এই গল্পটা পর। ডেভিল হান্টার্স গল্পের ছষ্ঠ পর্ব। আমার মনে হয় এই গল্প থেকে কিছু পেতে পারি। আর এটার প্রথম পার্ট টাও।
দুপুর : দেখি দেখি।
ফারহিন : এটা একটা গোয়েন্দা কাহিনি।
আসফাক : এখানে কিন্তু জংগল আর আলাদা একটা রাজ্য আছে।
ফারহিন লাফদিয়ে উঠে আসফাক এর কাছে এসে।
ফারহিন : হ্যা। সেটাই তো, তবে ভুত নেই।
কৌশিক : ফারহিন। তুমি আমাদের পোরে শোনাও তো গল্প টি।
ফারহিন গল্পটি পরে শোনায় সবাই কে। ডেভিল হান্টার্স গল্পের ছষ্ঠ পার্টটি এমন ছিল :
#ডেভিল_হানটার্স --- পর্ব ৬ (রহস্য গল্প )
লেখা ঃ Sh Ip On
সাক্ষর ঃ কিছুখনের মধ্যে ওরা সব গুটিয়ে আবার জঙ্গল করে ফেলবে জায়গাটা ।
শিপন ঃ আচ্ছা আজ সারাদিন আমরা ওদের নজরে রাখবে ।কারন এখন প্রায় ৫টা বাজে । একটু পরি সব উধাও হয়ে যাবে । আমি বলে দিচ্ছি কে কোন দিকে থাকবে ।
মেহাজবিন ঃ আমাদের আগে জানতে হবে সায়মা কোথায় ।
শিপন ঃ রিসান আর সাক্ষর তোময়াদের ২জনের কাজ হলো সায়মা কোথায় আছে সেটা বের করা ।
সালাউদ্দিন ঃ আমার মনে হয় ওরা রুমে গিয়ে ছদ্দবেশে আসতে হবে । তা না হলে ধরা পরে যাবে । বিপদ আরো বারবে ।
আলো ঃ ঠিক ।
মিম ঃ আমিও ওদের সাথে যেতে চাই ।
প্রিয়া ঃ তুমি ভয় পাবে তো ।
মিম ঃ না । আমি যাবো ।
শিপন ঃ আচ্ছা ঠিক আছে যাও । আর ওয়ালী , প্রিয়া আর প্রিতি তোমরা রাস্তার ওইখানে থাকবে । সব কিছু ফলো করতে হবে । লোকাল পুলিশের নাম্বার যোগার কর । কাজে লাগবে ।
প্রিতি ঃ ঠীক আছে ।
এর পর ওরা সবাই চলে যায় । সায়মা কে ১টা কুরে ঘরে আটকে রাখা হয়ছে । একজন লোক আসে সেই ঘরে । এসে সায়মার চোখ থেকে কালো কাপর খুলে দেয় ।
সায়মা ঃ কে আপনি ? আর আমাকে কেনো ধরে নিয়ে এসেছেন ?
আগত্তক ঃ আমি উত্তম , উত্তম কুমার সিনহা । বিশিষ্ট গরু চোর ।
সায়মা ঃ ছিহঃ , লজ্জা লাগে না ।
উত্তম ঃ লজ্জা কিসের ? এটা আমার ব্যাবসা । গরু চুরি করে সেটা জবাই করে তার চামরা বিদেশে পাচার করা আমার কাজ । এতে লজ্জার কি আছে ?
সায়মা ঃ সেটাই এখানে লজ্জার কি , টাকা তো আসতেছে । তো আমাকে কেনো ধরে নিয়ে এসেছেন ?
উত্তম ঃ কেনো ধরে আনবো না ? তোমাদের তো খুন করা উচিত । তোমরা আমার ভুতুরে রিসোর্ট বন্ধ করে আমার বিশাল ক্ষতি করছো । আবার এখন সিলেট এসেছো । নিশ্চয় আমাদের পিছু পিছু এসেছো । বলো মতলব কি তোমাদের ?
সায়মা ঃ মতলব হলো তোমাদের এই অবৈধ্য কাজ বন্ধ করা ।
কথাটা বলার সাথে সাথে উত্তন সায়মা কে চর মারে । সায়মা জ্ঞ্যান হারিয়ে ফেলে ।
শিপন পাহারের উপর থেকে লক্ষ করে যে একজন লোক পাহারের নিচের রাস্তা দিয়ে ভিতরে ঢুকছে । সে নিচে নেমে ফলো করে । ভিতরে ঢুকে যায় জঙ্গলের , সাথে আছে কৃ্ষ আর আলো ।
এদিকে রিসান , সাক্ষর আর আলো ও ছদ্দবেশে চলে আসে । তারাও জঙ্গলের ভিতর ঢূকে । আকা বাকা রাস্তা । হাটছে তো হাটছে । হটাৎ চোখ পরে পাসের ২টা ছোট পাহারের মাঝখানে ১টা সুরংগ পথ । পথ টা ঢাকা ছিল কেউ ভুল করে খুলে রেখে গেছে । ঢাকা অবস্থায় হয়তো কেউ বুঝবে না যে এখানে ১টা পথ আছে ।ধির পায়ে ভিতরে ঢুকে , পৌছে যায় ভিতরে আলোর মাঝে । অবাক হয়ে যায় যখন দেখে যে জঙ্গলের ভিতর যেন আরেকটা অদ্ভুদ গ্রাম । সেখানে ছোট ১টা বাজারে গিয়ে তারা পৌছে । লোক গুলো আজব সব পোষাক পরে আছে । কথা বার্তা ও ভিন্ন্য রকম । মনে হচ্ছে যেন ১০০ বছর পুর্বে ফিরে গেছি । ঘোড়ার গাড়ি করে যাচ্ছে মানুষ । আসবাবপত্র গুলো সব কাঠের । ভিতরে ঢুকে পরে আরো । বাজারের মানুষের ভিরের ভিতর ঢুকে পরে লোকটা কে ফলো করতে করতে । এক সময় ভিরের মাঝে হারিয়ে ফেলে তারা । কয়েকটা বাচ্চা এসে ওদের সামনে দারায় হাতে তাদের বেলুন । খুব সুন্দর করে হাসছিল বাচ্চা গুলো । পিছন থেকে কয়েকজন লোক এসে ঘিরে ফেলে শিপন , আলো আর কৃষকে । হাতে তাদের বল্লম , তরবারী , ফলা । ঘোরায় করে আরেকজন এসে ওদের সামনে দারায় । এরপর হাত পা বেধে নিয়ে যায় ১টা মাটির ঘরে ।
সব ঘটনাই লিকিয়ে লুকিয়ে দেখে রিসান , সাক্ষর আর মিম । ওরা এখাঙ্কার মানুশ দের মত পোষাক পরে ছদ্দবেশে এসেছে , তাই কেউ চিনতে পারছে না ।
মিম ঃ রিসান শিপন ভাই রা তো খুব বিপদে আছে ? কি করবো আমরা এখন ?
রিসান ঃ হুম । বাট সায়মা কেউ তো খুজতে হবে ।
মিম ঃ হ্যা । সায়মা কে কোথায় খুজে পাবো ?
সাক্ষর ঃ রিসান ভাই দেখো দেখো !
রিসান ঃ কি ?
সাক্ষর ঃ ওই যে ওই জামান নামের ছেলেটা ।
মিম ঃ হ্যা । জামান বদমাইশ টাই তো ।
রিসান ঃ আমার মনে হয় ওকে ফলো করলে আমরা সায়মার খোজ পাবো ।
সাক্ষর ঃ চলো ।
এরপর ওরা জামানকে ফলো করতে থাকে । আর কথা বলে
মিম ঃ আচ্ছা মেহজাবিন আপু আর সালাউদ্দিন ভাই কোথায় ?
সাক্ষর ঃ আমি জানি না ।
রিসান ঃ হয়তো কোণ কাজে আছে ।
মিম ঃ ওরাও যদি এখানে থাকতো তাহলে কতই না ভালো হতো ।
রিসান ঃ এই দেখো জামান ওই ঘড়ে ঢুকছে ।
জামান ঢোকার কিছু পর পিছন দিক দিকে ঘরের ভিতর উকি দেয় রিসান । ৪জন লোক আগেই ঘরের ভিতর ছিল আর জামান । একটু পর ২জন কালো করে লোক যারা এখানকার অদ্ভুদ মানুশের মত এমন ২জন সায়মাকে ধরে নিয়ে আসে মেঝে তে ফেলে দেয় ।
জামান ঃ বস গ্রামের লোকেরা নাকি কয়েকজন মানুষ কে ধরেছে । আমার মনে হচ্ছে ওরা সেই গোয়েন্দা দলের ।
উত্তম ঃ হুম । তাহলে ওরাও চলে এসেছে ।
রিপন ঃ (সে উত্তমের পার্টনার) সব গুলাকে এক সাথে আগুনে পুরিয়ে মারা উচিৎ ।
সায়মা ঃ ওরা চলে এসেছে ?
উত্তম ঃ মেয়ে তুমি আর চিন্তা করো না । ভেবেছিলাম তোমাকে একা বলি দিব । এখন তো নিজেদের বলি তে শোয়ানোর জন্য তোমার সহযোদ্ধারাও চলে এসেছে ।
এরপর সায়মা কে নিয়ে যায় । উত্তম , রিপন আর জামান নিজেদের মদ্ধ্যে কথা বলছে । আজ রাতে গ্রামে পুজা । আর সেই পুজায় বলি দিবে সায়মাকে , এমনটাই চিন্তা ভাবনা ওদের ।
রিসান ঃ সর্বনাশ । এখন কি করবো আমরা ?
মিম ঃ যেভাবে হোক ওদের রক্ষা করতে হবে আমাদের ।
সাক্ষর ঃ আগে শিপন ভাই , কৃ্ষ আর আলো আপু কে উদ্ধার করতে হবে ।
রিসান ঃ আছা আমরা তো ওদের পোষাক পরেই আছি । ওদের ভাষাটা কোন রকম রপ্ত করি । তারপর ওদের সাথে মিশে গিয়ে ভিতরে ঢুকে ছূটিয়ে আনতে হবে ।
মিম ঃ গ্রেট আইডিয়া ।
সাক্ষর ঃ চলো আমরা কাজে লেগে পরি।
নেমে পরে মাঠে রিসান , মিম আর সাক্ষর । বাজার দিয়ে হাটছিল ৩জন । বাজারের সবার কথা খুব মনোযোগ দিয়ে সেটা রপ্ত করার চেষ্টা করে । অল্প কিছু রপ্ত ও করে ফেলে । একটা বাচ্চার কাছে গিয়ে বাচ্চার সাথে কথা বলে ।
রিসান ঃ গুম্বে চুলা ছিল হুল ( তোমার নাম কি ?)
বাচ্চা ঃ চুম্বাল ।
রিসান ঃ ঘুমান ফের ( চকলেট খাবে ?)
চুম্বাল ঃ হুম ।( সকলের বুঝার জন্ন্য আমাদের ভাষায় দেওয়া হলো এখন থেকে )
মিম ঃ তুমি কি এই গ্রামের সব জায়গা চিনো ?
চুম্বাল ঃ হ্যা । আজ আমাদের পুজা ।
সাক্ষর ঃ আমাদের নিয়ে যাবে তুমি তোমাদের পুজোয় ?
চুম্বাল ঃ হ্যা । তবে আমাকে আরো অনেক চকলেট দিতে হবে ।
মিম ঃ তোমাকে এত্তো চকলেট দিব বাবু ।
এরপর তিনজন আর চুম্বাল মিলে গ্রাম টা ঘুরে দেখে । অসাধারন সৌন্দর্যে ঘেরা গ্রাম টা , কোন আধুনিক্তার ছোয়া নেই গ্রামে । তাই হয়তো সবাই এখানখার এতো হাসিখুশি । কিন্তু তারা জানে না যে কোন এক অশুভ মহল তাদের এই সরলতার সুজোগ নিচ্ছে ।
শিপন, আলো আর কৃ্ষ একটা অন্ধকার রুমে বন্দি । মাটির ১টা ঘর , স্যাত স্যাতে ।
তিন জনেরই হাত বাধা একটা খূটির সাথে ।
কৃষ ঃ আমাদের আর কত খন এইভাবে হাত বেধে রাখবে ? আর ভালো লাগছে না ।
আলো ঃ কৃ্ষ প্রস্তুত হও আগুনে পুরে মরার জন্য । শুনলে না আজ আমাদের ওরা আগুনে পুরিয়ে মারবে ।
কৃ্ষ ঃ তাই তো মনে হচ্ছে ।
শিপন ঃ আচ্ছা আমরা যদি এখান থেকে বের হতে পারি তাহলে সায়মা কে কিভাবে উদ্ধার করা যায় বলো তো ?
আলো ঃ হাহাহাহাহহাহা , ভাইয়া তুমি কি মজা নিচ্ছ আমাদের সাথে ? আমরা নিজেরাই তো বন্দি ।
শিপন ঃ ধরো মুক্তি পেলে । তারপর ?
কৃ্ষ ঃ আগে মুক্তি দাও , তারপরই বলি ।
কৃ্ষ এর কথা বলতে না বলতে শিপন নিজের হাতের দড়ি খুলে ফেলে । তারপর এক এক করে কৃ্ষ আর আলোর হাত থেকে দড়ি খুলে দেয় ।
আলো ঃ এখন বের হবো কিভাবে ?
শিপন ঃ ভালো করে ঘড় টা খেয়াল করো তাহলেই বুঝতে পারবে ।
কৃ্ষ আর আলো চারপাশ তাকিয়ে দেখে । কিছুখন পর ঃ
কৃ্ষ ঃ পেয়েছি । ঐটা ১টা ভেন্টিলেটরের মত উপরে ।
শিপন ঃ হ্যা । ঐটা দিয়ে দিনে আলো প্রবেশ করে । আশা করি ওইটা ভেঙ্গে ফেলতে বেশি সময় লাগবে না ।
এরপর ৩জন মিলে শুরু করে অন্ধকার রুম থেকে মুক্তির যুদ্ধ ।
ঐ দিকে সালাউদ্দিন , প্রিতি , প্রিয়া এর কোন খোজ নেই । যদিও তাদের বলা ছিল বাইরে থাকতে । মেহজাবিন ঢাকা ।
রিসান , মিম আর সাক্ষর এখন এসেছে পূজোর আয়োজন দেখতে । বাচ্চা চুম্বাল এর সাথে । চুম্বাল সব দেখিয়ে দিচ্ছে , কোথায় কি হবে । এখানে অনেক মানুষ কাজ করছে । এর মাঝে হটাৎ হাটতে গিয়ে ধাক্কা লাগে একজনের সাথে , ধাক্কায় তার দাড়ী খুলে যায় । লোকটা আর কেউ না , সালাউদ্দিন । খুলে যাওয়া দাড়ী তুলে নিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায় সালাউদ্দিন । সে সাক্ষর কে চিনতে পারে না । কারন সাক্ষরও ছদ্দবেশে ।
সাক্ষর ঃ রিসান । সালাউদ্দিন ভাই এখানে ।
রিসান ঃ কোথায় ?
সাক্ষর ঃ এইতো এখানেই ছিল ।
এরপর খুলে বলে রিসানকে ।
অন্যদিকে পুজোর সব আয়োজন রেডী । বন্দি রুমে সায়মা । কেউ একজন এসে দরজা ভিতরে ঢুকে ।সায়মার চোখের বাধন খুলে দেয় ।
উত্তম ঃ মামনি একটু পর তোমাকে বলি দেওয়া হবে , এইগ্রামের সুভকামনা চেয়ে । তুমি খুব ভাগ্যবতি ।
সায়মা ঃ আমাকে কেনো বলি দেবেন ? আমি তো এইগ্রামের কেউ না ?
উত্তম ঃ হাহাহাহাহা । গ্রামের লোক জানবে গ্রামের মঙ্গলের জন্য আমি তোমাদের বলি দিচ্ছি , কিন্তু আসলে তো আমি আমার শত্র ধংশ করছি । বেশি কথা বলে আর লাভ নেই । চলো
এরপর সায়মা কে নিয়ে যাওয়া হয় পুজার স্থানে । কালো ১টা কাপর পরানো হয় সায়মাকে । শুরু হয় পুজার আনুষ্ঠানিকতা , ঢাক ঢোল এ মুখরিত । উৎসব মুখোর পরিবেশ , সবাই খুব আনন্দিত আর উল্লসিত । সুধু ৩জন কে খুব চিন্তিত লাগছে । রিসান , মিম আর সাক্ষর ।
মিম ঃ রিসান সায়মাকে এনেছে কিন্তু শিপন ভাই , আলো আপু আর কৃ্ষ কোথায় ?
রিসান ঃ হুম টেনশোন হচ্ছে ।
সাক্ষর ঃ চলো যাই ওই ঘরে গিয়ে দেখি আসি ।
তারপর ৩জন যায় সেখানে । আগের সেই ছিদ্র দিয়ে দেখে ভিতরে কেউ নাই ।চিন্তা টা আরো বেরে যায় । তাহলে কি ওদের কে আলাদা মেরে ফেলতে কোথাও নিয়ে গেছে ???? নিজের মনে প্রশ্ন জাগে রিসানের ।
রিসান ঃ আমার মনে হয় আমাদের আগে সায়মার ওইখানে যাওয়া উচিৎ ।
সাক্ষর ঃ হ্যা চলো ।
এর পর আবার দৌড়ে চলে আসে । এসে দেখে সব প্রস্তুতি প্রায় শেষ , এখনি বলি দেওয়া হবে সায়মা কে ।
উত্তম সরকার নিজে বড় একটা ছুরি নিয়ে দারিয়ে আছে , পরনে সাদা কাপর । মন্ত্র পরা শুরু করে । ছুরি টা উপরে তুলে সায়মার উপর কোপ দেয় ।
পিছন থেকে হটাৎ রিসান এসে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় উত্তম কে , মিম সায়মা কে নিয়ে দূরে সাওরে যায় । জামান এসে রিসানকে জাপটে ধরে । আশেপাশের সবাই অবাক দৃষ্টিতে সব দেখছে । কি হচ্ছে এইসব । শিপন ও কোথায় থেকে এসে জামানকে লাঠি দিয়ে আঘাত হানে । শুরু হয় ২পক্ষের হাতাহাতি । কোন ঠাসা হয়ে পরে শিপন রা । এর মাঝে কোথায় থেকে যেন কিছু বোমা ফেটে উঠে । গ্রামের লোকজন ভয় পেয়ে ছোটাছুটি করে পালিয়ে যায় । সালাউদ্দিন কিছু ককটেল বোম নিয়ে এসেছে । আবার শুরু হয় ২পক্ষের মারামারি । প্রিতি মাথায় আগাত পেয়ে লুটিয়ে পরে মাটিতে । শিপন আর রিসানকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে । উত্তম গুলি করে সাক্ষর কে , তবে লক্ষভ্রষ্ট হয় । এক বিচ্ছিরি অবস্থা । শিপনরা ধরা পরে যায় প্রায় । এমন সময় পুলিশের বাশির শব্দ । চারপাশ থেকে পুলিশ ঘিরে ফেলে । ওয়ালি আর মেহজাবিন পুলিশ নিয়ে এসেছে । পুলিশ গরুচোর দের গ্রেফতার করে । প্রিতি কে সেভ মতো নিয়ে আসে । মেহজাবিন কে আগের রাতে সালাউদ্দিন সব বলে ফোনে । তারপর সে ঢাকা থেকে চলে আসে । সালাউদ্দিন রা আগেই গ্রামে ঢুকে পরে । সব কিছু পর্যবেক্ষন করে প্রস্তুতি নিয়ে রাখে আর সেই মত কাজ করে । যার ফলে বেচে যায় রিসান, মিম, সাক্ষর, আলো, কৃ্ষ , শিপন প্রিতি , ধরা পরে গরুচোর চক্র । পরের দিন ভোরে ঢাকায় চলে আসে । প্রিতি সুস্থ হয়ে যায় ।
সমাপ্ত
আসফাক : কি মনে হলো দুপুর?
দুপুর : আমার মনে হয় আমাদের যাওয়া উচিত সেখানে।
কৌশিক : আপনি তো জায়গাটা চেনেন ফারহিন তাই না?
ফারহিন : হ্যা। একবার ওইখানে ঘুরতে গিয়েছিলাম। তারপর ওই অভিজ্ঞতা আর কল্পনা মিশিয়ে লিখেছি। তবে আমি ওইখানে তোমাদের নিয়ে যেতে পারবো।
দুপুর : আল্লাহ বাচাইছে যে বলেন নাই পুরোটাই আমার কল্পনা, বাস্তবতার সাথে এর কোন মিল নেই। হাহাহহাহাহহাহা।
সবাই একসাথে হেসে উঠে।
কৌশিক : তাহলে আজ আমরা আসি। কাল সবাই একসাথে সিলেট যাচ্ছি কেমন?
ফারহিন : ঠিক আছে ।
পরেরদিন ভোরেই রওনা দেয় কৌশিক, দুপুর, আসফাক এবং ফারহিন সিলেটের উদ্দ্যেশ্যে। রাস্তায় কিছুটা জ্যাম থাকায় পৌছতে পৌছতে বিকেলে হয়ে যায়। আর একটু ঘোরাঘুরি আর থাকার জন্য হোটেল ঠিক করতে করতে সন্ধ্যা।
এরপর খানিক রেস্ট নিয়ে ওরা চারজন বের হয়ে পরে। সারা রাত ঐখানেই কাটাবে তারা তাই কিছু খাবারও নিয়ে আসে।
দুপুর : কতদুর আর?
ফারহিন : প্রায় চলে এসেছি। সামনেই রাস্তের পাস দিয়ে নেমে গেলে কিছুদুর হাটার পর ওই টিলাটা।
কৌশিক : আচ্ছা তুমি কি ওই গ্রামটা বা ওই ধরনের কিছু দেখতে পেয়েছিলে?
ফারহিন : কোন ধরনের?
কৌশিক : মানে ওই গুহা বা গ্রাম এই ধরনের কিছু?
ফারহিন : আরে না। ওগুলা তো আমার সব কল্পনা।
আসফাক : তাহলে গিয়ে যদি কিছু না পাই। সব বৃথা যাবে।
কৌশিক : আমার ও কেনো জানি মনে হচ্ছে কিছুই পাবো না।
ফারহিন : ধৈর্য হারালে চলবে না।
বলতে বলতে চলে আসে টিলার উপর। একদম উপরে গিয়ে ঘাসের উপর বসে পরে। রাত এখন ৯টার কিছু বেশি।
ফারহিন : এই জায়গায়টা থেকেই আমার গল্পটি লেখা।
কৌশিক : জায়গাটা কিন্তু অসাধারন তাই না?
আসফাক : হা সত্যিই খুব সুন্দর। তার। মধ্যে এতো সুন্দর জোসনা।
কৌশিক : ইস যদি রাইসাকে নিয়ে আসতে পারতাম কামা তাহলে সেই হইতো।
দুপুর : হুম সত্যিই সুন্দর। কিন্তু এইখানে তো এমন কিছুই দেখতে পাচ্ছি না।
ফারহিন : দুপুর ওইটা আমার কল্পনা ছিল। তুমি ওইরকম কিছু খুজলে কি পাবে?
দুপুর : সেটাও ঠিক। আচ্ছা আমরা খাওয়া দাওয়া শেষ করি।
ফারহিন : হ্যা খুব খুদা লেগেছে।
ওরা চারজন ওইখানে বসে খাওয়া দাওয়া শেষ করে। জোসনার আলো যথেষ্ট থাকায় আর কোন আলোর ব্যাবস্থা করতে হয় না।
আচ্ছা অনেকদিন নীধার কোন খোজ খবর নেওয়া হয় না। কোথায় আছে, কেমন আছে সেটা জানা দরকার। সেই ক্ষেত্রে আপনাকে আমার সাথে কয়েক সেকেন্ডের জন্য কল্পনায় ভাসতে হবে। প্রস্তুত হয়ে পরের লাইনটি পরুন।
ছোট ছোট গাছপালার মাঝ দিয়ে যাচ্ছে পথটি। আকাবাকা পথ। আশে পাশে বড়গাছ গুলো মানেই সেই গুলো তে একটা করে ছোট খুপরি বাসা। সেটাও ডালের উপর। গাছের ডাল আর পাতা দিয়েই তৈরি এই বাসা গুলো। কিছুদুর যাওয়ার পর চোখে পরলো একটা ছোট বাজার। কিন্তু মানুশ জন অনেক। সকলেই কালো জামা পরা, ছেলে বা মেয়ে সবাই।
দৃশ্যটা রাতের। এতো রাতেও বাজারে কিন্তু লোকের সমাগম কম নয়। বাজার শেষ করে আরেকটু এগুলেই বিশাল এক গাছ। আর সেই বিশাল গাছে বিশাল একটা বাসা। এই বিশাল বাসার একটি জানালার ফাকা দিয়ে দেখুন এবার।
কাউকে চড় মারার শব্দ। জানালা দিয়ে উকি দিয়ে দেখা গেলো নীধাকে।
নীধা : তুমি আমার কাছে কি চাও, কেনো মারো আমাকে?
রুমানা : তোকে দেখলেই আমার অসহ্য লাগে তাই মারি তোকে মাগী।
নীধা : এভাবে না মেরে একদম মেরে ফেলো আমাকে। আর সহ্য করতে পারছি না এই যন্ত্রনা।
রুমানা : আমিও তো চাই তোকে মারতে, নিজের হাতে মারতে। কিন্তু তোর মৃত্য তো লিলিথের হাতে।লিলিথ আমাবস্যার রাতে তোকে বলি দিয়ে তোর রক্ত দিয়ে রক্ত স্নান করে এই পৃথিবীকে করবে অন্ধকার রাজ্যের সর্গ আর লিলিথ হবে রানী আর আমি পাবো ফারহিনকে।
নীধা : ফারহীনকে? হাহাহহাহাহা। ফারহীন সুধু আমার।
রুমানা নীধার কাছে এসে নীধার গলা চেপে ধরে।
রুমানা : হারামজাদী এই কথা যদি আর একবার মুখ দিয়ে বের করছিস তো তোর জীভ কেটে ফেলবো। ফারহিন আমার হবে। শুধু আমার।
এদিকে টিলার উপর চারজন খাওয়া দাওয়া শেষ করে এখন চারদিক দেখছে। রাত প্রায় এখন ১২ টা।
আসফাক : ফারহিন রাত তো ১২ টা বেজে গেলো কিছুই তো দেখছি না।
কৌশিক : রাত ১২ টা কোন রাতই না। এই সময় ভুত প্রেত রা বাসা থেকে বের হয় না।
আসফাক : সেটাও ঠিক। তাহলে কি করা যায়?
দুপুর : জোসনার আলো যথেষ্ট আছে।
কৌশিক : হ্যা আছে। তো কি?
দুপুর : তাস খেলবো। এখানে বসে তাস খেলতে মন্দ লাগবে না। আসফাকের ব্যাগে তাস আছে।
ফারহিন : গ্রেট আইডিয়া।
তারপর তাশ খেলা শুরু করে। খেলতে খেলতে রাত প্রায় ২টা বেজে যায়। হটাত করে ওদের তাস এলো মেলো হয়ে
আসফাক : কি রে কি কার্ড দিচ্ছিস? একবারো রঙ কার্ড পরে না। আবার বাট কার্ড।
কার্ড আবার বাটে। এর পরের বারও সেম কাহিনি। রঙ কার্ড পরে নি আসফাকের।
আসফাক : কিরে বাল আবার ও। ধুর। ( কার্ড সো করে সে)
দুপুর : এই আমার কাছে কার্ড দে আমি বাটবো কার্ড।
দুপুর কার্ড বাটে। এবারো রঙ কার্ড পায় না আসফাক। প্রতিবাদ জানায়।
আসফাক : আমি এবারো রঙ কার্ড পায়নি।
কৌশিক : একটা জিনিশ খেয়াল করলাম। আমি গত তিন বারই সেম কার্ড পেয়েছি।
ফারহিন : হ্য তাই তো।
দুপুর : আমার মনে হচ্ছে কোন সমস্যা। মানে প্যারানরমাল কিছু।
কৌশক : অনেক খন হয় আমরা ঐদিক দেখি না। দেখা উচিত।
ফারহিন : দুপুর তুমি তোমার পেছনের দিকে তাকাও।
দুপুর তার পেছনে তাকানোর আগেই পিছন থেকে একটি হাত এসে তাকে আঘাত করে।
কৌশিক : দুপুর পালা পালা।
আসফাক : এতো জুম্বি।
ফারহিন : হ্যা। তাই মনে হচ্ছে।
দুপুর : এরা আসলো কোথায় থেকে? এরা তো নিশ্চয় মানুষ খেকো।
ফারহিন : এর মানে হলো আসে পাসেই আছে লিলিথ। লিলিথ এর অন্ধকার জগতের দাশ হবে সাধারন মানুষ। সে সাধারন মানুশ গুলোকে এভাবে জিম্বু বানিয়ে রাখবে।
দুপুর পাস থেকে ১ টা ডাল নিয়ে এসে কোন রকমে জিম্বুটার পিছনে গিয়ে কয়েকবার আঘাত করে। তারপর লুটিয়ে পরে জিম্বুটা।
ফারহিন : পালাও সবাই। চারদিক থেকে জিম্বুরা আমাদের ঘিরে ফেলেছে।
আসফাক : সারাজিবন বইতে পরেছে, মুভিতে দেখিছি। আর আজ বাস্তবে এই অবাস্তব জন্তু দেখছি।
দুপুর : কথা কম বল। আগে পালা যদি বাচতে চাস।
চারজন মুলে দৌড় দেয়। টিলার চুরায় পালানোর জায়গায় পালানোর জায়গা নেই। টিলার একদম কর্নার দিয়ে দৌড়াতে গিয়ে পরে যায় কৌশিক। আর কৌশিককে ধরতে গিয়ে দুপুর ও পরব যায়।
ফারহিন আর আসফাক হা করে তাকিয়ে দেখছে যে দুপুর আর কৌশিক গড়িয়ে গড়িয়ে নিচের দিকে যাচ্ছে।
হটাত একটি গর্তের ভিতর পরে যায় কৌশিক আর দুপুর।
আসফাক : এটা কি হলো। এখন আমরা কি করবো?
ফারহিন : বাচাতে হলে এটাই একমাত্র পথ। আর কোন রাস্তা নেউ এই হিংস্র জিম্বু দের হাত থেকে বাচার।
আসফাক লাফ দেয়, আসফাকের পিছনে ঝাপিয়ে পরে ফারহিন। এই দুজনও এসে পরে সেই গর্তে।
আপনি এই গর্তের ভিতর না পরলে বুঝতেই পারবেন না যে এখানে কোন গর্ত আছে।
যাই হোক, নিচে কৌশিক আর দুপুর নিচে পরে দারিয়ে শরির থেকে হাত দিয়ে ধুলো ঝারছে আর সেই সময় তাদের উপরে এসে পরে ফারহিন আর আসফাক।
আহ, আহ, আহ কি রে মেরে ফেলবি নাকি বললো দুপুর।
আসফাক : আমি কিছু দেখতে পাচ্ছি না কেনো? আমি কি মাথাউ আঘাত পেয়ে অন্ধ হয়ে গেলাম?
কৌশিক : জায়গাটাই অন্ধকার।
দুপুর তার ব্যাগ থেকে লাইট বের করে।
ফারহিন : আরে এটা তো মনে হচ্ছে একটা গুপ্ত গুহা।
দুপুর : সেটাই তো দেখছি। চলো সামনে যাই।
চারজন সামনের দিকে এগুতে থাকে। সামনে ফারহিন আর দুপুর। পিছনে পিছনে আসফাক আর ফারহিন।
হটাত আসফাক চিৎকার দিয়ে উঠে। সবাই আসফাকে দিকে তাকায়। দুপুর আসফাকের মুখে লাইট মারে। কিন্তু তেমন কিছু দেখতে পায় না ওরা কিন্তু তখনো চিৎকার করছে আসফাক।
দুপুর তার লাইট আসফাকের মুখ থেকে আসতে আসতে নিচে নামাতে নামতে একদম পায়ের গোরালীতে লাইট ধরে। লাইটটা থেমে যায় আর বাকি সবাইও চিৎকার করে এক পা দূরে সরে যায়।
একটা কাটা হাত আসফাকের পা চেপে ধরে আছে আর পা থেকে রক্ত ঝরছে। বোঝাই যাচ্ছে আসফাকের খুব কষ্ট হচ্ছে। আসফাক বসে সেই কাটা হাতটাকে নিজের হাত দিয়ে ধরে কাটা হাতটা ছারানোর চেষ্টা করে। কিন্তু পারে না।
আসফাক : তোরা কি দারিয়ে দারিয়ে তামাশা দেখছিস।
আসফাকের কথা কানে যাওয়া মাত্র যেন সবাই জ্ঞ্যান ফিরে পায়। কৌশিক তার ব্যাগ থেকে একট ছোট ধারালো ছুরি বের করে সেটা দিয়ে হাত টা কেটে আসফাকের পা ছারায়।
ফারহিন : কি ভয়ংকর ব্যাপার। আল্লাহ জানে সামনে আর কি কি ঘটবে আমাদের সাথে।
আসফাক : আমি আর যাবো না। ফিরে যাবো।
কৌশিক : গাধার মত কথা বলিস না।
আসফাক : তো কি মরতে যাবো সেখানে?
দুপুর : হ্যা। চল এখন।
তারা চারজন আবার হাটাশুরু করে। হাটার মাঝখানে অনেক বারই তারা অনেক অবাস্তব জিনিশপত্র দেখলো। কিন্তু তারা সাহস নিয়ে সামনে এগিয়ে গেলো।
গুহার একদম শেষপ্রান্তে চলে এসেছে। আবছা আবছা জোসনার আলো দেখা যাচ্ছে। ওরা এখন গুহার একদম শেষ। গুহা থেকে বের হয়ে যেন ওরা এক অন্যরকম পৃথিবী দেখলো।
ওদের থেকে একটু দূরে সামনে দেখা যাচ্ছে একটা ঘন বসতি। তবে সেখানের বসবাসের স্থান মানে বাসা গুলো আমাদের মত না। গাছের ডালের উপর গাছ পালা দিয়েই তৈরি।
দুপুর : অসাধারন একটা দৃশ্য। দেখ কত সুন্দর লাগছে ঘর গুলো।
কৌশিক : আমরা মনে হয় আদিম মানুশ দের শহরে এসে পরেছি। অনেকটা মুভির মত।
ফারহিন : হ্যা, মুভির মত। ভুলে যেও না যে মুভিতে এই আদিম বা বন মানুষ গুলো মারাত্তক হিংস্র হয়। সো আমাদের সাবধানে থাকতে হবে।
দুপুর : ঘটনা সত্যি কিন্তু সাক্ষি দুর্বল।
ফারহিন : কি।
দুপুর : আরে ফান করলাম। চলো আগাই।
চারজন মিলে আবার ধিরে ধিরে আগাতে শুরু করে। এগুতে এগুতে দূরে আলো দেখতে পায়।
সামনে লোকজন থাকতে পারে এই ভেবে তখন ওরা পাশের জংগলের গাছের আরালে লুকিয়ে লুকিয়ে সামনে যায়।
কৌশিক : আরে দেখ দেখ। এ তো মনে হচ্ছে সামনে একটি বাজার।
আসফাক : হ্যা। দেখ কত আলো জলছে। তবে কোন আলোই বিদ্যুতের না।
ফারহিন : সত্যিই অনেক মুগ্ধকর।
বলতে বলতে ফারহিন এগিয়ে গাছের আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে।
ওইসময় পাসেই একটা ১৩/১৪ বছরে বাচ্চা একটা ফুটবলের মত একটা বল নিয়ে খেলছিল। সে বলে কিক করে আর বলটা এসে ফারহিনের মাথা লাগে। ফারহিন বলের আঘাতে অজ্ঞান হয়ে পরে যায়।
বলটি ফারহিনের পাসেই গরাগরি করতে থাকে।
বাচ্চাটি এসে ফারহিনের পাস থেকে বল নিয়ে যায়। এবং সেও ফারহিনকে পায় না।
বাচ্চাটি সরে গেলে আসফাক আর দুপুর ফারহিনকে নিয়ে জংলের ভিতর ঢুকে পরে এবং অনেক চেষ্টার পর তার জ্ঞ্যান ফিরিয়ে আনে।
কৌশিক : এক সামান্য ফুটবলের আঘাতে জ্ঞ্যান হারিয়ে ফেললে?
ফারহিন : ওইটা কখনোই সামান্য ফুটবল না। নিশ্চয় সেটা কাঠের তৈরি। এখনো ব্যাথা করছে।
দুপুর : আচ্ছা শোন গাইজ। হয়তো তোমরা খেয়াল করছে যে ফারহিনের লেখা গল্পের সাথে অনেকটা মিলে গেছে এই গ্রাম বা শহর যেটা বলো। আমার মনে হয় এটাই ফারহিনের গল্লের গ্রাম। আর নীধাও এখানে আছে। সুতরাং আমাদের এখন ভিতরে ঢুকে নীধাকে বের করে আনতে হবে।
আসফাক : হ্যা আমারও তাই মনে হয়। কিন্তু আমারা ভিতরে যাবো কিভাবে? ওরা সবাই একরকম এর পোশাক পরা। আমরা গেলেই ধরা খেয়ে যাবো।
দুপুর : ঠিক। উপায় তো একটা বের করতেই হবে।
কৌশিক : উপায় একটা আছে।
ফারহিন : কি সেটা?
কৌশিক : বাচ্চাটা যখন বল নিতে আসে সে কিন্তু তখন ফারহিনকে দেখতে পায় না। এর মানে ফারহিন এদের কাছেও অদৃশ্য।
আসফাক : ফারহিন একা অদৃশ্য হলে তো হবে না। ভিতরে তো আমাদেরও যেতে হবে।
কৌশিক : গাধা আগে কথা শেষ করতে দে।
আসফাক : বল।
কৌশিক : ফারহিন অদৃশ্য। সুতরাং ফারহিন ওদের ওখানে যেতে পারবে। আর ফারহিনের জামাটাও অদৃশ্য। ফারহিন ওই গ্রামের কোন একবাড়িতে ঢুকে সেখান থেকে আমাদের জন্য ৩ সেট জামা নিয়ে আসলেই আমরা সেটা পরে ওদের সাথে মিশে যেতে পারবো। তারপর খুজে বের করতে পারবো নীধাকে।
দুপুর : হোয়াট এ আইডিয়া ম্যান।
ফারহিন : তাহলে আমি এখনি বের হয়ে যাই। ৩ সেট জামা নিয়ে আসি। তোমরা এখানেও থেকো কিন্তু।
আসফাক : সাবধানে যেও বন্ধু।
ফারহিন গাছ চরতে পারে না। কিন্তু এখানের সব গুলো বাসাই গাছের উপর। অনেক কষ্ট করে সে গাছে চরে একটা বাসায় ঢুকে। তার আগে অনেকখন সে পর্যবেক্ষব করে নিশ্চিত করে যে বাসায় কেউ নেই। কারন তাকে কেউ দেখতে না পেলেও যখন সে কাপর নারাচারা করবে তখন তো দেখা যাবে।
ধিরে ধিরে ঘরের ভিতর প্রবেশ করে। তারপর সেখান থেকে ৪টা কালো জামা নেয়। জামা গুলো অনেকটা পাঞ্জাবির মত। সব একই ধরনের। গলার অংশটুকু বেশি কাটা।
তারপর ফারহিন ফিরে আসে।
কৌশিক : আরে ভাই তুমি আসছো? আমি তো ভাবছিলাম যে তুমি হারাইয়া গেছো।
ফারহিন : আরে না। লোকজন ছিল তাই ঘরে ঢুকতে পারছিলাম না। আর আমি গাছেও চরতে পারি না।
দুপুর : তাহলে আনলে কিভাবে?
ফারহিন : কষ্ট করেই উঠলাম। নীধাকে তো খুজে পেতে হবে তাই না?
আসফাক : চারটা জামা কেনো? আমরা তো তিনজন পরবো, ফারহিন তুমি তো পরবে না তাই?
ফারহিন : হুম। ঐটা নীধার জন্য।
আসফাক : ওহ।
আসফাক, দুপুর আর কৌশিক জংলের ভিতর গিয়ে জামা চেঞ্জ করে আসে। তারপর চারজন গ্রামের ভিতর রওনা দেয়। ফারহিন অদৃশ্য।
আকা বাকা জংগলের পথ পেরিয়ে সামনে এগুতে থাকে তারা। বাজারের কাছা কাছি চলে আসেছে। এসে মিশে গেছে বাজারে অন্যদের সাথে। উদ্দ্যেশ্য এদের মধ্য থেকে কোন ভাবে কি নীধার খোজ খবর পাওয়া যায় কি না।
একদিকে হটাত একটা জটলার মত দেখে এগিয়ে যায় কাছে চারজন।
পেছন থেকে দেখা যায় দুজন লোক মারামারি করছে আর সবাই সেটা দেখছে। মারামারির একপর্যায়ে একজন আরেকজন কে একদম মেরে ফেললো।
অবাক করার বিষয় হলো। অন্য সবাই তখন হাত তালি দিচ্ছিল। আরেকজন জটলা থেকে মাঝখানে এসে জিবিতজনের হাত উচু করলো। তারমানে এতোখন একটা খেলা হচ্ছিল আর সেই খেলায় একজনকে মরতে হবে। বিজিত লোককে একজন এসে একটা টাকার বান্ডিল দিলো এবং সে হাসতে হাসতে চলে গেলো। আর লাশটা একটা ভ্যানে করে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হলো।
আসফাক : কি ভয়ানক খেলারে বাবা
কৌশিক : কাকা খেলবা নাকি? তোমার তো কথায় কথায় অনেকটাকা চাই। জিততে পারলে দেখো অনেক টাকা পাবা।
দুপুর : আর হেরে গেলে এতো সখের প্রান টা যে হারাবো।
আসফাক : এই খানে আর একমুহুর্তও নয়। চল সামনে যাই।
ফারহিন : দারাও। এই যে লোকটা যে পুরস্কারের টাকা টা দিল আমি তাকে চিনি।
দুপুর : কে সে?
ফারহিন : কাবিল ওর নাম। অন্ধকার জগতের রানী লিলিথ এর ডানহাত বলা চলে। আমার নীধার পিছনে সব সময় লেগে থাকতো। ও যেহেতু এখানে আছে সুতরাং নীধাও এখানে আছে।
কৌশিক : আচ্ছা লাশ গুলো ভ্যানে করে কোথাও নিয়ে যায়? তোদের কি কিছু সন্দেহ হচ্ছে না?
আসফাক : পুতে ফেলবে হয়তো।
দুপুর : আমার মনে হয় না। টাকা দিয়ে আসলে খেলা না, হয়তো খেলার মাধ্যমে লাশ সংগ্রহ করা হচ্ছে।
আসফাক : লাশ দিয়ে কি করবে?
ফারহিন : সেটা জানতে হলে ওর পিছু পিছু যেতে হবে আমাদের।
লাশের ভ্যানের পিছু নেয় এই চারজন। আকাবাকা জংগলের পথ দিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে ভ্যানের পিছু পিছু যায় ওরা। ভ্যানটি ধিরে ধিরে আরো জংগলে, গহিন জংগলে ঢুকে যায়। একসময় থেমে যায় ভ্যানটি।
আসফাক : থেমে গেলো কেনো? আমাদের তো দেখে ফেললো না আবার।
কৌশিক : আমারা তো লুকিয়ে আছি দেখবে কিভাবে।
দুপুর : দেখ! লাশটি নামাচ্ছে।
দুইজন লাশটিকে নামায়। তারপর ছোট একটা সুরুংগপথে ঢুকে যায়।
মিনিট পাচেক পর।
ফারহিন একা সামনে যায়। কারন ফারহিন কে কেউ দেখতে পাবে না। তাই সে আগে যাবে এবং পরিস্থিতি অনুকুলে থাকলে বাকিদের আসার জন্য ইশারা দিবে।
ফারহিনের গ্রীন সিগনাল নিয়ে এগিয়ে যায় ওরা। ভিতরে ঢুকে পরে। এরপর আরো ভিতরে।
এখানে ছোট খাটো একটা গোডাউনের মত। কয়েকটা রুমও হবে মনে হয়। একটা রুমের দরজা দিয়ে উকি দিয়ে দেখলো দুপুর। তার কিছুখনের মধ্যে বমি শুরু করলো। সরে আসলো ও ওইখান থেকে। ফারহিন রয়ে গেলো সেখানে।
কৌশিক : কি হয়েছে এমন যে বমি আসছে?
দুপুর : ওরা ওই লাশটাকে কেটে টুকরো টুকরো করছে। আমরা যেভাবে গরু জবাই করে মাংসের পিস করি। কি বিভতস দৃশ্য।
আসফাক : এই লুকা। কে জেন আসছে।
ওরা ৩ জন লুকিয়ে পরে। আর দেখে পথটি দিয়ে আসছে কাবিল আর সাথে একজন।
কাবিল ঐ রুমে ঢুকে আর একটু পর বের হয়ে আসে ২টি বালতি নিয়ে। বালতি গুলো তে ওই লোকটির মাংশ। তারপর এগুতে থাকে। পিছনে পিছনে ওরা চারজন আরালে আগায়।
একটা বিশাল রুম চারপাসে লোহার খাচা। ভিতরে অদ্ভুদ চিতকারের শব্দ।
কৌশিক : এই এগুলা তো জিম্বু। মানে মানুষ রুপি সেই হিংস্র প্রানী। কি বিশ্রি অবস্থা রে।
ফারহিন : এখন বুঝছি ওই মরন খেলা কিশের জন্য। এই জিম্বুদের খাবার জোগানোর জন্যই এতো হিংস্রতা।
বালতি থেকে টুকরো গুলো ছুরে ছুরে মেরে দিচ্ছে আর খুদার্থ জিম্বুগুলো সেগুলা কুরিয়ে নিয়ে খাচ্ছে।
সেখান থেকে বের হয়ে আসে কাবিল। কাবিলের আসা দেখে ওরা একটা রুমে ঢুকে একটা কালো কাপরে ঢাকা কিছুএ ভিতর লুকিয়ে পরে। চারজন একটার ভিতর।
দুপুর : আচ্ছা আমরা তো চারজন তাই না?
আসফাক : হ্যা।
দুপুর : কিন্তু এখানে তো ৫ টা বডি। আর একজন কে?
আসফাক : এক, দুই, তিন, চার, পা...........চ। (একটু থেমে থেকে) এটা কে?
 ফারহিন : এটা ওই জিম্বুগুলোর প্রান পাবার আগের দেহ।
দুপুর: মানে?
 ফারহিন : মানে আমরা যেগুলোকে জিম্বু মনে করছে আসলে সেগুলো জিম্বু না। এগুলো লিলিথের কালোজাদুর কোন ফসল। এই বডির ভিতরই লিলিথ কালো জাদু প্রয়োগ করেবে।
কৌশিক : চুপ চুপ কে জেন আসছে।
দুইজন লোক একটা মেয়েকে টেনে হেচরে নিয়ে আসে। মেঝে তে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। তারপর সেখানে আসে কাবিল।
ফারহিন : এই, এইতো আমার নীধা
দুপুর : এটা নীধা। ওকে এখানে কেনো নিয়ে আসলো?
 কাবিল নীধার কাছে এসে নিধাকে চুমু দিতে যাবে তখন নীধা কাবিলের গালে চর মারে। ঠিল তখন ফারহিন চিৎকার দিতে যাবে আর ওই সময় কৌশিক ফারহিনের মুখ চেপে ধরে।
কৌশিক : চুও করো। ধরা পরতে চাও নাকি। একদম চুপ। ওকে তো আর মেরব ফেলছে না।
ফারহিন চুপ করে। তবে ওকে শক্ত করে জোর করে ধরে রাখে কোশিক।
নীধার হাতে চর খেয়ে কাবিল ক্ষিপ্ত হয়ে নীধার গাল জোরে চেপে ধরে কাবিল।
কাবিল : এতো দেমাগ কিশের তোর? দুই দিন পরতো আমাকেই তোর বিয়ে করতে হবে।
নীধা : মরে গেলেও আমি তোকে বিয়ে করবো না।
কাবিল : তাহলে তোকে মরতেই হবে।
কাবিল কথাটি বলে একটা ছুরি বের করে নীধার হাতে পোচ দেয়। ঝরঝর করে রক্ত পরতে থাকে। একজন একটা বাটি নিয়ে এসে সেই রক্ত সংগ্রহ করে বাটিতে। ঐদিকে ফারহিন ঝাপটাঝাপটি করছে। কিন্তু দুপুর কৌশিক আর আসফাক এমন ভানে ওকে জোরে ধরে রখেছে যে সে নরচে চরতে আর শব্দও করতে পারছে না।
নীধা জ্ঞ্যান হারিয়ে ফেলে। আগের দুজনই আবার নীধাকে টেনে হেচরে নিয়ে যায়। তারপর কাবিল বাটিটি নিয়ে সামনে এগোয়। আসতে থাকে দুপুরদের কাছে
আসফাক : ওই দিকে আসছে কেনো?. ধরা পরে যাবো নাকি?
দুপুর : চুপ করে থাক।
কাবিল দুপুরদের পাসে থাকা আরেকটি কাপর ছিল সেটি সরায়। বের হয়ে আসে একটি উলঙ্গ নিথর দেহ। কাবিল সেই দেহটির মাথায়, ঠোটে, কানে,নাকে, লজ্জাস্তানে, এবং পায়ের তালুতে নীধার রক্ত মেখে দেয়। এবং মন্ত্র পরা শুরু করে।
আজব হলেও সত্য যে এই নিথর দেহটি ধিরে ধিরে যেন প্রান ফিরে পায়। দারানো থেকে পরে যায়। পরে গিয়ে চেষ্টা করে দারানোর জন্য। অনেকচেষ্টার পর দাঁড়ায় সে। হিংস্র হিয়ে যায়। কাবিলের দিকে তেরে যায়। কাবিল দূরে সরব গিয়ে মুচকি হাসে। আর তখন পিছন থেকে দুই জন এসে বেধে নতুন এই জিম্বুটিকে নিয়ে যায়। আর কাবিলও বের হয়ে যায় হাসিমুখে রুম থেকে।
ফারহিন : যে ভাবে হোক নীধাকে উদ্ধার করতে হবে। তানাহলে ওরা ওকে মেরেই ফেলবে।
দুপুর : কিন্তু কিভাবে আমরা ওকে মুক্ত করবো?
 কৌশিক : আমরা তো জানিই না ও কোথায় আছে।
ফারহিন : খুজতে হবে।
আসফাক : খুজলে পাবো। কিন্তু এই অচেনা জায়াগায় কোথায় ওকে লুকিয়ে রাখবে সেটা খুজে পাওয়া মুসকিল আর ঝুকিও আছে।
ফারহিন : দুপুরের গল্পে ছিল যে এখানকার সবচাইতে বড় বাড়িটাতে আটকে রাখা হয়। সো সব কিছু যেহেতু ওই গল্পের শুত্র ধরে হচ্ছে তাহলে আমার মনে হয় ঐ শুত্র ধরে আমরা প্রত্যেক বাড়িতে না খুজে শুধু এই গ্রামের সব চেয়ে বড় বাড়িটাতে খুজি। কি বলো?
দুপুর : আইডিয়া খারাপ না।
আসফাক : আমার মনে হয় আগে এখান থেকে বের হওয়া দরকার। কখন যে আবার ধরা খাই কে জানে।
কৌশিক : হ্যা এখনি চলো।
চারজন ধিরে ধিরে বের হচ্ছে। কৌশিক হাটতে গিয়ে একটা বালতির সাথে ধাক্কা খায় আর তাতে শব্দ হয়। যেহেতু নির্জন আর নিরিবিলি জায়গা তাই শব্দ হয় অনেক। পাশের একটা রুম থকে একজন বের হয়ে বলতে থাকে কে কে।
ওরা চারজন জন লুকিয়ে পরে একটা কাঠের দরজার পিছনে।
ওই লোকটি হাতে একটা ছুরি নিয়ে আস্তে আস্তে পা ফেলে খুজতে থাকে। কোনভাবে বুঝে গেছে যে এখানে কেউ আছে। লোকটি খুজতে খুজতে দারজার কাছে চলে আসে। এখন দরজাটি নারাতে গেলেই ধরা পরে যাবে। লোকটি দরজায় হাতে দিয়ে সরানোর সাথে সাথে ফারহিন একটা লোহা তার পেটের ভিতর ঢুকিয়ে দেয়। আর লোকটি খারা হয়ে মাটিতে ধপাস করে পরে যায়।
আসফাক : কি করলে ফারহিন তুমি এটা? একটা মানুষকে খুন করে ফেললে?
ফারহিন : জান বাচানো ফরজ। আরো লোকজন আসার আগে চলো পালাই।
দুপুর : চলো।
আবার এগুতে থাকে। বের হয়ে আসে সেই গুপ্ত গুহা থেকে।
তারপর জংগল পেরিয়ে গ্রামে ফিরে আসে।
আসফাক, দুপুর আর কৌশিক কালো জামা পরা। আর ফারহিনতো অদৃশ্যই আগের মত।
পুরো গ্রামের চারিদিক ঘুরেও এমন কোন বড় বাসা খুজে পায় না।
দুপুর : ভাই কই গেলো আপনার সেই বাড়ি? খুজতে খুজতে ক্লান্ত হয়ে গেলাম তো।
ফারহিন : পুরো গ্রামের চারিদিক তো খুজলাম। তাহলে কোথায় সে বাড়িটা।
কৌশিক : গ্রামের চারিদিক খুজেছি কিন্তু আমরা গ্রামের মাঝখানে কিন্তু এখনো যাইনি। ঐখানেও হতে পারে।
ফারহিন : সেটাই তো। আমরা এই ভুল কিভাবে করলাম?
কৌশিক : আচ্ছা চলো যাই।
আসফাক : ধুর যাওয়া যায়ি পরে। খুদা লাগছে আগে খাওয়োনের ব্যাবস্থা কর।
দুপুর : কথা খারাপ না। চলো বাজারে যাই, কিছু কিনে নিয়ে আসি। এখানে তো তখন দেখলাম আমাদের টাকারই প্রচলন।
আসফাক : চল।
সবাই মিলে বাজারে যায়। বাজারে গিয়ে দেখে সব কাচা খাবার। যেমন: কাচা মাংস, শামুক, সাপ, কাচা শাক, চাল, মাছ। ফলমুলও তেমন নাই।
তারপর ওরা সিদ্ধান্ত নেয় যে তারা চুরি করেও হলেও এখন খাবার জোগার করতে হবে।
গাছ বেয়ে একটা ঘরের ভিতর ঢুকে পরে ওরা। সেখানে একটা হাড়িতে কিছু সবজি রান্না করা ছিল। চারজন মিলে সেই সব খাবার সাবার করে দেয়।
মাথা ঝিমঝিম করছে আর প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে চারজনের। ধিরে ধিরে চোখ বন্ধ হয়ে সব কিছু অন্ধকার হয়ে যায়। জ্ঞ্যান হারিয়ে ফেলে।
জ্ঞ্যান ফিরলে এদের মধ্যে তিনজন দুপুর, কৌশিক, আর আসফাক নিজেদের অবিস্কার করে একটা বন্ধ ঘরে। বাশের তৈরি একটা রুমে আটকে রাখা হয়েছে।
দুপুর : আমরা এখানে আটকে গেলাম কিভাবে?
আসফাক : আমরা যে ওই খাবার ওই খাবারে মনে হয় কোন ঝামেলা ছিল। মাথাটা যেন কেমন করছিল। তারপর মনে হয় আমরা সবাই জ্ঞ্যান হারিয়ে ফেলি আর তারপর ধারা খেয়ে এখানে।
কৌশিক : সেটাই হবে।
দরজা খোলার শব্দ। রুমের ভিতর প্রবেশ করে ৩জন লোক। তারা আসফাক, দুপুর, ফারহিন কে হাত বেধে নিয়ে যায়। গাছ থেকে নামায়। সেখান থেকে একটা ভ্যান গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যেতে থাকে জংগলের মধ্য দিয়ে।
কৌশিক : আমার তো মনে হচ্ছে আমাদের সেই গুহায় নিয়ে যাচ্ছে। রাস্তা তো ঐটাই।
আসফাক : আমাদেরও কি খুন করে ঐ জন্তু গুলোকে খাওয়াবে?
দুপুর : মনে হচ্ছে সেই রকমই কিছু ঘটতে যাচ্ছে আমাদের সাথে।
চলে আসে গুহার সামনে। ওদের তিনজনকে ভ্যান থেকে নামিয়ে হাটিয়ে নিয়ে যায় গুহার ভিতর। সেখানে একটা বড় রুমে নিয়ে যায়।
অন্ধকার রুমে বাতি মাঝখানে একটি মাঝ বয়সি সুন্দরি মহিলা বসে আছে আগুনের সামনে। সেখানে এই তিনজনকে নিয়ে যাওয়া হয়।
ঐখানে নিধাও আছে।
টেনে হেচরে ফেলে দেয় মেঝে তে তিনজনকে।
লিলিথ : তোমরা এই খানে এসেছো কেনো আর কিভাবে?
দুপুর : আমরা ঐ টিলায় এসেছিলাম। হটাত কিছু অদ্ভুত প্রানী আমাদের তারা করে তারপর ঐখান থেকে পরে যাই এবং এখানে চলে আসি।
লিলিথ : অদ্ভুদ প্রানী? তারা নিশ্চয় কাছে পেলে তোমাদের জানে মেরে ফেলতো?
দুপুর : হ্যা তাতো বটেই।
লিলিথ : কাবিল, এদের যেহেতু ওই অদ্ভুদ প্রানী গুলো পছন্দ করেছে তাহলে তাদেরকে ঐ প্রানীদের খাবার হিসেবে তাদের কাছে প্রেরন করা হোক। আর নীধা কেও সেখানে রাখার ব্যাবস্থা করো। এইখানে রাখলে যে কোন সময় অদৃশ্য পুরুষ ফারহিন এসে ঝামেলা পাকাতে পারে।
আসফাক : আপা আমরা ভুল করে চলে আসছি। প্লিজ মাফ কইরা দেন আমাকে।
লিলিথ : কোন মাফ নাই। তোরা নিজেরা মরতে এসেছিস। তোদের মরতে হবে।
কাবিল তার ৪ জন সংগীকে নিয়ে নীধা, দুপুর, কৌশিক আর আসফাক কে নিয়ে যায়। আবার সেই একটা ভ্যান গাড়ির মত গাড়িতে করে জংগলের আকাবাকা পথ দিয়ে সেই গুপ্ত গুহায় নিয়ে যায়।
একটা রুমে নিয়ে যায়।
কাবিল : তোমাদের এখন এখানে হত্যা করা হবে, তারপর তোমাদের কেটে টুকরো টুকরো করে তোমাদের দেখা সেই অদ্ভুদ প্রানীর খাদ্য হিসেবে তাদের মাঝে বন্টন করা হবে। হাহাহহাহাহাহাহাহাহাহহাহাহা
কৌশিক : আমরা কি এমন করেছি যে আমাদের সাথে এমন করছেন আপনারা? এই সুন্দর মেয়েটাকেও মেরে ফেলবেন?
কাবিল : এতো সত কিছু জানিনা। লিলিথের হুকুম তাই তোদের মরতে হবে। আর নীধাকে মারবো কেনো কপালপোরা রা? ও তো আমার হবু বউ। আর ওকে দিয়েই তো আমরা এই পৃথিবীতে আমাদের অন্ধকার রাজ্য প্রতিষ্টা করবো।
নীধা : কখনোই সম্ভব না।
কাবিল : চুপ। এই ছোরা টা দে। ওদের কাজটা শেষ করি।
একজন কাবিলের হাতে বড় একটি ছোরা তুলে দেয়। কাবিল সেটা নিয়ে দুপুরের দিক আগায়। কাবিলের সহযোগী একজন এসে দুপুর কে ধরে সুয়িয়ে ফেলে। কাবিল ছোরা নিয়ে দুপুরের গলায় আঘাত হানবে আর এমন সময় কাবিল ধপাস করে পরে যায়।
কৌশিক : ফারহিন
নীধা : বাবু তুমি এসেছো প্লিজ আমাকে বাচাও।
ফারহিন অদৃশ্য তাই কাবিলের সহযোগিরা কেউ ওকে দেখছে না। আর এই সুজোগ নিয়ে ফারহিন এক এক করে ওদের আঘাত করতে থাকে। আর ওরা চিৎকার করে কে কে বলতে থাকে।
ফারহিন দুপুরের হাতের বাধন খুলে দেয়। তারপর দুপুর আর ফারহিন মিলে বাকি সবাইকে মুক্ত করে। আর কাবিলের সহযোগিদের ছোরা দিয়ে পেটের ভিতর কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে ফারহিন। তারপর সাবধানে বেরিয়ে আসে সেখান থেকে। তারপর যে পথ দিয়ে এই গ্রামে এসেছিল সেই পথ আর গুপ্ত গুহার পথ দিয়ে অনেক কষ্ট করে সাধারন জনপদে ফিরে আসে। আপাতত মুক্তি পায় নীধা লিলিথের কাছ থেকে।
সেই দিনই ঢাকা চলে আসে ৫ জন। দুপুর, কৌশিক, আসফাক, নীধা আর অদৃশ্য ফারহিন।
জলদি বিয়ে দিতে হবে ফারহিন আর নীধাকে। সেই অনুযায়ী ব্যাবস্থা নেয় বাকি তিনজন। এক পুর্নিমা রাত দেখে বিয়ের আয়োজন করে। কিন্তু ওদের বিয়ে দেওয়া টা এতো ইজি ভাবে নেওয়া যাবে না। যে কোন সময় লিলিথ এসে ঝামেলা করতে পারে। ঝামেলা করারই কথা, কারন লিলিথের ডান হাত কাবিলকে মেরে ফেলা হয়ছে। প্রতিশোধ নিতে হলেও সে আসবে।
দুপুর ও কম নয়। সে ফারহিন এর কাছে থেকে ত্রান্তিক বাবার আস্রমের ঠিকানা নিয়ে সেখানে গিয়ে তার ২ শিষ্য সুরুজ কিচরা আর ওলি কিচরা কে নিয়ে আসে ঢাকায়। বিয়ের আয়োজন শুরু হয়। আয়োজন বলতে আবার ঢাক ঢোল পিটিয়ে, চারিদিকে আলোর মেলার আয়োজন করে বিয়ে সেই রকম কিছু না। ফারহিন, নীধা আর দুপুরের কিছু কাছের বন্ধুদের ডাকা হয় বিয়েতে।
সুরুজ আর ওলি আসার পর থেকেই দুপুরদের পুরোবাড়ি কালো জাদুর মাধ্যমে বাড়ীটি বন্ধক করায় ব্যাস্ত। অনেক মন্ত্র ত্রন্ত আর বিভিন্ন লোহা বাড়ির চারপাশে গেরে বন্ধক করা হয় বাড়ি। অন্তত বিয়ে পরানোর সময় লিলিথ বা কোন অপশক্তি এসে এর ভিতর ঝামেলা করতে পারবে না।
লোকাল একটা কাজিকে ডাকা হয় সন্ধ্যার পর। তারপর শুরু হয় বিয়ের কার্যক্রম। কাজী এসে বড় কে প্রথমে দেখতে না পেয়ে বিয়ে পরাতে রাজী হয় না। তারপর ত্রান্তিক শিষ্য ওলি ফারহিন কে একটা কালো কাপর দিয়ে ঢেকে দিয়ে তার অবস্থান কাজীকে দেখায়। কাজী ভয় পেয়ে যায়। ভয়ে ভয়ে কাজী বিয়ের পরানো শুরু করে।
ফারহিন আর নীধা দুজনেই কবুল বলে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। এখন থেকে তার স্বামী স্ত্রী।
দুপুরের নিজেত রুমে সাজানো হয়েছে ফারহিন আর নীধার বাসর ঘর। ফুল দিয়ে পুরো রুম সাজিয়েছে কৌশিক আর আসফাক।
ফারহিন রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়। আস্তে আস্তে হেটে গিয়ে বিছানার এককোনায় বসে। নীধা বিছানা থেকে নেমে ফারহিনকে পায়ে ধরে সালাম করে।
ফারহিন : আরে বোকা মেয়ে কি করছো এই সব? এই যুগে কি কেউ এগুলা করে?
নীধা : স্বামীর সম্মান আগেও আগেও ছিল এখনো আছে আর ভবিষ্যতেও থাকবে (ফারহিনের বুকে মাথা গুজে দেয়)।
ফারহিন : তাহলে স্ত্রী কি পাবে এই রাতে? স্বামী সম্মান পেলে স্ত্রীরও তো কিছু পাওয়া উচিত তাই না?
নীধা : হুম পাবে।
ফারহিন : কি সেটা?
নীধা : স্বামীর আদর।
ফারহিন মুচকি একটা হাসি দিয়ে নীধার ঠোটে চুমি দেয়। ধিরে ধিরে পুরো মুখে, গালে চুমি দেয়। কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় যায়।
নীধার সারা শরীরে আদর করে ফারহিন। নীধাও প্রতিদানে আদর দেয় ফারহিনকে। একসময় দুজন দুজনে একেবারে মিশে গিয়ে মেতে উঠে প্রাচিন আদম খেলায়। শারিরিক সুখ পরিপুর্ন করে দুজন দুজনকে জরিয়ে ধরে শুয়ে থাকে। ঘুমিয়ে পরে।
দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। খট খট খট খট।
নীধার ঘুম ভেংগে যায়।
নীধা : এই ফারহিন, ফারহিন উঠো।
ফারহিন : কি হয়েছে?
নীধা : দেখো কে জেনো দরজায় কড়া দিচ্ছে।
ফারহিন : (চিৎকার করে) কে কে? কাকে চাই?
দরজায় করা নাড়ার শব্দ। কিন্তু কোন কথা বলছে না। ফারহিন নীধাও চুপ করে আছে।
নীধা : আপনি কে? না বললে দরজা খোলা হবে না।
ফারহিন : আজিবতো। দারাও আমি দরজা খুলে দেখি কে।
নীধা : না না না। তুমি যাবে না। হয়তো লিলিথ আমাদেত শেষ করতে এসেছে।
ফারহিন : ত্রান্তিকের শিষ্যদের দিয়ে এই বাড়ি বান করে দেওয়া আছে। খারাপ কিছু ঢুকতে পারবে না।
নীধা : তাহলে কে?
ফারহিন : আচ্ছা আমাদের বাসরের রাতেই তো বুড়ি মা আসার কথা, সে আসলো নাতো আবার।
নীধা : সেটাও হতে পারে।
ফারহিন গিয়ে দরজা খুলে দেয়। খুলে দেখে একজন কুজো বুড়ি দারিয়ে আছে।
নীধা ফারহিনের থেকে একটু পিছনে দাঁড়িয়ে ছিল। বুড়ি ফারহিন কে নিয়ে একটু দূরে সরে যায়। তারপর ফারহিন আর বুড়ি কথা বলে। বুড়ি ফারহিনের কাছে একটা ব্যাগের মত কিছু দেয়। তারপর বুড়ি পিছন দিকে হাটা দিয়ে হাওয়ার সাথে মিশে যায়।
নীধা : কি বললো বুড়ি?
ফারহিন : চিটাগাং যেতে বললো। সেখানে একটা মন্দির থেকে একটা ফুল সংগ্রহ করে সেই ফুল নিয়ে একটা লেক আছে সেখানে তোমাকে আর আমাকে একডুব দিয়ে আকটি পাথর উঠাতে হবে। তাহলেই লিলিথ ধংস হবে আর আমরা মুক্তি পাবো।
নীধা : তাহলে আমরা এখন কি করবো?
 ফারহিন : আর কি। চলে যাবো সেখানে কাল।
নীধা : হ্যা কাল সকালেই ওদের সবাইকে বলে আমরা বিদায় নিয়ে চলে যাবো।
ফারহিন : কাউকে বলতে হবে না। বুড়ি বলেছে সাবধানে কাজ করতে। সো কাউ কে কিছু বলতে হবে না।
নীধা : ওরা আমাদের এতো সাহায্য করলো আর আমরা যাওয়ার আগে একবার ধন্যবাদও দিয়ে যাবো না।
ফারহিন : বাবু তুমি বুঝতেছো না কেনো? আমরা তো আর একেবারে চলে যাচ্ছি না। আমরা সব কিছু ঠিক করে ফিরে এসে ওদের সাথে আবার দেখা করবো।
নীধা : তুমি যেটা ভালো মনে করো সেটাই হবে।
ফারহিন : এই তো আমার লক্ষি বঊ, সোনা বউ। এখন চলো ঘুমাই।
কথা বলতে বলতে ফারহিন নীধাকে চুমু দেয়, কামর দেয়। কোলে কোরে নিয়ে আবার বিছানায় সোয়ায়। আদর করে। তারপর আবার দুজন দুজনে মিশে যায়।
খুব ভোরে কাউকে কিছু না বলে বাসা থেকে বের হয়ে চিটাগাং এর উদ্দ্যেশ্যে রওনা হয় ফারহিন আর নীধা। কাউন্টারে গিয়ে দুটো বাসের টিকিট কিনে নীধা। ঠিক ঠাক মত বাসে গিয়ে বসে। বাসের অন্যান্য যাত্রীগন দেখছেন নীধা দুটি সিট নিয়ে একা বসে আছেন। কিন্তু না সেখানে আছে ফারহিন। যাকে নীধা ছাড়া বাসের অন্য কেউ দেখতে পাচ্ছে না।
সকাল ৮ টায় কলাবাগান থেকে বাস ছেরে দেয়।
নীধা : আচ্ছা মনে পরে তোমার?
ফারহিন : কি?
 নীধা : এই ধানমন্ডি লেকে তুমি প্রথম আমার সাথে কথা বলেছিলে। আমি খুব ভয় পেয়েছিলাম।
ফারহিন : হ্যা মনে পরে। তুমি বিশ্বাস করতেই চাইছিলে না যে আমি অদৃশ্য। তোমার ভয় ছিল যদি কেউ দেখে ফেলে তোমাকে কোন ছেলের সাথে আর বাসায় গিয়ে বলে দেয়। হহাহহহহহহাহ
নীধা : এই পাজি ছেলে হাসবে না কিন্তু।
কন্ডাকটর : আফা আমি কি করছি?
নীধা : আপনি কি করছেন আমি কিভাবে বলবো?
কন্ডাকটর : এই যে আপনি আমাকে পাজি ছেলে বললেন।
নীধা : আরে আপনাকে বলি নাই। আমি বরকে বলেছি।
কন্ডাকটর : কোথায় সে?
নীধা : এই যে পাসেই আমার।
কন্ডাকটর : আফা আপনি প্লিজ আজ বাস থেকে নেমে ডাক্তারের কাছে যাইয়েন।
নীধা : (রেগে গিয়ে) এই ছেলে তোমার কাছে শুনতে হবে যে কোথায় যাবো? যাও এই খান থেকে।
ফারিহিন : (আস্তে করে) আরে আরে থামো। পাগলি মেয়ে ওরা কি আমাকে দেখতে পায়। আমি যে অদৃশ্য।
নীধা : কেনো দেখতে পায় না।
ফারহিন : খুব তারাতারিই দেখতে পাবে যদি তুমি সাহায্য করো।
নীধা : কি সাহায্য? কি করতে হবে বলো, আমি তোমার জন্য সব করতে রাজি আছি।
 নীধা ফারহিনের কাধে মাথা রাখে। আসেপাসের লোকজন নীধাকে দেখে হাসাহাসি করছে।
৪টার সময় চিটাগাং আসে ওরা। বাস থেকে নেমে একটা হোটেলে উঠে নীধা আর ফারহিন। নীধার নামে হোটেল বুক করা হয়।
হোটেলে গিয়ে ক্লান্ত শরিরে ঘুমিয়ে পরে নীধা। ফারহিন বের হয় রুম থেকে।
নিধার ঘুম ভাংগে রাত ৯ টার দিকে। উঠে সে ফারহিনকে পায় না। ফ্রেস হয়ে বের হয়। হোটেলে অনেক কে জিজ্ঞেস করে ফারহিনের কথা, তারা ঐ রকম কাউকে দেখতে পায়নি। নীধার মনে পরে ফারহিন অদৃশ্য, তাকে কেউ দেখতে পায় না। বাইরে বেশ কিছুখন খোজাখুজি করে। কোথাও পায় না। রুমে ফিরে আসে। ভেবেছিল রুমে এসে খুজে পাবে ফারহিনকে কিন্তু এখনো আসেনি ফারহিন।
ভয় পেতে শুরু করে নীধা। ওরা তো আমার ফারহিনের কোন ক্ষতি করেনি আবার। বা অন্য কোন বিপদে পরলো না তো। ধুর কি করবো কিচ্ছু বুঝছি না।
কেদে ফেলে নীধা। বাচ্চাদের মত করে কাদতে শুরু করে। হটাত মনে পরে দুপুরের কথা। ব্যাগ থেকে ফোন বের করে নিধা দুপুরকে ফোন দেয়।
দুপুর : হ্যালো কে?
নীধা : দুপুর আমি নীধা।
দুপুর : ওহ নীধা! কোথায় তোমারা? সকালে কোথায় উধাও হয়ে গেলে?
নীধা : সরি ভাইয়া। তোমাদের না বলে চলে আসতে হয়েছে।
দুপুর : কোথায় তোমরা? কোন সমস্যা?
নীধা : আমরা চিটাগাং। রাত ১ টা বাজে কিন্তু ফারহিনকে খুজে পাচ্ছি না।
দুপুর : কোথায় গেছে ও? আর তুমি কোথায়?
নীধা : আমরা হোটেল গোল্ডেন ইন এ আছি। প্লিজ তুমি কিছু করো।
দুপুর : আচ্ছা আমি সকালেই চিটাগাং আসছি।
নীধা : প্লিজ।
ফোন কেটে দিয়ে আবার কান্নাকাটি শুরু করে। এমন সনয় দরজা নারা কাটে। খুলে দেখে ফারহিন। গায়ে কিছু ময়লা জরিয়ে আছে।
নীধা : (কান্নাজরিত রাগান্বিত কন্ঠে) ঐ তুই কোথায় গেছিলি? আমাকে কি হার্ট এট্যাকে মেরে ফেলতে গিয়েছিলি? তোর আজ খবর আছে। ( নীধা ফারহিনকে জরিয়ে ধরে)
ফারহিন : সরি বাবু শোনা। তুমি ঘুমাচ্ছিলে তাই ডাক দেইনি।
নীধা : এই রকম আর কখনোই করবে না।
ফারহিন : এই দেখো তোমার জন্য কি নিয়ে এসেছি। ( ফারহিন পকেট থেকে কিছু একটা বের করে নীধার সামনে ধরে)
নীধা : এটা কি পাথর? অনেক সুন্দর পাথরটা। কোথায় পেলে? আমাকে দেবে এটা?
ফারহিন : এটা আমাদের মুক্তির পাথর। যেমন দেখতে সুন্দর এটা ঠিক তেমন এইটার কাজ। আর মনে পরে গতকাল বাসর রাতে একবুড়ি এসেছিল? সেই এই পাথরের সন্ধান দিয়ে গেছে। আর এটার আরো একটি পাথর বাকি আছে সেটা একমাত্র তুমিই উদ্ধার করতে পারবে। আর উদ্ধার করতে পারলেই আমরা মুক্তি। মুক্তি পাবে অদৃশ্য পুরুষত্ব এর অভিষাপ।
নীধা : চলো এখনি নিয়ে আসি ভাকি পাথরটা। যত দ্রুত মুক্তি হয় ততই ভালো। জানো শোনা আব্বু আম্মুকে খুব মিস করছি।
ফারহিন নীধাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে বলে হ্যা আজই যাবো, এক্ষনি যাবো বাবু। সব ঠিক হয়ে যাবে।
হোটেল থেকে বের হয়ে আসে ফারহিন আর নীধা। বের হয়ে নীধা একটা রিক্সাভারা করে। ফারহিন আগেই বলে দিয়েছিল নীধাকে ফয়েজলেক এর সামনে রিক্সাভাড়া করার কথা।
রিক্সাওয়ালার একটা ফোন আসে, সে একটু দূরে গিয়ে ফোনে কথা বলে।
আর এই সুজোগে নীধা ফারহিনকে চুমু দেয়।
রিক্সাওয়ালা এলে রিক্সা চলতে থাকে। ফয়েজ লেকের কাছাকাছি আসলে রিক্সা থেমে যায়। আর তখন পাস থেকে আরো দুইজন লোক এসে নীধার সামনে ছুরি ধরে।
অজ্ঞাত : ঐ মেয়ে যা আছে দিয়ে দে।
নীধা ঝামেলা এরাতে মোবাইল, ব্যাগ, গলার চেইন খুলে দেয়।
অজ্ঞাত : এই বার তুই চল।
ওরা নীধার হাত ধরে টানাটানি করে। ফারহিন এতোখন চুপ থাকলেও এখন আর চুপ নেই। তার কলিজার টুকরা বউএর হাত ধরে টানাটানি করছে। সে রিক্সা থেকে নেমে পাসের একটা রড দিয়ে তিন জনের মাথায় আঘাত করে এবং তিনজনই সুয়ে পরে। তারপর ফারহিন আর নীধা হাটা ধরে।
একটা গোপন পথ দিয়ে ফয়েজলেকের ভিতরে ঢুকে দুইজন। একদম নির্জন চারিপাশ। লেকের একেবারে কোনায় একটা জায়গায় লেকের ধারে গিয়ে থামে।
নীধা : ফারহিন জায়গাটা আমার কেমন জানি লাগছে, খুব ভয় হচ্ছে।
ফারহিন : আরে পাগলি ভয় কিশের? আমি আছি না।
নীধা : না মানে
ফারহিন : ধুর কিশের মানে। শোন। বাকি পাথরটি লেকের এই পাসেই পানির কোন এক জাগায় লুকিয়ে আছে। তোমাকে সেটা একডুবে এখান থেকে তুলে আনতে হবে।
নীধা : এই অন্ধকারে আমি কিভাবে খুজবো ঐটা।
ফারহিন তার পকেট থেকে পাথরটি বের করে নীধার হাতে গুজে দেয়।
ফারহিন : তুমি এই পাথরটি নিয়ে পানিতে ডুব দিলেই এই পাথর এবং লেকে থাকা পাথরটি নিলাভ আলোয় জলে উঠবে। তখন খুব সহজেই খুজে পাবে পাথরটি।
নীধা : আচ্ছা। আমি চেষ্টা করে দেখি।
নীধা পাথরটি হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখে। তারপর লেকের দিকে এগিয়ে যায়। ধিরে ধিরে পানিতে নামতে থাকে। গলাফুটি পানিতে নামে। ফারহিনের দিকে একবার তাকায় তারপর ডুব দেয়।
ডুব দেওয়ার সাথে সাথে পানি থেকে নীলাভ আলো ছড়িয়ে পরতে থাকে। ফারহিনের মুখে মৃদ হাসি ফুটে উঠে।
কিছুখন পরেই নীধার উপরে উঠে আসে মতার হাতে এখন দুটি পাথর।
নীধা ক্লান্ত হয়ে পরেছে। তবে মুখে তৃপ্তির হাসি রয়েছে।
ফারহিন : পেয়েছো শোনামনি?
নীধা : হ্যা জাদুমনি। এই নাও তোমার পাথর। আর এখনি অদৃশ্য পুরুষ থেকে সদৃশ্য পুরুষে রুপান্তরিত হয়ে আমাকে ধন্য কর।
ফারহিন ছোট্ট করে একটা হাসি দেয় পাথর পেয়ে ।
 নীধা : আমার খুব পানি পিপাসা পেয়েছে। একটু পানি পেলে খুব ভালো হতো।
ফারহিন : আচ্ছা বাবু তুমি এখানে বসো। আম পানি নিয়ে আসছি। সামনে ব্যাবস্থা আছে।
নীধা : দারাও আমিও আসি।
ফারহিন : নাহ তোমাকে যেতে হবে না। তুমি খুব ক্লান্ত। বরং তুমি এখানে বসে রেষ্ট নাও। আমি পানি নিয়ে আসছি।
নীধা : আচ্ছা ঠিক আছে। তারাতারি এসো কিন্তু।
ফারহিন যায় পানি আনতে। নীধা সামনের লেকের দিকে তাকায়। খুব খুশি মনে হচ্ছে তাকে। ছোট গলায় সে গান ধরে।
পিছন থেকে হটাত মাথায় কে যেনো আঘাত করে নীধাকে। নীধা বসা থেকে সুয়ে পরে। হাত পা অবশ হওয়ার মত অবস্থা তার। নারাতেই পারছে না।
উল্টো দিকে তাকিয়ে নিধা অবাক। ফারহিন মোটা একটা কাঠ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এটা দিয়েই সে নীধাকে আঘাত করেছে।
নীধা : কেনো করছো এই রকম? কি দোষ ছিল আমার।
ফারহিন হাটুগেরে বসে পরে। নীধার হাত ধরে।
ফারহিন : সরি সোনা বউ আমার। তোমার মৃত্য ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না। আমাকে মাফ করে দিও।
নীধার গলা দিয়ে কথা বের করতে কষ্ট হচ্ছে। তবু কি যেন বলতে চাচ্ছিল। এটুকু বোঝা যাচ্ছিল যে মা নিয়ে কিছু বলতে চাইছিল। সে মাকে মিস করছিল বা তাকে দেখতে চায় হয়তো এমন কিছু।
তার আগেই ফারহিন একটা ছুরি বের করে নীধার গলার রক্তনাকি বড় করে কেটে দেয়।
রক্তনালী দিয়ে ফোয়ারার মত রক্ত ঝরছে। ফারহিন উলংগ হয়ে সেই রক্ত তার সারা শরীরে মাখে। তারপর দুই হাতে দুটো পাথর নিয়ে লেকে নেমে গোসল করে। এর ফলে ফারহিন এখন পুর্নাংগ অদৃশ্য পুরুষ। এখন আর কেউ তাকে দেখতে পাবে না। সুধু একজন ছাড়া।
কিছু কথা ।
ঢাকা থেকে দুপুর, কৌশিক আর আসফাক এসেছে চিটাগাং। এখানে এসে সরাসরি হোটেলে যায় যেই হোটেলের ঠিকানা নীধা দিয়েছিল দুপুরকে ফোনে।
হোটেলে গিয়ে খোজ নিয়ে দেখে গতকাল মধ্যরাতেই তারা রুমের দরজা খুলে রেখে বাইরে যায় এরপর এখন প্রযন্ত ফিরে আসেনি।
আসফাক : আমরা কিছুখন অপেক্ষা করি। ক বলিস?
দুপুর : আচ্ছা ঠিক আছে।
এরপর বেশকিছুখন অপেক্ষা করে। কিন্তু নীধা বা ফারহিনের কোন খোজ নেই।
কৌশিক : আমার মনে আমাদের খোজা উচিত ওদের।
দুপুর : কোথায় খুজবো?
আসফাক : আসেপাসে। আসেপাসে না পেলে থানা হাসপাতালে।
দুপুর : আচ্ছা চলো। তবে তার আগে নীধার রুম থেকে একটু ঘুরে আসি।
দুপুর একা গিয়ে ঘুরে আসে নীধার রুম থেকে। তারপর আসে তিনজন মিলে চিটাগাং শহরে খুজে বেরায়। কিন্তু কোথাও পায় না নীধা আর ফারহিনকে। এর মাঝে একজনের মুখে শুনতে পায় যে একটা তরুনির লাশ নাকি পাওয়া গেছে।
লাশ, তরুনির লাশ। লাশ খুজতে খুজতে থানায় চলে আসে এই তিনজন। পোষ্ট মার্টাম শেষে আপাতত থানায় আনা হয়েছে। কিছুখন পর ফ্রিজিংে পাঠানো হবে লাশটি। তার আগেই এই তিনজন দেখতে চায় লাশটিকে।
লাশ দেখে অবাক হয়ে যায় তিনজন। এতো নীধার লাশ। কে মারলো এই সুন্দর এই মেয়েটিকে? নিশ্চয় লিলিথ। মনে মনে কথা বলছে আসফাক।
অফিসার : আপনাদের আচরনে মনে হচ্ছে আপনারা একে চেনেন। চেনেন নাকি ভাই?
আসফাক : হ্যা. (পেছন থেকে চিমটি কাটে দুপুর আর কৌশিক)
কৌশিক : চিনি বলতে আমারাও চিটাগাং হোটেলে এসে উঠেছি। সেখানেই দেখেছিলাম একে। এর মা একে খুজছে। আমাদেরকেও বলেছে খুজতে। এই আরকি। আমরা এর মাকে এক্ষনি খবর দিচ্ছি।
দুপুর : আমার কাছে এর মায়ের নাম্বার আছে। আমি নাম্বার দিচ্ছি।
নীধার মায়ের নাম্বার দিয়ে দুপুররা থানা থেকে বের হয়ে আসে।
কৌশিক : কিরে ঐটা কি সত্যি নীধার মায়ের নাম্বার? আর আসফাক গাধা তুই তো আরেকটু হলে চোদ্দ শিকে ঢুকাই দিছিলি।
দুপুর : আমি যখন নীধার রুমে যাই তখন এই ফোনটি ড্রয়ারে পাই। সাথে সাথে নিয়ে আসি। কারন ওরা এই নাম্বারে ফোন করতে পারে এই ভেবে।
কৌশিক : এনে ভালোই করেছিস।
দুপুর: ওর ফোনে কল লিষ্টে লাষ্ট কল ছিল আমার। সো ফেসে যেতাম।
আসফাক : কিন্তু মারলো কে ওকে?
দুপুর : আচ্ছা ফারহিনের ফেসবুকের পেজের লিংকটা মনে আছে তোদের?
কৌশিক : হ্যা। আমার কাছে আছে। কিন্তু কেনো?
দুপুর : ওর সব গুলো গল্প পরতে হবে। ফয়েজ লেক এবং যে স্পটে লাশটা পেয়েছে সেখান কার কথা ওর একটা গল্পে ছিল। এমনকি যত গুলো ঘটনা এ প্রযন্ত ঘটেছে তার সব গুলো ঘটনাই ওর গল্পে ছিল। এখন ওর সব গুলো গল্প পরে বুঝতে হবে যে নেক্সট কোথায় কি ঘটতে পারে।
আসফাক : আইডিয়া খারাপ না। আমার মনে হয় আমাদের এখনি গল্প পরে রহস্য বের করতে হবে।
দুপুর : ফারহিনের পেজের লিংকটা দে
কৌশিক : www.facebook.com/arshipon15/
দুপুর ফারহিনের পেজে ঢুকে এবং এক এক করে সব গল্প পরা শুরু করে।
আসফাক আর কৌশিক ও শুরু করে পরতে ।
রাত হয়ে যায়। একটা হোটেলে উঠে। রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রাতের খাবার খেয়ে আবার পেজে ঢুকে পরে।
কৌশিক : কাকা কিছু পেলি?
দুপুর : পাচ্ছি মনে হচ্ছেরে মামা।
আসফাক : কি পেলি?
দুপুর : আরেকটু পরতে দে।
আসফাক : আমি একটা পেয়েছি।
কৌশিক : কায়লাখেকো ডায়নী তো?
আসফাক : আরে না। সাংগু দ্বিপ।
কৌশিক : আরে ঐটাই। গল্পটার নাম কয়লাখেকো ডাইনী।
দুপুর : হুম। আমিও ঐটা পরেছি এবং ঐখানে যাওয়ার প্ল্যান করছি। সাথে
কৌশিক : সাথে কি? ঐ কালোজাদুর ছলনা নিয়ে ভাবছিস না তো?
আসফাক : আমিও ঐরকম ভেবেছিলাম। কিন্তু ফারহিন তো নীধাকে খুব ভালোবাসে। সে কখনোই নীধাকে মারতে পারে না।
কৌশিক : ঐ তুই না গোয়েন্দা? তুই আসলে গোয়েন্দা নামের কলংক।
দুপুর : এখানে কাউকে বিশ্বাস করা যাবে না। সব সম্ভব। তবে আমারও বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে যে ফারহিন নীধাকে।
আসফাক : থাম তো তোরা। সব কিছুর একটা লিমিট আছে। ওরা দুজন দুজনকে পাওয়ার জন্য কত কিছু করলো। আর তোরা কিনা বলছিস।
দুপুর : আচ্ছা বাদ দে। আমার মনে হয় আমরা সাংগুতে গেলে এই রহস্যের সমাধান করতে পারবো। তাহলে কাল সকালের আমরা সাংগুতে যাচ্ছি। ঠিক আছে?
কৌশিক : হুম। আমি গুগল ম্যাপ থেকে দেখে নিয়েছি। কর্নফুলি থেকে ছোট ট্রলার নিয়ে আমরা যেতে পারবো।
দুপুর : তাহলে এখন ঘুমাই কামারা। কাল সকালে অপারেশন সাংগু।
সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে কর্নফুলিতে যায়। ঘাটের এককোনায় গিয়ে দেখা যায় একটা জটলা। কাছে গিয়ে দেখে একটা লাশ পরে আছে। লোক মুখে শোনা গেলো উনি একজন মাঝি। কেউ একজন উনাকে মেরে উনার লাশ ফেলে গেছে।
তিন জন একটি ট্রলার ভারা করে। তারপর রওনা দেয়। অনেক ঢেউ পেরিয়ে চলে আসে সাংগু দ্বিপ। পারে আসার সাথে সাথে তাদের ট্রলারের মাঝি চিৎকার দিয়ে বলে
মাঝি : বাবুলের ট্রলার, বাবুলের ট্রলার।
কৌশিক : বাবুল কে ভাই?
মাঝি : ঐযে ঘাটে একটা লাশ দেখছেন না? ঐটাই বাবুল।
দুপুর : তাই নাকি? তো উনার ট্রলার এখানে কেনো?
মাঝি : চুরি কইরা মনে হয় এখানে আসছে। এখানে মানুষজন তো কম আসে।
দুপুর: ওহ হতে পারে ।
মাঝি : ভাই আপনাদের একখান কথা কই। এইখানে আসছেন ভালা কথা। সাবধানে থাইকেন। এইখানে মানুশ খেকো প্রানী থাকে। আর যাওনের সময় এইহানে ট্রলার পাইবেন না। হাটতে হাটতে ঐ সামনে গিয়ে দারাবেন। ঐপাশ দিয়া ট্রলার যায়। হাতের ইশারায় ডাইকা আইনা যাওন লাগবো।
দুপুর : ধন্যবাদ আপনাকে।
মাঝি চলে যায়। ওরা কিছুখন সেখানে দারিয়ে থাকে। তারপর নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করে নৌকা টা টেনে নিয়ে একটু দূরে সরিয়ে মানে ভালোই দূরে রাখে। যাতে যারা এখানে এসেছে তারা জেনো পালাতে না পারে।
তারপর তিন জন সাংগুর মধ্যে যাওয়ার জন্য হাটা দেয়। মাঝখানে জংলের মত। নিচে প্রচুর কাটা জাতিয় গাছ। ওদের টার্গেট সাংগুর ভিতরের কয়লা মন্দির।
অনেক্ষন হাটার পর একটা মানুষের পায়ের শব্দ পায়। জংগলে লুকিয়ে পরে। কিছুখন পর একটা জিম্বু দেখতে পায়।
দুপুর : (নিচু গলায়) আমার মনে হয় এখানে লিলিথ আছে।
কৌশিক : তারমানে এখানে ফারহিন আসে নাই। লিলিথ ঐবেটা মাঝিকে খুন করে বোট চুরি করে নিয়ে এখানে এসেছে।
দুপুর : কিছু মিলছে না।
আসফাক : আমার মনে হয় আমাদের এই জিম্বুটার পিছু পিছু যাওয়া উচিত। তাহলে হয়তো লিলিথের কাছে পৌছতে পারবো।
কৌশিক : এনাদার সেক্সি আইডিয়া।
দুপুর : হাহাহহাহা
তিনজন মিরে ধির পায়ে জিম্বুটার পিছু নেয়। বেশকিছুখন পর একটা ছোটখাটো গ্রামের মত একটা জায়গায় চলে আসে।
আসফাক : শয়তানটা এখানেও একটা রাজ্য বানিয়ে ফেলেছে।
দুপুর : ঐ দেখো লিলিথ এগুচ্ছে।
কৌশিক : ওকে ফলো করতে হবে।
শুরু হয় আবার পিছু নেওয়া।
এখানেও লিলিথ ছোট করে তার নিজের একটা রাজ্য গেরে নিয়েছে। তবে সেটা সিলেটের ঐটার মত না। এখানে ওরা কয়েকজন ছাড়া আর কোন মানুশ নেই। সব জিম্বু। এই জিম্বু গুলোই এখানে আসা মানুশ গুলোকে মেরে ফেলে আর তাই কেউ এখানে আসতে চায় না। যাওয়ার সময় মাঝিটাও ঐরকমই বলেছিল।
আসফাক : লিলিথ তো ঐঘরটাতে ঢুকোলো। এখন আমরা কি করবো?
দুপুর : যে ভাবেও হোক ঐঘরে কে কি করে সেটা জানতে হবে।
কৌশিক : এই দেখ ঘরের পিছনের দিকে একটা দরজা আছে সেখানে উকি দিয়ে দেখিতে হবে।
যেই কথা সেই কাজ। তিনজন মিলে দরজার ফাকা দিয়ে দেখে। একটা খালি চেয়ারের চারপাশ দিয়ে ঘুরছে লিলিথ। পাশেও দারিয়ে আছে রুমানা আর দুইটা লোক।
লিলিথ : তুমি কেনো মারলে নীধাকে? তুমি জানো তুমি আমার সব স্বপ্ন ধংশ করে দিয়েছো?
( বাইরে থেকে কৌশিক বলছে দুপুরকে, কাকে বলছে লিলিথ? কে আছে এখানে?
দুপুর : চুপ। শুনে যা।)
অদৃশ্য: তুমি কি ভালোবাসা কি জানো?
লিলিথ : আমি তোমার কাছ থেকে ভালোবাসা কি জানতে আসি নি।
অদৃশ্য : আমি নীধাকে বিয়ে করেছিলাম কারন নীধার মাধ্যমে আমি আমার ভালোবাসার মানু্ষের কাছে যেতে পারবো। আমি আমার রোদেলার কাছে যেতে চাই।
( আরে এটাই তো ফারহিন, বললো কৌষিক। আসফাক : তার মানে এই শালাই নীধাকে মেরেছে)
লিলিথ : রোদেলা কে?
ফারহিন : আমার ভালোবাসার পেত্নী।
লিলিথ : তাহলে ওকে ছেরে নীধাকে বিয়ে করলি কেনো? আর আমার স্বপ্ন ধংশ করলি কেনো?
ফারহিন : রোদেলা আমাকে ছেরে দিয়েছে। কোন ভাবেই তাকে আর আমার করতে পারছিলাম না। আর আমি তাকে এতোটাই ভালোবাসি যে তার কোন ক্ষতি বা তার সাথে প্রতারনা করতে পারবো না। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম অদৃশ্য হবো। অদৃশ্য হয়ে রোদেলার চারপাশে ঘুরবো। মন ভরে তাকে দেখবো। তখন তো সে আমাকে দেখতে পাবে না। বুঝতেও পারবে আমি তার আসেপাসে আছি। আর বলবেও না তুমি আমাকে ডিস্টার্ব করো না প্লিজ।
লিলিথ : নীধাকে মারলি কেনো?
ফারহিন : অদৃশ্য হতে গিয়েও তো হতে পারলাম না। সবার কাছে অদৃশ্য হয়ে রোদেলার কাছে হতে পারলাম না। কারন আমাদের দুজনের বার্থডেট সেম। একসময় আমাদের জন্য। এই দিনে যত মানুশের জন্ম ছিলা তারা সবাই আমাকে দেখতে পেতো। তাই অনেক ঘাটাঘাটি করে জানতে পারলাম যে একটি মেয়ে আছে যাকে বিয়ে করতে হবে। বিয়ে করলে একবুড়ি আসবে এবং সেই সব বলে দিবে কি করতে হবে। আর সেই মত কাজ করলাম। আর এর ফাকে তুমি তোমার স্বপ্ন নিয়ে ব্যাস্ত।
লিলিথ : তুই ওকে খুন করার আগে আমাকে একবার জানাতি। আমার তো শুধু ওর কলিজাটা দরকার ছিল। ঐটা পেলেই তো পুরো পৃথিবী আমার হয়ে যেতে।
ফারহিন : লিলিথ আমি খারাপ তবে সেটা সুধু ভালোবাসার জন্য। আমি এতোটা খারাপ নই যে এই পৃথিবীকে ধংশের জন্য আমি তোকে সাহায্য করবো।
লিলিথ : হাহাহাহা। ভালোবাসা। তোর আর তোর রোদেলার কাছে যাওয়া হবে না। আমার এই সর্গ রাজ্যের জন্য তোর আর নীধার দুজনেও কলিজার দরকার ছিল। নীধা নাই তাই এই পুরো পৃথিবী সর্গ করতে পারলাম না। কিন্তু তুই তো আছিস। তোর কলিজা এই খানে এই কয়লা মন্দিরের দেবতাকে উতসর্গ করে আমি এই সাংগুকে আমার রাজ্যে পরিনত করবো। যা আর কোন মানুষি দেখতে পাবে না। কেউ আমাকে কিছু করতে পারবে না।
ফারহিন : প্লিজ আমাকে আমার রোদেলার কাছে যেতে দাও। ওকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। একবার একটু স্পর্শ করতে ইচ্ছে করছে।
লিলিথ : তোকে মরতে হবে। তোর বউ যেই রাস্তায় গেছে তুই ও সেই রাস্তায় যাবি।
কথা গুলো বলে বেরিয়ে আসে লিলিথ। পিছনে পিছনে মনমরা রুমানা।
কৌশিক : আমরা ফারহিনকে দেখতে পাচ্ছি না কেনো? আগে তো আমরাও দেখতে পেতাম।
দুপুর : শুনলি না। নীধাকে মেরে ও অদৃশ্য হয়ে গেছে।
আসফাক : পিছনে তাকা।
পিছন ফিরে দেখে ২ টা রক্তাক্ত জিম্বু তাদের দিকে তেরে আসছে। কি করবে বুঝে উঠার আগেই জিম্বু দুইটা ঝাপিয়ে পরে ওদের উপর। দুপুরের ঘারে অনেকটা কেটে ফেলে। আসফাককে বুকের ভিতর খামচি দিয়ে রক্ত বের করে ফেলে। আর কৌশিকের মাথায় ব্যাথা পেয়ে একদম শুয়ে পরে। কৌশিকের উপর একটা জিম্বু বসে ওর গলায় কামর বসাতে যাবে আর এমন সময় পিছন থেকে রুমানা এসে ছুরি দিয়ে জিম্বু দুটোর পিঠের ভিতর দিয়ে ঢুকিয়ে মেরে ফেলে মুক্ত করে আসফাক, কৌশিক আর দুপুরকে।
দুপুর : আমরা তোমাদের শত্রু জানা সত্তেও তুমি আমাদের বাচালে যে?
রুমানা : আমার তোমাদের সাহায্য দরকার।
দুপুর : কি সাহায্য?
রুমানা : ফারহিন কে বাচাবে। বিনিময়ে আমি তোমাদের এখান থেকে মুক্তি দিব এখান থেকে।
আসফাক : কিন্তু কিভাবে?
রুমানা : আজ রাতে কয়লা মন্দিরে পুজোয় বসবে। সেখানে ফারহিন কে হত্যা করে তার কলিজা দিয়ে
মুর্তির সামনে রেখে পুজো দিবে। তার আগেই কোন না কোন ভাবে এই পুজো বন্ধ করে লিলিথকে খুন করতে হবে।
আসফাক : আমরা কোন খুনটুন করতে পারবো না।
লিলিথ : তোমরা যাষ্ট ফারহিনকে বাচাবে বাকিটা আমি দেখবো।
তারপর বাকি সময় জংগলের ভিতর একটা জায়গায় কাটিয়ে রাতে কয়ালামন্দিরে আসে। মন্দিরের মুর্তির সামনে বসে আছে। পুজো শুরু হয়ে গেছে। একটু পরেই ফারহিনকে হত্যা করবে।
বাইরে ফারহিনকে নিয়ে আসা হয়। সুধু দেখা যাচ্ছে যে তার হাত বাধার দরি। দড়ি দেখেই ওরা বুঝতে পারে যে এটাই ফরহিন।
ফারহিনকে বাইরে বের করে আনা হয়েছে। 
ইটো হাত করতে করতে ফারহিনের হাত খুজে হাত ধরে সুয়িয়ে ফেলে। লিলিথ একটা বড় ছোড়া নিয়ে এসে ফারহিনের গলার উপর বসাতে যাবে আর এমন সময় পিছন থেকে রুমানা লিলিথের মাথায় আঘাত করে। আঘাত পেয়ে লিলিথের হাত থেকে ছোড়াটা ফারহিনের বুকের উপর পরে ঢুকে যায়। রক্ত বের হয়ে শুরু করে। সুধু রক্ত ঝরতে দেখে যায় শুন্য থেকে। লিলিথ ছোড়াটা আবার উঠিয়ে রুমানার পেটে ঢুকিয়ে দেয়। আর এই মারামারির ফাকে দুপুর, কৌশিক আর আসফাক মিলে কয়লা মন্দিরের কয়লার মুর্তিটা নিয়ে পালিয়ে আসে। নদীর একদম কিনারে এসে আবার আগুন জালিয়ে দেয় মুর্তিটাতে যেই রকম ভাবে কয়লাখেকো ডায়নী গল্পটিতে করা হয়েছিল।
মুর্তিটি পুরতে থাকে আর চারপাশে শুরু হয় ঝড়। সে এক প্রচন্ড ঝর। মাটিতে সুয়ে পরে তিনজন। আর প্রভুর লাছে জীবন রক্ষার জন্য আকুতি জানায়। মুর্তিটি একটি সময় একদম পিরে যায়। ভেংগে পরে। তারপর শুরু হয় বৃষ্টি। বৃষ্টির পানির সাথে মিশে যায় সব।
মন্দিরেত কাছে এসে দেখে লিলিথ, রুমানার লাশ পরে আছে। ফারহিনের লাশ অদৃশ্য থাকলেও রক্ত দেখে বোঝা গেলো যে এইখানেই রয়েছে ফারহিনের লাশ।
এ এক অবাস্তব, কাল্পনিক, ভূতুরে আর বার বার মৃত্যুর কাছ থেকে ফিরে আসার অভিযান দুপুর, কৌশিক, আর আশফাকে। আর অবুঝ ভালোবাসার পাগলামির বলি নীধার গল্প। ভালোবাসার জন্য ধংশ হয়েছে ট্রয় নগরী, খুন হয়েছে অসংখ মানুষ। আর ফারহিন তার ভালোবাসার মানুশের আসে পাশে থাকার জন্য, মাঝে মাঝে রোদেলার উষ্ণ স্পর্শ পাবার জন্য আরেক ভালোবাসার বলি দিল। আমি জানি এটাকে আমি কি বলবো, যদি আপনাদের কাছে কোন ব্যাখ্যা থেকে থাকে জানাবেন। গল্পটি পুরোটাই আমার কল্পনা। আমার কল্পনার রাজ্য আর রোদেলার প্রতি ভালোবাসা থেকে লেখা। অনেকর কাছে ভালো লাগবে আবার অনেকের কাছে ভালো লাগবে না এটাই স্বাভাবিক। অন্যান্য পর্বের মত এই পর্বটি হয়তো আপনাদের মনের খোরাক যোগাতে পারবে না তবে ই পর্বটি আমাকে অনেক কিছে দিয়েছে।
আগামীকাল রাত থেকে এই গল্পের সব পর্ব একসাথে গুগুলে পাবেন। এই গল্পের নাম লিখে সার্চ দিলেই পাবেন। আর আমার লেখা আরো গল্প পরতে চাইলে আমার পেজটি লাইক দিতে পারেন
www.facebook.com/arshipon15/
। আর গল্পের ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। অনেক সময় নষ্ট করেছি এই গল্পের পর্ব গুলো লেট করে দিয়ে।
সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Thank you for your participation .