রবিবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৮

ভুগিচুগি


#ভুগিচুগি
(গল্প নয়, নেহাত ফাইজলামী)
লেখাঃ MD Asadur Rahman - Shipon

সালাউদ্দিন আজ মহাখুশি। অল্প খরচে বেশ ভালো একটা বাসা পেয়েছে সে। ৪ রুম, ড্রয়িং রুম, ডাইনিং রুম, কিচেন, ৩টা টয়লেট আর ২ পাশে দুইটা বিশাল বারান্দা। ভাড়া মাত্র ৩০০০০ হাজার। ধানমন্ডি এলাকায় ৩০০০০ টাকায় এই রকম বাসা পাওয়া কল্পনাও করা যায় না।
পৃথিবীতে নানান ধরনের মানুষ আছে, আছে হরেক চরিত্রের মানুষ। কিন্তু সালাউদ্দিন আসলে কোন ধরন বা কোন চরিত্রের সেটা বুঝে উঠা মুশকিল।
সালাউদ্দিনের সাথে আমার পরিচয় কলেজ জীবনে। একসাথে করে বাসে যাওয়া আসা। বাসের ভাড়া আমরা স্টুডেন্টসরা দুইটাকা করে দিতাম। দেখা যেত একসাথে বাসে আমরা ১০/১৫ জন করে যাতায়াত করতাম। যে যেদিন ভাড়া দিতো বাসের সব স্টুডেন্টস দের ভাড়া সে একা দিতো। ঘুরে ফিরে আমরা সবাই একেকদিন ভাড়া দিতাম সুধু দিতো না সালাউদ্দিন। ধরুন ক্লাস শেষে আমরা সবাই টিউশনিতে গেলাম, সালাউদ্দিনের টিউশনি নেই। সে চাইলেই একা চলে যেতে পারে বাসায় কিন্তু দুই টাকা বাচানোর জন্য সে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতো। একদিন সালাউদ্দিনকে দিয়ে ভাড়া দেওয়ানোর জন্য আমরা সবাই একটা নাটক করি। হেলপারকে আগেই বলে রাখি আজ আমাদের কারো কাছে ভাড়া চাইবে না, ওর কাছে চাইবে।
হেলপারঃ (সালাউদ্দিনকে উদ্যেশ্য করে) ভাইয়া ভাড়া দেন।
সালাউদ্দিনঃ পরে।
কিছুখন পরে........................
হেলপারঃ ভাইয়া ভাড়া দেন।
সালাউদ্দিনঃ পরে,
হেলপারঃ আর কত পরে? চলে আসলেন তো প্রায়
সালাউদ্দিনঃ অন্য সবার কাছ থেকে নিয়ে আসো তারপর।
হেলপারঃ অন্যসবাই পরে দিবে। আপনারটা দিন।
সালাউদ্দিন কিছুখন আমাদের দিকে ঘুরে ফিরে তাকায়। তারপর পকেটে হাত দিয়ে কিছুখন চোখবুজে নাড়াচাড়া করে। অতঃপর পকেট থেকে দুটো একটাকার কয়েন বের করে হেলপারের হাতে গুজে দিয়ে বলে।
সালাউদ্দিনঃ এই নেন আপনার ভাড়া।
হেলপারঃ এইটা কি দিলেন?
সালাউদ্দিনঃ কি দিলাম মানে?
হেলপারঃ আর সবারটা দেন।
সালাউদ্দিনঃ সবারটা আমি দিতে যাবো কেনো? আমারটা আমি দিছি।
হেলপারঃ প্রতিদিন তো সবাই আপনারটা দেয়।
সালাউদ্দিনঃ আমি কি কাউকে বলছি আমারটা দিতে। যান এখান থেকে।
এরপর থেকে আমরা সব সময় সালাউদ্দিনকে ছাড়া ভাড়া দিতাম।
কলেজ লাইফ শেষে ঢাকা এসে ভর্তি হই। পাশাপাশি ছোট একটা চাকরি। কলেজ লাইফের বন্ধুদের মধ্যে শাকিল আর সজল ছাড়া তেমন কারো সাথে যোগাযোগ নেই। ৩/৪ বছর পর একদিন রানা আর সালাউদ্দিনের সাথে পান্থপথ দেখা হয়। অনেকদিন পর যেহেতু দেখা তাই ভালোবাসা একটু বেশিই ছিলো। অনেকখন বসুন্ধরার সামনে বসে গল্প শেষে চা খেলাম। বিল দিতে গিয়ে শুনি আগেই বিল দেওয়া হয়ে গেছে। রানার কাছে এসে জিজ্ঞেস করলাম
আমিঃ কিরে বিল দিয়েছিস কেন?
রানাঃ আমি তো বিল দেই নাই।
সালাউদ্দিনঃ আমি দিয়েছি।
আমিঃ তুই বিল দিয়েছিস? বিশ্বাস হচ্ছে না।
রানাঃ সালাউদ্দিন এখন আগের মত নাই।
আমিঃ বাহ। আচ্ছা চল যাই।
সালাউদ্দিনঃ দাড়া দোকানদারের কাছে এক টাকা পাই, নিয়ে নেই।
দোকানদারের কাছে গিয়ে
সালাউদ্দিনঃ একটাকা দিন।
দোকানদার একটা মিঃ ম্যাংগো চকলেট ধরিয়ে দেয়। এরপর সালাউদ্দিন তার পকেট থেকে আরেকটি চকলেট বের করে দিয়ে বলে দুইটাকা দেন। হাহাহাহাহাহহাহাহাহাহাহাহাহা হাসতে হাসতে আমি আর রানা গড়াগড়ি। সালাউদ্দিনের মধ্যে চেঞ্জ এসেছে, তবে কিপ্টামির স্বভাবটা কিছুটা এখনো রয়েই গেছে।
এর বেশ কিছুদিন পরের কথা। যে বাসায় আমি ছিলাম সেখান থেকে হটাত নোটিস আসে বাসা ছেড়ে দেওয়ার। কুল কিনারা খুজে পাচ্ছিলাম না তখন রানার মাধ্যমে খোজ পাই যে সালাউদ্দিন নতুন বাসা নিচ্ছে। ফোন দিয়ে সালাউদ্দিনের সাথে কথা বলে বাসা দেখতে যাই।
বড় ৪ রুম, ড্রয়িং রুম, ডাইনিং রুম, কিচেন, ৩টা টয়লেট আর ২ পাশে দুইটা বিশাল বারান্দা। খুব পছন্দ হয়ে যায় আমার। বিশেষ করে বারান্দাটার প্রেমে পরে যাই। জোসনা রাতে রোদেলাকে নিয়ে গল্প লিখা যাবে।
আমিঃ দোস্ত ফ্ল্যাট ভাড়া কত?
সালাউদ্দিনঃ তুই কি একা এক রুম নিবি নাকি সাথে রুমমেট উঠাবি?
আমিঃ ধুর ব্যাটা, একা একরুম নেওয়ার ক্ষমতা আমার আছে নাকি।
সালাউদ্দিনঃ ফ্ল্যাট ভাড়া ৪০০০০ টাকা। একেক রুম ১০০০০ টাকা। সাথে গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ বিল আর সার্ভিস চার্জ আছে।
আমিঃ ভাড়া একটু বেশি হয়ে গেলো না? আর আমি এখন রুমমেট পাবো কোথায়?
সালাউদ্দিনঃ ধানমন্ডি এলাকায় ৪০০০০ টাকায় এতো সুন্দর ব্যাচেলর বাসা পাবি তুই ?
আমিঃ সেটাও ঠিক। আচ্ছা রুমমেট
সালাউদ্দিনঃ ঐগুলান আমি দেখতেছি।
আমিঃ আচ্ছা দেখ।
সালাউদ্দিনঃ চল বাইরে যাই, আবু সাইদ আর বিল্লাল এসেছে।
বাইরে গিয়ে সালাউদ্দিনের দুইভাই আবু সাইদ আর বিল্লালের সাথে কথা বলতে বলতে একসময় দোকানে গিয়ে বিস্কিট কিনি খেতে। চকলেট বিস্কিট। চকলেট আমার খুব পছন্দের তাই সব কিছুতেই চকলেট ফ্লেভার খুজি।
বিল্লালঃ ভাই একটা কোল্ড ড্রিংকস নেই?
আমিঃ হ্যা নাও।
সালাউদ্দিনঃ নাহ। নরমাল পানি নে। এই সব স্বাস্থের জন্য ভালো না।
আবুসাইদঃ নাহ। কোক নে। কোকের উপর কিছু হয় না।
বিল্লালঃ মিরিন্ডা নিলাম।
সালাউদ্দিনঃ নরমাল পানি খাবি। পেটের ভিতরে ভালো থাকবো, আর কোক খাইলে পেটের ভিতরে ক্ষয় হয়। ইউটিউবে দেখস নাই। সুধু সুধু টাকা খরচ করে বিষ খাবিনি।
আবুসাঈদঃ ইহ আইছে স্যার। তর ডাক্তারি আর কিপটামি অন্য জায়গায় দেখাবি আমার কাছে না।
পেছন থেকে একমহিলা এতোখন আমাদের কথা শুনছিলো। আমাদের জন্য সে দোকানের সামনে আসতে পারছিলো না। সে সালাউদ্দিনকে ঝাড়ি দিয়ে বলে
মহিলাঃ কোকও না, মিরিণ্ডাও না, পানিও না। এই ভাই এদের সেভেন আপ দেন। আর টাকা আমি দিব। আর একটা কথাও বলবেন না আপনারা। যাস্ট এখান থেকে চলে যাবেন। মাইক একেকটা।(রাগের ইমোজি হবে)
আমি মুচকি হাসছি। মহিলাকে পেরিয়ে মানিব্যাগ বের করে বিস্কিট আর সেভেন আপের দাম দিয়ে চলে আসি। আর ওদের কাছ থেকেও বিদায় নেই।
সালাউদ্দিন এর মুখে মুচকি হাসি। তখন ব্যাপারটা বুঝতে পারিনি। বুঝতে পেরেছি দুই বছর পর।
নিচে নতুন দারোয়ান এসেছে। তার সাথে কথায় কথায় বেরিয়ে আসে আসল কাহিনি। বাসা ভাড়া ৩০০০০টাকা। তার মানে সালাউদ্দিন তার নিজের রুমের বাসাভাড়া দেয় না। আমাদের টাকা দিয়েই সে এই রাজ্বত্ব চালাচ্ছে। কথাটি আমি একা শুনলে হয়তো চেপে রাখতে পারতাম নিজের মধ্যে কিন্তু আমার সাথে ছিলো বা আমি তাদের সাথে ছিলাম।
রাতে আসিফ আর সাইদ ভাই সবাইকে ডাকে। বিষটি তুলে ধরে সবার সামনে। সালাউদ্দিন চুপ করে বসে আছে।
আসিফঃ সালাউদ্দিন মামা কিছু বলেন।
সালাউদ্দিনঃ কি বলবো?
হাবিবঃ আপনি এতোদিন আমাদের সাথে এই দুই নাম্বারি করলেন কেন?
সালাউদ্দিনঃ এটা দুই নাম্বারী না।
সাইদঃ এটা দুই নাম্বারী না তো এটা কি?
সালাউদ্দিনঃ মানুষ মেসের ব্যাবসা করে না। এটাও মনে করো সবাই আমার একটা ব্যাবসা। আমি কষ্ট করে বাসা খুজছি, কথা বলে ঠিক করছি, এডভ্যান্স দিছি। আর সবচেয়ে বড় কথা আমি মালিকের কাছ থেকে বাসা নিয়ে তোমাদের কাছে রুম অনুযায়ী ভাড়া দিছি। এখানে কোন দুই নাম্বারি এর কিছু নাই।
আমিঃ ঠিক আছে। কিন্তু এই বিষয়টা আমাদের জানালেই পারতি। সুধু সুধু ৪০০০০ টাকা বলে মিথ্যে না বললেও পারতি।
সালাউদ্দিনঃ এতো কথা কিসের, এইভাবে যার থাকতে ইচ্ছে সে থাকো আর যার ভালো না লাগে সে চলে যাও।
হাবীবঃ সালাউদ্দিন মামা আপনি বিষয়টা বহুত ভুগিচুগি করে ফেললেন।
সালাউদ্দিনঃ তোমাদের যা মনে হয় বলো। ভুগিচুগি, বিনোদন যা খুসি তা।
সুজনঃ সালাউদ্দিন তুই কি গাঞ্জা খেয়ে আসছিস যে এইভাবে কথা বলছিস?
সালাউদ্দিনঃ গাঞ্জাও বল। সমস্যা নাই।
বলে সালাউদ্দিন উঠে যায়। এরপর থেকে কিছুদিন সবাই সালাউদ্দিনের সাথে কম কথা বলতো। ঐ দিনের পর থেকে মেসে সহ আসে পাশের বন্ধুদের কাছে সালাউদ্দিনের নতুন একটা নাম হয়। সেটা হলো ভুগিচুগি। ভুগিচুগি বলে ডাকলে প্রথম দিকে খেপে গেলেও পরে অভ্যস্ত হয়ে যায়। এমনকি ভুগিচুগি নিজেও সব জায়গায় তার এই নাম ইউজ করা শুরু করে। যেমন মিলের খাতায় বাজারের লিষ্টে এবং ডেইলি মিল লিষ্টে এ নামের জায়গায় নিজেই ভুগিচুগি লিখে। যাক।
ভুগিচুগি সহ তার সাথের লোকেরা একেক জন মাইক। যে কোন জনসভায় একে মাইক হিসেবে ইউজ করা যেতে পারে। এছাড়া অতিরিক্ত ফাও পয়সায় জ্ঞ্যান দান করা তার সখ। খুব কষ্টে সহ্য করতে হয়। এখন অবশ্য আমরা সকলেই কিছুটা অভ্যস্ত হয়ে গেছি। তবে চিন্তা তাকে নিয়ে যে এই ভুগিচুগিকে বিয়ে করবে। বেচারি হয়তো পরের রাতেই সুইসাইড করবে। ইশ ভাবতেই কষ্ট লাগছে।
তার ভবিষ্যৎ ভাবতে ভাওবতে হটাত একদিন শুনি ওর বিয়ে ঠিক হয়েছে। সেকেন্ড টাইম পাত্রি দেখতে যাওয়া। সাথে আমাকেও যেতে হবে। মেয়ের নাম ঝুম। দেখা করবো একটা রেস্টুরেন্টে। আমরা আগেই গিয়ে উপস্থিত কিন্তু ঝুম মহারানীর এখনো আসার সময় হয়নি।
আমিঃ দোস্ত অনেকখন হয় বসে আছি। কিছু খাবার অর্ডার কর খাই। অনেক খুদা লাগছে। ( আমি খেতে খুব পছন্দ করি, আর খুদাও লাগে বেশি। আমাকে দেখে নিশ্চয় সেটা আপনারা বুঝতে পারেন)
সালাউদ্দিনঃ এখানে ফিল্টারের গ্লাসে পানি পাওয়া যায় না। আর এক বোতল পানির দাম কত জানিস?
আমিঃ কত আর হবে, ২০টা হতে পারে।
সালাউদ্দিনঃ হুম। যেটা দোকানে ১৫টাকা।
আমিঃ তাই বলে খাওয়াবি না?
সালাউদ্দিনঃ হুম। মেয়েটি আসুক তারপর স্যুপ খাবো।
আমিঃ সুধু স্যুপ? ধুর বাল। আচ্ছা আমিই খাওয়াবো তোকে।
সালাউদ্দিনঃ খাওয়া।
আমি পাস্তা অর্ডার করি। খাওয়ার মাঝখানে ঝুম এসে হাজির। মানে যাকে সেকেন্ড টাইম দেখতে আসা। সেকেন্ড টাইম দেখতে আসার কারন হচ্ছে। সালাউদ্দিন মেয়েকে আগে দূর থেকে দেখলেও মেয়েটি সালাউদ্দিনকে দেখে নাই। আর সালাউদ্দিন ও সামনাসামনি দেখা করে কথা হয় নাই। যাস্ট দুই ফ্যামিলির মধ্যে কথা বার্তা হয়ে বিয়ে প্রায় ঠিক।
ঝুম কাছে এসে খুজছিলো। সালাউদ্দিন যেহেতু চিনে তাই সালাউদ্দিন ডাক দেয় তাকে।
সালাউদ্দিনঃ আপনি ঝুম?
ঝুমঃ জ্বি।
সালাউদ্দিনঃ আসেন। বসেন প্লিজ।
ঝুমঃ ভালো আছেন আপনারা?
আমিঃ জ্বি ভালো আছি। আপনি?
ঝুমঃ আমিও ভালোই আছি। ভালো না থাকলে তো আর এখানে আসতে পারতাম না।
সালাউদ্দিন ঃ সেটা অবশ্য ঠিক। আচ্ছা কি খাবেন আপনি?
ঝুমঃ যে কোন কিছু।
সালাউদ্দিনঃ নাহ প্লিজ আপনি অর্ডার করুন।
ঝুমঃ প্লিজ আপনারাই অর্ডার করুন।
সালাউদ্দিনঃ আচ্ছা। পাস্তা, চওমিন, বিফ উইথ রাইস, স্যুপ, কোল্ড ড্রিংকস, ফিস ফ্রাই অর্ডার করলাম।
ঝুমঃ আরে এতো কিছু কিভাবে খায় মানুষ। যে কোন একটা ।
সালাউদ্দিনঃ নাহ। প্রথম আপনাকে খাওয়াচ্ছি।
সালাউদ্দিন ওয়েটারকে ডেকে সব অর্ডার করে আর আমি হা হয়ে তাকিয়ে । এক মেয়ে দেখে সালাউদ্দিনের সব কিপটামি শেষ। হাইরে পুরুষ।
খাবার দাবার খাওয়া শেষে।
ঝুমঃ (আমাকে উদ্যেশ্য করে) আমাকে কি আপনার পছন্দ হয়েছে?
আমিঃ জ্বি।
ঝুমঃ আমাকেও আপনার পছন্দ হয়েছে।
আমিঃ আমার বন্ধুর চেয়েও কি আমাকে বেশি পছন্দ হয়েছে।
ঝুমঃ বুঝলাম না।
আমিঃ মানে যার সাথে আপনার বিয়ে ঠিক হয়েছে আমার বন্ধু তার থেকেও কি আমাকে বেশি পছন্দ হয়েছে?
ঝুমঃ ছেলে কি আপনি না?
আমিঃ আমি হবো কেনো। এই যে ছেলে, যার সাথে আপনার বিয়ে ঠিক হয়েছে।
ঝুমঃ সরি। আমি এই বিয়ে করবো না। আমার ছেলে পছন্দ হয় নি।
সালাউদ্দিনঃ বিয়ের সব ঠিক আর এখন এই কথা বলছেন। হবে না, বিয়ে করতেই হবে আপনাকে।
ঝুমঃ করবো না আমি বিয়ে। আমি গেলাম। ( বলেই উঠে দাঁড়ালো)
সালাউদ্দিনঃ আচ্ছা ঠিক আছে বিয়ে করতে হবে না। কিন্তু এই যে খাওয়া দাওয়া করলেন টাকা দিয়ে যান।
ঝুমঃ আমি কি খাইতে চাইছিলাম যে আমি টাকা দিবো।
সালাউদ্দিনঃ বিয়ে করবেন না তো আমি আপনাকে খাওয়াবো কেন।
আমিঃ সালাউদ্দিন চুপ।
সালাউদ্দিনঃ কিশের চুপ। খাইছে বিল দিবে। বিলের তিন ভাগ করে একভাগ দিয়ে যাবে।
ঝুমঃ শালার ছোটলোক। এই নে পুরো বিলই রাখ।
সালাউদ্দিনঃ থ্যাংকস।
ঝুম চলে যাবার পর।
আমিঃ সালাউদ্দিন তুই এতো ছোটলোক কেন? একটা মেয়েকে খায়িয়েছিস আবার তার কাছ থেকে টাকা নিয়ে নিলি?
সালাউদ্দিনঃ বিয়ে করবে না আবার খাওয়া কি? আর তুই একদম চুপ। চোর জন্য আমার বিয়ে ভেংগে গেলো।
আমিঃ আমি কি করলাম?
সালাউদ্দিনঃ তোকে নিয়ে আসাটাই আমার ভূল হয়েছে।
সেদিনের মত সেখান থেকে চলে আসলাম। বাসায় আসার পর থেকে আমার সাথে ভুগিচুগি কথা বলে না। খারাপ লাগছিলো আমার, আপনারাই বলেন আমার কি দোষ? যাক তারপরও নিজের কাধে দোষ নিয়ে ভুগিচুগির জন্য মেয়ে খোজা শুরু করলাম। পেয়েও গেলাম। মেয়ে নাম শিলা। দেখতে মাশাল্লাহ সুন্দরী, ওয়েল এডুকেটেড, ভালো বংশ, ভুগিচুগির ছবি দেখে পছন্দও করলো। আর মেয়েটাকে আমার পছন্দ হওয়ার কারন হচ্ছে মেয়েটিও ঘাড় ত্যারা আর কিপ্টুস। সো ভুগিচুগি আর শিলার সংসার আশাকরি জমবে ভালোই। ভুগুচুগির ছোট সাইদকে দিয়ে বিয়ের কথা বার্তা শুরু করি। বিয়েও হয়ে যায়। এরপর তাদের সংসার কেমন চলছে জানিনা। বিয়েতে দাওয়াত পাইনি। শিলাও দাওয়াত দেয়নি।
অনেকদিন পর ঈদের আগের দিন রাতে জয়পাড়া দেখা সালাউদ্দিনের সাথে। কথা হলো। ডেকে নিয়ে কাবাব আর লুচি খাওয়ালাম। এরপর বউ এর জন্য থ্রিপিস কিনতে যাবে আমাকে নিয়ে গেলো।
একটা দোকানে গিয়ে বসলাম। ত্রিপিস পছন্দ করছে ও।
সালাউদ্দিনঃ দোস্ত একটা পছন্দ করে দে না।
আমিঃ আমি কিভাবে পছন্দ করে দিবো। আমি কি তোর বউকে দেখছি?(সালাউদ্দিন জানেনা আমি তার বউকে আগে থেকে চিনি, এমনকি লাইন মারতে গিয়ে ধরাও খাইছি। আসলে মেয়েরা টাকা ছাড়া কিছু বুঝে না)
সালাউদ্দিনঃ ওহ তোরে তো দেখাই নাই। মোবাইলে আছে। এই নে দেখ।
আমিঃ বাহ! মারাত্বক সুন্দরী তো। এক কাজ কর। ইয়ালো আর ব্ল্যাক এই দুইটা নে।
সালাউদ্দিনঃ দুইটা? পাগলে পাইছে? একটা এক ঈদের জন্য যথেষ্ট।
আমিঃ আচ্ছা তুই ইয়ালো টা নে আমি ব্ল্যাক টা ভাবিকে গিফট করলাম।
সালাউদ্দিনঃ দোস্ত আমাকে কিছু দিবি না গিফট?
আমিঃ হুম। একটা আন্ডারওয়্যার নিয়ে যাইস।
পেছন থেকে একটা পিচ্চি ছেলে এসে দাঁড়ায়। দোকানদারকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে যে তার বাবা মা নেই। দোকান থেকে তার বোনের জন্য একটা জামা দিতে। কাল ঈদ বোনকে সে দিবে। কিন্তু দোকানদার ছেলেটাকে দূর দূর করে তারিয়ে দেয়। বিষয়টি খুব খারাপ লাগে আমার। কিছু করতে ইচ্ছে করছিলো কিন্তু করা হলো না।
সালাউদ্দিন ঃ ভাই এগুলা পছন্দ হয় নাই। শিপন চল অন্যদোকানে দেখি।
আমার ও কেন জানি দোকানদারের উপর মেজাজ খারাপ হচ্ছিলো। আমিও কিছু না বলে চলে এলাম।
পাশের দোকানে গিয়ে বসলাম। সালাউদ্দিন বললো ও একটু মাইনাস করতে যাবে আমাকে দোকানে থ্রিপিস পছন্দ করতে বলে বের হয়ে গেলো। ও চলে যাবার পর আমিও বের হয়ে গেলাম পিচ্চি ছেলেটাকে খুজতে। খারাপ লাগছিলো তাই ওকে খুজে ওর বোনের জন্য একটা জামা কিনে দিবো সিদ্ধান্ত নিলাম।
বাইরে খুজছি। হটাত চোখ পরলো একটা দোকানে সালাউদ্দিন ছেলেটিকে নিয়ে বসে আছে, ওর বোনের জন্য আর ঐ ছেলের জন্য জামা কাপর কিনে দিলো। শেষে ১০০০টাকার একটা নোট। কাছে গেলাম। সালাউদ্দিন ছেলেটাকে বললো।
সালাউদ্দিনঃ এই টাকা দিয়ে মিষ্টি, পায়েস, সেমাই কিনবে। কাল খাবে। আর আমার সাথে পরে যোগাযোগ করবে। দেখি কোন কাজের ব্যাবস্থা করা যায় কিনা।
আমি অবাক হলাম না, হতভম্ব নির্বাক হয়ে গেলাম। সেদিন সালাউদ্দিনের সাথে অনেকরাত কথা হলো। সে ভার্সিটিতে উঠার পর পরই পথ শিশুদের জন্য একটা আবাসন এবং শিক্ষার জন্য স্কুল করে। একাই চালাত ও । বিভিন্ন জায়গা থেকে ফান্ড ম্যানেজ করে ছেলেমেয়ে দের খাবার জোগাড় করতো। বাসা ভাড়ার ১০০০০ টাকা এই স্কুলেই খরচ করতো। সেদিন বুঝলাম ভুগিচুগি দুঃক্ষিত সালাউদ্দিন আসলে কৃপন নয়। সালাউদ্দিন মিতব্যায়ী। এই দিনের পর থেকে সালাউদ্দিনকে আর ভুগিচুগি বলা হয়নি। ওর জন্য এখন মনের গভির থেকে আলাদা একটা সম্মান কাজ করে। আজ আমরা সবাই ওর স্কুলে যাবো। বাচ্চাদের জন্য অনেক বিস্কিট, জামাকাপর আর আমি স্পেশালি চকলেট নিয়েছি।
স্কুল। স্কুলের সামনে গিয়ে অবাক হয়ে যাই। সালাউদ্দিন তার স্কুলের নাম দিয়েছে ভুগিচুগি স্কুল। হাস্যকর হলেও সেদিন ওকে দেওয়া এই নামটি এই স্কুলটিকে বড় করার জন্য অন্যরক্ম অনুপ্রেরুনা দিয়েছে। আর আজ আমাদের দিয়েছে লজ্জা। ক্ষমা করিস বন্ধু।


সম্পূর্ন গল্পটাই আমার বিকৃত মস্তিস্কের কল্পনা বা দুষ্টামি অথবা ফাইজলামী। ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য অনুরোধ করা হল। ধন্যবাদ।

সোমবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১৮

আম্বিয়া

আম্বিয়া
লেখা ঃ MD Asadur Rahman - Shipon
আমি আর রোহিত কলাবাগান দিয়ে হাটছি । রনি ভাইয়া এখনো অফিসে আসেনি তাই হেটে বেরাচ্ছি । ব্রীজটা পার হয়ে ঐপারে গিইয়ে কলাবাগান মাঠের পাসে বাসস্টান্ডে যাত্রী ছাওনী তে গিয়ে বসি ।
আমি ঃ কি খবর তোমার কাজের ? এগুচ্ছে কেমন ?
রোহিত ঃ আর বইলো না ভাই । একা একা বাসায় কাজ করতে ভালো লাগে না । আর বুঝিও না । ভাইয়া কে বলো আমাদের ১টা যায়গা দিতে যেখানে আমরা একসাথে বসে কাজ করতে পারবো ।
আমি ঃ হ্যা ,সাজিয়া আপু কে বলো বলতে । আচ্ছা আপু আসছে ?
রোহিত ঃ হ্যা , রনি ভাইয়ার বাসায় । হয়তো ভাবির সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছে ।
আমি ঃ রোহিত দেখো কি সুন্দর করে মহিলা টা খাওয়াচ্ছে । দুধ ভাত ।
রোহিত ঃ চলো ১টা ছবি তুলি ।
রোহিত ছবি তুলতে গেলো । কিন্তু মহিলাটি ছবি তুলতে দিল না । ক্ষেপে গেলো । ভদ্র সমাজের উপর তার যত ঘৃ্না ছিল সেটা যেন আমাদের উপর উশুল করল ।
আচ্ছা আমি যে ভদ্র সমাজ বললাম সেই ভদ্র সমাজ টা কি ? আর এর বিপরিতে কি অভদ্রসমাজ ।
আম্বিয়ার মা তার সন্তান দের নিয়ে রাস্তার পাসে ফুটপাতে থাকে পলিথিনের নিচে । কোন রকম খেয়ে পরে বেচে আছে । তবে আম্বিয়ায় প্রতি তার মায়ের কোন কার্পন্য নাই । পাশের এক মহিলার কাছে শুনলাম যে আম্বিয়াকে ছোট সময়ে তার এই মা তাকে রাস্তা থেকে কুরিয়ে নিয়ে আসে আর নাম দেয় আম্বিয়া । তার পর থেকে আম্বিয়াকে সে তার অন্য সন্তানদের চেয়েও বেশি ভালোবাসা দিয়ে বড় করে তোলে । আম্বিয়ার প্রতি তার এই অগাধ আর নিখুত ভালোবাসা দেখে আসে পাসের সবাই তাকে আম্বিয়ার মা বলে ডাকে । সে আম্বিয়া কে প্রতিদিন দুধ দিয়ে ভাত খাওয়ায় , সবান দিয়ে গোসল করায় , জড়িয়ে ধরে ঘুমায় । আম্বিয়ার প্রতি তার এই নিখাদ ভালোবাসা দেখে ইচ্ছে হলো ১টা ছবি তুলি , ভালোবাসার এই অনন্য উদাহরন টা ফেসবুকের মাধ্যমে গোটা বিশ্বকে জানাই । তাই এগিয়ে গেলাম আমি এবার ১টা পিক তোলার অনুমতির জন্য ।
আমি ঃ আপা আমি কি ১টা ছবি তুলতে পারি ?
আম্বিয়ার মা ঃ কেন তুলবেন ছবি ? আমরা কি রংগো করতাছি এইহানে ?
আমি ঃ না না সেটা না । আসলে আম্বিয়ার ১টা ছবি তুলে ফেসবুকে দিতে চাই , সবাই আম্বিয়াকে সেখান থেকে দেখতে পাবে ।
আম্বিয়ার মা ঃ লাগবো না দেহন । আমাগো ছবি তুইলা বিদাশিগো কাছ থেইকা ট্যাকা আনে , আমাগো কি হয় । তুইলবেন না কোন ছবি ।
কথা শেষ হতে না হতেই আম্বিয়ার মায়ের আসে পাসের লোকজন একরকম তারা করে , তাই আর ছবি তোলা হয় না , চলে আসি আমি আর রোহিত ।
তার কিছুদিন পরের কথা । রাত ১০টার বেশি বাজে । রবিন্দ্র সরবরের আড্ডা শেষ করে বাসায় ফিরছিলাম । আমি নাঈম আর রোহিত । নাঈমকে কলাবাগান থেকে বাসে উঠিয়ে আমি আর রোহিত হাটছি । একটু সামনে এগুতেই দেখি খুব ভীর , আর ভীরের ভিতর থেকে কেউ একজন কাদছে । খুব কাদছে । সামনে এগিয়ে যাই আমি আর রহিত । ঠেলে ধাক্কায় একদম ভিতরে যাই । তারপর যেতা দেখলাম সেটার জন্ন্য আমরা প্রস্তত ছিলাম না
কান্নার কারন হলো , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , কিভাবে বলবো সেটা বুঝতেছিনা । আচ্ছা বলেই দেই । আম্বিয়া মারা গেছে । সন্ধার বেশ কিছু পর সামনের রাস্তা পার হওয়ার সময় গাড়ীচাপা পরে মারা গেছে । সকাল থেকেই অসুস্থ ছিল আম্বিয়া ।
আম্বিয়ার মা খুব কাদছে । সে আম্বিয়াকে অন্যান্ন মানুষদের মত কবর দিতে চায় । কিন্তু আসে পাশের সবাই তাকে বাধা দিচ্ছে । তার জামাই তাকে গালাগালী করছে । ভীড় করে থাকা কিছু কিছু মানুশ হাসাহাসিও করছে । আমি আর রোহিত ঐ মুহুর্তে কি করবো বুঝতেছিনা । হাসবো না কাদবো । আম্বিয়ার মায়ের জন্ন্য খারাপ লাগছে , তবে সে কি একটু বারাবারীও করছে না । কেন গোসল করিয়ে কবর দিতে হবে আম্বিয়াকে । আম্বিয়া এক্সিডেন্টে মারা গেছে তার জন্ন্য সে কাদতেছে সেটা স্বভাবিক , কারন সে আম্বিয়াকে নিজের সন্তানের চেয়েও বেশি ভালোবাসতো । তাই বলে তো এখন এই আম্বিয়া নামের একটা কুকুরকে মানূশের মত করে দাফন করতে হবে । সব আজাইরা পেচাল । তবে এটা বলতে হবে এই সময়ে এসে এই দারিদ্রতার মাঝে এইভাবে ১টা কুকুরকে ভালোবেসে নিজের সন্তানের মত করে বড় করে তোলা ।। সত্ত্যি কিন্তু দুর্ল্ভ । তাই হয়তো আম্বিয়ার মায়ের কষ্ট হচ্ছে ।
কিছুখন পর সিটি কর্পোরেশনের গাড়ী এসে আম্বিয়ার মায়ের সাথে জোরাজোরি করে আম্বিয়াকে তুলে নিয়ে যায় । আম্বিয়ার মা কিছুদূর গাড়ির পিছনে ছুটে তারপর রাস্তায় পরে যায় । সবাই মিলে ধরাধরি করে ঐখান থেকে নিয়ে আসে ।

একটি ভৌতিক প্রেমের গল্প

একটি ভৌতিক প্রেমের গল্প
লেখা ঃ MD Asadur Rahman - Shipon







মাহাদি ঃ দোস্ত আমার ১টা রিকুয়েষ্ট আছে তোর কাছে । বলবো ?



দুপুর ঃ ওহ তাই তো বলি বাসায় ডেকে এনে গরুর মাংশ দিয়ে জামাই আদর করে খিচুরি । বল শুনি ।



মাহাদি ঃ তুই এটা কি বললি ? বাসায় আজ খিচুরি আর গরু আর তোর পছন্দের খাবার এটা তাই তোকে নিয়ে আসলাম মিরপুরে ।



দুপুর ঃ আচ্ছা ভনিতা না করে অনুরোধটা বল ।



মাহাদিঃ শোণ দোস্ত । নিলা আমাকে বলছে তোকে দিয়ে ১টা ভৌতিক প্রেমের গল্প লিখাতে । ভার্সিটির ম্যাগাজিনে ছাপাবে । তবে নামটা ওর হবে । দোস্ত করা যাবে কি ?



দুপুর ঃ ২০০০টাকা লাগবে । দিবে ?



মাহাদি ঃ দোস্ত ও তরে টাকা দিবে । জানিসই তো ওর অনেক টাকা । বাবার গার্মেন্টস আছে ।



দুপুর ঃ খাবো না তোর খিচুরি । আমি গেলাম । ( উঠতে চায় কিন্তু মাহাদি ধরে ফেলে )



মাহাদি ঃ দোস্ত দোস্ত লাগবে না গল্প । আরে গাধা আমি তো তোর সাথে মজা করলাম টাকা নিয়ে । দোস্ত জানিসই তো মায়াবতি চলে যাবার পর খুব ভেঙ্গে পরেছিলাম । হটাৎ নিলা আসে আমার জীবনে নতুন করে । আবার স্বপ্ন দেখা শুরু করি । আজ বিকেল ও বলতেছিল যে দুপুর ভাইয়া কে বলো আমাকে ১টা ভুতের গল্প লিখে দিতে আমি ম্যাগাজিনে আমার নামে ছাপাবো । ও দোস্ত ফান করে বলছে । আমিই সিরিয়াস হয়ে বলছি । রাগ করিস না দোস্ত । আমিই টাকাটা দিতে চাইছিলাম নিজের হয়ে ।



দুপুর ঃ আর একটু খিচুরি আর মাংশ দে । খুব ভালো হইছে রান্নাটা ।



খাবারের পর আড্ডা দিয়ে চলে যায় দুপুর । পরেরদিন রাত প্রায় ৩টার একটু আগে দুপুর মাহাদিকে ফোন দেয় ।



মাহাদি ঃ ঐ হালারপুত এই রাইতে ফোন দিছস কেন ?



দুপুর ঃ তোর মেইল চেক কর সালা । তর নিলার গল্প পাঠায়ছি । “” একটি ভৌতিক প্রেমের গল্প “”



মাহাদি ঃ দেখতাছি মামা । তুই দারায় থাক , নরবি না কিন্তু ।



দুপুর ঃ মুরি দিয়া খা হালা । গূড নাইট ।



এরপর মাহাদি উঠেই মেইলে গিয়ে গল্পটী দেখে । নীলা কে ফরওয়ার্ড করে । গল্পটা নিচে দেওয়া হলো ।



“” একটি ভৌতিক প্রেমের গল্প “”



মিরপুর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে পরে মাহফুজ , নিরব , আর মাহাদি । তিন জনেই ফিন্যান্সে পরে । নিয়মিত ক্লাস করে ওরা । ক্লাসের সবার সাথেই ভালো সর্ম্পক ওদের । আজ সবাই ক্লাসে এসেছে শুধু মাহফুজ আসেনি । তবে ও ক্যাম্পাসে এসেছে নিরব ওকে দেখেছে । ক্লাস শেষ করে নিরব আর মাহাদি মাহফুজ কে খুজতে বের হয় । অবশেষে মাহফুজকে শহীদ মিনারের পাশে বসে থাকতে দেখে ।



মাহাদি ঃ ওই দোস্ত তুই ক্লাস করলি না কেন ?



নিরব ঃ অই তুই ঐ মেয়ের দিকে কি দেখস ?



মাহফুজ ঃ দোস্ত আমি ক্র্যাস খাইছি মেয়েটার উপর । ওরে আমি ভালোবেশে ফেলছি ।



নিরব ঃ যা প্রোপস কর । কাছে গিয়ে হাটু গেরে বল , অপসরি আমি তোমাকে ভালোবাসি ।



মাহাদি ঃ দোস্ত মেয়েটা সত্ত্যি খুব ভংকর সুন্দর । যা প্রোপস কর ।



যেই কথা সেই কাজ । কাছে গিয়ে হাটু গেরে বসে বলে দিল , আফরিন আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি । I love you . কথা গুলো শুনে মেয়েটি শুধু মুচকি একটূ হেসে আপাতত প্রস্থান নেয় ।



দুই দিন পর ক্যাম্পাসে নবীনবরন অনুষ্ঠান । মাহফুজের দুচোখ আফরিন কে খুজছে । কোথাও আফরিন নেই । আজ সে আবার তাকে প্রোপস করবে । নীল ১টা পাঞ্জাবি পরে এসেছে । আফরিন নেই তাই সে চলে যাচ্ছে এমন সময় মাহাই বলে



মাহাদি ঃ মাজু (মাহফুজ) তোর আফরিন আসছে ।



পিছন ফিরে মাহফুজ দেখে আফরিন তার দিকেই যেন আসছে । আজব তো আফরিন ও নীল শাড়ি পরে এসেছে । আফরিন আরো অবাক করার মত ১টা কাজ করেছে । বলুনতো আপনারা কি করেছে আফরিন ? সত্ত্যি কথা বলতে আপনারা কল্পনাও করতে পারবেন না কি করছে মেয়েটা । ঠিক আছে আমিই বলে দিচ্ছি । আফরিন মাহফুজের কাছে গিয়ে হাটু গেরে বসে বলে দিল , মাহফুজ আমিও তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি । I love you too . মাহফুজ থ হয়ে দারিয়ে রইলো ।



এইভাবেই শুরু হয় ওদের ভালোবাসা । এর ভিতর তানিম নামের ১টা ছেলেও আফরিনকে ভালোবেশে ফেলে । কিন্তু আফরিন তানিমকে পাত্তা দেয় না । সে সুধু মাহফুজকেই ভালোবাসে ।



এর কিছুদিন পর হটাৎ একদিন আফরিনের মা মাহফুজকে ফোন দিয়ে বলে যে আফরিন খুব অসুস্থ তুমি একটু আসো বাবা । মাহফুজ খবর পেয়ে ছুটে যায় আফরিনের বাসায় । গিয়ে দেখে আফরিন অসুস্থ । তার মায়ের কাছে থেকে শুনে যে ,



আফরিনের মা ঃ আফরিন নাকি হটাৎ করে কেমন যেন করতেছিল ২দিন ধরে । সবার সাথে আজব আজব বিহ্যাব করতেছিল । খুব রেগে যায় কথায় কথা । আজ সকালে তাকে ঘুম থেকে উঠাতে গেলে তার মাকে সে মারতে আসে , চোখ ২টা ভয়ংকর লাল হয়ে ছিল । সে তার ছোট ভাই রাহিলকে ঊচু করে ফেলে দেয় । আর কি সব আজেবাজে বকছিল তোমাকে নিয়ে । মাহফুজ বাবা আমার মনে হয় ওকে বদ জিন আছর করছে । হুজুর নিয়ে এসেছিলাম সে ও তাই বলছে ।



মাহফুজ ঃ আন্টি । আমি কি ওর সাথে একটু দেখা করতে পারি ?



আফরিনের মা ঃ হ্যা বাবা যাও ।



মাহাদি রুমে প্রবেশ করে দেখে আফরিন খাটের উপর বসে ১টা খাতায় কি যেন লিখছে । মাহাদি কে দেখে আফরিন ভংকর হাশি দেয় । হাসিটা এতোতাই কুৎসিত ছিল যে মাহফুজ ভয়ে ২পা পিছে চলে যায় ।



আবার সাহশ করে সামনে এসে ওর পাসে বসে । এবার কিছুটা শান্ত হয়ে আছে আফরিন ।মাহফুজ কয়েকবার আফরিনের সাথে কথা বলতে চায় কিন্তু সে কথা বলে না । মাহফুজ উঠে চালে যায় । যাওয়ার সময় মাহফুযের উপর দেওয়ালের উপর ঝুলে থাকা ১টা ফুলের টব পরে আর আফরিন হাসতে থাকে । মাথায় কিছুটা কেটে যায় মাহফুজের । মাহফুজ বাসায় চলে আসে ।



রাতে আজ মাহফুজ বাসায় একা , রুমে বসে ফেসবুকে দুপুরের সাথে চ্যাট করছে । মাহফুজ দুপুর কে তার বাসায় আসতে বলেছে । দুপুর আসতেছে , কাছাকাছি বলা যায় ।



হটাৎ কলিংবেল বেজে উঠে । হয়তো দুপুর চলে এসেছে । মাহফুজ গিয়ে দরজা খুলে দেয় । খুলে সে অবাক দাঁড়িয়ে থাকে , নিলা এসেছে । আফরিন আবার নীল রঙের শাড়ি পরে এসেছে , হাতে নীল চুরি , কপালে নীল টিপ , ঠোটে নীল লিপিষ্টিক । অসম্ভব সুন্দর লাগছে আফরিন কে । রংধনুও হার মানবে আজ ওর কাছে ।



মাহফুজ ঃ তুমি এতো রাতে ?



আফরিন ঃ মাহফুজ আমাকে বাচাও প্লিজ । আমাকে ওরা মেরে ফেলবে । আমাকে বাচাও ।



মাহফুজ ঃ কি হইছে বাবু তোমার ? আমাকে খুলে বলো প্লিজ ?



আফরিন ঃ হ্যা বলবো , তার আগে চলো ছাদে যাই । চাদের আলোটা আজ খুব সুন্দর লাগছে ।



মাহফুজ ঃ হা সুন্দর লাগছে , তবে তোমার চেয়ে না । চলো যাই ।



২জন ছাদে যায় । আফরিন তার কথা বলছে



আফরিন ঃ জানো কেউ একজন আমার উপর কালোজাদু করছে । সে চায়না আমি তোমার হই । তোমাকে আমার কাছে থেকে আলাদা করতে চায় ।( এই বলে আফরিন মাহফুজকে জরিয়ে ধরে )



মাহফুজ ও জরিয়ে ধরে আফরিনকে । তবে সে বুঝতে পারে যে তাকে ছাদের একদম শেষ প্রান্তে নিয়ে এসেছে ।



আফরিন মাহফুজকে ধাক্কা দিতে যাবে আর ঠিক সেই মুহুর্তে মাহফুজ আফরিন কে ঠেলে সরে আসে ।



আফরিন রাগে গরগর করতে থাকে । চোখ ২টা দিয়ে যেন আগুন ঝরবে এমন অবস্থা , চুল্গুলো এলোমেলো হয়ে উরছে । শরীর দিয়ে ফেটে যেন রক্ত ঝরছে । পুরো ভয়ানোক অবস্থা । আফরিন দৌড়দিয়ে এসে মাহফুজের উপর ঝাপিয়ে পরে ওকে মেরে ফেলতে চায় এমন সময় দুপুর ছাদে চিৎকারের শব্দ শুনে চলে আসে । এসে এই অবস্থা দেখে হাতের সিগারেট টা ছুরে মারে । আগুন দেখে পালিয়ে যায় ।



দুপুর ঃ ঐ ছেলেটা কে মাহফুজ ?



মাহফুজ ঃ ওতো নীলা ।



দুপুর ঃ ঐটা ১টা ছেলে প্রেতাত্তা ছিল । তোকে মারতে আসছিল । বেচে গেছিস ।



মাহফুজ ঃ থাংক্স রে দোস্ত ।



তারপর মাহফুজ দুপুরকে সব খুলে বলে । পরেরদিন দুপুর মাহফুজ কে নিয়ে এক জ়ীন হুজুরের কাছে যায় । হুজুর বলে আফরিনের উপর কেউ একজন প্রেত চালান করেছে । আর ঐ প্রেতাত্তা মাহফুজ আর আফরিন কে এক হতে দিবে না । প্রয়োজনে মারাত্তক কিছুও হতে পারে । আপাতত ১টা তাবিজ দিয়ে দেন হুজুর । ফিরে আসে আসে বাসায় । মাহফুজ রাতে আফরিনের মা কে ফোন দিলে সে বলে আফরিন ভালো আছে । পরেরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে মাহফুজ ক্যাম্পাসে যায় । সেখানে তানিমের সাথে দেখা হয় । তানিমকে মাহফুজ সব খুলে বলে । তানিম মাহফুজ কে বলে আমার সাথে ১ ওঝার কাছে জেতে পারিস । সে তোর সব সমস্যা দূর করে দিবে । মাহফুজ কোন কিছু না ভেবেই যেতে রাজি হয়ে যায় । দুপুরের পর তারা রওনা হয় । সন্ধার দিকে গাজিপুরের সিমলা নামের এক গ্রামের এক পোড়া বাড়ীতে নিয়ে যায় । ধিরে ধিরে সন্ধ্যা রাতে পরিনত হয় ।



মাহফুজ ঃ কিরে তোর ওঝা কোথায় ?



তানিমঃ আসছে দারা ।



এই বলে তানিম মাহফুজ কে রেখে বাইরে যায় ।



তানিম ১টা ভাঙ্গা চেয়ারে বসে আছে । পিছন থেকে তানিমের মাথায় প্রচুর আঘাত এসে পরে । এক চিৎকার দিয়ে মাটিতে লটিয়ে পরে মাহফুজ । এরপর কেউ আর মাহফুজের খবর বা দেখা পায় না ।



২দিন পর আফরিন সুস্থ হয়ে যায় । কিন্তু সে মাহফুজের সব স্মৃতি ভুলে যায় ।



এর পর কোন এক দিন তানিম আফরিনের বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠায় । ২ পরিবারের সম্মতিতেই ওদের বিয়ে হয় । খুব ভালোভাবেই শুরু ২জন তাদের নতুন সংসার । বছর প্রায় শেষের দিকে । তানিম আর আফরিনের ঘরে কিছুদিন পর নতুন সদস্য আসবে । তানিম চেষ্টা করে সব সময় আফরিন কে সময় দেবার । এর মাঝে হটাত করে ১টা প্রবলেম শুরু হয় । ১টা ছেলে আফরিনকে খুব ডিস্টার্ব করছে , সে বলে আফরিন নাকি তার প্রেমিকা । ছেলেটির নাম মাহফুজ । কিন্তু আফরিন তো মাহফুজ নামে কাউকে চেনে না । সে তানিমকে ভালোবাসে , তানিম তার হাজবেন্ড । সে তানিমকে সব খুলে বলে , তারপর তানিম আফরিনকে ১টা তাবিজ এনে দেয় । তারপর থেকে ছেলেটা আর আসে না ।



আফরিনের একটু সন্দেহ হয় । তাবিজ আর ছেলেটার মধ্যের সম্পর্ক কি ? আফরিন তার মা কে জিজ্ঞাস করে । তার মা তাকে তার বিয়ে আগের ঘটনা খুলে বলে । আফরিন কথা গুলে শুনে তার আগের কথা মনে পরে । অঝরে কেদে ঊঠে মেয়েটা । তারপর কিছুদিন খুজেফিরে মাহফুজকে । কিন্তু কোথাও পায় না ।



ইদানিং আফরিন তানিম এর সাথে যেন কেমন খারাপ আচরন করছে ।



তানিম ঃ আফরিন কি হয়েছে তোমার ?



আফরিন ঃ কিছু না ।



তানিম ঃ কিছু তো ১টা হয়েছে । বলো ?



আফরিন ঃ আমার মাহফুজ কোথায় ? আমার মাহফুজ কে এনে দাও ।(কেদে কেদে বলে )



তানিম ঃ মাহফুজ কে , আমি তাকে চিনি না ।



আফরিন ঃ তুমি জানো । তা না হলে আমাকে এই তাবিজ এনে দিছো কেনো ? প্লিজ আমার মাহফুজ কে এনে দাও আমি মাহফুজের কাছে যাব ।



তানিম ঃ (রেগে গিয়ে) মাহুফুজের কাছে যাবি তুই ? মাহফুজ কে আমি মেরে ফেলছি । (বলে থাপ্পর দেয় আফরিনকে)



আফরিন ঃ কি ? আমি তোমাকে পুলিশে দিব ।



তানিম ঃ আমাকে পুলিশে দিবি ? কি প্রমান আছে তোর কাছে ? আর হ্যা , মাহফুজই কি তোকে শুধু ভালোবাসতো ? আমি কি বাশি না ?



আফরিন ঃ (তানিমের শার্টের কলার ধরে) আমি মাহফুজের কাছে যাবো । তুই আমার মাহফুজ কে এনে দে ।



তানিমঃ হারামজাদি তুই মাহফুজের কাছে যাবি ? যা তাহলে ছাঁদ থেকে লাফ দে । তারপর তোর মাহফুজ এসে তীকে নিয়ে যাবে ।



পরেরদিন সকালে তানিম আফরিন কে নিয়ে হসপিটালে যাওয়ার সময় গাড়ি ব্রেকফেল করে এক্সিডেন্টে তানিম আর আফরিন ২জনে মারা যায় । মৃত দেহ পরে থাকে রাস্তায় । দেহ থেকে আত্তা বেড়িয়ে আসে তানিমের আত্তাকে কালোজামা পরা ৩জন এসে জোর করে ধরে নিয়ে যায় । দুরে দারিয়ে আছে মাহফুজের আত্তা । আফরিনের আত্তা দৌড় দিয়ে মাহফুজের আত্তার কাছে গিয়ে জঅড়িয়ে ধরে বলে



আফরিনের আত্তা ঃ জান আমি তোমার কাছে চলে এসেছি ।



মাহফুজের আত্তা ঃ কিন্তু কেন তুমি এটা করলে ? গাড়ীর ব্রেক তুমি আগে থেকেই লুস করে দিয়েছিলে ।



আফরিনের আত্তা ঃ এটা ছারা তোমার কাছে আসার আমার আর কোন উপায় ছিল না ।



মাহফুজের আত্তা ঃ কিন্তু তোমার বাচ্চা ? সে কেন অকালে প্রানটা হারালো ?



আফরিনের আত্তা ঃ ঐটা আমার বাচ্চা না । ঐটা তানিমের বাচ্চা , আমি তো ঐটাকে পৃথিবিতে আনতে পারবো না ।



এরপর আফরিন আর মাহফুজের আত্তা চলে যায় অন্ন্য কোন জগতে । যেখানে হয়তো আর কোন তানিম বা কোন কালোজাদু তাদের ভালোবাসার মাঝে সমস্যা করবে না । এরপর থেকে শুরু হবে তাদের নতুন জীবন । তবে তারা আর মানুষ হয়ে সংসার না করতে পারলেও ভূত হয়ে খারাপ সংসার জীবন কাটাচ্ছে না তারা ।



“”সমাপ্ত””







গল্পটি পরে মাহাদি মনে মনে বলে শালা গল্পটি সত্ত্যি ফাটাফাটি হয়েছে । মাহদি দুপুর কে ফোন দেয়



দুপুর ঃ এতোরাতে আবার ফোন দিছিস কেন ?



মাহাদি ঃ দোস্ত গল্পটা খুব ভালো থ্যাংকস ।



দুপুর ঃ যা কোল বালিস নিয়ে ঘুমা । গুড নাইট ।



কথা শেষ করে দুপুর ঘুমাতে যায় ।



দরজায় টোকার শব্দ । ঘুম ভেঙ্গে যায় দুপুরের । ধিরে ধিরে গিয়ে দরজা খুলে দেয় । খোলার সাথে সাথে ২টা ছেলে আর ১টা মেয়ে রুমে ঢুকে পরে ।



দুপুর ঃ কে কে , কে তোমরা ?



১ম জন ঃ আমাদের চিনতে পারছো না ? হাহাহাহাহাহাহাহাহাহাহা ।



২য় জন ঃ আমি মাহফুজ ।



৩য় জন ঃ আমি আফরিন আর ও তানিম ।



বুঝলাম কিন্তু আমি তো তোমাদের চিনি না । কেন এতোরাতে ১জন ভদ্রলোকের বাসায় এসে ডিস্টার্ব করছো ?



মাহফুজ ঃ তুমি ভদ্রলোক ? হাহাহাহাহা (ভৌতিক হাসি) তুমি ১টা খুনি ।



দুপুর ঃ হোয়াট ? পাগল নাকী তোমারা ?



আফরিন ঃ হাহাহাহা । পাগল না , আমরা ভুত ।



দুপুরব ঃ কি সব আজে বাজে বলছো ? ভুত বলতে কিছু নাই ।



তানিম ঃ ভুত বলতে কিছু নাই ? তাহলে তুমি কেন আমাদের ভুত বানালে আর কেনো আফরিন আর মাহফুজ কে ভুতের সংসার দিলে । কেন আফরিন কে আমার বউ রাখলে না ?



দুপুর ঃ কি বলছো তোমরা ? আমি কিছু বুঝতেছি না ।



আফরিন ঃ আমরা তোমার “” একটি ভৌতিক প্রেমের গল্প “” গল্পের মাহাদি , তানিম আর আফরিন । তোমার সাথে আমাদের কিছু বোঝা পড়া আছে ।



মাহফুজ ঃ তুমি কেন আমাকে ঐ পোড়াবাড়ী নিয়ে গিয়ে আমার বন্ধু তানিমের হাতেই আমাকে মারলে ? তুমি জানো কি পরিমান ব্যথা পেয়েছি আমি ? আমি ১টা পাথর নিয়ে এসেছি আমিও তোমাকে এখন এইভাবে আঘাত করে মারবো ।



দুপুর ঃ আজব । কি বলো তোমরা ? ঐটা একটা গল্প । (কথা শেষ হতে না হতেই মাহফুজ দুপুরে মাথায় আঘাত করে, মাটিতে বসে পরে দুপুর ) প্লিজ আমাকে কেউ বাচাও । আমি মরে যাচ্ছি ।



আফরিন ঃ না না । মরলে তো হবে না । তুমি আমার বেচ্চে কে আমার হাতে দিয়ে মেরেছো । আগে বলো কিভাবে ১টা মা এই কথা বলতে পারে যে এই বাচ্চা এই বাচ্চা সে দুনিয়াতে আনতে পারবে না ? সেটা তো তানিমের একার বাচ্চা না আমার ও বাচ্চা । কিন্তু তুমি আমাকে দিয়ে এই কথা বলিয়েছো আর আমাকে দিয়ে আমার বাচ্চাকে মারিয়েছো। (কেদে উঠে আফরিন)



দুপুর ঃ দুপুর তোমরা বুঝতেছো না কেন এটা শুধু ১টা গল্প । প্লিজ তোমরা চলে যাও ।



তানিম ঃ আমাকে আমার বাচ্চা ফিরেয়ে দাও । তা না হলে আমি তোমাকে মেরে ফেলবো । ( বলে গলা টিপে ধরে দুপুরের)



আফরিন আর মাহফুজ ও এসে গলাটিপে ধরে আর বলে কেনো তুমি আমাদের সবাই কে মেরে ফেললে ? তোমার লেখার ক্ষমতা আল্লাহ দিয়েছে বলেই কি তুমি যা খুশি তাই করবে ? আজ তোমাকে মরতে হবে আমাদের হাতে ।



ধিরে ধিরে দুপুরের সব কিছু অন্ধকার হয়ে যায় ।







এই দুপুর এই দুপুর কি হইছে তোর ? এমন করছিস কেন বাবা ?



দুপুর ঃ মা আমি কি স্ব্প্ন দেখছিলাম এতোখন ?



মা ঃ হ্যা বাবা । বাবা তুই মনে হয় খারাপ কিছু দেখছিস । আমি তোর পাশে শুয়ে তোর মাথা বুলিয়ে দেই । তুই এই পানি টা খেয়ে ঘুমা আব্বু ।



মা কে জরিয়ে ধরে কাপতে কাপতে ঘুমিয়ে পরে দুপুর । পরের দিন থেকে দুপুরের টানা ২২দিন খুব জর হয় । আর গলায় হাতের দাগ থাকে । যদিও এই কথা সে আজকের আগে কারো সাথে শেয়ার করে নাই । এখনো প্রতি রাতে দুপুরের জর আসে । ভয়ে মাঝে মাঝে এখনো গা শিউরে উঠে ।



সমাপ্ত ।

বৃহস্পতিবার, ৪ অক্টোবর, ২০১৮

আরাধ্য কথন



#আরাধ্য_কথন
লেখাঃ MD Asadur Rahman – Shipon

ভালোবাসা এক শূন্যতার নাম, ভালোবাসা একবুক বেদনার নাম, ভালোবাসা স্পষ্টত ধুকে ধুকে মৃত্যুর নাম নাকি ভালোবাসা এক অনুভবের নাম?
ভালোবাসার কি কোন রঙ আছে ? আছে কি কোন বর্ন বা আকার?
ভালোবাসার রঙ নীল, আর বেদনার রঙ ও নীল। ভালোবাসা আকাশ সমান আর আকাশ মানেই অসিম শূন্যতা। আসলে ভালোবাসা বলতেই হয়তো কিছু নেই।
হাতে জ্বলন্ত সিগরেট, পরনে জিন্স আর টিশার্ট। উপরের কথা গুলো মনে মনে বলতে বলতে হেটে যাচ্ছিলো আরাধ্য একবুক অসিম শুন্যতা নিয়ে। তার প্রিয়তমা আজ অন্যের হয়ে যাচ্ছে। কিছুখন আগেই কথা হলো তানহার সাথে। অবলিলায় বলে গেলো সে আর তার হবে না,
আরাধ্যঃ ফোন দিয়েছো কেনো?
তানহাঃ কোথায় আছো তুমি?
আরাধ্যঃ যেখানেই থাকি না কেনো তুমি জেনে কি করবে?
তানহাঃ তুমি কি পাগলামো করছো?
আরাধ্যঃ কিশের পাগলামী? আমি খুব ভালো আছি, এইতো হাটছি অচেনা রাস্তা ধরে।
তানহাঃ দেখো আমাদের এক হওয়া কোন ভাবেই সম্ভব না। আমাদের মধ্যে এখন আলোকবর্ষ দুরুত্ব।
আরাধ্যঃ কোন দুরুত্ব নেই, তুমি চাইলেই আসতে পারতে।
তানহাঃ তুমি বুঝতেছো না কেনো আমি অলরেডি ম্যারিড। আজ আমাকে নিয়ে যাবে আর তুমি এখন এসব বলছো।
আরাধ্যঃ ভালোবাসা আমায়?
তানহাঃ (কিছুখন চুপ থেকে) মোটেও না।
আরাধ্যঃ তাহলে ফোন দিয়েছো কেনো? সান্তনা দিতে?
তানহাঃ নাহ। টেনশন হচ্ছিলো। যদি উল্টা পাল্টা কিছু করো।
আরাধ্যঃ একটা গান শুনাবে?
তানহাঃ চুপ করো (তানহার অমৃত বানী)। আমিও আগেও অনেকবার বলেছি আমি গান গাইতে পারি না।
আরাধ্যঃ আচ্ছা রাখি।
তানহাঃ শুনো।
আরাধ্যঃ বলো।
তানহাঃ ভুলে যেও আমায়, ভালো থেকে আর আমাকে ক্ষমা করে দিও।
আরাধ্যঃ ক্ষমা কিসের জন্য? তুমি তো আর আমাকে ধোকা দাওনি। তুমি খুব ভালো। তোমাকে অনেক ডিস্টার্ব করেছি পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও।
তানহাঃ আবার। প্লিজ তুমি এভাবে বইলো না।
আরাধ্যঃ হুম। আর কথা হবে না, সো কিছু বলাও হবে না। যারাকে দিয়ে তোমার বিয়ের গিফট পাঠিয়েছি।
তানহাঃ তুমি আসবে না? আমাকে বউ সাজে দেখবে না?
আরাধ্যঃ অনেকবার দেখেছি।
তানহাঃ কল্পনায়।
আরাধ্যঃ আই লাভ ইউ।
আরাধ্য ফোন কেটে দিয়ে রাস্তা দিয়ে হাটছে আর কথা গুলো বলছে মনে মনে। পেছন থেকে কিছু একটা এসে ধাক্কা দেয় আরাধ্যকে। এরপর কিছুখন অচেতন অবস্থায়। জ্ঞ্যান ফিরলে দেখে সে রাস্তার পাশে পুকুরে পরে আছে। উঠে দাঁড়ায়, হাত-পা সহ সম্পুর্ন শরীর ব্যাথা।
অনেক মানুষের চিৎকার। কাছে গিয়ে দেখে একটা বাস এক্সিডেন্টলি খাদে পরে গেছে। আশে পাশের মানুষজন ছুটে এসেছে। অনেক মানুষ মারাও গেছে দেখছি। রাস্তার উপরে কয়েকজনের লাশ সুয়িয়ে রাখা হয়েছে। আরাধ্য এগিয়ে যায়। বাস থেকে এখনো আহত মানুষদের উদ্ধার করা হচ্ছে।
বাসের চাকার নিচ থেকে একটা লাশ বের করা হয়। একদম থেতলে গেছে। উঠিয়ে এনে পারে রাখে। পুলিশ এনে দুইজনকে কি জেনো বলে। তারপর পুলিশ কিছু লাশ নিজ দায়িত্বে গাড়িতে উঠিয়ে পাঠিয়ে দেয়। এরপর আসেপাশে লোকজনদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয় আর বলে সব আহত যাত্রী আর লাশ বের করে আনা হয়েছে। আপনারা সবাই চলে যান। সন্ধ্যা হয়ে এসেছে।
কিন্তু নিচের দিকে তো আরো কিছু লাশ আছে। এগুলোকে তো পাঠানোর ব্যাবস্থা করা হলো না। লোকজন সরে যাবার পরে দুইজন লোক এসে লাশগুলোকে পাশের একটা নর্দমার কুচুরিপানার নিচে পুতে রাখলো। কিন্তু কেনো? আরাধ্যের কৌতহুলি মন লুকিয়ে লুকিয়ে লাশ গুলোর দিকে এগিয়ে গেলো। কুচুরি পানা সরিয়ে এক এক করে দেখলো। শেষের লাশটা উপর করে রাখা আছে। হাত দিয়ে উল্টিয়ে মুখ দেখতেই দুই হাত পেছনে লাফ দিয়ে চলে গেলো।
এ তো আমি। আরে আমি এখানে কেনো? স্বপ্ন দেখছি না তো। চিৎকার করতে লাগলো আরাধ্য। সেখান থেকে ছুটে আসে পুলিশদের গাড়ির কাছে। চিৎকার করে ডাকে কিন্তু কেউ তার ডাকে সারা দেয় না।
আরাধ্যঃ হ্যালো, স্যার এই যে আমি। আমি ঐখানে কেনো? .......................................... কি হলো, আমার কথা শুনতে পাচ্ছেন না?
আরাধ্যঃ আমি কি মরে গেলাম? মরে গেলে তো ঐখানে সুয়ে থাকার কথা তাহলে এখানে কি করছি? শুয়েও তো আছি আবার এখানেও । নাহ মাথায় কিচ্ছু ঢুকছে না। চিমটি কেটে দেখি।
আরাধ্য নিজেকে নিজে চিমটি কেটে দেখে। কোন ব্যাথা বা অনুভব নেই। মানুষিক ধাক্কা খেয়ে মাটিতে বসে পরে।
আরাধ্যঃ আমি মারা গিয়েছি, আর এখন আমার আত্তা ঘুরছে আসে পাসে। আমি ভূত হয়ে গেলাম না তো?  ধুর বাল। কেউ তো আমার কথা শুনছে না কাকে বলছি। আচ্ছা কি করবো এখন আমি? ভূতদের কি হয়। ধুর কিচ্ছু ভালোলাগছে না। কেমন জানি অসহ্য যন্ত্রনা লাগছে।
ভাবতে ভাবতে সব কিছু অন্ধকার হয়ে যায় আরাধ্যের। ঘোড় অন্ধকার।
উফ কে কে, এমন করছো কেন? (আরাধ্য চোখ খুলে দেখে সে একটা রাস্তার পাশে ফুটপাতে সুয়ে আছে, আর কয়েকটা ছেলে ওর পিঠে লাত্থি দিচ্ছে)
আরাধ্যঃ কে তোমরা?
শালা ভূতের জাতের নামে কলংক। তুই ভূত হয়ে এই রাতে ঘুমাচ্ছিস?
আরাধ্যঃ আমি ভূত হলাম কবে? ওই কি বলো।
ঐ ব্যাটা ভূত না হইলে আমার লাথি কি তোর গায়ে লাগতো?
আরাধ্যঃ হ্যা আমি তো মারা গিয়েছি। এখন ভূত হয়ে গেছি তাই না।
নতুন মাল মনে হইতেছে। কবে মরছো?
আরাধ্যঃ এইতো আজই।
জানাজা বা শেষকৃত্য হয় নাই?
আরাধ্যঃ নাহওরা আমার লাশ গুম করে ফেলছে।
শাওন কাকা পাইছি। গুমের ভুত পাইছি একটা। এরেও গুম কইরা মাইরা ফেলছে।
আরাধ্যঃ আরে নাহ। রাস্তায় এক্সিডেন্টে মারা যাই। এরপর লাশ একটা পুকুরে কুচুরিপানার নিচে লুকিয়ে রাখে, পরে মনে হয় কোথাও মাটিচাপা দিবে।
কি নাম তোমার?
আরাধ্যঃ আমি আরাধ্য। তোমরা?
-   আমি মাহফুজ
-   আমি আজাদ
-   আমি কাওসাও তবে ভালোবাইসা সবাই সিস্টেম বইলা ডাকে
-   আমি নোমান আমারে সবাই হিরো আলম বলে আর ঐযে বইসা পয়া উঠাইয়া দিয়া হাত নাড়া চাড়া করছে উনি শাওন। পৃথিবীতে থাকতে জাতীয় কবি ছিলেন।
আরাধ্যঃ জাতীয় কবি তো কাজী নজরুল ইসলাম। উনি কোন দেশের জাতীয় কবি?
কাওসারঃ ইশশিরে, সিস্টেম বুঝেনারে। আরে আমরা ভালোবাইসা ডাকতাম। আমাগো শিপন ভাই নাম দিছিলো।
আরাধ্যঃ ওহ।
মাহফুজঃ শুনেন। উনি আমাগো গুরু। আসেন আপনার সাথে পরিচয় করায় দেই।
আরাধ্যঃ চলো।

আজাদঃ কাকা তোমার বিড়ি টানা হইছে?
শাওন সাহেব হাত দিয়ে চুপ থাকার ইশারা করে।
আরাধ্যঃ(কাউসারের কানে কানে নিচু গলায়) আচ্ছা উনি এই পাইপটা বার বার মুখে নিচ্ছেন আবার বের করছেন কেনো?
কাওসারঃ আরে ভাই সিস্টেস এটা, সিস্টেম করতেছে।
আরাধ্যঃ বুঝলাম না।
কাওসারঃ বিড়ি খাও নাই জিবনে? ভূত হওয়ার পর কি আর বিড়ি খাওয়া যায়? যায় না। তাই সিস্টেমে পাইপ নিয়ে বিড়ির সুখ নিতাছে।
আরাধ্যঃ ওহ বুঝলাম।
শাওনঃ ঐ কারে ধইরা আনলি তোরা?
মাহফুজঃ কাকা এইটা নতুন ভূত। এইখানে আইসা পড়ছে তাই তোমার কাছে নিয়া আসলাম।
শাওনঃ কি নাম তোমার?
আরাধ্যঃ আমি আরাধ্য।
শাওনঃ কেমনে মরলা?
আরাধ্যঃ এক্সিডেন্টে।
শাওনঃ দেশে এক্সিডেন্ট বাইরা গেছে। যেভাবে মানুষ মরতেছে সেভাবে ভুতের সংখ্যাও বাড়তেছে। আচ্ছা বাদ দাও। তো থাকবা কোথায়?
আরাধ্যঃ আমি তো কিছু জানিনা।
শাওনঃ ঐ হিরো আলম ওরে রাখুম নাকি আমাদের সাথে?
নোমানঃ কাকা রাখি। তাইলে সুবিধা আছে। ওই পাড়া বাবুল ভুতদের সাথে এইবার টক্কর দেওয়া যাইবো।
শাওনঃ কথা খারাপ বলিস নাই। আচ্ছা রাখ।
আরাধ্যঃ ধন্যবাদ আপনাদের।আচ্ছা একটা কথা খুব জানতে ইচ্ছে করছে।
আজাদঃ কি ?
আরাধ্যঃ তোমরা মরলে কিভাবে?
সবাই হেসে দেয়।
আজাদঃ হাহাহাহাহাহাহাহা, সব গুজব সব গুজব। আমরা মরি নাই।
আরাধ্যঃ মানে।
কাওসারঃ মানে কি? মানে হইলো সব সিস্টেম।
আরাধ্যঃ খুলে বলো না রে ভাই।
শাওনঃ ওই সব খুইলা বল।
মাহফুজঃ কাকা আমি কই। শুনো ভাই। একদিন রাতে আমরা একটা বাড়ির দ্বোতালায় রাতে বারবিকিউ পার্টি করছিলাম।গানা বাজনা করতে করতে পার্টি। হটাত করে গ্যাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরন হইয়া আমরা একসাথে সবাই মইরা গেলাম।
আরাধ্যঃ খুবই দুঃক্ষজনক।
শাওনঃ চল ঘুইরা আসি। এতো প্যাচাল ভালো লাগে না।
নোমানঃ চলো কাকা।
শাওন আর নোমান পয়া দিয়ে মাটিতে একটা ধাক্কা দিয়ে সুপারম্যানের মত উড়তে শুরু করে। এর পর কাওসার ও দৌড় দেয়।
আজাদঃ ভাই চলেন। ( চলেন বলে সেও উড়ে যায়)
আরাধ্যঃ তোমরা সুপারম্যান?
মাহফুজঃ হাহাহাহাহাহা। নাহ ভূত।
আরাধ্যঃ উড়তে পারো। আমাকে শেখাবে?
মাহফুজঃ ভুতেরা সব পারে। তুমিও ভূত তুমিও পারবে।
আরাধ্যঃ কিভাবে?
মাহফুজঃ পয়া দিয়ে মাটিতে ধাক্কা দিয়ে উপরের দিকে মনকে নিয়ে যাও দেখবে তুমিও চলে গেছো।
আরাধ্য ট্রাই করে। প্রথমে পরে গেলেও পরেরবার ঠিক উড়ে যায়। তবে চলাচলে কন্ট্রোল আনতে কিছুটা সময় নেয়।
আরাধ্যঃ ওয়াও। ভূত হয়ে যে এতো মজা আগে জানতাম না।
কাওসারঃ ধুর মিয়া, যখন ঠেলায় পরবা বুঝবা।
আজাদঃ খাওন নাই, থাকার জায়গা নাই, মানুষের অত্যাচার আর সে বলে ওয়াও।
আরাধ্যঃ নাহ, উড়ে বেরাতে আমার ভালোই লাগছে।
শাওনঃ সবাই নিচে নাম। ঐ দেখ বাবুল।
সবাই মিলে নিচে নামে। নিয়ন আলোর ডাকার শহর, কোন মানুষজন নেই, এই রাতে শহরের এই অংশটুকু ভুত-ভূতুদের।
আরাধ্যঃ ওরা কারা?
কাওসারঃ মাস্তান। সিস্টেমে মাস্তান।
মাহফুজঃ আমরাও মাস্তান। ওরা আমরা এখন এই জায়গাটা দখল নিয়ে ঝামেলা করতেছি। শালাগো মাইরা এলাকা ছাড়া করতে হবে।
আরাধ্যঃ তাহলে কি এখন আমিও মাস্তান?
নোমানঃ অবশ্যই।
শাওন বাবুলের সামনে দাঁড়ায়।
বাবুলঃ এইভাবে সামনে দাড়াইলি কেন?
শাওনঃ দাড়াইলে কি করবি?
বাবুলঃ দেখ একলা পাইয়া ঝামেলা করবি না। সাহষ থাকলে পরে আসিস। আমিও আমার পোলাপাইন নিয়া আসুম।
কাওসারঃ কাকা সিস্টেমে আঘাত দিলো। ছাইড়া দাও।
শাওনঃল ছাইড়া দিমু?
নোমার বাবুলের লুঙ্গিতে একটা টান দিয়ে লুঙ্গি খুলে ফেলে। বাবুল লুঙ্গি উচা করে ভৌদৌড়আর সবাই মিলে হেসে দেয়। তারপর হাটা শুরু করে।
কিছুদুর হাটার পর হটাত একটা মানুষকে দেখতে পায়। আজাদ খুব খুশি। কাকা পাইছি পাইছি বলে চিৎকার।
আরাধ্যঃ তুমি এতো খুশি কেন?
আজাদঃ মানুষ পাইছি। একা একা হাটতেছে। আজ খাইছি তোরে দাড়া।
আরাধ্যঃ তোমরা মানুষও খাও নাকি?
মাহফুজঃ ধুর, এই খাওয়া সেই খাওয়া না। এই খাওয়া মানে হইলো ওরে ভয় দেখাইয়া ১২টা বাজাই দিবো।
কাওসার লোকটার সামনে গিয়ে সাদৃশ্য হয়। মাটি থেকে একটু উপরে, হাট দিয়ে নিজের মাথাটা নিজে টেনে ছিড়ে ফেলে। আর এটা দেখে লোকটা জ্ঞ্যান হাড়িয়ে পরে যায়তার ভয়ে জ্ঞ্যান হাড়িয়ে পরে যাওয়া দেখে ওরা যে কত টা খুশি বা আনন্দিত সেটা ভাষায় বুঝিয়ে বলা যাবে না।
ভোর হয়ে এসেছে প্রায়। আরাধ্যকে সাথে নিয়ে ওরা ফিরে আসে পুরোনো এক বিল্ডিং এর পরিত্যাক্ত ছাদে। ছাদের ভাঙ্গাচোরা চিলেকোঠায় তাদের বর্তমান বাসস্থান। নতুন করে ভেঙ্গেচুরে বিশাল অট্রালিকা গড়ার সিদ্ধান্তের আগপর্যন্ত হয়তো এখানেই থাকতে হবে তাদের।
আরাধ্য এখানেই থাকে। বেশ কিছুদিন  হয়ে গেছে। ভূত জীবন খারাপ কাটছে না তার। তবে প্রিয় জায়গা গুলো খুব মিস করে। ধানমন্ডি লেক ব্রিজের কোনায় বসে সিগারেট টানতে টানতে আড্ডা, রবিন্দ্র সরবরের চা। চা এর কথা বলতেই মনে পরে গেলো তানহার কথা। তানহা সরবরের চা খুব পছন্দ করে। আরাধ্য যেদিন শুনেছিলো যে তানহা সরবরের চা পছন্দ করে সেদিনই ভোরে চা খেতে গিয়েছিলো। তাও আবার অফিসের বসকে নিয়ে।
আরাধ্য মন খারপ করে বসেছিলো। শাওন এসে পেছন থেকে ডাক দেয়। ইতিমধ্যে শাওন আর আরাধ্যের সম্পর্কটা খুব জমে গেছে, দুজনেই ছ্যাকাখাওয়া তাই হয়তো।
শাওন ঃ কি রে কি হইছে?
আরাধ্যঃ কিছু না।
শাওনঃ আরে বল ব্যাটা।
আরাধ্যঃ আড্ডার জায়গা গুলো খুব মিস করছি। যেতে সেখানে গিয়ে আবার আড্ডায় জমে উঠতে পারতাম।
শাওনঃ কোথায় বল? আজ সেখানে যাবো।
আরাধ্যঃ প্রায় সন্ধ্যায় ধানমন্ডি লেখে, রবিন্দ্র সরবরে আড্ডা দিতাম।
শাওন চিতাকার করে বাকি সবাইকে ডাক দেয়। ওরা চলেও আসে।
শাওনঃ আজ ধানমন্ডি লেকে যাবো। সেখানে আড্ডা দিবো।
কাওসারঃ রাতে?
শাওনঃ নাহ এখনি।
কাওসারঃ এখন তো সন্ধ্যা। এখন অনেক মানুষ, এতো মানুষজনে গেলে ঝামেলা হয়।
মাহফুজঃ কথা সত্য।
শাওনঃ মাঝে মাঝে ঝামেলাতে পরা ভালো। চল।
শাওন আরাধ্য সহ সবাই মিলে উড়ে চলে আসে ধানমন্ডি লেকে। এককোনে বসে আড্ডা দিচ্ছিলো। আড্ডার হাসাহাসির শব্দ কোন একভাবে একটু পাশেই বসে থাকা এক জুটির কানে যায়, ভয়ে চিৎকার করে উঠে। তারপর সেখান থেকে পালিয়ে আসে রবিন্দ্র সরবরে। হাটছিলো সবাই মানুষদের মাঝ দিয়ে। হটাত আরাধ্যের চোখ পরে একটা মেয়ের দিকে। মেয়েটি তানহা। আরাধ্যের ভালোবাসার মানুষ। বিয়ে হয়ে গেছে, জামাই এর সাথে ঘুরতে এসেছে। মাঝে মাঝেই ওরা দুজনে আসতো এখানে আর তাই আরাধ্যও এই দিকটাতে ভয়ে ভয়ে আসতো।
শাওনঃ কি রে আবার মন খারাপ কেন? কি হইছে?
আরাধ্যঃ এই মেয়েটাকে দেখছো না? এই মেয়েটিই তানহা।
শাওনঃ ১০ বছরের ভালোবাসা, লুকিয়ে রাখার তানহা?
আরাধ্যঃ হুম।
শাওনঃ ছেলেটা কে?
আরাধ্যঃ ওর জামাই।
শাওনঃ ভালোই মানাইছে।
আরাধ্যঃ খুব ইচ্ছে করে ওর পাশে পাশে থাকতে, অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে, ওর মুখের কথা শুনতে।
শাওনঃ যা পাশে পাশে থাক, ইচ্ছে মত তাকিয়ে থাক, পাশে বসে ওর গল্প শোন।
আরাধ্যঃ সে তো সম্ভব না।
শাওন ঃ সম্ভব না কে বলছে? তুই এখন চাইলেই পাশে গিয়ে বসতে পারবি, কথা শুনতে পারবি।
আরাধ্যঃ দারুন আইডিয়া। আমি তোপ চাইলেই এখন রোদেলার পাশাপাশি থাকতে পারবো, ওর মুখের কথা, ওর মনভোলানো হাসি দেখতে পাবো।
শাওনঃ যা বেটা যা।
আরাধ্য তানহার কাছাকাছি চলে আসে, তানহা আর তার জামাই এর সাথে তাদের বাড়িতেও চলে আসে।এরপর থেকে আরাধ্য তানহার শ্বশুরবাড়ীর ছাদেই আশ্রয় নেয়। তানহাকে দেখে, তানহার খোলা চুল দেখে, তানহার মিষ্টি হাসি দেখে মুগ্ধ হয় আরাধ্য। মাঝে মাঝে তানহা আর তার জামাই এর রোমান্স দেখে খুব কষ্ট লাগে আরাধ্যের, ইচ্ছে হয় মরে যেতে কিন্তু সেটাতো আর সম্ভব না কারন সে অলরেডি মরে ভূত হয়ে গেছে।
তানহা আজ সেজেছে। হলুদ শাড়ী আর কালো ব্লাউজ, চোখে কাজল, হাতে লালচুড়ি আর খোপায় ফুল। অসম্ভব অপসরীর মত লাগছে। ইচ্ছে করছে ছুয়ে দেই কিন্তু সেটা তো পসিবল না। কিছুখন পর তানহার জামাই আসে, রুমে ঢুকেই তানহাকে চুমু খেতে শুরু করে। দেখে মেজাজ খুব গরম হয়ে যাচ্ছিলো। তাই বেরিয়ে পরে আরাধ্য। এখন সমধ্যা। তানহা আর তানহার জামাইও বের হয়ে যায়। তারা একটা বিয়ের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে যাচ্ছে।
আরাধ্য মন খারাপ করে একা একা হাটছিলো। হটাত পেছন থেকে এসে উকি দেয় সিস্টেম। ওহ সিস্টেম মানে হচ্ছে কাওসার।
কাওসারঃ ভাই তুমি আমাদের সিস্টেম কইরা দিলা?
আরাধ্যঃ সিস্টেম করে দিলাম মানে?
কাওসারঃ মানে ভুইলা গেছো।
ইতিমধ্যে দলের বাকিরা এসে হাজির।
শাওনঃ কিরে তোর আবার মন খারাপ কেন?
আরাধ্য সব বলে যে কি কারনে তার মন খারাপ।
মাহফুজঃ ভাই স্পর্শ পাইতে ইচ্ছে করে তাই না? হাহাহাহাহাহাহা কি রোমান্টিক কথাবার্তা।
শাওনঃ ওরা তো গায়ে হলুদে গেছে তাই না? সেখানে গিয়ে নিশ্চয় হলুদ মাখাবে? বাজাপোড়া খাবে, আবার বেশি ফুর্তি করে চুলও খোলা রাখতে পারে। তখন তুই ওর ঘাড়ে চেপে পরবি। তাহলেই ওর স্পর্শ পাবি।
আজাদঃ বুদ্ধিখানা খারাপ না। ট্রাই মারো। সো চলো যাই সেখানে
আরাধ্যঃ চলো।
হলুদের আসর থেকে বের হয় তানহা। খোলা চুল আবার হাতে খাবার খেতে খেতে রিক্সা দিয়ে যাচ্ছিলো তানহা।
শাওনঃ এখনি সুজোগ আরাধ্য, যা ঘাড়ে চেপে বস।
আরাধ্য গিয়ে তানহার ঘাড়ে চেপে বসে। তানহার স্পর্শ নেয়। ওর শরীরের গন্ধ নেয়
তানহার জামাই ব্যাপারটা বুঝতে পারে। বাসায় গিয়ে তানহার বাড়ির অন্যান্য লোকজন বুঝতে পারে যে কিছু একটা ঘটেছে তানহার সাথে। তারা পাশের এক ওঝাকে ডেকে নিয়ে এসে এবং ওঝা তানহাকে দেখেই বলে যে ভুতে ধরেছে। ওঝা ঝাড়পোক শুরু করে। আরাধ্যের খুব কষ্ট হচ্ছিলো, অসহ্য যন্ত্রনা হচ্ছিলো। কিন্তু সে কোন ভাবেই তানহাকে ছেড়ে যেতে নারাজ।
ওঝা জানায় যে এই ভুত অনেক ঘাড় ত্যাড়া, না পিটাইলে যাবে না।
তানহার জামাইঃ ভুতকে কিভাবে দেখবেন? কিভাবে পিটাবেন?
ওঝাঃ ভূত তো এই মেয়ের শরীরে, এই মেয়েরেই মারলে ভূত চলে যাবে।
তানহার জামাইঃ যাবে তো?
ওঝাঃ এমন মাইরা মারুম যে না গিয়ে উপায় থাকবে না।
তানহার জামাইঃ আচ্ছা ঠিক আছে, যা করার তারাতারি করে। ধুপের গন্ধ আমার সহ্য হয় না। এতো ধুপ জ্বালাইতে হয়।
ওঝা কিছুখন মন্ত্র ত্রন্ত পরে তারপর একটা লাঠি দিয়ে বাড়ি শুরু করে তানহার শরীরে। তানহার শরীরে আঘাত করলেও ব্যাথা পাচ্ছিলো আরাধ্য। তবে সে ব্যাথা সহ্য করতে প্রস্তুত, সে কোন ভাবেই তানহাকে ছেড়ে যাবে না। কিন্তু পরক্ষনেই মনে পরে গেলো ব্যাথা আপাতত তার লাগলেও ক্ষত হচ্ছে তানহার শরীরে। তারমানে সে তানহার ক্ষতি করছে। আরাধ্য তানহার শরীর থেকে বের হয়ে যায়। বের হয়ে দূরে সরে যায়। আর ফিরে আসে না তানহার কাছে। সে চায়না তার জন্য তানহার কোন ক্ষতি হোক।
আরাধ্য ফিরে আসে শাওনদের কাছে, সেই পুরনো ছাদের পরিত্যাক্ত চিলেকোঠা আবার নিজের আস্তানা গাড়ে। অন্যদিকে তানহাও সুখে জীবনযাপন করে তার পরিবারের সাথে।
সমাপ্ত
( পুরো গল্পটাই আমার কল্পনা । এর সাথে বাস্তবতার কোন মিল নাই )
আমার লেখা আরো গল্প পরতে চাইলে আমার পেইজ টি লাইক দিতে পারেন ।
https://www.facebook.com/arshipon15/