শুক্রবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২১

টাইমবুক ৩


#টাইমবুক

(রহস্যময় কল্পবিজ্ঞান রূপগল্প)

পর্ব -  ৩ (তিন) (এই পর্বটি শুধু মাত্র প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য)

সৃষ্টিতে ঃ প্রেতাত্মার লেখা গল্প - Written by A R Shipon 


চোখ মেলতেই নিজেকে আবিস্কার করি হাসপাতালের বিছানায়। পাশ থেকে একজনের কান্নার শব্দ। বুঝতে পারলাম অনন্যা। কিন্তু ও কিভাবে জানলো আমি এখানে? বা আমাকে কে এখানে নিয়ে আসলো? বা অনন্যাকেই কে খবর দিলো। অনন্যার সাথে আমার তেমন কোন সম্পর্ক নয় যে অন্যকেউ জানবে তারপর সে অনন্যাকে খবর দিবে। এই তো গুনে গুমে মাস চারেক হবে আমাদের পরিচয়। 

মাথাটা আবার ঝিমঝিম করছে। চারপাশ  শুধু ঘুরছে আর ঘুরছে, ঠিক জীবনে প্রথম গঞ্জিকা সেবনেরর সেই পিনিকটা। আমি আঁকাসে উড়ছি নাকি আঁকাস আমার নিচে বুঝে উঠতে পারছি না। নূঁপুরের ঝংকার এর শব্দ। নিশ্চয় রৌদূসী। হ্যা। সেই রৌদূসী, যাকে প্রথম দেখেছিলাম লাল শাড়ীতে। রৌদূসী আমার আশপাশ দিয়ে দৌড়াচ্ছে। আর চিৎকার করে কিসব বলছে। আমি কাছে গেলাম। ওর কোমল হাত ধরে টেনে ধরলাম। থমকে দাঁড়ালো। আমার দিকে তাকিয়ে আবার সেই #হৃদমোহিনী_মায়াবিনী র মুচকি হাসি। একদম উন্মাদ হয়ে গেলাম আমি। রৌদূসীর কোমরে হাত রেখে নিজের কাছে টেনে নিলাম। জিজ্ঞেস করলাম তাকে

- তুমি না বলেছিলে আমি তোকে বুকে জড়িয়ে ধরিনি। এই বুকে টেনে নিলাম। আমার শক্ত করে জড়িয়ে ধরো।

রৌদূসী আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। আমিও দুহাত দিয়ে শক্ত করে জরিয়ে ধরি রৌদূসীকে। ঠোট দুটো আনমনেও রৌদূসীর ঠোটের উপর। আমার আকস্মিক চুম্বনে লজ্জাবতী রৌদূসীকে রুদ্র দীপ্ত সূর্যললনার চাইতেও বেশি সুন্দরী লাগছে। আমি দেখছি আর মনের তৃপ্তি মিটাচ্ছি। ওর জ্বিহ্বা আমার ঠোটের কামড়ে, 

এঁকি মেঘ থেকে নিচে পরে যাচ্ছে রৌদূসী। আমি চাইলেও ওকে ধরতে পারছি না। দিলাম লাফ, আমিও নিচে পরে যাচ্ছি...............

ধপাস করে হাসপাতালের বিছানা থেকে নিচে পরে গেলাম। অনন্যা সহ কয়েকজন নার্স এগিয়ে আসলো আমাকে ধরতে। অনন্যা নার্সদের বললো

- ডোন্ট টাচ হিম। 

নার্সরা হতভম্ব হয়ে পেছনে চলে গেলো। আমি এতো ব্যাথার মাঝেও কিছুটা আনন্দ খুজে পেলাম। মুচকি হাসলাম। অনন্যা বললো

- একদম হাসবে না বলছি। মৃত্যুর হাত থেকে ফিরে এসেছো। গুলিটা অন্য কোথাও লাগলে তুমি মারা যেতে। আমার সব শেষ হয়ে যেতো।

অনন্যা বলতে বলতে নিজে একাই আমাকে ধরে বিছানায় উঠায়। তারপর রুম থেকে চলে যায়।

রুমের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে বুঝতে পারি এখন রাত। জানালা দিয়ে সোজা চাঁদটা দেখা যাচ্ছে। জোসনা ছড়াচ্ছে। এই মুহুর্তে ছাঁদে থাকতে পারলে ভালো লাগতো, সাথে হালকা পিনিক, জন্ম নিত হয়তো নতুন কোন কবিতা। খুব মিস করছি রোদেলাকে, নাহ যতই বলি রোদেলার কথা আসলে প্রতিটা পলে, ক্ষনে রৌদূসী। 

ডাক্তার আসে, এসে আমাকে দেখে কিছু ঔষধ প্রেসক্রাইব করে যায়। আমি ডাক্তার কে বলি... 

- ডাক্তার সাহেব ভিষন ব্যাথা হচ্ছে, সহ্য করতে পারছি না। আমাকে গাড়ো একটা ঘুমের ইনসুলিন দিন। ব্যাথা নিতে পারছি না।

ডাক্তার আমার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকলো। মনেহলো ডাক্তারের মন গলাতে  পেরেছি। কিছুক্ষন পর নার্সকে একটা নোট দিয়ে চলে গেলেন। যাওয়ার আগে দরজা কাছাকাছি গিয়ে ফিরে এসে আমাকে কিছু একটা বলতে চেয়েও না বলে চলে গেলেন। 

কিছু মুহুর্ত পর নার্স আমাকে ইনজেকশন  দিলেন। ঘুমের। আবার আমি ঘুমাবো, ঘুম মানেই আমার পৃথিবী। ঘুম মানেই আমার কলংকপুর, ঘুম মানেই রোদেলা, ঘুম মানেই সুখ। তবে ইদানীং ঘুমের মাঝে রৌদূসী এসে ডিস্টার্ব করছে খুব। চলে যাবি একবারে যা, কল্পনায় জল্পনায়, ধ্যানে জ্ঞ্যানে, প্রতি মুহুর্তের প্রানে কেনো তোকেই থাকতে হবে রৌদূসী? ঘুম মানে তো স্বপ্ন, আমি ঘুমে সুখি হতে চাই, ঘুমে আমি গল্প কবিতা পয়দা করি। আচ্ছা

রৌদূসী তুমি কি শুনছো? দেখো পৃথিবী ঘুমিয়ে গেছে । আধার কাল রাতে, দেখ চাঁদটা কেমন জোসনা ছড়িয়ে যাচ্ছে তোমায় দেখে । তুমি অনুভব করতে পারছো? আজ চাঁদ কেন জোসনা বিলিয়ে যাচ্ছে? না না তোমার তো ঘুম ভাঙ্গেনি, তুমি তো বিভোর ভাবে স্বপ্ন দেখছো । তুমি তো চলে গেছো ঘুমের দেশে- তুমি স্বপ্ন দেখছো ঘুমের ঘরে .. দেখো আমিও স্বপ্ন দেখছি, আমার স্বপ্নে ঘুম নেই- আছে ঐ চন্দ্র আর জোসনা ভেজা এই রাত । যেদিন তুমি এসেছিলে সেদিনো স্বপ্ন দেখেছি, আজও আমি স্বপ্ন দেখছি । সেদিন তুমি আমার কাছে ছিলে আজ আর নেই, আছে এই যে একটু চোখের জল আর না বলা ভালবাসা । তোমার কি মনে আছে, তুমি যখন হাসতে, অবাক হয়ে আমি তোমাকে দেখতাম আর ভাবতাম কেন এত ভালবাসি তোমাকে? স্বপ্ন সাজাতাম দুজনে বসে নিরালায়, একটু দুষ্টামিতে ভরে উঠত তোমার চোখে জল - অপরাধীর মত যখন এসে ক্ষমা চাইতাম, একলা পেলে আমায় তুমি মিষ্টি সাজা দিতে । তুমি স্বপ্ন দেখতে ভালবাসতে, আর আমি তোমার স্বপ্ন সাজাতে .. তুমি ঘুমের দেশে তাতে কি? দেখ আজও আমি রাত্রি জাগে তোমার স্বপ্ন সাজাই চোখের জলে । একি হঠাৎ এই চাদনী রাতে ঝড় উঠল কেন - না তুমি রাগ করনা । এই দেখ আমি ভাল আছি, সুখে আছি- তুমি ঘুমাও, তুমি ঘুমাও - অনেক স্বপ্ন দেখ তুমি। আমি তোমার সব স্বপ্ন সাজিয়ে দেব, আমার চোখের জলে ভালবাসায় ।

আমি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পরি। পৃথিবী অন্ধকার। 


মাথায় হ্যাট, কালো স্যুট, মুখে চুরট, পায়ে বুট। অন্ধকারে এইটুকুই আবিষ্কার করতে  পারলাম যে হয়তো কোন ডিটেকটিভ, শার্লক ও হতে পারে। 

আমি ছাঁদে। আবছা অন্ধকারে ডিটেকটিভ লোকটাকে দেখে কৌতুহল জাগলো। পিছু নিলাম। 

এঁকি! সে তো আমার রুমের  তালা খুলছে। কি অদ্ভুত ব্যাপার। চাবি পেলো কোথায়?

প্রশ্ন নয়, এগিয়ে গিয়ে শালার ডিটেকটিভ  চোর ব্যাটাকে ধরতে হবে। কত বড় সাহস। 

আমি ধরতে যাবো, পেছন থেকে ঝাপটে ধরতে তার উপর ঝাপিয়ে পরলাম। একি আমি কিছু স্পর্শ করতে পারছি না। এই লোকটাকেও না। আমি কি মরে গেলাম? কিভাবে সম্ভব? গুলি লেগেছিলো বাহুতে। বাহুতে গুলি লাগলে কেউ মরে? আর আর তারপরেও তো আমি সুস্থ ছিলাম, স্বপ্ন দেখলাম, অনন্যার স্পর্শ, নার্স, ডাক্তার। তাহলে কিভাবে মরে গেলাম? মরার পরপরই কি প্রেতাত্মা হয়ে গেলাম? 

আর এই যে এই লোকটাকে চেনা চেনা লাগছে। কোথায় জেনো দেখেছি।। 

যাই হোক। লোকটি আমার উপস্থিতি টের পায়নি। দেখি ব্যাটা কি কি করে। 

লোকটি ধিরে ধিরে এগিয়ে গেলো। পুরো রুমটা এক নজরে দেখলো। তারপর সুইচবোর্ডের দিকে গেলো। সুইচবোর্ডের সবুজ বাতি জ্বলা কালো সুইচটা অফ করে দিলো। এতোক্ষন রুমের ভেতরে যে শুনশান নিরবতা বা অন্যরকম এক আলফা নিরবতা ছিলো সেটা ভেঙে স্বাভাবিক হয়ে গেলো। লোকটি বিছানার দিকে এগুলো। বিছানার দিকে তাকিয়ে আমি জেনো আকাশ থেকে পরলাম। বিছানায় আমিই সুয়ে আছি। আমি বুঝে উঠতে পারছিলাম আমি কোন মূহুর্তে আছি। আমার লাশ আমি দেখতে পাচ্ছি।

লোকটি টেবিল সহ আসেপাশের সব বই ঘাটলো। ঘেটে ঘেটে সব শেষ। তারপর আমার বিছানার উপর আসে। তখন আরেকটা জিনিস লক্ষ করলাম যে কালো সুইচটা টিপলে আসলে দেয়ালের চারপাশের দেওয়ালে যে বক্স থাকে সে বক্স গুলো একটা কালো আবরন তৈরি করে। ফলে বাইরের কোন শব্দ ভেতরে প্রবেশ করতে পারে না৷ লোকটা এসে ঐ সুইচটা অফ করায় সেটাই দেখতে পেলাম। 

লোকটা আমার বিছানার ভেতরে অনেক কিছু খুজলো, আমার বুকের উপর রাখা বইটাও নেরে চেরে দেখলো। তারপর আমার বালিশের নিচে হাত দিলে, সেখানে একটা সুইচে টিপ দিতেই একটা লকারের মত খুলে ভেসে আসলো একটা বই। 

আরে এইটা তো সেই বই টা। যে বইটা চুরি করতে এসেছিলো, #টাইমবুক। 

হটাৎ দরজা দিয়ে রৌদূসী দৌড়ে ঢুকে। লোকটা রৌদূসীর উপস্থিতিও লক্ষ করতে পারে না। রৌদূসী আমার কাছে গিয়ে আমাকে ধরে টানাটানি করে, আমার ঘুম ভাঙাতে চেষ্টা করে। আমার ঐ দেহের ঘুম ভেঙে যায়। আমি উঠে বসার পর লোকটিকে দেখতে পাই। উঠে গিয়ে জাপটে ধরি। লোকটি গুলি করে , আমি চিৎকার করে উঠি। 

চোখ খুলে নিজেকে আবিষ্কার করি হাসপাতালের বিছানায়। অনন্যা আমাকে এসে জরিয়ে ধরে বলছে " ভয় পেয়ো না দুপুর, আমি আছি। ভয় পেয়ো না। তুমি স্বপ্ন দেখছো।" 

আমি স্বাভাবিক হই। সকাল হয়ে গিয়েছে।

হাসপাতাল থেকে রিলিজ নিতে নিতে দুপুর গড়িয়ে যায়। অনন্যা আমাকে বাসায় নিয়ে আসে। বাসার ভেতরে ঢুকতেই আমার বুকটা কেঁপে উঠে। আমি অনন্যার হাতটা শক্ত করে ধরি। অনন্যা আমার বুকে এসে জড়িয়ে ধরে।

ছিঃ এ আমি কি করছি। অনন্যা আমার বন্ধু, ও আমাকে যেটাই ভাবুক আমার আমাকে ঠিক রাখতে হবে। 

আমি নিজেকে কন্ট্রোল করি। রুমটা এখন কেনো জানি মজে হচ্ছে খুব অচেনা।  যদিও দুদিন আগেই আমি নিজ হাতে রুমটা গোছালাম, কিন্তু অদ্ভুতভাবে খুব অচেনা লাগছে। অনন্যা নিজে রান্না করে। দুপুরের খাবার মোটামুটি বিকেলে একসাথে খাই। দুজনে গল্প করি। গোধূলি সন্ধ্যায় অনন্যা আমার কাধে মাথা রেখে সন্ধ্যার মৃত্যু অবলোকন করে। মধ্যরাতে অনন্যা আমাকে কফি করে দেয়। আমি জিজ্ঞেস করি " কখন যাবা বাসায় তুমি?"।  উত্তরে অনন্যা বলে..

- আমি কি তোমায় খুব ডিস্টার্ব করছি? (চোখ ছলছল) তুমি ডিস্টার্ব ফিল করলেও আমি এখানেই থাকবো যতদিননা তুমি সম্পূর্ণ সুস্থ হও। 

আমি অনন্যার কথাত বিপরীতে কিছু বললাম না। নিজেই মনে হয় চাচ্ছিলাম যে অনন্যা থেকে যাক, একাকিত্বটা ইদানীং বড্ড তারনা করছে। আমি ছাদে চলে আসি।

সিগারেট ফুকে কিছুক্ষন জোসনা দর্শন শেষে রুমে ফিরে আসি। অনন্যা বেডে সুয়ে আছে। তার পাশেই রাখা আমার বালিশ। দ্বিধাবোধ হচ্ছে অনন্যার পাশে সুতে। কিন্তু...  

অবশেষে বিছানায় যাই। অনন্যার অপরপাশে মুখ করে সুয়ে পরি।

অনন্যা নিঃসন্দেহে অসম্ভব সুন্দরী এবং পূর্ন যৌবনারম্ভ একটি কুমারী কন্যা। এক  বিছানায় তাকে না ছুয়ে থাকাটা নিজের সাথে বিশাল এক যুদ্ধের সমতুল্য। 

নিরবতা ভেঙে অনন্যা প্রশ্ন করলো..

- বাসরঘরে কে আগে লজ্জা ভাঙায়?

আমি স্তম্ভিত অনন্যার প্রশ্নে। উত্তরে বললাম জানিনা। আবার প্রশ্ন করলো...

- দৈহিক সম্পর্কের শুরু কোথা থেকে হয়? কোথায় এর তৃপ্ততা বেশি?

আমি উপর হয়ে সুয়ে আবার বললাম জানিনা। বুকের ভেতর ধরফর ধরফর করছে। হটাৎ অনন্যা আমার উপরে চলে এসে আমার ঠোটে তার ঠোট ছিয়ে দেয়। আমার মুখে কয়েকবার চুমু দিয়ে লজ্জায় আবার নিজের ঐখানে চলে যায়। 

- আমি তোমাকে ভালবাসি দুপুর। আমি জানি তুমি আমাকে ভালবাসো না। কিন্তু এই যৌবন আমি তোমার জন্যই..... 

কথাগুলো বলতে বলতেই আমার হাত নিয়ে ওর বুকের উপর রাখে। ২৭ বছরের পূর্ন যৌবনা পূরুষ আমি। স্বাভাবিক ভাবেই যৌনাকাঙ্ক্ষা ভূত আমার মাতায় চেপে বসে। অনন্যার বুকের নরম শীতল স্পর্শ অনুভব করি। অন্যরকম ভালোলাগা, হাত পা কাঁপছে। এর মধ্যেই অনন্যা আবার আমাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে চুমু দিতে থাকে। মুখ থেকে বুক পর্যন্ত। আমি বলি কি করছো? অনন্যা উত্তর দেয় শুধু কি ছেলেরাই পারে? মেয়েরা না?

অনন্যা আমার সারা শরীরে চুমু এঁকে দেয়। আমি নিজের প্রতি সম্পূর্ণ কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলি। আমিও অনন্যার মুক থেকে শুরু করে বুক পর্যন্ত চুমু এঁকে দেই। বুকের নরম অংশে মাথা রেখে সুখ উপভোগ করি। অনন্যা আমার জামা খুলে ফেলে আর আমিও মত্ত হয়ে উঠি অবৈধ এবং অবাধ যৌনাচারে। এটিই হতে যাচ্ছে আমার জীবনের প্রথম নাড়ী দেহ সংগম। কাল থেকে আমি আর আমার কুমারত্ব নিয়ে বুক ফুলিয়ে কথা বলতে পারবো না। হারিয়ে যাই এক অন্য সুখের ভূবনে। ক্লান্ত দুজন একসময় ঘুমিয়ে পরি নতুন এক সকালের অপেক্ষায়। 

চলবে........

পরবর্তী পর্ব আগামীকাল দেওয়া হবে। যাদের গল্পটি ভালো লেগেছে তার অবশ্যই লাইক, কমেন্টস, শেয়ার ও আমাকে ফলো করবেন পরবর্তী পর্ব পেতে। অগ্রিম ধন্যবাদ।

সোমবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২১

টাইমবুক (২)




#টাইমবুক

(রহস্যময় কল্পবিজ্ঞান রূপগল্প)

পর্ব - ২ (দুই)

সৃষ্টিতে ঃ প্রেতাত্মার লেখা গল্প - Written by A R Shipon 


ঘুম ভাঙে সকালে। গভীর একটা ঘুম হয়েছে। অনেকদিন হয় এতো গভীর ঘুম হয় না। আমি বেড থেকে নেমে গিয়ে ফ্রেসরুমে গিয়ে ফ্রেস হই। তারপর সেই কালো সুইচটার দিকে চোখ পরে। এখন কোন বাতি জ্বলছে না। কয়েকবার টেপাটেপি করার পরেও কোন কাজ হলো না। 

রেডি হয়ে বাইরে গেলাম। হোটেলে সকালের নাস্তা সেরে টিএসসি। বই মেলায় যাবো। অনন্যাও আসবে। আমি সময়ের কিছু আগেই পৌছে গেলাম। যদিও সচারাচর আমি টাইম মেইনটেইন করতে পারি না। আমি বসে আছি। কিছুবাদে অনন্যা এসে হাজির। 

অনন্যা ঃ এ আমি কি দেখছি? ১২ টায় আসার কথা। এখন ১১ঃ৪৭ মিনিট। আপনি স্যার এতো আগে? টাইম ট্রাভেল করছেন নাকি?

আমিঃ এই মানে কি?

অনন্যাঃ মানে কি আবার। তুমি জীবনে কোনদিন ঠিক সময়ে এসছো কোথাও? সব সময় লেট। তাই আজ আগে দেখে অবাক হবো না? আমার তো মনে হচ্ছে তুমি টাইম ট্রাভেল করে এসেছো আবার চলে যাবে।

আমিঃ আচ্ছা অনন্যা টাইম ট্রাভেল টা কি?

অনন্যাঃ বুদ্ধু একটা। এটাও জানো না? টাইম ট্রাভেল হচ্ছে সময় বা কাল পরিভ্রমণ। এর মাধ্যমে তুমি অতিতেও যেতে পারো আবার ভবিষ্যতেও যেতে পারো। কি মজার তাই না? আমি টাইম ট্রাভেল মেশিনটা পেলে অতিতে চলে যেতাম। সেখানে গিয়ে অতিতের সব ভুল গুলো শুধুরে নিতাম। 

আমিঃ বাকোয়াস সব কথা বার্তা। এটা আমরা সবাই জানি যে অতিতকে কখনো পরিবর্তন করা যায় না। ঠিক কি না?

অনন্যা ঃ হ্যা। 

আমিঃ তাহলে তুমি অতিতে গিয়ে কিভাবে তোমার ভুল গুলো ঠিক করবে? ধরো তুমি টাইম ট্রাভেল করে ছোটবেলায় ফিরে গেলে। সেখানে কিন্তু দুইটা তুমি থাকবে। একটা ছোট তুমি আর একটা বড় তুমি। মানে দুইটা সত্তা। কিভাবে দুইটা সত্তা একসাথে থাকতে পারে? আবার ধরো তুমি টাইম ট্রাভেল করে তোমার দাদা-দাদির বিয়ের অনুষ্ঠানে গেলে এবং তোমার দাদাকে হত্যা করলে। তোমার দাদাকে যদি হত্যা করো তাহলে তোমার সত্তা ভিত্তিহিন। আসলে টাইম ট্রাভেল বলতে কিছু নাই । যাস্ট কল্প কাহিনি। 

অনন্যা ঃ মনে করো, তুমি পৃথিবীতে দাঁড়িয়ে এক লক্ষ আলোকবর্ষ দূরের কোনো একটি নক্ষত্রকে টেলিস্কোপ দিয়ে দেখছো। এই মুহূর্তে তুমি যে জ্বলজ্বলে নক্ষত্রটি দেখছো সেটি কিন্তু নক্ষত্রটির বর্তমান অবস্থা না। আমরা কোনো বস্তু তখন দেখতে পাই যখন সেটি থেকে আলো এসে আমাদের চোখে পড়ে। অর্থাৎ, এক লক্ষ আলোকবর্ষ দূরে থাকা সেই নক্ষত্রটি থেকে আলো এসে পৃথিবীতে পৌঁছাতে এক লক্ষ বছর লেগেছে। তুমি এই মুহুর্তে নক্ষত্রটিকে যেমন দেখছো সেটি তোমার কাছে বর্তমান হলেও, নক্ষত্রটির কাছে সেটি এক লক্ষ বছর অতীতের ঘটনা।

এখন, কল্পনা করে নাও, সেই নক্ষত্রটি ব্ল্যাকহোলে হারিয়ে যাওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে সেখানে বাস করা একটি এলিয়েন ১ লক্ষ আলোকবর্ষ বা সেকেন্ড গতিতে পৃথিবীতে চলে আসলো। সে আসার পরও কিন্তু সে নক্ষত্রটিকে একই অবস্থায় দেখতে পাবে পৃথিবী থেকে। তারও এক লক্ষ বছর পর পৃথিবীবাসীরা সেই নক্ষত্রকে ব্ল্যাকহোলে হারিয়ে যেতে দেখবে। এতেই বোঝা যায় টাইম ট্রাভেল অসম্ভব কিছু নয়, হয়তো বিজ্ঞান খুব শিঘ্রই টাইম ট্রাভেল মেশিন আমাদের সামনে উপস্থাপন করবে।

আমিঃ তুমি একটু বেশি সাইন্স ফিকশন বই পড়ো আর মুভি দেখো। তাই মাথা গেছে।

অনন্যা ঃ চলো বই মেলা থেকে তোমাকে টাইম ট্রাভেল সম্পর্কিত কিছু বই কিনে দেই। 

আমি ঃ দরকার নেই। আমার নতুন বাসায় এমনিতেই টাইম ট্রাভেল এর বই দিয়ে ভরা।। 

কথা বলার এক ফাঁকে চোখ পরলো নীল শাড়ি পরা এক মেয়ের দিকে। মেয়েটি অপলক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ ছলছল করছে। সে আর কেউ না, রৌদূসী। আমি অনন্যাকে জিজ্ঞেস করলাম সামনে কি তুমি কাউকে দেখতে পাচ্ছো নীল শাড়ি পরা। অনন্যা উত্তর দিলো, না। তারমানে আমি আবার আমার কল্পনার জগৎ এ ফিরে যাচ্ছি। সেখানে রৌদূসী। কিন্তু আমি তো চাইনা আমার কল্পনায়, আমার স্মৃতিতে, আমার কলংকপুর এ একজন ছলনাময়ী থাকুক। 

আমি অনন্যাকে নিয়ে উঠে গেলাম। অনন্যা আমাকে কিছু বই কিনে দিলো গোয়েন্দা কাহিনি। তারপর দুজনে একসাথে লাঞ্চ শেষ করে সেখান থেকে রবিন্দ্র সরবরে কিছু সময় কাটিয়ে বাসায় ফিরে আসি। 

ওহ, আপনারা কেউ ভাববেন না যে অনন্যা আমার প্রেমিকা। হ্যা, সে আমাকে ভালোবাসে। কিন্তু আমি ভালোবাসি ছলনাময়ীকে। অনন্যা আমার যাস্ট ফ্রেন্ড। 

বাসায় এসেই চিটপটাং। বিকেলে একটা ঘুম দিয়ে সন্ধ্যায় উঠি। ফ্রেস হয়ে গরম গরম কফি হাতে নিয়ে ছাঁদে আসি। কফি আর সিগারেট। নিস্তব্ধ সন্ধাটা উপভোগ করছিলাম। খেয়াল করলাম পেছন দিয়ে কেউ একজন হাটছে। নূপুরের শব্দ। মোটামুটি কনফার্ম যে এটা রৌদূসী। একটু বাদেই হয়তো কাছে এসে অবান্তর কথাবলা শুরু করবে। কিন্তু না, সে আসলো না। পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখলাম ছলছল চোখে অভিমানী মুখ নিয়ে দূরে দাঁড়িয়ে আছে। তারপর চলে যায় সিঁড়ি বেয়ে নিচে।

আমিও সিগারেট শেষ করে রুমে ফিরে আসি। পিসি ঘাটাঘাটি করি। ফেসবুক ব্রাউজ, ইউটিউব, পর্নসাইট, কিছুই ভালো লাগছে না। মনে পরলো লোকটির বই এর কথা। অনন্যার কথা শুনে টাইম ট্রাভেল সম্পর্কে কিছুটা কৌতুহল জেগেছে। বই এর স্তুপ থেকে বাছাই করা শুরু করলাম, বেছে বেছে একটা হাতে নিলাম৷ পরিভ্রমণ তত্ব। এই একটি মাত্র বই বাংলাতে বাকি সবগুলোই ইংরেজি। ইংরেজি যে একদম বুঝিনা সেটা না। ইংরেজিতে যেটা বুঝতে ১ মিনিট সময় লাগবে বাংলাতে সেটা হয়তো ১০ সেকেন্ড। 

বিছানায় শুয়ে বই টা খুলে মুখের সামনে আনার সাথে সাথে বেড থেকে আচমকা একটা শব্দ হয়ে একটা লাইট জ্বলে উঠলো। লাইটটা এমনভাবে সেট হলো যে সেটার আলো আমার বইয়ের উপর পরলো এবং ঘরের অন্যান্য সকল বাতি নিভে গেলো।

প্রথমে অবাক হলেও পরে মনে পরলো এই বেডের মালিক ছিলেন একজন বিজ্ঞানী, হয়তো এটা তারই আবিষ্কার। ব্যাপারটা কিন্তু ভালোই। 

বই পড়তে পড়তে অনেকটা সময় কেটে গেলো। যতটুকু পরলাম তাতে টাইম ট্রাভেল সম্পর্কে এইটুকু বুঝতে পারলাম যে " এটি আসলে সময়ের (x,y,z)  অক্ষ বরাবর ভ্রমণ। আমরা সকলেই তিনটি মাত্রা সম্পর্কে অবগত,  দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং উচ্চতা। এই তিনটি মাত্রা বরাবর স্থান পরিবর্তন সম্ভব। তবে ন্যূনতম চতুর্মাত্রিক একটি ধারণা হচ্ছে সময়ের ধারণা। আজ পর্যন্ত এই চতুর্থ মাত্রা দিয়ে স্থান পরিবর্তন সম্ভব হয়নি। এই সময়ের অক্ষ বরাবর স্থান পরিবর্তনকে কালমাত্রিক সরণ বলা হয়। এক সময় থেকে আরেক সময়ে পরিভ্রমণকেও আমরা সময় ভ্রমণ বলে থাকি। এটি হতে পারে অতীতে ভ্রমণ, হতে পারে ভবিষ্যতে ভ্রমণ। 

খুব খুদা পেয়েছে। ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা ভাত বের করে একটা আস্ত আন্ডা ভেজে পেট পুজো করে আবার কফি আর সিগারেট হাতে নিয়ে বের হলাম ছাদে। কফিতে অবশ্য ১০ টা কিউপাইন ট্যাবলেট মেশানো আছে। নেশা মাথায় কবিতা আসবে, তবে ইদানীং আর ভালোবাসার কবিতা ভালো লাগে না। আচ্ছা টাইম ট্রাভেল নিয়ে কবিতা লিখলে কেমন হয়?

চেষ্টা তো করে দেখি, 

"

একদিন এখানেই বিবেকের ঘুম

ভেঙ্গেছিলো,

অথচ সেই বিবেক তবুও এলোমেলো !

কত চেতনার

সমুদ্রে তরী ভাসিয়ে কেটেছিলো সময়,

বাস্তবতার কষাঘাতে নিঃস্ব আজ

সে পরিচয় ৷

তাই

মাঝে মাঝে অতীতে ফিরে যেতে চাই,

ভাবছি টাইম মেশিনই একটা বানাই ৷

অগোছালো সব

কিছুকে নিমিষে সাজাই ৷

জীবনে সব ভ্রান্তির ক্যানভাস

আগুনে পোড়াই ৷"

হটাৎ পাশে এসে বসে রৌদূসী। কিছুক্ষন চুপ করে বসে থেকে আমায় বলে

রৌদূসী ঃ দূরে গিয়ে বসো। 

আমিঃ আমি দূরে গিয়ে বসবো কেন, তুমিই তো কাছে এসে বসেছো।

রৌদূসীঃ আমার পাশে বসতে তো ভালো লাগে না৷ যাও ঐ মেয়ের কাছে গিয়ে বসো। আর আমার কথাওতো রাখলে না।  দিব্যি বিড়ি সিগারেট ঘুমের ঔষধ খেয়ে যাচ্ছো।

আমিঃ আমি তোমার সব কথা রাখতে রাজি ছিলাম, সব ছাড়তে প্রস্তুত ছিলাম, বিনিময়ে তোমায় চেয়েছিলাম। ফলস্বরূপ  তুমি ধোকা দিয়েছো। আমার জীবনকে শুধু এলোমেলোই না, নষ্ট করে দিয়েছো।

রৌদূসী চুপ করে থাকে। তারপর পেছনে হাঁটা দেয়। আমার খুব ইচ্ছে করছিলো আমি একবার একটু পেছনে তাকিয়ে রৌদূসীকে দেখি। হৃদয়টাকে একটু প্রশান্তি দেই। কিন্তু এমন ধোকাবাজ মেয়ের প্রতি দিন দিন ঘৃনাটাও বেরে গেছে বা 

রৌদূসীঃ দুপুর, তুমি একটু সাবধানে থাকবে। তোমাকে নিয়ে আমার ভীষন ভয় হয়। 

রৌদূসী চলে যায়। আমার মাথাও ঝিম ঝিম করছে। কোনরকমে বিছানায় এসে সুয়ে পরি। তারপর নেশার ঘুম। 

ঘুমের মাঝে স্বপ্ন। বিশাল এক রুমে একটা মেশিনের সামনে আমি। হাতের ঘড়িতে সময় রাত ৩ টা। মেশিনে বসার একটা সিট আছে। আমি মেশিনে বসি। মেশিনের স্ক্রিনের আজকের তারিখ দেওয়া। পাশের সবুজ একটা বাটন চাপতে সবকিছু ঘোড়া শুরু করে। মাথা ঘুরছে। হটাৎ মেশিনটা একটা পার্কে নিয়ে আসে আমাকে । আমি মেশিনর স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখি এক বছর আগে চলে এসেছি, সময় বিকেল ৩ টা। মেশিন থেকে নিচে নেমে এদিক সেদিক তাকাতেই দেখি রৌদূসী তার ভালবাসার মানুষ শাকিলের ঠোটে চুম্বন এঁকে দিচ্ছে। মেজাজটা ভিষন গরম হয়ে গেলো। মেশিনের ভিতরে থাকা একটা পিস্তল এনে আমি দূর থেকে গুলি করলাম শাকিলকে লক্ষ করে। 


আচমকা শব্দে আমার ঘুম ভেঙে যায়। চোখ মেলতেই দেখি একজন অজ্ঞাত লোক আমার বেডের নিচ থেকে বের হলো। হাতে একটা বই । আমি জাপটে ধরলাম চিৎকার করলাম চোর চোর বলে। হাত দিয়ে তার মুখের মুখোশ খোলার চেষ্টা করলাম। উনি পকেট থেকে পিস্তল বের করলো। আমার বাহুতে গুলি করলো। তবে আমি তার হাতের বইটি ইতিমধ্যে আমার হাতে নিয়ে নিয়েছি। কোনভাবেই বই ছাড়লাম না। টেবিলের উপরে থাকা স্টিলের স্কেল দিয়ে তার দিকে কোপ দিলাম, প্রথম কোপটা মুখে লেগে কিছুটা কাটলো বোধহয়, তবে মুখোশ। তারপরেও কোপ দিলাম মাথায়। এবার ব্যাথা পেয়েছে। আর আসেপাশের লোকজনও সারা শব্দ দিচ্ছে। লোকটা আমাকে ঝাটকা মেরে ফেলে দিয়ে পালিয়ে গেলো।। 

আমি বুঝতে পারছি আমার চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। জ্ঞ্যান হারিয়ে ফেলবো, মারাও যেতে পারি। তবে তার আগে এই বইটি গোপন কোথাও সংরক্ষন করতে হবে। এর সাথে নিশ্চয়ই কোন রহস্য লুকিয়ে আছে। তানাহলে এই বই চুরি করতে আসবে কেন? কেনই বা সামান্য বই এর জন্য আমাকে গুলি করবে। 

আমি বইটি এক জায়গায় রাখলাম  তারপর চারিদিক অন্ধকার হয়ে এলো। লুটিয়ে পরলান ফ্লোরে। 


চলবে........

পরবর্তী পর্ব আগামীকাল দেওয়া হবে। যাদের গল্পটি ভালো লেগেছে তার অবশ্যই লাইক, কমেন্টস, শেয়ার ও আমাকে ফলো করবেন পরবর্তী পর্ব পেতে। অগ্রিম ধন্যবাদ। 

শুক্রবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২১

টাইমবুক (১)

 


#টাইমবুক
(রহস্যময় কল্পবিজ্ঞান রূপগল্প)
পর্ব - ১ (এক)
সৃষ্টিতে ঃ প্রেতাত্মার লেখা গল্প - Written by A R Shipon

চোখের সামনে আমার বইয়ের সমুদ্র ;
এক রাত, দু’রাত, হাজারো রাত কাটে বিনিদ্র এলোমেলো,
বই খুলে এই যে আমার বসে থাকা,
অনিশ্চিত ভবিষ্যত পানে ধীরে পায়ে এগিয়ে যাওয়া ।
সাদা পাতা খাতার কালো মেঘে পূর্ণ ।
তলে তলে লিখে যাই ; করে যাই হিমালয় চূর্ণ ।

পেছন থেকে হাত তালির শব্দ। পরক্ষনেই নূপুর এর ছন্দ, কেউ একজন এগিয়ে আসছে আমারই দিকে।

প্রায় তিনবছর আগের কথা, আমি এভাবেই ছাদে বসে থাকতাম। নাহ এভাবে না, ছাদের এক কোনে যেখানে সবচাইতে গাড় অন্ধকার থাকতো। তখন ছাদের কার্নিশ ঘেষে বসার মত সাহস ছিলো না, তবে এখন কারের মতই তখনো বিষন্ন ছিলাম। সেই বিষন্নতা কাটাতে নীল শাড়ীতে রোদেলা আসতো। সারাদিনের যতকথা, যত আক্ষেপ আর ভালবাসা তা পূর্ন করে দিয়ে চলে যেত। এখন আর কেউ আসে না। এখন আমার সাহস বেরেছে, এখন ছাদের কার্নিশে পা ঝুলিয়ে বসে থাকি। সিগারেট টানি, মাঝে মাঝে অন্য কিছুও থাকে। শুধু থাকে না পাশে বসে কেউ গল্প শোনানোর। এখন তো আগের থেকেও অনেক বেশি বিষন্ন, কিন্তু নুপুরের ছন্দ মাতিয়ে রোদেলা এখন আর আসে না। নূপুরের ছন্দ বলতেই মনে পরলো আমরা তো ছিলাম অন্যখানে। আচ্ছা কে আসছে....?

পেছনে নূপুরের শব্দ কানে ভাঁসছে, কেউ একজন আসছে আমি জানি। তবে সে আর যেই হোক রোদেলা না। কারন আমি নিজেই হত্যা করেছি রোদেলা। সে চাইলেও আর কোনদিন এখানে আসতে পারবে না। তাহলে পেছনে কে আসছে, কেউ তো নেই যে আমাকে ভালোবাসে। তাহলে কি কেউ আমাকে খুন করতে আসছে কেউ? ছাদের কার্নিস থেকে আস্তা ধাক্কা দিলেই ৭ তালা থেকে পড়ে থেতলে যাব। পোস্ট মর্টাম করলে ধরা পরবে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ছাদ থেকে পড়ে গেছে অথবা আত্তহত্যা। কতই সহজ তাই না আমাকে মেরা ফেলা?  হ্যা, আমাকে রৌদসী মেরেই ফেলেছে মনটাকে। এবার আসুক কেউ ছাঁদ থেকে ফেলে আমাকে খুন করে এই বিষন্ন ছলনাময়ী স্মৃতি থেকে মুক্তি দিক। আমি মুক্তির জন্য চোখ বন্ধ করলাম। নিজেকে জেনো সপে দিলাম শিকারির হাতে
♦ বাহ! কবিতাটা কিন্তু চমৎকার হয়েছে। কোথায়, আমাকে নিয়ে তো লেখোনি কোনদিন কবিতা।

আমি কিছুটা চমকে গেলাম। পেছনের মানষটির কন্ঠ রোদেলার নয়। তবে খুব পরিচিত, ভালোলাগা, মধুর একটি কন্ঠ। কিন্তু সে কেনো এখানে আসবে। যে ছলনা করে আমাকে স্বপ্ন দেখিয়েছে দূর সমুদ্র মাঝে আমায় নিয়ে রাজপ্রাসাদ গড়বে। অতঃপর আমায় নিয়ে সমুদ্রের মাঝপথে এসে ফেলে গেছে শাকিলের হাত ধরে সে কেনো আসবে। নাহ, আমি ভুল শুনেছি।

♦ না, তুমি ভুল শোননি। আমিই এসেছি। আমার ভয় লাগছে, আমিও তোমার মত এখানে তোমার পাশে দু পা নিচে দুলিয়ে বসবো। প্লিজ উঠাও না আমাকে।
আমি পেছনে তাকাই, খুব পরিচিত মুখ। দুধে আলতা গায়ের রঙে লাল শাড়ি, চোখে কাজল, হাতে লাল চুড়ি, খোলা চুল  আর হৃদবধ করা গাড়ো পারফিউম।
হ্যা, ভুল দেখছি না। রৌদূসী এসেছে।
রৌদূসী নিজেই চেষ্টা করে উঠে আমার পাশে বসে। আমি চুপ করে বসে আছি। কোন কথা নেই, শুনশান নিরবতা এর মাঝে জোনাক পোকার ডাকের শব্দ।
রৌদূসীঃ শাকিল, কি বিচ্ছিরি লাগছে না জোনাক পোকার শব্দ। কান ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছে আমার। প্লিজ ওদের থামাও তো একটু।
মনে মনে ভীষন রেগে গেলাম। আমার কাছে এসে সে তার ভালবাসার মানুষের নাম নিচ্ছে। তাও আবার আমাকেই সেই নামে ঢাকছে। এই মেয়েটা বুঝি আমাকে কষ্ট দিতে খুব ভালোবাসে।
রৌদূসী ঃ কথা বলছো না কেনো? প্লিজ!
আমি ঃ আপনি ভুল মানুশকে প্রশ্ন করেছেন। উত্তর আশা করেন কিভাবে?
রৌদূসীঃ মানে?
আমিঃ আমি দূপুর, শাকিল নই।
রৌদূসীঃ সরি, সরি। এই যে কান ধরছি।
রৌদূসী কান ধরে সরি বলে। তারপরেও আমি চুপ। খুব অভিমান জমেছে হৃদয়ে। কূপ থেকে তুলে এনে মাঝ সমুদ্রে ফেলে দিয়েছে। ভালবাসার নামে মিথ্যে ছলনা, অভিনয় করে আমার হৃদয়াত্তাকে হত্যা করেছে। তার সাথে কিসের কথা। কেনই বা সে আমার কাছে আসে।
রৌদূসীঃ আমি জানি তুমি অভিমান করে আছো। ভালবাসার নামে দীর্ঘ সময় তোমার সাথে টাইমপাস করে আমি আমার ভালবাসার মানুষকে পেয়ে তোমায় নির্দ্ধিধায় ছেড়ে দিয়েছি। একবারও পেছন ফিরে তাঁকায় নি। আমি জানি এটা অন্যায়। কিন্তু তুমি তো বোঝ ভালবাসার মানুষকে না পাওয়ার কষ্ট। আমি আমার ভালবাসার মানুষকে পেয়ে হাড়াতে চাইনি, তাই চলে গিয়েছি। বিশ্বাস করো আমার আর কিছুই করার ছিলো না।
আমিঃ আমি তোমার কাছে কৈফিয়ত চাই নি। এখানে এসেছো কেনো? তোমার ভালবাসা কি তোমাকে ফিরিয়ে দিয়েছে?
কথাগুলো বলার সময় আমার দারুন একটা ভাললাগা কাজ করছিলো। এইবুঝি আমার রৌদূসী ফিরে এসেছে। কিন্তু ভুল ভাঙলো পরক্ষনেই। রৌদূসী উত্তরে বললো'
নাহ সে আমায় ছেড়ে যায়নি৷ আমরা দুজন ভালোই আছি। শাকিল আমার অনেক কেয়ার করে, সময় দেয়।'
মনটা খারাপ হয়ে গেলো। আসলে সে আমার হবার নয়। আমার কপালটাই এমন, ভালোবাসা এই ছোট ভাঙাচোরা কপালে নেই। আমি আবার রৌদূসীকে প্রশ্ন করলাম
আমিঃ তাহলে আমার কাছে আবার এসেছো কেনো?
রৌদূসীঃ তুমিই তো সারাক্ষন ডাকো। এতো ডাক, এতো ভালোবাসা আমি অগ্রাহ্য করতে আর পারছি না। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি এখন থেকে প্রতিদিন তোমার কাছে আসবো। তোমার জীবনটা গুছিয়ে দিয়ে তারপরেই যাবো।
একদম
হাহাহাহাহাহাহাহা করে উন্মাদের মত হাঁসতে হাঁসতে আমি পেছনে পরে যাই। একটু হলেই সামনের দিকে পরে যেতাম। আর সামনে পরলেই হয়তো মৃত্যু, যার অপরনাম মুক্তি।
পেছনে পরলেও খুব একটা ব্যাথা পাইনি। আমার নিচেই ছিলো বই এর স্তুপ। আমি আসে পাসে তাকিয়ে দেখি রৌদূসী নেই৷ ভয়ে বোধহয় পালিয়ে গেছে।
আমি যে বইএর স্তুপের নিচে বসে আছে সেটা এই বাড়ির চিলোকোঠায় থাকা এক বৃদ্ধের বই। তিনি সপ্তাখানেক আগে মারা গেছেন করোনাতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন ভদ্রলোক। অবসরের পরে গৃহসংসার ত্যাগ করে এই বাড়ির চিলেকোঠায় উঠেছিলেন। বাড়িওয়ালার কাছে শুনেছি। উনি নাকি ছোট খাটো একজন বিজ্ঞানীও বটে। তিনি মারা যাবার পর ঐ চিলেকোঠা আমি ভাড়া নিয়েছি। ঘরের ভেতরের সব আসবাবপত্র  বাড়ীওয়ালা নিয়ে গেলেও ভদ্রলোকের বেড এবং সব বই আমি রেখে দিয়েছি বাড়ীওয়ালাকে অনেক অনুনয় বিনয়ের পরে৷ সেই বই গুলোই এইখানে।
আবার নূপুরের ছন্দ। রৌদূসী আবার আসছে। সামনে এসে হাটু গেড়ে বসে বইগুলো নাড়াচাড়া করছে। রৌদূসী বই খুব একটা পড়ে বলে আমার মনে হয় না। তবে অভিনয় ভালো জানে তো তাই কোন মূহুর্তে কি করতে হবে সেটা সে ভালোই জানে।
রৌদূসীঃ এই সব বই তো টাইম মেশিন নিয়ে মনে হচ্ছে। ব্যাটায় কি টাইমমেশিন বানাতে চাচ্ছিলো নাকি? বিজ্ঞানিও নাকি ছিলো সে।
আমিঃ সে বিজ্ঞানী ছিলো এই কথা কে বলেছে তোমাকে?
রৌদূসীঃ কে আবার, তুমিই তো বলছিলে মনে মনে।
আমিঃ আজিব। আমি মনে মনে বললে তুমি শুনবে কিভাবে? আমি তো আর চিৎকার করে বলিনি।
রৌদূসীঃ আমি তোমার মনের সব কথা জানি, তোমার মনের সবটুকু বুঝি।
আমিঃ সত্যিই যদি এতো মন বুঝো তাহলে এইটুকু বোঝ না যে এই মন তোমাকে কতটা ভালবাসে?
রৌদূসী চুপ করে আছে। নিচের দিকে মন কালো করে একটার পর একটা বই উল্টিয়ে পাল্টিয়ে নাম গুলো দেখছে। তারপর আমার দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে উত্তর দেয় " আমি শাকিলকে ভালবাসি, ভিষন ভালোবাসি।"
আমার তখন প্রতুত্তরে বলতে ইচ্ছে করছিলো তাহলে কোন অপরাধে আমার সাথে তিনবছরের বেশি সময় ধরে ভালবাসার নাটক করে আমাকে এইভাবে মেরে চলে গেলে। কিন্তু আমি বলিনি। আমি আমার ভালবাসার মানুষকে অপরাধী করতে চাই না। খুব ভালোবাসি যে আমি তাকে। সে শাকিলকে যতটা ভালবাসে তার থেকেও লক্ষ কোটি গুন বেশি ভালবাসি আমি তাকে।
আমি বইগুলো একটার উপর একটা রেখে গুছিয়ে সবগুলো বই চিলেকোঠার রুমে নেই। আজ প্রথমদিন এই চিলেকোঠায়, এবং আজই প্রথম রাত হবে এখানে আমার।
রুমের লাইট ফ্যানের সুইচ সব কিছুই অন্যরকম। উল্টো করে লাগানো। এর মাঝে একটা সুইচ আছে যেটা কালো রঙের সুইচ। সেই সুইচটার মধ্যেই আলো জ্বলবার কথা কিন্তু জ্বলছে না। মেজাজটা এইগুলা দেখে একটু খারাপ। খেয়াল করি চারদেয়ালে একটা বক্সের মত। বুঝলাম না বিষয়টি কি।
এতো না ভেবে কোন রকম হাত মুখ ধুয়ে এসে বিছানায় সুয়ে পরি। রাত একটার একটু বেশি হয়েছে বোধহয়। আজ এখানে প্রথম রাত, ঘুম এমনিতেও হবে না জানি, যদিও ১০ টা ঘুমের ট্যাবলেট ইতিমধ্যে পাকস্থলীতে ফেলে দিয়েছি।
বিছানার একপাশ থেকে আরেকপাশ হচ্ছি। কিন্তু ঘুম আসছে না। ঘুম আসবে কিভাবে, চোখ বন্ধ করলেই রৌদূসীর সাথে সে সুখময় দিনগুলোর স্মৃতি কল্পনায় ভেসে উঠে। আর ঘুম হয় না। এমনটা প্রায় প্রতিদিনই হয়। তারপর ঘুমের ঔষধ খেয়ে ঘুম দিতে হয়। তবে ইদানীং ঘুমের ঔষধও কাজ করছে না। এভাবে চললে হয়তো আর বড়জোড় ৫/৬ মাস সুস্থ থাকবো, তারপর কি হবে জানিনা।
এপাশ ওপাশ করতে করতে রাত দুইটা বেজে গেলো। মোবাইলে সময়টা দেখলাম। মোবাইল রাখার সময় আমার চোখ পরলো সুইচবোর্ডে৷ সেই কাল সুইচটাতে সবজ আলো জ্বলছে। আমি উঠে গিয়ে সুইচটা চাপলাম। আচমকা পুরো রুমটা গাড় অন্ধকার হয়ে গেলো। মোবাইল নিয়ে উঠি নাই। কোন রকম অন্ধের মত আন্দাজ করে বেডে গিয়ে সুয়ে পরি। বালিসের পাসে হাতাহাতি করেও মোবাইলটা খুজে পেলাম না। তবে খেয়াল করলাম বিছানাটা খুব আরামদায়ক লাগছে। চারিদিকে সকল ধরনের শব্দ বন্ধ হয়ে গেছে। তবে মৃদ একটা মধুর বাজনা বাঝছে একদম নিন্মস্বরে। আমি দুই হাত আর দুই পা ছড়িয়ে দিয়ে সুয়ে পরলাম। অদ্ভুত মিষ্টি একটা সাউন্ড, বৃষ্টি, ঝর্নার শব্দ, সমুদ্রের ঢেউ, পাখির ডাক, ঝড়াপাতার শব্দ। অসম্ভব মিষ্টি শব্দ। আমি এর আগে অনেকবার ইউটিউবে রিল্যাক্সিং স্লিপিং মিউজিক শুনেছি। কিন্তু এই শব্দ শুনিনি। আমার চোখ ঘুম ধরছে। আমি কল্পনা করছি। আবার মনে হচ্ছে আমি আলফা জিরোতে পৌছে যাচ্ছি। আমি কল্পনায় রৌদূসীর হাত ধরে অনেক উঁচু কোন জায়গায় গাছের ফাকা দিয়ে ঝড়াপাতার উপর দিয়ে রৌদূসীকে নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি ঝর্নার দিকে। তারপর সব অন্ধকার। আমি গাড়ো ঘুমে ঢলে পরলাম।
চলবে........
পরবর্তী পর্ব আগামীকাল দেওয়া হবে। যাদের গল্পটি ভালো লেগেছে তার অবশ্যই লাইক, কমেন্টস, শেয়ার ও আমাকে ফলো করবেন পরবর্তী পর্ব পেতে। অগ্রিম ধন্যবাদ।