বৃহস্পতিবার, ১৬ মার্চ, ২০১৭

নিষিদ্ধ রাতের গল্প

#নিষিদ্ধ_রাতের_গল্প
লেখা : MD Asasur Rahman ( Sh Ip On )

আচ্ছা গল্প কি? মানে এর সংজ্ঞা টা জানতে চাচ্ছি।
কোন এক বৃষ্টিবাদল সন্ধ্যায় আমি আর জুয়েল দাঁড়িয়ে ছিলাম বসুন্ধরা সিটি শপিংমলের সামনে। হটাত করেই এক অচেনা সুন্দরী আমার সামনে এসে দাড়ালো। কিছুখন চুপ। যখন আমি ভাবলাম যে কিছু বলবো ঠিক তখনি সে প্রশ্ন করলো
♥ গল্পের সংজ্ঞা কি?
আমি থতমত খেয়ে গেলাম। সত্যিই তো গল্পের সংজ্ঞা কি। উত্তর টা ঠিক মত গুছিয়ে বলতে পারবো না বলে তাকে শুধু বললাম।
♦ আমার ঠিক জানা নেই।
♥ আপনি নিজে গল্প লিখেন অথচ নিজে বলতে পারছেন না গল্পের সংজ্ঞা।
♦ ওই ভাবে কখনো ভাবিনি।
♥ ভাবা উচিত ছিল।
♦ আচ্ছা আপনি কে সেটা কি জানতে পারি?
♥ আমি একজন পাঠক। এর থেকে বেশি মনে হয় না আপনার জানার প্রয়োজন আছে।
অপরিচিতা সুন্দরি চলে যায় সেখান থেকে। বৃষ্টি শেষ হলে আমরাও চলে আসি। রুমে এসে সারারাত বিভিন্ন বই আর গুগুলে ঘাটাঘাটি করি গল্পের সংজ্ঞা জানার জন্য। কিন্তু দুঃক্ষের কথা দু:ক্ষের সাথে বলতে হয় যে কোন সংজ্ঞাই কেন জেনো আমার পছন্দ হচ্ছিল না। ব্যাপার গুলো খুব জটিল মনে হচ্ছিল। গল্পের সংজ্ঞা এতো জটিল হতে পারে না। সকালে ঘুম থেকে উঠলাম। বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়ে বাইরের রাস্তার কুকুরটাকে দেখছিলাম। হটাত একটা গাড়ি এসে কুকুরটার উপর দিয়ে উঠিয়ে দিয়ে গেল। আমি তাকিয়ে দেখছিলাম। খুব খারাপ লাগলো ব্যাপারটা। বেচারা কুকুরের জীবনে গল্পটা এখানেই শেষ হয়ে গেল।

ক্লাস শেষ করে ফিরছিলাম। পান্থপথ মোরে। সেই মেয়েটির সাথে হটাত দেখা। ওই যে ওই মেয়েটি। গতকাল যে আমাকে প্রশ্ন করেছিল গল্প মানে।
আমি এগিয়ে তার কাছে গেলাম। পিছন থেকে এই যে বলে ডাক দেওয়ায় সে থেমে আমার দিকে তাকালো। দুধে আলতা গায়ের রঙ, কপালে কালো টিপ, হাতে একগুচ্ছো লাল চুরি। ইদানিং চুড়ি পরা মেয়ে খুব কম দেখা যায়।
♥ কে আপনি?
♦ ওই যে গতকাল.........
♥ ওহ হ্যা, লেখক সাহেব
♦ হাহাহাহাহাহা আমি লেখক না
♥ যাই হোক। পেয়েছেন কি গল্পের মানে?
প্রশ্নটা আবার আমাকে দ্বিধায় ফেলে দেয়। আমি এখনাও ঠিক ভাবে বুঝে উঠিতে পারি নি যে আসলে গল্প কি? এর সংজ্ঞাটা কিভাবে দেওয়া যায়।
সে আবার জিজ্ঞেস করল।
♥ কি মশাই কিছু বলুন। আপনি কি খুজে পেয়েছে গল্পের মানে?
♦ জি ।
♥ তাহলে বলুন।
♦ সহজ উত্তর। গল্প মানে জীবন।
চোখটা মৃদ শীতল ১টা হাসি দিয়ে
♥ যেমন:
♦ প্রতিটি গল্পের শুরু আর শেষ আছে, আছে হাসি আর কান্না, আছে সার্থপরতা আবার ভালোবাসাও কম থাকে না। গল্পে টুইস্ট থাকে। একটি জিবনেও কি কম? এক একটি গল্প এক একটি জিবনের সাদৃশ্য। তাই আমার কাছে গল্পের সহজ, ছোট আবার জটিলও। গল্পের সংজ্ঞা বা এর মানে অথবা গল্পের অর্থ হলো জীবন।
♥ ধন্যবাদ।
মেয়েটি অবাক হয়ে আমার কথা শুনছিল। তাকিয়েও ছিল আমার দিকে। আমিও কথার ফাকে তার চোখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। কিছু ১টা আছে তার চোখে। যেটা কিনা আমাকে ১টা মোহের ভিতর ফেলে দেয়। সে যায়। কিন্তু তার চোখের জাদুর মোহ আমার কাটতে বেশ সময় লাগে।
সেদিনের পর থেকে মনটা শুধু তাকে দেখতে চায়। কল্পনায় সে আসে, কিন্তু কেমন জেনো ঘোলাটে। তবে স্পষ্ট তার চোখ দুটো।
এইমন যখন ব্যাকুল হয়ে তাকে খুজছিল ঠিক সেই সময়ের কোন এক রোদেলা বিকেলে তার সাথে দেখা। ধানমন্ডির রবিন্দ্র সরবরে। আমি ব্যাচেলর পয়েন্টের সামনে ১টা চেয়ারে বসে ছিলাম। একা।
পিছন থেকে সে আসলো।
♥ ইক্সকিউজ মি
♦ জি। ওহ আপনি?
♥ বসতে পারি?
♦ হ্যা, কেনো নয়।
♥ কেমন আছেন আপনি?
♦ জি ভালো। আপনি?
♥ আগের মতই।
♦ আগে কেমন ছিলেন?
♥ হাহাহাহা জি ভালো ।
♥ এখানে একা বসে আছেন যে। নাকি গার্লফ্রেন্ড আসবে?
♦ নাহ কেউ আসবে না। আর আমার গার্লফ্রেন্ডও নেই।
♥ এতো বড় একজন লেখকের গার্লফ্রেন্ড নেই? বিশ্বাসযোগ্য নয়।
♦ ছিল একজন। হারিয়ে গেছে।
♥ অহ! সরি।
মনে হলো মেয়েটি মন খারাপ করেছে। আকাশের সব মেঘ এসে তার চাহুনিতে বাসা বেধেছে। তবুও মেয়েটাকে সুন্দর লাগছে। ইচ্ছে করছে বার বার চেয়ে থাকি তার ওই সুন্দর মুখটিতে।
♥ আমি আসি।
♦ আরে কোথায় যাচ্ছেন। কথাই তো হলো না আপনার সাথে। নামটাও জানা হলো না।
♥ আমার নাম নীলা। আচ্ছা আপনার এক্স জিএফের নামটা কি জানতে পারি?
♦ রোদেলা। কোথায় থাকেন আপনি? কি করেন?
এরপর আমাদের মাঝে অনেক অনেক কথা হয়। বন্ধুত্ব হয়। কিন্তু আমি তো তাকে প্রথম দিনই দেখে ভালোবেসে ফেলেছি। মনের রানী করে হৃদয় জুরে স্থান করে বসে আছে সে। কিন্তু কিভাবে তাকে বলি আমার মনের কথা। উপায় খুজতে থাকলাম। একদিন সিধান্ত নিলাম যে তাকে বলবো আমার মনের কথা। দেখা করতে চাইলাম। সেও রাজি হলো দেখা করতে। আমার বন্ধু আতিকের রেস্টুরেন্টে মিট করলাম। দোতালার এককোনায় বসলাম দুজন। অল্প নিলাভ আলোতে আজ নীলাকে একটু বেশিই সুন্দর লাগছে।
♦ তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে আজ
♥ অন্যদিন লাগে না?
♦তুমি সব সময় সুন্দর। তবে আজ তার চেয়েও একটু বেশি সুন্দর লাগছে।
♥ ধন্যবাদ। কি যেনো বলতে চেয়েছিলেন।
♦ হ্যা। বলব। কিন্তু বুঝতে পারছি না তুমি ব্যাপারটা কিভাবে নিবে।
♥ যে ভাবে নেওয়া উচিত সেইভাবেই নিব।
♦ আমার বলতে ভয় লাগছে।
♥ ভয় পাওয়ার কি আছে। আমরা ফ্রেন্ড। সো কোন ভয় নাই।
♦ আচ্ছা, আমরা কি আমাদের সম্পর্কটা বন্ধুত্ব থেকে এগিয়ে নিয়ে আরো একটু কাছে আসতে পারি না?
প্রতিটি মেয়ের মত বুঝেও না বুঝার অভিনয় করে নীলা উত্তর দিল
♥ কি বলতে চাচ্ছেন ঠিক বুঝলাম না।
♦ আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি। যেদিন তোমাকে প্রথম দেখেছিলাম সেদিন থেকে। কথাগুলো সিনেমার কমন ডাইলগের মত হলেও, সত্ত্যি।
♥ কি বলবো বুঝতেছি না।
♦ কেনো বুঝছো না? আমি কি ছেলে খারাপ নাকি দেখতে বাজে?
♥ সেই রকম কিছু না।
♦ আমি তোমাকে ভালোবাসি নীলা।
♥ সম্ভব না।
♦ কেনো সম্ভব না?
♥ কেনো সম্ভব না সেটা বলাও সম্ভব না আমার পক্ষে।
♦ তুমি এভাবে বলতে পারো না। আমার কি প্রবলেম বলো তুমি। আমি নিজেকে ঠিক করে ফেলব। তোমার যেটা পছন্দ না সেটা আমি করবো না। তুমি যেভাবে চাইবে আমি ঠিক সেইভাবেও চলবো। আমাত শুধু তোমাকে চাই নীলা।
♥ আচ্ছা আপনি নিষিদ্ধ রাতে গল্প জানেন?
♦ নাহ।
♥ আমি একজন নিষিদ্ধ রাতের গল্পের নায়িকা।
♦ মানে। বুঝিয়ে বল।
♥ ন্যাকামো করেন কেন? না বুঝার ভান করেন তাই না? (কাদো কন্ঠে চিৎকার করে)
♦ আম সত্যিই বুঝছি না।
নীলা টেবিল থেকে ১টা গ্লাস ফ্লোরে ফেলে দিয়ে চলে যায় সেখান থেকে। আমি ওর চলে যাওয়া দেখছিলাম। বুঝতে পারছিলাম না ঠিক ঘটনাটা কি হলো। নিজেকে খুব মুর্খ মনে হচ্ছিল। কি এই নিষিদ্ধ রাতের গল্প? আর এই গল্পের নাইকার চরিত্রটাই বা কি?
রুমে ফিরে এলাম। সারা রাত ইন্টারনেটে ঘাটাঘাটি করে নিষিদ্ধ রাতের গল্প নামের কোন গল্প খুজে পেলাম না। হয়তোবা বই আকারে বইয়ের দোকানে গেলে খুজে পাবো। এই ভেবে পরপর ২দিন বাংলাবাজার আর নীলক্ষেত চিরুনি অভিজান দিয়েও খুজে পেলাম না নিষিদ্ধ রাতের গল্প। আমার এক বন্ধু ছিল। নাম রাব্বি। বই পোকা ছেলে। সর্বশেষ ভরসা ছিল আমার ও। ওকে ফোন দিয়ে বললাম
♦ কিরে দোস্ত কেমন আছিস?
♣ ভালো দোস্ত। কিন্তু তোর তো দেখাই পাওয়া যায় না। ভাবছিলাম মরে টরে গেছিস।
♦ হা হা ওই রকমই দোস্ত অনেকটা।
♣ আচ্ছা বল কেনো ফোন দিয়েছিস?
♦আচ্ছা তোর কাছে কি নিষিদ্ধ রাতের গল্প টা আছে?
♣ নিষিদ্ধ রাতের গল্প। কেন মামা তুই এই গল্প দিয়ে কি করবি?
♦ আরে লাগবে। দে না।
♣ ওহ এই গল্প দেওয়া যায় না। শুনাতে হয়। বাসায় চলে আয়।
পরেরদিন রাব্বির বাসায় চলে যাই আমি। ওর রুমে বসে ওর মুখে শুনলাম নিষিদ্ধ রাতের গল্প। নিষিদ্ধ রাত। যে রাত টা সে রাতের নায়িকার জন্য হয় অভিশপ্ত আর নায়ক রুপের খলনায়করা মেতে থাকে ভিন্ন এক আনন্দে।
সেই সময় খুব ইচ্ছে করছিল নীলাকে একটু দেখার। কিন্তু উপায় ছিল না। আমার ফোন সে আর রিসিভ করেনা। নিষিদ্ধ রাতের গল্প শোনার পর সাধারনত নীলার প্রতি ভালোবাসা তো দূরে থাক, তার উপর ঘৃনা ধরার কথা। কিন্তু তা না হয়ে নীলার প্রতি ভালোবাসাটা মনে হয় বেড়ে গিয়েছিল। তাই পাগলের মত খুজতে থাকলাম নীলাকে। পেয়েও গেলাম একদিন। একটা অভিজাত হোটেল থেকে বের হচ্ছিল। আমি সামনে গিয়ে দাড়াই। আমাকে আভোইড করে চলে যাচ্ছিল। আমি পিছন থেকে হাত টেনে ধরি। তারপর দাড়ায় সে। চোখে মনে হয় কিছুটা পানি দেখেছিলাম। এরপর ১টা রেস্টুরেন্টে বসি। খাওয়া দাওয়া করি। কথা হয় অনেক। কথায় কথায় জানতে পারলাম তার এই নিষিদ্ধ রাতের গল্পে নায়িকা চরিত্রে আসার গল্প। সত্যিই খুব কঠিন মানুষের এই জীবন। মানুষের এই গল্প। আমি নীলাকে বিয়ের প্রস্তাব দিলাম। অনেক ভাবে বোঝাতে চাইলাম যে আমি তাকে অনেক বেশি ভালোবাসি। সে বুঝতে চাইলো না। আমি তার কাছ থেকে তার নিষিদ্ধ একটি মাসের রাত কিনে নিলাম। এই একটি মাস সে আমার। একমাস শেষ হয়ে গেলো। এই একমাসে তার সাথে থাকা সত্তেও তার কোমল শরীরের স্পর্শ আমি নেই নি। যদিও আমি তাকে ভালোবাসি। আর ভালোবাসার অন্যতম একটি অংশ ২টি দেহের মিলন। কিন্তু আমি নীলার কাছে যেতে পারিনি। কারন যদি ও আমাকে অন্যদিনের নিষিদ্ধ রাতের খল নায়ক ভেবে ফেলে। আমি জানি ও ওদের ঘৃনা করে।
মাসের শেষ রাতের কথা। নীলা হটাত আমাকে জরিয়ে ধরে। শীতল তার স্পর্শ। আমি প্রথমে বাধা দেই। যদিও আমারও ইচ্ছে করছিল ওকে জরিয়ে ধরি। বুকে টেনে নিয়ে শিতল করি এই হৃদয় টাকে
কিন্তু সেই পুরনো ভয়ে তাকে দূরে সরে যেতে বলি। ও কেদে দেয়। আর বলে
♥ প্লিজ তুমি এমন করো না। আমি তোমার কাছ থেকে এতো গুলো টাকা নিচ্ছি। প্লিজ টাকা গুলো আমাকে ভিক্ষে হিসেবে নিতে বাধ্য করো না। আমি খুব অসহায়। আমার টাকাটা খুব প্রয়োজন।
নীলার কথা শুনে আমি কি করবো বুঝতেছিলাম না। নীলা আমার কাছে আশে। আমাকে জরিয়ে ধরে। আদর করে। আমিও কেমন যেনো হয়ে উঠলাম। অন্য এক আমি তে রুপান্তরিত হলাম। সেদিন বেশ কয়েকবার আমরা দুজন দুজনকে আপন করে নিলাম।
পরের দিন ঘুম থেকে উঠে দেখি নীলা নেই। আমার পাশে একটি চিঠি পরেছিল। চিঠি খুলে দেখলাম সে তার সম্পর্কে কিছু লিখে গেছে। তার অভিশপ্ত জীবন সম্পর্কে লিখে গেছে। সে এক মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। একমাত্র মেয়ে। ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পরে। একদিন হটাত মায়ের ক্যন্সার ধরা পরে। ডাক্তারের পিছনে অনেক টাকা খরচ করে তার বাবা। প্রায় পথের ফকির হয়ে যায় ওরা। এর মধ্যে একদিন বাবাও আর না পেরে সুইসাইড করে। পরে যায় বিপদে নীলা। একদিকে অসুস্থ মা আর অন্য দিকে সংসার খরচ। চাকরির অনেক চেষ্টা করে নীলা। আর এই চাকরির ইন্টারভিউ এর নামে সে ধর্ষিত হয়। তারপর থেকেই সে নিষিদ্ধ রাতের গল্পের নায়িকা। নীলা আরো লিখেছে। সেও আমাকে ভালোবাসে। খুব ভালোবাসে। আমাকে এবং আমার লেখাকে। আমি তাকে যেদিন দেখেছিলাম সেদিন তার প্রেমে পরেছিলাম। কিন্তু নীলা তারও আগে আমার লেখা গল্প পরে আমাকে ভালো লাগা শুরু করে। আর যেদিন গল্পের সংজ্ঞা তাকে বললাম সেদিন সে আমাকে নাকি ভালোবেশে ফেলেছে। চিঠির শেষের দিকে অন্য সবার মত আমার শুভকামনা করেছে, আমাকে ভালো থাকতে বলছে। আর বলছে তাকে না খুজতে, তবে এটাও বলেছে আমি যেনো তাকে খুব ভালোবাসি সব সময় এবং রোদেলার থেকেও বেশি।
এরপর আমিও নীলাকে খোজা বাদ দিলাম। তবে তাকে আরো অনেক বেশি ভালবাসতে থাকলাম। এতো ভালোবাসা যে সেটা ভাষায় বোঝানো অসম্ভব।
একদিন দুপুরে একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসে আমার ফোনে। আমি ফোন ধরি। ও পারে কে জেনো কাদছে। একটি মেয়ে গলা। এর পর মনে হলো এটা নীলা।
♦ নীলা তুমি কাদছো কেনো? কি হয়েছে তোমার?
♥ আমার আজ সব শেষ হয়ে গেছে।
♦ কি হয়ছে তোমার? বলো আমাকে।
♥ মা আজ সকালে মারা গেছে।
♦ কি বলছো তুমি। তুমি এখন কোথায়?
♥ আমি মিরপুরে। আমাদের বাসায়। কেউ নেই আমার, এখন কিভাবে কি করবো বুঝতেছিনা।
♦ আমি আসছি, তুমি ঠিকানাটা ভালো করে বলো।
আমি সাথে সাথেও আরো ৩টা বন্ধু নিয়ে নীলাদের বাসায় যাই। এরপর সব কাজ শেষ করে দাফন দিয়ে নীলাকে আমার বাড়িতে নিয়ে আসি। আব্বু-আম্মুকে বলি ওর মা মারা যাওয়ার কথা।
এরপর থেকে নীলা আমাদের বাসায়। মাস ২ পরে আমি নীলাকে বিয়ে করি। তবে নীলা সম্পর্কে বাবা মা কে সব জানিয়েই বিয়ে করি। তারা আমার ভালোবাসাকে সম্মান করে আমাদের মেনে নেয়। আমরা নতুন একটি সংসার সাজাই। মুছে ফেলি জীবন থেকে নিষিদ্ধ রাতে গল্প। শুরু করি নতুন গল্প, যেই গল্পের নাম জীবন ও ভালোবাসা। ভালোবাসার ২ বছরের মাথায় এই কিছুদিন আগে আমাদের একটি ফুটফুটে বাচ্চা হয়। দোয়া করবেন আমাদের জন্য। আর নিষিদ্ধ রাতের গল্প ভুলে শুরু করুন নতুন কোন গল্প।
 আল্লাহ হাফেজ।

বৃহস্পতিবার, ২ মার্চ, ২০১৭

শালিপুর চর


শালিপুর চর
(একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে)
লেখা ঃ MD Asadur Rahman (Shipon)


প্রমত্ত পদ্মা । তার মাঝে গরে উঠেছে ১টা চর । চর টা এখন ১টা গ্রাম নাম তার শালিপুর চর । জায়গাটা ফরিদপুরের ভিতর পরেছে । সবুজ গাছপালা আর আর মাঠ । কোণ মোটর চালিত যানবাহন নাই এই গ্রামে , নাই বিদ্যুৎ । চিকিৎসার ও কোন ব্যাবস্থা নাই । ১টা মসজিদ আর ১টা মন্দির আছে । নিরেট ১টা গ্রাম । কোণ ভুল ছুল নাই ।
অপুরুপ সোন্দর্যের গ্রাম এটা । ছোট ১টা মাঠের মত আছে সেখানে ছেলেমেয়েরা খেলে । ১টা বাজার আছে । আর আছে ছোট ১টা জঙ্গলের মত । তার পাসেই বাস করে তামান্না আর সানা । ছোট একটা ছনের ঘড় । এক অপার সৌন্দর্য দিয়ে বিধাতা ওদের সৃষ্টি করেছেন । কিন্তু কপালপোড়া ২জনে । বাবা মা কেউ নাই ওদের । ৬ বছর আগে মারা গেছে । আর রেখে গেছে অভাগীনি ২জন কে । তামান্না বড় ওর বয়স হবে ১৫ থেকে ১৬ আর সানার মাত্র ১১ বছর ।
সানা ঃ ঐ আফা । আন্ধার হইয়া গেলো তো কুপি জালা ।
তামান্না ঃ কেন তুই জালাতে পারিস না ?
সানা ঃ ডর লাগে ।
তামান্না ঃ কুপি জালাইতে কইলে তর ডর আর সারাদিন জঙ্গলে থাকস তখন ডর লাগে না ?
কথা গুলো বলতে বললে কুপি টা জালিয়ে দেয় তামান্না । আর আলোতে ফুটে উঠে তামান্নার মুখ । কি সুন্দর মেয়েটা । দুধে আলতা গায়ের রঙ । শরিরে ১টা ছেরা শাড়ী । আলোতে হেসে উঠে ২জন ।
সানা ঃ আফা তুই এতো ভালা কেন রে ।
তামান্না জরিয়ে ধরে সানাকে । তারপর গল্প শুরু করে দুই বোন ।
সানা ঃ আফা আজ কি রানছস রে ?
তামান্না ঃ কচু আর গাটী আলু ।
সানা ঃ আমরা প্রতিদিন কচু য়ার গাটী আলু খাই কেন রে?
তামান্না ঃ আমগো বাড়ির সামনে তো শুধু ঐ ২টাই হয় , তাই ।
সানা ঃ খুব ভাত খাইবার ইচ্ছা করে ।
তামান্নার চোখে জল গরিয়ে আসে । বোনটাকে অনেক দিন ভাত খাওয়াই তে পারে না । তামান্না আগে জমির মাদবরের বাড়ি কাজ করতো , বিনিময়ে ২জনরে ২বেলা খাইতে দিত । কিন্তু বুইরা ১টা বদ । বুইড়ার নজর পরছিল তামান্নার ভড়া যৌবন দেহে । বারবার কুপ্রস্তাব দিত তাই কাজ ছেরে চলে আসে ।
রাতে কচু আর গাটি খেয়ে খুমিয়ে পরে দুই বোণ । এভাবেই চলে ওদের দিন কাল ।
সানা ১টা মুরগি পালে । সে ঐটা নিয়েই সারাদিন খেলা করে । সানাও তামান্নার থেকে কম সুন্দরি না । এই অল্প বয়সেই যোবনের ছাপ পরা শুরু করেছে তার উপর । লাল রঙের ১টা শাড়ি পরে সারাদিন ঘুরে । জঙ্গলের ভিতরই মুরগীটা নিয়ে বেশি থাকে ।
তামান্না ঃ ঐ ছেমরি তুই যে হারাদিন জঙ্গলে জঙ্গলে ঘুরগুর করস তর ডর লাগে না । যদি শাপে কামর দেয় ?
সানা ঃ (হাসি দিয়ে) হ আমি তো শাপই খুজতে যাই । কামর খাইয়া মরপার চাই । মরলে তো সর্গে যামু । আর সর্গে তো ভাত খাইতে পামু ।
তামান্না ঃ যা মর তুই ।
সানা জঙ্গলে মুরগি নিয়ে খেলছিল । হটাৎ মুরগী টা হাত থেকে ছুটে দূরে পালিয়ে যায় । সানা দৌড়াতে থাকে পিছনে পিছনে । পাশেই ১টা শেয়াল তারা করে মুরগিটাকে সানা দ্রুত কাছে গিয়ে ধরে ফেলে মুরগিটাকে ।তারপর বাসায় ফিরে আসে ।
সানা ঃ জানস আফা আজ না শিয়াল তারা করছিল আমার ময়না(মুরগী) টা রে ।
তামান্না ঃ ভালো করছিল । খাইলো না ক্যা । তাইলে তো তোর জঙ্গলে যাওয়া কমতো ।
রাত হয়ে গেছে । আজ সানা আর তামান্নার ঘরে বাতি জালানোর মত কেরোসিন নাই । তাই বাতিও জলছে না । দুবোন দুজোনকে জরিয়ে ধরে শুয়ে আছে ।
রাত মোটামুটি ভালোই হয়েছে । বাইরে যেন কিশের শব্দ হচ্ছে ।
সানা ঃ আফা বাইরে শব্দ কিশের রে ?
তামান্না ঃ মনে হয় শিয়াল আসছে । চুপ কইরা থাক ।
সানা ঃ কি কস । যদি আমার ময়না রে খাইয়া ফেলায় ।
কথা বলতে না বলতে দরজা ভেঙ্গে ঘরে ঢূকে ৪টা হিংস্র শেয়াল । কিছু না বলেই ঝাপিয়ে পরে অসহায় বনের উপরে । গায়ে থেকে ছেরা শাড়ী গুলো আরো ছিরে ফেলে । পুরো উলংগ করে ফেলে ।শিয়াল গুলোও নিজেদের কাপর চোপর খুলে ফেলে । সানা প্রথমে কিছু বুঝতে পারতেছিল না । পরে যখন ব্যাথা অনুভব করে তখন চিৎকার করে উঠে মা বলে । কিন্তু শিয়াল গুলোর কাছে সানার এই আর্তনাদ ছিল মুল্যহিন । একে একে ৪টা শেয়াল ২বোন কে ভক্ষন করে চলে যায় । পরে থাকে রক্তাত্ত ২টি দেহ ।
দুপুরের দিকে জ্ঞ্যান ফিরে ওদের । তখন খুদা চরম ভাবে আকর্ষন করছে । তামান্না উঠে রান্না করে । আবার সেই কচু আর গাটী । এরপর কয়েকমাস চলে যায় । ধিরে ধিরে পেট ফুলে উঠে সানার ।
সানা ঃ আফা আমার পেট এতো ফুইলা গেছে ক্যা রে ? তর ও তো ফুলছে । কেনরে ?
তামান্না ঃ আমগো প্যাটে শিয়ালের বাচ্চা আইতাছে ।
সানা ঃ কস কি । হ আমারে লাথি মারে পেটের ভিতর থাইক্কা । আফা এখন আমরা কি করুম ?
তামান্না ঃ আল্লা জানে ।
সানা ঃ আল্লা কে ? আল্লা নাই, নবী নাই , থাকলে কি ঐ দিন শিয়াল গুলা আমাগো সাথে এই কাজ করা পারতো
তামান্না ঃ চুপ থাক আল্লা নারাজ হইবো ।
সানা এই পেট নিয়ে ঘুরে বেরায় জঙ্গলে জঙ্গলে । শাপের খোজে । শাপ ওরে কাটবো আর ও মরে যাবে । তারপর সর্গে গিয়ে ভাত খাবে ।
একদিন সকালে গ্রামের কিছু মাতব্বর মিলে তামান্না আর সানার বাসায় আসে ।
জমির মাদবর ঃ খানকি গুলা কই ? ঘর থিকা বাইর হো ।
আসে পাসের আরো লোক জন বলে উঠে , বের হস না কেন । অনেক চিল্লা পাল্লার পর বের হয় ২ বোন ।
তামান্না ঃ কি হইছে ?
জমির মাদবর ঃ কি হইছে আবার কয় । দুই বইন বেস্যাপনা কইরা পেট বানাইয়া বইসা আছো আবার কতা কও । এই গ্রাম থাইক্কা তগো বাইর কইরা দিমু ।
তামান্না উঠান থেকে লাঠি উঠিয়ে
তামান্না ঃ কে বাইর করবো ? তরা ? ঐ বুইরা তো পোলার নাম জামান না
? আর ঐ বেটা তোর পোলার নামই তো ইহসান , তর টার নাম তাহমিদ তাই তো ? ওগো কাছে জিগা গা জা বাইর হো এইহান থিকা ।
জমির মাদবর ঃ উল্টা পাল্টা কথা কইয়া ল্যাব নাই । তগো বাইর না করলে আল্লা গজব ফালাইবো গ্রামে ।
তামান্না ঃ আল্লা কি তগো একা ? আল্লা দেহে না সব ? যা ভাগ ।
মাদবর রা চলে যায় । তার কিছুখন ব্যাথা শুরু হয় তামান্নার । ব্যথায় কাতরাতে কাতরাতে জন্ম দেয় এক মৃত শেয়ালের বাচ্চা । অনেক খন পর জ্ঞ্যান ফিরে ।
তামান্না ঃ শেয়ালের বাচ্চাটা কি বেচে আছে রে ?
সানা ঃ আফা এইটা তো মরা ।
তামান্না ঃ জা গাংগে ভাষায় দিয়া আয় ।
সানা ভাষায় দিয়ে আসে ।
রাত হয়ে গেছে । অন্ধকার ঘরে ২বন জরাজরি করে শুয়ে আছে । এর মধ্যে আবার শুনতে পায় শেয়ালের পায়ের শব্দ ।
সানা ঃ আফা শেয়ালগুলো আবার আইছে ।
তামান্না ঃ চুপ করে শ্যে থাক ।
ঘরে দরজা সরিয়ে ঘরে ঢুকে জমির মাদবর আর ওর চ্যালা ।
জমির ঃ তামান্না শুন ।
তামান্না ঃ কি হয়ছে ?
জমির ঃ যে কাজ করছস তোরা , তগো তো গ্রামের সবাই বাইর কইরা দিব ।
তামান্না ঃ আমরা করছি মানে কি ? করছে তো তগো জাইরা পোলারা ।
জমির ঃ এহন যা হইছে বাদ দে । তোরা আমারে একটু সুখ দে । যা ভেজাল আছে আমি মিটমাট করমু ।
তামান্না ঃ সুখ লাগবো তর । তর সুখ কি আমগো শরিরেই আছে রে । দিমু না । ঘর থাইকা বাইর হ ।
জমির ঃ মাগীর দেমাগ দেখ । ঐ তারিখ ধর ওরে । দেহি ওর ওই ছেরা শাড়ির ভিতরের শরিরে কি আছে ।
জমির মাদবর জোর করে তামান্না কে ধর্ষন করে আর তারিক করে সানাকে । তারপর চলে যায় ।
আবার রক্তাত্ত শরিরে পরে থাকে দুইবোন ।
সানা ঃ আল্লা নাই রে আফা । থাকলে আমাগো সাথে এমন হইতো না ।
কিছুদিন পর সানা জন্ম দেইয় আরেক শেয়ালের বাচ্চা । ছোট মেয়েটা কাবু হয়ে পরে ।
সানা ঃ আফা এই শেয়ালের বাচ্চাটারে গাংগে ভাষাবিনা ?
তামান্না ঃ এহনো মরে নাই । মরলে ।
সানা ঃ আফা ঐ দেক কি যেন আসতাছে এই দিকে । সামনে যা পাইতেছে সব ভাইংগা আসতাছে ।
তামান্না ঃ চল ঘরে চল । ঝর আসতাছে ।
সানা ঃ কি ঝর এইটা ? এমন ঝর তো আগে দেহি নাই ।
তামান্না ঃ রাক্ষসী ঝর ।
তামান্না আর সানা ঘড়ে ঢুকে । বাচ্চাটা বাইরে পরে থাকে ।
তামান্না ঃ আজ মনে হয় আর বাচুম না । এই ঝড় আমাগো শেষ কইরা দিব ।
সানা ঃ তাইলে তো বাচি । সর্গে জামু , ভাত খামু ।
ঝড় এসে ওদের ঘড় ভেংগে দেয় । তারপর সব অন্ধকার ।
আলো ফিরে আসে । সকাল হয়েছে । শরিরের উপর পরে আছে ছনের ব্যারা । সানা তামান্নার উপর থেকে বাস বেরা সরিয়ে ওকে দার করায় ।
সানা ঃ আফা আল্লা আছে , নবী আছে আফা । আল্লা , নবী বিচার করছে আফা ।
তামান্না ঃ শিয়াল গুলা সব মরছে মনে হয় । দেখ মইরা পিপড়ার মত শুয়ে আছে । আল্লা রাক্ষশি ঝড় পাঠাইয়া আমাগোর হয়ে বিচার করছে । হ আল্লা আছে , নবীও আছে আর তাগো বিচার আছে ।
শিয়ালের বাচ্চাটা মরে গেছে । সানা ওরে নিয়া গাংগে ভাষায় দেয় । আর পাশেই পরে থাকতে দেখে জমিরের লাশ । তারপর আসতে গিয়ে দেখে ঐ চার শিয়ালের লাশ । ওরা এখনো উলংগ ।
সমাপ্ত
(গল্পের শেষের অংশটুকু আমার কল্পনা )
আমার লেখা আরো গল্প পরতে চাইলে আমার পেইজ টি লাইক দিতে পারেন ।
https://www.facebook.com/arshipon15/