শনিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২০

তোমার গল্প

 

তোমার গল্পে তুমি নেই। অথচ তোমার গল্পের দৃশ্যপট জুড়ে তোমার থাকার কথা ছিলো, কথা ছিলো ছুঁয়ে দিবে গল্পের প্রতিটা শব্দ। মূমুর্ষ শব্দ গুলো তোমার স্পর্শ পেয়ে মধ্যবিত্ত জীবন ফিরে পেয়ে কবিতা হয়ে মাধুর্য বাড়াবে তোমার গল্পে। অথচ তুমিহীন আজ তোমার গল্প অসমাপ্ত। হয়তো তুমি বুঝতে পারবে তোমার গল্পে তোমার শুন্যতা কতখানি। ফিরে এসো তুমি তোমার গল্পে। গল্পটা জীবন ফিরে পেতে চায়।

বৃহস্পতিবার, ৫ নভেম্বর, ২০২০

ধারাবাহিক স্বপ্ন, পর্ব - চার (৪)


 গল্প ঃ #ধারাবাহিক_স্বপ্ন

পর্ব - চার (৪)

( প্রেতাত্মার লেখা গল্প - Written by A R Shipon ) 

অনেক রাত হয়ে গেছে। রোদেলার এখনো আসার কোন খবর নেই৷ হয়তো অভিমান করেছে। মোহিনীকে পেয়ে রোদেলার সাথে দুপুর দেখা করেনি ঠিকমত। রাগ তো হবারই কথা। তবে কেনো জেন মনে হচ্ছে রোদেলা আসবে। আসলোও বটে।

নুপুরের রিনিঝিনি শব্দ। সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে এলো রোদেলা। সেই নীল শাড়ী, খোপায় বেলি ফুলের মালা, হাতে নীল চুড়ি, চোখে কাজল। অসম্ভব সুন্দরী রোদেলা। চোখ সরাতে পারছিলাম না। রোদেলা কাছে এসে আমার পাশে বসে মুচকি একটা হাসি দেয়। জিজ্ঞেস করে আমি কেমন আছি। উত্তরে বললা খুব একটা ভালো নেই। সে আমার উত্তর শুনে খিলখিলিয়ে হেসে বলে 

রোদেলাঃ হাহাহাহা। মোহিনীর প্রেমে ছ্যাকা খেয়েতো দেখছি একদম বাকা হয়ে  গেছ। 

আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলি। রোদেলা আমার দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষন। আমার হাতের উপর হাত রেখে বলে কষ্ট পেও না। এটা হবার ছিলো বলেই হয়েছে। সুধু সুধু এইসব ভেবে নিজেক কষ্ট দিও না। আমি প্রশ্ন করিঃ  "আচ্ছা রোদেলা, মোহিনী কি আমাকে সত্যিই ভালোবাসে না? তাহলে এর আগে যে ভালবাসতো, ভালোবাসার কি অতিত বর্তমান ভবিষ্যৎ হয়? আমার কাছে কেন জানি মনে হয় ভালবাসার কোন কাল নেই। ভালবাসলে তাকে সবসময় ভালবাসে। তাহলে আমার সাথে এমন হল কেন। " রোদেলা কিছুক্ষণ নিরব থাকে, তারপর দাড়িয়ে হাটতে হাটতে পেছন ফিরে আমার দিকে তাকয়ে বলে " তুমি যেটাকে মোহিনীর ভালোবাসা বলছো সেটা ভালবাসা নয়। মোহিনী কখনই তোমাকে ভালবাসেনি। আমিও তোমার সাথে একমত। ভালোবাসার কোন কাল নেই। ভালবাসি মানে ভালবাসি। সবসময়, সবকিছু এবং সবভাবে। আসলে মোহিনীর আবেগকে তুমি ভালবাসা বলছ। মোহিনী কখনই তোমাকে ভালবাসেনি।" আমি রোদেলার কথা শুনে আবার মাথা নিচু করি। চোখ দিয়ে নিজের অজান্তেই পানি চলে আসে। ভিষন কষ্ট হচ্ছে ভিতরটাতে। এইভাবে প্রতারিত হব বুঝতে পারিনি। আমি রোদেলাকে বললাম, " রোদেলা তুমি আমাকে তোমার সাথে নিয়ে যাবে? আমার এই জীবন আর ভাল লাগে না। আমি তোমার হয়ে থাকতে চাই, কল্পনাতেই থাকতে চাই, এই বাস্তবতা আমার আর ভালো লাগছে না।" 

রোদেলা হিহিহিহি করে হেসে আমার কাছে আসে। 

রোদেলাঃ আচ্ছা আমি যে তোমার জন্য এত সুন্দর করে সাজুগুজু করে আসলাম। তুমি আমার দিকে একটু ভাল করে তাকিয়েও দেখলা না। ওহ, তোমার তো এখন আবার লাল শাড়ি পছন্দ। মোহিনী লাল শাড়িতে তোমার সাথে দেখা করতে এসেছিল। তাই না? তাইতো আমাকে এখন নীল শাড়িতে ভাল লাগে না। 

আমিঃ তেমনটা নয়। নীল শাড়ী আমার বরবরই পছন্দ। তারপর তোমার ওই কাজলকালো চোখের ফিদা আমি। কিন্তু তুমি তো কল্পনা। আর মোহিনী আমার ভালবাসা। এখানে লাল বা নীল কোন ফ্যাক্ট না।

রোদেলা মুখ হটাৎ করে কালো করে ফেলে। অনেক সংকা আর ভয় কাজ করছে ওর মুখে। কিছু একটা হয়েছে। কি হয়েছে জিজ্ঞেস করতেই আমার দিকে তাকিয়ে বলল,

রোদেলাঃ তোমার সামনে বিপদ। যদি সাহস রেখে সামনে এগুতে পার তাহলে হয়ত বিপদ কেটে নতুন সূর্য হাসবে, আর না হয় পানিতে ডুবে মরবে।

আমিঃ বুঝলাম না কিছু। খুলে বল। 

রোদেলা বিরবির করতে করতে  সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে গেল। আমি একটা সিগারেট ধরিয়ে টানতে টানতে ভাবার এবং বোঝার চেষ্টা করলাম যে রোদেলা আসলে কি বলে গেল। কিছুই মাথায় আসছে না। হাটাহাটি করছি, আর পাগলের মত বিরবির করছি। হটাৎ খেয়াল করলাম। ছাঁদের একপাশে লুকিয়ে লুকিয়ে কে জেন আমায় দেখছে। আমি দৌড়ে সামনে গেলাম। আমার সামনের দেয়ালে একটা ছায়ামূর্তি। শাড়ী পড়া, খোলা চুল দুলছে। আমার হাত পা অসার হয়ে গেছে। আমি নড়তে পারছি না৷ আমি এটা কি দেখছি। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। ছায়ামূর্তিটা হাটা শুরু করলো। ছাদ বেয়ে শুন্যের উপর দিয়ে হেটে নিমিষে ভ্যানিস হয়ে গেল। আমার শরীর দিয়ে ঘাম বেরুচ্ছে। হাটতে পারছি না। কোন রকমে জয়কে ফোন দিয়ে বললাম আমি ছাদে।

বিশাল লেক, দুইপাশে ছোট ছোট পাহাড়, জ্বোৎনার আলো, অসম্ভব মায়াবী পরিবেশ। আমি একটা ট্রলারে করে যাচ্ছি। সামনে দাড়িয়ে প্রকৃতি দেখছি। তারপর ট্রলারটি গিয়ে একটা পাহাড়ের ঘাটে দাঁড়ায়। একটা শীতল স্পর্শ আমাকে কাধে। আমি স্পর্শের অনুভবেই বুঝে যাই এই আমার মোহিনী। তার দিকে তাকাতেই মোহিনী হাসি। ঘাটে তাকিয়ে দেখি একটা ভাঙাচোরা সাইনবোর্ড। লেখা স্বপ্ন। নামটা চেনা চেনা লাগছে। কোথায় জেন শুনেছি নামটা। আমতা আমতা করতে করতেই পরক্ষনে চোখ পরে সাইনবোর্ডের পেছনে এক ছায়ামূর্তির দিকে। আরে এ তো সেই ছায়ামূর্তি। ছাদের যে ছায়ামূর্তি দেখেছিলাম। আমি রাতের ঘটনা মোহিনীকে বলার জন্য পেছনে তাকাতেই দেখি আরো দুটো পুরুষ ছায়ামূর্তি  মোহিনীর দুই হাত ধরে দুজনে টেনে নিজেদের দিকে নিতে চাচ্ছে। মোহিনী চিৎকার করে বলছে দুপুর আমাকে বাচাও। কিন্তু আমি যে এক পা ও সামনে এগুতে পারছি না। নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছে। আবার সেই নাড়ি ছায়ামূর্তির দিকে তাকাই, সেই হাসছে। আমি আর সহ্য করতে পারছিলাম না। চিৎকার আর হাত পা নাড়ানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করলাম। চেষ্টায় ঘুম ভেঙে গেল। বুঝলাম স্বপ্ন দেখছিলাম। আবার সেই #ধারাবাহিক_স্বপ্ন। স্বপ্ন গুলো ইদানীং খুব বেশি জীবন্ত আর ভয়ংকর। 

খেয়াল করে দেখি আমি আমার রুমে সুয়ে আছি। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম দুপুর ২টা বাজে। পাশের রুমে অনেকগুলো মানুষের কথার শব্দ। হৃদয়ের কন্ঠটা কানে আসলো। আমি ছাদ থেকে কিভাবে এখানে আসলাম মনে  নেই। তবে আন্তাজ করতে পারছি যে জয়কে ফোন দেওয়ার পর হয়তো জয় উপরে গিয়ে আমাকে নিয়ে আসে। কিন্তু আমি কি জ্ঞ্যান হারিয়ে ফেলেছিলাম। হয়তোবা।

ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে এসে পাশের রুমে যাই। গিয়ে দেখি অনেকে এসেছে। আমাকে রুমে ঢুকতে দেখেই পরী সামনে এসে জিজ্ঞেস করে " দাদা কি হয়েছিলো? তুমি ছাদে জ্ঞ্যান হারালে কিভাবে?" আমি বললাম "দাড়া। আগে বসতে দে।"

এখানে আছে হৃদয়, জাহিদ, রনি, শিলা, জয়, শিফা, অর্নব, তাহমিদ, অনুপ, পরী।  জয় ওদের সবাইকে ফোন দিয়ে এনেছে। সকাল থেকে ওরা গল্প করছে। গল্পে গল্পে বেরিয়ে আসে যে তুষার যে রিসোর্টে জব করে,  রনির ফ্রি থাকার রিসোর্ট, শিলার ইভেন্ট এর রিসোর্ট এবং জয়ের শ্যুটিং এর রিসোর্ট একই। রিসোর্ট #স্বপ্ন। ওরা সবাই মহাখুশি। একসাথে সবাই মিলে অনেকদিন পর আবার আনন্দ ফূর্তি করা যাবে। কিন্তু কেউ একবারও ভাবছে না চারজনেরই মিলে যাওয়াটা কোন অস্বাভাবিক কিছুর ইংগিত দিচ্ছে। আসলে ওরা এতো বেশি ভাল যে কখনও আমার মত করে নেগেটিভ চিন্তাভাবনা করে না। আর তাই আমিও রাতের সত্যি ঘটনাটি লুকিয়ে মাথা ব্যাথা থেকে সেন্সলেস হবার ঘটনা বলে চালিয়ে দেই।

সবাই এখন খাতা কলম নিয়ে বসেছে। জয়ের এসিস্ট্যান্ট হিসেবে অনুপ আর জাহিদ কাজ করছে, আর শিলার জন্য তাহমিদ, হৃদয় আর শিফা। আর বাকি গুলো সবাইকে হেল্প করবে। সবশেষে সিধান্ত নেওয়া হয় আগামী পরশুদিন নভেম্বর ০৩ তারিখে রাতের বাসে রাঙামাটির উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়া হবে। মিটিং এর মাঝখানে অর্নব কাচ্চির অর্ডার করেছিল। যথাসময়ে কাচ্চি চলে আসে। মিটিং শেষে শুরু হয় কাচ্চি উৎসব। সবার খাওয়ার মাঝখানে হুট করে পরী বলে উঠে,

পরীঃ তোমরা কি কেউ খেয়াল করেছো যে বিভিন্নভাবে কেউ একজন আমাদের রাঙামাটির ঐ রিসোর্টে নিয়ে যেতে চাচ্ছে। তা না হলে এইভাবে কেমন করে মিলে যায়? আর তুষার আমাকে বলেছে ঐ রিসোর্টে ভূত আছে। আমি দাদাকে বলেছিলাম। আমার কেন জানি মনে হচ্ছে আমাদের সাথে প্যারানরমাল কিছু ঘটতে যাচ্ছে। 

পরীর কথা শুনে বাকি সবাই হেসে উঠে। বলে যে ওর মাথায় এখনো ভূত গোয়েন্দার প্যারা ঘুরে তাই সব কিছুতেই ভূত ভুত আর রহস্য খুজে। মাথা ঠিক নাই। ভূত গোয়েন্দার কথা শুনতেই মনে পরে গেল অতিত দিনগুলোর কথা। কত প্যারানরমাল রহস্য উদঘাটন করেছি এই ভূত গোয়েন্দাদের সাথে। আজ সব অতিত। ভূত গোয়েন্দা শাখা মানুষের মধ্যে পপুলার না হলেও ভূত বা আত্তিক জগতে এর ভাল নাম ডাক আছে। আর পরী ঠিকই ধরেছে। সামনে ভূত গোয়েন্দা শাখার এই প্রাত্তন সদস্যের সাথে ভয়ংকর প্যারানরমাল কিছু ঘটতে যাচ্ছে। যা গতকাল রাতের ঐ ছায়ামূর্তিকে দেখেই বুঝেছি। এখন আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে ভৌতুক রিসোর্ট #স্বপ্ন। জানিনা কি হয় সেখানে।

চলবে....................

(সম্পূর্ণ গল্পটি আমার বিকৃত মস্তিকের কল্পনা মাত্র। ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে। পরবর্তী পর্ব আগামীকাল অথবা পরশুদিন পোস্ট করা হবে।)

বুধবার, ৪ নভেম্বর, ২০২০

ধারাবাহিক স্বপ্ন, পর্ব - তিন (৩)

 

গল্প ঃ #ধারাবাহিক_স্বপ্ন

পর্ব - তিন (৩)

( প্রেতাত্মার লেখা গল্প - Written by A R Shipon ) 

সামান্য কিছু শপিং করে রাতে বাসায় ফিরি। দিনে লিফটে যে ঘটনা ঘটছে সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি চাই না, তাই সিঁড়ি বেয়ে উপরর উঠি। ওমা! ৮ তলা।

দুপুরে রান্না করা ছিলো, তাই রাতের রান্নার প্যারা নেই। চাবি দিয়ে দরজা খুলে দেখি আমার রুমে লাইট জ্বলছে। কিছুটা ভয় লাগছে। স্বভাবতই কিছু অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটে চলছে আমার সাথে। ভয় পাবারই কথা। দেখা গেলো রুমে ঢুকে দেখলাম সেই মেয়ে সাদা শাড়ি পরে মাথা ঘোমটা দিয়ে ঢেকে আমার বিছানার উপর বসে আছে। ঘোমটা খুলতেই সে কি বিভৎস চাহুনি। 

আমার ভয় কে কিক মেরে দিয়ে রুম থেকে বেরুলো জয়। আমি ছাড়াও আমার রুমের চাবি জয় আর হৃদয়ের কাছে আছে। ওরা মাঝে মাঝেই আসে।

জয় প্লেট নিয়ে বের হলো। রাত হয়ে গেছে বলে খাওয়া সেরে নিয়েছে। আজ রাত ও এখানেই থাকবে। 

জয় থাকা মানে আজ আর আমার ঘুম হবে না। সারা রাত প্যাচাল, মেয়েদের সাথে টাংকি মারা, এইসব আর কি। ও আমাকে নিয়ে মেয়েদের সাথে মজা করে, এখন আমি যদি ঔষধ খেয়ে চিতকাত হতে পরে থাকি তাহলে হয়তো খুব একটা ভালো হবে না। 

জয়কে জিজ্ঞেস করলাম যে হটাৎ কি মনে করে? উত্তরে বলল, স্ক্রিপ্ট নিয়ে আলোচনা, কাস্টিং, কস্টিউম, সেট, প্রপস এইসব নিয়ে আলোচনা। আমি ওর কাছ থেকে স্ক্রিপ্ট নিয়ে বারান্দায় এলাম। আর ওকে বললাম এক মফ কফি বানিয়ে আনতে। কথামত ও কফি বানিয়ে আনতে গেলো আর আমি বারান্দায় স্ক্রিপ্ট নিয়ে বসলাম। 

সময় নিয়ে মনোযোগ দিয়ে স্ক্রিপ্ট টা পড়লাম৷ স্ক্রিপ্টের গল্পটা এমন -

চারু বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষে পড়ে। খুব ভালো ছাত্রী, সেই সাথে দেখতে অপসারী। বন্ধুদের সাথে সে খুব মিশুক ও বিনয়ী। ভার্সিটিতে বন্ধু সার্কেলের অনেক ছেলেই চারুকে পছন্দ করে, প্রেম প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু চারু কারোর প্রেম প্রস্তাবেই সারা দেইনি। তবে চারু মনে মনে জোবায়েরকে কিছুটা পছন্দ করে আবার কিছুটা ভালো লাগাও আছে।

সেকেন্ড ইয়ারের ক্লাস শেষে চারু সবার পর বের হচ্ছে ঠিল সেই সময় শিবু চারুর সামনে এসে দাড়ায়। হুটু গেড়ে বসে চারুকে প্রেম নিবেদন করে। চারু সরাসরি শিবুকে না করে দেয়। চারু শিবুর প্রেম প্রস্তাবকে ফিরিয়ে দেয়, কিন্তু সে শিবুর ভালোবাসাকে অবমূল্যায়ন করে না। ইন্যদিকে চারুর বন্ধুরা শিবুকে নানান ভাবে হেয় করে। শিবু রাংগামাটির এক পাহাড়ি ছেলে। সেখান থেকে এই ঢাকায় এসে পড়ালেখা করছে। চারু শিবুকে জীবনসঙ্গী হিসেবে গ্রহন না করতে পারলেও বন্ধুত্বের প্রস্তাব দেয়। ধিরে ধিরে চারুর ফ্রেন্ড সার্কেলের সকলের সাথে শিবুর বন্ধুত্ব হয়। কিন্তু চারুর সাথে শিবুর বন্ধুত্ব মেনে নিতে কষ্ট হয় জোবায়েরের। একদিন সামান্য কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে জোবায়ের শিবুর গায়ে হাত তোলে। 

চারু জোবায়েরকে ধিরে ধিরে ভালোবেসে ফেলে কিন্তু শিবুর গায়ে হাত তোলা চারু পছন্দ করেনি। কিছুদিন চারু জোবায়েরের সাথে কথা বলেনি। একদিন জোবায়ের শিবুকে চারুর সামনে এনে শিবুর কাচ্ছে ক্ষমা চায়, শিবুকে ভালো বন্ধু হিসেবে মেনে নেয়।

চারু তার বান্ধবীদের জানায় যে সে জোবায়েরকে ভালবাসে। জোবায়ের এর জন্মদিনে সে তার ভালবাসার কথা জানাবে। এইতো দিন পাঁচেক পরেই জোবায়েরর জন্মদিন। 

পরেরদিন শিবু এসে বন্ধুদের আড্ডায় সকলে অনুরোধ করে তার গ্রামে যেতে, মানে রাঙামাটি। তাদের খুব বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান কঠিন চিবর্ধন এর নিমন্ত্রণ জানায়। বন্ধুরা সবাই রাজি হয়ে যায়। পাহাড়ের উপর এতোবড় আয়োজন সামনে দেখা কেউ মিস করতে চায় কি? জোবায়ের তার জন্মদিন সেখানে সেলিব্রেট করার প্ল্যান করে। আর চারু সেখানে পূর্নিমার রাতে জোবায়েরকে তার ভালবাসার কথা জানাবে।

শিবু সেখানে একটি রিসোর্ট ঠিক করে থাকার জন্য। রিসোর্ট এর নাম #স্বপ্ন। 

সবাই মিলে রাঙামাটি যায়। সেখান থেকে ট্রলারে বন্দুকভাঙা, তারপর শিবুর বাড়িতে দেখা করে রিসোর্টে। রাঙামাটি শহরের পর থেকে সব জায়গায় যেতে নৌকা বা ট্রলার ব্যাবহার করতে হয়। 

রিসোর্টে ভালোই আনন্দ উল্লাসে মেতে ছিল। কঠিন চিবর্ধন অনুষ্ঠান ভালই লাগে তাদের কাছে। কাপ্তাই লেক থেকে শত শত ফানুস উড়ানোর আনন্দই অন্যরকম।  পরের দিন রাত ১২ টার পর সবাই জোবায়ের রুমে এসে কেক কেট তার বার্থডে সেলিবেট করে যার যার রুমে ফিরে যায়। সকালে উঠে সারাদিন শুভলং সহ কয়েকটি ঝর্না দেখবে, রাতে চারু জোবায়েরকে তার ভালোবাসার কথা জানাবে এবং পরের দিন সকালে সবাই চলে যাবে। 

ভোরের কিছু আগে চারুর দুই জন বন্ধু চিৎকার দিয়ে উঠে। সবাই মিলে তাদের কাছে যায়। গিয়ে জানতে পারে কালো একটা ছায়া নাকি তাদের পা ধরে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলো। এরপর এক এক করে চারু আর জোবায়ের ছাড়া সকল বন্ধুই বলে যে এই কদিনে তাদের সাথে এমন অনেক ঘটনাই ঘটেছে। এবং প্রত্যেকবার তাদের হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। 

সকালে উঠে সবাই চলে যেতে চায়। কিন্তু জোবায়ের আর চারুর রিকোয়েস্ট এর জন্য সবাই আর একদিন থাকার স্বিদ্ধান্ত নেয়। সারাদিন ঘুড়ে বেড়ায়। রাত ১১.৩০ মিনিট। বন্ধুরা সবাই জোবায়ের আর চারুকে একলা রেখে চলে যায়। জোসনা রাতে চারু তার ভালোবাসার কথা জানাবে। কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ড করবে দুজনে। বাকি সবাই যার যার রুমে গিয়ে ঘুম দেয়। 

পরের দিন সকালে বন্ধুরা এসে দেখে জোবায়ের আর চারুর লাশ যার যার রুমে পড়ে আছে। শরীরে বিভিন্ন অংশ থেকে মাংশ নেই, দেহে রক্তের ছিটেফোটাও নেই। নখের আচরের দাগ। পুলিশি মামলার ভয়ে বন্ধুরা কাউকে না জানিয়ে লাশগুল রিসোর্টের পেছনে পুতে রেখে সেখান থেকে দ্রুত পালিয়ে আসে ঢাকায়। """

স্ক্রিপ্টের গল্প এখানেই শেষ। তবে আমার কিছুটা ধোয়াশা মনে হচ্ছে। গল্পটা অসম্পূর্ণ। অনেকটা আমার #ধারাবাহিক_স্বপ্ন এর মত। আমি বারান্দা থেকে রুমে এসে দেখি জয় ঘুমিয়ে পরেছে। আমার আর ঘুম টানছে না। অনেকদিন হয় রোদেলার সাথে দেখা করি না, অনেকদিন ছাদে যাওয়া হয় না। ড্রয়ার থেকে একটা শিশি বের করে, সম্পূর্ণ শেষ করে সিগারেটের প্যাকেট আর ফায়ার বক্স নিয়ে ছাদে যাই। এক কোনায় বসে সিগারেট জ্বালিয়ে তার সাথে সঙ্গম করতে করতে চাঁদ দেখি। অসম্ভব সুন্দর সেই চাঁদ। আচ্ছা চাঁদ বেশি সুন্দর নাকি রোদেলা, রোদেলা নাকি মোহিনী???

সত্যিকারের সুন্দর তো আমার ভালোবাসা। সেই ভালোবাসা যখন শূনের মাঝে তখন চাঁদ সুন্দর, যখন কল্পনার রাজ্য কলংকপুরে ভালবাসা খুজি তখন রোদেলা অপস্বরী, আর যখন কল্পনা থেকে বাস্তবতায় ফিরে আসি তখন মোহিনী। তবে কল্পনায় রোদেলা ধোকা দেয় না, যেমনটা বাস্তবে মোহিনী দেয়৷ আজ রোদেলা আসলে তাকে জিজ্ঞেস করবো কেন মোহিনী আমার সাথে এমন করল। তবে রোদেলা কি আসবে??

চলবে....................

ধারাবাহিক স্বপ্ন , পর্ব - দুই (২)

 


গল্প ঃ #ধারাবাহিক_স্বপ্ন

পর্ব - দুই (২)

( প্রেতাত্মার লেখা গল্প - Written by A R Shipon ) 

রাঙামাটি যাবো কি যাবো না ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরেছিলাম। গুম ভাংঙে দুপুর ১২ টার কিছুক্ষণ পর। ফ্রেস হিয়ে নিচে যাই। টং দোকানের এককোনায় বসে চা সাথে একটা বেনসন সুইচ আমার প্রতিদিনের নাস্তা, সারাদিনের এনার্জি। চা খাওয়া শেষে দোকানদার মামা জানিয়ে দেয় যে দোকানে আমার ৫০৯ টাকা বাকি পরে গেছে। দুইদিন পর দিয়ে দিবো বলে ফিরে আসি ফ্ল্যাটে। 

অনেকদিন হয় বেকার বসে আছি। হাত খরচ চালায় বন্ধুরা৷ যে বাসাটাতে থাকি সেটাও এক বন্ধুর। কিছু একটা করা উচিৎ। কিন্তু এই বিস্ফোরিত মন নিয়ে কি এখন কোন কাজে মন দেওয়া সম্ভব???  কিন্তু টাকারও তো বড্ড প্রয়োজন। 

টাকার কথা মনে আসতেই মনে পরলো শিলার ইভেন্ট এর কথা। ইভেন্ট এর কাজটা করলে তো ভালো অংকের একটা টাকা পাওয়া যাবে। শিলার কাছ থেকে তাহলে আপাতত কিছু টাকা ধার নিয়ে নেই। সেই মত শিলাকে ফোন দেওয়া। 

হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে শিলা বলে উঠলো "মামা কিছু ভাবছেন? মানে কিভাবে, কোন প্ল্যানে ইভেন্ট টা করবেন? অবশ্যই কিন্তু ভৌতিক হতে হবে। মনে আছে, চিটাগং এ যে ইভেন্ট টা করেছিলাম"। আমি প্রতুত্তরে বললাম " তুমি লেকে আসো। প্ল্যান নিয়ে আলোচনা করবো। আর ক্লায়েন্ট কি কিছু এডভ্যানস করছে?"।  শিলা আমাকে লেকে আসতে বললো, ওর আসতে ১০ মিনিট লাগবে।

শিলার ১০ মিনিট সম্পর্কে কি আপনাদের কোন ধারনা আছে?? আচ্ছা আমিই বলে দিচ্ছি। শিলা প্রথমে ১৫ মিনিটে সাওয়ার নিবে, তারপর ৪৫ মিনিট মুখে আটা ময়দা মাখবে। এরপর রিক্সায় উঠবে। ধরে নেওয়া যায় যে শিলার ১০ মিনিট মানে ১ঃ৩০ মিনিট এর সমান। যদিও পড়ির চাইতে ভালো। পড়ি বাইরে বের হতে হলে আগের দিন থেকে সাজুগুজু শুরু করে।

আমি সিদ্ধান্ত নিলাম যে এই ১ঃ৩০ মিনিটে আমি আমার রান্না শেষ করে ফেলতে পারো। আমি রান্নায় খুব একটা বাজে না। ছেলে হলেও রান্নার হাতটা ভালো। মাঝে মাঝে ভয় হয়, কবে জেনো হাবু ভাই এসে বলে পুট ইউর হ্যান্ড....... মানে তোমার রান্নার হাতটা একটু দেখবো। হাহাহাহাহা, একটু মজা করলাম আর কি। 

টিশার্ট, প্যান্ট চেঞ্জ করে আমি বাসা থেকে বের হলাম। ৮ তালা থেকে লিফটে নামছিলাম। আমি একা। হটাৎ লিফট বন্ধ হয়ে গেল। স্বাভাবিক, হয়তো বিদ্যুৎ চলে গেছে। 

লিফটের ভেতরে কেমন জেনো একটা গুমট পরিবেশ মনে হল, সু সু একটা বিশ্রি  শব্দ আমার কান ঝালাপালা করে দিচ্ছে। অন্ধকার সব সময় আমার প্রিয় হলেও কেনো জানি এখন আমার অন্ধকার ভিষণ ভয় লাগছে। আমি পকেট হাত দিয়ে মোবাইল বের করলাম লাইট জ্বালানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু মোবাইল থেকে সামান্য পরিমান আলোও আসছে না। আমি জোরে চিৎকার দেওয়ার চেষ্টা করেও বৃথা হলাম। এক মিটারের বাইরেও আমার চিৎকারের আওয়াজ গেছে কিনা সন্দেহ। ঘাম ঝরছে। আমি বসে পরলাম। লিফটে দেয়াল ঘেষে। চোখ বন্ধ করতে যাবো আর এই সময়ে খেয়াল করলাম আমার পেছনে হালকা আলো। আমি সেখান দ্রুত সরে গিয়ে তাকিয়ে হতবাক হয়ে তাকিয়ে দেখলাম।

লিফটের কাচের দেওয়ালে, যেখানে আয়নার মত। সেখানে আবছা আলোয় একটা মেয়ের পেছনের দিকের অংশ দেখা যাচ্ছে। চুল গুলো হাওয়ায় দুলছে। মেয়েটা ধিরে ধিরে সমুদ্রের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমি নির্বাক। এই মেয়েটা তো সেই মেয়ে যাকে গতকাল আমি স্বপ্নে দেখেছিলাম। ঐযে সাগরপাড়ে যে ভাসছিলো। আমি পারে নিয়ে আসলাম। মুখ দেখার সময় স্বপ্ন ভেংঙে গেলো। আজও তো মুখ দেখতে পাচ্ছি না। কিন্তু মেয়েটা কে? কি বোঝাতে চাচ্ছে? আমি কি স্বপ্ন দেখছি। মাথা ঘুরে জ্ঞ্যান হারিয়ে ফেললাম।

জ্ঞ্যান ফেরার পর নিজেকে আবিস্কার করলাম নিচে দারোয়ান এর রুমে। আমি নাকি জ্ঞ্যান হারিয়ে পরেছিলাম লিফটে। জিজ্ঞেস করে তাদের কাছ থেকে জানতে পারলাম যে বিদ্যুৎ যায়নি, লিফট বন্ধ হয়নি। তাহলে কি ঘটলো আমার সাথে?? এটাও কি আমার #ধারাবাহিক_স্বপ্নের একটা পর্ব স্বপ্ন ছিলো? স্বপ্ন কি করে এতো ভয়ংকর হতে পারে??

 প্রশ্নের উত্তর খোজার জন্য যথেষ্ট সময় তখন আমার হাতে ছিলো না। শিলা বারবার ফোন দিয়েই যাচ্ছিলো। 

শিলাঃ মামা কোথায় আপনি? আজ কি আপনি আটা ময়দা মাখা শুরু করলেন নাকি যে এতো দেরি হচ্ছে?

আমিঃ সরি। একটু লেট হয়ে গেলো। আমি এখনিই রিক্সায় উঠছি। তুমি ফুসকা অর্ডার দিয়ে খেতে থাকো। 

কলাবাগান থেকে রিক্সা নিয়ে ধানমন্ডি ৮ ব্রিজ পার হয়ে রবিন্দ্র সরবেরর কাসেম ভাই এর ফুসকার দোকানে শিলা। 

সামনে গিয়ে দেখি ৩ প্লেট ফুসকা শেষ। আমি গিয়ে বসলাম তখন ৪র্থ প্লেটের সর্বশেষ ফুসকাটি মুখে দিচ্ছে।

শিলাঃ এমন মনমরা, ফ্যাকাসে লাগছে কেনো??

আমিঃ কিছুনা, ক্ষুদা লেগেছে। 

শিলাঃ ফুসকা খান।  সকালেও কিছু খান নাই জানি।

আমিঃ নাহ, চা আর একটা বেনসন সুইচ দিতে বলো।

শিলার সাথে ইভেন্ট এর ব্যাপারে কথা শুরু হলো। তিলোত্তমা তৃতীয়া নামে এক সুন্দরী মেয়ে ইভেন্টের কাজ দিয়েছে। সাথে ১৫ লাখ টাকার একটা চেক। খুবই ছোট করে এই ইভেন্টে খুব হলে ১৫/২০ জন গেস্ট থাকবে। তিলোত্তমা তৃতীয়া মেয়েটার বিয়ে। 

শিলাঃ মামা এখন ইভেন্ট প্ল্যান বলেন।

আমিঃ খুবই সাধারণ প্ল্যান। যতটুকু জানি রিসোর্ট এর চারিদিকে পানি। রাংঙামাটি থেকে ট্রলারে বন্ধুকভাংঙা যেতে হবে। সেখানে একটা টিলার উপর রিসোর্ট। আসে পাসে সব পাহাড়ি, বিদ্যুৎ নেই, সোলার আর জেনারেটর আছে। গেস্টদের রাতে নিয়ে আসবো রিসোর্টে, পুরো রিসোর্ট টাকে ভূতের বাংলোর মত সাজাবো। 

শিলাঃ আগের বারের মত কি একটা গেট করবো?? ভূতের হা করা মুখ দিয়ে ঢুকবে।

আমিঃ নাহ। তোমার ইভেন্ট এর বাজেট খুব কম। আমরা গেট সাজাবো বিভিন্ন ধরনের পুতুল আর মানুষের কংকাল, মুন্ডু দিয়ে। গেস্ট পুতুলের সামনে গেলে পুতুল গুলো থেকে একটা ভয়ার্ত কান্নার শব্দ আসবে। ভয়ে পেছন গেলেই পা পরবে হাড়গোড় এর উপর। তারপর কংকাল দেখে অনেকেই মূর্ছা যাবে।

শিলাঃ ঐযে পুতুল জংগলটার মত? যেখানে অনেক পুতুল গাছে গাছে ঝোলানা আছে। যেগুলোতে কিনা বিভিন্ন মানুশের আত্তা বাস করে।

আমিঃ অনেকটা সেরকম। সেই সাথে একটা মেয়ে থাকবে। সেই মেয়েই হচ্ছে ইভেন্টের মূল আকর্ষন। আমরা লেজারে কাজগুলো করবো। হৃদয় এই বিষয়ে ভালো বোঝে।

মেয়েটার লেজার ছায়ার মত হবে। আমরা আমাদের সব প্ল্যানের কথা গেস্টদের বললেও এই প্ল্যান কাউকে বলবো না। সবার রুম এর আশে পাশে সহ বিভিন্ন জায়গায় ঘুরবে মেয়েটি। সবার মধ্যে ভয় বিরাজ করবে। আমদের কাছে বললে আমরা বলবো আমরা জানিনা। বলবো এইখানে একটা মেয়ের অতৃপ্ত আত্তা আছে। সেই আত্তা ঘোড়াঘুড়ি করছে। 

শিলাঃ ফিরে যেতে চাইলে?

আমিঃ আমরা গেস্টদের আনতে যাবো না। ঐখানে লোক ঠিক করা থাকবে তারা আনবে। ফিরে যেতে চাইলে বলবো এরা পিশাচ এরা আমাদের যেতে দিবে না। মুক্তির উপায় হিসেবে বলবো একই বিয়ের মঞ্চে তিলোত্তমা তৃতীয়ার বিয়ের সাথে সাথে ঐ অতৃপ্ত আত্তার বিয়েও দিতে হবে। তখন আরো প্ল্যান বের করে ফেলবো। এখন আমার কিছু টাকা প্রয়োজন, টাকা দাও।

শিলা আমার হাত ৫০০০০ টাকা তুলে দেয় দেয়। তারপর ওর জোরাজোরিতে জিগাতলা গিয়ে কাচ্চি খেয়ে বাসায় ফিরি৷ সাথে কিছু ঘুমের ঔষধ নেই। একটা গভীর ঘুমের বড্ড প্রয়োজন। যে ঘুমে #ধারাবাহিক_স্বপ্ন গুলো এসে আমাকে ডিস্টার্ব করবে না। যে ঘুমে মোহিনীর স্মৃতি গুলো আমাকে মাঝ রাতে কাদিয়ে তুলবে না। অনেক অনেক অনেক গভীর একটা ঘুমের প্রয়োজন। 

চলবে....................

রবিবার, ১ নভেম্বর, ২০২০


 গল্প ঃ #ধারাবাহিক_স্বপ্ন

পর্ব - এক (১)

( প্রেতাত্মার লেখা গল্প - Written by A R Shipon )


হুট করেই এই ভৌতিক মধ্যরাতে ঘুম ভেংগে গেলো আমার। ভৌতিক মধ্যরাত???

হুম। ভৌতিক মধ্যরাত। গতকাল সারাদিন বৃষ্টি হয়েছে। গৌধুলী সন্ধ্যা পেরিয়ে রাতেও বৃষ্টি। এখন বৃষ্টি নেই, মেঘের গর্জন আছে, আছে নিস্তব্ধতা। সব মিলিয়ে ভৌতিক মধ্যরাত। ভৌতিক মধ্যরাতের নিস্তব্ধতা ভেংগে দিয়ে ঘড়ির কাটার ঠুক ঠুক ঠুক শব্দ আমাকে তার দিকে মনোযোগ নিয়ে নেয়। অন্ধকার ঘরে ঘড়ির কাটার ঠুক ঠুক ঠুক শব্দ আমার বেশ ভালো লাগে। এর আগেও অনেকবার মুগ্ধ হয়ে মাঝরাতে ঘড়ির কাটার শব্দ শুনেছি। ঘড়ির কাটার প্রতিটি শব্দ আমাকে মনে করিয়ে দেয় যে আমার সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে। ধরুন আমাদের জীবন শতকোটি ফ্রেমের টাইমলাইনে বন্দি। ঘড়ির একেকটা কাটা শব্দ করে এগুচ্ছে আর আমাদের জীবন থেকে এক একটি ফ্রেম শেষ হয়ে যাচ্ছে। একদিন সব ফ্রেম শেষ হয়ে যাবে। শেষ হয়ে যাবে জীবনের রংধনুর গল্প। কতশত গল্পই না আমাদের জীবনে। কত রকম ভালোবাসায় ঘিরে ব্যাস্ত এই জীবন।

ভালোবাসার কথা উঠতেই মনে পরে গেলো স্বপ্নের কথা। ঘুম ভেংগে যাওয়ার আগে স্বপ্ন দেখছিলাম।

জায়গাটা খুব সম্ভবত চট্টগ্রাম এর পতেংগা সি বিচে।

সামনে বিশাল সমুদ্র, আমি ঠায় দাড়িয়ে সমদ্রের ঢেউ গুনছি। পেছন থেকে একটি কোমল হাতের স্পর্শ অনুভব করি। পেছন ফিরে তাকাতেই এক মোহনীয় হাসি। একরাশ মুগ্ধতা রেখে গেলো হাসিখানা।

নীল ড্রেসের খুব সাধারণ সাজুগুজুতে ভয়ংকর সুন্দরী লাগছিলো তাকে। সে দুপা এগিয়ে আমার পাশে দাড়ায়। শক্ত করে আমার হাত জরিয়ে ধরে। দুজন মিলে আবার নতুন করে ঢেউ গোনা শুরু করি। তারপর হটাৎ এক ভয়ংকর ঝড় তেড়ে আসে। আমাদের উড়িয়ে নিয়ে যাবে এমন অবস্থা। আমি তাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরি। যেই আসুক না কেনো, কেউ তাকে আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিতে পারবে না কোনদিন।

ঝড় থেকে একটা কালো হাত এগিয়ে আসে। আগত্বক একটা কন্ঠস্বর ভেষে আসেঃ মোহিনীকে নিতে এসেছি, আমি তাকে নিয়ে যাবে। আমিও চিৎকার করে বলিঃ কোনদিনও সম্ভব নয়। আমি আমার মোহিনীকে কক্ষনই ছেড়ে দিবো না।।। আমি মোহিনীকে আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরি। ঝড়ো বাতাস বাড়তে থাকে, আমি আগলে রাখি মোহিনীকে। একসময় পাগল ঝড় হার মানে। সে চলে যায়। আমি শক্ত করে জরিয়ে ধরে আছি মোহিনীকে।

সব স্বাভাবিক হয়ে যায়। মোহিনী আমাকে দিকে তাকিয়ে আবার সেই মুগ্ধ করা হাসি। আমি বিমোহিত হই আবার। আবার বুকে জরিয়ে ধরি। কিছুক্ষন পর খেয়াল করি মোহিনী নেই। আমার শক্ত বাধন ছিন্ন করে মোহিনী পালিয়ে গেছে। কিন্তু কেনো? আমি তো তাকে ভালোবেসে শক্ত করে জরিয়ে ধরে রাখতে চেয়েছিলাম।

খুব কষ্ট হচ্ছিলো। এতোকষ্ট যে স্বপ্নেও সেটা সহ্য ক্ষমতার বাইরে চলে যায় আর সেই সাথে ভেংগে যায় আমার ঘুম। রেখে যায় এমন সব অসমাপ্ত #ধারাবাহিক_স্বপ্ন।

ভালোবাসা বা ভালোবাসি, কেনো ভালোবাসি???

কবিতা আওরাতে থাকি নিজের অজান্তে,


শুধু ভালোবাসি তাকে, আর শুধু সেই কারণে, কারণ যারা ভালবাসে তারা জানে না তারা কি ভালবাসে

অথবা কেন ভালবাসে, অথবা ভালবাসা কি।

ভালোবাসা হল সরলতা,

আর গোটা সরলতা ভাবনা চিন্তা করা নয়....

আবার ঘুমানোর বৃথা চেষ্টা করি। কিন্তু বুঝে গেছি যে আজ ওর ঘুম সম্ভব নয়। ঘুম আজকের মত মোহিনীকে অনুসরন করে ছায়ার মত পালিয়ে গেছে। আমি মোবাইলটা হাতে নিয়ে অন্ধকারের সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করে ফেসবুকে মনোযোগ দেই। ম্যাসেঞ্জার খালি পরে আছে। আগের মত এখন আর ম্যাসেঞ্জারে কেউ ডিস্টার্ব করার নেই। তাই আবার ফেসবুকের হোমপেজে গিয়ে স্ক্রলের পর স্ক্রল করে যাচ্ছিলাম। পড়ির একটা পোস্টে লাইক দেই। তার কিছুক্ষনই পরই পরি "দাদা" লিখে এসএমএস দেয়। তারপর ওর সাথে কথা চলে।

তুষার নাকি পড়িকে জানিয়েছে এখানে তুষার যে রিসোর্টে থাকে সেই রিসোর্টে ভূত আছে। তাই পরি বায়না ধরছে রিসোর্টে যেতে। আমি পরিকে স্বান্তনা দিয়েছি যে আমি যাবো। বিস্তারিত আরো জানতে বলেছি তুষারের কাছ থেকে। যদিও আমি জানি। এগুলো নিছক ফাইজলামি ছাড়া অন্য কিছু নয়। তবুও এই ডিপ্রেশন এর সময়টুকু অন্যকিছু নিয়ে মেতে থাকলে হয়তো খারাপ কাটবে না।

পড়ির সাথে কথা বলার সময়ই নক দেয় রনি। হটাৎ আজ এদের আমার কথা মনে পরেছে হয়তো। সচরাচর আমি নক না দিলে এরা নক দেয় না।

রনিঃ দাদা কি খবর তোমার???

আমিঃ এইতো, ভালোরে। তোর কি খবর?

রনিঃ এক্সাইটিং একটা নিউজ আছে দাদা।

আমিঃ কি সেটা???

রনিঃ ফোনে বলবো। আমি ফোন দিচ্ছি ম্যাসেঞ্জারে তোমাকে দাদা।

যেই কথা সেই কাজ। ম্যাসেঞ্জারর কল দেয় রনি। রনির সাথে আমার ১২ মিনিটের কথা হয়। এক্সাইটিং নিউজ হচ্ছে রনি একটা গল্প লেখা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে এবং বিজয়ী হয়। পুরস্কার হিসেবে ৩দিনের জন্য সম্পূর্ন খাওয়া দাওয়া সহ রিসোর্ট ফ্রি। যতখুশি ততজন। রনি চায় আমাদের গ্রুপের সবাইকে নিয়ে সেখানে যেতে। অনেকদিন আমাদের কারোর সাথে কারো দেখা হয় না।

আমি ভাবলাম বিষয়টি মন্দ নয়। তুষার ও ভূত গবেষণার জন্য যেতে বলেছে। সুতরাং খারাপ হবে না।

ম্যাসেঞ্জারে ঢুকে দেখি শিলার এসএমএস। "মামা একটা কাজ পেয়েছি৷ একটা ওয়েডিং এর ইভেন্ট প্ল্যান এবং ইভেন্ট সুন্দরমত নামিয়ে দিতে হবে।"

বিয়ের ইভেন্ট এর কথা শুনতেই মনে পড়ে গেলো ডার্ক লর্ডের কথা। ভুডোর সাথে সেই কত যুদ্ধই না করতে হয়েছিলো। পরে অবশ্য ডার্ক লর্ড গল্পটার ৫ টি পর্ব গল্প আকারে লিখেছিলাম।

শিলার এসএমএস এর রিপ্লে দেই। শিলা জানায় আমাকে তার সাথে তার ঐ কাজে হেল্প করতেই হবে। হৃদয় নাকি অলরেডি ইভেন্ট এর সব ব্যাবস্থা করেই ফেলেছে। এখন আমার সম্মতি পেলে রিসোর্ট আর বাসের টিকিট কাটবে।

ভালোই লাগছিলো, কতদিন পর কাছের এই মানুষগুলোর সাথে কথা হলো। আমি মোবাইলটা হাতে নিয়ে টেবিলের উপর থেকে সিগারেটের প্যাকেট আর ফায়ার বক্স নিয়ে বারান্দায় গিয়ে বসি। সিগারেটে আগুন ধরিয়ে চোখটা বন্ধ করি। সিগারেটে চুমু খাই, হারিয়ে যাই কল্পনায়।

আমি হাটছি সাগরের পাশের মেরিনড্রাইভ দিয়ে। এখন নিশ্চিত মধ্যরাত। কেউ নেই আসে পাসে৷ হালকা ঝিরিঝিরি বাতাস বয়ে চলছে। হটাৎ পেছন থেকে শিতল স্পর্শ । আমি জানি এটা কার স্পর্শ। মোহিনী। মোহিনী কাছে আসে আমার হাত ধরে আমার পাশে হাটতে থাকে। দুজনে পাশাপাশি হেটে চলছি। সাগরের ঢেউ এর গর্জন, ভরা পূর্নিমার চার আর মোহিনীর, সব মিলিয়ে অসম্ভব এক রোমান্টিক মুহুর্ত। হেটে চলছি। হটাৎ বা পাশে খেয়াল করে দেখে সমুদ্রে একটা মেয়ে ভাসছে। ডান পাশে মোহিনীকে দেখানোর জন্য তাকাতেই দেখি মোহিনী আবার হারিয়ে গেছে।

আমি দেরি করি না। খুব দ্রুত নেমে পরি সুমদ্রে। মেয়েটির কাছে যাই। সাদা শাড়ি পড়া। শরীরের কোন অংশ থেকে রক্ত বেরুচ্ছে। পানি লাল হয়ে যাচ্ছে। সবই পুর্নিমার আলোয় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। আমি চিৎকার করে সাহায্য পার্থনা করি। পরক্ষনেই মনে পরে এই মধ্যরাতে কে আমাকে সাহায্য করতে আসবে।

ভয় ভয় লাগছে। মেয়েটি উপর হয়ে আছে৷ আমি সেভাবেই অনেক কষ্টে টেনে পাড়ে উঠাই। ধিরে ধিরে উপর করার চেষ্টা করি। কিন্তু হটাৎ করেই এতো ভাড় লাগছে যে আমি কোনভাবেই উপড় করতে পারছি না। বাতাস এর বেগ বেড়ে গেলো, ক্ষিপ্ত হয়ে গেলো সমুদ্রের ঢেউ। কোথাও থেকে আর্তনাদের চিৎকার ভেসে আসছে। মনে হচ্ছে প্রকৃতি চাচ্ছে না আমি মেয়েটির মুখ দেখি। আমিও নাছর বান্দা। শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে মেয়েটিকে উপর করার চেষ্টা করি। এইতো, এইতো আর একটু। করেই ফেলেছি প্রায়। আধ মুখি দেখেই বোঝা যাচ্ছে মেয়েটি অসম্ভব সুন্দরী।

ক্রিং ক্রিং ক্রিং ক্রিং করে ফোনটা বেজে উঠে।

ধ্যাত। স্বপ্নটা শেষ। সিগারেট টানতে টানতে চোখ বন্ধ করার পর ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। তারপর ঘুমে দেখি আবার সেই ধারাবাহিক স্বপ্ন। কিন্তু এতো ভয়ংকর ছিলো কেনো স্বপ্নটা??

জয় এর ফোন। রাগ করে প্রথমবার কলটি রিসিভ করিনি। আর মিনিট খানেক পর ফোন দিকে হয়তো দেখতে পেতাম। দ্বিতীয়বারের কলে ফোনটি ধরি।

জয়ঃ দাদা ঘুমোচ্ছো??

আমিঃ এখন রাত ৩ঃ৪৬ মিনিট। এখন তো ঘুমানোরই সময়। তাই না?

জয়ঃ না মানে, একটু আগে অনলাইনে দেখলাম তাই ফোন দিলাম। খুব জরুরী একটা বিষয়।

আমিঃ কি জরুরী বিষয় সেটা বল।

জয়ঃ কিছুক্ষন আগে আমার বাসায় একটা মেয়ে এসেছিলো। নাম তিলোত্তমা তৃতীয়া। তার একটা স্ক্রিপ্ট আছে। হরর। সে চায় আমি একটা শর্ট ফিল্ম করে দেই। এডভান্স ৫লাখ টাকার চেক ও দিয়ে গেছে। সব ঠিকঠাক দাদা। স্ক্রিপ্ট, স্টোরি বোর্ড। এমনকি নায়িকাও রেডি। আমার ১২৮ নাম্বার প্রেমিকা আর কি।

আমিঃ ভালো তো। তুই করে ফেল। তুই তো বেশ কয়েকটি ভালো ভালো কাজ করেছিস। সাথে সাথে অনেক মেয়েও পটিয়েছিস। তোর এই সব ধান্দা বন্ধ কর। মেয়েবাজি কমা। কবে যে বিপদে পরবি কে জানে। তুই কর। আমার কোন হেল্প লাগলে আমাকে বলিস।

জয়ঃ দাদা দাদা। তুমি এটার ডিরেকশন দিবে। আর এডিটটাও তুমি করবে প্লিজ। রাংগামাটিতে শুটিং করতে হবে, তুমি সেখানে আগেও গিয়েছিলে। আর ভূত নিয়ে তো তোমার অনেক অভিজ্ঞতা। তাই তুমিই এই কাজটা করছো। এবং ফাইনাল।

আমিঃ কোথায় শুটিং??

জয়ঃ রাংগামাটির বন্ধুকভাংগা গ্রামে #স্বপ্ন নামে একটা রিসোর্টে।

আমিঃ স্বপ্ন রিসোর্ট??

জয়ের সাথে কথা শেষ করে আমি কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থাকি। একদিনে চারজন নক করলো এরা। চারজনের চারটি কাজ। অবাক করার বিষয় হচ্ছে প্রত্যেকের কাজই রাংগামাটি এবং রিসোর্ট কেন্দ্রিক। পড়ির বয়ফ্রেন্ড তুষার কাজ করে রাংগামাটির স্বপ্ন রিসোর্টে, রনি পুরস্কার হিসেবে এই রিসোর্টে থাকার সুজোগ পেয়েছে, শিলার বিয়ের ইভেন্ট করতে হবে এই রিসোর্টে আবার জয়ের শুটিং এই রিসোর্টে।

খটকা লাগছে, ভিষন খটকা। ২ বছর আগে বন্ধ করে দেওয়া ভূত গোয়েন্দা (Bhoot Detective Branch) এর সদস্য রনি, শিলা, পড়ি, জয়কে কোন না কোনভাবে কেউ আবার একসাথে করতে চাচ্ছে। এদের মাধমে আমাকেও কি চাচ্ছে সেইখানে নিয়ে যেতে?? কোন রহস্য আছে কি??? আমি দুপুর ভূত গোয়েন্দা শাখার প্রধান ছিলাম। অনেক ভৌতিক সমস্যা ও রহস্য উদঘাটন করেছি আমার টিম নিয়ে। সেই টিমের সবাইকে রাংগামাটি ডাকছে। যাবো কি যাবো না ভাবতে ভাবতে...............


(সম্পূর্ণ গল্পটি আমার বিকৃত মস্তিকের কল্পনা মাত্র। ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে। পরবর্তী পর্ব আগামীকাল অথবা পরশুদিন পোস্ট করা হবে।)

আইডির রিচ কম হওয়ায় পোস্ট রিচ কম হয়। তাই সকলের নিকট অনুরোধ ভালোলাগা বা মন্দ সেটা কমেন্টস করে জানাবেন। শেয়ার দিবেন। ধন্যবাদ।

সোমবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২০

*** অপেক্ষার কোন শেষ নেই, মৃত্যুই অপেক্ষার শেষ মুহূর্ত ***



 *** অপেক্ষার কোন শেষ নেই, মৃত্যুই অপেক্ষার শেষ মুহূর্ত ***


অপেক্ষা অনেকটা রংধনুর মত। প্রত্যেক অপেক্ষারই থাকে ভিন্ন ভিন্ন রং, ভিন্ন ভিন্ন ঢং, থাকে ভিন্ন রকম অনুভূতি।


আবার অনুভূতি গুলো হতে পারে ভালো লাগা বা ভালোবাসার, হতে পারে ভাল রাখার বা নিজে ভালো থাকার। হতে পারে কাছে আসার বা ছেড়ে অনেক দূরে চলে যাবার, হতে পারে খুব আনন্দের অথবা ভীষন কষ্টের।


আর এইসব অনুভূতি গুলোই হল মানুষের আপেক্ষিক অপেক্ষা। এইসব অনুভূতি গুলোই মানুষের মনের মাঝে বৃত্ত একে দেয়, চারিপাশ ঘিরে থাকে। বাঁচার জন্য যেমন অনুপ্রেরণা দেয়, তেমনি বেঁচে না থাকার জন্যও।


হয়তো কেউ অপেক্ষা করছে ফোনের এপাশে হাতের মুঠোয় ফোন নিয়ে একটা প্রিয় মুখের ফোন আসবে বলে, আবার কেউ হয়তো ফোনের অন্যপাশে।


কেউ অপেক্ষা করছে এসএমএস রিপ্লাইয়ের জন্য, কেউ আবার নতুন একটা এসএমএস কিভাবে শুরু করবে সেটার জন্য।


কেউ অপেক্ষা করছে কাউকে অনলাইনে দেখার জন্য, কেউ অপেক্ষা করছে কারো নতুন একটা প্রোফাইল পিক দেখার জন্য।


কেউ অপেক্ষা করছে এক বুক আশা নিয়ে প্রেমিকাকে বিয়ে করবে বলে, কেউ আবার অপেক্ষা করছে হারিয়ে যাওয়া প্রেমিকা ফিরে আসবে বলে।


কেউ হয়তো একটু সুখের জন্য অপেক্ষা করছে বা কেউ আবার অপেক্ষা করছে দুঃখের সময় টা পারি দেবার জন্য।


কেউ অপেক্ষা করছে বহুদিন পর বাড়ি ফেরার জন্য, কেউ অপেক্ষা করছে পথের দিকে চেয়ে অনেক দিন পর সন্তান বাড়ি ফিরবে বলে।


কেউ অপেক্ষা করছে লেখাপড়া শেষ করে একটা চাকরির জন্য, অন্যদিকে আবার কেউ অপেক্ষা করছে মাস শেষ হলে বেতন টার জন্য।


হয়তো অপেক্ষা করছে সারাদি্নের ক্লান্তি শেষে রাতে একটু শান্তির ঘুমের জন্য, কেউ আবার নেহাত সারারাত জেগে আছে নতুন একটা ভোরের জন্য।


আমরা প্রতিটা মানুষই অপেক্ষা করছি। সেই জন্মের পর থেকেই এই "অপেক্ষা" নামক শব্দ টা শুরু হয়েছে, মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করেই যেতে হবে।


*** অপেক্ষার কোন শেষ নেই, মৃত্যুই অপেক্ষার শেষ মুহূর্ত *** 

শনিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০

ভাবনা

 


তাকিয়ে আমি তোমাকেই ভাবতাম !

তারাদের কেন ভাবিনি,

তোমাকেই কেন ভেবেছি ??

তবু তেমনি আছে সবকিছু,

............................

তারারা আছে, বিষণ্ণ রাত আছে,

হঠাৎ কালো হওয়া আকাশ আছে,

তুমিহীন আমিও আছি,

অদৃশ্য তুমি আরো কাছে এসেছ আমার,

হাত বাড়ালেই চলে যাও দূরে!!

অদৃশ্য তোমাকে কি ছোয়া যায়?

শনিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২০

জীবন

লেখালেখি থেকে প্রায় বিদায়ই নিয়েছি বলা চলে। নাহ, রাইটার ব্লক না। ভালো লাগে না। নিজেকে এখন  একা অন্ধকার খুপড়ী ঘরের মধ্যে বন্দী রাখতেই বেশি ভালো লাগে। কেমন জেনো সবার থেকে আলাদা হয়ে যাচ্ছি। কারো সাথে মিশতে ভালো না। ফোনে কথা বলাটা রিতিমত বিরক্ত লাগে। ফেসবুক থেকে সকল আত্তীয়স্বজন, প্রতিবেশিদের আনফ্রেন্ড করে দিয়েছি। ইন্ট্রোভার্ট হয়ে যাচ্ছি। ডিপ্রেশন আর ধোকা আমাকে নিঃশেষ করে দিচ্ছে। কবে জানি এই জীবনিকার অবষান ঘটাই।

অথচ একটা সময় ছিলোঃ 

অনেক অনেক বন্ধু। কারো সাথে ৫/১০ মিনিট কথা বললেই খুব ভালো বন্ধু হয়ে যেতাম। অদ্ভত সব গল্প, ধারাবাহিক, কবিতার জন্ম দিতাম। এখন সবই কল্পনা মনে হয়।

ফেসবুক আমার জীবনের অতন্ত গুরত্বপূর্ন অংশ। এই ফেসবুকের উছিলায় জীবনের সবচেয়ে বড় দূর্ঘটনা ঘটে জীবনে। তারপর এই ফেসবুকই আবার বাচতে শেখায়। আবার ধোকা খাই। 

জেল খানায় বেশির ভাগ সময় কাটিয়েছি বই পড়ে। অনেক বই পড়েছি। বের হবার পর লেখালেখি শুরু করি। ২০১৫ এর কথা Sh Ip On নামের আইডি তে ২৭০০০+ ফলোয়ার ছিলো। অসংখ্য বন্ধু ছিলো। এমনো পাঠক ছিলো যারা মাঝরাতে ফোন দিয়ে স্বামী স্ত্রী কথা বলতো। ঐ সময়টাই হয়তো ফেসবুকের গোল্ডেন টাইম ছিলো আমার জন্য। তারপর আইডিটি নষ্ট হয়ে যায়।

নতুন আইডি। নতুন করে লেখালেখি। কিন্তু আগের গল্প গুলো হারানোর একটা শোক কাজ করছিলো। ব্লগ খুলে নতুন করে লেখালেখি শুরু। ব্লগের দুনিয়ায় এসে দেখলাম আমার অনেক লেখায় এখন অন্যের নামে। আফসোস ছাড়া আর কিছুই করার নেই। তারপরে নিজের গ্রুপ খোলা। নতুন কিছু বন্ধু। একসময় বন্ধু থেকে পরিবারের মত হয়ে গেলো। ভালোই চলছিলো। আর চাকরিটাও ছিলো বেশ। ঘোরাঘুরির উপর সারাবছর। 

সবার মতে আমার একটু আবেগ বেশি। আমিও মানি। অনেকের কাছে আমি খুব খারাপ। স্বাভাবিক। তবে আমি জানি আমি কেমন। 

একসময় খারাপ দিন আসা শুরু হয়। পরিবারের মধ্যে ঝামেলা। সবাই দূরে, আমিও ধিরে ধিরে সরে আসি। বুঝতেছিলাম কেউ ষড়যন্ত্র করতেছে। কিন্তু আজ পর্যন্তও তাকে খুজে পাইনি। খুজে পেলে ধন্যবাদ দিতাম। কারন তার কারনেই কাছের মানুষগুলোকে


চিনতে পেরেছিলাম।

এরপর ঘটে সবচেয়ে বড় দূর্ঘটনা। একটা ঘড় বানাচ্ছেন। প্রথমবার ভেংগে গেলে কষ্ট পেলেও আবার বানানো যায়। দ্বিতীয় বার খুব কষ্টে করে বানানো হয়। কিন্তু তৃতীয়বার ? তৃতীয়বার বানানোর পর সেটা ভেংগে গেলে কারিগরের মৃত্যু ছাড়া উপায় নেই। 

আমি ঠিক সেই সময়টার সাথে যুদ্ধ করে বেচে আছি। লেখা আর মাথায় আসে না, মানে আমি শুন্য, সব হারিয়ে ফেলেছি জীবনের তরে যা ছিলো। সব দিক থেকে কালো থাবা গুলো তেরে আসছে আমার দিকে। আমি আর পারছি না। হয়তো খুব শিঘ্রই হারিয়ে যাবা পৃথিবী নামক নাট্য মঞ্চ থেকে।

যাদের সাথে মনমালিন্য তাদের কাছে অগ্রিম ক্ষমাপার্থী।

বৃহস্পতিবার, ৩০ জুলাই, ২০২০

নীল প্রজাপতি

#নীল_প্রজাপতি 
প্রেতাত্মার লেখা গল্প - Written by A R Shipon 


নীলাভ মোমবাতির আলো,
নীল আকাশের নিচে,
নীল অর্কিডের উপর বসে,
নীল রঙের পাখা দু'টি নাড়িয়ে,
মনে দোল জাগায় নীল প্রজাপতি।
নীল শাড়ি অঙ্গে তার,
নীল জলে উড়াউড়ি,
নীল ভ্রমরের সাথে করে ঘোরাঘুরি,
ছুঁয়ে'দে এ মন নীল রঙে সারাক্ষন।
নীল পুঞ্জাক্ষির দৃষ্টিতে,
নীল বেদনা সঙ্গে নিয়ে,
নীল পাহাড়ে যাবো হারিয়ে,
ভালবাসার রঙ মেখে,
যাবো নীল প্রজাপতিকে অর্ধাঙ্গিনী করে, নীল জোছনার আলোয় ভেসে।

নীল প্রজাপতি তার ছোট পাখনায় ভর করে উড়ে উড়ে চলছে। ক্লান্ত সে, অবিস্রান্ত সে। মাঝখানে গাছের পাতায় বসে কিছুক্ষণ জিরিয়ে নেওয়া। তারপর আবার উড়ে চলা পাখনামেলে। উড়তে উড়তে ছোট এক অট্টালিকার জানালায় গিয়ে বসে। খোলা জানালা।


সারাদিন ব্যাস্ত অফিস শেষে ক্লান্ত শরীরে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে আসে দুপুর । সদ্য  গ্রাজুয়েশন শেষ করে ১টা ছোট মাল্টিন্যাশনাল ফার্মে চাকরি করছে । 
বাসার সামনে এসে দরজার লক খুলতে গিয়ে দেখে দরজাটা ভিতর থেকে লাগানো । দুপুর কিছুটা অবাক হয়। অবাক হয়া রই কথা । দুপুর ফ্ল্যাটে একা থাকে , চাবিও সুধু তার কাছেই । তাহলে ভেতরে কে??
কিছু সময় ভেবেচিন্তে চাপ দেয় কলিংবেলে । তার কিছুক্ষন পর দরজা খুলে দেয় ভেতর থেকে একজন ।

ঘরের ভেতরের জন কে দেখে দুপুরের আরো বেশি অবাক হওয়ার কথা ছিলো , কিন্তু সে অবাক না হয়ে মুগ্ধ হলো । সত্যিই সামনে যে দাড়িয়ে আছে তাকে দেখে মুগ্ধ না হয়ে উপায় আছে? যেন স্বর্গ থেকে হুরপরী নেমে এসেছে নীল শাড়ি পরে । নীল শাড়ি , নীল চুরি্‌, কালো ব্লাউজ , কালো টিপ , চোখে আবছা কাজল , সব মিলিয়ে আগুনের নীলাভ সৌন্দর্যের  চেয়েও কয়েকগুন বেশি সুন্দরী লাগছে রোদেলাকে । 
রোদেলা কে?  প্রশ্ন জাগছে কি মনে??? 
রোদেলা দুপুরের প্রেমিকা । দীর্ঘ ৪ বছর ধরে প্রেম করছে ওরা , দুপুর যখন গ্রাম থেকে এসে ঢাকা ভর্তি হয় তখন থেকে ওদের সম্পর্কের শুরু । এরকম পবিত্র প্রেম এখন আর সচরাচর দেখা যায় না। গভীর এই ভালোবাসা, গভীর এ বন্ধন।

রোদেলা ঃ কি স্যার , আপনি কি ঘরে আসবেন না ? নাকি সারারাত বাইরেই দাড়িয়ে থাকবেন ?

দুপুরঃ আমার দুচোখ কি বলছে জানো ?

রোদেলা ঃ হ্যা । খুব ভালো করে জানি । সে বলছে আমি আজ ক্লান্তিহীন , আজ আমি এই পেত্নীটাকে দেখবো দুচোখ ভরে । ঠিক তো ????

কথা টা বলে দুজনে হাসতে হাসতে গড়িয়ে পরা অবস্থা। রোদেলা দুপুরের হাত ধরে ভেতরে নিয়ে যায় ।

রোদেলা দুপুরের গলা থেকে টাই খুলে দিয়ে টায়েল হাতে দিয়ে বলে ফ্রেশ হয়ে আসতে । দুপুর তাই করে । ফ্রেশ হয়ে রুমে গিয়ে প্রতিদিনের মত সিগারেট ধরিয়ে সুখ টান দেয়। 

রোদেলা ঃ দুপুর, এই বিশ্রী গন্ধ আসছে কোথায় থেকে ( বলতে বলতে বেডরুমে ঢুকে) ।

দুপুর সিগারেট পেছনে লুকায়, কিন্তু রোদেলা ততক্ষনে দেখে ফেলেছে । মেয়েটার চোখে পানি চলে এসেছে ।

রোদেলা ঃ তুমি আমার কাছে প্রমিজ করেছিলে যে তুমি আর স্মোক করবে না ।

দুপুর রোদেলার কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরে কপালে ১টা চুমু খেয়ে বলে,

দুপুর ঃ আজ তোমাকে , মানে পেত্নীটাকে ছুয়ে প্রেতাত্মা প্রমিজ করছে যে প্রেতাত্মা আর কোনোদিন সিগারেট খাবে না । কিন্তু পেত্নীটাকেও কথা দিতে হবে যে সে প্রেতাত্মাকে কোনদিন ছেড়ে যাবে না । কি প্রমিজ করো ? (হাত বাড়িয়ে দেয় দুপুর)

রোদেলা ঃ (দুপুরের বুকে মাথা রেখে আর এক হাত দুপুরের হাতে রেখে) মনে আছে দুপুর ? আমি তোমাকে কথা দিয়েছিলাম যে আমি একদিন তোমার বউ হবো , তোমার সংসার করবো । বউ হয়ে এসে আমি তোমার সংসার করছি। আমি কিন্তু আমার কথা রেখেছি । তুমিও তোমার কথা রাখবে , আমাকে দেওয়া কোন প্রমিজ ভাংবে না কিন্তু। (রোদেলার চোখে পানি)

দুপুর ঃ জি মহারানী । মহারানী আমার যে এখন খুব খুদা লেগেছে , কিছু কি খাবারের ব্যবস্থা করেছেন এই অধম রাজার জন্য?

রোদেলা ঃ জী অধম মহারাজ আপনার জন্য ব্যাবস্থা হয়েছে , আপনি আসুন । আমি টেবিলে সব সাজাচ্ছি ।

রোদেলা টেবিলে সব গুছিয়ে দুপুর কে ডাক  দেয় , দুপুর আসে । টেবিলে দুপুর বসার পর রোদেলা লাইট বন্ধ করে মোম জালিয়ে দেয় ।

দুপুর ঃ ক্যান্ডেললাইট ডিনারের ব্যাবস্থা ? বাহ দারুন তো ।

রোদেলা ঃ আমি আমার প্রেতাত্মাকে আজ নিজের হাতে বেড়ে খাওয়াবো ।

দুপুর ঃ একি । আমার সব পছন্দের খাবারই তো দেখি তুমি রান্না করেছে । চিংড়ীর মালাইকারী , ইলিশের পাতুরী । গরুর মাংশের কালোভুনা । জান তুমি এতো কিছু কখন করলে ?

রোদেলা ঃ খাওয়ার সময় বেশি কথা বলতে হয় না । চুপ করে খাও । ( বলে রোদেলা হাত পাখা দিয়ে দুপুরকে বাতাস করা শুরু করে)

দুপুর ঃ রোদেলা , বাতি না জললেও ফ্যান কিন্তু চলছে ।

রোদেলা ঃ আমি জানি ।

দুপুর ঃ তাহলে বাতাস করছো যে ?

রোদেলা ঃ স্বামী খাওয়ার সময় তাকে হাত পাখা দিয়ে বাতাস করতে হয়। তুমি কি সেটাও জানো না ?

কথা টা শুনে দুপুর হেসে কুটিকুটি হয়ে যায় ।

খাওয়ার পর্ব শেষ করে দুপুর বেডরুমে গিয়ে সুয়ে পরে । রোদেলা একবাটি পায়েশ নিয়ে এসে দুপুর কে খেতে বলে কিন্তু দুপুর বলে যে সে আজ অনেক খেয়েছে, তাই সে আর খেতে পারবে না ।

তারপর দুপুর আর রোদেলা সুয়ে পরে , গল্প করতে থাকে দুজনে। বলতে গেলে সারারাত গল্প করে কাটয়ে ভোরের দিকে ঘুমিয়ে পরে দুজন একজন আরেকজনকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।

ভোর ৬টার মত বাজে । দুপুরের ফোনে মাহাদির কল আসে । প্রথমবার টের পায় না , পরেরবার ঘুম ভেঙ্গে যায় দুপুরের । ফোন টা পিক করে দুপুর,

দুপুর ঃ কিরে দোস্ত ? এতো সকালে ?

মাহাদী ঃ দোস্ত তুই কোথায় রে ?

দুপুর ঃ এই তো বাসায় ঘুমাচ্ছিলাম । কেন মামা ?

মাহাদি ঃ দোস্ত ১টা ব্যাড নিউজ আছে । রোদেলা গতকাল সন্ধ্যায় রোড এক্সিডেন্টে মারা গেছে । আমি মাত্রই খবরটা পেলাম । তাই তোকে জানালাম ।

দুপুর ঃ ধুর গাধা । রোদেলা আমার বাসায় , আমার সাথেই আছে ।(কথাটা বলে পাসে ফিরে দেখে রোদেলা নেই , সেখানে ১টা চিঠি পরে আছে ) আমি তোকে একটু পর ফোন দিচ্ছি(নিচু কন্ঠে)।

চিঠিটা হাতে নিয়ে খুলে পড়া শুরু করে দুপুর

আমার জীবনের সবচাইতে দামী আর প্রিয় মানুষ আমার প্রেতাত্মা, আমার ভালোবাসা, রোদেলার দুপুর। 

আমাদের জীবন টা খুবই নাটকীয়। হাজার রঙ্গে আচ্ছন্য । আর যে এই নাটক টা পরিচালনা করছে সেও কেমন জানি । এই দেখো সোনাবাবু , আমাকে তোমার কাছ থেকে নিয়ে চলে গেলো । হ্যা আমি আর বেচে নেই । 
এই, তুমি কিন্তু একদমই কাদবে না। 
জানো যখন এক্সিডেন্ট টা হয় , খুব রক্ত ঝরছিলো , ব্যাথাও হচ্ছিলো অনেক । একটা সময় বুঝতে পারি যে আমি আর বেশিক্ষন নেই এই পৃথিবীতে , জানো তখন আরো বেশি খারাপ লাগছিল এই ভেবে যে আমি চলে গেলে তুমি খুব একা হয়ে যাবে । কে দেখেশুনে রাখবে পেত্নীর এই প্রেতাত্মাটা কে । কিন্তু একটা সময় আমাকে পৃথিবীর মায়া ছেড়ে দিয়ে চলে আসতে হয় । কিন্তু তোমাকে তো কথা দিয়েছিলাম যে আমি একদিন আমি তোমার নীল বউ হবো ঐ নীল প্রজাতির মত,  প্রেতাত্মা আর পেত্নীর ছোট একটা গোছানো সংসার হবে, তোমার সব পছন্দের খাবার আমি রান্না করে খাওয়াবো। বাবু, আমি কিন্তু আমার কথা রেখেছি, যদিও স্বার্থপরের মত আবার তোমাকে একা রেখে চলেও আসতে হল। কিন্তু সেটাতে তো আর আমার হাত নেই, সেই গাড়ির ড্রাইভার আমাকে তোমার কাছ থেকে চিরতরে দূরে সড়িয়ে দিল। শুনো টুকিপুকিটা, তুমিও কিন্তু আমাকে দেওয়া তোমার প্রতিটা কথাগুলো রাখবে । কোন বাজে কাজ করবে না । আর আমার কথা মনে করে উল্টো পাল্টা  কিছু করবে না । তবে চিঠিটা পড়ার পর খুব করে কাদবে , তাহলে মন টা হালকা হবে । আর প্লিজ নামাজ পরে আমার জন্য দোয়া করবে । আমার লাশ দেখতে যাবে, শেষবারের মত তোমায় দেখার অপেক্ষায় থাকবো। আর জীবন টা কে নতুন করে সাজাবে । নিজের খেয়াল রাখবে । আর মনে রাখবে “””” পেত্নীর ভালোবাসা কিন্তু প্রেতাত্তার কাছেই গচ্ছিত থাকবে “”””

আল্লাহ হাফেজ ।

চিঠিটা পরে কান্নায় ভেঙ্গে পরে দুপুর । খুব করে কান্না করে। আর সেই ক্লান্ত, অনিস্রান্ত নীল প্রজাপতিটা দুপুরের চারপাশ ঘিরে উড়ে বেড়ায়।  কিছু একটা বলতে চায়, বারবার ছুয়ে যেতে চায় দুপরকে সেই নীল প্রজাপতিটা। 


(পুরো গল্পটিই আমার কল্পনা, বাস্তবতার সাথে এর কোন ধরনের মিল নেই)

সোমবার, ২৯ জুন, ২০২০

উপলব্ধি



#উপলব্ধি
প্রেতাত্মার লেখা গল্প - Written By A R Shipon.
রান্না করছি, রেডি হতে হবে। রোদেলা আসবে একটু পরেই। প্রতি রাতেই সে আসে ছাদে। নীল শাড়ী, খোপায় বেলি ফুলের মালা, হাতে নীল চুরি, কপালে কালো টিপ আর চোখে গাড় কাজল।
রাত ১০ টা,
পাশের ফ্ল্যাটে বাচ্চা মেয়ের চিৎকার আর কান্নার শব্দ। এরকম প্রতিদিনই প্রায় হয়। আমার এখন সহ্য হয়ে গেছে। এই শুরু হয়েছে আর রাত ১২/১ টার আগে আর থামবে না।
আমি রান্না শেষ করে খাবার খেয়ে নিলাম। ১১ টা বেজে গেছে। কান্নার শব্দ আজ হটাৎ আগেই থেমে গেছে। আমি কিছুটা অবাক হলাম। আজ এতো আগে থেমে গেলো কান্না?
ভাবাভাবি বাদ। রোদেলার সাথে দেখা করতে যাবো। সিগারেটের গন্ধ সে একদমই পছন্দ করে না। তাই আজ একটু আগেই গিয়ে সিগারেট টেনে ছাদের কোন চুপটি করে বসে থাকবো। রোদেলা আসতে আসতে গন্ধ ভ্যানিস হয়ে যাবে।
ফ্ল্যাট থেকে বের হয়ে বাইরে থেকে ডোর লক করছি, এমন সময় পাসের ফ্ল্যাটের ভাই-ভাবি একটা স্যুটকেস নিয়ে বের হচ্ছে। আমি ডাক দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম।
দুপুরঃ ভাবি এতো রাতে ব্যাগ গুছিয়ে কোথায় যাচ্ছেন? ভাই এর সাথে ঝগড়া হয়েছে নাকি?
ভাইঃ (তোতলিয়ে) হ্যা ভাই। বাপের বাড়ি যাচ্ছে। পরে কথা হবে।
ভাই ভাবি আর স্যুটকেস নিয়ে তারাতাড়ি নেমে যায় লিফট ধরে৷ আর আমি উপরে চলে আসি।
সিগারেট খেয়ে বসে আছি রোদেলার অপেক্ষায়। সময় গড়িয়ে রাত এখন ১ টা বাজে। কিন্তু রোদেলা এখনো আসেনি। হয়তো কোনভাবে টের পেয়েছি সিগারেটের গন্ধ তাই হয়তো রাগ করে আসেনি। কিন্তু না আসলে আমি তার রাগ কমাবো কিভাবে? ক্ষমা চাওয়ার অন্তত একটা সুজোগ তো আমায় দিতে হবে।
ছাদের উপর পায়চারি করছি। আর এমন সময় ছোট বাচ্চা মেয়ের কান্নার শব্দ। পাশ  থেকে আমার পরিচিত প্রিয় কন্ঠটি। বাচ্চাটিকে স্বান্তনা দিচ্ছে।
রোদেলা ঃ কান্না করে না বাবু, পৃথিবীর মানুষগুলো এমনি নিষ্ঠুর। ক্ষুদ্র, অসহায়, নাড়িদের এরা মানুষ মনে করে না। ভোগের পন্য। তোর মত ছোট বাচ্চাটিকেও ছাড় দেয়নি।
রোদেলাও কান্নায় শুরু করে বাচ্চাটিকে জরিয়ে ধরে।
রোদেলার পাশে বাচ্চা মেয়েটি দাড়িয়ে। মেয়েটিকে দুই একবার দুপুর দেখেছে। হ্যা, মনে পরেছে। মেয়েটিতো পাশের বাসায় কাজ করতো।
মেয়েটির মাথা ফেটে রক্ত ঝড়ছে। অর্ধনগ্ন। গাল, ঠোটে কামড়ের দাগে রক্তাক্ত। হাতে খুনতি দিয়ে পোড়ানোর দাগ। কি বিভৎ দৃশ্য। বুঝতে আর বাকি রইলো না মেয়েটির সাথে কি হয়েছিলো আর তার শেষ পরিনতি কি হয়েছে। মানুষ হিসেবে নিজেকে উপলব্ধি করতে ইদানীং বড্ড লজ্জা লাগে। 

সোমবার, ২২ জুন, ২০২০

রহস্যময় খুন

প্রেতাত্মার লেখা গল্প - Written by A R Shipon. 
ফেসবুক গ্রুপ থেকে পরিচয় তৃষা আর রিফাতের। কল্পকাহিনির অন্যতম লেখিকা তৃষার গল্প প্রেম থেকে ধিরে ধিরে প্রেম শুরু। মাঝখানে বাদ সাধে শিপন। তৃষা আর রিফাতের অমর প্রেমে বিষের কাটা হয়ে দাড়ায় শিপন। শতচেষ্টায় বিফল সে।
অনেক কিছুর পর তৃষা আর রিফাতের প্রেম সফলতার মুখ দেখতে যাচ্ছে। আজ তাদের বিয়ে। দুজনের পরিবার রাজি না হওয়ায় বন্ধুদের সাহায্যে কোর্ট ম্যারিজ করতে যাচ্ছে তারা। বন্ধু হৃদয়, অর্নব, তাহমিদ, শিলা, সাদিয়া আর তানহা।
শিলাঃ তোমাদের বিয়ে ব্যাবস্থা যশোর এর বাইরে করা হয়েছে। ঢাকার পাশে। সেখানে ধরা খাবার ভয় নেই।
রিফাতঃ কিন্তু এতোদূর কেনো?
তৃষাঃ রিফাত ওরা যেটা ভাল মনে করে সেটাই করো।
রিফাত রাজি হয়। সেদিনই রওনা দিয়ে ঢাকায় নিয়ে আসে। ঢাকার পাশের একটা গ্রামের নির্জন একটা বাড়িতে নিয়ে যায়। বন্ধুরা অভয় দেয় ভেতরে সব ব্যাবস্থা করা আছে। কাজি ভেতরেই রয়েছে।
তৃষা রিফাতের হাত ধরে ভিতরে ঢুকে। অন্ধকার রুম।
পরের দিন.
প্রতিটি দৈনিক পত্রিকার প্রধান শিরোনাম।
প্রেমিক রিফাতের হাতে প্রেমিকা তৃষার নির্মম খুন। 

রবিবার, ২১ জুন, ২০২০

রিভার্স


#রিভার্স (অনুগল্প) 
প্রেতাত্তার লেখা গল্প - Written by A R Shipon.

সিমরান, অনামিকা, রাতুল, অপু, মুন্না। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া ধনীর দুলাল-দুলালী। অন্ধকার রুমে বসে ইয়াবা নিচ্ছে। পাশে বসে মধ্যবিত্ত পরিবারের সুন্দরী মেয়ে অরিন।
ফেসবুকে ভূতের গল্প লিখে কিন্তু ভূত দেখেনি কোনদিন। তার ভূতের গল্প শুনে সবাই হাসাহাসি করে।
রাতুল, অপু, মুন্না তিনজনই অরিনকে পছন্দ করে কিন্তু অরিনের কাছে তারা বন্ধুর চাইতে বেশিকিছু না। 
সিমরান, অনামিকা অরিনের বন্ধু বটে তবে অরিনের রূপে তাদের হিংসে।
সন্ধ্যায় অনামিকা অরিনকে ফোন দিয়ে জানায় যে রাতে তারা গাজীপুরে মুন্নাদের বাংলোবাড়িতে যাবে ভূতের দেখতে। অরিনের ভূত দেখানোর সখ পূরন করবে।
অরিন ওদের সাথে প্রথমে যেতে না চাইলেও ভূত দেখার লোভ সামলাতে না পেরে রাজি হয়ে যায়।
রাত ১ টার কিছু পর পর বাংলোতে এসে পৌছে ওরা। অন্ধকার রাতে শেয়াল আর জোনাকির ডাক ভৌতিক পরিবেশ করে তুলছে। ভেতরে একটা রুমে বিছানায় বসে সবাই। কিছুক্ষন পরই বিদ্যুৎ চলে যায়।
মুন্না মোমবাতি জ্বালানোর জন্য পাশের রুমে যায়। হটাৎ মুন্নার ভূত ভূত বলে ভয়ার্ত চিৎকার। অরিন ভূত দেখবে বলে বের হতে চাইলে সিমরান ওকে ধরে বলে, তুই বস আমরা দেখে আসি। অরিন ছাড়া সবাই বের হয়ে যায়।
খানিক পরেই অরিনের রুমে সাদাকাপড় পরে শয়তানের অট্টহাসি হেসে একটা ভূত ঢুকে। অরিনের সাথে ধস্তাধস্তি করে। দূর থেকে দেখে সিমরান আর অনামিকা মুচকি হাসে।
দুজন মিলে বাংলো ঘুরে দেখতে থাকে। হটাৎ এক রুমের জানালার বাইরে দেখে এক বুড়ি দাঁড়িয়ে। রাগান্বিত চোখ দিয়ে রক্ত ঝড়ছে। বুড়িকে দেখে ভয় চিৎকার করে উঠে সিমরান আর অনামিকা। বুড়ি ওদের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। ভূতবুড়ির হাত থেকে প্রান বাঁচাতে বন্ধুদের খোজে দৌড় দেয়। কিছু একটার সাথে পা উষ্ঠা খেয়ে পরে গিয়ে জ্ঞ্যান হারিয়ে ফেলে সিমরান।
সকালে সিমরান নিজেকে আবিস্কার করে একটি ধানক্ষেতের মধ্যে। তার পাশেই উল্টো করে পরে আছে নগ্ন ক্ষত বিক্ষত একটি মেয়ের লাশ। মেয়েটিকে হায়েনারা জেনো কামড়িয়ে কামড়িয়ে ছিরে ফেলেছে। যৌনাঙ্গ গুলো...
সিমরানের মনে পরে বন্ধুদের সাথে প্ল্যানের কথা। নিশ্চয় এই লাশ অরিনের। সে লাশটা উপর করে উল্টিয়ে দেখে চিৎকার করে উঠে। নগ্ন মেয়েটি লাশ আর কারো নয়, সেটা তার নিজেরই লাশ।
সমাপ্ত।