শুক্রবার, ২৩ জুলাই, ২০২১

ব্যর্থ প্রেমপত্র

 আমি চাঁদকে ভালোবাসি, চাঁদ আমায় ভালোবাসে বলে। আমি সূর্যকে ভালোবাসি, সূর্য আমাকে ভালোবাসে বলে। আমি তোমায় ভালোবাসি তুমি আমায় ভালোবাসো বলে। চাঁদ যেমন সূর্যের আলোয় নিয়ে বেঁচে থাকে, তেমনি আমি তোমার ভালোবাসা নিয়ে বেচে থাকবো। 


                                         I Love You

                                            (S+S)


♥♥♥ পৃথিবীর সবচাইতে রোমান্টিক ব্যর্থ প্রেমপত্র ♥♥♥

বুধবার, ২১ জুলাই, ২০২১

প্রেম বিস্মৃতি অথবা প্রস্থানের গল্প

 


প্রেম বিস্মৃতি অথবা প্রস্থানের গল্প

প্রেতাত্মার লেখা গল্প - Written by A R Shipon. 

প্রেম তো সূচির জীবনে এই প্রথম নয়, এর আগেও অনেকবার এসেছে, যদিও গ্রহণ করেছে মাত্র একটিকেই—তা-ও অনেক শঙ্কা আর ভীতি নিয়ে—এবং বিয়ে করে সুন্দর একটা সংসারও পেতেছে। অবশ্য বিয়ের আগেই অজস্র দ্বিধা আর সংশয় ঢুকে পড়েছিল সম্পর্কের ভেতরে। দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কগুলোতে দুজন মানুষ পরস্পরের কাছে নিজেদের অজান্তেই এমন খোলামেলা হয়ে পড়ে যে তখন মুগ্ধতাবোধের আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে প্রকৃত মানুষটি—ভালো-মন্দে, আলো-অন্ধকারে মেশানো মানুষটি। তখন সংশয় এসে ভিড় করে মনে—এই মন্দ আর অন্ধকারকে কি আমি ভালোবেসেছিলাম? আর এই প্রশ্নের তীব্রতায় আড়ালে পড়ে যায় তার সুন্দর-শুভ্র দিকগুলো। ধবধবে সাদা রংয়ের পোশাকে সামান্য একটু কালির দাগ যেমন তীব্রভাবে চোখে পড়ে, তেমনই শুভ্র প্রেমের ভেতরে সামান্য কালোটুকুও তীব্র প্রশ্ন হয়ে দেখা দেয়। তবে এসব দ্বিধা ও প্রশ্নগুলোকে বাইরে প্রকাশিত হতে দেয়নি সূচি, বরং নতুন করে তৈরি হওয়া আরও অনেক দ্বিধা এবং প্রশ্ন মনে এলেও সেগুলোকে মনের ভেতরেই চাপা দিয়ে রেখে নিরুপদ্রপ জীবন যাপন করতে চেয়েছে। এরকম করতে হয়। একটা সুস্থির-সামাজিক-নিরাপদ জীবন যাপন করতে হলে অনেক কিছু মেনে নিতে হয়, অনেক প্রশ্ন উত্থাপন না করে চুপ করে থাকতে হয়, অনেক দ্বিধা চেপে রাখতে হয়। কল্পনার প্রেম আর বাস্তবের প্রেম যেমন এক রকম নয়, তেমনই বিয়ে-পূর্ব এবং বিয়ে-পরবর্তী প্রেমও এক রকম নয়। এক রকম তো নয়ই, বরং একেবারে উল্টো বলে মনে হয় কখনো কখনো। সূচির অনেকবার মনে হয়েছে—আমিনের সঙ্গে তার ঠিক মেলে না। এটা যে বিয়ের পর ঘটেছে তা নয়, বরং প্রেম হওয়ার পর যখন সে বেশ ভালোভাবে চিনে নিল আমিনকে, তখন থেকেই মনে হয়েছে। কিন্তু এই প্রেম ছেড়ে দেওয়ার মতো মনের জোর তার ছিল না। সূচি বুঝে ফেলেছিল—আমিনের প্রতি যা সে বোধ করে তা প্রেম নয়, অবলিগেশন। দায়। কথাটা সে বলতে পারেনি কখনো। আমিনের ভেতরের অনুভূতিটাও তার অজানাই থেকে গেছে। তার যেমনটি মনে হয়, আমিনও কি সেরকমই ভাবে? মেলে না? সে-ও কি আমিনের কাছে অবলিগেশন হয়ে উঠেছিল? মুখ ফুটে বলতে পারেনি? এসব প্রশ্ন জটিল, নিজেকে ভেঙেচুরে দেয়, সূচি তাই নিজেকে খুব একটা আয়নার সামনে দাঁড় করাতে চায় না। জীবন তো চলে যাচ্ছে, কোথাও কোনো ছন্দপতন তো নেই। অন্তত বাইরে থেকে যারা দেখে তারা এরকমই ভাববে, মনের ভেতরে যা-ই থাকুক না কেন!

কিন্তু এই যে তার জীবনে দ্বিতীয়বারের মতো প্রেম এল, ঝড়ো প্রেম, বাধভাঙা প্রেম—এতে কি ছন্দপতন ঘটবে না? তার ছাপ বা ছায়া কি পড়বে না বাস্তব জীবনেও? সে তো টের পাচ্ছে, তার এতদিনের সাজানো-গোছানো লুকানো-ছাপানো মনটা আর নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকছে না, বাইরে আপাত শান্ত রূপের আড়ালে এতদিন পর্যন্ত যে অশান্ত-অতৃপ্ত রূপটিকে লুকিয়ে রেখেছিল, সেটি আর কোনো আড়াল রাখতে চাইছে না, ভীষণ কোনো দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু কেন সে এসব করছে? কেন সে ফিরিয়ে দিচ্ছে না এই অপরিণামদর্শী প্রেমটিকে? কেন প্রত্যাখ্যান করছে না নাফিসকে, ভয়ানক বিপর্যয়ের আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও? ছোটবেলা থেকেই সে দুশ্চিন্তায় ভোগা মানুষ, শঙ্কায় ভোগা মানুষ, কোনো একটা দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার দুর্ভাবনায় যন্ত্রণাকাতর মানুষ। সামাজিক প্রথা সে ভাঙতে চায়নি কোনোদিন, এমনকি ভাঙার সম্ভাবনা দেখলেও ভয়ে শিউরে উঠত। তার কী দোষ? সেই বয়ঃসন্ধিকালে, তার যখন প্রথম পিরিয়ড হলো, আচমকা রক্তপাত দেখে সে শিউরে উঠেছিল, ভয়ে কুঁকড়ে গিয়েছিল, কী অপরাধে তার এমন অবিশ্রান্ত বর্ষণ হচ্ছে বুঝতেই পারছিল না, কাউকে বলতেও পারছিল না অপরাধী সাব্যস্ত হবার আশঙ্কায়; তখন, মা কীভাবে যেন বুঝে গিয়েছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদের জবাবে সব কথা বলে দিয়েছিল সূচি। শুনে মা শান্তভাবে বলেছিলেন—'সব মেয়েরই এটা হয়।' তারপর, এরকম হলে কী কী করতে হয় শিখিয়ে দিতে দিতে বলেছিলেন—'এটা হলো বড় হওয়ার লক্ষণ। তুমি এখন বড় হয়ে গেছ। বাবা আর ভাই ছাড়া অন্য কোনো পুরুষ মানুষের কাছে যাবে না, কেউ তোমার গায়ে হাত দিলেই তোমার পেটে বাচ্চা এসে যাবে। আর বিয়ের আগে কোনো মেয়ের পেটে বাচ্চা এলে কী হয় জান তো? সেই মেয়েকে জ্যান্ত পুঁতে ফেলতে হয়, মনে থাকে যেন!' সে তীব্র আতংকে নীল হয়ে গিয়েছিল। এ কোন ধরনের শাস্তি! কেন তার এরকম হলো? কেন শুধু মেয়েদেরই এমন হয়? কেন ছেলেদের এই শাস্তি ভোগ করতে হয় না? কিন্তু এসব প্রশ্ন করার সাহস ছিল না তার, করবেই বা কাকে, মনের ভেতরেই গুমরে মরত। প্রতিমাসের ওই নির্দিষ্ট সময়টিতে সে একদম ভেঙে পড়ত আর সারা মাস আতংকে ভুগত—আবার আসছে ওই দিনগুলো—ভেবে। বহুদিন ধরে সে এই ধারণা বয়ে বেড়িয়েছে যে, ছেলেদের স্পর্শেই মেয়েদের পেটে বাচ্চা আসে। স্কুল-কলেজে সহশিক্ষা ছিল না, ছেলেদের সঙ্গে মেশার সুযোগ ঘটেনি, বাড়িতেও কাজিনদের এড়িয়ে চলত, দূরে দূরে থাকত, ডাকলেও কাছে যেত না, যদি ছোঁয়া লেগে যায়—এই ভয়ে! বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে সহপাঠী হিসেবে ছেলেদেরও পেলো, এই প্রথমবারের মতো, এত কাছাকাছি। খুব সাবধান থাকত সে, তবু কারও কারও সঙ্গে বন্ধুত্বও হয়ে গেল। অবশ্য ভুলেও একা ওদের সঙ্গে কখনো মিশত না সূচি, দু-একজন বান্ধবী সঙ্গে থাকতই। ততদিনে অবশ্য ভুলগুলো একটু একটু করে ভাঙতে শুরু করেছে, বান্ধবীরাই ভাঙিয়ে দিয়েছে, মায়ের ওই কথা শুনে হেসেই খুন হয়েছে কেউ কেউ, তারচেয়ে বেশি হেসেছে তার নির্বুদ্ধিতা দেখে। সে যে এতদিন ধরে এসব বিশ্বাস করে এসেছে, সেটিই তাদের হাসির কারণ। ভয় ভাঙার পরও অবশ্য সে ছেলেদের সঙ্গে সহজ হতে পারত না। কেউ দুষ্টুমি করেও ভালোলাগার কথা বললে সে কানে আঙুল দিত, কেউ প্রেমের কথা বললে ভয় পেত। ভাবত—প্রেমিক-প্রেমিকা যেভাবে গায়ে গা লাগিয়ে বসে থাকে, কবে যে পেটে বাচ্চা চলে আসে কে জানে! একটু ভয়ডরও নেই ওদের! 

এত ভীতি, এত শঙ্কা, এত সতর্কতা সত্ত্বেও তার জীবনে প্রেম এসেছিল। নিজের ইচ্ছেতে যতটা নয়, তারচেয়ে বেশি আমিনের ইচ্ছেতে। আমিন তার বছর পাঁচেকের সিনিয়র, ক্লাসের ফার্স্ট বয়, মানে খ্যাতিমান ছাত্র। এই ধরনের ছাত্রদের ব্যাপারে মেয়েদের একটু কৌতূহল থাকে বটে, কিন্তু কেউ তাদের সঙ্গে কোনোরকম সম্পর্কে জড়ায় না। এরা তো সাধারণত বোরিং-টাইপ হয়, আর এদের চেয়ে বহুগুণে উজ্জ্বল-আকর্ষণীয় ছেলেরা আশেপাশেই ঘুরে বেড়ায়, কেনই-বা এদের সঙ্গে জড়াবে? অবশ্য হিসাবি মেয়েদের কথা আলাদা। যারা একশ বছর পর কী হতে পারে আজই সেটা ভেবে বসে থাকে, তারা হয়তো এই ধরনের ছেলেদেরই পছন্দ করবে। সেটা স্বাভাবিকও। ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তা করতে হয় না এদের—নিশ্চিত উজ্জ্বল ভবিষ্যত্ তাদের জন্য উন্মুখ হয়ে অপেক্ষা করে থাকে। সূচি হিসাবি মেয়ে নয়। ভবিষ্যত্ দূরের কথা, আগামীকাল নিয়েই কোনো চিন্তাভাবনা নেই তার, যা হবার হবে—এরকমভাবে ছেড়ে দিয়ে বসে আছে। তার যাবতীয় চিন্তা বর্তমানকে ঘিরে, বর্তমানের যাবতীয় দুর্যোগ থেকে নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টায় ব্যয়িত। তবু আমিন যখন এসে তার ভালোলাগার কথা বলল, সে ভীষণ অবাক হয়েছিল। আমিন 'ভাই' যে তার দিকে কখনো তাকিয়ে দেখতে পারে, সে কখনো ভেবেই দেখেনি। সূচি প্রথম দিন কিছু বলেনি। আমিনও সময় নিয়ে চিন্তা করে হ্যাঁ-না কিছু একটা জানাতে বলেছে। কী জানাবে সে? মা জানলে মেরে ফেলবে না? না বোধ হয়। মেয়ের বিয়ে দিতে হবে না? এত ভালো ছেলে সে পাবে কোথায়? মা-র তো বর্তে যাওয়ার কথা! সূচি দু-চারদিন সময় নিল, তারপর সরাসরি কিছু না বলে আমিনের সঙ্গে মিশতে শুরু করল। মনের ভেতর থেকে ভয় বা শঙ্কা কোনোটাই কাটল না, তবু প্রেমটা হয়ে গেল। হয়ে যায় আর কি! বয়সের দোষ, সুঁই-সুতো পাশাপাশি থাকলে সম্পর্ক নির্মিত হবেই। অবশ্য তাদের সুঁই-সুতোর সম্পর্কটি হলো না, কিন্তু সূচি অচিরেই আবিষ্কার করল—তার শরীরের দিকে আমিনের ঝোঁকটা মারাত্নক। শান্ত-শিষ্ট-সুবোধ 'বালক' হিসেবে যাকে সবাই চেনে, সে যে সুযোগ পেলেই সূচির বুকে হাত দেয়, সেটা কি কেউ কল্পনা করতে পারবে? ব্যাপারটা অস্বাভাবিক নয়, বোঝে সূূচি, কিন্তু চিরদিনের লালিত শঙ্কা আর ভয় তাকে সংকুচিত করে রাখে। তাছাড়া, সবকিছুরই একটা শোভন-অশোভন রূপ আছে না? রিকশায় উঠেই রোদ নেই বৃষ্টি নেই হুড তুলে দিয়ে বুকে হাত দেবে, ক্যাাম্পাসে একটু আড়াল পেলেই বুকে হাত দেবে, পার্কে গিয়ে বসে লোকজনের খরদৃষ্টি উপেক্ষা করে বুকে হাত দেবে, মাঝে মাঝে বন্ধুবান্ধবের সামনেই চোখ ফাঁকি দিয়ে বুক ছুঁয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবে—এগুলো কী ধরনের ব্যাপার? সূচিকে একবার জিজ্ঞেস তো করেই না, এমনকি একবার ভেবেও দেখে না যে, সূচি এতে বিব্রতবোধ করছে কি না। নিজের সুখ মেটাতেই ব্যস্ত সে, অন্য কোনোদিকে নজর নেই। আর বুকের প্রতি অত লোভই বা থাকবে কেন? প্রেম হয়েছে, বিয়ে হবে, সব তো তোমারই, এখনই অত অস্থিরতার কী হলো? অবশ্য এর চেয়ে বেশিকিছু করার সুযোগ ছিল না। নিরাপদ জায়গা কোথায় যে দুজনে মিলিত হবে? তাছাড়া, সূচি এটা চাইতও না। আমিন মাঝে মাঝে কোনো বন্ধুকে বলতে চাইত কোনো একটা ব্যবস্থা করে দিতে, সূচি সাড়া দিত না। বলত—'এখন না লক্ষ্মীটি। আমি তো আর পালিয়ে যাচ্ছি না, হারিয়েও যাচ্ছি না। বিয়ের পর যত ইচ্ছে করো।' 

কিন্তু বিয়ে এত সহজে হলো না। বছর পাঁচেক সময় নিল আমিন, একটু গুছিয়ে নেয়ার নাম করে। ততদিনে সূচি মাস্টার্স ফাইনাল দেবে দেবে করছে, একের পর এক বিয়ের প্রস্তাব আসছে, সে নানা কৌশলে সেগুলো ফিরিয়ে দিচ্ছে। মাকে অবশ্য কিছু বলা যাচ্ছে না, যে প্রস্তাবই আসুক, সে হাসিমুখে বলছে—'তোমরা যেটা ভালো মনে কর, আমার কোনো আপত্তি নেই মা।' কিন্তু বাবাকে বলছে ভিন্ন কথা—'আমাকে জিজ্ঞেস না করে কাউকে কথা দিয়ো না বাবা।' বাবা জানতে চাইছেন তার পছন্দের কেউ আছে কি না, সে সরাসরি স্বীকার করছে না, অস্বীকারও করছে না। বাবার কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়ছে। স্ত্রীর বাড়াবাড়ি দুশ্চিন্তাকে তিনি অপছন্দ করেন ঠিকই, কিন্তু মেয়ে বড় হয়েছে, মাস্টার্স করছে, এরপর তো বয়সের দোষে বিয়ে দেওয়াই কঠিন হবে! অনেকদিন চেপে রেখে বাবার দুশ্চিন্তা কমানোর জন্য সূচি আমিনের কথা বলল তাকে, একদিন গোপনে গিয়ে কন্যার ভবিষ্যত্-জামাতাকে দেখে এলেন বাবা, পছন্দও করলেন, কিন্তু সূচির অনুরোধ রক্ষার্থে মাকে কিছু জানালেন না। বিয়ের প্রস্তাবগুলো একথা-সেকথা বলে তিনিই ফিরিয়ে দিতে লাগলেন। 

সূচি অনেকবার চেষ্টা করেছে আমিনকে বাসায় নিয়ে যেতে, অন্তত মা-বাবার সঙ্গে একবার কথা বলে আসুক—কিন্তু কিছুতেই তাকে রাজি করানো যায়নি। গেলেই নাকি বিয়ের জন্য চাপ দেবেন তারা, এখন কোনোভাবেই সেটি সম্ভব নয়। যদিও একটা ব্যাংকে বেশ ভালো পদে চাকরি করছে সে, কিন্তু তার টার্গেট বিশ্ববিদ্যালয়ে জয়েন করা, প্রথম স্থান দখল করা সত্ত্বেও নানা রাজনীতি করে তাকে ঠেকিয়ে রাখা হয়েছে, এর শেষ না দেখে সে অন্য কোনোকিছুতে মন দিতে পারবে না। অবশেষে যখন সেটা সম্ভবপর হলো, তখন সে সত্যিই এল বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে, দেরি করল না একটুও। জয়েন করতেই দেরি হয়ে গেছে, দু-বছর চাকরি করে ছুটি নিয়ে বাইরে যাবে পিএইচডি করতে, তারপর আবার দেশে ফিরে আসবে; বিয়েটা তাই তাড়াতাড়িই সেরে ফেলতে চায়। তার বুদ্ধিজীবী হওয়ার খুব শখ এবং সহজে এই স্বপ্ন পূরণের জন্য বাংলাদেশের মতো এমন খালি মাঠ নাকি আর কোথাও পাওয়া যাবে না। সবজিবাগানে যেমন কলাগাছকেও বড় দেখায়, এ দেশের অবস্থাও নাকি ওরকমই, আর সেজন্যই এ দেশে গণ্ডায় গণ্ডায় বুদ্ধিজীবী, সঙ্গে যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পরিচিতি থাকে তাহলে তো কথাই নেই। অবশ্য দু-বছরের মধ্যে তার বাইরে যাওয়া হলো না, একটা প্রমোশন নিয়েই যাই—এই কথা বলে চার বছর পর্যন্ত সময় নিল। তাদেরও বিয়ের চার বছর পার হলো। এর মধ্যেই সূচির যা বোঝার বোঝা হয়ে গেছে। লোকটা ভয়াবহ ধরনের ক্যারিয়ারিস্ট। ক্যারিয়ারের জন্য সব করতে পারে—কাউকে ল্যাং দেওয়ার দরকার হলে দেবে, গুঁতো দেওয়ার দরকার হলে দেবে, লাথি মারার প্রয়োজন হলে মারবে। পুরুষ হিসেবেও খুবই অদ্ভুত মানসিকতার মানুষ আমিন। সূচি সেটি বুঝে গিয়েছিল বিয়ের কয়েক মাস পরেই, যেদিন আমিন তার শরীর হাতড়াতে হাতড়াতে বলেছিল—'তোমার শরীর দেখলেই মনে হয়, এই শরীর বহুবার ব্যবহূত। আমার আগে কারও সঙ্গে সম্পর্ক ছিল নাকি তোমার?' শুনে শিউরে উঠেছিল সূচি। বলে কী লোকটা? এত সযত্নে শুচিতা রক্ষা করা চলা মেয়ে সে, এমনকি কারও স্পর্শের ভয়ে যে সবসময় কাতর হয়ে থাকত, তার শরীর কি না ব্যবহূত! ছি! ছিহ! এরকম করে কেউ ভাবতে পারে? হ্যাঁ, ছোটবেলা থেকেই, মানে বয়ঃসন্ধিকাল থেকেই তার শরীর একটু বাড়বাড়ন্ত। কৈশোর পেরোতে না পেরোতেই এবং কিছু বুঝে ওঠার আগেই সে আবিষ্কার করে উঠেছিল, তার স্তন বড় হয়ে উঠছে, নিতম্ব ছড়িয়ে পড়ছে, কটিদেশ ক্রমশ ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হচ্ছে। যৌবনে নিজের ভরভরন্ত শরীর দেখে সে নিজেই চিনতে পারত না। এ কি তার দোষ? দোষ তো নয়ই, বরং শরীরটা হয়ে উঠেছিল তার জন্য বিব্রতকর। পুরুষ মানুষদের লোলুপ চোখ থেকে নিজেকে বাঁচাতে ওড়না টেনে শরীর আড়াল করতে করতেই তার সময় ব্যয় হতো। সেই শরীর নিয়ে স্বামীর কাছ থেকে এই অপবাদ শুনতে হবে? নিজেকে তার অশুচি মনে হতো। অথচ এমন নয় যে, আমিন তার পৌরুষ দিয়ে তাকে খুব সুখী করতে পেরেছে। কখনো সূচির কথা ভাবেনি লোকটা। সূচি সুখী কি না, তৃপ্ত কি না, কোনটি তার পছন্দ কোনটি নয়—এসব নিয়ে আমিনের কখনো কোনো চিন্তাই ছিল না। চড়ুই পাখির মতো অল্পতেই নেতিয়ে পড়া এক অপগণ্ড পুরুষ সে, অথচ মুখে মুখে বাঘ শিকার করে বেড়াচ্ছে! যাহোক, বিয়ের দু-বছরের মাথায় তার কোলজুড়ে একটা বাচ্চা এল। স্বামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সূচি নিজেও একটা বহুজাতিক কোম্পানিতে ভালো পদে চাকরি করছে, সামাজিকভাবে তারা সুখী-সফল দম্পতি, কোথাও কোনো দাগ দেখা যায় না। যাবে কীভাবে? দাগ তো সব লেগে আছে মনে!

যাহোক, সামাজিক জীবনে কোনো দাগ-টাগ না রাখলেও সূচির মনের ভেতরে হাজারটা দ্বিধা তৈরি করে আমিন চলে গেল বিদেশে। আর দেরি করা যায় না। বিদেশি পিএইচডি না হলে আর চলছে না, এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গেছে, আরও কালক্ষেপণ করলে আর ট্রেন ধরা যাবে না। যাওয়ার সময় আমিন জানিয়ে গেল— 

বছরখানেক পর এসে তোমাদের নিয়ে যাব। 

দীর্ঘ সময়ের জন্য গেলে তো চাকরিটা ছাড়তে হবে, তুমি যদি ওখানে সেটেল করতে চাও তাহলে ছেড়ে দিয়েই যাব, নইলে কি চাকরি ছাড়াটা ঠিক হবে? —সূচি এই কথা বললে আমিন বললো— 

নাহ, তাহলে থাক। আমিই এসে ঘুরে যাব। সম্ভব হলে বছরদুয়েক পর তোমরা গিয়ে ঘুরে আসবে। বাইরে সেটেল করার জন্য তো এত সেক্রিফাইস করিনি।

সেক্রিফাইস?

সেক্রিফাইস নয়? ইউনিভার্সিটিতে জয়েন করার জন্য চার বছর অপেক্ষা করেছি। জীবন থেকে চারটা বছর ক্ষয়ে গেছে। বাইরে সেটেল করতে চাইলে তো পাস করেই চলে যেতাম। এমন তো নয় যে আমার সে সুযোগ ছিল না।

তা বটে। ভালো ছাত্রদের জন্য বাইরে পড়াশোনা করতে যাওয়া কোনো বিষয়ই নয়। আমিন চলে গেলে সূচি যেন একটু হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। বেশ খানিকটা ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল সে, এই চার বছরের দাম্পত্য-জীবনে। মাঝে মাঝে এরকম শারীরিক দূরত্ব থাকা ভালো। এই যেমন এতদিন পর সে যেন নিজের দিকে ফিরে তাকানোর সময় পেলো। আর মনে হলো, ছোটবেলা থেকে মায়ের নির্যাতন আর বিয়ের পর আমিনের নির্যাতন—এগুলো নিয়েই সে এতটা পথ পেরিয়ে এসেছে। শারীরিক নির্যাতন করেনি কেউ, কিন্তু ভয়াবহ মানসিক চাপে রাখার ব্যাপারে দুজনেরই কুশলতা অসাধারণ। সবসময় ভয়-শংকা-আতঙ্ক, অপরাধ না করেও অপরাধী হয়ে থাকা—এই ছিল তার এতদিনকার জীবন। এবার কিছুদিন নিজের মতো করে থাকা যাবে। বাচ্চাটা রাজপুত্রের মতো সুন্দর হয়েছে, ওকে নিয়েই মনের মতো করে একটা ছোট্ট রাজপ্রাসাদ বানাবে সে ঘরের কোণে।

কিন্তু সূচি তখনো জানত না যে তার সেই একান্ত ঘরে আরেকজন মানুষের প্রবেশ ঘটবে। সত্যি বলতে কি, নাফিসকে ভালো লাগলেও সে যে তার জীবনে এসে পড়বে সেটি কখনো ভাবেনি। সূচির সহকর্মী সে, সুদর্শন-সুপুরুষ, কোমল আর স্নিগ্ধ একজন মানুষ। দু-বছর ধরে তাদের এখানে জয়েন করেছে নাফিস, তার আগে আরেকটি বহুজাতিক কোম্পানিতে কাজ করে এসেছে, ফলে এখানেও পদটি বেশ ভালোই পেয়েছে। বয়সে তার সমানই হবে হয়তো কিংবা এক-দুবছরের বড়, এখনো বিয়েটিয়ে করেনি, আপাতত করার ইচ্ছেও নেই। সূচির সঙ্গে তার সম্পর্ক বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ অনেকদিন ধরেই, ফলে সে এতদিনে জেনে গেছে—প্রেমিকার বিয়ে হয়ে গেছে বলে আপাতত বিয়ের কথা ভাবছে না নাফিস। আরও কিছুদিন যাক, তারপর ইচ্ছে হলে করবে। নাফিস ভালো চাকরি করছে, ছেলেরা তো বিয়ে করতে সময় নেয় একটু গুছিয়ে ওঠার জন্যই, তাহলে কেন ওই মেয়েটির বিয়ে হলো, কেন হতে দিল সে—এ কথা আর জিজ্ঞেস করা হয়নি। করাটা হয়তো শোভনও নয়। কে জানে, তাদের প্রেমের সম্পর্কটিও শেষ পর্যন্ত অবলিগেশন হয়ে উঠেছিল কি না! যদি সেটি হয়ে থাকে এবং সচেতনভাবে দুজনে সংসার পাতার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে থাকে, তাহলে বলতেই হয়—তারা আমাদের চেয়ে অনেক আধুনিক মানুষ, ওরা পেরেছে, আমরা পারিনি—ভেবেছে সূচি। যাহোক, নাফিসকে তার বরাবরই খুব ভালো লেগেছে বটে, তবে বন্ধুতা ছাড়া অন্য কোনো সম্পর্কের কথা কখনো ভেবেছে বলে মনে পড়ে না। নাফিসের মুগ্ধ দৃষ্টিও তার চোখ এড়াত না। তবে এটা তো আর নতুন কিছু নয় তার জন্য। সেই কৈশোর থেকেই অজস্র মুগ্ধ চোখ, অসংখ্য লোভী চোখ, অনেক কামনার্ত চোখ দেখেছে সূচি। সে তাই ব্যাপারটাকে গুরুত্ব দেয়নি। বন্ধুত্বের কারণে মাঝে মাঝে অফিস শেষে দুজন কোথাও গিয়ে খেতে বসেছে, সুখ-দুঃখের গল্প করেছে, কিছুটা সময় কাটিয়ে যার যার ঠিকানায় ফিরে গেছে। কিন্তু নাফিস যেদিন কোনো ভণিতা না করে সরাসরি বলে ফেলল—'আমি বোধহয় তোমার প্রেমে পড়েছি, সূচি।'—সে দারুণ অবাক হয়েছিল। সে কি নাফিসের চোখে কখনো প্রেম দেখেছে? মনে তো পড়ে না। লোভ আর কামনা যেমন এক নয়, তেমনই প্রেম আর মুগ্ধতাও এক ব্যাপার নয়। কিন্তু নাফিসের মুখে প্রেমে পড়ার কথাটা শুনে তার বুক কেঁপে উঠল। কেন কাঁপল? সে কি মনে মনে এই প্রেমের জন্য অপেক্ষা করেছে? কেন করেছে? এর যুক্তি কী? 

শুনে সে রহস্যময়ীর মতো হেসে বলল—তাই নাকি? বুঝলে কী করে?

তোমার জন্য আমার মন কেমন করে।

এটুকুই?

আমি তো অত গুছিয়ে বলতে পারি না। কিন্তু এটুকু তো ছোট কোনো ব্যাপার নয়। সারাক্ষণ আমি তোমার কথা ভাবি, তোমাকে দেখার জন্য মন কাঁদে, ছুটির দিনগুলো যে কী বিশ্রী কাটে, সময়ই কাটতে চায় না। মনে হয় সপ্তাহের সাতদিনই কেন ওয়ার্কিং ডে হলো না, তাহলে তোমাকে প্রতিদিন দেখতে পেতাম!

তার শুনতে ভালো লাগছিল। একটু মজা করার জন্য বলল—ছুটির দিনে আমার বাসায় চলে এলেই পার।

চাইলেই কি পারা যায়? তোমার সঙ্গে আমার সম্পর্কটা তো ঠিক ওই পর্যায়ে যায়নি যে হুট করে তোমার বাসায় চলে যেতে পারি।

তা না হয় না পারলে, আমাকে আসতে বললেই তো পারতে!

এই যে বললাম। 

সূচি লজ্জা পায়। নিজের কথার ফাঁদে নিজে ধরা পড়ছে সে। কী সব বোকা বোকা কথা বলছিল! সূচি ভেবে দেখল—সেও অনেকদিন ধরেই কারণে-অকারণে নাফিসের কথা ভাবে। ভাবতে ভালো লাগে। কিন্তু কী ভাবে, কেন ভাবে—এইসব প্রশ্নে নিজের মুখোমুখি দাঁড়ায়নি কখনো। সূচি বুঝে গেছে—সে আসলে খুবই ভীতু মানুষ। যেখানে বিপদের সম্ভাবনা, যেখানে মন এলোমেলো হওয়ার আশঙ্কা, সেখান থেকে সে পালিয়ে পালিয়ে থাকে। কোনো ঝুঁকি নেয়ার সাহস হয় না। কিন্তু এখন যে ব্যাপারটা সামনে চলে এল! ফেরাবে কী করে? নাকি গ্রহণ করবে এই প্রেমকে? এই দোলাচলে দুলতে দুলতে কখন যে কী হয়ে গেল, বুঝতেই পারল না সূচি। প্রতিদিন দেখা হয়, তবু ছুটির দিনগুলোতে মন হুহু করতে থাকে। দুপুর পর্যন্ত কোনোভাবে থাকা গেলেও বিকেলে পাগল পাগল লাগে, নাফিসকে ফোন করে কোথাও আসতে বলে সে, কণ্ঠের আকুলতা না লুকিয়েই। এখন তার হাতে অনেক সময়। বাচ্চাটাকে দেখাশোনার জন্য একজন আয়া আছে, বাসাটাও বাবার বাসার কাছেই, অফিসে গেলে মা এসে ওকে নিজের কাছে নিয়ে যান, তেমন টেনশন করতে হয় না। আগে অফিস থেকে ফিরে বাকি সময়টুকু এবং ছুটির দিনগুলোর পুরো সময়টাই ছেলেকে দিত সে, এখন সেখানে ভাগ বসিয়েছে নাফিস, প্রবলভাবে, কোনোভাবেই যাকে ভুলে থাকা যায় না। প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত ফোনে কথা বলে তারা, সকালে দেখা হবে জেনেও দুজনের কথা যেন আর ফুরাতেই চায় না, সারাদিন অফিসে কেউ যেন বুঝতে না পারে—এমনভাবে দুজন দুজনের আশপাশে এসে পড়ে সুযোগ পেলেই। অফিস শেষে দুজন আলাদাভাবে বেরোয় ঠিকই, কিছুক্ষণ পরই কোথাও না কোথাও গিয়ে বসে আবার। কিন্তু ঠিক তৃপ্ত হওয়া যাচ্ছে না যেন, কোথায় যেন একটা অপূর্ণতা রয়েই যাচ্ছে! সূচি বুঝতে পারে, তার শরীর কথা বলতে শুরু করেছে, জেগে উঠতে শুরু করেছে, স্পর্শ চাইছে, গন্ধ চাইছে, হয়তো আরও অনেক কিছু চাইছে। এরকমভাবে সে আর কোনোদিন জেগে ওঠেনি জীবনে—না শরীরে, না মনে। একেই বোধ হয় প্রেম বলে! আমিনের সঙ্গে যা ছিল তা হয়তো প্রেম নয়, কিংবা হলেও এই দুই প্রেমের ধরন আলাদা। কিন্তু নাফিস এত সুবোধ বালক যে, তার চোখে মুগ্ধতা ছাড়া অন্য কোনোকিছু চোখে পড়ে না। লোভ না হয় না-ই থাকল, কামনা নেই কেন? সে কি চায় না সূচিকে? পাশাপাশি হাঁটার সময়, বা কাছাকাছি বসে থাকলেও সে এমন একটা শোভন দূরত্ব বজায় রাখে যেন স্পর্শ না লেগে যায়। হয়তো সে অন্য সব পুরুষের মতো নয়, হয়তো তার শোভন মনটি সবসময় এমনভাবে ক্রিয়াশীল থাকে যেন অন্য কেউ তার আচরণে আহত না হয়। কিন্তু সে কেন সূচির আকাঙ্ক্ষাগুলোকে বুঝতে পারছে না? নাকি বুঝতে পেরেও সাড়া দিচ্ছে না? সূচি কি নিজেই বলবে? এও কি সম্ভব? ধুর, এতটা হ্যাংলা সে হতে পারবে না। তার চেয়ে অপেক্ষা করা ভালো। একদিন না একদিন নাফিসকে বলতেই হবে। পুরুষ তো! সুন্দরী নারীর শরীর পাওয়ার এরকম সুবর্ণ সুযোগ সে হারাবে না। সূচির অপেক্ষা দীর্ঘ হলো না, কিছুদিনের মধ্যেই নাফিস বলল— 

চলো ঢাকার বাইরে থেকে একটু ঘুরে আসি।

কোথায় যাবে?

আশপাশেই কোথাও চলো। দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসব।

সারাদিন বাইরে বাইরে ঘুরব? সেই বয়স কি আর আছে?

না, শুধু ঘুরব কেন? ঢাকার আশপাশে কত কটেজ হয়েছে, গেস্ট হাউজ হয়েছে। নিরিবিলি সময় কাটানোর জন্য চমত্কার জায়গা। ওগুলোর কোনো একটাতে যাওয়া যায়। তোমার কোনো আপত্তি নেই তো?

সূচির মন আনন্দে নেচে উঠেছিল। এই তো ধরা দিয়েছ, পুরুষ! কতদিন আর মধু ফেলে দূরে থাকতে পারে মৌমাছি? কটেজে বা গেস্টহাউজে নিরিবিলি সময় কাটানোর অর্থ কি সে বোঝেনি? একটু লাজুক হেসে বলল—

তোমার সঙ্গে যেতে আপত্তি থাকবে কেন? কবে যাবে বলো।

তোমার সুবিধামতো কোনো ছুটির দিনে।

নাফিসের ইচ্ছেটা সে বুঝেছে বলেই সাবধান হতে হলো। বললেই তো আর যাওয়া যায় না। দুটো শরীর যখন উন্মুখ হয়ে থাকে মিলনের জন্য, তখন পুরুষের যতটা নয়, তারচেয়ে অনেক বেশি সাবধান হতে হয় নারীকে। নারীর শরীরের কত রংঢং—নিরাপদ সময়, ঝুঁকিপূর্ণ সময়—আরও কত কি হিসাব করতে হয়! সে নিশ্চয়ই মুহূর্তের ভুলে কনসিভ করার ঝুঁকি নেবে না, আবার সম্পর্কটি হওয়ার আগেই কাউকে নিরোধক ব্যবহারের প্রসঙ্গটিও বলা যায় না। তার চেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ হলো—মাসের ঝুঁকিমুক্ত কোনো এক সময়ে মিলিত হওয়া। সূচি নিজেই হিসাব-টিশাব করে একটা তারিখ ঠিক করল, এবং যা প্রত্যাশা করেছিল তা-ই হলো। ঘুরে বেড়ানো আর হলো না তাদের। নিজেই ড্রাইভ করে এসেছে, একটু রেস্ট নিয়ে ফ্রেশ হয়ে ঘুরতে বেরোবে—এই কথা বলে তাকে নিয়ে কটেজের রুমে গিয়ে ঢুকল নাফিস। এবং ঢুকেই দুহাত বাড়িয়ে কাছে ডাকল সূচিকে। সূচিও নিজেকে বাধা দিল না। নির্দ্বিধায় নাফিসের বুকের ভেতরে গিয়ে মুখ গুঁজল। যথার্থ প্রেমিকের মতো কানে কানে ফিসফিসিয়ে রোমান্টিকতা ছড়াল নাফিস, তারপর মুখ তুলে নিয়ে চুম্বন করল, চোখে চোখ রেখে জিজ্ঞেস করল— 

হয়ে যাবে নাকি একবার?

সূচি মৃদু হেসে বলল—তোমার ইচ্ছে।

শুধুই আমার ইচ্ছে? তোমার ইচ্ছে নেই? তাহলে থাক।

আমি কি তাই বলেছি?

তাহলে?

তুমি না বললে, ক্লান্ত?

হাহাহাহা... ওটা তো কথার কথা।

হুম! ফন্দি?

আমি ফন্দি করেছি?

করেছই তো।

ভালো করেছি। ফাঁদে পা যেহেতু দিয়েছই, চলো এবার—বলে সূচিকে কোলে তুলে বিছানায় নিয়ে গেল নাফিস।

তারপর যা ঘটল, সেটি ছিল সূচির জন্য অভাবনীয়। শরীরী আদর যে এত অসামান্য ব্যাপার হতে পারে, সে কখনো কল্পনাও করতে পারেনি। সারা শরীরে চুম্বনের ঝড় বইয়ে দিল নাফিস, আদর করল কোমলভাবে, আর প্রবেশ করল চিতাবাঘের ক্ষিপ্রতা নিয়ে। পাগল হয়ে উঠল সূচি, আর জীবনে এই প্রথমবারের মতো অনুভব করল—সঙ্গম কী তৃপ্তিদায়ক ব্যাপার! যথার্থ পৌরুষদীপ্ত যুবকের মতো সঙ্গীকে সর্বোচ্চ সুখ এনে দিল নাফিস। একবার নয়, কয়েকবার। সারাদিনে তারা আর বাইরে বেরোল না। দুপুরে খাবার আনতে বলল রুমেই। তারপর সন্ধ্যা পর্যন্ত ওখানেই রয়ে গেল। ওই খাবারের সময়টুকু ছাড়া বাকি সময়টা নাফিস এক মুহূর্তও সূচিকে ছাড়ল না। কখনো বুকে জড়িয়ে শুয়ে রইল, কখনো চুমুতে ভরিয়ে তুলল সারা শরীর, কখনো ধীরে হাত বুলিয়ে দিতে লাগল সারা গায়ে, আর যখন উত্থিত হলো তখন প্রবেশ করল ভেতরে। সূচিও পুরো সময়টি দারুণ উপভোগ করল, নাফিসকে বারবার জাগিয়ে তুলবার জন্য সবটুকু সহায়তা করল, আর তীব্র আনন্দে ভেসে গেল অচিন কোনো দেশে। মনে হচ্ছিল, এই প্রথমবারের মতো তার কুমারীত্ব হরণ হলো। শরীরী সম্পর্ক যে এত সুন্দর হতে পারে, এত আকর্ষণীয় হতে পারে, এত প্রেমময় হতে পারে, এত উত্তেজনাপূর্ণ হতে পারে, এত তৃপ্তিদায়ক হতে পারে, তার জানা ছিল না। নাফিস তাকে এক নতুন জগতের সন্ধান দিয়েছে যেন। অভিজ্ঞ পুরুষ, বোঝা যায়। নিশ্চয়ই প্রেমিকার সঙ্গে শরীরের সম্পর্ক ছিল! থাকুকগে। সেও তো একজনের স্ত্রী। কৌমার্য তো সে প্রত্যাশা করেনি, যেহেতু সে কুমারী নয়। কিন্তু এরকম চমত্কার যার পৌরুষ, তাকে ছেড়ে ওই মেয়েটি অন্য পুরুষের ঘর করবে কী করে? কথাটা মনে হতেই সূচির মন খারাপ হয়ে গেল খামোখা। কেন যে নাফিসের আগে একটা প্রেম ছিল, কেন যে সে-ই প্রথম হলো না ভেবে এই মন খারাপ। তার নিজেরও যে প্রথম নয়, সেটা প্রায় মনেই রইল না। অবশ্য নাফিস তাকে মন খারাপ করে থাকতে দিল না। আদর-সোহাগ, প্রেমে-ভালোবাসায় ভরিয়ে তুলল। 

একবার বাধাটি দূর হয়ে যাবার পর বিষয়টি নিয়ে দুজনের খোলামেলা কথা বলার দ্বিধাটুকু ঝরে পড়ল। নাফিস কোনো নিরোধক ব্যবহার করতে রাজি নয়, ওর নাকি রেইনকোট পরে গোসল করার অনুভূতি হয়! সূচিও কোনো পিলটিল খেতে চায় না বিরূপ প্রতিক্রিয়ার ভয়ে। অতএব মাসের নিরাপদ সময়ের জন্য উন্মুখ অপেক্ষা দুজনের। 

আনন্দেই কাটছিল সময়, কিন্তু নাফিস বোধ হয় এতে সন্তুষ্ট নয়, আরও পেতে চায়, আরও, হয়তো সেজন্যই একদিন সে বিয়ের কথা তুলল। সূচি আঁতকে উঠল।

না, না, বিয়ে কেন? বিয়ে নয়। 

কেন নয়? 

কেন বিয়ে? আমার সংসার আছে না?

আছে। কিন্তু সংসার ছেড়ে কি কেউ আসে না?

আসে। আমি আসব না।

কেন? তুমি কি আমাকে ভালোবাস না?

বাসি। কিন্তু সংসারের জন্য নয়।

কিসের জন্য?

ভালোবাসার জন্য ভালোবাসি। প্রেমের জন্য ভালোবাসি।

প্রেম তো পরিণতি চায়।

চায়। কিন্তু বিয়ে প্রেমের পরিণতি নয়, প্রেমের মৃত্যু।

অভিজ্ঞতা থেকে বলছ?

শুধু অভিজ্ঞতা নয়। বোঝাপড়াও বলতে পার।

কেন ও কথা বলছ?

প্রেম হলো চূড়ার সম্পর্ক, আর সংসার সমতলের। চূড়া অনেক সুন্দর, তুষারশুভ্র, বিপুল, রহস্যময়। আর সমতলে ধুলোকাদামাটি, নোংরা-আবর্জনা।

আরে বাপরে। একেবারে কবিদের মতো কথা বলছ!

কবিদের মতো কথা কি শুধু পুরুষরাই বলতে পারে? মেয়েরা পারে না?

নাফিস দুর্বল কণ্ঠে কিছুক্ষণ তর্ক চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করল, কিন্তু সূচি ছিল আত্মবিশ্বাসী, যুক্তিতে প্রখর। হার মানতে হলো নাফিসের। বিয়ে-সংসার ইত্যাদির ব্যাপারে স্পষ্ট অনিহার কথা জানিয়ে সূচি তার কাছ থেকে এরকম প্রতিশ্রুতি আদায় করে ছাড়ল যে, সে এই ধরনের কথা আর কোনোদিন বলবে না। 

বিয়েতে রাজি না হলেও শরীরী সম্পর্কে দারুণ নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল সূচি। মুখে কিছু না বললেও তার মন অস্থির হয়ে থাকত, অপেক্ষাকাতর সময়গুলোতে এক দিনকেও মনে হতো অনন্তকাল। কিন্তু তার এই আকুলতা, এই অস্থিরতা নাফিস আদৌ বুঝত কি না, সেটা বোঝার কোনো উপায়ই ছিল না। সে বরাবরের মতোই ধীর-স্থির, শান্ত, অটল। মানুষ তো এরকম একটা প্রেমে পড়লে একটু টলে যায়, একটু ঝুঁকে পড়ে, পড়তেই হয়, সোজা হয়ে হাঁটতে থাকা মানুষটিকেও সঙ্গীর আবেগে সাড়া দিতে গিয়ে একটু পিছিয়ে পড়তে হয়। নাফিসের যেন এগুলোর কিছুই হয়নি। সূচির আবেগটি এমন হয়ে উঠেছিল যে, সে প্রতিদিনই পেতে চাইত, আর নাফিস হয়তো মাসখানেক পরপর একদিন তাকে নিয়ে যেত কোথাও, সারাদিন ধরে মধু পান ও দান করে আবার আগের মতো হয়ে যেত। কিন্তু ওই একটা দিন এত আনন্দময়তায় ভরে উঠত যে সূচির মনে হতো—চিরকাল শরীর নিয়ে আতংকে ভুগে কতকিছুই না স্বেচ্ছায় হারিয়েছে সে। আমিন তো তাকে কিছুই দেয়নি, ক্লান্তি ছাড়া। স্বামীসঙ্গ তার কাছে যে কী রকম বিরক্তিকর হয়ে উঠেছিল তা সে শুধু নিজেই জানে। অথচ এই বিরক্তি সত্ত্বেও কখনো আশপাশে ফিরে তাকায়নি সূচি। কত পুরুষ কতভাবে তাকে মুগ্ধ করার চেষ্টা করেছে, প্রেম নিবেদন করেছে, একটু সহজ আচরণ করলে কতজন বন্ধুত্বের নামে শরীর নিয়ে ইঙ্গিত করেছে—সে সবসময়ই পাশ কাটিয়ে চলে এসেছে। প্রেমার্থীদের মধ্যে কতজনই তো সুপুরুষ আর আকর্ষণীয় ছিল। কেন সেসব আহ্বানে সাড়া দেয়নি সে?

এসব ভাবতে ভাবতে দিন কাটতে লাগল তার আর একসময় মনে হলো—দিন তো ফুরিয়ে যায়নি। দেখাই যাক না, ওই প্রেমিক পুরুষদের ভেতরে এখনো তার জন্য কাতরতা আছে কি না! যেসব পুরুষ তার দিকে ভালোলাগার চোখে তাকিয়েছিল, কামনার চোখে তাকিয়েছিল, এবং ব্যাপারগুলো গোপন না করে প্রেম জানাবার ছুতোয় তাকে জানিয়ে দিয়েছিল, অনেকটা খেলার ছলেই তাদের খুঁজে নিতে শুরু করল সূচি। নাফিস এই লোকগুলোর অধিকাংশকেই নামে চিনত। সূচি নানা সময়ে এদের গল্প তাকে বলেছে, সে-ও নানা দুষ্টুমি ও ঠাট্টা করে সূচিকে ক্ষেপিয়েছে। নাফিস অবাক হয়ে দেখল, সূচির জীবনে সেই লোকগুলোর প্রত্যাবর্তন ঘটছে এবং ব্যাপারটি লুকানোর কোনো চেষ্টাও সে করছে না। নানা যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের এই সম্পর্ক নবায়নের চিহ্ন রয়ে যেতে লাগল। নাফিস টের পেলো, সূচি তার ওপর থেকে মনোযোগ হারিয়েছে। কিন্তু এসব নিয়ে সূচির সঙ্গে কথাই বলা যায় না, একেবারে ঝংকার দিয়ে ওঠে। এমনকি নাফিসের মধুচন্দ্রিমার ডাকেও সে আর সাড়া দিতে চায় না আগের মতো। বরং এড়িয়ে যাবার হাজারটা কৌশল দক্ষতার সঙ্গে প্রয়োগ করে। বারবার মনোমালিন্য হতে লাগল তাদের। নাফিস কিছু জিজ্ঞেস করলেই—'আমি তোমার কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য নই'—বলে তীব্রভাবে তাদের এতদিনের প্রেমকে অস্বীকার করে বসতে লাগল।

নাফিসের মাঝে মাঝে মনে হয়—অনেক বড় কারণেও প্রেম ভাঙে না, কিন্তু কখনো কখনো ছোট্ট একটা শব্দও জানিয়ে দেয়—প্রেমটা আসলে নেই। এই যেমন 'জবাবদিহিতা' শব্দটি। প্রেম তো আসলে এক কমিটমেন্টের নাম, সেটি ভঙ্গ হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিলে সম্পর্কের খাতিরেই কথা-বার্তা বলে সেটি ঠিক করে নিতে হয়। কিন্তু ব্যাপারটিকে যদি কোনোপক্ষ 'জবাবদিহিতা' বলে মনে করে, তাহলে আর কথা এগিয়ে নেয়ার কোনো উপায় থাকে না। 

নাফিসের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হচ্ছে বুঝতে পেরেও সূচির আর কিছুই করার রইল না। সে যেন এক অবিশ্বাস্য স্রোতে গা ভাসিয়েছে, কোনোভাবেই ভেসে যাওয়া থেকে বাঁচাতে পারছে না। জড়িয়ে পড়ছে আরেকজনের সঙ্গে, কোনোভাবেই নিজেকে ফেরাতে পারছে না। মন যেন আর নিজের নিয়ন্ত্রণে নেই। একদিকে নিজের ভেতরে দোলাচল, অন্যদিকে নাফিসের ওইসব প্রশ্ন। সে তো নাফিসের কাছে নিজেকে বিক্রি করেনি, কেন এসব নিয়ে তার কাছে জবাবদিহিতা করতে হবে? —এরকমই মনে হতে লাগল সূচির। 

নতুন সম্পর্কে জড়িয়েও নাফিসকে হারানোর কথা ভাবতে পারত না সূচি, কিন্তু নাফিস কেনই-বা অপমান সয়েও পড়ে থাকবে? হয়তো সেজন্যই ধীরে ধীরে দূরে সরে যেতে লাগল সে। সূচি বুঝতে পেরেও কিছুই বলল না। যেতে চাইলে যাক, কেউ চিরজীবনের জন্য থাকতে আসে না। একজন গেলে আরও কতজন আসবে! কিন্তু যত পুরুষই আসুক, কাউকেই নাফিসের মতো মনে হয় না কেন? কেন মনে হয় এত প্রেম তাকে কেউ দেয়নি কখনো, এত ভালোবাসেনি তাকে কেউ কোনোদিন—না মনে, না শরীরে। এই প্রেম ভেঙে যাবার অনিবার্যতা মেনে নিয়েও সেটিকে সবচেয়ে মর্যাদাকর প্রেম হিসেবে ধরে রাখবার আকাঙ্ক্ষায় সে তাই একদিন নাফিসের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। বলল—

তুমিও জান আমিও জানি—আমাদের সম্পর্কটি আর আগের মতো নেই। তোমার সম্মান আমি রাখতে পারিনি, তোমার অসাধারণ প্রেমটির যথার্থ মর্যাদা দিতে পারিনি। এ আমারই অক্ষমতা। তুমি যেতে চাইলে যাও, কিন্তু আমাকে একটা সন্তান দিয়ে যাও। 

শুনে নাফিস হেসেই অস্থির হলো, বলল—তোমার স্বামী দেশের বাইরে, আর তুমি এখন কনসিভ করার কথা ভাবছ! হাহাহাহা।

ওটা নিয়ে তোমার ভাবতে হবে না। আমি বোকা নাকি? আগামী মাসে আমিন আসছে। তুমি দেবে কি না বলো। 

না, দেব না।

কেন দেবে না? ভালোবাসো না আমাকে?

বাসি। কিন্তু তুমি চলে যাবে, অন্য কাউকে ভালোবাসবে, এবং আমাকে ভুলে যাবে, যেমন ভুলে গেছ আমাদের প্রেমময় দিনগুলোর কথা। এটা স্বাভাবিক, এটাই নিয়ম। বিস্মৃতি অনিবার্য এবং মঙ্গলজনক। মানুষ ভুলে যেতে পারে বলেই বেঁচে থাকে, নইলে স্মৃতির ভারে আত্মহত্যা করত। আমি তোমাকে স্মৃতির বোঝা উপহার দিতে চাই না, স্মৃতির ভার বয়ে বেড়ানোর দায় দিতে চাই না। সন্তানটি রয়ে গেলে তোমাকে আজীবন আমার স্মৃতির দায় বয়ে বেড়াতে হবে। তুমি আর কোনোদিন প্রেমে পড়তে পারবে না...

ওটাই ছিল নাফিসের সঙ্গে তার শেষ কথপোকথন। সূচি বুঝতে পারেনি, নাফিস আসলে নিজের মর্যাদা রক্ষা করার সব ব্যবস্থাই তৈরি করছিল, এবং সেটি করার জন্য সূচির কাছ থেকে দূরে সরে যাবার কোনো বিকল্প ছিল না তার। কয়েকদিনের মধ্যেই সে শুনতে পেলো—নাফিস চাকরি ছেড়ে দিচ্ছে, সম্ভবত অন্য কোথাও জয়েন করছে, কোথায় তা বলেনি কাউকে। চলে যাবার সময় কুশল বিনিময় করল নাফিস যথার্থ করপোরেট ভঙ্গিতে, কেতাদুরস্ত কায়দায়। আর কিছুদিনের ভেতরে সূচি টের পেলো— নাফিস আসলে সব জায়গা থেকেই চলে গিয়েছে। ফোন নম্বর বন্ধ, ফেসবুক ইনঅ্যাক্টিভ, ই-মেইলেও সাড়াহীন।

এক তীব্র চরাচরব্যাপী হাহাকার ও শূন্যতা সূচির জীবনকে ঘিরে ধরল। তার এই প্রস্থানই সূচিকে বুঝিয়ে দিল— নাফিসের স্মৃতির ভার তাকে সারাজীবনই বয়ে বেড়াতে হবে।