বৃহস্পতিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২২

কাল্পনিক প্রেম রহস্য


 কি খুঁজছো - প্রেমে, রহস্যে,

রক্তপাতে ?

ওখানে নেই; সত্যি বলছি নেই। ভুল


করছো - ওটা ফুল নয় ; বুলেট। আরে আরে!

এটা কবিতা নয়; হাহাকার। তোমাকে

বুঝি সুনীলের মত নীরা নেশায়

পেয়েছে?

ভাবতে পারো নীলা! কতটা

ভালোবেসে, প্রেম ঠেসে সুনীল বাবু

সে লাইন গুলো লিখেছিলেন? 

এই হাত ছুঁয়েছে নীলার মুখ আমি কি এ

হাতে কোন পাপ করতে পারি?

আচ্ছা নীলা :

আমি কি কখনো তোমার হাতে হাত

রাখিনি?

বুকে মাথা, ওষ্ঠে চুম্বন - আঁকিনি?

ভালোবাসিনি?

তবে তুমি ক্যামন করে অন্য কারো হাতে

হাত রাখো!

উড়ে উড়ে ঘুরেঘুরে মাতাল হাওয়ায়

উষ্ণতার ভাগবাটোয়ারা করো!

কোথায় ঝরে যাও পোকায় খাওয়া

ফলের মত!

একদিন এসব ভেবে ভীষন কান্না

পেয়েছিলো আমার - দুঃখ গুলো

অকস্মাৎ উচ্চস্বরে চিৎকার করে

উঠেছিলো।

সেদিন বহুবার আমি আমাকে প্রশ্ন

করেছিলাম।

কেনো এমন হয়! কেনো? কেনো এমন হয়!

আমার নিঃসঙ্গ বিকেল, 

নিঃসঙ্গ রাত, আর হাওয়ারা জানে

অবোধ শিশুর মত এসব দুঃখ গুলো ভেঙে

পরে কখন, কোথায়, কার নামে। 

তখন মূহুর্তেই আমি কলম গুঁজে লিখে ফেলি

অস্তিত্ব অস্বীকারে অনস্তিত্তের

ছটফটানি।আ

লিখে ফেলি যেকোন কিছু; এমন কিছু -

এমন শক্ত কিছু, শান্ত কিছু, এমন সত্য কিছু!

যাক - আর খুঁজোনা। পাবেনা সুখে

স্বপ্নে উল্লাসে; আমি আর থাকিনা।

তারচেয়ে বরং তুমি অভিমান শেখো;

নিজস্ব একটা নদী গড়ে নৌকা ভাসাও

নিরুদ্দেশে।

সেখানে পাবে, জলে, ঝড়ে, ফেনিল

ঢেউয়ে। 

সন্ধ্যায় যেসব পাখিরা ঘরে ফেরেনা

তাদের দিকে খেয়াল রেখো দুপুরের

রোদে তৃষ্ণার্ত চিলের দিকে, বিষন্ন

আঁধারে কোন রাতচোরা পাখি উড়ে

গেলে,

তাকে ডেকে একটা আলোকিত

বিকেল ধরিয়ে দিও চোখে। 

আজকাল আমি সেখানেই থাকি 

আকাশ দেখি

অমোঘ মৃত্যুর কাছাকাছি, 

নিষ্ঠুর সময়

শুয়ে শুয়ে ভয় দেখি হাতড়ে!

দেখি পাশাপাশি দাড়িয়ে থাকা

কিছু সত্যি আর মিথ্যে - নক্ষত্র আর

কুয়াশা, ভালবাসা আর নীলা, অরণ্য

আর....... আর....... আর...... ওটা কে! চিনতে

পারিনা।

সোমবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২২

বাস্তববাদী


আমি কেমন যেন হয়ে গেছি, এখন লিখতে ইচ্ছা হয় না। লিখার অনুভুতি গুলো হারিয়ে যাচ্ছে। ভর দুপুরের তপ্ত পিচ ঢালা পথ পেরিয়ে ফিরে এসে কেন আমি লিখছি? আমি নিঃশব্দ বয়ে চলি। আমাকে কেউ বোঝে না, জানে না। আমাকে কেউ জানেনা, একটুও না। আমার শব্দ আর অনুভূতি বুঝতেও পারে না। সবার মাঝে থেকেও আমি নেই। এক সময় হৃদয়ের চেপে রাখা আর্তনাদ গুলোকে শব্দ দিতাম, লোকে তাও বিরক্ত হতো বলে শেষে লেখাই থামিয়ে দিয়েছি। আমি হতাশ হই প্রায়ই, তখন পাথরের মত বসে থাকি। অথবা দু’হাতের আঙ্গুল গুলো একে অপরের মাঝে প্রবেশ করিয়ে সময় ক্ষেপন করি। আঙ্গুল গুলো প্রবলভাবে অবাধ্য হতে চায় তবু আমি নির্বিকার হতে চাই।


কী হবে লিখে? অথবা, কী_বা হবে না লিখে? কিছুই হবে না। আমি তো জানি, এই শহরের অন্য সবার মতই আমিও একদিন টুপ করে চলে যাব। অনন্তের জগতে, অজানা জগতে। আমি প্রায়ই নিঃশ্বাস নিই বড় করে, সেই-ই তো পথের শেষ। চলে যাব বলে যখন ভাবি, খারাপ লাগে। মনে হয়, কারো নামে ভুল কথা বলে ফেলেছি কিনা। আমি থাকব না, তখন তাদের হৃদয়ের ক্ষত গুলো আমি মুছে দিতে পারব না।


নইলে আমার এই বেঁচে থাকা, এই প্রতি দিনের নিঃশ্বাস আমার অনেক গুলো দীর্ঘশ্বাসের সমষ্টি। কেউ আমাকে তাচ্ছিল্য করে, কেউ আমাকে খোঁটা দেয়, শারীরিক- মানশিক যন্ত্রণা গুলো আমাকে কাবু করে ফেলে। আমি নির্বিকার বেঁচে থাকি। মাঝে মাঝে আমার জড়তা বড্ড বেশি হয়ে যায়। কেউ আমাকে ‘বাস্তববাদী’ হতে বলে, কেউ বলে কল্পনার ‘রোমান্টিকতা’ ফেলে বাস্তবে পা দিতে। অথচ, আমি একজন মানুষ যে শুধু অনুভব করি দৃষ্টি ছাড়িয়ে একটু বেশি। বাস্তববাদীদের বাস্তব চোখের চাইতে বড় বাস্তবতা দেখতে পাই। স্বাভাবিকতাকে রোমান্টিক হিসেবে যারা ভাবে তার চাইতে বেশি স্বাভাবিক আমি। আমি আমার এই চোখ নিয়ে বড্ড বিব্রত। কেনই বা এই অনুভূতি আর দৃষ্টি, কেনই এই অসহায় নিস্পৃহা। আমি নিয়ত তাদের সাথেই যুদ্ধ করি। অনেকটা অন্যদিকে তাকিয়ে কাজ করার মতন। আমি আছি, আমি নেই। আমি না থাকার মতই।


কী হবে আমি যদি অন্য সবার মত না হই...? কী হবে যেমন করেই হোক পেরিয়ে যাই এই একটি জীবন। কে সফল হয় ?  চলে যাওয়াই সব চাইতে বড় বাস্তব।  আমি কখনই ভুলতে পারিনা এগুলো কিছুই আমার নয়। আমার এই শব্দ গুলো হয়ত রয়ে যাবে যেদিন আমি থাকব না। কেউ হয়ত পড়বে আমার কথা, তখন আমি থাকব না। তারা জানবে, আমার হৃদয়ে অনুভূতি ছিলো, যেমনি তাদের আছে। আমি নেই, আমি বাস্তব পৃথিবীতে চলে গেছি। যোগ্যতা বেশি ছিলনা আমার, তবু আমি বেঁচে ছিলাম। আমার ক্ষুদ্রতার ভারে আমি নুয়ে ছিলাম জীবনভর, তবু ছেড়ে দিইনি কিছু। তবে অবাক লাগে, আমার ব্যক্তিগত সীমাবদ্ধতার কারণে যতটা না আঘাত পেয়েছি, তার চাইতে বেশি পেয়েছি আমার ভিন্নতার কারণে।


লিখতে ইচ্ছা হয় না আর, ক্লান্ত লাগে। ক্লান্ত লাগে নগর জীবন। ক্লান্ত লাগে এই তপ্ত দুপুর, ক্লান্ত লাগে অনুভুতি গুলো । জানি, আমি লিখলেও কিছু হবেনা, না লিখলেও হবে না। ঝরে যাওয়া বৃষ্টির জলধারা, কচু পাতার উপরে পানির ফোঁটা, ভেজা কাক, ভেজা রাস্তায় ছুটে যাওয়া বৃষ্টিস্নাত শিশুর দৌড়ে চলা — এই দৃশ্যগুলো আমাকে আগের মত মুগ্ধ করে না। আমি কি মরে যাচ্ছি...? আমি কি মরেই গেছি ইতো মধ্যে..? মৃত আত্মাকে নিয়ে আমি আর ভাবিনা। আমি আর অপেক্ষার প্রহর গুণিনা। বেঁচে থাকাই আমার কাছে অদ্ভুত এক উত্তেজনা। এই নিঃশ্বাস, এই বাতাস, এই আলো, এই  তপ্ত রোদ সবই আমার বেঁচে থাকার প্রাপ্তি।  এত টুকুই বা পায় ক’জনা..??

শনিবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২২

দ্বৈত সত্ত্বার কবিতা

 কি খুঁজছো - প্রেমে, রহস্যে,

রক্তপাতে ?

ওখানে নেই; সত্যি বলছি নেই। ভুল

করছো - ওটা ফুল নয় ; বুলেট। আরে আরে!

এটা কবিতা নয়; হাহাকার। তোমাকে

বুঝি সুনীলের মত নীরা নেশায়

পেয়েছে

ভাবতে পারো অরণ্য! কতটা

ভালোবেসে, প্রেম ঠেসে সুনীল বাবু

সে লাইন গুলো লিখেছিলেন -

এই হাত ছুঁয়েছে নীরার মুখ আমি কি এ

হাতে কোন পাপ করতে পারি?

আচ্ছা অরণ্য ;

আমি কি কখনো তোমার হাতে হাত

রাখিনি?

বুকে মাথা, ওষ্ঠে চুম্বন - আঁকিনি?

ভালোবাসিনি?

তবে তুমি ক্যামন করে কারো হাতে

হাত রাখো!

উড়ে উড়ে ঘুরেঘুরে মাতাল হাওয়ায়

উষ্ণতার ভাগবাটোয়ারা করো!

কোথায় ঝরে যাও পোকায় খাওয়া

ফলের মত!

একদিন এসব ভেবে ভীষন কান্না

পেয়েছিলো আমার - দুঃখ গুলো

অকস্মাৎ উচ্চস্বরে চিৎকার করে

উঠেছিলো।

সেদিন বহুবার আমি আমাকে প্রশ্ন

করেছি

কেনো এমন হয়! কেনো? কেনো এমন হয়!

আমার নিঃসঙ্গ বিকেল, নিঃসঙ্গ

রাত, আর হাওয়ারা জানে

অবোধ শিশুর মত এসব দুঃখ গুলো ভেঙে

পরে কখন, কোথায়, কার নামে। তখন

মূহুর্তেই আমি কলম গুঁজে লিখে ফেলি

অস্তিত্ব অস্বীকারে অনস্তিত্তের

ছটফটানি

লিখে ফেলি যেকোন কিছু; এমন কিছু -

এমন শক্ত কিছু, শান্ত কিছু, এমন সত্য কিছু!

যাক - আর খুঁজোনা। পাবেনা সুখে

স্বপ্নে উল্লাসে; আমি আর থাকিনা।

তারচেয়ে বরং তুমি অভিমান শেখো;

নিজস্ব একটা নদী গড়ে নৌকা ভাসাও

নিরুদ্দেশে।

সেখানে পাবে, জলে, ঝড়ে, ফেনিল

ঢেউয়ে -

সন্ধ্যায় যেসব পাখিরা ঘরে ফেরেনা

তাদের দিকে খেয়াল রেখো দুপুরের

রোদে তৃষ্ণার্ত চিলের দিকে; বিষন্ন

আঁধারে কোন রাতচোরা পাখি উড়ে

গেলে

তাকে ডেকে একটা আলোকিত

বিকেল ধরিয়ে দিও চোখে। আজকাল

আমি সেখানেই থাকি - আকাশ দেখি

অমোঘ মৃত্যুর কাছাকাছি নিষ্ঠুর সময়

শুয়ে শুয়ে ভয় দেখি হাতড়ে!

দেখি পাশাপাশি দাড়িয়ে থাকা

কিছু সত্যি আর মিথ্যে - নক্ষত্র আর

কুয়াশা, ভালবাসা আর নীরা, অরণ্য

আর....... আর....... আর...... ওটা কে! চিনতে

পারিনা।

শুক্রবার, ২২ এপ্রিল, ২০২২

দ্বৈত সত্ত্বা

 

#দ্বৈত_সত্ত্বা
একমাত্র পুত্রের মাথার কাছে উদ্বিগ্ন হয়ে বসে আছেন মা, আফরোজা রহিমান। মুখ বিবর্ণ, ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট।
মা তুমি কি জান আমার অসুখের কারণ কি?
গভীর আবেগ নিয়ে ছেলের দিকে তাকালেন। কন্ঠ যথাসম্ভব স্বাভাবিক রেখে বললেন, তুই না বলল জানব কি করে রে বাবা?
মা, আমার মনে হয় তুমি জান। কিন্তু মিথ্যে বলছ। কেউ মিথ্যে বললে তাকে আমার দেখতে ইচ্ছে করে না। তোমাকেও দেখতে ইচ্ছে করছে না। তুমি একটু বাহির থেকে ঘুরে এস। আমার মন শান্ত হলে তারপর আসবে। আর যাওয়ার সময় তানহাকে একটু ডেকে দিবে।
তানহা আবার কখন এল?
আবার তুমি একই কাজ করছ মা। তানহা সহ কিছু ছেড়েছুএএ এসেছে এটা তুমি দেখেছ, কিন্তু ইচ্ছে করে ওকে বাইরে দাঁড়িয়ে রেখেছ। কারণ ওকে অপমান করতে তোমার ভাল লাগে। তুমি ওকে পছন্দ করো না।
তুই এসব কি বলছিস?
আমি ঠিক ই বলছি, কথা না বাড়িয়ে যাও।
হাত ভর্তি নীলকন্ঠ ফুল নিয়ে  প্রবেশ করল। মুখে উচ্ছ্বাস, যেন রাজ্য জয় করে ফিরেছে। আর মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে না, রোগী দেখতে এসেছে। দেখে মনে হচ্ছে কাউকে সংবর্ধনা দিতে এসেছে যেন। এই অদ্ভুত, পাগলী মহিলা মানুষটাকে আমার কেন যে এত ভাল লাগে!!
মানুষ রোগী দেখতে গোলাপ কিংবা রজনীগন্ধা নিয়ে আসে। আর নিয়ে এসেছেন নীককন্ঠ ফুল!!
অন্য কারও জন্য হলে তাই আনতাম। নীলকন্ঠ ফুল তোমারনখুব পছন্দের,নতুমি আমাকে দেখলেই তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠ, তাই নীলকন্ঠ  ফুল আনলাম। নীলকন্ঠ ফুল হাতে রেগে থাকা কষ্টকর।
অদ্ভুত যুক্তি শুনে হেসে উঠলাম আমি।
অস্ফুট কন্ঠে বলল, কি জন্য জ্বলে উঠি তা কি কখনও বোঝার চেষ্টা করেছেন?
কিছু বললে?
না।
শরীরের কি অবস্থা?
ঠাশ-ঠুশ মরে যেতে পারি।
ঠাশ-ঠুশ করে মানুষ মরে নাকি?
আমি মরে যেতে পারি। মরে গেলে অভিধান থেকে সুন্দর শব্দ চয়ন করে আমাকে নিয়ে গল্প/কবিতা লিখবে। তোমার কোন গল্পে,কবিতায় তো আমার স্থান নেই। এটা পারবে তো? নাকি তাও পারবে না?
পারব। পারব বলে অবাক চোখে তাকিয়ে তানহা। আজকের তানহারর সাথে অন্যদিনের তানহার কোন মিল খুঁজে পাচ্ছে না।
তানহা হাসছে হাসছে। এই হাসি আমি শিপনকে বিভ্রান্ত করতে পারার। মাঝে মাঝে এই কাজ করে এক ধরণের আনন্দ পায় তানহা।
আপনার লেখালেখির কি খবর?
চলছে, চেষ্টা করছি
শুধুই চলছে?
হুম, কিন্তু কাজ হচ্ছে না।
কোন প্রকাশক বই-টই বের করতে রাজি হচ্ছে না?
তুমি সবসময় আমাকে ইনসাল্ট করে মজা পাও তাই না?
এতে তো আপনার কষ্ট পেলে চলবে না। আপনার বড় হতে হবে অনেক বড়, মহৎ।
আপনাকে একটা তথ্য দেই, একজন লেখক কখন স্থবির হয়ে যায় জানেন?
জানিনা, কখন?
যখন লেখক একজন নির্দিষ্ট নারীর চরণ তলে তার সব স্বপ্ন লুটিয়ে দেয়। কিন্তু স্বপ্ন ব্যক্ত করতে পারে না, বাস্তবায়নও করতে পারে না।
এ কথা তোমাকে কে বলেছে? আর এসব আমাকে বলছ কেন?
এমনি, কোন কারণ নেই।
জানালা দিয়ে বাইরে একবার চোখ বুলিয়ে নিলাম আমি। রাত ঘনিয়ে আসছে।
আমার যেতে হবে।
এখনই যাবেন, আরেকটু থাকুন। কিছুক্ষণ ভেবে বলল, আচ্ছা যান। মায়ার বাঁধনে আটকা পড়তে পারেন। আপনার তো আবার আত্ন-সম্মান বোধ প্রবল। আটকা পড়লে চলবে না। আবহাওয়া খারাপ, ঝড়বৃষ্টি হতে পারে। তবে তাতে আপনার কোন অসুবিধা হবে না। এই আবহাওয়ায় সোদা মাটির গন্ধ পাওয়া যায়।
যাই
শুনুন। দেখি আমার দিকে একটু তাকান
শান্তি নিকেতনী ঝোলাটা ভাল হয়েছে, দাড়ি আর চুল একটু বড় করলেই হবে। টাকাও বাঁচবে, ভাবও বাড়বে। আর...আর একটা জিনিস লাগবে।
কি?
সেটা হল কবিতা কিংবা গল্প লেখার সুন্দর একটা ডায়েরি। যেটা ঝোলা থেকে উঁকি দিয়ে আপনার পরিচয় দেবে। আপনি একজন সাহিত্যিক। আমি দিলে আপনি নিবেন তো? আর নিলেও ব্যবহার করবেন তো?
আমি কি কখনও না করেছি তোমাকে?
নাহ, ভেবেছিলাম আপনি খুব সুন্দর কোন উত্তর দিবেন। যেটা শুনে আমি স্তব্ধ হয়ে যাব, কিছুক্ষণ ভাবব। গভীর আবেগে চোখে পানি চলে আসবে। কিন্তু সেরকম কিছুই হল না। আপনি সস্তাদরের কিছু একটা।
এটা তো আমি জানি, বারবার মনে করিয়ে দেয়ার দরকার নেই।
মুখে মেকি হাসি ফুটিয়ে তানহা বলল, আচ্ছা যান। আমার মাথা ধরেছে, কখন কি বলি ঠিক নেই। কিছু মনে করবেন না। ও ভাল কথা, যাওয়ার সময় চাঁদের আলো খেতে খেতে যাবেন। সাহিত্য প্রতিভা বৃদ্ধি পাবে। অবশ্য এই আবহাওয়ায় চাঁদের আলো পাবেন কিনা সন্দেহ আছে। আর একটা কথা, যদি কোনদিন সুবুদ্ধি হয় তাহলে এসব ছেড়ে চাকরির চেষ্টা করবেন।
তানহার মনটা হঠাৎ করে খারাপ হয়ে যায়। রাস্তার দিকে তাকিয়ে রইল। মুখে বিষণ্ণতার ছাপ। সেই বিষণ্ণতার মাঝে কেমন যেন একটা অমার্জিত ক্লান্তির ছোঁয়া। কি বলতে গিয়ে কি বলল!! এই মানুষটাকে দেখলেই তার কথা এলোমেলো হয়ে যায়। ভেবেছিল আজ অন্তত কোন কটু কথা বলবে না। সুন্দর সুন্দর কথা বলবে। সে ভেবে রাখে এক আর হয় আরেক। কি কারণে আমার প্রতি তার এত ক্ষোভ কে জানে!!
পিচঢালা পথে পা বাড়ায় আমি। গভীর রাত যে কোন গল্পের প্লট তৈরির জন্য খুবই ভাল। কিন্তু এই রাতকে ভয় পায় আমি। এ সময় তার মন বিচলিত হয়ে পড়ে, সব কিছু চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে থাকে। দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে স্বত্বা। এক সত্ত্বা চায় স্বপ্নগুলো তানহার চরণ তলে লুটিয়ে দিয়ে নাগরিক জীবনের ছায়াতলে আশ্রয় নিতে। পরক্ষনেই আরেক সত্ত্বা হুংকার ছাড়ে। এই জীবনকেই গল্পের নতুন প্লট হিসেবে জোগান দেয়। পোড়া ইটের ন্যায় পুড়ে পুড়ে, খাঁটি হয়ে সত্ত্বাকে পূর্ণ রূপ দেয়ার আহ্বান জানায়। হায়, মধ্যবিত্ত মন!! কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে উপরে উঠতে সাহস পায় না, কিন্তু সবসময় নিচে তলিয়ে যাওয়ার চিন্তা তাড়া করে ফেড়ে।

© A R Shipon


বৃহস্পতিবার, ৭ এপ্রিল, ২০২২

নীলা

 অথচ কি বোকা আমি, কোনও উত্তর চাইনি।


প্রশ্নও করিনি কোনও।


বলে গ্যাছি কেবোল আমার কথাটাই।


জানতে চাইনি তুমি কি ভাবছো?


একটা যুগের স্পষ্ট ব্যবধান রেখা আমাদের মাঝামাঝি,


মুছে দিচ্ছে অজান্তেই আমার হাতের রেখায় তোমায়


নিয়ে হেটে বেড়ানোর ইচ্ছে।


নীলা, আমি হয়ত বোকাই থাকবো আমৃত্যু।


আমি হিসাব বিজ্ঞান কিংবা গাণিতিক সংস্করণে কাচা বড্ড।


আমি তোমাকে বিব্রত করে ফেলেছি হয়ত, বেশীই।


তোমাকে নিয়ে হয়ত লিখবো, হয়ত চোখের পাতায় আঁকবো স্বপ্নিল স্থাপত্য।


হয়ত দ্যাখা হবেনা আমাদের, কোথাও।


বারবার এড়িয়ে যাবে তুমি, আর আমি সব বুঝে মাঝেমাঝে


হুটহাট চলে আসবো ধানমন্ডি লেকে।


এভাবেই নীলা কাটবে বহুকাল, স্পর্শহীন ভালোবাসায়।


তুমি হয়ত  জানবেই না তোমার গন্ধ আমি পাই,


তোমার গন্ধ আমি পাই, প্রতিদিনকার বাতাসে।


যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন দেয়ালে হয়ত দেখবে কোনও অজ্ঞাত মৃত্যু খবর,


বুকের ভেতর একটা কান্না চেপে আসবে হয়ত,


চোখের পাতায় হয়ত ঘুচে যেতে পারে ব্যবধান,


হয়ত সেদিন তুলে নেবে মুঠোফোন।


ওপার থেকে এক অচেনা কণ্ঠস্বর  বলে দেবে


মৃত্যুটাও আমার জন্মের মতন একা।


আচ্ছা সেদিন, সেদিন কি তুমি আমার পছন্দের 

নীল শাড়ী, চোখে কাজল আর কপালে নিকষকালো  টিপ পড়বে?


আচ্ছা সেদিন, সেদিন কি তুমি কাঁদবে একবার?


সেদিন কি এক পশলা বৃষ্টি মুছে দেবে তোমার আমার এক যুগের ব্যবধান?