বুধবার, ৩ মার্চ, ২০২১

প্রেতাত্মা রহস্য

 #প্রেতাত্মা_রহস্য

প্রেতাত্মার লেখা গল্প - written by A R Shipon 


সকালে ঘুম থেকে উঠে চা খেতে খেতে পত্রিকা পড়া শিপনের প্রতিদিনের অভ্যাস । আজও চা খেতে খেতে পত্রিকা পড়ছে । হটাৎ শিপনের মুখ কালো হয়ে উঠলো । খবরের কাগজে বড় করে ছাপা হয়েছে , বরিশালের সরুপকাঠি গ্রামের জমিদার বাড়ীতে পর পর ৬ দিনে ৬ টি লাশ পাওয়া গেছে । জ়মিদার বাড়ীটি ভৌতিক বাড়ী নামে পরিচিত। লাশের শরীরে নখের আঁচর এর দাগ ছারা আর কোন চিহ্ন নেই । এবং লাশগুলো রক্তশুন্য । গ্রামের লোক জন বলছে , জমিদার বাড়ীর প্রেতাত্মারা কোন কারনে রেগে এই অঘটন ঘটাচ্ছে । এর কিছুদিন আগেও এখানে এই রকম ঘটনা ঘটেছে । অনেকে এখানে রাতে প্রেতাত্মাদের দেখেছে ।

পরেরদিন সকালে পত্রিকা আসতে দেরি হয়েছে । তাই চা খেতে খেতে ট্যাব টা হাতে নিয়ে ফেসবুকে ঢুকে শিপন । নটিফিকেশন চেক করার সময় শিপনের চোখে পড়ল সাদিয়া তাকে ১টা ছবি ট্যাগ করেছে । ১টা লাশের ছবি , সাথে হ্যাস ট্যাগে লেখা সরুপকাঠির জমিদারবাড়ীর প্রেতাত্মাদের হাতে পর পর ৭ দিনে ৭ লাশ । আতংকে কাটছে গ্রাম বাসির দিন কাল। আমারও খুব ভয় লাগছে ।

তারপর ই ফোন দেই সাদিয়াকে শিপন। সাদিয়ার কাছে সব কথা শুনে মিরাজ , নজরুল , জুয়েল এর সাথে কথা বলে । ওরা আজ রাতে বরিশাল যাবে। ও বলাই তো হয়নি শিপন , মিরাজ , সাকিল , জুয়েল , নজরুল, ইউসুফ ১টা ভৌতিক প্রাইভেট ডিটেক্টিভ ফার্ম চালায় । তবে এখন পর্যন্ত কোন সফল অপারেশন তারা চালাতে পারেনি । এবং জীবনে ভূতও দেখিনি তারা।

ফোনে সাদিয়াকে সব বলা ছিল । সাদিয়া শিপনের বন্ধু , সে বরিশাল মেডিকেল কলেজে পরে । শিপনরা সাদিয়াদের বাসায় উঠবে । 

সকাল ৮টার দিক ওরা সাদিয়াদের বাসায় এসে পৌছে । সাদিয়ার মা ওদের জন্য অনেক খাবারের আয়োজন করেছে। মহিলাটি সত্যি দারুন রান্না করছে , দুপুরের খাওয়া শেষে বলল মিরাজ। রেষ্ট নিয়ে ওরা বিকেলে সাদিয়াকে নিয়ে বের হলো জমিদার বাড়ি দেখতে। 

বাড়িটা দেখতে সত্যি ই খুব ভয়ংকর । অনেক পুরোনো দালান । প্রশাসন বাড়ির ভিতরটা দেখতে দিল না । দূর থেকে দেখে শিপনের দেখে মনে হলো সত্যি খুব ভয়ানক কিছু আছে এই বাড়িতে । আজ রাতে শিপন সহ বন্ধুরা এখানে আসবে এবং সারা রাত এখানে থাকবে । 

রাতের খাবার শেষ করে ১০টার সময় আসলো। বাড়ির চারপাশ ঘুরে দেখলো ওরা। তেমন কিছুই দেখতে পেল না । রাত ৩ টার দিকে সামান্য একটু শব্দ পেয়েছিল। ঘরের টিন এ কিছু ফেলে দিলে যে রকম শব্দ হয় সেই শব্দ। তাছারা আর কিছুই মনে হলো না । এভাবে ভোর ৫ টা পর্যন্ত ছিল ওরা ঐখানে। তারপর আযানের পর ফিরে এলো । বাসায় এসে ঘুম। ১১টার পর একেক জনের ঘুম ভাঙলো ওদের । সাদিয়া চা দেয় আর বলে কাল কি পেলে তোমরা?

শিপন ঃ কিছুই পাইনি , শুধু একটু লোহা বারি দিলে যে শব্দ হয় সেই শব্দ ।

সাদিয়া ঃ দেখলাতো প্রেতাত্মারা তোমাদের ধোকা দিয়ে ঠিকই আরো একজন মানুষ মেরে রেখে গেল । আবার চিঠিও দিয়ে গেছে ।

শিপন ঃ চিঠি ? কি লেখা চিঠিতে ?

সাদিয়া ঃ চিঠিতে লেখা আগামি এক সপ্তাহ প্রেতাত্মাদের রাজা মানুষের রক্ত শুধু খাবেই না সাথে সাথে সে রক্ত দিয়ে গোসল ও করবে। তাই সে গ্রামের মাদবর কে উদ্দেশ্যে বলেছে তাকে প্রতিদিন ২টা মানুষ দিতে হবে । 

( শিপন , মাহাদি , নজরুল ওরা একসাথে হেসে উঠে )

সাদিয়া ঃ আজকে যার লাশ পাওয়া গেছে সে একজন আফ্রিকান , তার শরীরেও কোন রক্ত ছিল না। আর প্রেতাত্মাদের চিঠি পরে সবাই গ্রাম ছেরে পালাচ্ছে । 

শিপন ঃ আফ্রিকান এখানে আসলো কিভাবে ? তাহলে তো লাশটা দেখে আসতে হয় । 

নাস্তা করার সময় সাকিল পেপাড় পরে বলছে কি নতুন এক মাদকদ্রব্য আসছে যেটা নাকি ভয়ঙ্কর ক্ষতিকারক । অল্পদিনেই ধংস করে দিতে পারে যুব সমাজ কে । এই নিয়ে কথা চলছে ওদের মাঝে ।

নাস্তা সেরে ওরা মর্গে যায় লাশ দেখতে , লাশ দেখে যেন শিপন আকাশ থেকে পরলো । হ্যা শিপন এই লোকটাকে চিনে , সে একজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ । সে বিভিন্ন ধরনের মাদক দ্রব্য আবিস্কার করে যুব সমাজ কে ধংস করছে । কিন্তু সে কিভাবে এখানে আসল । সে কাউকে কিছু বলল না । তারপর তারা চলে গেল সবাই।

বিকেলে নাস্তা করে শিপন আর সাদিয়া নদীর পাসে হাটতে গেছে । ২জন হাটছে আর কথা বলছে। শিপন সাদিয়াকে বলল আমি আজ একা জমিদার বাড়ীতে যাবো, তুমি কাউকে বলবে না । হাটতে হাটতে নদির পাসে একটা নৌকার কাছে গিয়ে আসে তখন নৌকা থেকে এক পাগল এসে কাঁমর দেই সাদিয়াকে। তারপর তারা দৌড়ে চলে আসে । সাদিয়া ব্যাথায় কেঁদেই চলছে। তারপর বলে ওই পাগলটা ঐখানেই থাকে । ওর জন্য ঐ পাসে কেউ যেতেই পারে না , গেলে কামড় দেয় আর দৌড়ানি দেয় । 

রাতে শিপন একা একা যায় ঐখনে । এখন প্রায় রাত ১২ টা। ঘুরতে ঘুরতে হটাৎ জোরে শব্দ শুরু হয় । প্রচন্ড ঝোড়ো হাওয়ার শব্দ । কিন্তু কোথা থেকে আসছে। মাঝে মঝে প্রেতাত্মার হাসি। শিপন এবার জমিদার বাড়ীর আরো কাছে গেল । শব্দ টা বাড়ির নিচ থেকে আসছে । বাড়ির চারপাস ঘুরেও কোন শব্দের উৎস পেল না । হাটতে হাটতে হটাৎ শিপন দেখে ২টা প্রেতাত্মা নদীর পার থেকে আসতেছে , কি যেন টেনে নিয়ে আসতেছে ওরা । শিপন পাসে ১টা ঝোপে লুকিয়ে যায় । 

প্রেতাত্মারা এসে ১টা লাশ রেখে আবার নদীর দিকে যেতে থাকে । শিপনও ওদের পিছু পিছু যায় । প্রেতাত্মা গুলো নৌকাতে গিয়ে বসে । রাত প্রায় ৩ টা বাজে তখন ১টা ছোট লঞ্চ আসে নদীর পারে ওই পাগলের নৌকার কাছে । পাগল দৌড় দিয়ে লঞ্চ থেকে নামা মানুষটার কাছে গিয়ে কথা বলা শুরু করে । আর ওই ২টা প্রেতাত্মা পাগলের নৈকাটা সরিয়ে দেয় । 

শিপন হটাৎ মুচকি হাসলো , কারন সে এখন বেপারটা বুঝে গেছে । সে বিস্তারিত সব সাদিয়াকে এস,এম,এস করলো এবং বলল যে নজরুলদের নিয়ে যেন ওরা তারাতারি এখানে চলে আসে আর পুলিশকে নিয়ে আসে । 

শিপন ধিরে ধিরে নৌকার কাছে এগুতে থাকে। শিপন ভয় পেয়ে যায়, কে যেন ওর পিছনে হাত রেখেছে । পেছনে চেয়ে দেখে সাকিল । 

শাকিল ঃ আমি তোমার পিছে পিছে অনেক আগেই এসেছি। চলো আমরাও ভিতরে গিয়ে দেখি।

শিপন ঃ চলো পাগল টার ব্যবস্থা করি ।

তারপর সাকিল পিছন থেকে গিয়ে পাগল টার মুখ আটকে ফেলে । শিপন এসে পাগল এর শরিরের গামছা আর দড়ি দিয়ে পাগল কে বেঁধে ফেলে । 

এরপর তারা নিচে নামে । একটা অন্ধকার সুরঙ্গ পথ । পা টিপে টিপে ১০ মিনিট হাটার পর আলো দেখতে পায় । এক কোনাতে গিয়ে চুপ করে বসে দেখে। … জমিদার বাড়ির নিচের পাতাল ঘর পুরোটা ১টা ল্যাব এর মত বানিয়ে রেখেছে । 

১টা লাশ থেকে মেশিন দিয়ে রক্ত বের করে নিচ্ছে ……। ওদের কথা বার্তায় যতটুকু বুঝা গেল ওরা মরা মানুষের রক্ত দিয়ে কোন ওষুধ বানায়।

না ওরা ড্রাগস বানাচ্ছে বলে সাকিল। ওই দেখ ওই আফ্রিকান , যে কিনা গত বছর ভারতে ধরা পরেছিল। 

শিপন ঃ সাকিল তুই এখনই বাইরে যা , গিয়ে ওদের ফোন দে। তারাতারি পুলিশ নিয়ে আসতে বল । 

সাকিল তারপর চলে যায় ।

কিছুক্ষন পর পেছন থেকে ২টা প্রেতাত্মা শিপনকে ধরে ফেলে । শিপনকে ল্যাব এর ভিতর নিয়ে আসে । এনে এক আগত্বক এর সামনে ফেলে দেই

লোকটা হাসতে হাসতে বলে …

আগত্বক ঃ স্বাগতম আপনাকে আমাদের এই প্রেতাত্মার রাজ্যে । আপনাকে ধন্যবাদ আপনি যুব সমাজের আমোদের গবেষনার জন্য সেচ্ছায় রক্তদান করতে আসার জন্য । যাই হোক এই মেশিন টা তে ঢোকানোর পরপরই আপনি মারা যাবেন তারপর আপনার রক্ত নিয়ে ফেলে দিয়ে আসা হবে , আর সবাই বুঝবে যে আপনাকে প্রেতাত্মারা। হা হাহাহাহাহাহাহ

আর হ্যা মারা যাওয়ার আগে একবার প্রেতাত্মাদের দেখে নিন 

তারপর প্রেতাত্তারা তাদের মুখোস খুলে ফেল , এরা আফ্রিকা থেকে এসেছে , অনেক লম্বা আর কালো । আফ্রিকান শিপন কে জোর করে ধরে মেশিনে ঢুকাবে আর এই সময় শিপন ঝাটকা দিয়ে ১টা লোহা দিয়ে মেশিনটার কাচ ভেঙ্গে ফেলে আর এক আফ্রিকানের মাথায় আঘাত করে ……

তারপরই একজন পিছন থেকে এসে শিপনের পিঠে ছুরি ঢুকিয়ে দেয় । শিপনের চোখ আবছা হয়ে আসে , লুটিয়ে পরে সে । 

২ দিন পর জ্ঞ্যান ফিরে শিপনের ঢাকার হাসপাতালে। ওর পাসে মাহাদি , নজরুল , ইউসুফ , সাকিল আর সাদিয়াকে দেখতে পায় । সাদিয়া ওদের সাথে ঢাকায় এসেছে । 

শিপন জ্ঞ্যান হারানোর পরপরই সাকিল মাহাদিদের সাথে পুলিশ নিয়ে আসে এবং ওদের ধরিয়ে দেই । আর শিপনকে হাসপাতালে নিয়ে আসে ।

পরে পত্রিকায় আসে ওই লোকগুলো মানুষের রক্ত দিয়ে ড্রাগস বানিয়ে দেশে বিদেশে ছড়িয়ে দিত তরুনদের মাঝে । আর যে আফ্রিকান টার লাশ পাওয়া গেছিল সে ই এই ড্রাগসের আবিস্কারক । সে যেন আর নতুন কিছু আবিস্কার করে এই ব্যবসা নষ্ট করতে না পারে তাই তাকেও মেরে ফেলে। 

পত্রিকা পড়ে শিপন হাসে । তখন সাদিয়া শিপনে বলে হাসছো কেন ? 

শিপন বলে প্রেতাত্মার রহস্য শুনে হাসলাম। এই প্রেতাত্মা গুলো আমাকে মেরেই ফেলেছিল প্রায় …।।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Thank you for your participation .