বৃহস্পতিবার, ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

সর্ব্বনাশি, আমি কি তোকে ভালোবাসি ?

ইদানিং তোমার কথাগুলো বদলে যাচ্ছে, সেই পরিচিত গন্ধে আমার আর ঘুম আসে না । লুকানো নেশার মত না পাওয়ার কষ্ট তোমাকে এখন কুরে কুরে খাচ্ছে, তোমার কবিতায় স্থান পেয়েছে অবসাদ, মৃত্যু আর প্রিয়ার সহাবস্থান, কোনদিন প্রেমের কবিতা তো তুমি লেখোই না । : ঠিক বলেছিস তুই, দেখছিস না আমার দরজায় পোঁতা আছে কালের শেষ খুঁটিটা - দৌড়ে পেরিয়ে গেলেই সব অতীত, ভবিষ্যতের স্বপ্ন শেষ । জানিস, এখন আমার একমাত্র সঙ্গী নৈ:শব্দ, আমার সাথে কথা বলে, কষ্ট পেলে আমাকে ভোলায়, বলে এবার তাহলে "একলা একলা পথ চলা"। আমি তো কোনদিন বন্ধুত্বের দাবী রাখিনি, শুধু রাত্রির কাছে চেয়েছিলাম - একটা সুন্দর ঘুম আর পরিযায়ী পাখিদের কাছে একটা রঙীন স্বপ্ন; তবু কেন উচ্ছাসের নদী শুধু একটানা বয়ে যায় দু-পাড়ের ছায়াছবি স্থির-নির্বাক হয়ে যায় ? আর আমি, এখনও ঘড়ির কাঁটার লেজ ধরে প্রাণহীন চর হয়ে পড়ে আছি তার অপেক্ষায়। আজ সকালের ডাকে একলা হেঁটে এলো - ভালোবাসার সীলমোহরে জড়ানো একটা খাম; ভিতরে পেলাম ফেলে আসা অভিমানের মোড়কে শুকিয়ে যাওয়া একটা লাল গোলাপ, হয়তো কোনদিন তোমার আগের লেখাগুলোর মতই সতেজ ছিল, রাতের পাহারাদারের মতই চিৎকার করে বলতো সব ঝুট্ হ্যায়, সব ঝুট্, মুখোশের আড়ালেই যত মিল ... আর কতদিন তুষার ঢাকা তুঁষের আগুন হয়ে জ্বলবে তোমার সেই কলঙ্কিনী বিরহিনী ব্যাথা ? বসেই থাকি, ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরির বুকে কান পেতে - একটা হঠাৎ বিস্ফোরণ যদি হয়ে ওঠে কবিতা । : আজকাল তুই বড্ডো অবুঝ হয়ে উঠেছিস - বুঝতে পারছিস না, এ হলো নেশা, শুধু নেশা, সর্বনাশা মারিজুয়ানার মতো নেশায় বুঁদ, ত্রিশটা শ্রাবনেও না মরে বেঁচে থাকা বিরহী হৃদয়ের ক্লান্তি, যদি একটা শান্তির ঘুম ... আজো অসমাপ্ত একটা ছবি, পাতাবিহীন গাছে লাল পলাশ, নগ্ন প্রেম, দাঁড়িয়ে আছে একঠায়, ক্যানভাসের পিছনে উঁকিমারা আকাশটা যেন জীবনের ডাকে উঠে যাওয়া মানুষটার একটা পোড়ানো হৃদয় । আর আমি, সিগারেটের ছাইয়ের মতো বসে আছি সেই পোড়া অবয়ব নিয়ে, দমকা হাওয়ায় ঝরে পরার অপেক্ষায় ... বুঝলাম হারিয়ে যাওয়া কোন কিছুই ফিরে আসে না শরীরের নিঃশ্বাসের মতো হারিয়ে যায় চিরতরে। আজ আমার কোন কিছুর জন্য অপেক্ষা নেই, সবই সয়, উচ্ছাসে ভরা প্রানোজ্জল তোমার লেখাগুলোর জন্যেও নয় । কে জানে বিকেলের কাছে ঝলসে যাওয়া দুপুরের কান্না তোমার ছোঁয়ায় কাগুজে নৌকায় ভেসে আসবে কিনা আমার কাছে ... : আজকাল শব্দের আকাশেও সূর্য অস্ত যায় - মাঝে মাঝে রাত বাড়লে চিন্তাগুলো আটকে থাকে দুটো দাঁড়ির মাঝে, হয়তো শব্দ খুঁজে বেড়ায় ভাবাবেগে । চোখের সামনে দোল খেতে খেতে চলে যায় বর্ণমালা মগজে কারফিউ, বাউলের একতাড়ায় কেবল দেঁহাতি সুর, আঙ্গুলের মেরদন্ডে উতরে যায় মহাকালের পথচলা প্রেমের কবিতা সেখানে কোমরের ডেনিম থেকে অনেক দুর। বিকেলের সূর্যরেখার বেস্ট স্ট্রোকগুলো যেখানে বনের ফাঁকে ফাঁকে হামাগুড়ি দিয়ে নেমে এসেছে, কিম্বা মোটা গাছের গুঁড়িতে আলপিন দিয়ে লেখাটা যেখানে এখনো "তোমারে বেসেছি ভালো“ বলছে, কিচিমিচি শব্দে যেখানে পাখিরা গাইতে চাইছে ভালোবাসার গান, মনের আলেয়ার আলোতে বরং সেখানেই না হয় বেঁধে নিস নিজেকে, জুতোর ফিতেবাঁধা রোদচশমার স্মৃতিতে ... আমি না হয় ততদিন ভালোবাসার সেলাইমেশিনে বুনে যাবো বন্ধুত্বের নকশিকাঁথা, এফোঁড়-ওফোঁড় করে ফুটিয়ে তুলবো সৃষ্টি-অবসাদ-মৃত্যু আর নিঃসঙ্গতা, ঢেকে ফেলবো প্রথম প্রেমের লাশটা আমার কবিতা তোমাকে দিয়ে ... আজকাল তোমার চিঠি না পেলে ভালো লাগে না, বিকেলের পড়ন্ত লালচা রোদে পিঠ দিয়ে ... না, কারোর জন্য কিছু বসে থাকে না, আমিও থাকি না, সময়-স্রোত-ইচ্ছা-স্বপ্ন, আমি না চাইলেও যায় চলে । এখন আমি আধবোজা চোখে বেশ দেখতে পাই তুমি আর তোমার বিরহ কে, একদম পাশাপাশি; সময়ে-অসময়ে বুকফাটা যন্ত্রনা অস্থির করে আমাকে, বলে - সর্ব্বনাশি, আমি কি তোকে ভালোবাসি ? : ঝিমিয়ে পড়া সময়টা যে বড্ডো বেমানান আমার কাছে, কখন যে মনের ফাঁক-ফোকরে তুই ঢুকে যাস্ আর গোলাপ হয়ে লুকিয়ে পড়িস মনের বাগানে, আমি হিসেব রাখতে পারি না বলপেন আর কাগজে। শুয়ে শুয়ে তাই ভাবি - সময় মানেই এগিয়ে চলা পাহাড় যেমন মিশে যায় নীলে দুই বাহু প্রসারিত করে, দুর্গম খাদ বেয়ে যেমন গড়িয়ে নামে উন্মত্ত ঝর্না রূপের অঝোর ধারায় আমার সবকিছু তছনচ করে; জানিস পাগলী, সেই ঝর্ণার বুকের মাঝে আছে একটা কষ্ট জমা পাথর, সময়ের সাথে একদিন রাশি রাশি বালিকণা হয়ে ভেঙে পড়বে তোর চোখের কোনে, তখন নাহয় ফেলে দিস ঠিকানা না রেখে । তোমার চিঠিগুলো হয়তো একদিন সমস্ত সৌরভ বিলিয়ে স্মৃতি হয়ে যাবে । কে জানে তোমার কথা ভেবে তার আগেই আমিই হয়তো শেয হয়ে যাব কোনদিন, সেদিন ঠাঁই নেব তোমার লেখায়, সাদা ক্যানভাসটা হয়ে উঠবে রঙিন ... একটাই অনুরোধ, শেষের সেদিন যেন কালি-কলমের এই সম্পর্কটা অটুট থাকে, ইতি টানলেই তো সব স্মৃতি বিস্মৃতি হয়ে যাবে । : জানিস, ইদানিং আমি বড্ডো স্বপ্ন দেখি ... একটাও স্বপ্ন সত্যি হবে না জেনেও আমি সত্য গোপন করে মগ্ন থাকি জীবনের গল্পে, তোর ছলনার মন-ভোলানো রূপে উন্মাদ হয়ে এই আমি - সারাটা জীবন ঘুঙুর পায়ে যাচ্ছি নেচে; চারিদিকে বিকটাকার নৈশব্দের নীল আগুন, রূপ-রস-বর্ণ-গন্ধ সব অদৃশ্য, স্বপ্নের মরুভুমিতে আত্ম অনুভুতির অর্থহীন মেঘ শুধু উড়ে চলেছে, আর আমি অন্ধকারে একা, উদ্দেশ্যহীন বিষন্ন ছায়াতে ... সম্বিত ফিরেই দেখি তোর পাশে আমারই মত একটা কে? বন্ধু ভেবে তোর প্রগলভতা - আপন মনে ভেসে চলেছিস নদী-পাহাড়-অরণ্য ভালোবাসার কথায়, হাঁসছিস কাঁদছিস, ওটাই তো আমি, তোর ছায়া, যাকে তুই ভালোবেসেছিস; তুই হয়তো তোর ভালোবাসাকে ভুলে যেতেই পারিস, কিন্তু তোর ছায়া, চেষ্টা করে দেখবি দুরে সরিয়ে দিতে পারিস কিনা? তখন না হয় আমি প্রেমের কবিতা লিখতে গিয়ে প্রেমহীন অন্ধকারে হাবুডুবু খেয়ে সাঁতরে খুঁজবো ডাঙা ... মনের অন্ত:পুরে আমার এখন বিষাদের নৃত্যনাট্য দ্রিমিতাক মাদলের ছন্দে শুধু অতীতের পটভুমি; তোমার ছোঁয়ায় যদি বদলে যায় এ জীবন, অনুভবে যদি ফিরে পাই সে অমরত্ব, তুমি তো অধরা নও, শুধু প্রেমের শিহরণ বাঘবন্দি নিয়মে বাঁধা মানবীয় এ শরীর একটিবার ছুঁয়ে যাবে, করে যাবে সমর্পন। কোথায় হারিয়ে গেছে সেই লেখাগুলো, হয়েছে অন্তর্ধান তাকে কি ডেকে নিয়ে গেছে আজ অন্য কোনো অভিমান ... :পাগলী, অরণ্যের মাদকতা - সে ফেলে আসা পথে, কুড়িয়ে নেওয়া যত ঝরে পড়া শব্দফল জমিয়ে রেখেছি যত্ন করে কলমের খাঁজে, যদি কখনো ভাসিয়ে দেয় তোর চোখের জলে .... আজ শহরের নির্জন রাস্তায় হাঁটছে আমার সব ভুল মনের অন্তর্বাস ছুঁয়ে আছে জমে থাকা যত জল, প্রতিটি অঙ্গে আজ শুধু অপেক্ষা -- দূরের বিলাসী হে মহিয়সী, আমি যে তার সুদুরের পিয়াসী। জানি সব শেষ হয়ে গেছে অথবা হয়নি শুরু কিছু, জীবনের নিরর্থকতা প্রেমহীন থেকে অর্থবহ হয় শুধু; তবু তহবিলে গচ্ছিত রাখি সব স্মৃতি, বিদগ্ধ জোনাক -- কালো রাত শেষ, আবার শুরু হবে নতুন প্রেমের সকাল । সর্ব্বনাশি, আমি কি তোকে ভালোবাসি ?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Thank you for your participation .