বৃহস্পতিবার, ২ মার্চ, ২০১৭

শালিপুর চর


শালিপুর চর
(একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে)
লেখা ঃ MD Asadur Rahman (Shipon)


প্রমত্ত পদ্মা । তার মাঝে গরে উঠেছে ১টা চর । চর টা এখন ১টা গ্রাম নাম তার শালিপুর চর । জায়গাটা ফরিদপুরের ভিতর পরেছে । সবুজ গাছপালা আর আর মাঠ । কোণ মোটর চালিত যানবাহন নাই এই গ্রামে , নাই বিদ্যুৎ । চিকিৎসার ও কোন ব্যাবস্থা নাই । ১টা মসজিদ আর ১টা মন্দির আছে । নিরেট ১টা গ্রাম । কোণ ভুল ছুল নাই ।
অপুরুপ সোন্দর্যের গ্রাম এটা । ছোট ১টা মাঠের মত আছে সেখানে ছেলেমেয়েরা খেলে । ১টা বাজার আছে । আর আছে ছোট ১টা জঙ্গলের মত । তার পাসেই বাস করে তামান্না আর সানা । ছোট একটা ছনের ঘড় । এক অপার সৌন্দর্য দিয়ে বিধাতা ওদের সৃষ্টি করেছেন । কিন্তু কপালপোড়া ২জনে । বাবা মা কেউ নাই ওদের । ৬ বছর আগে মারা গেছে । আর রেখে গেছে অভাগীনি ২জন কে । তামান্না বড় ওর বয়স হবে ১৫ থেকে ১৬ আর সানার মাত্র ১১ বছর ।
সানা ঃ ঐ আফা । আন্ধার হইয়া গেলো তো কুপি জালা ।
তামান্না ঃ কেন তুই জালাতে পারিস না ?
সানা ঃ ডর লাগে ।
তামান্না ঃ কুপি জালাইতে কইলে তর ডর আর সারাদিন জঙ্গলে থাকস তখন ডর লাগে না ?
কথা গুলো বলতে বললে কুপি টা জালিয়ে দেয় তামান্না । আর আলোতে ফুটে উঠে তামান্নার মুখ । কি সুন্দর মেয়েটা । দুধে আলতা গায়ের রঙ । শরিরে ১টা ছেরা শাড়ী । আলোতে হেসে উঠে ২জন ।
সানা ঃ আফা তুই এতো ভালা কেন রে ।
তামান্না জরিয়ে ধরে সানাকে । তারপর গল্প শুরু করে দুই বোন ।
সানা ঃ আফা আজ কি রানছস রে ?
তামান্না ঃ কচু আর গাটী আলু ।
সানা ঃ আমরা প্রতিদিন কচু য়ার গাটী আলু খাই কেন রে?
তামান্না ঃ আমগো বাড়ির সামনে তো শুধু ঐ ২টাই হয় , তাই ।
সানা ঃ খুব ভাত খাইবার ইচ্ছা করে ।
তামান্নার চোখে জল গরিয়ে আসে । বোনটাকে অনেক দিন ভাত খাওয়াই তে পারে না । তামান্না আগে জমির মাদবরের বাড়ি কাজ করতো , বিনিময়ে ২জনরে ২বেলা খাইতে দিত । কিন্তু বুইরা ১টা বদ । বুইড়ার নজর পরছিল তামান্নার ভড়া যৌবন দেহে । বারবার কুপ্রস্তাব দিত তাই কাজ ছেরে চলে আসে ।
রাতে কচু আর গাটি খেয়ে খুমিয়ে পরে দুই বোণ । এভাবেই চলে ওদের দিন কাল ।
সানা ১টা মুরগি পালে । সে ঐটা নিয়েই সারাদিন খেলা করে । সানাও তামান্নার থেকে কম সুন্দরি না । এই অল্প বয়সেই যোবনের ছাপ পরা শুরু করেছে তার উপর । লাল রঙের ১টা শাড়ি পরে সারাদিন ঘুরে । জঙ্গলের ভিতরই মুরগীটা নিয়ে বেশি থাকে ।
তামান্না ঃ ঐ ছেমরি তুই যে হারাদিন জঙ্গলে জঙ্গলে ঘুরগুর করস তর ডর লাগে না । যদি শাপে কামর দেয় ?
সানা ঃ (হাসি দিয়ে) হ আমি তো শাপই খুজতে যাই । কামর খাইয়া মরপার চাই । মরলে তো সর্গে যামু । আর সর্গে তো ভাত খাইতে পামু ।
তামান্না ঃ যা মর তুই ।
সানা জঙ্গলে মুরগি নিয়ে খেলছিল । হটাৎ মুরগী টা হাত থেকে ছুটে দূরে পালিয়ে যায় । সানা দৌড়াতে থাকে পিছনে পিছনে । পাশেই ১টা শেয়াল তারা করে মুরগিটাকে সানা দ্রুত কাছে গিয়ে ধরে ফেলে মুরগিটাকে ।তারপর বাসায় ফিরে আসে ।
সানা ঃ জানস আফা আজ না শিয়াল তারা করছিল আমার ময়না(মুরগী) টা রে ।
তামান্না ঃ ভালো করছিল । খাইলো না ক্যা । তাইলে তো তোর জঙ্গলে যাওয়া কমতো ।
রাত হয়ে গেছে । আজ সানা আর তামান্নার ঘরে বাতি জালানোর মত কেরোসিন নাই । তাই বাতিও জলছে না । দুবোন দুজোনকে জরিয়ে ধরে শুয়ে আছে ।
রাত মোটামুটি ভালোই হয়েছে । বাইরে যেন কিশের শব্দ হচ্ছে ।
সানা ঃ আফা বাইরে শব্দ কিশের রে ?
তামান্না ঃ মনে হয় শিয়াল আসছে । চুপ কইরা থাক ।
সানা ঃ কি কস । যদি আমার ময়না রে খাইয়া ফেলায় ।
কথা বলতে না বলতে দরজা ভেঙ্গে ঘরে ঢূকে ৪টা হিংস্র শেয়াল । কিছু না বলেই ঝাপিয়ে পরে অসহায় বনের উপরে । গায়ে থেকে ছেরা শাড়ী গুলো আরো ছিরে ফেলে । পুরো উলংগ করে ফেলে ।শিয়াল গুলোও নিজেদের কাপর চোপর খুলে ফেলে । সানা প্রথমে কিছু বুঝতে পারতেছিল না । পরে যখন ব্যাথা অনুভব করে তখন চিৎকার করে উঠে মা বলে । কিন্তু শিয়াল গুলোর কাছে সানার এই আর্তনাদ ছিল মুল্যহিন । একে একে ৪টা শেয়াল ২বোন কে ভক্ষন করে চলে যায় । পরে থাকে রক্তাত্ত ২টি দেহ ।
দুপুরের দিকে জ্ঞ্যান ফিরে ওদের । তখন খুদা চরম ভাবে আকর্ষন করছে । তামান্না উঠে রান্না করে । আবার সেই কচু আর গাটী । এরপর কয়েকমাস চলে যায় । ধিরে ধিরে পেট ফুলে উঠে সানার ।
সানা ঃ আফা আমার পেট এতো ফুইলা গেছে ক্যা রে ? তর ও তো ফুলছে । কেনরে ?
তামান্না ঃ আমগো প্যাটে শিয়ালের বাচ্চা আইতাছে ।
সানা ঃ কস কি । হ আমারে লাথি মারে পেটের ভিতর থাইক্কা । আফা এখন আমরা কি করুম ?
তামান্না ঃ আল্লা জানে ।
সানা ঃ আল্লা কে ? আল্লা নাই, নবী নাই , থাকলে কি ঐ দিন শিয়াল গুলা আমাগো সাথে এই কাজ করা পারতো
তামান্না ঃ চুপ থাক আল্লা নারাজ হইবো ।
সানা এই পেট নিয়ে ঘুরে বেরায় জঙ্গলে জঙ্গলে । শাপের খোজে । শাপ ওরে কাটবো আর ও মরে যাবে । তারপর সর্গে গিয়ে ভাত খাবে ।
একদিন সকালে গ্রামের কিছু মাতব্বর মিলে তামান্না আর সানার বাসায় আসে ।
জমির মাদবর ঃ খানকি গুলা কই ? ঘর থিকা বাইর হো ।
আসে পাসের আরো লোক জন বলে উঠে , বের হস না কেন । অনেক চিল্লা পাল্লার পর বের হয় ২ বোন ।
তামান্না ঃ কি হইছে ?
জমির মাদবর ঃ কি হইছে আবার কয় । দুই বইন বেস্যাপনা কইরা পেট বানাইয়া বইসা আছো আবার কতা কও । এই গ্রাম থাইক্কা তগো বাইর কইরা দিমু ।
তামান্না উঠান থেকে লাঠি উঠিয়ে
তামান্না ঃ কে বাইর করবো ? তরা ? ঐ বুইরা তো পোলার নাম জামান না
? আর ঐ বেটা তোর পোলার নামই তো ইহসান , তর টার নাম তাহমিদ তাই তো ? ওগো কাছে জিগা গা জা বাইর হো এইহান থিকা ।
জমির মাদবর ঃ উল্টা পাল্টা কথা কইয়া ল্যাব নাই । তগো বাইর না করলে আল্লা গজব ফালাইবো গ্রামে ।
তামান্না ঃ আল্লা কি তগো একা ? আল্লা দেহে না সব ? যা ভাগ ।
মাদবর রা চলে যায় । তার কিছুখন ব্যাথা শুরু হয় তামান্নার । ব্যথায় কাতরাতে কাতরাতে জন্ম দেয় এক মৃত শেয়ালের বাচ্চা । অনেক খন পর জ্ঞ্যান ফিরে ।
তামান্না ঃ শেয়ালের বাচ্চাটা কি বেচে আছে রে ?
সানা ঃ আফা এইটা তো মরা ।
তামান্না ঃ জা গাংগে ভাষায় দিয়া আয় ।
সানা ভাষায় দিয়ে আসে ।
রাত হয়ে গেছে । অন্ধকার ঘরে ২বন জরাজরি করে শুয়ে আছে । এর মধ্যে আবার শুনতে পায় শেয়ালের পায়ের শব্দ ।
সানা ঃ আফা শেয়ালগুলো আবার আইছে ।
তামান্না ঃ চুপ করে শ্যে থাক ।
ঘরে দরজা সরিয়ে ঘরে ঢুকে জমির মাদবর আর ওর চ্যালা ।
জমির ঃ তামান্না শুন ।
তামান্না ঃ কি হয়ছে ?
জমির ঃ যে কাজ করছস তোরা , তগো তো গ্রামের সবাই বাইর কইরা দিব ।
তামান্না ঃ আমরা করছি মানে কি ? করছে তো তগো জাইরা পোলারা ।
জমির ঃ এহন যা হইছে বাদ দে । তোরা আমারে একটু সুখ দে । যা ভেজাল আছে আমি মিটমাট করমু ।
তামান্না ঃ সুখ লাগবো তর । তর সুখ কি আমগো শরিরেই আছে রে । দিমু না । ঘর থাইকা বাইর হ ।
জমির ঃ মাগীর দেমাগ দেখ । ঐ তারিখ ধর ওরে । দেহি ওর ওই ছেরা শাড়ির ভিতরের শরিরে কি আছে ।
জমির মাদবর জোর করে তামান্না কে ধর্ষন করে আর তারিক করে সানাকে । তারপর চলে যায় ।
আবার রক্তাত্ত শরিরে পরে থাকে দুইবোন ।
সানা ঃ আল্লা নাই রে আফা । থাকলে আমাগো সাথে এমন হইতো না ।
কিছুদিন পর সানা জন্ম দেইয় আরেক শেয়ালের বাচ্চা । ছোট মেয়েটা কাবু হয়ে পরে ।
সানা ঃ আফা এই শেয়ালের বাচ্চাটারে গাংগে ভাষাবিনা ?
তামান্না ঃ এহনো মরে নাই । মরলে ।
সানা ঃ আফা ঐ দেক কি যেন আসতাছে এই দিকে । সামনে যা পাইতেছে সব ভাইংগা আসতাছে ।
তামান্না ঃ চল ঘরে চল । ঝর আসতাছে ।
সানা ঃ কি ঝর এইটা ? এমন ঝর তো আগে দেহি নাই ।
তামান্না ঃ রাক্ষসী ঝর ।
তামান্না আর সানা ঘড়ে ঢুকে । বাচ্চাটা বাইরে পরে থাকে ।
তামান্না ঃ আজ মনে হয় আর বাচুম না । এই ঝড় আমাগো শেষ কইরা দিব ।
সানা ঃ তাইলে তো বাচি । সর্গে জামু , ভাত খামু ।
ঝড় এসে ওদের ঘড় ভেংগে দেয় । তারপর সব অন্ধকার ।
আলো ফিরে আসে । সকাল হয়েছে । শরিরের উপর পরে আছে ছনের ব্যারা । সানা তামান্নার উপর থেকে বাস বেরা সরিয়ে ওকে দার করায় ।
সানা ঃ আফা আল্লা আছে , নবী আছে আফা । আল্লা , নবী বিচার করছে আফা ।
তামান্না ঃ শিয়াল গুলা সব মরছে মনে হয় । দেখ মইরা পিপড়ার মত শুয়ে আছে । আল্লা রাক্ষশি ঝড় পাঠাইয়া আমাগোর হয়ে বিচার করছে । হ আল্লা আছে , নবীও আছে আর তাগো বিচার আছে ।
শিয়ালের বাচ্চাটা মরে গেছে । সানা ওরে নিয়া গাংগে ভাষায় দেয় । আর পাশেই পরে থাকতে দেখে জমিরের লাশ । তারপর আসতে গিয়ে দেখে ঐ চার শিয়ালের লাশ । ওরা এখনো উলংগ ।
সমাপ্ত
(গল্পের শেষের অংশটুকু আমার কল্পনা )
আমার লেখা আরো গল্প পরতে চাইলে আমার পেইজ টি লাইক দিতে পারেন ।
https://www.facebook.com/arshipon15/

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Thank you for your participation .