মঙ্গলবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

ভুত-ভুতুদের ভালোবাসা দিবস



ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে ভুত প্রিয় বন্ধুদের জন্য লেখা আমার এই গল্পটি । গল্পটি আমার যাষ্ট কল্পনা । কোনভাবে এর কোন অংশ বাস্তব কোন কিছুর সাথে মেলানোর চেষ্টা করবেন না প্লিজ । গল্পকে গল্পের মত করেই দেখবেন ।


অন্ধকার রাত, একলা ছাদ, একলা আকাশ, একরাশ জোসনা, এক গুচ্ছ তারা আর একলা রাফি । বসে আছে রাফি, আকাশের ঐ একগুচ্ছ তারার একটা তারার সাথে কথা বলছে সে ।
সরি রাফি সরি । ঐটা তারা নয় । ওইটা তো তোমার রাজকন্যা ।
মাস খানেক হয় মারা গিয়েছে রাজকন্যা । সড়ক দুর্ঘটনায় প্রান হারিয়েছে রাজকন্যা । রাফির বিশ্বাস রাজকন্যা তারা হয়ে আকাশে আছে। এরপর থেকে প্রতি রাতেই রাফি ছাদে এসে রাজ্যকন্যা(তারা)র সাথে কথা বলে । হাসে, কাদে আর গান শোনায় । রাফি মাঝে মাঝে রাজকন্যাটিকে বলে নিচে নেমে আসতে , হাতধরে আবার ঢাকার রাজপথে হাটতে । রাজকন্যার খোপায় গোলাপ দিবে রাফি । কিন্তু রাজকন্যাটি আসে না ।
রাত ১১.৫৫ বাজে । আর কিছুখন পরই ১২টা বাজবে । ১২টার পরই ১৪ তারিখ , মানে ভালোবাসা দিবস । আজ রাফি বিশেষ করে অনুরোধ করবে রাজকন্যাকে নিচে আসার জন্য । গতবছর এই দিনে সারাটা দিন দুজনে একসাথে ছিল । রাফি সাদা পাঞ্জাবী আর রাজকন্যা লাল শাড়ি পরে ঘুরেছিল পুরো ঢাকা । আজ সেই দিন আর এটা তো প্রেমিক প্রেমিকাদের কাছে এমনিতেই স্পেশাল ১টা দিন । তাই অনেক আশা নিয়ে বসে আছে । আজ বলবে । আচ্ছা রাফি বলুক । ওর এখানে একাই থাকা উচিত, আমরা এখান থেকে আপাতত যাই ।
সকাল হয়ে গেছে রাজধানী ঢাকার রাজপথ রঙ্গিন হয়ে গেছে বিভিন্ন বয়সী যুগলে । খোপায় ফুল, লাল শাড়ী, হাতে গোলাপের ছরা, ছেলেটি নীল অথবা সাদা পাঞ্জাবী । পুরো শহরে এক অন্য রকম আনন্দময় পরিবেশ । এতো এতো যুগল যে কোথায় থেকে আসলো কে জানে ।
এইসব ভাবতে ভাবতে হাটছিল দুপুর । হটাৎ ১টা মেয়ের সাথে ধাক্কা লাগলো , দুজনেই পরে গেলো । মেয়েটি উঠে আবার হাটা দিল কোন কথা না বলে । দুপুর মেয়েটির দিকে অবাক দৃষ্টিতে । নিজেকে প্রশ্ন করছে , কিভাবে সম্ভব এটা । আমার সাথে ধাক্কা লাগলো কিভাবে , আবার আমাকেই ধরেই তো উঠে গেলো কিভাবে সম্ভব এটা ? আমাকে দেখতে পারার কথা কিন্তু আমি তো অস্পর্শিয় । তাহলে কি !!!!
দুপুর মেয়েটার পিছনে ছুটে । কাছে গিয়ে হাত ধরে । মেয়েটি রেগে চিৎকার করে উঠে
মেয়েঃ এই এই , কি অসভ্যতামি
দুপুর ঃ না , মানে আপনি কি আমার স্পর্শ অনুভব করতে পারছেন ?
দুপুরের কথা শুনে মেয়েটি একটু শান্ত হয়।
মেয়ে ঃ হ্যা । আপনিও কি পারছেন ?
দুপুর ঃ তারমানে কি আপনিও আমার মত ?
মেয়ে ঃ আপনার মত মানে ?
দুপুর ঃ আমি ভুতের শহর কলংকপুর থেকে এসেছি । আমি ভুত । আমার নাম দুপুর ।
মেয়ে ঃ হাহাহাহা । পালিয়ে এসেছেন তাই না ?
দুপুর ঃ হ্যা ।
মেয়ে ঃ আমি তৃষ্ণা । তৃষ্ণা ভুতু । কেনো এসেছেন এখানে ? কলংকপুরে তো ভালোই উৎসব হচ্ছে। সব ভুতুরা আজ সাদা শাড়ী ছেরে নীল শাড়ী আর কাজল পরেছে, ভুতরা হুমায়ন আহমেদ স্যারের হিমুর মত হলুদ পাঞ্জাবী আর কালো গোলাপ নিয়ে অপেক্ষ্যা করছে ।
দুপুর ঃ হাহাহাহা । সেটা সত্যি । কিন্তু যে সকল ভুতদের ভুতু নাই তারা কি করবে ? তাই একটু কষ্ট করে পৃথিবীতে আসলাম । অতিতের সাথে দেখা করতে । যদিও অতিতেও আমার তেমন কোনো গার্লফ্রেন্ড ছিল না । আচ্ছা তুমি এসেছো কেনো ?
তৃষ্ণা ঃ আমার ভালোবাসার কাছে । জানো, সে আমার প্রতি রাতে ডাকে তার কাছে আসার জন্য, তার পাশে বসে বকবক শোনানোর জন্য । খুব ভালোবাসে ছেলেটা আমায় ।
দুপুর ঃ ওহ। তোমার কি পৃথিবীতে প্রেমিক ছিলো ?
তৃষ্ণা ঃ হুম ছিল । মাস খানেক আগে ১টা রোড এক্সিডেন্টে আমি মারা যাই তার পর থেকেই আমি কলংকপুরে । আর ও এখানে, আজ আমি তার সাথে দেখা করবো । আমি খুব কাছ থেকে দেখবো । সেখানেই যাচ্ছি ।
দুপুর ঃ আমি কি তোমার সাথে যেতে পারি ?
তৃষ্ণা ঃ হ্যা চলো । যাই হোক ১টা বন্ধু পেলাম । কলংকপুরে আমার কোন বন্ধু নেই ।
এরপর তৃষ্ণা আর দুপুর হাটতে থাকে রাফির উদ্দ্যেশে ।
অন্যদিকে রোদেলা হাটছে ধানমন্ডি লেকে একা একা । সেও কলংকপুর থেকে এসেছে , মানে সেও ১জন ভুতু । পৃথিবীতে থাকতে অল্প বয়সেই অনেক প্রেম করেছে । তবে কোনটাই ভালোবাসা ছিলনা বলে দাবি করে সে । ভালোবাসা নাকি তার মনে স্পর্শই করতে পারিনি । ছেলেদের নাকে দড়ী দিয়ে পিছু পিছু ঘোড়ানো তার কাছে ১টা খেলার মত ছিল । খুব দুষ্ট আর মিষ্টি ১টা মেয়ে রোদেলা । হটাৎ একদিন ক্যান্সার ধরা পরে মেয়েটার, তার কিছুদিন পরে মরে যায়।
রোদেলা এখন কি করছে জানো তোমরা বন্ধুরা ? লেকের জুগল দের মাঝে গিয়ে দুষ্টমি করছে । এই ধরো মেয়েটার খোপার ফুল খুলে দিচ্ছে , ছেলেটার মাথায় পোকা দিয়ে দিচ্ছে । আর বিভিন্ন ভাবে সবাই কে ডিষ্টার্ব করছে আর খুব মজা নিচ্ছে । কারনটা হলো তার এখন কোনো ভুত নাই , সে একাকী ভুতু ।
হটাৎ কিছু ১টা পানিতে পরার শব্দ । সাথে সাথে কিছু মানুশের চিৎকার । কাছে গিয়ে দেখে লেকে ১টা ছেলে পানিতে হাবু ডুবু খাচ্ছে। আসে পাসের সবাই বাচাও বাচাও বলে চেচামিচি করলেও কেউ তার সুন্দর জামা-কাপর আর সাজুগুজু বিসর্জন দিয়ে ছেলেটাকে বাচানোর জন্য নেমে এলো না । রোদেলা পানিতে ঝাপ দিল , সে সাতার জানে । ছেলেটার কাছে গিয়ে তাকে ধরআর চেষ্টা করলো । কিন্তু পারলো না , কারন রোদেলা ভুতু আর ছেলেটা মানুষ । কেদে দিল সে , আসে পাসের মানুষ গুলোর কাছে গেলো কিন্তু কেউ তাকে দেখতে পেলো না, তার কথাও শুনতে পেলো না। ছেলেটা ধিরে ধিরে পানিতে তলিয়ে গেলো । রোদেলা কাদতে কাদতে তাকিয়ে ছিল । একটুপর হটাৎ ছেলেটা ভেষে উঠলো, উঠে হাত উচিয়ে বাচার চেষ্টা করছে । রোদেলা আবার চেষ্টা করলো ছেলেটাকে ধরার । এবার পারলো ধরতে । রোদেলা বুঝতে পারলো যে ছেলেটা মারা গিয়েছে , ভুত হয়ে গেছে । পারে নিয়ে আসে ।
রোদেলা ঃ এই ছেলে , পানিতে ডুবলে কিভাবে ?
ছেলেটি ঃ ইচ্ছে করে ঝাপ দিয়েছি । মানে সুইসাইড ।
রোদেলা ঃ হায় হায় কি বলে ছেলে । কেনো এটা করলে ?
ছেলেটি ঃ আমার রাজকন্যার সাথে অভিমান করে ।
রোদেলা ঃ বুঝছি। কোন মেয়ে ছ্যাকা দিছে ।
ছেলেটি ঃ ছ্যাকা দেয়নি , তবে ধোকা দিয়েছে । আমাকে ছেরে চলে গিয়েছিল ।
রোদেলা ঃ বিয়ে হয়ে গেছে ?
ছেলেটি ঃ নাহ । মারা গেছে ।
রোদেলা ঃ ওহ , এই ব্যাপার । টেনশন নিও না । আমার সাথে চলো , আমি তোমাকে কলংকপুরে নিয়ে যাচ্ছি সেখানে পাবে ওকে । আচ্ছা তোমার নাম কি ?
ছেলেটি ঃ আমি রাফি । আচ্ছা তুমি কে ? আর আমি কি মরে যাই নাই ?
রোদেলা ঃ আমি রোদেলা, কলংকপুরের ভুতু । আর হ্যা তুমি মারা গিয়েছো , মারা না গেলে আমায় দেখতে পেতে না । তুমি এখন ভুত হয়ে গেছো ।
রাফি ঃ হাহাহাহাহহাহা , তাই । সারাজিবন ভুতের গল্প শুনেছি , আর আমিই এখন ভুত । ভালো তো । আচ্ছা চল তোমার কলংকপুরে । খুজে দেখি পাই নাকি আমার রাজকন্যা তৃষ্ণাকে ।
রোদেলা ঃ তৃষ্ণা । অনেক সুন্দর তো নামটা ।
এর পর রোদেলা আর রাফি হাটতে থাকে কলংকপুরের দিকে । আর গল্প করতে থাকে । রোদেলা রাফিকে কলংকপুরের ভালোবাসা দিবসের কথা জানায় , সেখানে কিভাবে ভুত-ভুতুরা ভালোবাসা দিবস পালন করে ।
তৃষ্ণা আর দুপুর রাফির বাসায় এসেছে। কিন্তু বাসায় নেই রাফি । আসেপাসে খুজছিল তৃষ্ণা রাফিকে । রাস্তায় রাফির একবন্ধুকে দেখতে পায় তৃষ্ণা । কাছে যায় তার , জিজ্ঞেস করে রাফির কথা । কিন্তু ছেলেটি তৃষ্ণাকে দেখতে বা তার কথা শুনতে পায় না ।
এমন সময় আরেকটি ছেলে এসে রাফির বন্ধুকে জানায় যে রাফি ধানমন্ডি লেকে ঝাপ দিয়ে আত্তহত্তা করেছে । কথাটি শুনতে পায় তৃষ্ণা । কান্নাকাটি শুরু করে তৃষ্ণা । দুপুর কোনভাবেই কান্না থামাতে পারে না । দুপুর তৃষ্ণাকে নিয়ে লেকে যায় । গিয়ে দেখে রাফির লাশ পানিতে ভেষে উঠেছে । দুজন মিলে ভুত রাফিকে খুজে চারপাশে । আসেপাসেই তো থাকার কথা , কিন্তু কোথাও খুজে পায় না ভুত রাফিকে । তারপর সিদ্ধান্ত নেয় কলংকপুরে ফিরে যাওয়ার । কারন সেখানেই গেলে একমাত্র পাওয়া যাবে ভুত রাফিকে ।
কলংকপুর আজ ঝলমল করছে । সারাবছর মূলত এখানে অনেকটা অন্ধকারের মত থাকে । রাত হয় ঘোড় অন্ধকার আর দিন হয় কালো মেঘে ঢাকা । শুধু এই দিনটায় কলংকপুর ঝলমল করে জোসনা রাতের মত । চারদিক নীল, কালো, হলুদ, বেগুনী, গোলাপী রঙের কাপর আর বেলুন দিয়ে সাজানো হয়েছে । বিভিন্ন জায়গায় বসেছে হরেক রকম তেলেভাজা পিঠার দোকান। ভুত-ভুতুরা নীল আর হলুদ জামা কাপর পরে বেরিয়েছে । হাতে প্রায় সবার কালো গোলাপ । সবাই একত্রিত হয়েছে কলংকপুরের বিশাল ময়দানে । আজ সারা রাত সবাই এখানে আনন্দ ফুর্তি করবে , গান গাইবে , পিঠা খাবে, নাচবে । কোন নোংরামী নেই এই ভুত-ভুতুদের মদ্যে তবে এক সাগর ভালোবাসা আছে একজন আরেক জনের জন্য ।
দুপুর, তৃষ্ণা, রোদেলা, রাফি চারজনই এখন কলংকপুরের ভালোবাসা দিবসের আনন্দমেলায়। দুজন দুজন করে খুজছে । রাফি আর রোদেলা খুজছে তৃষ্ণাকে , আর তৃষ্ণা আর দুপুর মিলে খুজছে রাফিকে ।
দুপুরের চোখে এটা মেয়ে পরে , মেয়েটাকে চেনা চেনা লাগছে । কাছে যায়, পিছনে আসে তৃষ্ণা ।
দুপুর ঃ এক্সকিউজমি । আপনাকে আমার চেনা চেনা লাগছে ।
রোদেলা ঃ লাগতেই পারে । একশহরে থাকি ।
দুপুর ঃ আপনার নাম কি প্যাক প্যাক ?
রোদেলা ঃ আপনি আমার ফেসবুক আইডির নাম জানলেন কিভাবে ?
দুপুর ঃ আমি আপনার ফ্রেণ্ডলিষ্টে ছিলাম । আমার আইডি নাম ফেরারী।
রোদেলা ঃ ওহ হ্যা । তুমি তো অনেক কিউট ১টা ছেলে ছিলে এফবিতে , কিন্তু এখানে এতো ক্ষ্যাতের মত লাগছে কেনো ? আর তুমি আমাকে প্রোপজ করেছিলে কেনো ? আর কেনোই বা তারপর আইডি ব্লক করে দিলে ?
দুপুর ঃ আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম, সাহশ করে প্রোপজ করেও ফেললাম কিন্তু খুব ভয় হচ্ছিল । তাই আইডি ডিএক্টিভ করে দিয়েছিলাম , ব্লক করেনি তোমাকে ।
রোদেলা ঃ হাহাহাহা । তুমি জানতেও চাইলে না যে আমি কি তোমাকে ভালোবাসতে চাই কিনা ? আচ্ছা শুনো । আমার এক বন্ধু আমার সাথে ছিল । খুজে পাচ্ছি না , এতো ভিরে কই যে গেলো ।
দুপুর ঃ আচ্ছা চলো খুজি । আর এর নাম তৃষ্ণা , আমার বন্ধু ।
তিনজন মিলে হাটছে। তৃষ্ণা মনে মনে আসেপাসে রাফিকে খুজছে, রোদেলাও।
পিছন থেকে একজন এসে তৃষ্ণাকে জরিয়ে ধরে । তৃষ্ণা পিছনে ফিরে দেখে , সেও জরিয়ে ধরে । রাফি তার তৃষ্ণাকে পেয়ে গেছে । দুজন দুজনে মিশে গেছে ভালোবাসার একবন্ধনে । সেখান থেকে সরে যায় দুপুর আর রোদেলা । রোদেলা দুপুরের ভালোবাসা গ্রহন করে । রোদেলা কিন্তু এবার আর মিথ্যে মিথ্যে ভালোবাসার অভিনয় করেনি । ফেসবুকে থাকতে সেও দুপুরের মন কারানো হাসির পাগল ছিল । সেই হাসি খুজে পেলো এই কলংকপুরে ।
সারারাত চলে কলংকপুরে ভুত-ভুতুদের ভালোবাসা দিবসের আনন্দমেলা । নাচ-গান, খাই-দাই, হই-হুল্লোর, আতশবাজিতে অন্য সব ভুতুদের সাথে দুপুর-রোদেলা আর রাফি-তৃষ্ণাও তাদের ভালোবাসা দিবস পালন করে ।

( পুরো গল্পটাই আমার কল্পনা । এর সাথে বাস্তবতার কোন মিল নাই । )
আমার লেখা ভালো লাগলে আর আমার আরো গল্প পরতে চাইলে আমার পেইজ টি লাইক দিতে পারেন ।
https://www.facebook.com/arshipon15/ ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Thank you for your participation .