সোমবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১৮

আম্বিয়া

আম্বিয়া
লেখা ঃ MD Asadur Rahman - Shipon
আমি আর রোহিত কলাবাগান দিয়ে হাটছি । রনি ভাইয়া এখনো অফিসে আসেনি তাই হেটে বেরাচ্ছি । ব্রীজটা পার হয়ে ঐপারে গিইয়ে কলাবাগান মাঠের পাসে বাসস্টান্ডে যাত্রী ছাওনী তে গিয়ে বসি ।
আমি ঃ কি খবর তোমার কাজের ? এগুচ্ছে কেমন ?
রোহিত ঃ আর বইলো না ভাই । একা একা বাসায় কাজ করতে ভালো লাগে না । আর বুঝিও না । ভাইয়া কে বলো আমাদের ১টা যায়গা দিতে যেখানে আমরা একসাথে বসে কাজ করতে পারবো ।
আমি ঃ হ্যা ,সাজিয়া আপু কে বলো বলতে । আচ্ছা আপু আসছে ?
রোহিত ঃ হ্যা , রনি ভাইয়ার বাসায় । হয়তো ভাবির সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছে ।
আমি ঃ রোহিত দেখো কি সুন্দর করে মহিলা টা খাওয়াচ্ছে । দুধ ভাত ।
রোহিত ঃ চলো ১টা ছবি তুলি ।
রোহিত ছবি তুলতে গেলো । কিন্তু মহিলাটি ছবি তুলতে দিল না । ক্ষেপে গেলো । ভদ্র সমাজের উপর তার যত ঘৃ্না ছিল সেটা যেন আমাদের উপর উশুল করল ।
আচ্ছা আমি যে ভদ্র সমাজ বললাম সেই ভদ্র সমাজ টা কি ? আর এর বিপরিতে কি অভদ্রসমাজ ।
আম্বিয়ার মা তার সন্তান দের নিয়ে রাস্তার পাসে ফুটপাতে থাকে পলিথিনের নিচে । কোন রকম খেয়ে পরে বেচে আছে । তবে আম্বিয়ায় প্রতি তার মায়ের কোন কার্পন্য নাই । পাশের এক মহিলার কাছে শুনলাম যে আম্বিয়াকে ছোট সময়ে তার এই মা তাকে রাস্তা থেকে কুরিয়ে নিয়ে আসে আর নাম দেয় আম্বিয়া । তার পর থেকে আম্বিয়াকে সে তার অন্য সন্তানদের চেয়েও বেশি ভালোবাসা দিয়ে বড় করে তোলে । আম্বিয়ার প্রতি তার এই অগাধ আর নিখুত ভালোবাসা দেখে আসে পাসের সবাই তাকে আম্বিয়ার মা বলে ডাকে । সে আম্বিয়া কে প্রতিদিন দুধ দিয়ে ভাত খাওয়ায় , সবান দিয়ে গোসল করায় , জড়িয়ে ধরে ঘুমায় । আম্বিয়ার প্রতি তার এই নিখাদ ভালোবাসা দেখে ইচ্ছে হলো ১টা ছবি তুলি , ভালোবাসার এই অনন্য উদাহরন টা ফেসবুকের মাধ্যমে গোটা বিশ্বকে জানাই । তাই এগিয়ে গেলাম আমি এবার ১টা পিক তোলার অনুমতির জন্য ।
আমি ঃ আপা আমি কি ১টা ছবি তুলতে পারি ?
আম্বিয়ার মা ঃ কেন তুলবেন ছবি ? আমরা কি রংগো করতাছি এইহানে ?
আমি ঃ না না সেটা না । আসলে আম্বিয়ার ১টা ছবি তুলে ফেসবুকে দিতে চাই , সবাই আম্বিয়াকে সেখান থেকে দেখতে পাবে ।
আম্বিয়ার মা ঃ লাগবো না দেহন । আমাগো ছবি তুইলা বিদাশিগো কাছ থেইকা ট্যাকা আনে , আমাগো কি হয় । তুইলবেন না কোন ছবি ।
কথা শেষ হতে না হতেই আম্বিয়ার মায়ের আসে পাসের লোকজন একরকম তারা করে , তাই আর ছবি তোলা হয় না , চলে আসি আমি আর রোহিত ।
তার কিছুদিন পরের কথা । রাত ১০টার বেশি বাজে । রবিন্দ্র সরবরের আড্ডা শেষ করে বাসায় ফিরছিলাম । আমি নাঈম আর রোহিত । নাঈমকে কলাবাগান থেকে বাসে উঠিয়ে আমি আর রোহিত হাটছি । একটু সামনে এগুতেই দেখি খুব ভীর , আর ভীরের ভিতর থেকে কেউ একজন কাদছে । খুব কাদছে । সামনে এগিয়ে যাই আমি আর রহিত । ঠেলে ধাক্কায় একদম ভিতরে যাই । তারপর যেতা দেখলাম সেটার জন্ন্য আমরা প্রস্তত ছিলাম না
কান্নার কারন হলো , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , কিভাবে বলবো সেটা বুঝতেছিনা । আচ্ছা বলেই দেই । আম্বিয়া মারা গেছে । সন্ধার বেশ কিছু পর সামনের রাস্তা পার হওয়ার সময় গাড়ীচাপা পরে মারা গেছে । সকাল থেকেই অসুস্থ ছিল আম্বিয়া ।
আম্বিয়ার মা খুব কাদছে । সে আম্বিয়াকে অন্যান্ন মানুষদের মত কবর দিতে চায় । কিন্তু আসে পাশের সবাই তাকে বাধা দিচ্ছে । তার জামাই তাকে গালাগালী করছে । ভীড় করে থাকা কিছু কিছু মানুশ হাসাহাসিও করছে । আমি আর রোহিত ঐ মুহুর্তে কি করবো বুঝতেছিনা । হাসবো না কাদবো । আম্বিয়ার মায়ের জন্ন্য খারাপ লাগছে , তবে সে কি একটু বারাবারীও করছে না । কেন গোসল করিয়ে কবর দিতে হবে আম্বিয়াকে । আম্বিয়া এক্সিডেন্টে মারা গেছে তার জন্ন্য সে কাদতেছে সেটা স্বভাবিক , কারন সে আম্বিয়াকে নিজের সন্তানের চেয়েও বেশি ভালোবাসতো । তাই বলে তো এখন এই আম্বিয়া নামের একটা কুকুরকে মানূশের মত করে দাফন করতে হবে । সব আজাইরা পেচাল । তবে এটা বলতে হবে এই সময়ে এসে এই দারিদ্রতার মাঝে এইভাবে ১টা কুকুরকে ভালোবেসে নিজের সন্তানের মত করে বড় করে তোলা ।। সত্ত্যি কিন্তু দুর্ল্ভ । তাই হয়তো আম্বিয়ার মায়ের কষ্ট হচ্ছে ।
কিছুখন পর সিটি কর্পোরেশনের গাড়ী এসে আম্বিয়ার মায়ের সাথে জোরাজোরি করে আম্বিয়াকে তুলে নিয়ে যায় । আম্বিয়ার মা কিছুদূর গাড়ির পিছনে ছুটে তারপর রাস্তায় পরে যায় । সবাই মিলে ধরাধরি করে ঐখান থেকে নিয়ে আসে ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Thank you for your participation .