বুধবার, ১৩ মার্চ, ২০১৯

একুরিয়াম

#একুরিয়াম
(কাল্পনিক গল্প)
প্রেতাত্মার লেখা গল্প - Written by A R Shipon

কলিংবেলের ক্রিং ক্রিং শব্দে ঘুম ভাঙে দুপুরের। চোখ মোঁচড়াতে মোঁচড়াতে গিয়ে দরজা খুলে দেয় দুপুর। দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে একজন মধ্যবয়সী পুরুষ। পরনে লাল টিশার্ট, হাতে একটি পার্সেল।
দুপুরঃ কাকে চাচ্ছেন?
ব্যক্তিঃ দুপুর সাহেব আছে?
দুপুরঃ জ্বি, আমিই দুপুর।
ব্যক্তিঃ আমি কুরিয়ার থেকে ডেলিভারি এজেন্ট রিয়াজ। আপনার নামে একটি পার্সেল আছে।
দুপুরঃ আমার পার্সেল? কে পাঠিয়েছে?
ডেলিভারি এজেন্টঃ নীলা নামের এক মেয়ের কাছ থেকে এসেছে।
ডেলিভারি এজেন্ট দুপুরের হাতে পার্সেলটি দিয়ে ডেলিভারি বিলে সই নিয়ে চলে যায়। দুপুর পার্সেলটি নিয়ে এসে টেবিলের উপরে রেখে বিছানায় গিয়ে আবার সুয়ে পরে। লুটিয়ে পরে গভীর ঘুমে।

অতল পানির নীচে তলিয়ে যাচ্ছে দুপুর। একদম তলানিতে নেমে আসে। নিচে পাথর আর পাথর। মাঝে মাঝে কয়েকটা মৃত গাছ। গাছ গুলো হাত দিয়ে স্পর্শ করে। আরে গাছ গুলোতো প্লাস্টিকের। এরচেয়েও অবাক হয় পানির অতলে শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে কোন কষ্টই হচ্ছে না দুপুরের। কিভাবে সম্ভব? ইচ্ছে হলেই মাছের মত সাঁতরে এপাশ ওপাশ করতে পারছে। আজিব ব্যাপার! কি হচ্ছে আমার সাথে? নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করলো দুপুর।
সাঁতরে উপরে উঠার চেষ্টা, মানে পানি থেকে বায়ুতে আসার চেষ্টা করে উপরে উঠছে। হটাৎ সামনে দিয়ে একটা কিছু ভেঁসে যায়। অর্ধেক মাছ আর অর্ধেক নাড়ী। থমকে যায় দুপুর। মৎস কন্যা? দুপুর মৎস কন্যার পিছু নেয়। মৎস কন্যা একটা গাছের পেছনে লুকায়। দুপুর সেখানে গিয়ে মৎস কন্যার সামনে দাঁড়ায় ।
একি কান্ড, এই এই, একে তো খুব চেনা চেনা লাগছে। কে কে কে এটা?
মৎস কন্যাঃ আমাকে চিনলে না?
দুপুরঃ হ্যা চিনেছি।
মৎস কন্যাঃ কে আমি?
দুপুরঃ রোদেলা
মৎস কন্যাঃ হাহাহাহাহাহাহাহা। আর কত নাম দিবে আমার? রোদেলা, ত্বরন্বীতা, নীলা, অতন্দ্রীলা, রূপন্তী হাহাহাহাহাহাহাহাহাহাহা
দুপুরঃ যতদিন ভালোবেসে যাবো ততদিন। আচ্ছা নাম গুলোকি তোমার পছন্দ না?
মৎস কন্যাঃ আচ্ছা, একসময় তুমি আমাকে ভুলে যাবে তাই না?
দুপুরঃ তুমি তো আমাকে ভুলেই গেছো?
মৎস কন্যাঃ মোটেও না। ভুলে গেলে কি আর এখানে নিয়ে আসতাম তোমাকে?
দুপুরঃ আচ্ছা তুমি এখানে কেনো? আর আমিই বা এখানে কিভাবে এলাম?
মৎস কন্যাঃ তুমি একুরিয়াম খুব পছন্দ করো। একটা একুরিয়ামের শখ ছিলো তোমার। আমাকে বলেছিলে। আমি তোমাকে একটা একুরিয়াম গিফট করতে চেয়েছিলাম। তুমি তখন মানা করেছিলে। আমি তোমাকে ভুলিনি। তোমার একুরিয়ামের মৎসকুমাড়ী হয়ে এলাম।  আরে একুরিয়ামে কি আমি একা একা থাকবো? মোটেও না, তাই তোমাকেও নিয়ে এলাম। কেমন হলো? হাহাহাহাহাহাহাহাহাহাহা।
দুপুরঃ তোমার ভূবন ভোলানো হাসি, কিভাবে বাঁচবো সারাজীবন তোমাকে ছাড়া, বলতে পারো কি?
মৎস কন্যাঃ আজিব, আমি তো তোমার সাথে থাকবো বলেই মৎস কন্যা হয়ে তোমার জীবনে ফিরে এলাম।
দুপুরঃ খুব মজা নিচ্ছো তাই না? খুব তো নিজের ভালোবাসার মানুষের হাত ধরে চলে গেলে। সুখেই আছো তাই না?
রোদেলা কোন কথা বলে না। মন খারাপ করে চুপ করে মাথা নিচু করে ফেলে। হয়তো কাঁদছে, কিন্তু এই একুরিয়ামের পানির মাঝে মিশে যাচ্ছে রোদেলার চোখের নোনা জল। তাই দেখতে পাচ্ছি না।
হটাৎ রোদেলার পেছন দিক থেকে একটা নীল তিমি এসে ওকে হ্যাচকা টান দিয়ে নিয়ে ছুটে চলে। দুপুর রোদেলাকে উদ্ধার করার জন্য সাঁতরে পিছু তাড়া করার জন্য চেষ্টা করে। হাত পা যথা সম্ভব চেষ্টা করেও এক সুতা পরিমান এগুতে পারে না। বারংবার চেষ্টা করে, হাত পা ধরে রেখেছে বেশ কয়েকজন। এমনটাই মনে হচ্ছে দুপুরের। দুপুর ভিষন মানুষিক কষ্টে চিৎকার করে উঠে।

জামান এসে দুপুরের উপরের এক বালতি পানি ঢেলে দেয়। স্বপ্ন ভেঙে যায় দুপুরের। হুরুমুর করে উঠে বসে দুপুর।
জামানঃ কিরে আজও নিশ্চয় স্বপ্ন দেখে চিৎকার করছিলি? কেউ একজন অথবা কোন এক দানব বা দৈত, নাহ তোর তো আবার ভূত আছে সেই ভূত এসে তোকে আটকে রেখে রোদেলাকে নিয়ে চলে যাচ্ছে। কিন্তু তুই কিছুই করতে পারছিস না। তারপর কিছুই না পেরে চিৎকার করে কান্না শুরু করলি। তাই তো?
দুপুর বিরক্তিভরা মুখ নিয়ে জামানের দিকে তাকালো।
জামানঃ থাক ভাই। ভয় পাইছি আমি। এভাবে তাকাইস না। গোসল করে এসে খেয়ে নে।
দুপুর বিছানা ছেড়ে উঠে গিয়ে বাথরুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে ফিরে আসে। ডাইনিং টেবিল থেকে নাস্তা নিয়ে বারান্দায় গিয়ে বসে। নাস্তা শেষ করে কফির মগ হাতে নেয়। তখনই মনে পরে সকালে একটা পার্সেল এসেছে তার নামে। নীলা নামে একজন পাঠিয়েছে। মগ হাতে নিয়েই রুমে ফিরে টেবিলের উপরে রাখা পার্সেলটাতে হাত দেয়।
পার্সেলের উপড়ে বড় করে লেখাঃ সাবধানে ধরুন, ভিতরে কাঁচের জিনিস ।
দুপুর। উপরের র‍্যাপিং টা খুলে ফেলে। একটা কার্টুন টেপ দিয়ে মোড়ানো। টেপ খুলে ফেলে। কার্টুন খুলতেই একটা ছোট কাচের একুরিয়াম, একুরিয়ামের ভিতরে একটা স্বচ্ছ পলিথিনে ৩টা মাছ, আরেকটা পলিথিনে কিছু পাথর আর প্লাস্টিকের কয়েকটা গাছ।
এরমধ্যে জামান চলে আসে।
জামানঃ কিরে, সকাল সকাল কে তো কি পাঠাইলো। (কাছে এসে) ওয়াও! একুরিয়াম? মাছ? দাঁড়া পানি ভরে নিয়ে আসি।
দুপুর একুরিয়াম রেখে উঠে গিয়ে বাইরে চলে যাই, একটা কাজ আছে। ফিরতে ফিরতে রাত হয়। রুমে ফিরে দেখে কম্পিউটার টেবিলের উপর একুরিয়ামটা সাজানো। নিশ্চই জামানের কাজ। জামান পাথর, প্লাস্টিকের গাছ সাজিয়ে তার মধ্যে পানি ঢেলে তারপর মাছ ৩টি দিয়ে আমার টেবিলে সাজিয়ে রেখেছে। আমি হাত দিয়ে একুরিয়াম টা ধরলাম, দুটো মাছ একসাথে আছে আর একটি মাছে একটু দূরে। একটু পরপর কাছে এসে পেছন থেকে দুজনকে ঠেলে গুতো দিচ্ছে।
পেছন থেকে সালাউদ্দিন আর জামান এসে।
সালাউদ্দিনঃ এই নে, বিরিয়ানী রান্না করেছি।
দুপুরঃ হটাৎ বিরিয়ানি?
সালাউদ্দিনঃ আজ জামানের আনিকার জন্মদিন সেই উপলক্ষে।
জামানঃ ধুর, চাপা মারে। আজ ওর সাথে আছমা নামের একটা মেয়ের সম্পর্ক হইছে সেই উপলক্ষে।
দুপুরঃ ধুর বাল। যাই হোক, বিরিয়ানি হইছে আর কিছু লাগছে না।
সবাই খাওয়া শুরু করে। সালাউদ্দিন প্রতিবারের মত জামান আর দুপুরের প্লেটে হানা দেয়। কিছুক্ষণ খুনশুটি হয়। আবার সবার আগে সালাউদ্দিনেরই খাওয়া শেষ। হাত ধুয়ে এসে রুমে ঢুকে
সালাউদ্দিনঃ কিরে এই একুরিয়াম আনলি কবে?
জামানঃ আনেনি। নীলা গিফট করেছে।
সালাউদ্দিনঃ নীলাটা আবার কে?
জামানঃ ঐ একজনই । সেই ছোট থেকে দেখে আসছি একমেয়ের ওড়নার পিছে পরে আছে। কত নাম যে দিলোও।
সালাউদ্দিনঃ ওহ হ্যা। কিন্তু ও মেয়ের না বয়ফ্রেন্ড আছে, বিয়ে কিছুদিন পর?
জামানঃ তো কি? ভালোবাসা আবার বিয়ে টিয়ে মানে নাকি? দোস্ত রোদেলা এখন তোর কাছে ফিরে আসলে মেনে নিবি না তুই?
দুপুর চুপ করে থাকে।
সালাউদ্দিনঃ হাহাহাহাহাহা
জামানঃ কিরে বল শালা। ও ফিরে আসলে মেনে নিবি না।
দুপুরঃ ও আসবে না।
জামানঃ আসবে না এমন কোন কথা নেই। আসতেও পারে, আসলে কি করবি?
দুপুরঃ সবটুকু উজার করে দিয়ে কাছে টেনে নিবো।
জামানঃ দ্যাটস মাই দোস্ত।
সালাউদ্দিনঃ আচ্ছা একুরিয়ামে ৩টা মাছে কেন?
দুপুর আর জামান একুরিয়ামের দিকে তাকায়
জামানঃ একটা রোদেলা, একটা দুপুর আর একটা ঐ ছেলে।
সালাউদ্দিনঃ হাহাহাহাহাহাহা। কি কম্বিনেশন রে ভাই। দুটো মাছ একসাথে আছে, এইদোটো রোদেলা আর তার বয়ফ্রেন্ড, আর যেটা একটু দূরে আছে সেটা দুপুর।
জামানঃ ধুর শালা। যেটা একা সেটা ঐ ছেলে। কারন ঐ ছেলে ওদের ভালোবাসার মাঝে এসে উড়ে এসে জুরে বসেছে............
দুপুরঃ থাম তোরা। আর প্লিজ এখন যা। সারাদিন অনেক কাজ করেছি, ভালো লাগছে না। ঘুমোবো।
জামান আর সালাউদ্দিন বুঝতে পারে ওদের কথায় দুপুর কষ্ট পেয়েছে। মেয়েটিকে অনেক বেশি ভালোবাসে দুপুর। ওরা দুজন চলে যায় রুম থেকে। দুপুর ফ্রেশ হয়ে একুরিয়ামের কাছে আসে। তিনিটি মাছ, পাথর, প্লাস্টিকের গাছ। ভোড়ের স্বপ্নের সাথে মিলে যাচ্ছে।
স্বপ্নে একটা নীল তিমি এসে রোদেলাকে হ্যাচকা টান মেরে নিয়ে যায়। এই দূরে থাকা মাছটিই মনে হয় সে, আর সেই মনে হয় রোদেলার বয়ফ্রেন্ড।
দুপুর ড্রয়ার থেকে ধাড়ালো ছুড়িটা বের করে। একুরিয়াম থেকে ৩ নম্বর মাছটি, যেটি দূরে দূরে থাকে, মাঝে মাঝে এসে দুজনের ভিতরে ঢুকে যায়। দুপুর সেই মাছটিকে একুরিয়াম থেকে তুলে নেয়। টেবিলের উপর রেখে ছুড়ি দিয়ে কুচি কুচি করে কেটে মনের ভিতরের যন্ত্রনা, ক্ষোভ মেটায়। একটা পিশাচ টাইপের হাঁসি হেসে একুরিয়ামে একটা চুমু দিয়ে বারান্দায় চলে যায়। একটা সিগারেট টেনে এসে বেডে সুয়ে পরে। কিছুক্ষনের মধ্যেই ঘুমিয়ে পরে।

আবার সেই অতল পানি। নীল তিমিটা মৎস কন্যা রোদেলাকে নিয়ে যাচ্ছে। দুপুর শত চেষ্টা করেও এগুতে পারছে না। এরপর আবার চেষ্টা করে, বাধা ভেঙ্গে পিছু নেয় নীল তিমির। কিছুদূর যাওয়ার পর থেমে যায় নীল তিমি। মুক্ত করে মৎস কন্যা রোদেলাকে।
মৎস কন্যা রোদেলাঃ দুপুর তুমি আর এসো না আমাদের মাঝে। আমাদের ভালো থাকতে দাও। তোমার আর আমার মধ্যে নতুন করে কিছু আর সম্ভব নয়।
ঠিক সেই সময় উপর থেকে একটা ছুড়ি পরে দুপুরের সামনে। ছুড়িটা খুব চেনা। দুপুরের টেবিলের ড্রয়ারে থাকে সব সময়। দুপুর ছুড়িটা হাতে তুলে নেয়। নিজের গায়ে নিজ পোস দিয়ে ক্ষত বিক্ষত করে। নিজেকে টুকরো টুকরো করে। নীল তিমিটা পিশাচ হাসী হাসতে থাকে। মৎস কন্যা রোদেলা মাথা নিচু করে আছে, হয়তো তার চোঁখ বেয়ে নোনা জল বের হচ্ছে কিন্তু এই একুরিয়ামের অতল জলে সেই নোনা জল মিশে যাচ্ছে।
দুপুরের ঘুম ভেঙ্গে যায়। একুরিয়ামের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। কিছুক্ষণ একদৃষ্টিতে একুরিয়ামের দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর ড্রয়ার থেকে আবার ছুড়িটা বের করে। বের করে হাতে কেটে কিছু একটা লেখে। তারপর নিজেই নিজের হাত এবং পায়ের রগ কেটে দেয়। প্রচন্ড ব্যাথা, ব্যাথা মৃত্যু যন্ত্রনায় পরিনত হয়। একসময় রোদেলাকে মুক্তি দিয়ে দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে চলে যায়।
সকালে জামান রুমে ঢুকে দেখে ফ্লোর, বিছানা রক্ত দিয়ে ভেসে গেছে। চিৎকার দিয়ে সালাউদ্দিনকে ডাকে। দুজনে মিলে হসপিটালে নিয়ে যায়। কিন্তু প্রানপাখি তো আরো আগেই উড়ে গিয়েছে।
দুপুরের হাতের লেখাটা ছিলোঃ রোদেলা আমি চলে যাচ্ছি তোমায় ছেড়ে। বাধা হয়ে আর না। তুমি কথা দিয়েছিলে শেষ দেখা দেখতে আসবে আমায়। আমি অপেক্ষায় রইলাম। আমার জানাজার আগে হয়তো আমি তোমার মুখটি দেখতে পাবো।

.........সমাপ্ত..........

সম্পূর্ন গল্পটাই আমার বিকৃত মস্তিস্কের কল্পনা বা দুষ্টামি অথবা ফাইজলামী। বাস্তবতার সাথে একো কোন রকম মিল নেই। গল্পে ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য অনুরোধ করা হল।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Thank you for your participation .