রবিবার, ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

ভৌতিক প্রেম প্রস্তাব


#ভৌতিক_প্রেম_প্রস্তাব
(অনুগল্প)
লেখাঃ MD Asadur Rahman – Shipon
কথা ছিল শীতের রাতে পায়ের উপর চাদর টেনে দেবো,
কথা ছিল ঝড়ের রাতে সজোরে আঁকড়ে ধরবো,
কথা সেসব কিছুই রাখা হল না,
কারণ আজ সে কথা অন্য কাউকে দিয়েছি ।
গত বসন্তে তোমার জন্য শহর খুঁজে পলাশ এনেছিলাম,
এই বসন্তে সব শুকনো ম্রিয়মান ।
ভেবেছিলাম চাতক পাখির মত মেঘের দিকে চেয়ে
একফোঁটা বৃষ্টির অপেক্ষায়
এমন এক গান লিখবো
যা শুধু তুমি শুনবে।
কিন্তু আজ কেন জানি গান লিখছি অন্যকারও জন্য ।
একযুগ ধরে অন্ধকারের হাত ধরে
আমি আর তুমি শুধু দেখলাম ।
কবিতা সাথে এক মগ চা না হলে কেমন জেনো জমে উঠে না। ফেসবুকে টুকটাক লেখালেখি করি। গুটিকয়েক ভক্তও জুটে গিয়েছে কপালে। তাদের জন্যেই এখন পর্যন্ত লেখালেখিটা চলছে।
কবিতা, চা আর ফেসবুক। তিনটিই একসাথে চালিয়ে যাচ্ছি। ফেসবুকে ম্যাসেজের রিপ্লে আর চায়ের কাপে চুমুক। ম্যাসেজের রিপ্লে দিতে হটাত খেয়াল করি একটি ম্যাসেজ নিচে আনরিড অবস্থায় পরে আছে। মায়াবিনী নন্দিনী নামের একটা ফেসবুক আইডি থেকে, ভাইয়া আপনার সাথে একটু কথা ছিলো।
আমি রিপ্লে দিলাম, জ্বি বলুন। ততক্ষনে অপরিচিতা নন্দিনী অফলাইনে চলে গিয়েছে। আমি কিছুক্ষণ বন্ধুদের সাথে দূরবার্তার মাধ্যমে আড্ডা দিয়ে বিছানায় এসে ঘুমিয়ে পরি। ঘুম ভাংগে সন্ধ্যার বেশ পরে। ফ্রেস হয়ে চা করে দুটো টোষ্ট বিস্কিট নিয়ে সন্ধ্যার নাস্তা সেরে ফেলি। তারপর পিসি ওপেন করি। একটা গল্প লিখবো। নিখাদ ভালোবাসার গল্প। ভূত টূত তো অনেক হলো। লিখা শুরু করলাম। ওহ। এর আগে ব্যাক স্ক্রিনে ইউটিউবে আমার পছন্দের গান এবং ফেসবুকটা ওপেন ছিলো। লিখার মাঝখানে খেয়াল করলাম মায়াবিনী নন্দিনী টেক্সট করেছেন।
মায়াবিনী নন্দিনী ঃ ভাইয়া আপনার নাম্বারটি দেওয়া যাবে। ডিস্টার্ব করবো না। যাস্ট একবার কথা বলে কেটে দিবো। আর ফোন করবো না।
আমি রিপ্লেতে আমার নাম্বারটি দিয়ে দিলাম। তার আগে মায়াবিনী নন্দিনীর আইডীতে ঢুকলাম। প্রোফাইল চেক করলাম যে কোন ভাবে পরিচিত কিনা বা কে হতে পারে সেটা জানার জন্য। নাহ। কিছুই পেলাম না। নিজেকে নিজে কয়েকবার প্রশ্ন করলাম কে হতে পারে? কি বলতে চায়? এমন করে কেউ তো আগে কখনো কিছু বলতে চায়নি বা এভাবে ফোন নাম্বারও চায়নি।
সে আমার রিপ্লে সিন করেছে। কিন্তু সে আর রিপ্লে করছে না। ভাবলাম হয়তো ফোন করবে। অধীর আগ্রহ নিয়ে ফোনের অপেক্ষায় কিছুক্ষণ বসে রইলাম। লিখা আর কিছু মাথায় আসছিলো না। উঠে গিয়ে রান্নায় মোনযোগ দিলাম। নিজের রান্না নিজেকেই করতে হয়। রান্না বান্না শেষ করে আবার লেখায় ফিরে আসলাম ৩ পাতা লেখা শেষে ৪ পাতায় যাবো তখন ফোন টা বেজে উঠলো। অপরিচিত একটি নাম্বার। বুঝে নিলাম মায়াবিনী নন্দিনী ফোন করেছে। কল রিসিভ করে
আমিঃ হ্যালো।
ওপার থেকে মিষ্টি কন্ঠেঃ হ্যালো। দুপুর ভাইয়া বলছেন ?
আমিঃ জ্বি। কে বলছেন?
ওপার থেকেঃ আমি অনন্যা।
আমিঃ কোন অনন্যা?
অনন্যাঃ আপনি কতজন অনন্যাকে চেনেন?
আমিঃ বেশ কয়েকটা।
অনন্যাঃ শুনি কে কে।
আমিঃ সরি।
অনন্যাঃ বললাম কোন কোন অনন্যা কে চেনেন?
আমিঃ দেখুন আমি আপনাকে চিনতে পারছি না। দয়াকরে আপনার পরিচয় দিন। আর পরিচয় ঠিক মত না দিতে চাইলে ফোন কেটে দিন। অযথা খেজুড়া আলাপ করার মত যথেষ্ট সময় আমার হাতে নেই।
অনন্যাঃ সরি ডিস্টার্ব করার জন্য। আমি অনন্যা, ফেসবুক আইডির নাম মায়াবিনী নন্দিনী। আচ্ছা ভাইয়া আপনি মনে হয় ব্যাস্ত। আমি পরে কোন একসময় ফোন দিবো। রাখি।
আমিঃ আরে না না। আগেই বললেই তো হতো যে আপনি মায়াবিনী নন্দিনী।
অনন্যাঃ আপনি কি আমার কলের অপেক্ষায় ছিলেন?
আমিঃ নাহ। এমন কেনো মনে হলো আপনার ?
অনন্যাঃ এই যে প্রথমে কিভাবে কথা বললেন তারপর মায়াবিনী নন্দিনী বলার পর স্বাভাবিক হলেন। তাই মনে হলো
আমিঃ নাহ! তেমন কিছু না। অযথা প্যাচাল আমার খুব একটা ভালো লাগে না।( মিথ্যে বললাম, আমি বেশির ভাগ সময়ই অযথা প্যাচাল পাড়ি)। আচ্ছা কি জেনো বলতে চাচ্ছিলেন আপনি।
অনন্যাঃ আমি যেটা বলতে চাচ্ছি সে কথাগুলোওতো অযথা।
আমিঃ মানে?
অনন্যাঃ মানে হচ্ছে। বলবো?
আমিঃ উফ! জ্বি বলুন।
অনন্যাঃ গতকাল ভোড়ের দিকে আমি একটা স্বপ্ন দেখেছি। অদ্ভুত একটা স্বপ্ন। আচ্ছা তার আগে আপনাকে বলে রাখি যে আমি আপনার লেখার অনেক বড় একজন ফ্যান। আপনার সব লেখাই আমার পড়া। কোন কোন লেখা কয়েক পড়া হয়েছে। #রোদেলা_কাব্য গল্পটা আমার পড়া এই পর্যন্ত ছোট গল্পের মধ্যে বেষ্ট। এরপর #একটি_মধ্যবিত্ত_ভৌতিক_গল্প এটিও অসাধারণ।
আমিঃ আপনি স্বপ্নে ফিরে আসুন। কি দেখলেন সেটি বলুন।
অনন্যাঃ জ্বি। আমি আমার রুমে সুয়ে আছি, কোল বালিশ জড়িয়ে। হটাত ঘুম ভেংগে গেলো। খেয়াল করলাম আমার রুম অসম্ভব সুন্দর গোলাপের সুঘ্রানে ভরে গেছে। প্রান ভরে নিঃশ্বাস নিলাম। অন্ধকার রুমে বা দিকের জানালার পাশে মৃদ আলো জ্বেলে উঠলো। ধোয়ার কুন্ডলী থেকে বেরিয়ে আসলো বিশালাকার এক লাল দৈত্য। আমি ভয়ে চিৎকার দেওয়ার চেষ্টা করলাম। কিন্তু জানেন কোন কাজই হলো না, গলা দিয়ে এক বিন্দু শব্দ বের হলো না। দৈত্য তার হাতের ঈশারায় আমাকে শুন্যে ভাসিয়ে নিয়ে এলো বাইরে। বাইরে হরেক রুমের ফুল দিয়ে একটি পালকি সাজানো। দৈত্য তার ভরাট কন্ঠে বললো আমাকে সেই পালকিতে চরে বসতে। আমি জবাবে বললাম, আমাকে পালকি করে কোথায় নিয়ে যাবেন? কোন উত্তর দিলো না। আমিও নড়ছি না। অবশেষে লাল দৈত্যটি আবার তার হাতের ঈশারায় আমাকে শুন্যে ভাসিয়ে নিয়ে পালকিতে বসালো। তারপর পালকিটি একা একা শুন্যে উড়তে লাগলো। পেছনে পেছনে দৈত্যটিও আছে। উকি দিয়ে দেখলাম আরকি।
আমিঃ তারপর পালকিটি কোথায় নিয়ে গেলো আপনাকে?
অনন্যাঃ প্লিজ আমাকে বলার সময় ডিস্টার্ব করবেন না। বলতে দিন।
আমিঃ আমি তো জানি কেউ কোন গল্প বলার সময় মাঝে মাঝে প্রশ্ন করতে হয়। তাতে এর ধারাবাহিকতা থাকে।
অনন্যাঃ আমি মোটেও গল্প বলছি না, আমি স্বপ্নে যা দেখেছি তাই বলছি। আর হ্যা, আমি সবার মত না। আমি আমার মত বলতে পছন্দ করি।
আমিঃ আচ্ছা ভাই সরি, আপনি বলুন।
অনন্যাঃ অন্ধকার কেটে ভোড়ের আলো ফুটে গেছে। আমি উকি দিয়ে নিচে তাকিয়ে দেখলাম মাঠা ঘাট, সবুজ গাছপালার উপর দিয়ে যাচ্ছি। নিশ্চয় এটা কোন গ্রাম। আমি বাইরে তাকিয়ে থাকলাম। প্রকৃতি দেখতে আমার ভালোই লাগছিলো। ভোড়ের গ্রাম বাংলা উপর থেকে দেখতে যে এতো সুন্দর সেটা আমার আগে জানাছিলো না।
আমিঃ যাক ভালোই, বিমান খরচ ছাড়া ফ্রিতে দেখে নিলেন।
অনন্যাঃ আবার?
আমিঃ অহ সরি।
অনন্যাঃ দূরে একটা বিশাল বাড়ি দেখা যাচ্ছে। পালকিটা ঠিক বাড়ির গেটের সামনে গিয়ে থামলো। পালকি থেকেই বরাবরের মত উকি দিয়ে দেখলাম বাড়িটিকে নানা রকম ফুল আর লাইট দিয়ে সাজানো হয়েছে। কিছুক্ষনের মধ্যেই কয়েকজন ফুলের ডালা নিয়ে আসে। আমাকে অতি আদরযত্নের সাথে পালকি থেকে নামায়। আমি অবাক হয়ে যাই। এদের মধ্যে আমার এবং আপনার আব্বু আম্মু সহ আমাদের দুজনের পরিবারের অনেকেই ছিলো।
আমি ঃ আপনি আমার বাবা মাকে কিভাবে চিনলেন? আপনি কি আমার পরিচিত?
অনন্যাঃ আচ্ছা আপনি এতো কথা বলেন কেনো? চুপ করে শুনুন।
আমিঃ জ্বি বলুন।
অনন্যাঃ আমাকে একটি রুমে নিয়ে গেলো। এরপর বউ এর সাজে আমাকে সাজানো হলো। জানেন অনেক সুন্দরী লাগছিলো আমাকে। আপনাকেও ।
আমিঃ আমিও ছিলাম আপনার স্বপ্নে?
অনন্যাঃ আপনি লাল একটি একটা শেরওয়ানী আর পাগড়ী পড়া ছিলেন। দেখতে কেমন জেনো ক্ষ্যাত ক্ষ্যাত লাগছিলো। তবুও মেনে নিলাম। যাক বিয়ে তো হচ্ছে আমার। সবাই হাজির। এর মধ্যে হটাত একটা কালো দৈত্য এসে হাজির। সে আমাকে বিয়ের আসর থেকে তুলে নিয়ে গেলো। আমি চিৎকার করতে থাকলাম। এরপর দেখি আম্মু এসে আমাকে জরিয়ে ধরে আছে। স্বপ্নটা এখানেই শেষ। এখন আপনি বলুন এর মানে কি?
আমিঃ এটা কি স্বপ্ন ছিল নাকি কোন গল্প? নাকি আজ প্রোপজাল ডে তে আপনি আমাকে প্রপোজ করছেন?
অনন্যাঃ দেখুন একটু বেশি এডভ্যান্স হবেন না। আমার বিএফ আছে। যাস্ট স্বপ্নটা দেখলাম তাই আস্ক করলাম।
আমিঃ আমাকেই নিয়ে দেখলেন কেনো?
অনন্যাঃ আজিব কথাবার্তা। আমি যদি জানতাম তাহলে কি এই ২৭ মিনিট ফোনের টাকা খরচ করে আপনার কাছে এর মানে জানতে চাইতাম?
আমিঃ ওহ আপনি এর মধ্যে দেখেও ফেলেছেন যে ২৭ মিনিট হয়ে গেছে।
অনন্যাঃ দেখেন আমিও অন্যান্য মেয়েদের মত কঞ্জুস টাইপের। নিজের টাকা খরচ করে বেশি কথা বলতে পারবো না। আমি কেনো এই রকম স্বপ্ন দেখলাম সেটা বলুন।
আমিঃ আপনি বলেছেন আপনি আমার প্রায় সব গল্প পরেছেন। আমার গল্প আপনার ভালো লাগে। আপনি সেখান থেকে নিজের মধ্যে আমাকে নিয়ে হয়তো ভেবেছেন। কোন এক ভাবার সময়ে কিছু সময়ের জন্য হয়তো আমাকে আপনার ভালো লেগেছলো। আমাকে নিয়ে হয়তো আপনি এমনটা কল্পনা করেছিলেন। তাই স্বপ্নে সেটাই দেখেছেন। আমরা জেগে থেকে যা ভাবি, করি, কল্পনা করি, দেখি তাই স্বপ্নে সিনেমার মত সামনে আসে।
অনন্যাঃ কালো দৈত্যটা তাহলে আমাকে নিয়ে গেলো কেনো?
আমিঃ কারন আমাদের মধ্যে বিয়ে সম্ভব নয়। আপনার বিএফ আছে, হয়তো সেই কালো দৈত্যটিই আপনার বিএফ।
অনন্যাঃ ওকে নিয়ে এভাবে বলবেন না। কষ্ট লাগে আমার।
আমিঃ হাহাহাহা। আপনি আসলেই কি চাচ্ছেন সেটা আপনি নিজেই জানেন না।
অনন্যাঃ এখন আমি কি করবো? আমার কেনো জেনো মনে হচ্ছে কালো দৈত্যটা না আসলেই ভালো হতো।
আমিঃ হাহাহাহাহা। শুনুন, আপনি আবেগে আছেন। আবেগ কে দূরে সরিয়ে ফেলে বিএফকে সময় দিন। সে আপনাকে যথেষ্ট পরিমান ভালোবাসে আর তাই কালো দৈত্য হয়ে এলোও সে এসে আপনাকে তার করে নিয়েছে।
অনন্যাঃ ধুরঃ তাহলে আমার স্বপ্নটা কি
আমিঃ আপনার স্বপ্নটা একটি ভৌতিক প্রেম প্রস্তাব।
অনন্যাঃ হাহাহাহা । দারুন নাম দিয়েছেন।
সেদিন অনন্যার সাথে আমার ১৯৭ মিনিট কথা হয়েছিলো। দিনটি ছিলো প্রপোজাল ডে। সারাদিনের চাপা একটি কষ্ট মনে ছিলো যে কেউ আমাকে প্রপোজ করলো না। দিনে শেষ সময়ে অনন্যার এই অদ্ভুদ এই ভৌতিক প্রেম প্রস্তাব আমার মনের কষ্টটা কিছুটা হলেও কমিয়ে দেয়। সেই দিনের পর থেকে আজ পর্যন্ত অনন্যার সাথে আর কথা হয়নি।
সমাপ্ত।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Thank you for your participation .