শুক্রবার, ১৩ জুন, ২০২৫

কবি মরুক

আমার ক্ষুধা, আমার আলস্য, আমার বাস্তবের কবিতা, আপনাকে ক্ষুদ্ধ, বিক্ষুদ্ধ, ক্রোধান্বিত করতে পারে। করতে পারে কান্না কাতর, বিমর্ষ, দুঃখিত ও ব্যথিত। আপনি আমাকে ক্ষমা করুন, ঘেন্না করুন, এবং এবং ভালোবাসা থেকে দূরে থাকুন। ভালোবাসলে কবি মরে যায়। ভালোবাসলে কবি আত্মহত্যা করে। ভালোবাসলে কবিদের পৃথিবী অন্য কারো হয়ে যায়। তারচে' কবিকে জেলে পুরে দিন। তারচে' কবিকে ক্রসফায়ারে হত্যা করুন। তারচে' তাকে নিরুদ্দেশের শিরোপা দিয়ে নাই করে দিন। কবি মরুক। না খেয়ে, না ধেয়ে, না প্রেমে মরুক। মরুক. অর্থ বিত্ত পদ পদবী পুরস্কারে মরুক। ত্যাগে মরুক কবি, ভোগেও মরুক। কবিরা এ পৃথিবীর নয়, অন্য পৃথিবীর। তারা ওখানেই যাক। তাদের ওখানেই যেতে দিন। ক্ষুধা থাকুক, অপ্রেম থাকুক, থাকুক বাস্তবের চাছাছোলা কবিতা।

বুধবার, ৪ জুন, ২০২৫

মুক্তি দাও প্রিয়তমা

সেদিন তুমি নিবীড় ভাবে কাছে এসে বললে আমায়, স্বপ্ন দেখতে। নিজেকে নিরাপদ দূরত্বে সড়িয়ে নিলেও, কথাটা মনে ধরল। যদিও এখন তোমার কোনো কথাই আর ভালো লাগেনা, আগের মতো। সব মনে হয় অবান্তর, সৃষ্টিছাড়া, ভিত্তিহীন। একদিন এই কথার যাদুতেই হয়েছিলাম পাগলপারা, মনে পড়ে যায় প্রথম দিকের সে সব দিন। অপলক বিস্মিত দৃষ্টি মেলে, শুনতাম তোমার কথা, ঘন্টার পর ঘণ্টা, দিনের পর দিন, ক্লান্তিহীন আবেশে। রামধনু রঙ কল্পনার সূতোয় বেঁধেছিলাম, আগামীর নিটোল বুনন। না, এখন এসব ভাবলে বড্ড হাসি পায়, সকলই সীমাহীন আদিখ্যেতা ছাড়া কিছুই নয়। তোমার মতো দায়িত্বজ্ঞানহীনা মানুষেরা আর যাই হোক, জীবনসঙ্গীনি হতে পারে না। সারাজীবন মনের কোণের ধূলিজমা হাজারো স্মৃতির তলানিতে, অপদার্থ প্রেমিকা হয়েই থেকে যায়। শুনলাম তোমার কথা, স্বপ্ন দেখলাম। সত্যি একটা গোটা রাত জুড়ে এক সফল নারীর স্বপ্ন। মুখটা যদিও অস্পষ্ট,তবু গড়ন দেখে বুঝলাম তুমি নও। স্বপ্নে সে আমার হাত ধরেছিল, নিয়ে যাবে বলে এক অন্তহীন সুখের দেশে। যেখানে না আছে দুঃখ, রাগ, অভিমান, হতাশা, না আছে অক্ষমতা, সৃষ্টিছাড়া স্বপ্নে বিভোর হয়ে থাকার মতো অনন্ত অলস সময়। কিন্তু একি অদ্ভুত অনুভূতি, এ স্পর্শ যে আমার বড় চেনা। এ যে তোমার স্পর্শ, হ্যাঁ তোমারই। স্বপ্নেও কি এভাবেই অধিকার ফলাতে চাও? অপরিসীম বিচক্ষণতা তোমার, এজন্যই কি বলেছিলে স্বপ্ন দেখতে? বাস্তবের সাথে সাথে অবচেতন সত্ত্বাকেও গ্রাস করে আছো, তার জানান দিতে? মুক্তি দাও আমায়, মুক্তি দাও প্রিয়তমা, স্বপ্ন থেকে না পারো, বাস্তব থেকে, দূরে চলে যাও, অনেক দূরে। আমার জগতটা করে দাও একান্ত আমারই। তুমি না হয় থেকে যেও হয়ে, এক অতি ব্যার্থ, অসহায় স্বপনচারীনি।

শুক্রবার, ৩০ মে, ২০২৫

বৃষ্টি ও তুই

মেয়েটি দেখছে রোদ রোদটা হৃদয় ছুই ছুই, বৃষ্টি নিবে প্রতিশোধ মেঘটা বলছে তুই তুই। মেয়েটি দেখছে মেঘ মেঘটা আকাশ ছুই ছুই, ঘুড়িটা উড়ছে তবু বেশ পাখিটা বলছে তুই তুই। মেয়েটি দেখছে পাখি পাখিটা দুঃক্ষ ছুই ছুই, লোনা জলে ডোবে আঁখি বৃষ্টিটা বলছে তুই তুই।

বৃষ্টির প্রতিশোধ

বলেছে সে বৃষ্টিতে ভিজতে ভালোবাসে দুহাত মেলে, নাজুক কলমি লতার মতো মেঘের সরবোরে। আমি তো মেঘের গোপন খবর আগাম জানতে পারি, হিংসায় জ্বলে পুরে মরি; কতো দীর্ঘ হবে এবার আষাঢ় মাস? কি জানি কতো যুগ আগের প্রেমিক তার বৃষ্টি হয়ে আসে, ষড়যন্ত্রের মতো সুবিন্যস্ত অভিসন্ধি নিয়ে তির্যক তীরের মতো , চুলের গোঁড়া থেকে নাভির গভীরে ছুড়ে দেয়া সুদীর্ঘ চুম্বন চোখের পাতা ও ঠোঁটের ডগা বেয়ে বাতাবী লেবুর মতো বুকে! হিমালয়ের শীত পেটে নিয়ে সরসর সাপের মতো একেবেকে, কোথায় না ছুঁয়ে যায় তার চঞ্চল প্রেমিকের গোপন অসভ্য আঙ্গুল ! শরীরের তাহার প্রশ্রয়ের আলিঙ্গন, আহ্লাদে গলে বৃষ্টির ফোঁটা, ষড়যন্ত্রের মতো সুবিন্যস্ত অভিসন্ধি, সে কি বুঝেও বোঝেনা তা! আবেশে তাহার চোখ কাঁপে তির তির, তৃপ্তির শিহরণ ভেজা সারা গায়ে। আমি হিংসায় দাউ দাউ করি আগুনের মতো, জিঘাংসার ব্রত বুকে নিয়ে। হয়তো সহস্র জনম পরে পবিত্র বৃষ্টি হয়ে জন্ম নেবো এই ঘোর আষাঢ়ে: শত তপস্যার ফলে, ভালবাসার চাবুক চালাবো তার সমস্ত শরীরে, প্রতিশোধের মতো নির্দয়ে, ভিজাবো সে জলে। অধর নিংড়ে তাহার নিতম্ব ছুঁয়ে দেবো নিশ্চয়, অবাধে নির্ভয়ে; আমাকে নিও চিনে, আষাঢ়ের সুবিন্যস্ত বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটায়, কামুক বর্ষা ঋতুর বৃষ্টিময় প্রতিটি দীর্ঘ দিনে।

বুধবার, ১ জানুয়ারী, ২০২৫

প্রশ্ন

তুমি কি ডাকনাম পাল্টে ফেলেছ? বাড়ির ঠিকানা, কি একলা সিঁড়ি ঘর – বারান্দায় দাঁড়ানো। তোমার ভেতরকার শহরের পিচঢালা পথ কি গিয়ে মিশেছে অন্ধকারে? যেখানে মধ্যবয়সী কোনো যুবক তার প্রেমিকাকে ল্যাম্পপোস্টের গা ঘেঁষে দাঁড় করিয়ে চুমু খায়। তুমি কি সেই অন্য দেশ ? যার রাজধানী পাল্টে ফেলেছ। যেখানে যুদ্ধ লেগে যায় বাঁচার জন্য অধিকারের জন্য। যেখানে মানুষ কলম তোলে কথার ঝড় পাতায় ওঠানোর জন্য, একশ একটা কবিতা, উপন্যাস, শিরোনাম জুড়ে বেঁচে থাকার কথা লিখতে শুরু করে। তুমি কি বদ্ধ গ্রাম? যেখানে তোমার আমার শৈশব, ছুটোছুটি দুরন্তপনা ছিলো। কাদা মাখামাখি বর্ষায় পা পিছলে হোচট খাওয়া। সর্পিল রেললাইনে দুজন দুজনের হাত ধরে হেটে কত পথ ফুরিয়েছিলাম, মনে আছে? সে গ্রামে ছোট্ট মাটির ঘরে দাঁড়াতাম, ঝড় এলে। তুমি কি নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তি? সন্ধান চাই, সন্ধান চাই – বলে খোঁজার তাড়না। হারানো কাউকে খুঁজে দেবার বিনিময়ে অর্থের লোভ দেখানো, বদ্ধ উন্মাদ আমাকে খোঁজা, আমার ছায়া,লেখার খাতা, ভাঙা চশমা অসম্পাদিত কবিতাগুলো যে ডায়েরিতে লেখা সে ডায়েরির সন্ধান করা। তুমি কি সেই অন্ধ চোখ? যার মনুষ্যত্ব বিবেক চোখের পর্দার আড়ালে চলে যায়। যে বুঝতে চায় না অভিমানের মানে, মুখ ফিরিয়ে থাকার অর্থ। যে চোখ অন্ধকারের গভীরতা মাপতে পারে, যে চোখ জানে নরকের জ্বালা যন্ত্রণা রঙিন পৃথিবীর কাছে কতটা তুচ্ছ, বেকার। তুমি কি সেই পাষাণ হৃদয়? যে হৃদয়ে ভালোবাসা থাকলেও, তা প্রকাশ করতে চাইবার ইচ্ছেটা মৃত করে দিয়েছে। যে হৃদয় জানে বিচ্ছেদের কষ্ট, জড়ানোতে ভয়,দুর্বলতা, বায়নার বারন মানতে কষ্ট হয়। যে হৃদয়ে ক্ষরণ হয়, নিজেই সহ্য করে নাও সেসব বুঝতে না দিয়ে পুরো পৃথিবীর কাছে তুমি হাসতে থাকো।

কবি মরুক