বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই, ২০২৫

ভূত ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ

#অনুগল্প #ভূত_ডিটেকটিভ_ব্রাঞ্চ প্রেতাত্মা লেখা গল্প - Written by A R Shipon. ঢাকার দোহার। সময়টা জুলাই ২০২5, এক বছর আগে যারা বুকের রক্ত দিয়ে ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিল, আজ তারা এক ভিন্ন যুদ্ধে নেমেছে—ভূতের, শয়তানের, আর ইতিহাসের অভিশাপের বিরুদ্ধে। তাদের নাম ভূত ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ। সাত সাহসী যোদ্ধা: শিপন, আদনান, রাকিব, সেতু, সোহেল, শাফিন, আর রাসেল। এবার তারা বেরিয়েছে নবাবগঞ্জের আন্ধারকোটা জমিদারবাড়ির গোপন রহস্য উন্মোচনে। লোকমুখে প্রচলিত—বাড়িটির নিচের দুই তলা ডুবে গেছে ভূগর্ভে, যেখানে নেমে কেউ আর ফিরে আসেনি। সেখানে আজও ভেসে বেড়ায় আত্মা, অভিশাপ আর এক অসমাপ্ত প্রেম। জমিদারবাড়ি: অভিশপ্ত দ্বার বাড়িটির চারতলা এখন কঙ্কালের মতো দাঁড়িয়ে, দেয়ালজুড়ে ফাটল, ছাদে জং ধরা লোহার খাঁচা। কোনো পর্দা নেই, নেই কোনো আসবাব। শুধু দেয়ালজুড়ে ছেঁড়া ছবি, আর হাওয়ায় ভেসে বেড়ানো কান্নার আওয়াজ। শিপন দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলল, "আজ আমরা শুধু ভূত নয়, ইতিহাসকেও জিজ্ঞাসাবাদ করবো।" কিন্তু সোহেল কাঁপা গলায় বলল, “এই বাড়ির নিচে যারা গিয়েছে, তাদের কেউ ফেরে না…” “আর আমরাও কেউ না—আমরা জুলাইয়ের সৈনিক!” — জবাব দেয় শিপন। তারা সিঁড়ি বেয়ে নামতে থাকে। চতুর্থ তলার শেষে এসে দেখে, এক গোপন সিঁড়ি খোলে ভূগর্ভের দিকে। নিচে নেমেই বাতাস ভারী হয়ে যায়। হঠাৎ দেয়াল থেকে আলাদা হয়ে এক রমণীর ছায়া এগিয়ে আসে। চুল খোলা, চোখে কালো ছায়া, ঠোঁটে অপূর্ব বিষাদ। প্রিয়ন্তী। “তোমরা শিপনের বন্ধু?” তার কণ্ঠে অদ্ভুত কোমলতা। শিপনের গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠে। “তুমি কে?” “তুমি জানো না, আমি কে? আমি সেই অপেক্ষা… যে তোমার জন্মেরও আগে শুরু হয়েছিল।” শিপনের মাথায় যেন কুয়াশা নামে। সে যেন কিছু ভুলে যাচ্ছে, আবার কিছু মনে পড়ে যাচ্ছে। প্রিয়ন্তীর হাত ছুঁতেই শিপন দেখতে পায় – সে ১৯০১ সালের সেই জমিদারবাড়িতে ফিরে গেছে, আর প্রিয়ন্তী তার প্রেমিকা, যাকে রাজবাড়ির মন্ত্রী আদর নিজের লালসায় জর্জরিত করে মেরে ফেলেছিল। রাজিব স্যার ও ডক্টর হযরত তারা যখন দ্বিতীয় ডুবে যাওয়া তলায় পৌঁছায়, সেখানেই দেখা মেলে রাজিব স্যার আর ডাক্তার হযরত এর আত্মার। তারা আদতে এই জমিদারবাড়ির ভেতর ১৫ বছর আগে এসেছিলেন ভূত গবেষণা করতে, কিন্তু অন্ধকার তাদের নিজের করে নিয়েছে। রাজিব স্যার বললেন, "তোমরা এসেছো সঠিক সময়ে। এই বাড়ির হৃদয়ে রয়েছে এক ব্ল্যাক গ্রিমোর, শয়তানের বই। সেটা মন্ত্রী, শান্ত আর আদরের আত্মা ব্যবহার করে বাড়ির নিচের স্তরে এক নরকদ্বার খুলেছে।" ডক্টর হযরত চোখ সরু করে বললেন, “যদি সেই বই ধ্বংস না করো, তবে প্রিয়ন্তী আর সব আত্মা চিরকাল অভিশপ্ত থাকবে—তাদের মুক্তি মিলবে না।- শয়তানদের আগমন হঠাৎ দেয়াল ফুঁড়ে ভেসে আসে তিন ভয়ংকর ছায়া মন্ত্রী, যার চোখ দুইটি রক্তে ভেজা। শান্ত, যিনি মৃতদেহের শরীর খায়। আদর, যার গায়ে শৃঙ্খল বাধা থাকলেও আত্মা ঘোরে উন্মত্ত হিংসায়। তারা বলল, "তোমরা আবার নতুন প্রেম নিয়ে এসেছো? এ বাড়িতে প্রেম মানেই মৃত্যু।" প্রিয়ন্তী কাঁদে, “আমার মুক্তি দাও…” আদর হেসে বলে, “তোমার মুক্তি একটাই—শিপনের রক্ত!” শিপন সামনে দাঁড়ায়। "আমার রক্ত যদি তার মুক্তির মূল্য হয়, তবে আমি প্রস্তুত।" রক্ত, আগুন আর মুক্তি হঠাৎ, দেয়ালের এক দিক ভেঙে প্রবেশ করে রাসেল আহমেদ, শহিদুল, রনি আর বিল্লাল। সবাই জুলাই আন্দোলনের সহযোদ্ধা, আজ তারা এসেছে বন্ধুকে ফিরিয়ে আনতে। তারা হাতে করে নিয়ে এসেছে ত্রান্তিকের কাছ থেকে তাবিজ, আগুনের জাদু, আর সেই প্রাচীন অস্ত্র যা একমাত্র শয়তানের আত্মা ছিন্ন করতে পারে। হলঘরে শুরু হয় যুদ্ধ— রক্ত, আগুন, আর আত্মার আর্তনাদে কেঁপে ওঠে পুরো আন্ধারকোটা। শেষ মুহূর্তে, শিপন প্রিয়ন্তীর মুখের দিকে তাকায়। "তুমি কি আমাকে ভালোবাসো?" প্রিয়ন্তীর চোখে জল, "তোমার ভালোবাসা ছাড়া আমি কিছুই না।" শিপন তার ঠোঁটে একটি চুমু খায়—আর সেই মুহূর্তেই ব্ল্যাক গ্রিমোর জ্বলে ওঠে আগুনে। শয়তানেরা চিৎকার করে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়… প্রিয়ন্তীর মুখে শান্তির ছায়া নেমে আসে… আর শিপনের কণ্ঠে বাজে এক লাইন — "এই যুদ্ধ ছিল প্রেমের, আর প্রেমই আমাদের জয়ের চাবিকাঠি। শিপনের দেহ অজ্ঞান হয়ে পড়ে। পরদিন সকালে তারা সবাই জেগে উঠে বাড়ির বাইরে। আন্ধারকোটা জমিদারবাড়ি নেই — পুরো জায়গা জঙ্গল হয়ে গেছে, কোনো প্রাসাদ, কোনো দরজা, কিছুই নেই। কিন্তু শিপনের হাতে একটা চিরকুট— "ভালোবাসা সত্যি হলে, মৃত্যুও পথ ছাড়ে। – প্রিয়ন্তী"- আন্ধারকোটা হয়তো আজও কোথাও দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু সে দরজা আর খুলবে না… যতক্ষণ না কেউ আবার একা প্রেম নিয়ে এগিয়ে আসে— যেমন একদিন এসেছিল শিপন। গল্পটি ওমর ফারুক ভাই এর রিকোয়েস্ট এ অনেকদিন পর কোনো গল্প লেখা। হাত পাকাতে হবে। হয়তো অনেকে জানেই না আমি একসময় গল্প লিখতাম এবং প্রেতাত্মা ও মেঘদূত নামে দেশব্যাপী ভূত ও রহস্য গল্প পড়ুয়া নামে ভালোই পরিচিতি ছিলো। রহস্য পত্রিকা, কিশোর আলো, গল্প-কবিতা ডট কম, প্রেতাত্মা সহ বিভিন্ন পত্রিকা ও ব্লগে নিয়মিত লেখা থাকতো আমার।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Thank you for your participation .