রবিবার, ৯ জুলাই, ২০১৭

লাশবাহী গাড়ি

 লাশবাহী গাড়ি
লেখা : MD Asasur rahman (Sh Ip On)

ঢাকা মেডিকেল কলেজ , রাত ১২:৩০ মিনিট।
২০/২২ বছরের একটি ছেলে ও ৩০/৩২ বছরের একজন মহিলা দারিয়ে আছে, তাদের আরেজজন সংগী আছে। মাটিতে বাসের চট দিয়ে মোরানো একটি লাশ। আজ দুপুরে মগবাজারে রেললাইনে কাটা পরে মারা গেছে সে। তারপর সেখান থেকে লাশ ঢাকা মেডিকেল, মৃত এই লাশ নিয়ে ডাক্তারের কাটাকাটি। হয়তো শরিরের ভিতর থেকে গুরুত্বপুর্ন জিনিশ গুলো রেখে দেওয়া হয়েছে।
লাশ খোলা হচ্ছে না। কারন এতো টাই ভিভতস যে, যে কেউ দেখলে ভয় পাবে। এমনটাই বললো মৃত ব্যেক্তির বউ।
ওহ পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়নি যে লাশের সাথে থাকা ৩০/৩২ বছরের মহিলাটি মৃত ব্যেক্তির বউ এবং ২০/২২ বছরের ছেলেটি শালা।
মহিলা কাদছে। তার ছোট ভাই কিছুক্ষন পর পর তাকে সান্তনা দিচ্ছে।
ছোটভাই : আপা আমি গাড়ি নিয়ে আসি? লাশ বাড়িতে নিয়ে যেতে হবে তো। হাতে তো টাকা পয়সাও নাই। দেখি কি করা যায়।
বোন : যা। তারাতারি আসিস।
ছোট ভাই গাড়ি আনতে যায়। কিন্তু এম্বুলেন্স এর ভাড়া খুব বেশি তাই সে ভ্যান ঠিক করতে যায়।
ছোটভাই : এই ভাই যাবেন?
ভ্যানওয়ালা : কোথায় যাবেন?
ছোটভাই : নারায়নগঞ্জ।
ভ্যানওয়ালা : কি মাল যাবে সাথে?
ছোটভাই : আমার দুলাভাই এর লাশ।
ভ্যানওয়ালা : নাহ নাহ আমি এই রাত্রে লাশ বইতে পারুম না।
ছোটভাই : ভাই এম্বুলেন্স ভাড়া নেওয়ার টাকা নাই। আর লাশ টা দেরি করলে গলে গন্ধ বের হয়ে যাবে।
ভ্যানওয়ালা : না ভাই না, আপনি অন্যদিকে চেষ্টা করেন।
এরপর অনেক অনুরোধ, অনুনয়, বিনয়ের পরে ৭০০ টাকাতে ভ্যানওয়ালা রাজি হয় লাশ বইয়ে নারায়নগঞ্জ নিয়ে যেতে।
ভ্যানওয়ালা ও শালা মিলে লাশটিকে ভ্যানে উঠায়। এবং বোন ও ভাই লাশের পাশে বসে। তখন প্রায় ১:১০ মিনিট বাজে। ভ্যান চলতে শুরু করে।
ভ্যান চলছে, ফুপে ফুপে কাদছে মৃত ব্যেক্তির স্ত্রী। মাঝে মাঝে কান্না বেরে যায়, তখন ছোট ভাই সান্তনা দেয়। এভাবে, পলাশির মোর, যাত্রাবাড়ি, কাচপুর ব্রীজ পেরিয়ে চলছে ভ্যানের চাকা।
কাচপুর ব্রিজের পার হয় তখন রাত প্রায় ৩ টা বাজে। শুনশান নিরবতা। মাঝে মাঝে শিয়ালের ডাক, আর সু সু বাতাস। ভয়ংকর একটা পরিবেশ।
ভ্যানওয়ালার কিছুটা ভয় লাগছে। এতোরাতে লাশ বইতে এমন একটা ভুতুরে পরিবেশে কার না ভয় লাগবে বলুন?
বোন ছোটভাইয়ে কানে কানে কি জেন বলে। তারপরে ছোট ভাই ভ্যানওয়ালাকে ডাক দেয়।
ছোটভাই : এই যে শুনুন।
ভ্যানওয়ালা : কি?
ছোটভাই : আমার বোনের একটু চাপ দিয়েছে। খুব ইমারজেন্সি। আপনি একটু এখানে অপেক্ষা করুন। আমি আপাকে নিয়ে পাশের ঐ বাড়ি থেকে আসতেছি।
ভ্যানওয়ালা : এখন আবার
ছোটভাই : ভাই বুঝতেছেন না কেনো, ইমারজেন্সি।
ভ্যানওয়ালা : আচ্ছা যান, তারাতারি আইসেন।
ওরা দুজন চলে যায়। একসময় চোখের আড়ালে যায়। আর দেখা যায় না।
ভ্যানওয়ালার ভয় ভয় লাগছে। সে তার আসনে বসে প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে আগুন ধরালো, এবং টানা শুরু করলো।
ভ্যানওয়ালা সিগারেট টানছে তো টানছে। এমন সময় পিছন থেকে তার কাধে একজন হাত রাখলো। শীতল একটি হাত। ভ্যানওয়ালা পিছনে তাকালো।
পিছনে তাকিয়ে যা দেখলো সেটি দেখার জন্য সে কখনই প্রস্তুত ছিল না। ছোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো, সারা শরীর দিয়ে ঘাম ঝরছে।
সে দেখলো ভ্যানের মাঝখানে লাশটি বসে আছে, মাথা দিয়ে রক্ত ঝরছে, শরিরের আরো অংশ দিয়ে রক্ত পরছে। ভ্যানওয়াল এগুলো দেখে চিৎকার দিয়ে জ্ঞ্যান হারিয়ে মাটিতে পরে গেল।
গাছের আড়াল থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে সব দেখছিল ভাই বোন। ভ্যানওয়াল মাটিতে পরে যাবার সাথে সাথে ওরা ভ্যানের কাছে চলে আসে।
আসলে এরা একটি প্রতারক চক্র। এভাবে লাশ সেজে এসে ভয় দেখিয়ে ভ্যান চুরি করে। তবে এদের সম্পর্কটা সত্যি। জামাই, বউ আর শালা।
খুব দ্রুত ভ্যান নিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যায় ওরা। ভ্যান চালাচ্ছে জামাই। বঊ আর শালা পছনে বসে। বেশ কিছুদুর যাওয়ার পর, পিছন থেকে একজন ডাক দেয়।
অজ্ঞ্যাত ব্যেক্তি : এই যে ভাই শুনছেন, একটি থামেন।
ভ্যান থামায়।
জামাই : জি বলেন?
অজ্ঞ্যাত : ভাই, আমার ভাইয়ের লাশ টা একটু সামনে নিয়ে যাবো। একটি সাহায্য করবেন প্লিজ ।
জামাই : নাহ, নাহ, এই রাত্রে আমি এই লাশ বইতে পারুম না।
অজ্ঞ্যাত : ভাই খুব বিপদে আছি । দেখেন না লাশ টা দিয়ে গন্ধ বের হচ্ছে। টাইম মত না নিতে পারলে খুব বাজে পরিস্থিতিতে পরে যাবো যে আমি।
জামাই : নাহ ভাই আমি পারুম না। পিছে আমার বউ আছে, সে ভয় পাবে।
বউ জামাইএর কানের কাছে গিয়ে বলে : দেখেন আমরা তো প্রতিদিন চুরি করে পাপ কামাইতেছি, আজ একটু ভালো কাজ করে যদি কিছু সোয়াব কামাই করা যায়। নেন লাশটা।
বউ এর কথা শুনে লাশটা নেয় ভ্যানে। একপাশে লাশ আর একপাশে বউ, শালা আর এই লাশের সংগী বসে।
ভ্যান চলতে থাকে। হটাত বউ এর ইমারজেন্সিতে চাও দেয়, এইবার কিন্তু সত্যি সত্যি চাপ দেয়। বয় জামাই কে জানালে জামাই তার শালাকে বয় এর সাথে পাঠায়।
রাস্তায় ভ্যানের উপর আছে এখন সুধু লাশ আর তার সংগী।
জামাই সামনের দিকে তাকিয়ে আনমনে ভাবছিল। হটাত তার পিছন থেকে তার কাধে কে জেনো হাত দেয়। পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখে লাশ বসে আছে ভ্যানে আর তার সংগী টি উধাও।
সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হচ্ছে লাশ টা অবিকল তার মত দেখতে, এবং একটু আগে সে যেমন ক্ষত বিক্ষত লাশের মত সেজেছিল ঠিক সেই রকম এও লাশটি।
জামাই চিৎকার করতে চাচ্ছে কিন্তু গলা থেকে কোন শব্দ বের হচ্ছে না। আর এই দিকে লাশ টি ভ্যান থেকে নেমে তাকে তারা করা শুরু করে। তারা করে পাশের খেতে নামিয়ে ফেলে।
বউ ও শালা ফিরে আসে। ফিরে আসে দেখে সুধু ভ্যান পরে আছে। আর কেউ নেই। এদিক সেদিক খোজাখুজে করে কোথাও পায় না। এই দিকে দিনের আলো ফুটে উঠে। তারপর আরো ভালোভাবে খোজাখুজি করে খেতের মাঝখানে জামাই এর ক্ষত-বিক্ষত লাশ খুজে পায়। দেখে মনে হয় কেউ ওকজন খাবলে খাবলে শরির থেকে মাংশ টেনে হিচরে খেয়েছে।
পুরো গল্পটাই কাল্পনিক। বাস্তবতার সাথে এর বিন্দু মাত্র কোন মিল নেই।
আমার লেখা আরো গল্প পরতে চাইলে আমার পেজটি লাইক দিতে পারেন : www.facebook.com/arshipon15/

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Thank you for your participation .