বুধবার, ৬ মার্চ, ২০১৯

রক্তমূখী নীলা ১



  • #রক্তমূখী_নীলা
    পর্ব-১(এক)
    প্রেতাত্মার লেখা গল্প - written by A R Shipon

    খুব শখ জেগেছে খালি পায়ে হাটবো। তবে ঘড়ের কোনে নয়। ঢাকার খোলা রাস্তায়। খুব অদ্ভুত তাই না?
    আমার সখ গুলো সত্যিই এমনই অদ্ভুদ, যেমন আমি। যাই হোক যে কথা সেই কাজ। রুম থেকে খালি পায়েই বের হলাম। উদ্দ্যেশ্য ধানমন্ডি লেক, এখানে গেলে কাচা কাদামাটি পাওয়া যাবে। কাদামাটিতে হাটবো, একটু আগেই বৃষ্টি থেমেছে।
    পরনে একটা কালো টিশার্ট আর জিন্স প্যান্ট। হাতে এময়াই ত্রি ব্যান্ড। চোখে সানগ্লাস পরতে চেয়েছিলাম কিন্তু সেটা হয়নি আসিফের জন্য। আসিফ সম্পর্কে আমার ভাগিনা। অতিরিক্ত মাত্রায় ভদ্র এবং ভালো ছেলে। যে সানগ্লাসটি নরমালি আমি পরি সেটি আসিফের। আজ সে স্বর্নার সাথে দেখা করতে গিয়েছে, সানগ্লাসটা তাই নিয়ে গিয়েছে। আসিফ আর স্বর্নার সম্পর্কের ঘটনা আরেক গল্প। সেটা না হয় আরেকদিন বলবো। কারন এর মাঝে আছে আমার আরেক প্রিয় এবং গুল্টুস ভাগিনা হাবিব।
    ভেজা পথে হেটে হেটে ৩২ দিয়ে লেকের ভিতরে ঢুকলাম। ব্রিজে উঠে প্রথমেই একটা সিগারেট নিয়ে নিলাম। সিগারেটের সাথে পানও বিক্রি করছে। মিরাজ সাথে থাকলে নিশ্চিত পান নিতো। আমার ও ইচ্ছে করছিলো একটা পান নেই। ঠিক এইখানে এর আগে পান নিয়ে ছোট একটা গল্প আছে। বলি,
    একদিন হটাৎ নজরুলের ফোন। বিকেল ৫টায় রবিন্দ্র সরবরে চলে আসতে হবে। কারন জানতে চাইলে বলে অনেকদিন দেখা হয় না স্রেফ তাই। অফিস শেষ করে ৬টায় চলে আসি। এসে দেখি মাশাল্লাহ সবাই হাজির। গল্প গুজব, নিকোটিন প্রনয়, গরুর চাপ আর লুচি পর্ব শেষ করে ৩২ এর দিকে রওনা দেই। সরবরের ব্রিজে উঠতে হটাৎ জুয়েলের চোখ পরে এক অসম্ভব সুন্দরী নাড়ীর উপর। জুয়েল আরিফকে ডেকে দেখায়। এরপর সবাই হা করে তাকিয়ে থাকি কিছুক্ষণ মেয়েটার দিকে। নীল শাড়ী পড়া, কপালে কালো টিপ। কিছুক্ষণ পর মেয়েটি উধাও হয়ে যায়। আমরা ব্রিজে কিছুক্ষণ কথা বার্তা বলে রাজা আর জুয়েলকে বিদায় দেই, ওরা বাইক নিয়ে ঐপাড়ে আসবে। বাইক থাকলে এই একটা ঝামেলা।
    লেক দিয়ে গল্প তামাশা করে হাটতে হাটতে চলে আসি ৩২ এ এই ব্রিজের কাছে। আমি একটা সিগারেট নেই। ঠিক তখন পেছন সালাউদ্দিন বলে দেখ দোস্ত ঐ মেয়েটা। আমি খেয়াল করলাম মেয়েটা ঠিক ঐ পান সিগারেটের দোকানের পাশেই বসে আছে। দেখতে দেখতে পেছন থেকে বাকি সবাই হাজির। পান সিগারেট কেনার ধুম পরে গেলো। মেয়েটিও বুঝতে পেরেছিলো আমরা তাকে ফলো করছি এবং তাকে নিয়েই কথা বার্তা বলছি। তাই মুহুর্তেই তার মুড বা ভাবটা জেনো একটু বেড়ে গেলো। পান খাচ্ছি, শেষ হচ্ছে আবার নিচ্ছি। প্রায় ২৫/৩০ মিনিট ঠিক এক জায়গায় আমরা দাঁড়িয়ে আছি। একসময় দোকানদারও বিরক্ত হয়ে সেখান থেকে চলে যেতো বললো। অপমান যাকে বলে আরকি। যাক আমরা চলে যাচ্ছি আর বার বার পেছন ফিরে মেয়েটার দিকে তাকাচ্ছি।
    আরিফঃ দোস্ত মেয়ে আমাকে চোখ মারছে।
    মিরাজঃ শালা তোরে মারে নাই। আমাকে মারছে। ঐ দেখ আবার ডাকছেও।
    মিরাজ আগাতে যাবে তখন আরিফ হাত দিয়ে আটকে দেয়। বলে আমাকে ডাকছে। সত্যিই আরিফ কে ডাকছিলো। আরিফ আমাকে সাথে নিয়ে গেলো। কারন আমি গেলো কোন সমস্যা নাই, এখানে সবচেয়ে অসুন্দর ছেলে আমি। তাই নিয়েও গেলেও রিস্ক ফ্রি।
    আরিফঃ ডাকছিলেন?
    মেয়েটিঃ এমন ভাব নিচ্ছেন যে আমি এমনি এমনিই আপনাকে ডেকেছি। এতোখন আপনারা আমাকে ফলো করেছেন সেটা দেখেছি। এরমধ্যে আপনি ছাড়া আমার সাথে অন্য গুলায় যায় না। আর এই ছোকড়াটাকে সাথে নিয়ে এলেন কেন? ভয় পান?
    আমি অপমানিত বোধ করলাম এবং লজ্জিত। চুপ করে শুনে যাচ্ছি কথা।
    আরিফঃ আপনার নাম্বারটি দেওয়া যাবে?
    মেয়েটিঃ কেনো নয়? এই নিন আমার কার্ড। এখানে আমার নাম্বার, ফেসবুক আইডি, ইমো, ইন্সট্রাগ্রাম সব আছে। নরমালি আমি বড় বড় ব্যবসায়ী ছাড়া অন্য কারো সাথে যাই না। আর হ্যা, এক রাত ১০০০০। বাইরে কোথাও গেলে ৩ দিনে ৫০০০০। এখন যাই?
    মেয়েটি চলে গেলো। আমি আর আরিফ স্তব্ধ হয়ে গেলাম মেয়েটির কথা শুনে। বাকিদের কাছে যখন এসে এই কথা বলি তখন সবাই হাসতে হাসতে শেষ। আরিফ কার্ড থেকে মেয়েটির ফেসবুক পেজ বের করে পিক দেখতে থাকলো। মডেল সে। কার্ডটি আরিফ ফেলে দিবে তখন তার কাছ থেকে কার্ডটি নিয়ে আমি ইউসুফ কে দিলাম। ওর কাজে লাগবে, কিছুদিন পর ও ম্বারাত্বক একটা ছ্যাকা খাবে। তখন এটা ওর কাজে লাগতে পারে। গল্পটি এখানেই শেষ। 
    আনমনে মুচকি হাসতে হাসতে আমি লেকের ব্রিজ পেরিয়ে ডিংগির কাছাকাছি চলে এসেছি। হাতের সিগারেট টাও শেষ। ইট থেকে নেমে মাটিতে জমে থাকা পানিতে পা ভিজাচ্ছি। ছোট বেলায় এমন জমে থাকা পানিতে অনেক খেলেছি।
    হটাৎ পেছন থেকে একটা মেয়ে এসে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। আমি পরে যায়নি, তবে কিছুটা সরে গিয়েছি। পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখি লাল থ্রিপিস পড়া একটি মেয়ে, চোখে কাজল আর হাতে লাল চুড়ি। খোপায় ফুল আছে।
    আমিঃ ধাক্কা দিলেন কেনো?
    মেয়েটিঃ ধাক্কা দিবো না? বাচ্চাদের মত পানি নিয়ে খেলছেন কেনো?
    আমিঃ আমার ইচ্ছে। আর আমি তো কারো ক্ষতি করছি না।
    মেয়েটিঃ সেটাও ঠিক। আচ্ছা যে কারনে আপনার কাছে আসা।
    আমিঃ কি কারন?
    মেয়েটিঃ অনেকখন ধরে দেখলাম আপনি খালে পায়ে হাটছেন। নিশ্চয় জুতো ছিড়ে গেছে, মুচি খুজে পান নাই আর তাই জুতোটি ফেলে খালি পায়ে হাটছেন। আশেপাশে মন হয়না কোন জুতোর দোকান আছে। তাই আমি আপনার জন্য জুতো নিয়ে এসেছি। দাম মাত্র ৫০০ টাকা।
    আমিঃ এই জুতোর দাম ৫০০ টাকা নাকি? আর আমি এতোদামি জুতো কিনি না। কাওরান বাজার থেকে ২০০ টাকায় এর চেয়ে ভালো জুতো পাবো।
    মেয়েটিঃ প্লিজ ভাইয়া নিন। কম দেওয়া যাবে না। দেওয়া গেলে দিতাম।
    আমিঃ নিতে পারি। যদি আপনি সত্যি করে বলেন এই জুতোটি কিভাবে আপনি পেয়েছেন। আর আপনার নাম।
    মেয়েটিঃ আমি তৃষা, অদ্রীতা তৃমিস্রা তৃষা। ফেসবুকে সার্চ দিলেই আমাকে পাবেন। আমি খুব ভালো গল্প লিখি। আমার অনেক অনেক ফ্যান।
    আমিঃ আমি জানতে চেয়েছি আপনার জুতোর কাহিনি।
    তৃষাঃ আসলে আমি বাসা থেকে পালিয়ে এসেছিলাম। ফেসবুকে একটা ছেলের সাথে পরিচয়। খুব ভালো কবিতা লিখতো। প্রেমে পরে যাই। তাই তাকে না দেখেই পালিয়ে বিয়ে করার স্বিদ্ধান্ত নেই। পালানোর মধ্যে অন্যরকম একটা ফিলিংস আছে । তাই না?
    আমিঃ আমি কখনো কাউকে নিয়ে পালায়নি।
    তৃষাঃ পালিয়ে যাবেন, দেখবেন সেই রোমাঞ্চকর। তবে অবশ্যই আগে দেখে নিবেন তাকে। তা না হলে...... 
    আমিঃ ঘটনা বলুন।
    তৃষাঃ আমি যশোর থেকে এসেছি। ছেলেটির নাম অরিক। এখানে এসে দেখি ছেলেটা বেশি সুন্দর । হ্যা ফর্সা, কিন্তু আমার ভালো লাগে নাই। সরাসরি নাও করতে পারিনি। ছেলেটি আমার জন্য পাগল। লেকের ধারে এসে বলি লেকের মাঝ খান থেকে আমাকে  একটা পদ্মফুল এনে দিতে হবে। পানিতে নামলেই আমি জুতো নিয়ে আসি। আগে অনেকবার পিক চাইছি দেয় নাই। তাই এই শাস্তি।
    আমিঃ হাহাহহাহাহাহাহাহাহা। দারুন শ্বাস্তি। তো জুতো ফেলে দিন এখন, হকারের মত জুতো বিক্রি করছেন কেনো?
    তৃষাঃ আসলে ভুলে আমি আমার ব্যাগটি ঐখানে ফেলে রেখে এসেছি। এখন যশোর ফিরে যাওয়ার মত টাকা নাই।
    আমিঃ আচ্ছা বুঝছি। এই ধরুন ৫০০ টাকা। আর সে কোথায় আছে? জুতোটি দিন আমি তাকে ফেরত দিয়ে আসি।
    তৃষাঃ আপনার জুতো লাগবে না? খালি পায়ে হাটছেন তো।
    আমিঃ আমি ইচ্ছে করেই খালি পায়ে হাটছি। শখ জেগেছে খালি পায়ে হাটার।
    তৃষাঃ বাহ! আপনিও তো আমার মত পাগল।
    আমিঃ আমি পাগল ঠিক আছে, তবে আপনি পাগল না, পাগলী। এখন শুনুন। আপনি আমাকে দূর থেকে দেখিয়ে দিবেন আর আমি তাকে জুতো ফিরিয়ে দিয়ে আসবো। আর বলবো দয়া করে তার সাথে আর যোগাযোগ করবেন না।
    তৃষাঃ ধন্যবাদ।
    এরপর আমি গিয়ে ছেলেটিকে জুতোটি ফিরিয়ে দিয়ে আসি। ছেলেটি দেখতে ভালোই, ফর্সা, লাম্বা, সব দিক থেকেই ভালো। কিন্তু কেনো অদ্রীতা তৃমিস্রা তৃষা নামের মেয়েটি ছেলেটিকে পছন্দ করলো না সেটা বুঝলাম না। হয়তো পরে ভুল বুঝতে পেরেছে যে বাবা মা কে কষ্ট দেওয়া ঠিক হবে না।
    অদ্রীতা তৃমিস্রা তৃষাকে আমি কল্যানপুর গিয়ে বাসে উঠিয়ে দিয়ে আসি। সে আমার কাছ থেকে আমার মোবাইল নাম্বার নেয়। পরে বিকাশ করে টাকা ফেরত দিবে বলে। আমি খুব বড়লোক না যে টাকার মায়া ছেড়ে দিবো। নাম্বার দিলাম। এরপর বাসায় ফিরে আসি।
    দুই দিন পর সেই তৃষার ফোন। ফোনে মেয়েটির কন্ঠ অসম্ভব সুন্দর। প্রেমে পরে যাবার মত।
    তৃষাঃ ভালো আছেন?
    আমিঃ জ্বি, ভালো। কে আপনি? (ট্রুকলারের মাধ্যমে আগেই জেনেছি ফোনদাতার নাম অদ্রীতা তৃমিস্রা তৃষা, তবুও না চেনার ভান করলাম)
    তৃষাঃ জুতোচোর।
    আমিঃ জুতোচোর মানে? দেখেন আমি জুতোচোর চক্রের সদস্য না। আপনি ভূল নম্বরে কল করেছেন।
    এই বলে কেটে দেই আমি ফোন।
    পরমুহুর্তে আবার ফোন
    আমিঃ জ্বি জুতোচোর বলুন।
    তৃষাঃ আপনি ফোন কাটলেন কেনো?
    আমিঃ জুতোচোরের সাথে বেশি কথা বলি না।
    তৃষাঃ আমি প্রফেশনাল চোর না।
    আমিঃ পার্টটাইম?
    তৃষাঃঃ উউফ। আমি তৃষা, অদ্রীতা তৃমিস্রা তৃষা। সেদিন ধানমন্ডি লেকে............... চিনেছেন?
    আমিঃ যখন কল দিয়েছেন তখনই। আমার ফোনে ট্রুকলার ইনস্টল করা।
    তৃষাঃ তাহলে এমন করলেন কেনো?
    আমিঃ বাদ দিন। টাকা দেবার জন্য ফোন দিয়েছেন তো, আমার এই নাম্বারেই বিকাশ করা আছে। টাকা পাঠিয়ে দিয়েন।
    আবার ফোন কেটে দেই। তৃষা আবার ফোন দেয়। ফোন রিসিভ করি। ওপাশ থেকে আ উ এর শব্দ।
    তৃষাঃ আমি টাকা ফেরত দেবার জন্য ফোন দেইনি। টাকা নিতে চাইলে যশোর এসে নিয়ে যাবেন।
    আমিঃ যাহ! বাবা সাহায্য করেও বিপদে পরে গেলুম। আচ্ছা টাকা দিবেন না তো ফোন দিয়েছেন কেনো?
    তৃষাঃ আপনার সাথে কথা বলতে।
    সেদিন প্রায় ১০১ মিনিট কথা বলি ফোনে। এরপর থেকে প্রায় প্রতিদিন আমাদের কথা হয়। কিছুদিনের মধ্যে আমরা একে অপরের প্রেমে পরে যাই। সারাদিন একজন আরেকজনের সাথে বিভিন্নভাবে এটাচ থাকি। মানে যোগাযোগ আছেই যে কে কি করছে, খাচ্ছে (বাবু খাইছো টাইপের)।  আমার কথা মত বিভিন্নভাবে সে সাজে। সেজে ছবি তুলে দেয়। একদিন সে নীল শাড়ি, নীল চুড়ি, চোখে কাজল আর কপালে লাল টিপ করে অসম্ভব সুন্দর একটা ছবি দিয়েছিলো। দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম। সেদিন তার নাম দেই আমি রক্তমুখী নীলা। রক্তমুখী নীলা বিশেষ একধনের মূল্যবান হীরার নাম। সচরাচর পাওয়া যায় না। উজ্জ্বল নীল রঙ্গের ভিতরে রক্ত লাল হিরার ছটা। দেখতে নাকি অনেক বেশি সুন্দর। শরবিন্দ বন্দোপাধ্যায়ের একটা গল্পও আছে এই নামে। সেখান থেকেই এতোকিছু জানা। আর তার সেই রক্তমুখী নীলার সৌন্দর্য আমি তৃষার মধ্যে খুজে পেয়েছি তাই তাকে এই নাম দেওয়া। সেও খুব পছন্দ করেছে। তবে একটা কথা।
    রক্তমুখী নীলা পাথর সবার জন্য না। জৌতিষীদের মতে এটি মানুষের ভাগ্যে বিশাল পরিবর্তন আনে। কারো জন্য ভালো, কারো জন্য মন্দ। গ্রহ, নক্ষত্র, কাল এবং রাশী মিললে তার জন্য রক্তমুখী নীলা শুভ আর না মিললে অশুভ। জানিনা তৃষা রক্তমুখী নীলা হয়ে আমার জন্য শুভ নাকি অশুভ।
    রাতে ঘুমে স্বপ্নে দেখলাম কোন এক খোলা ছাদে। রক্তমুখী নীলা(তৃষা) নীল শাড়ী, লালটিপ, খোপায় বেলি ফুলের মালা পরে দাঁড়িয়ে আছে। রেগে আছে কোন কারনে। তবে রাগার কারনে ওকে দেখতে আরো বেশি সুন্দর লাগছে। গাল দুটো ফুলে আছে। ইচ্ছে করছে হাত দিয়ে টিপে দেই।
    আমি কাছে গেলাম
    তৃষাঃ কুত্তি
    আমিঃ ছেলেরা কুত্তি হয় না, কুত্তা হয়।
    তৃষাঃ শালার বাচ্চা শালা, ইতর, বদমাইশ, .........................অকথ্য ভাষায় কিছু গালিগালাজ........................ (যদিও আমি মুগ্ধ হয়ে শুনছিলাম)
    আমিঃ আজিব! এইভাবে গালি দিচ্ছো কেন আমাকে?
    তৃষাঃ শালার বাচ্চা শালা, ধানমন্ডি থেকে যশোর আসতে ১ ঘন্টা সময় লাগে? এই ছাদে এই একঘন্টা আমি একা একা দাড়িয়ে ছিলাম, আর এই যে বৃষ্টি এলো। আমার সব মেকাপ নষ্ট হয়ে গেলো।
    আমিঃ আহালে বাবুটা। কান্দে না। তোমাকে আটা ময়দা ছাড়াই সুন্দর লাগে। (তৃষাকে টেনে নিজের বুকে শক্ত করে জরিয়ে ধরি)
    ঘুম ভেংগে যায় আমার। সকালে উঠে তৃষাকে ফোন দেই। স্বপ্নের সব কথা খুলে বলি। তৃষা হাসে। এরপর
    আমিঃ একটা অনুরোধ রাখবে রক্তমুখী নীলা?
    তৃষাঃ বলেন মহাশয়।
    আমিঃ তুমি স্বপ্নের মত করে আমাকে গালি দিবে, আমি শুনবো, শুনে মুগ্ধ হবো।
    তৃষাঃ তুমি পাগল?
    আমিঃ হ্যা আমি পাগল। আমার শখ জাগছে কোন মেয়ের মুখে অকথ্য ভাষায় গালি খাবো।
    তৃষাঃ কোন মেয়ের মুখে অকথ্য ভাষায় গালি খাবা?
    আমিঃ হুম।
    তৃষাঃ ওয়েট।
    তৃষার দৌড়ে একরুম থেকে অন্য রুমে যাওয়ার শব্দ শুনতে পাই আমি। সে বলেঃ মা এক ছেলে আমাকে কয়েকদিন ধরে ফোন দিয়ে খুব ডিস্টার্ব করছে। এই নাও ফোন, ইচ্ছে মত গালি দিয়ে দাও। এরপর শুরু হয় তৃষার মায়ের অকথ্য ভাষায় গালাগালি। স্বপ্নের চেয়েও ভয়াবহ গালাগালি। শুনে তো আমার টাসকি খাওয়ার অবস্থা।
    যাই হোক এরপর তৃষা তার মায়ের কাছ থেকে ফোন নিয়ে আমাকে ব্যাক করে জিজ্ঞেস করে কেমন লাগলো, আমি বললাম অসাধারণ। হাসতে হাসতে তো ও শেষ।
    কয়েকদিন যাবত তৃষার ফোন বন্ধ। ফেসবুকে হাজারবার নক করেও কোন খোজ খবর নেই। খুব খারাপ লাগছিলো, অসহ্য মনে হচ্ছিলো পৃথিবীটা। নিজের উপর নিজের রাগ চরম মাত্রাইয় বেড়ে গিয়েছিলো যার ফলে বাচ্চাদের মত ব্লেড দিয়ে হাত কাটা শুরু করলাম। এতোদিন হয় সম্পর্কে অথচ ওর বাসার ঠিকানাটা নেওয়া হয় নাই আমার। কি বোকা আমি। ঠিক তখন আমার ফোন বেজে উঠে। তৃষার নাম্বার থেকে ফোন। ফোন ধরে কাদতে কাদতে ওকে ঝাড়ি দিতে থাকি। ও বলে
    তৃষাঃ তুমি এই মুহুর্তে যশোর রওনা দাও। আমার বাবা মা তোমার সাথে কথা বলবে। অনেক কষ্টে সবকিছু ম্যানেজ করেছি। প্লিজ আমাকে ঠকিয়ো না। তুমি আসো, আমার বাবা মার সাথে কথা বলো। আমি তোমাকে ছাড়া বাচবো না। আমি ঠিকানা এসএমএস করে দিচ্ছি।
    তৃষার ফোন রাখার পরপরই আমি ফ্রেশ হয়ে রওনা দেই যশোরের উদ্যেশে।
    তৃষাদের আলিষান বাড়ি। শ্বশুরবাড়ি হিসেবে খারাপ হবে না। আমার মত ভেগাবন্ড আরামছে শ্বশুড়ের টাকায় চলতে পারবে।
    দরজার কলিংবেল টিপলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে ধরজা খুলে দিলো। তৃষা নিজেই দরজা খুলে দিয়েছে। নীল শাড়ী, কালো ব্লাউজ, লাল টিপ, নীল চুড়ি, চোখে কাজল, খোপায় বেলিফুল। স্বপ্নের রক্তমূখী নীলার চেয়েও হাজার গুন বেশি সুন্দর লাগছে তৃষাকে আজ। তৃষা ভিতরে ঢুকতে বলে। ওর বাবা মার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। সালাম দেই। এরপর ওর বাবা মার সাথে কথা হয়। একা এক রুমে গিয়ে কথা বলে আমার সাথে। কি করি, কোথায় থাকি, বংশ পরিচয়, বাবা মা কি করে, সম্পতি কি রকম। মোটামুটি বড়ধরনের একটা ইন্টারভিউ দিলাম। এখন রেজাল্টের অপেক্ষায়। উকি দিয়ে তৃষাকে খুজছিলাম, কিন্তু পেলাম না। কিছুক্ষণ পর তৃষার বাবা এলেন। গম্ভীর মুখ।
    তৃষার বাবাঃ শোন ছেলে। তৃষা আমার একমাত্র মেয়ে। কোন বাবাই তার আদরের মেয়েকে তোমার মত এরকম এক বেকার ছেলের কাছে বিয়ে দিবে না। আমিও তোমার কাছে বিয়ে দিতে চাচ্ছি না। আবার মেয়েকে তার পছন্দের ছেলে আমার অপছন্দ হয়েছে সেটা বলেও কষ্ট দিতে চাচ্ছি না। অরিক নামের একটা ছেলে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে, বুয়েট পাশ করা, কবিতা লিখতে জানে, দেখতেও মাশাল্লাহ। তৃষা রাজি না। আমি তৃষার উপর কখনো জোর করবো না। এখন তুমি জানো তুমি কি করবে। তোমার সাথে ঘটা করে আমার পক্ষে আমার মেয়ের বিয়ে দেওয়া সম্ভব না। সম্মানে বাধে। ও ছাদে আছে, তুমি ওকে নিয়ে পালিয়ে যাও। ও সব ভাবে রেডি আছে, ওর মা ওর ব্যাগ গুছিয়ে দিয়ে এসেছে।
    আমিঃ আচ্ছা, আমি তাহলে ছাদে যাই।
    তৃষার বাবাঃ আচ্ছা যাও।
    আমি ছাদে গেলাম। তৃষা দৌড়ে এসে আমাকে জরিয়ে ধরলো।
    তৃষাঃ শুনো বাবার কথায় কিছু মনে করো না। যাক যেভাবেই হোক বিয়েতে সে রাজি হয়েছে। এখানে এভাবে মেনে নিচ্ছে না। কিন্তু কিছুদিন পর ঠিক মেনে নিবে। এই নাও ব্যাগ। চলো যাই।
    আমিঃ কোথায় যাবো?
    তৃষাঃ তুমি যেখানে নিয়ে যাবে।
    আমিঃ তুমি আমাকে মিথ্যে বলেছো।
    তৃষাঃ কিহ! কি বলেছি।
    আমিঃ তুমি জানো আমি রাজনিতি করি। আর আমি আমার বিরোধী দলকে খুব বেশি অপছন্দ করি সেটাও তুমি জানো। তোমার বাবা সেই বিরোধী দলের একজন সনামধন্য নেতা। সেটা কেনো তুমি আমাকে বলোনি? একটা চরম পর্যায়ের ধোকাবাজ তুমি। তোমার সাথে আর যাই হোক সংসার হয় না। সেটা জানো তুমি?
    তৃষাঃ কি বলছো তুমি? আমার বাবা করে, আমি না।
    আমিঃ যেমন বাবা তার তেমন মেয়ে। এইখানে আমি আর এক মুহুর্তও থাকবো না। চলে যাচ্ছি।
    তৃষাঃ দাড়াও। ( তৃষার কাদছে, তার চোখ দিয়ে অঝড়ে জ্বল বেরিয়েই চলছে, হাত-পা কাপছে। যেনো রক্তমূখী নীলা থেকে রক্ত ঝরছে)
    তৃষা তার ব্যাগ থেকে ৫৭৫ টাকা বের করে আমার দিকে এগিয়ে দেয়। আমি হাত দিয়ে টাকাটা নিয়ে নেই।
    তৃষাঃ যেদিন তোমার আমার প্রথম দেখা হয়েছিলো সেদিন তুমি আমার জন্য ৫৭৫ টাকা খরচ করেছিলে। আমি বলেছিলাম দিয়ে দিবো।
    আমিঃ ধন্যবাদ।
    আমি পেছন ফিরে হাটা শুরু করি। হটাৎ করেই বৃষ্টি শুরু হয়। তৃষা হাটু গেড়ে বসে পরে চিৎকার করে কান্না শুরু করে। ওর কান্না।

    দ্বিতীয় পর্ব আগামীকাল পোস্ট করা হবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Thank you for your participation .