সোমবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২১

টাইমবুক (২)




#টাইমবুক

(রহস্যময় কল্পবিজ্ঞান রূপগল্প)

পর্ব - ২ (দুই)

সৃষ্টিতে ঃ প্রেতাত্মার লেখা গল্প - Written by A R Shipon 


ঘুম ভাঙে সকালে। গভীর একটা ঘুম হয়েছে। অনেকদিন হয় এতো গভীর ঘুম হয় না। আমি বেড থেকে নেমে গিয়ে ফ্রেসরুমে গিয়ে ফ্রেস হই। তারপর সেই কালো সুইচটার দিকে চোখ পরে। এখন কোন বাতি জ্বলছে না। কয়েকবার টেপাটেপি করার পরেও কোন কাজ হলো না। 

রেডি হয়ে বাইরে গেলাম। হোটেলে সকালের নাস্তা সেরে টিএসসি। বই মেলায় যাবো। অনন্যাও আসবে। আমি সময়ের কিছু আগেই পৌছে গেলাম। যদিও সচারাচর আমি টাইম মেইনটেইন করতে পারি না। আমি বসে আছি। কিছুবাদে অনন্যা এসে হাজির। 

অনন্যা ঃ এ আমি কি দেখছি? ১২ টায় আসার কথা। এখন ১১ঃ৪৭ মিনিট। আপনি স্যার এতো আগে? টাইম ট্রাভেল করছেন নাকি?

আমিঃ এই মানে কি?

অনন্যাঃ মানে কি আবার। তুমি জীবনে কোনদিন ঠিক সময়ে এসছো কোথাও? সব সময় লেট। তাই আজ আগে দেখে অবাক হবো না? আমার তো মনে হচ্ছে তুমি টাইম ট্রাভেল করে এসেছো আবার চলে যাবে।

আমিঃ আচ্ছা অনন্যা টাইম ট্রাভেল টা কি?

অনন্যাঃ বুদ্ধু একটা। এটাও জানো না? টাইম ট্রাভেল হচ্ছে সময় বা কাল পরিভ্রমণ। এর মাধ্যমে তুমি অতিতেও যেতে পারো আবার ভবিষ্যতেও যেতে পারো। কি মজার তাই না? আমি টাইম ট্রাভেল মেশিনটা পেলে অতিতে চলে যেতাম। সেখানে গিয়ে অতিতের সব ভুল গুলো শুধুরে নিতাম। 

আমিঃ বাকোয়াস সব কথা বার্তা। এটা আমরা সবাই জানি যে অতিতকে কখনো পরিবর্তন করা যায় না। ঠিক কি না?

অনন্যা ঃ হ্যা। 

আমিঃ তাহলে তুমি অতিতে গিয়ে কিভাবে তোমার ভুল গুলো ঠিক করবে? ধরো তুমি টাইম ট্রাভেল করে ছোটবেলায় ফিরে গেলে। সেখানে কিন্তু দুইটা তুমি থাকবে। একটা ছোট তুমি আর একটা বড় তুমি। মানে দুইটা সত্তা। কিভাবে দুইটা সত্তা একসাথে থাকতে পারে? আবার ধরো তুমি টাইম ট্রাভেল করে তোমার দাদা-দাদির বিয়ের অনুষ্ঠানে গেলে এবং তোমার দাদাকে হত্যা করলে। তোমার দাদাকে যদি হত্যা করো তাহলে তোমার সত্তা ভিত্তিহিন। আসলে টাইম ট্রাভেল বলতে কিছু নাই । যাস্ট কল্প কাহিনি। 

অনন্যা ঃ মনে করো, তুমি পৃথিবীতে দাঁড়িয়ে এক লক্ষ আলোকবর্ষ দূরের কোনো একটি নক্ষত্রকে টেলিস্কোপ দিয়ে দেখছো। এই মুহূর্তে তুমি যে জ্বলজ্বলে নক্ষত্রটি দেখছো সেটি কিন্তু নক্ষত্রটির বর্তমান অবস্থা না। আমরা কোনো বস্তু তখন দেখতে পাই যখন সেটি থেকে আলো এসে আমাদের চোখে পড়ে। অর্থাৎ, এক লক্ষ আলোকবর্ষ দূরে থাকা সেই নক্ষত্রটি থেকে আলো এসে পৃথিবীতে পৌঁছাতে এক লক্ষ বছর লেগেছে। তুমি এই মুহুর্তে নক্ষত্রটিকে যেমন দেখছো সেটি তোমার কাছে বর্তমান হলেও, নক্ষত্রটির কাছে সেটি এক লক্ষ বছর অতীতের ঘটনা।

এখন, কল্পনা করে নাও, সেই নক্ষত্রটি ব্ল্যাকহোলে হারিয়ে যাওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে সেখানে বাস করা একটি এলিয়েন ১ লক্ষ আলোকবর্ষ বা সেকেন্ড গতিতে পৃথিবীতে চলে আসলো। সে আসার পরও কিন্তু সে নক্ষত্রটিকে একই অবস্থায় দেখতে পাবে পৃথিবী থেকে। তারও এক লক্ষ বছর পর পৃথিবীবাসীরা সেই নক্ষত্রকে ব্ল্যাকহোলে হারিয়ে যেতে দেখবে। এতেই বোঝা যায় টাইম ট্রাভেল অসম্ভব কিছু নয়, হয়তো বিজ্ঞান খুব শিঘ্রই টাইম ট্রাভেল মেশিন আমাদের সামনে উপস্থাপন করবে।

আমিঃ তুমি একটু বেশি সাইন্স ফিকশন বই পড়ো আর মুভি দেখো। তাই মাথা গেছে।

অনন্যা ঃ চলো বই মেলা থেকে তোমাকে টাইম ট্রাভেল সম্পর্কিত কিছু বই কিনে দেই। 

আমি ঃ দরকার নেই। আমার নতুন বাসায় এমনিতেই টাইম ট্রাভেল এর বই দিয়ে ভরা।। 

কথা বলার এক ফাঁকে চোখ পরলো নীল শাড়ি পরা এক মেয়ের দিকে। মেয়েটি অপলক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ ছলছল করছে। সে আর কেউ না, রৌদূসী। আমি অনন্যাকে জিজ্ঞেস করলাম সামনে কি তুমি কাউকে দেখতে পাচ্ছো নীল শাড়ি পরা। অনন্যা উত্তর দিলো, না। তারমানে আমি আবার আমার কল্পনার জগৎ এ ফিরে যাচ্ছি। সেখানে রৌদূসী। কিন্তু আমি তো চাইনা আমার কল্পনায়, আমার স্মৃতিতে, আমার কলংকপুর এ একজন ছলনাময়ী থাকুক। 

আমি অনন্যাকে নিয়ে উঠে গেলাম। অনন্যা আমাকে কিছু বই কিনে দিলো গোয়েন্দা কাহিনি। তারপর দুজনে একসাথে লাঞ্চ শেষ করে সেখান থেকে রবিন্দ্র সরবরে কিছু সময় কাটিয়ে বাসায় ফিরে আসি। 

ওহ, আপনারা কেউ ভাববেন না যে অনন্যা আমার প্রেমিকা। হ্যা, সে আমাকে ভালোবাসে। কিন্তু আমি ভালোবাসি ছলনাময়ীকে। অনন্যা আমার যাস্ট ফ্রেন্ড। 

বাসায় এসেই চিটপটাং। বিকেলে একটা ঘুম দিয়ে সন্ধ্যায় উঠি। ফ্রেস হয়ে গরম গরম কফি হাতে নিয়ে ছাঁদে আসি। কফি আর সিগারেট। নিস্তব্ধ সন্ধাটা উপভোগ করছিলাম। খেয়াল করলাম পেছন দিয়ে কেউ একজন হাটছে। নূপুরের শব্দ। মোটামুটি কনফার্ম যে এটা রৌদূসী। একটু বাদেই হয়তো কাছে এসে অবান্তর কথাবলা শুরু করবে। কিন্তু না, সে আসলো না। পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখলাম ছলছল চোখে অভিমানী মুখ নিয়ে দূরে দাঁড়িয়ে আছে। তারপর চলে যায় সিঁড়ি বেয়ে নিচে।

আমিও সিগারেট শেষ করে রুমে ফিরে আসি। পিসি ঘাটাঘাটি করি। ফেসবুক ব্রাউজ, ইউটিউব, পর্নসাইট, কিছুই ভালো লাগছে না। মনে পরলো লোকটির বই এর কথা। অনন্যার কথা শুনে টাইম ট্রাভেল সম্পর্কে কিছুটা কৌতুহল জেগেছে। বই এর স্তুপ থেকে বাছাই করা শুরু করলাম, বেছে বেছে একটা হাতে নিলাম৷ পরিভ্রমণ তত্ব। এই একটি মাত্র বই বাংলাতে বাকি সবগুলোই ইংরেজি। ইংরেজি যে একদম বুঝিনা সেটা না। ইংরেজিতে যেটা বুঝতে ১ মিনিট সময় লাগবে বাংলাতে সেটা হয়তো ১০ সেকেন্ড। 

বিছানায় শুয়ে বই টা খুলে মুখের সামনে আনার সাথে সাথে বেড থেকে আচমকা একটা শব্দ হয়ে একটা লাইট জ্বলে উঠলো। লাইটটা এমনভাবে সেট হলো যে সেটার আলো আমার বইয়ের উপর পরলো এবং ঘরের অন্যান্য সকল বাতি নিভে গেলো।

প্রথমে অবাক হলেও পরে মনে পরলো এই বেডের মালিক ছিলেন একজন বিজ্ঞানী, হয়তো এটা তারই আবিষ্কার। ব্যাপারটা কিন্তু ভালোই। 

বই পড়তে পড়তে অনেকটা সময় কেটে গেলো। যতটুকু পরলাম তাতে টাইম ট্রাভেল সম্পর্কে এইটুকু বুঝতে পারলাম যে " এটি আসলে সময়ের (x,y,z)  অক্ষ বরাবর ভ্রমণ। আমরা সকলেই তিনটি মাত্রা সম্পর্কে অবগত,  দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং উচ্চতা। এই তিনটি মাত্রা বরাবর স্থান পরিবর্তন সম্ভব। তবে ন্যূনতম চতুর্মাত্রিক একটি ধারণা হচ্ছে সময়ের ধারণা। আজ পর্যন্ত এই চতুর্থ মাত্রা দিয়ে স্থান পরিবর্তন সম্ভব হয়নি। এই সময়ের অক্ষ বরাবর স্থান পরিবর্তনকে কালমাত্রিক সরণ বলা হয়। এক সময় থেকে আরেক সময়ে পরিভ্রমণকেও আমরা সময় ভ্রমণ বলে থাকি। এটি হতে পারে অতীতে ভ্রমণ, হতে পারে ভবিষ্যতে ভ্রমণ। 

খুব খুদা পেয়েছে। ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা ভাত বের করে একটা আস্ত আন্ডা ভেজে পেট পুজো করে আবার কফি আর সিগারেট হাতে নিয়ে বের হলাম ছাদে। কফিতে অবশ্য ১০ টা কিউপাইন ট্যাবলেট মেশানো আছে। নেশা মাথায় কবিতা আসবে, তবে ইদানীং আর ভালোবাসার কবিতা ভালো লাগে না। আচ্ছা টাইম ট্রাভেল নিয়ে কবিতা লিখলে কেমন হয়?

চেষ্টা তো করে দেখি, 

"

একদিন এখানেই বিবেকের ঘুম

ভেঙ্গেছিলো,

অথচ সেই বিবেক তবুও এলোমেলো !

কত চেতনার

সমুদ্রে তরী ভাসিয়ে কেটেছিলো সময়,

বাস্তবতার কষাঘাতে নিঃস্ব আজ

সে পরিচয় ৷

তাই

মাঝে মাঝে অতীতে ফিরে যেতে চাই,

ভাবছি টাইম মেশিনই একটা বানাই ৷

অগোছালো সব

কিছুকে নিমিষে সাজাই ৷

জীবনে সব ভ্রান্তির ক্যানভাস

আগুনে পোড়াই ৷"

হটাৎ পাশে এসে বসে রৌদূসী। কিছুক্ষন চুপ করে বসে থেকে আমায় বলে

রৌদূসী ঃ দূরে গিয়ে বসো। 

আমিঃ আমি দূরে গিয়ে বসবো কেন, তুমিই তো কাছে এসে বসেছো।

রৌদূসীঃ আমার পাশে বসতে তো ভালো লাগে না৷ যাও ঐ মেয়ের কাছে গিয়ে বসো। আর আমার কথাওতো রাখলে না।  দিব্যি বিড়ি সিগারেট ঘুমের ঔষধ খেয়ে যাচ্ছো।

আমিঃ আমি তোমার সব কথা রাখতে রাজি ছিলাম, সব ছাড়তে প্রস্তুত ছিলাম, বিনিময়ে তোমায় চেয়েছিলাম। ফলস্বরূপ  তুমি ধোকা দিয়েছো। আমার জীবনকে শুধু এলোমেলোই না, নষ্ট করে দিয়েছো।

রৌদূসী চুপ করে থাকে। তারপর পেছনে হাঁটা দেয়। আমার খুব ইচ্ছে করছিলো আমি একবার একটু পেছনে তাকিয়ে রৌদূসীকে দেখি। হৃদয়টাকে একটু প্রশান্তি দেই। কিন্তু এমন ধোকাবাজ মেয়ের প্রতি দিন দিন ঘৃনাটাও বেরে গেছে বা 

রৌদূসীঃ দুপুর, তুমি একটু সাবধানে থাকবে। তোমাকে নিয়ে আমার ভীষন ভয় হয়। 

রৌদূসী চলে যায়। আমার মাথাও ঝিম ঝিম করছে। কোনরকমে বিছানায় এসে সুয়ে পরি। তারপর নেশার ঘুম। 

ঘুমের মাঝে স্বপ্ন। বিশাল এক রুমে একটা মেশিনের সামনে আমি। হাতের ঘড়িতে সময় রাত ৩ টা। মেশিনে বসার একটা সিট আছে। আমি মেশিনে বসি। মেশিনের স্ক্রিনের আজকের তারিখ দেওয়া। পাশের সবুজ একটা বাটন চাপতে সবকিছু ঘোড়া শুরু করে। মাথা ঘুরছে। হটাৎ মেশিনটা একটা পার্কে নিয়ে আসে আমাকে । আমি মেশিনর স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখি এক বছর আগে চলে এসেছি, সময় বিকেল ৩ টা। মেশিন থেকে নিচে নেমে এদিক সেদিক তাকাতেই দেখি রৌদূসী তার ভালবাসার মানুষ শাকিলের ঠোটে চুম্বন এঁকে দিচ্ছে। মেজাজটা ভিষন গরম হয়ে গেলো। মেশিনের ভিতরে থাকা একটা পিস্তল এনে আমি দূর থেকে গুলি করলাম শাকিলকে লক্ষ করে। 


আচমকা শব্দে আমার ঘুম ভেঙে যায়। চোখ মেলতেই দেখি একজন অজ্ঞাত লোক আমার বেডের নিচ থেকে বের হলো। হাতে একটা বই । আমি জাপটে ধরলাম চিৎকার করলাম চোর চোর বলে। হাত দিয়ে তার মুখের মুখোশ খোলার চেষ্টা করলাম। উনি পকেট থেকে পিস্তল বের করলো। আমার বাহুতে গুলি করলো। তবে আমি তার হাতের বইটি ইতিমধ্যে আমার হাতে নিয়ে নিয়েছি। কোনভাবেই বই ছাড়লাম না। টেবিলের উপরে থাকা স্টিলের স্কেল দিয়ে তার দিকে কোপ দিলাম, প্রথম কোপটা মুখে লেগে কিছুটা কাটলো বোধহয়, তবে মুখোশ। তারপরেও কোপ দিলাম মাথায়। এবার ব্যাথা পেয়েছে। আর আসেপাশের লোকজনও সারা শব্দ দিচ্ছে। লোকটা আমাকে ঝাটকা মেরে ফেলে দিয়ে পালিয়ে গেলো।। 

আমি বুঝতে পারছি আমার চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। জ্ঞ্যান হারিয়ে ফেলবো, মারাও যেতে পারি। তবে তার আগে এই বইটি গোপন কোথাও সংরক্ষন করতে হবে। এর সাথে নিশ্চয়ই কোন রহস্য লুকিয়ে আছে। তানাহলে এই বই চুরি করতে আসবে কেন? কেনই বা সামান্য বই এর জন্য আমাকে গুলি করবে। 

আমি বইটি এক জায়গায় রাখলাম  তারপর চারিদিক অন্ধকার হয়ে এলো। লুটিয়ে পরলান ফ্লোরে। 


চলবে........

পরবর্তী পর্ব আগামীকাল দেওয়া হবে। যাদের গল্পটি ভালো লেগেছে তার অবশ্যই লাইক, কমেন্টস, শেয়ার ও আমাকে ফলো করবেন পরবর্তী পর্ব পেতে। অগ্রিম ধন্যবাদ। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Thank you for your participation .