শুক্রবার, ১৯ জানুয়ারী, ২০২৪

মেনিফেস্টো

#মেনিফেস্টো চৈত্র সংক্রান্তিতে শয়তান নেমে আসে ধরণীতে- আজ আমাদের মাঝে উপস্থিত হবেন-পরম করুণাময় ও অসীম ক্ষমতার অধিকারী মহান শয়তান বালঝাক- কথা গুলো বলে অনুষ্ঠানের মন্ত্রপাঠ শুরু করলেন শয়তানের মহা অনুসারিণী তাহমিনা শিলা। ইল ইল ইল ইলোডা ইবোরাহোবা ইল বালঝাক ইল ধীরে ধীরে হৃদয় এ মন্ত্রটা উচ্চারণ করল। এরপর পরী। আর এরপর নাজমুল। এরপর সকলে এক স্বরে। ধীরে ধীরে তাল বাড়ছে। মৃদুতালে বেজে ওঠা ছাগচামড়ার বাদ্যযন্ত্রটা এবার যেন মহাসমারোহে বেজে উঠল। একটা ছোট্ট বেদী। ঘরটা একদম ছোট। সেই ছোট ঘরের মাঝে চলছে আজকের আয়োজন। ওরা সবাই ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল ভাড়া চেয়েছিল। কিন্তু কোন এক কারণে অনুষ্ঠান বাতিল হয়ে যায়। তাই ছোট পরিসরে এই একটা ছোট্ট ঘরের ভেতর ধুপ ধুনো জ্বালিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে। প্রতিবছর এই দিনের জন্যেই অপেক্ষা করে এরা। এদের সকলেই যে শয়তানকে ভালোবাসে -তা নয়। অনেকেই ক্ষমতা এবং টাকার লোভে এসেছে। আজকে এদের মাঝে উপস্থিত আছেন বিজলি বাতি গ্রুপের চেয়ারম্যান অনূপ সরকার। তিনি নতুন যোগ দিয়েছেন। আজ ওনার দীক্ষা হবে। নিজের আত্মা শয়তানকে চুক্তিপত্রের মাধ্যমে দান করবেন তিনি। বিনিময়ে চাইবেন পুরো পৃথিবির শ্রেষ্ঠতম ধনী হবার খায়েশখানা। এজন্যে অবশ্য ওনার সদ্য জন্মানো কন্যা শিশুটিকে কেন শয়তানের কাছে নিয়ে আসতে হবে তিনি বোঝেন নি। তিনিও সমস্বরে গেয়ে চলেছেন এই অচেনা ভাষার গান। তবে ইল ইল এর যায়গায় তিনি ভুল করে মাঝে মাঝে ‘কিল কিল’ বলে ফেলছেন। তবে শয়তানের এতে কোন সমসয়া নেই। শয়তান ভুল মন্ত্রেও খুশি হন। শীলা এগিয়ে গেল মাঝখানে। হাতে একটা ছাগল বাঁধা। সেই ছাগলটিকে বোধহয় নেশা জাতীয় কোন দ্রব্য খাওয়ানো হয়েছে। সেটি ঢুলছিল। তাই এটিকে যখন শুইয়ে দেয়া হল মাটিতে তখন সেটি নিমেষেই শুয়ে পড়ল। কোন রা নেই। পা গুলো ছোঁড়াছুড়ি ও করেনি। মহিলা মাঝ থেকে সরে গেল। এরপর আগমন ঘটল এক আলখাল্লা পড়া অদ্ভুদ এক মানুষের, নাম জয় সাহা হৃদয়। তিনি সেই ছাগীর সাথে সহবাস শুরু করলেন মুহুর্তেই। এর মাঝেই চিৎকার চেচামেচি বেড়েছে। মন্ত্রের তীব্রতা বেড়েছে। আরো বেড়েছে বাদ্যের তাল। অনুপের নাক মুখ কুঁচকে গেল। তিনি নিজের সন্তানের ভবিষ্যত ভেবে বেশ শঙ্কিত হলেন। এরা কি এসব করার জন্যে ওনার শিশুটিকে নিয়ে আসতে বলেছে? অনুপ মিশ্র ঘামতে শুরু করেছেন। এর ভেতর সেই ছাগলের সাথে ইউএ করা বৃদ্ধটি উঠে বসেছে। সে নাচতে শুরু করেছে। নাচের তালে তালে তার শরীর থেকে খসে পড়ল আলখাল্লা। বেরিয়ে এল বিশালাকার বিচ্ছিরি পেট এর ফেটে ঝুলে যাওয়া চামড়ার হাত পা ওয়ালা শরীর। কিন্তু বৃদ্ধ উদ্ভটভাবে নাচছে। নাচের তালে তালে একজন বৃত্ত থেকে বেরিয়ে এল- জয় সাহা হৃদয়কে পড়ে শোনাল একটা মেনিফেস্টো। সামনের বছরে কী কী করা হবে দুনিয়া জুড়ে- এই হিসাব। সেখানে বিভিন্ন শহরে বোমা ও আত্মঘাতি হামলার সাথে সাথে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিশৃংক্ষলার কথাও উঠে এসেছে। সবার শেষে বলা হল নতুন ভাই হিসেবে যোগ দেয়া অনুপ সরকার নিজের সন্তানকে শয়তানের কাছে অর্পণ করবেন। কথাটা শুনেই বুকের ভেতর একটা ধুকপুক গড় বড় হয়ে গেল-টের পেলেন অনুপ সরকার। মনে পড়ল প্রথম কন্যার পিতা হবার অনুভূতি। মনে পড়ল প্রথম মুখে আধো আধো বাবা ডাক। মনে পড়ল মেয়ের আব্দারগুলো। খেলনা দিয়ে খেলার শব্দ গুলো যেন বেজে চলেছে ওনার কানের পাশে। এরপরেই তিনি দৌড় দিলেন। এক দৌড়ে ঘর থেকে বের হয়ে এসে প্রথম নিজের কন্যাকে বুকে জড়ালেন। সবাই ভেবেছিল তিনি শয়তানের উদ্যেশ্যে বলি দেয়ার জন্যে কন্যাকে আনতে গেছেন। কিন্তু পাঁচ মিনিট পর ও যখন তিনি ফিরলেন না তখন অনুষ্ঠান থেকে কয়েকজন ছুটে এসে দেখল অনুপ বাবু নেই ওখানে। পালিয়ে গেছেন। একটা গাড়ি থেকে কন্যাকে নামিয়ে দিলেন নুপ বাবু। মেয়েটি রাস্তা পার হয়ে স্কুলে ঢুকবে। ওনার মন আজ ফুরফুরে। তিনি হাজার হাজার কোটি টাকার পদ্মাসেতু ২ নির্মানের টেন্ডার পেয়ে গেছেন। এতেই তিনি ডগমগ। তিনি খেয়াল করেন নি। মেয়েটিও খেয়াল করেনি একটি বাস এগিয়ে আসছে। মেয়েটিকে পিষে ফেলার কন্ট্রাক্ট পেয়েছে ড্রাইভার মোকাব্বের। নগদ এক লাখ টাকা পাবে সে। এই টাকায় অনেক দিন মদ খেয়ে কাটাবে সে। ভাবতে ভাবতে স্পিড বাড়িয়ে দিল ও। সে ও জানে না- শয়তানের মেনিফেস্টোতে যাকে বলি দেয়ার কথা উল্লেখ থাকে তাঁকে যে কোন উপায়েই মরতে হয়। (সমাপ্ত)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Thank you for your participation .