রবিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

পেত্নীর ভালোবাসা কিন্তু প্রেতাত্তার কাছেই গচ্ছিত থাকবে


#পেত্নীর_ভালোবাসা_কিন্তু_প্রেতাত্তার_কাছেই_গচ্ছিত_থাকবে
লেখা ঃ MD Asadur Rahman - Shipon



সারাদিন ব্যাস্ত অফিস শেষে ক্লান্ত শরীরে সিঁড়ি বেয়ে উঠছে দুপুর । সদ্য  গ্রাজুয়েশন শেষ করে ১টা ছোট মাল্টিন্যাশনাল ফার্মে চাকরি করছে । বাসার সামনে এসে দরজার লক চাবি দিয়ে খুলতে গিয়ে দেখে দরজাটা ভেতর থেকে লাগানো । দুপুর কিছুটা অবাক হয়ে যায় । অবাক হবারই কথা । দুপুর একাই বাসায় থাকে , চাবিও তার কাছে । তাহলে কে ভিতরে ? খানিকখন ভেবে কলিংবেল চাপে। কিছুখন পর দরজা খুলে দেই ভিতর থেকে একজন ।

ভিতরের জন কে দেখে দুপুরের আরো বেশি অবাক হওয়ার কথা ছিল , কিন্তু সে অবাক না হয়ে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো । সত্যি সামনে যে দাড়িয়ে আছে তাকে দেখে মুগ্ধ না হয়ে উপায় আছে? যেন স্বর্গ থেকে হুরপরী নেমে এসেছে নীল শাড়ি পরে । নীল শাড়র, নীল চুরি্‌, কালো ব্লাউজ , কালো টীপ , চোখে আবছা কাজল , সব মিলিয়ে আগুনের নীল আলাভের চেয়েও বেশি সুন্দরী লাগছে রোদেলাকে । ওহ বলা হয়নি, রোদেলা দুপুরের প্রেমিকা । দীর্ঘ ৪ বছর ধরে প্রেম করছে ওরা , দুপুর যখন গ্রাম থেকে এসে ঢাকাইয় একটা পাবলিক কলেজে ভর্তি হয় তখন থেকেই ওদের সম্পর্ক । এরকম পবিত্র প্রেম এযুগে সচরাচর দেখা যায় না।

রোদেলা ঃ কি স্যার , আপনি কি ভিতরে আসবেন না ? নাকি বাইরেই দাড়িয়ে থাকবেন ?

দুপুরঃ আমার দুচোখ কি বলছে জানো ?

রোদেলা ঃ হ্যা । খুব ভালো করে জানি । সে বলছে আমি আজ ক্লান্তিহীন , আজ আমি এই পেত্নীটাকে দেখবো দুচোখ ভরে । ঠিক তো ????

কথা টা বলে দুজনে হাসতে হাসতে যেনো গড়িয়ে পরে । রোদেলা দুপুরের হাত ধরে ভিতরে নিয়ে যায় ।

রোদেলা দুপুরের গলা থেকে টাই খুলে হাতে  দিয়ে টায়েল দিয়ে বলে ফ্রেশ হয়ে আসো । দুপুর তাই করে । ফ্রেশ হয়ে রুমে গিয়ে প্রতিদিনের মত সিগারেট ধরিয়ে টানতে থাকে ।

রোদেলা ঃ দুপুর এই বিশ্রি গন্ধ আসছে কোথা থেকে ( বলতে বলতে রুমে ঢুকে) ?

দুপুর সিগারেট পিছনে লুকায় কিন্তু রোদেলা ততখনে দেখে ফেলেছে । মেয়েটার চোখে পানি চলে এসেছে ।

রোদেলা ঃ তুমি আমার কাছে প্রমিজ করেছিলে যে তুমি আর কোন্দিন স্মোক করবে না । কিন্তু তুমি করছো, আসলে তুমি সব সময় আমাকে মিথ্যে বলো।

দুপুর রোদেলার কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরে কপালে ১টা চুমু খেয়ে বলে,

দুপুর ঃ আজ তোমাকে , মানে পেত্নীকে ছুয়ে প্রেতাত্তা প্রমিজ করছে যে প্রেতাত্তা আর কোনোদিন সিগারেট খাবে না । কিন্তু পেত্নী কেউ প্রমিজ করতে হবে যে সে প্রেতাত্তাকে কখনো ছেরে যাবে না । কি প্রমিজ করো ? (হাত বারিয়ে দেয় দুপুর)

রোদেলা ঃ (দুপুরের বুকে মাথা রেখে আর এক হাত দুপুরের হাতে রেখে) মনে আছে দুপুর ? আমি তোমাকে কথা দিয়েছিলাম যে আমি একদিনের জন্য হলেও তোমার বউ হবো , তোমার সংসার করবো । আমি কিন্তু আমার কথা রেখেছি । তুমিও তোমার কথা রাখবে , আমাকে দেওয়া কোন কথা ভাংবে না কিন্তু ।

দুপুর ঃ জ্বী মহারানী । মহারানী আমার যে এখন খুদা লেগেছে , কিছু কি ব্যবস্থা করেছেন এই অধম রাজার জন্য ।

রোদেলা ঃ জ্বী অধম মহারাজা আপনার জন্য ব্যবস্থা হয়েছে , আপনি আসুন । আমি টেবিলে সব সাজাচ্ছি ।

রোদেলা টেবিলে সব গুছিয়ে দুপুর কে ডাক  দেয় , দুপুর আসে । টেবিলে দুপুর বসার পর রোদেলা লাইট বন্ধ করে মোম জালিয়ে দেয় ।

দুপুর ঃ ক্যান্ডেললাইট ডিনারের ব্যাবস্থা?  বাহ দারুন তো ।

রোদেলা ঃ আমি আমার প্রেতাত্তাকে আজ নিজের হাতে বেড়ে খাওয়াবো ।

দুপুর ঃ একি । আমার সব পছন্দের খাবারই তো দেখি তুমি রান্না করেছো । চিংড়ীর মালাইকারী , ঈলিশের পাতুরী । গরুর মাংসো  ভুনা । জান তুমি এতো কিছু কখন করলে ?

রোদেলা ঃ খাওয়ার সময় বেশি কথা বলতে হয় না । চুপ করে খাও । ( বলে রোদেলা হাত পাখা দিয়ে দুপুরকে বাতাস করা শুরু করে)

দুপুর ঃ রোদেলা , লাইট না জললেও ফ্যান কিন্তু চলছে ।

রোদেলা ঃ আমি জানি ।

দুপুর ঃ তাহলে বাতাস করছো যে ?

রোদেলা ঃ স্বামী খাওয়ার সময় তাকে হাত পাখা দিয়ে বাতাস করতে হয়। তুমি কি সেটাও জানো না ?

কথা টা শুনে দুপুর হেসে কুটিকুটি হয়ে যায় ।

খাওয়ার পর্ব শেষ করে দুপুর বেডরুমে গিয়ে শুয়ে পরে । রোদেলা এক বাটি পায়েশ নিয়ে এসে দুপুর কে খেতে বলে কিন্তু দুপুর বলে যে সে অনেক খেয়েছে তাই আজ আর খেতে পারবে না । রোদেলা বাটিটি টেবিলে রেখে দেয়।

তারপর দুপুর আর রোদেলা শুয়ে পরে , বলতে গেলে সারারাত গল্প করে কাটিয়ে ভোরের দিকে ঘুমিয়ে পরে ।





সকাল ৬টার মত বাজে । দুপুরের ফোনে মাহাদির কল । প্রথমবার টের পায় না, পরেরবার ঘুম ভেঙ্গে যায় দুপুরের । ফোন টা পিক করে দুপুর,

দুপুর ঃ কিরে দোস্ত ? এতো সকালে ?

মাহাদী ঃ দোস্ত তুই কোথায় রে ?

দুপুর ঃ এই তো বাসায় ঘুমাচ্ছি । কেন মামা ?

মাহাদি ঃ দোস্ত ১টা ব্যাড নিউজ আছে । রোদেলা গতকাল সন্ধ্যায় রোড এক্সিডেন্টে মারা গেছে । আমি মাত্রই খবরটা পেলাম । তাই তোকে জানালাম ।

দুপুর ঃ ধুর গাধা । রোদেলা আমার বাসায় , আমার সাথেই আছে। (কথাটা বলে পাসে ফিরে দেখে রোদেলা নেই , সেখানে ১টা চিঠি পরে আছে ) (নিশ্চুপ কন্ঠে) আমি তোকে একটু পরে ফোন দিচ্ছি ।

চিঠিটা হাতে নিয়ে খুলে পড়া শুরু করে দুপুর

আমার জীবনের চাইতেও সবচাইতে দামী আর প্রিয় মানুষ আমার প্রেতাত্তা

আমাদের জীবন টা খুবই নাটকিও । হাজার রঙ্গে আচ্ছন্য । আর যে এই নাটক টা পরিচালনা করছে সে ও কেমন জানি । এই দেখো বাবু , আমাকে তোমার কাছ থেকে নিয়ে গেলো । হ্যা আমি আর বেচে নেই । এই তুমি কিন্তু কাদবে না । জানো যখন এক্সিডেন্ট টা হয় , খুব রক্ত ঝরছিলো , ব্যথাও হচ্ছিলো অনেক । একটা সময় বুঝতে পারি যে আমি আর বেশিখন নেই এই পৃথিবীতে।  জানো তখন আরো বেশি খারাপ লাগছিল এই ভেবে যে আমি চলে গেলে তুমি খুব একা হয়ে যাবে । কে দেখেশুনে রাখবে পেত্নীর এই প্রেতাত্তাটা কে । কিন্তু একটা সময় আমাকে পৃথিবীর মায়া ছেরে চলে আসতে হয় । কিন্তু তোমাকে তো কথা দিয়েছিলাম যে আম তোমার ঘরের বউ হব । জান আমি কিন্তু আমার কথা রেখেছি। বউ হয়ে এসেছিলাম, তোমার সাথে থেকেছি, তোমাকে খায়িয়ে দিয়েছি, আদর দিয়েছি। আর তুমিও কিন্তু তোমার দেওয়া কথাগুলো রাখবে । কোন বাজে কাজ করবে না । আর আমার কথা মনে করে উল্টা পাল্টা কিছু করবে না । তবে চিঠিটা পরার পর খুব কাদবে , তাহলে মন টা হালকা হবে । আর প্লিজ নামাজ পরে আমার জন্য দোয়া করবে । জীবন টা কে নতুন করে সাজাবে । নিজের খেয়াল রাখবে । আর মনে রাখবে “””” পেত্নীর ভালোবাসা কিন্তু প্রেতাত্তার কাছেই গচ্ছিত থাকবে “”””

আল্লাহ হাফেজ ।

চিঠিটা পরে কান্নায় ভেঙ্গে পরে দুপুর । অচেতন হয়ে পরে। জ্ঞ্যান হারিয়ে ফেলে। সেই জ্ঞ্যান দুপুরের আর ফেরেনি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Thank you for your participation .