#পেত্নীর_ভালোবাসা_কিন্তু_প্রেতাত্তার_কাছেই_গচ্ছিত_থাকবে
লেখা ঃ MD
Asadur Rahman - Shipon
সারাদিন ব্যাস্ত অফিস শেষে ক্লান্ত শরীরে
সিঁড়ি বেয়ে উঠছে দুপুর । সদ্য গ্রাজুয়েশন
শেষ করে ১টা ছোট মাল্টিন্যাশনাল ফার্মে চাকরি করছে । বাসার সামনে এসে দরজার লক
চাবি দিয়ে খুলতে গিয়ে দেখে দরজাটা ভেতর থেকে লাগানো । দুপুর কিছুটা অবাক হয়ে যায় ।
অবাক হবারই কথা । দুপুর একাই বাসায় থাকে , চাবিও তার
কাছে । তাহলে কে ভিতরে ? খানিকখন ভেবে কলিংবেল চাপে। কিছুখন পর দরজা খুলে দেই ভিতর
থেকে একজন ।
ভিতরের জন কে দেখে দুপুরের আরো বেশি অবাক
হওয়ার কথা ছিল , কিন্তু সে অবাক না হয়ে মুগ্ধ
দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো । সত্যি সামনে যে দাড়িয়ে আছে তাকে দেখে মুগ্ধ না হয়ে উপায়
আছে? যেন স্বর্গ থেকে হুরপরী নেমে এসেছে নীল শাড়ি পরে । নীল
শাড়র, নীল চুরি্, কালো ব্লাউজ ,
কালো টীপ , চোখে আবছা কাজল , সব মিলিয়ে আগুনের নীল আলাভের চেয়েও বেশি সুন্দরী লাগছে রোদেলাকে । ওহ বলা
হয়নি, রোদেলা দুপুরের প্রেমিকা । দীর্ঘ ৪ বছর ধরে প্রেম করছে ওরা , দুপুর যখন গ্রাম থেকে এসে ঢাকাইয় একটা পাবলিক কলেজে ভর্তি হয় তখন থেকেই
ওদের সম্পর্ক । এরকম পবিত্র প্রেম এযুগে সচরাচর দেখা যায় না।
রোদেলা ঃ কি স্যার ,
আপনি কি ভিতরে আসবেন না ? নাকি বাইরেই দাড়িয়ে
থাকবেন ?
দুপুরঃ আমার দুচোখ কি বলছে জানো ?
রোদেলা ঃ হ্যা । খুব ভালো করে জানি । সে বলছে
আমি আজ ক্লান্তিহীন , আজ আমি এই পেত্নীটাকে দেখবো
দুচোখ ভরে । ঠিক তো ????
কথা টা বলে দুজনে হাসতে হাসতে যেনো গড়িয়ে পরে
। রোদেলা দুপুরের হাত ধরে ভিতরে নিয়ে যায় ।
রোদেলা দুপুরের গলা থেকে টাই খুলে হাতে দিয়ে টায়েল দিয়ে বলে ফ্রেশ হয়ে আসো । দুপুর তাই
করে । ফ্রেশ হয়ে রুমে গিয়ে প্রতিদিনের মত সিগারেট ধরিয়ে টানতে থাকে ।
রোদেলা ঃ দুপুর এই বিশ্রি গন্ধ আসছে কোথা
থেকে ( বলতে বলতে রুমে ঢুকে) ?
দুপুর সিগারেট পিছনে লুকায় কিন্তু রোদেলা
ততখনে দেখে ফেলেছে । মেয়েটার চোখে পানি চলে এসেছে ।
রোদেলা ঃ তুমি আমার কাছে প্রমিজ করেছিলে যে
তুমি আর কোন্দিন স্মোক করবে না । কিন্তু তুমি করছো, আসলে তুমি সব সময় আমাকে মিথ্যে
বলো।
দুপুর রোদেলার কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরে কপালে ১টা
চুমু খেয়ে বলে,
দুপুর ঃ আজ তোমাকে ,
মানে পেত্নীকে ছুয়ে প্রেতাত্তা প্রমিজ করছে যে প্রেতাত্তা আর
কোনোদিন সিগারেট খাবে না । কিন্তু পেত্নী কেউ প্রমিজ করতে হবে যে সে প্রেতাত্তাকে
কখনো ছেরে যাবে না । কি প্রমিজ করো ? (হাত বারিয়ে দেয় দুপুর)
রোদেলা ঃ (দুপুরের বুকে মাথা রেখে আর এক হাত
দুপুরের হাতে রেখে) মনে আছে দুপুর ? আমি
তোমাকে কথা দিয়েছিলাম যে আমি একদিনের জন্য হলেও তোমার বউ হবো , তোমার সংসার করবো । আমি কিন্তু আমার কথা রেখেছি । তুমিও তোমার কথা রাখবে ,
আমাকে দেওয়া কোন কথা ভাংবে না কিন্তু ।
দুপুর ঃ জ্বী মহারানী । মহারানী আমার যে এখন
খুদা লেগেছে , কিছু কি ব্যবস্থা করেছেন এই
অধম রাজার জন্য ।
রোদেলা ঃ জ্বী অধম মহারাজা আপনার জন্য ব্যবস্থা
হয়েছে , আপনি আসুন । আমি টেবিলে সব সাজাচ্ছি ।
রোদেলা টেবিলে সব গুছিয়ে দুপুর কে ডাক দেয় , দুপুর আসে
। টেবিলে দুপুর বসার পর রোদেলা লাইট বন্ধ করে মোম জালিয়ে দেয় ।
দুপুর ঃ ক্যান্ডেললাইট ডিনারের ব্যাবস্থা? বাহ দারুন তো ।
রোদেলা ঃ আমি আমার প্রেতাত্তাকে আজ নিজের
হাতে বেড়ে খাওয়াবো ।
দুপুর ঃ একি । আমার সব পছন্দের খাবারই তো
দেখি তুমি রান্না করেছো । চিংড়ীর মালাইকারী , ঈলিশের
পাতুরী । গরুর মাংসো ভুনা । জান তুমি এতো
কিছু কখন করলে ?
রোদেলা ঃ খাওয়ার সময় বেশি কথা বলতে হয় না ।
চুপ করে খাও । ( বলে রোদেলা হাত পাখা দিয়ে দুপুরকে বাতাস করা শুরু করে)
দুপুর ঃ রোদেলা ,
লাইট না জললেও ফ্যান কিন্তু চলছে ।
রোদেলা ঃ আমি জানি ।
দুপুর ঃ তাহলে বাতাস করছো যে ?
রোদেলা ঃ স্বামী খাওয়ার সময় তাকে হাত পাখা
দিয়ে বাতাস করতে হয়। তুমি কি সেটাও জানো না ?
কথা টা শুনে দুপুর হেসে কুটিকুটি হয়ে যায় ।
খাওয়ার পর্ব শেষ করে দুপুর বেডরুমে গিয়ে শুয়ে
পরে । রোদেলা এক বাটি পায়েশ নিয়ে এসে দুপুর কে খেতে বলে কিন্তু দুপুর বলে যে সে
অনেক খেয়েছে তাই আজ আর খেতে পারবে না । রোদেলা বাটিটি টেবিলে রেখে দেয়।
তারপর দুপুর আর রোদেলা শুয়ে পরে ,
বলতে গেলে সারারাত গল্প করে কাটিয়ে ভোরের দিকে ঘুমিয়ে পরে ।
সকাল ৬টার মত বাজে । দুপুরের ফোনে মাহাদির কল
। প্রথমবার টের পায় না, পরেরবার ঘুম ভেঙ্গে যায়
দুপুরের । ফোন টা পিক করে দুপুর,
দুপুর ঃ কিরে দোস্ত ?
এতো সকালে ?
মাহাদী ঃ দোস্ত তুই কোথায় রে ?
দুপুর ঃ এই তো বাসায় ঘুমাচ্ছি । কেন মামা ?
মাহাদি ঃ দোস্ত ১টা ব্যাড নিউজ আছে । রোদেলা
গতকাল সন্ধ্যায় রোড এক্সিডেন্টে মারা গেছে । আমি মাত্রই খবরটা পেলাম । তাই তোকে
জানালাম ।
দুপুর ঃ ধুর গাধা । রোদেলা আমার বাসায় ,
আমার সাথেই আছে। (কথাটা বলে পাসে ফিরে দেখে রোদেলা নেই , সেখানে ১টা চিঠি পরে আছে ) (নিশ্চুপ কন্ঠে) আমি তোকে একটু পরে ফোন দিচ্ছি
।
চিঠিটা হাতে নিয়ে খুলে পড়া শুরু করে দুপুর
আমার জীবনের চাইতেও সবচাইতে দামী আর প্রিয়
মানুষ আমার প্রেতাত্তা
আমাদের জীবন টা খুবই নাটকিও । হাজার রঙ্গে
আচ্ছন্য । আর যে এই নাটক টা পরিচালনা করছে সে ও কেমন জানি । এই দেখো বাবু ,
আমাকে তোমার কাছ থেকে নিয়ে গেলো । হ্যা আমি আর বেচে নেই । এই তুমি
কিন্তু কাদবে না । জানো যখন এক্সিডেন্ট টা হয় , খুব রক্ত
ঝরছিলো , ব্যথাও হচ্ছিলো অনেক । একটা সময় বুঝতে পারি যে আমি
আর বেশিখন নেই এই পৃথিবীতে। জানো তখন আরো
বেশি খারাপ লাগছিল এই ভেবে যে আমি চলে গেলে তুমি খুব একা হয়ে যাবে । কে দেখেশুনে
রাখবে পেত্নীর এই প্রেতাত্তাটা কে । কিন্তু একটা সময় আমাকে পৃথিবীর মায়া ছেরে চলে
আসতে হয় । কিন্তু তোমাকে তো কথা দিয়েছিলাম যে আম তোমার ঘরের বউ হব । জান আমি
কিন্তু আমার কথা রেখেছি। বউ হয়ে এসেছিলাম, তোমার সাথে থেকেছি, তোমাকে খায়িয়ে
দিয়েছি, আদর দিয়েছি। আর তুমিও কিন্তু তোমার দেওয়া কথাগুলো রাখবে । কোন বাজে কাজ
করবে না । আর আমার কথা মনে করে উল্টা পাল্টা কিছু করবে না । তবে চিঠিটা পরার পর
খুব কাদবে , তাহলে মন টা হালকা হবে । আর প্লিজ নামাজ পরে
আমার জন্য দোয়া করবে । জীবন টা কে নতুন করে সাজাবে । নিজের খেয়াল রাখবে । আর মনে
রাখবে “””” পেত্নীর ভালোবাসা কিন্তু প্রেতাত্তার কাছেই গচ্ছিত থাকবে “”””
আল্লাহ হাফেজ ।
চিঠিটা পরে কান্নায় ভেঙ্গে পরে দুপুর । অচেতন
হয়ে পরে। জ্ঞ্যান হারিয়ে ফেলে। সেই জ্ঞ্যান দুপুরের আর ফেরেনি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Thank you for your participation .