শনিবার, ২১ জানুয়ারী, ২০১৭

নীলাম্বরী

নীলাম্বরী
A R Shipon

খুব বাজে সময় কাটছে দুপুরের। কোন কাজেই মন বসছে না। ইদানিং লেখালেখিও হচ্ছে না ঠিকঠাক মত। লিখতে গেলে লেখা এগুচ্ছে না। খুব কষ্ট হচ্ছে ভিতরে ভিতরে দুপুরের। তাই ফেসবুকে বেশি সময় কাটানো হয়। যুক্তরাষ্টের ১টা জরীপে দেখা গেছে যে যারা একাকিত্ব অনুভব বেশি করে, তারা ফেসবুক সহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশি সময় কাটায়। দুপুরেরও তাই হয়েছে। ছাঁদ, রুম আর ফেসবুকই এখন তার পৃথিবী। নিজের রুমে বসে দুপুর কম্পিউটার কম্পিউটার ব্রাউজ করছে
শাকিল ঃ ভাই কি করেন ?
দুপুর ঃ ওহ শাকিল । কখন আসলা?
শাকিল ঃ ভাই সারাদিন ফেসবুকে থাকলে হবে ? আর গল্প ও লিখছেন না এখন। কি হইছে ভাই?
দুপুর ঃ আরে না, কি হবে আমার। লেখা কেন জানি আসছে না মাথায়। আর ফেসবুক। ফেসবুকে শুধু গল্পই পড়ি। ভালো লাগে।
শাকিল ঃ ভাই গল্প লেখেন, সবাই আমরা আপনার গল্প মিস করছি। ১টা রোমান্টিক গল্প লিখেন। আপনার প্রেমিকা কে নিয়ে লেখেন।
দুপুর ঃ হাহাহাহাহাহা প্রেমিকা পাব কই রে ভাই? রোদেলা তো অনেক আগেই ছ্যাকা দিয়ে ব্যাকা করে দিয়ে গেছে আমাকে।
শাকিলঃ ভাই নতুন করে শুরু করেন। ফেসবুকে তো কতই মেয়ে আছে, ১টারে জুটাই নেন।
দুপুর ঃ একজন সঙ্গী থাকলে খারাপ হত না। গল্প লেখার উপকরণ পাওয়া যেত। কিন্তু কেউ তো আমাকে পছন্দ করে না ।
শাকিল ঃ কি যে বলেন ভাই।খুজেন খুজেন ফেসবুকে, পেয়ে যাবেন। আমি আসি এখন।
শাকিল চলে যায়, দুপুর রুমের লাইট বন্ধ করে শুয়ে পরে। ভাবছে, আচ্ছা সত্যি যদি আবার এমন কেউ আসে যে আবার আমার জীবন টা গুছিয়ে দিবে। শাষন করবে কেউ আমাকে। মেঘলা দিনে বৃষ্টির গান শুনাবে, কোন কারনে মন খারাপ হলে নীল শাড়ি পরে চলে আসবে মন ভালো করতে। ইচ্ছে হলে আমাকে সাজাবে ইচ্ছে মত ব্যঙ্গ কোন সাজে। এই সব চিন্তা করতে করতে ঘুমিয়ে পরে। কলিংবেলের শব্দে ঘুম ভাঙে দুপুরের। দরজা খুলে দেয়। খালা এসেছে , রান্না করতে। খালা ঢুকে যায় রান্না ঘরে। দুপুর রুমে ফিরে এসে কম্পিউটারের সামনে বসে। ফেসবুকে ব্রাউজিং। কিছুখন পর ১টা এস,এম,এস আসে নিলাম্বরী নামের এক আইডি থেকে ।
নিলাম্বরী ঃ hi .
দুপুর ঃ hlw
নিলাম্বরী ঃ আপনি দারুন লেখেন। এতো সুন্দর সুন্দর গল্প কোথায় পান আপনি?
দুপুর ঃ তাই। ধন্যবাদ।
নিলাম্বরী ঃ আপনার নামটাও অনেক সুন্দর।
দুপুর ঃ আর ধন্যবাদ দিতে পারবো না । আপনার নাম কি?
নিলাম্বরী ঃ আমার নাম টূনটুনি। আচ্ছা আপনি কি নিলাম্বরী নামের অর্থ জানেন? নামটা আমি আপনার একটা গল্প থেকে চুরি করিছি।
দুপুর ঃ নীল পড়িদের রাজকন্যাকে নিলাম্বরী বলে ।
নিলাম্বরী ঃ ওয়াও।
এখান থেকেই শুরু হয় টুনটুনি(নিলাম্বরী) আর দুপুরের বন্ধুত্ব, বন্ধুত্ব একসময় প্রেমে পরিনত হয়। তবে এখনো তাদের দেখা হয় নাই। ফেসবুকে অনেক ছবি দিয়েছে টুনটুনি। টুনটুনির সাদা রঙ এর শাড়ি পরা এক ছবি দেখে দুপুর বেশি পাগল হয়ছে। মেয়েটা সত্যিই অনেক বেশি সুন্দরী।
দুপুর ঃ আচ্ছা টুনটুনি পাখি আমরা দেখা করবো কবে? আসো না প্লিজ দেখা করি।
নিলাম্বরী ঃ দেখা করে কি হবে ? থাক না।
দুপুর ঃ না প্লিজ। আসো আজ দেখা করি। কোথায় আসবা বলো? নিলাম্বরী ঃ দেখা করতেই হবে বাবু। আচ্ছা চারুকলার সামনে সন্ধ্যায় আসবো আমি।
দুপুর ঃ ঠিক আছে।
দুপুর নীল রঙের ১টা পাঞ্জাবী পরে চলে আসে চারুকলায়। আসে পাসে অনেক মানুষ। অনেকখন ধরে বসে থাকে। টুনটুনির এখনো কোন খবর নাই আসার। হটাৎ পাসে ছাত্রদের মাঝে মারামারি শুরু হয়। সবাই দৌড়াদৌড়ি করে সরে যায় । দুপুর একা প্রায়, চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এমন সময় নিলাম্বরী পেছন দিয়ে এসে ডাক দেয়।
নিলাম্বরী ঃ এই পাজি ছেলে কোথায় যাও তুমি? আমাকে আসতে বলে এখন পালিয়ে যাচ্ছো যে?
দুপুর ঃ (মুগ্ধদৃষ্টিতে তাকিয়ে) তুমি এত্তো সুন্দর কেন। মনে হচ্ছে সত্যিই নীলপড়িদের দেশ থেকে তাদের রাজকন্যা নিলাম্বরী নেমে এসেছে।
নিলাম্বরী ঃ হাহাহাহাহাহাহাহাহা।(মুগ্ধকরা হাসি) শুনো তুমি আমাকে আগেই তোমার প্রেমের জালে ফেলছো। নতুন করে পাম দিয়ে আমার সাথে টাংকি মারতে হবে না। এইখানে ঝামেলা হচ্ছে , চলো সামনে যাই।
দুপুর ঃ চল ঐ সামনে গিয়ে বসি ।
চারুকলার পাশের কোন এককোনায় বসে চলে তাদের প্রেম উদযাপন।তারপর ফিরে আসে বাসায় দুপুর। অনেকদিন পর লিখতে বসে। লিখেও ফেলে একটি গল্প। গল্পের নাম নিলাম্বরী। গল্পটা পরে টুনটুনি খুব খুশি হয়। নিজের টাইমলাইনে শেয়ার ও করে।
প্রতিদিন ওদের কথা হয়। একদিন বৃষ্টি পরছিল। সেই সময় টুনটুনি ফোন দেয় দুপুরকে।
টুনটুনি ঃ কোথায় তুমি?
দুপুর ঃ আমি বাসায়, কেনো?
টুনটুনি ঃ বাইরে আসো না প্লিজ।তোমার বাসার পিছনের মাঠে আসো।
দুপুর ঃ বাইরে তো বৃষ্টি হচ্ছে, তুমি বাইরে কি করো? আমি আসছি দাড়াও।
ফোনটা কেটে দিয়ে দৌড়ে মাঠে যায় দুপুর। গিয়ে দেখে টুনটুনি নীল শাড়ি পরে আকাশের দিকে মাথা তুলে দুহাত মেলে বৃষ্টিতে ভিজছে।
দুপুর ঃ এই পাগলি তুমি এইভাবে বৃষ্টিতে ভিজতেছো কেন? জ্বর আসবে তো।
টুনটুনি ঃ আরে পাগলা জ্বর আসবে কেন। আসো আমরা একসাথে বৃষ্টি উদযাপন করি। হাত দাও তোমার।
দুপুর ঃ হাত দিবো … মাথা খারাপ, মানুষ জন দেখে কি বলবে।
টুনটুনি ঃ আরে ধরো তো, কেউ দেখবে না।
দুপুর টুনটুনির হাত ধরে কাছে টেনে নেয়। কপালে ছোট্ট করে চুমুও একেঁ দেয়।
টুনটুনি ঃ এই পাজি ছেলে এখন কেউ দেখছে না? যাও ছারো আমাকে।
দুপুর ঃ দেখুক।
টুনটুনিঃ ওই কে যেন আসছে। আমি যাই।
যাই বলে দৌড়ে চলে যায় টুনটুনি। পিছন থেকে তাকিয়ে থাকে দুপুর।
অজ্ঞ্যাত বেক্তি ঃ ভাই কি করেন এখানে? বৃষ্টিতে ভিজেন?
দুপুর ঃ না ভাই। জাহাজ চালাইতেছি আমি।
কথাটি বলে দুপুর চলে যায়। লোকটি দুপুরের দিকে তাকিয়ে হাঁসতে থাকে। দুপুরের সেদিকে খেয়াল নেই, সে নিজের মত হেটে চলে যায়।
বাসায় ফিরে ফ্রেস হয়ে ঘুম দেয় দুপুর । নিরবের ফোনে ঘুম ভাঙে দুপুরের।
দুপুর ঃ সালা এত দিন পর আমার কথা মনে পরছে?
নিরব ঃ তুই কে? যে তোর কথা মনে করতে হবে।
দুপুর ঃ আমি দিকভ্রষ্ট হিমু।
নিরব ঃ কবি গিরি বাদ দে, শোন কোথায় আছিস?
দুপুরঃ এইতো রুমে। কেন মামা ?
নিরব ঃ এখনি রেডি হন আপনি। আজ কক্সবাজার যাচ্ছি আমরা, রাত ১০ টায় কলাবাগান থেকে বাস ছারবে।
দুপুর ঃ সত্যি মামা। মামা আমি রেডি তোরা আয়। অই নাহ একটু ওয়েট কর, আমি একটু নিলাম্বরীর সাথে কথা বলে নেই।
নিরব ঃ ওই হালা এইডা আবার কেডা?
দুপুর ঃ মামা আমি একটু পর তোকে ফোন দিচ্ছি।
কথা বলে কেটে দেয় ফোনটা। ফেসবুকে ঢুকে দেখে নিলাম্বরী অনলাইনে আছে।
দুপুর ঃ আছো তুমি?
নিলাম্বরী ঃ হ্যা গো বলো।
দুপুর ঃ আমি আজ কক্সবাজার যেতে চাচ্ছি ২দিনের জন্য, যাবো আমি?
নিলাম্বরী ঃ হ্যা অবস্যই যাবে।
দুপুর ঃ থ্যাংক ইউ বাবু ্‌্‌্‌্ উম্মাহ উম্মাহ উম্মাহ ………।
রাত ১০টার সময় বাস ছারে । রানা , নিরব, মাহাদি , দুপুর আর ইউসুফ যাচ্ছে। বাসে মাহাদি আর দুপুর পাশাপাশি সিটে বসে। সারা রাস্তা দুপুর মাহাদিকে নিলাম্বরীর কথা বলে। ভোর ৫টার দিকে ওরা পৌছায় কক্সবাজার। রেস্ট নিয়ে বেড়িয়ে পরে। সারাদিন বিচে সময় কাটায় গোসল করে। আর মাঝে মাঝে দুপুর ফোন বের করে কানে দিয়ে ওদের থেকে দূরে সরে এসে কথা বলে।
মাহাদি ঃ কিরে কার সাথে কথা বলিস এতো ?
দুপুর ঃ টুনটুনির সাথে কথা বলছি, তুই যা আমি কথা শেষ করে আসছি।
দুপুরের হটাৎ কল আসে, রিং বেজে উঠে, ফোনে লাইট বেজে উঠে।
মাহাদি ঃ কিরে তুই না টুনটুনির সাথে কথা বলছিস , তাহলে ফোন বাজলো কিভাবে ?
দুপুর ঃ মনে হয় ফোন টা কেটে গেছিল।
মাহাদি ঃ আচ্ছা সামনে আয়।
সন্ধ্যার সময় ওরা সবাই বিচে হাটছে। দুপুর টুনটুনিকে খুব মিস করছে। সে একা একা হাটছে আনমনে। এমন সময় পিছন থেকে
টুনটুনি ঃ টুকি
দুপুর ঃ নিলাম্বরী তুমি এখানে?
টুনটুনি ঃ তুমি আমাকে খুব মিস করবে ভেবে চলে এলাম।
দুপুর ঃ একা আসছো?
টুনটুনি ঃ না। সাথে আমার ২টা বন্ধু এসেছে। ওরা ঐদিকে আছে।
এরপর ২জন বীচ ধরে হাটতে থাকে, হাত ধরে অনেক দূর হাটে, গল্প করে, চুমু খায়, একে অন্যের দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। কিছু ছবি তুলে নেয় একসাথে। সমুদ্রে পা ভিজিয়ে বসে থাকে, টুনটুনি দুপুরের কাঁধে মাথা রেখে হাতে হাত রেখে গল্প করছে …
হটাৎ মাহাদী দুপুরের পাশে এসে বসে যেখানে টুনটুনি বসে ছিল।
দুপুর ঃ এই তুই। টুনটুনি কই? তুই টুনটুনির উপরে বসলি কেন? ও কোথায় গেলো?
মাহাদি ঃ মামা তুই শান্ত হ … টুনটুনি বা নিলাম্বরী বলে কেউ নাই। সব তর কল্পনা। তোর একাকি জীবন আর গল্পের কল্পনা তোকে অসুস্থ বানিয়ে ফেলেছে।
দুপুর ঃ মজা নিস আমার সাথে? ও আমার পাসেই একটু আগে বসা ছিল। ও কোথায় সেটা বল?
রানা ঃ মামা বিশ্বাস কর নিলাম্বরী বলে কেউ নাই। তুই ফোনে কারো সাথে কথা বলতি না, আমি সব চেক করে দেখেছি।
দুপুর ঃ ফাইজলামির ১টা মাত্রা আছে। থাম তোরা। একটু আগেই ওর সাথে ছবি তুলছি। ওয়েট, দেখাচ্ছি তোদের।
দুপুর পকেট থেকে ফোন বের করে। গ্যালারী থেকে ছবি বের করে। ছবিতে দুপুর একা, পাসে কেউ নেই। ছবি গুলো দেখে দুপুর জ্ঞ্যান হারিয়ে ফেলে। বন্ধুরা ধরাধরি করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে ঢাকায় ১টা মানুষিক হাসপাতালে ভর্তি করে। ডাক্তার বলে যে এটা একটা রোগ। ব্রেইনে ছোট ১টা টিউমার হয়ছে ম, অপারেশনের মাধ্যমে সেটাকে ফেলে দিলে ঠিক হয়ে যাবে। বন্ধুরা দুপুরকে বোঝানোর চেষ্টা করে কিন্তু দুপুর বুঝতে নারাজ। সে তার নিলাম্বরীকে নিয়েই থাকতে চায় তার কল্পনার পৃথিবীতে। দুপুরের ইচ্ছা না থাকা সত্তেও ওর অপারেশনের ব্যাবস্থা করে। অপারেশনের দিন সকালে দুপুর হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যায়। কোথায় পালিয়ে যায় সেটা কেউ জানে না। এখনো ফিরে আসে নি সে ……। হয়তো সে আছে কোন এক নির্জন শহরে তার নিলাম্বরীকে নিয়ে, হয়তো সে সুখেই আছে তার কল্পনার টুনটুনিকে নিয়ে।
( পুরো গল্পটাই আমার কল্পনা । এর সাথে বাস্তবতার কোন মিল নাই )

সমাপ্ত ……

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Thank you for your participation .