রবিবার, ২২ জানুয়ারী, ২০১৭

অন্যরকম মেয়েটি



অন্যরকম মেয়েটি
লেখা ঃ প্রে তা ত্তা


ফেসবুকে স্টাটাস দিয়েছিলাম '''''''''''' একটা গল্প লিখতে চাচ্ছি , কিন্তু কি লিখবো বুঝতেছিনা ''''''''''''' অনেক কমেন্ট আর ম্যসেজ আসা শুরু করে এরপর থেকে । অনেকে অনুরোধ করে তাদের নিয়ে গল্প লিখতে । কিন্ত কোন এক কারনে মন টা ভীষন খারাপ হয়ে যায় । গল্প টা আর সেদিন কিন্তু লেখা হয় নি ।
এর কিছুদিন পরের কথা । ধানমন্ডী লেকে একাই হাটছিলাম । পিছন থেকে হটাৎ আমার সামনে এসে দাড়ায় ।
মেয়েটি ঃ আপনি কেমন মানুষ বলুন তো ?
আমি ঃ মানে ? কি করলাম আবার আমি ?
মেয়েটি ঃ কি করলেন মানে ? সেদিন আমি এতো রিকোয়েষ্ট করলাম । আর আপনি আমার কথাই রাখলেন না ।
আমি ঃ কবে , কোথায় কি রিকোয়েস্ট করলেন ?
মেয়েটি ঃ সেদিন আপনাকে অনেকবার এফবিতে এসএমএস , কমেন্ট করেছিলাম যে আমার ১টা গল্প আছে সেটা আপনি সুন্দর করে লিখে দিন । কিন্তু আপনি লিখলেন ই না ।
আমি ঃ ওহ সে কথা । আচ্ছা আজ লিখবো ।
মেয়েটি ঃ আজিবতো । কি লিখবেন আপনি শুনি ?
আমি ঃ সেটাই তো ।
মেয়েটি ঃ হ্যা । আমি বলছি আপনি শুনুন ।
এরপর মেয়েটি তার গল্প কেমন হবে সেটা বলে । লেকের এক কোনে বসে অনেকখন কথা বলে । মেয়েটির নাম ঈতু । সে একটা ছেলে কে ভালোবাসে , ছেলেটিও তাকে ভালোবাসে । ছেলেটির নাম রাজেন । তেজগা কলেজে অনার্স করছে ।
আমি মেয়েটির সাথে কথা বলে সালাউদ্দিন এর সাথে দেখা করে রাতে বাসায় ফিরি । খাবার দাবার শেষ করে শুয়ে পরি । একটা ফোন আসে ।
আমি ঃ হ্যালো , কে বলছেন ?
ওপারথেকে ঃ আপনি শুয়ে পরছেন তাই না ?
আমি ঃ হ্যা । আপনি কে ?
ওপারথেকে ঃ আমি ঈতু । আপনার না গল্প লিখার কথা , এতো কষ্ট করে আমি আপনাকে এতো কিছু বললাম আর আপনি কিনা শুয়ে পরছেন । খুব খারাপ । কান ধরেন ।
আমি ঃ সরি ভুল হয়ে গেছে । আমি এখনি বসছি ।
ঈতু ঃ আচ্ছা ঠিক আছে । রাগ করবেন না প্লিজ । আমি এমনি , একটু বেশি কথা বলি ।
ফোনে কথা শেষ করে আমি একটু বারান্দায় আসি , প্যাকেট থেকে ১টা সিগারেট বের করে কিছু খন টানাটানি করি আর ভাবি কিভাবে গল্পটা শুরু করা যায় । এক-সময় মাথায় চলেও আসে । দেরি না করে পিসিতে বসে পরি । আমার আবার ডায়রী মেইনটেইন করার অভ্যাস নাই । গল্পের নাম দিলাম অন্যরকম মেয়েটি । এর কারন হচ্ছে মেয়েটির সাথে দেখা হওয়াটা অন্যরকম ভাবেই হয়েছিল । আর আমি সিউর মেয়েটি অন্য মেয়েদের চেয়েও আলাদা , একেবারেই অন্যরকম । চঞ্চল , চেহারায় আলাদা ১টা মায়া আছে । মেয়েটি কাজল পরেছিল । আর সব চেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে মেয়েটি আমাদের মত বিভিন্ন মনোমুগ্ধকর পারফিউম ইউস করে না । গোলাপ জলের আতর ইউস করে । জিজ্ঞাসা করেছিলাম কেনো এটা ইউস করো । উত্তরে মেয়েটি বললো
ঈতু ঃ আচ্ছা আপনি কি বলতে পারবেন যে আপনি কখন মারা যাবেন ? আমিও পারবো না । যে কোন সময় মারা যেতে পারি । আমরা মানুষরা ভুলে যাই মৃত্যুর কথা , তারপর পাপে ডুবে যাই । তাই মৃত্যুর কথা মনে রাখতেই আমার এই পদ্ধতি । ভালো না বুদ্ধিটা ?
আমিও উত্তরে বলেছিলাম অসাধারন । আচ্ছা অনেক কথাই তো হলো , এখন কি গল্পে আসা উচিত না ??? তাহলে গল্পে আসি
অন্যরকম মেয়েটি
মেয়েটির নাম ঈতু । ইন্টার সেকেন্ড ইয়ার , থাকে ঢাকা । দেখতে সিমপ্লি সুন্দর । মাঝে মাঝে চোখে কাজল পরে । সে একটা ছেলে কে ভালোবাসে , ছেলেটিও তাকে ভালোবাসে । ছেলেটির নাম রাজেন । তেজগা কলেজে অনার্স করছে । একটু দুষ্টু প্রকৃতির । ঈতু আর রাজেনের পরিচয় বসুন্ধরা শপিংমলে । সেদিন ২জনেই গিয়েছিল সিনেপ্লেক্সে মুভি দেখতে । সেখানথেকেই পরিচয় । রাজেন ঈতু টিস করতেছিল । ভার্সিটি পরুয়া ছেলেরা হলে গিয়ে যেই ধরনের করে আরকি । রাজেন বুঝতে পারে যে সে আজ একটু বেশি করে ফেলেছে । তাই মুভি দেখা শেষে ঈতুকে খুজে বের করে ।
রাজেন ঃ হ্যালো আপু ।
ঈতু ঃ আপু ? কে আপু ? একটু আগে না কি যেন বলে ডাকছিলেন , সেটা বলে ডাকেন । (চেচিয়ে চেচিয়ে বলছিল ঈতু)
রাজেন ঃ আপু আমি সরি ।
ঈতু ঃ মেয়েদের কি মনে করেন আপনারা ? মানুষ মনে করেন না তাই না ?
রাজেন ঃ আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি , তাই নিজে থেকে সরি বলতে এসেছি । আবার বলছি সরি । বন্ধুদের সাথে থেকে দুষ্টুমি টা একটু বেশি হয়ে গেছে ।
ঈতু ঃ আচ্ছা ঠিক আছে ।
রাজেন ঃ কিছু মনে না করলে আমি আপনাকে কফি খাওয়াতে চাচ্ছি । এই তো এখানেই আছে ।
এরপর কফি খেতে খেতে বাকি পরিচয় । ফেসবুকের আইডি নেওয়াও হয় । তারপর রাতে চ্যাটিং । আবার দেখা করা , কফি খাওয়া । এক সময় চ্যাটিং আর কফিমিট থেকে তাদের প্রেমের সম্পর্ক শুরু । প্রতিদিন বারতে থাকে কথা বলা । সারা রাত জেগেও অনেক কথা হয় । মাঝে মাঝে ঢাকার বিভিন্ন পার্ক গুলো তে বসে একজন আরেকজনে একটু বেশি কাছাকাছি আসা । এই তো তাদের প্রেমের প্রাথমিক পথা চলা ।
এরপর কিছুদিন এভাবেই চলে যায় । রাজেন একটা চাকরি খুজছে । প্রাইভেট পরিয়ে তাকে চলতে হয় । একটা চাকরি হলে খারাপ হয় না , পরিবারেও কিছু দিতে পারবে তাহলে ।
এইটুকু লিখার পর প্রচন্ড ঘুম পায় আমার । এমনিতেই আমি ঘুম প্রিয় মানুষ , তার মধ্যে ঘুম নিজে আমার কাছে আসতে চাচ্ছে । তাহলে বুঝেন ২টা মিলে কি হতে পারে । লেখাটা সেভ করে সাথে সাথেই সুয়ে পরলাম । এই সময় ইউসুফ এসে হাজির ১টা সিগারেটের জন্য । বলা হয় নি । আমি আর আমার কয়েকজন বন্ধু মিলে মিরপুরে ১টা ফ্লাট নিয়ে থাকি । আমি, ইউসুফ, মাহাদি, নীরব , সাকিল আর জনি ।
ইউসুফ চলে যাওয়ার পর আমি ঘুমিয়ে পরি । সকালে ঘুম ভাংগে কলিং বেলের শব্দে । দরজা খুলে দেখি ঈতু ।
আমি ঃ ঈত তুমি এতো সকালে ?
ঈতু ঃ এখন সকাল না ভাইয়া , ১১.৩০ মিনিট ।
আমি ঃ ওহ , আসো ভিতরে আসো ।
ভিতরে গিয়ে বসে ঈতু । আমি ফ্রেশ হয়ে ২টা কফি নিজ হাতে বানিয়ে নিয়ে আসি ।
আমি ঃ ঈতু নাও , গরম কফি । আমি নিজে বানিয়েছি ।
ঈতু ঃ ( কফি মুখে দিয়ে ) দারুন হয়েছে ভাইয়া ।
আমি ঃ থাংক ইউ ।
ঈতু ঃ আচ্ছা কাল বলা হয় নি । রাজেন কিন্তু একটা চাকরি পেয়েছিল । সেটা গল্পে উল্লেখ করতে পারেন । আর আপনি হয়তো ভাবছেন আমরা বিয়ে না করে একসাথে ছিলাম । না , আমরা ঢাকা থেকে বিয়ে করেই সিলেটের উদ্দ্যেশে রওনা দেই ।
আমি ঃ আচ্ছা ঠিক আছে । বাট এতো ছোট গল্প কি কেউ পরবে ? আবার বলছো তোমাকে গল্পের শেষে মেরে ফেলতে হবে । কেনো গো ভাই ?
ঈতু ঃ বুঝবেন না ভাই আপনি । আপনি লিখেন ।
এরপর ঈতু বিদায় নেয় । আমি কোন রকম নাস্তা শেষ করে আবার লিখতে বাসি , কিন্তু ভালো লাগছিল না ।
গল্পে আমরা
একদিন সকালে রাজেন ঈতু কে ফোন দেয়
রাজেন ঃ ঈতু একটা ভালো খবর আছে ।
ঈতু ঃ আমার ও একটা নিউস আছে , তবে সেটা ভালো না । আচ্ছা তোমার টা আগে বলো ।
রাজেন ঃ আমার ১টা ভালো চাকরি হয়েছে । ভালো স্যালারী । ১ তারিখ জয়েন করতে হবে ।
ঈতু ঃ আমার পরিবার আমার বিয়ে ঠিক করেছে । আজ ১৯ তারিখ , সামনের ২১ তারিখ আমার বিয়ে ।
রাজেন ঃ কি বলছো এইসব ? এখন কি করবো আমরা ?
ঈতু ঃ আমি তোমাকে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করতে পারবো না ।
রাজেন ঃ চলো আমরা পালিয়ে যাই ।
ঈতু ঃ চলো শোনা ।
এরপর রাজেন আর ঈতু পালিয়ে যায় । বিয়ে করে ফ্রামগেটের কাজী অফিসে । বন্ধুরা সবাই মিলে চাদা তুলে ওদের বিয়ে দেয় । আর কিছু টাকা দেয় । কারন ওরা এখন সিলেট যাবে । সেখানে কিছু দিন লুকিয়ে থাকবে । সামনের মাসের আগেই চলে আসবে । ১ তারিখ থেকে রাজেনের চাকরি । রওনা দেয় ওরা । বন্ধু মানিক এর বাসায় উঠবে । বিকেল ৪টার সময় মানিক দের বাসার সামনে এসে পৌছে । কিন্তু বাসায় এসে দেখে কেউ নাই । খোজ নিয়ে জানতে পারে মানিকের এক আত্তীয় মারা যাওয়ায় তারা সেখানে গেছে আসতে ২/৩ দিন সময় লাগবে । মানিক ফোন ও ধরছে না । কোন উপায় না দেখে তারা ১টা বাংলো তে উঠে । বাংলোটা ১টা চা বাগানের মাঝখানে । অসাধারন একটা যায়গা । সেখানে গিয়ে উঠলো ।
ধুর গল্পটা আর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছি না । মেয়েটা তো এর পর আর কোন ক্লু দিয়ে যায় নাই । আর গল্পে তাকে নাকি মেরে ফেলতে হবে । কি যে ঝামেলায় পরলাম আমি ।
কলিংবেল বেজে উঠে । খুলেই দেই দরজা । হ্যা আপনার ভাবনাই ঠিক । ঈতু এসেছে ।
ঈতু ঃ বাইরে অনেক বৃষ্টি হচ্ছে , পুরো ভিজে গেছি আমি ।
আমি ঃ গামছা টা দিয়ে মুছে নাও । তোমার কথাই ভাবছিলাম
ঈতু ঃ জানি আমি । আচ্ছা কি বলবেন বলেন ।
আমি ঃ তোমার গল্প নিয়ে আরকি । পরে তো আর কোন ক্লু দিলে না , গল্পটা কিভাবে এগুবে বলো ?
ঈতু ঃ গল্পের বাকি অংশটুকু আমি বলে দিচ্ছি ।
আমি ঃ তুমি ? হাহাহাহাহা । আচ্ছা ঠিক আছে । বলো
ঈতু ঃ জায়গাটা ঈতু খুব পছন্দ হয় । ২জন মিলে বারান্দায় এসে গল্প করছিল । খুব জোসনা ছিল । ঈতুর তখন ১টা ইচ্ছে জাগে । সে তার ইচ্ছেটা রাজেন কে বলে । রাজেন ঈতুর ইচ্ছে পুরোন করতে ঈতুকে নিয়ে চা বাগানে যায় , ২জনে হাত ধরে চা বাগানের সরু পথ দিয়ে হাটে । হটাৎ কোথায় থেকে ৪/৫ জনে ছেলে আসে । রাজেন কে পিছন থেকে আঘাত করে । রাজেন জ্ঞ্যান হারিয়ে ফেলে । লোক গুলো ঈতু কে তুলে নিয়ে যায় পাসের ১টা পুকুর ধারে । ঈতু বুঝতে পারে যে লোক গুলো এখন তার উপর হিংস্র জানোয়ার হয়ে তাকে ভক্ষন করতে নেমে আসবে । কিন্তু ঈতু তো সেটা হতে দিবে না । সে তো নিজেকে রাজেনের জন্য সাজিয়েছে । আর রাজেন কে তো তারাই মেরে ফেললো । তাহলে , তাহলে আর কি । পাসেই চা বাগানের কর্মিদের ১টা কাচি ছিল । সেটা দিয়ে নিজেকে শেষ করে দিল ঈতু ।
আমি ঃ ঈতু তুমি কি পাগল ?
ঈতু ঃ কেনো ? (উচ্চ কন্ঠে)
আমি ঃ আমি এই ধরনের গল্প লিখতে আর আমার আইডিতে পোষ্ট করতে পারবো মা ।
ঈতু ঃ পারতে হবে আপনাকে
আমি ঃ না পারলে কি করবে তুমি ?(চিৎকার করে )
ঈতুঃ দেখেন মেয়েটার লাশ ওরা ওইখনেই পুতে রেখেছে । জানাজা হয় নাই । মেয়েটা কষ্টে আছে ।
আমি ঃ মানে কি ? তুমি কি নেশা করে এসেছ?
ঈতু ঃ ভাইয়া , আমি সত্ত্যি বলছি । আমিই সেই মেয়ে ।
নীরব ঃ কি রে দোস্ত কি হইছে ? চিৎকার করছিস কার সাথে ?
আমি ঃ দেখ দোস্ত এই মেয়ে কি বলছে ?
নীরব ঃ কই মামা ? এখানে তো কেউ নাই ? রাতে ঘুম হয় নাই মনে হয় তোর ।
ঈতু ঃ তুমি ছাড়া আমাকে কেউ দেখতে পাবে না । এখন প্লিজ আমার কথা শোন ।
আমি ঃ নীরব তুই যা । আমি ঘুমাবো।
নীরব চলে যায় ।
ঈতু ঃ রাজেন বেচে আছে আর সে তোমার ফ্রেন্ডলিষ্টে আছে । Rion al rajen আইডি নাম । তুমি প্লিজ গল্প টা লিখে ওরে ট্যাগ দিও । তাহলে ও সব বুঝতে পারবে । আমাকে ও নিতে আসবে । আর আমি মুক্তি পাবো যন্ত্রনা থেকে । প্লিজ ভাইয়া ।
ঈতু বলে ভ্যানিস হয়ে যায় । প্রায় ১ঘন্টা এর পর আমি থ হয়ে বসে থাকি । গল্প টা এবার ঈতুর কথা মত শেষ করি । শেষে রাজেনকে অনুরোধ করি সে যেন ঈতুর লাশ সঠিক ভাবে দাফনের ব্যাবস্থা করে । গল্পটা পোষ্ট করে রাজেনকে ট্যাগ ও দেই । গল্প টা তেমন কে উ পরে না । আগ্রহ হারিয়ে ফেলি গল্প লেখার । আর গল্প লিখা হয় না এর পর ।
১৪ দিন পরের একদিন একটা ছেলে আসে আমার কাছে । তার নাম রাজেন । নাম বলার পর চিনে ফেলি আমি । সে জানতে চায় কিভাবে আমি এগুলা জানলাম ।
আমি আমার আর ঈতুর সব খুলে বললাম । কেদে দিল ছেলেটা । সে আমার গল্প পরেই সিলেটে গিয়ে ঈতুর লাশ উদ্ধার করে । জানাজা দিয়ে দাফন করে । আর খুনী গুলো কে পুলিশে ধরিয়ে দেয় ।
সমাপ্ত
( পুরো গল্পটাই আমার কল্পনা । এর সাথে বাস্তবতার কোন মিল নাই )
আমার লেখা আরো গল্প পরতে চাইলে আমার পেইজ টি লাইক দিতে পারেন ।
https://www.facebook.com/arshipon15/

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Thank you for your participation .