রবিবার, ২২ জানুয়ারী, ২০১৭

রুপন্তীর নীল পদ্ম (রুপকথার গল্প)

#রুপন্তীর_নীল_পদ্ম (রুপকথার গল্প) । 
প্রেতাত্মার লেখা গল্প - Written By A R Shipon

কান্নার শব্দ ভেঁসে আসছে । রুপন্তীর উপর শারীরিক অত্যাচার চালাচ্ছে রুপন্তির সৎ মা । প্রতিদিনই এভাবেই কোন না কোন কারনে শারিরীক মানুষিক অত্যাচারের স্বিকার হতে হয় তাকে । তারপর ছুটে যায় বাড়ীর পাশের পড়ীর দিঘিতে  পড়ীর দিঘি তার সবচেয়ে পছন্দের স্থান। কোন কারনে মন ভালো বা খারাপ হলেই সে এখানে আসে । গত চার বছর আগে তার মা তাকে ছেড়ে চলে যায় না ফেরার দেশে । অনেক বেশি ভালবাসতো রুপন্তীকে রুপন্তীর মা। ঠিক এই জায়গায় বসে গল্প শুনাতো , গান শুনাতো , আঁদর করতো রুপন্তীর মা রুপন্তীকে। মা মারা যাওয়ার ৬ মাস যেতে না যেতেইবাবা বিয়ে করে। তার কিছুদিন পর থেকেই রুপন্তীর সৎ মা রুপন্তীর উপর শারীরিক ও মানুষিক অত্যাচার শুরু করে। এর কারন হলো ১৬ বছরের রুপন্তী ছিলো অনেক বেশি সুন্দরী , আগুনের মত সুন্দর মেয়েটা, দুধে আলতা গায়ের রং, হরিনী চোঁখ, আর সে কি মায়া চোখ দুটোতে, টগবগে যৌবনের কিশোরি রুপন্তী। গ্রামের অনেকে বলে পড়ীর দিঘিতে আগে পড়ীরা আসতো, সেই পড়ীরা রেখে যায় তাদের শিশু বাচ্চা। আর  সেই পড়ীর শিশু বাচ্চাই আমাদের রুপন্তী। পরীরা রুপন্তির মাকে ভালবেসে খুশি হয়ে হয়তো রুপন্তিকে উপহার দিয়ে গেছে। 
সৎ মায়ের অত্যাচার শেষ হলে রুপন্তী দৌড়ে পরীর দিঘির পারে বটগাছের নিচে এসে বসে। 
খুব কান্না করছে মেয়েটা আজ 
। এর অবশ্যই একটা কারন আছে, আজ রুপন্তির জন্মদিন। ৪ বছর আগেও এই দিনটি ছিল তার কাছে অনেক বেশি আনন্দের । তার মা তার জন্য অনেক মজার মজার খাবার রান্না করত, নতুন জামা উপহার দিত , বেলুন দিয়ে ঘর সাঁজাতো , কেক কাটতো। আর আজ তাকে সৎ মায়ের হাতে মার খেতে হচ্ছে । এই ভেবে সে মাথা নিচু করে কেঁদেই যাচ্ছে । 
হটাৎ কে যেন পিছন থেকে রুপন্তির মাথায় হাত বুলায় , পেছন ফিরে দেখে কেউ নেই। তারপর তার চারিদিক অন্ধকার হয়ে আসে, নিচে লটিয়ে পরে। 
জ্ঞান ফিরলে রুপন্তি দেখে তার চারপাশে অনেক রঙের আলোর বাতি জ্বলছে, বেলুন , রঙ্গিন কাগজ দিয়ে সাজানো । আসে পাসে বিভিন্ন রঙের প্রজাপতি আর পাখি উড়ছে । সাথে সাথেই অনেক গুলো মেয়ে বলে উঠে “”” শুভ জন্মদিন, শুভ জন্মদিন রুপন্তী“”””” রুপকথার দেশে দেশে তোমাকে স্বাগতম । লাল নীল পরীরা রুপন্তিকে নিয়ে অনেক আনন্দ করে, গান গায়, নাঁচে । পুরো রুপকথার দেশ ওকে নিয়ে ঘুরে বেড়ায় । এখন কেক কাটার পালা । কেক কাটা হবে রুপকথার রাজ্যের রাজার দরবারে । রাজ্যের প্রায় সবাই একত্রিত হয়েছে এই দূঃখি মেয়েটার মুখে খিছু সময়ের জন্য হাসি ফুটাতে। রাজা রানি আর রাজপুত্রও এসেছে। কেক কাটা শেষে রাজার পক্ষ থেকে রাজপুত্র রুপন্তিকে ১টা নীল জামা উপহার দেয় । উপহার পেয়ে রুপন্তি খুব খুশি হয়ে, প্রান খুলে সে হাসে। আর সেই হাসিতে মুগ্ধ হয়ে রুপন্তির রুপের মায়ায় পরে যায় রাজপুত্র । 
অনুষ্ঠান শেষ করে পড়ীরা রুপন্তিকে বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে যায় । সন্ধ্যা হয়ে গেছে, রুপন্তির সৎ তাকে মারা জন্য লাঠি নিয়ে দাড়িয়ে আছে । ঘরে ঢোকার পরপরই শুরু করে অত্যাচার । কিন্তু আজ রুপন্তী কাঁদছে না। সে এখনও রুপকথার দেশের ঘোরে আছে । সৎ মা তার উপহার নীল জামাটি ছিনিয়ে নিয়ে যায় ।
পরের দিন..... 
কাজ শেষ করে রুপন্তি বিকেলে আবার পরীর দিঘিতে যায় । সে তার ওই নীল জামাটা চুরি করে নিয়ে গায়ে পরে এসেছে। তাকে ভয়ংকর সুন্দরী লাগছে । পরীদের চেয়েও বেশি সুন্দর লাগছে। সন্ধার আগ পর্যন্ত রুপন্তী দিঘিতে ঘোরাঘোরি করে, গান গায়, দিঘি থেকে নীল পদ্ম তুলে সেগুলা নিয়ে খেলা করে । 
রুপন্তির রুপের মায়া রুপকথার রাজ্যের রাজপুত্র এলভিন কে টেনে নিয়ে এসেছে আজ পপৃথিবীতে  , সে দূর থেকে রুপন্তির গান শুনে , নাচ দেখে , দিঘি থেকে রুপন্তির নীল পদ্ম নিয়ে খেলা দেখে সে। তারপর পিছু পিছু রুপন্তির বাসা পপর্যন্ত যায় । এলভিন দেখে রুপন্তীর উপর তার সৎ মায়ের অত্যাচার। রুপন্তির মা রুপন্তির জামা টা ছিরে ফেলে। এসব দেখে রাজপুত্র এলভিনের খুব খারাপ লাগে, আর রুপন্তীর প্রতি তার প্রেম টা বেড়ে যায় ।
ভোরে রুপন্তী কলসী নিয়ে দিঁঘিতে পানি নিতে আসে। পেছনে ফিরে দেখে রাজপুত্র এলভিন। রূপন্তী সুন্দর করে ছোট ১টা হাঁসি দিয়ে এলভিন কে স্বাগতম জানায় । এলভিন তাকে নতুন ১টা জামা উপহার দেয় । রুপন্তী উপহার পেয়ে অনেক খুশি হয়। সে পানিতে নেমে ১টা নীল পদ্ম তুলে এনে রাজপুত্র এলভিন কে দেয়। এলভিন ও রুপন্তির কাছ থেকে উপহার পেয়ে খুব খুশি হয়। তারপর রুপন্তী বলে আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে আমি আসি। রাজপুত্র বলে, আমি বিকেলে আবার আসবো তুমি কিন্তু এই জামাটা পরে আসবে। তারপর তারা ২জনই চলে যায় ।
দুপর শেষে বিকেল গড়ালে রুপন্তী আসে দিঘির পারে। মেয়েটা আজ খুব করে সেঁজেছে, চোখে কাঁজল দিয়েছে । কিছুক্ষন পর এলভিন তার উড়ন্ত সাদা ঘোড়া নিয়ে আসে। রুপন্তির রুপ দেখে সে কিছুক্ষন থ হয়ে দাড়িয়ে থাকে । রুপন্তি কথা বলে তার ঘোর ভাঙায় । অনেক কথা বলে তারা। কথা বলতে বলতে জেনো মাঝে মাঝে হাসিতে লুটিয়ে পরে মাটিতে । 
এভাবে বেশ কিছুদিন চলে। রাজপুত্র রুপন্তীকে তার উড়ন্ত ঘোড়ায় করে অনেক সুন্দর সুন্দর জায়গাতে নিয়ে ঘোরায়। 
রুপন্তির দূঃক্ষ কষ্ট আগের চাইতে অনেকটা কমিয়ে দিয়েছে রাজপুত্র এলভিন। রাজপুত্র অনেক বার চেষ্টা করে তার মনের কথা রুপন্তিকে বলতে, কিন্তু সাহস করে উঠতে পারে না। আজ এলভিন রুপন্তীকে তার মনের কথা বলবে এই পন করে রাজ্য থেকে এসেছে। সকাল থেকে বসে আছে সে, কিন্তু রুপন্তীর কোন খোজখবর নেই। সন্ধ্যা হয়ে গেছে । এলভিন ২ বার রুপন্তির বাসার সামনে গিয়ে ঘুরে এসেছে কিন্তু রুপন্তিকে খুজে পায়নি ।
এভাবে টানা তিনদিন কেটে যায় । কষ্টগুলো সহ্য না করতে পেরে এলভিন তার মা রুপকথার রাজ্যের রানীর কাছে গিয়ে বলে যে সে এলভিন কে বিয়ে করতে চায়। একথা শোনার পর রানী রেগে যায়। এলভিন কে অনেক বোঝবার চেষ্টা করেও না পেরে ওকে বের করে দেয় রুপকথার রাজ্য থেকে ।
এ দিকে রুপন্তি গত ৩দিন হাসপাতালে ছিল, তার খুব জ্বর ছিলো। সুস্থ হয়ে সে দিঁঘির পারে যায় । অনেক খন পর এলভিন আসে। তার মন খারাপ । দু জনের দু জনের সাথে সব ঘটনা শেয়ার করে ।
এলভিন এর এখন জায়গা হয়েছে এই দিঘির মাঝখানে ফোটা বড় নীল পদ্মটিতে । 
এভাবে বেশ কিছু দিন চলে তাদের দিন কাল । তারা প্ল্যান করে যে তারা দুজনে চলে যাবে রুপকথার ভালোবাসার রাজ্যে, সেখানে সবার ঠাই হয় । সেখান কার রানী অনেক ভালো মনের পড়ী । 
পরেরদিন ভোরে দীঘিতে পানি নিতে এসে দেখে সেই নীল পদ্মটি নেই । কে যেন তুলে নিয়ে গেছে। 
তাহলে আমার এলভিন এর কি হবে, এলভিন কেমন আছে? এই ভেবে কেঁদে, না খেয়ে সন্ধ্যা করে দেয় রুপন্তী।
সন্ধার পর কেউ একজন পেছন থেকে ডাক দেয়, রুপন্তি এই রুপন্তি। পেছনে ফিরে দেখে রুপন্তির মা ডাকছে রুপন্তিকে। কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরে অনেকক্ষন কাঁদে রুপন্তি ।
 তার মা বলে... 
মা ঃ রুপন্তী তোমার হাতে বেশি সময় নেই। ওই নীল পদ্মটা বাজারে সবজির দোকান গুলোর মাঝখানে আছে। তুমি ঐটা নিয়ে নিয়ে আসো।  তারপর ঐটা নিয়ে রাজপুত্রের ঘোড়ায় চড়ে চাঁদের দেশে চাঁদের বুড়ির কাছে যেতে হবে । একমাত্র সেই জেনে কিভাবে রাজপুত্রকে ফিরিয়ে আনা যাবে। 
কথা শেষ করার পরপরই রুপন্তী এলভিনের উড়ন্ত ঘোড়ায় উড়ে গিয়ে নীল পদ্মটা খুঁজে ঐটা নিয়ে চাঁদের বুড়ীর কাছে যায় । অনেক অনুরোধের পর চাঁদের বুড়ি বলে... 
বুড়ি ঃ আগামি সাত পূর্নিমাতে দিঘিতে সাতটা নীল পদ্ম ফুটবে, এই পদ্ম গুলো রুপন্তীকে তুলে তার হেফাজতে রাখতে হবে। তারপরের আমাবস্যা রাতে রুপকথার ভালোবাসার রাজ্য থেকে রাজ্যের রানি গোসল করতে আসবে । রূপন্তীকে যে কোন উপায়ে রানীর মন গলিয়ে রাজি করাতে পারলে সে ওই সাতটি ফুল তার মাথায় মুকুট বানিয়ে পরলে রাজপুত্র জীবন ফিরে পাবে। 
কথা শেষ হলে রুপন্তি ফিরে আসে। এরপর থেকে রুপন্তী দিঘির পারেই থেকে যায় এবং পরপর সাত পূর্নিমার রাত জেগে সাতটা নীল পদ্ম তুলে নেয়। তারপর আমাবস্যার গভীর রাতে পরীরা গোসল করতে আসে। কিন্তু  রূপন্তী রানীকে দেখতে পায় না। অনেক খোজার পর দেখে আকাস থেকে একটা ঘোড়ার গাড়ী আসছে, সেই গাড়ীতে রানী আসছে নিশ্চয়ই । রানী নামার পর পুরো জায়গাটা আলোকিত হয়ে যায় ।
রানী তার মুকুট খুলে পানিতে নামলে রুপন্তি তার মুকুট চুরি করে মুকুটের মধ্যে সাতটি পদ্ম দিয়ে সাজিয়ে দেয় । তারপর সে তার মধুর কন্ঠে গান ধরেঃঃ
 আমাদের দেশটা স্বপ্নপুরি ,সাথী মোদের ফুলপরী ……।।.।।........।.।….।।.।..।।.।।..।..।।.।।…।।…।।…।।…।।
তার গান পরীর রানীকে মুগ্ধ করে। রানী তার কাছে এসে বলে নাম কি তোমার? আর কি চাও তুমি ?
রুপন্তি সব খুলে বলে। আর অনুরোধ করে নীল পদ্ম দিয়ে সাজানো মুকুটটা পরার জন্য । 
রানী তার কথায় রাজী হয় । মুকুট পরার কিছুক্ষন পরে রাজপুত্র এলভিন পদ্মের ভিতর থেকে বেরিয়ে আসে । রানী তাদের ভালোবাসা দেখে খুশি হয় । সে এতো টাই খুসি হয় যে রানী নিজে তাদের রুপকথার ভালোবাসার রাজ্যে থাকার আমন্ত্রণ জানায়।
এই প্রস্তাব পেয়ে এলভিন আর রুপন্তি মহাখুশিতে রানীকে জরিয়ে ধরে। তারপর রানী তাদের নিয়ে যায় রুপকথার ভালোবাসার রাজ্যে।
সেখানেই তারপর সুখে শান্তিতে বসবাস করে তারা ।

( পুরো গল্পটাই আমার কল্পনা। এর সাথে বাস্তবতার কোন মিল নাই। গল্পটি আজ থেকে ঠিক ৬ বছর আগের লেখা )
সমাপ্ত।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Thank you for your participation .