শনিবার, ২১ জানুয়ারী, ২০১৭

অভিশপ্ত প্রেম

অভিশপ্ত প্রেম
লেখা ঃ প্রে তা ত্তা


আজ নীলের গল্প বলবো । সেই আমার নীলের গল্প , যার পথ চেয়ে আজও কেটে যায় আমার বেলা । গল্পটা শুরু করি বিরক্ত হবেন না প্লিজ । সবে মাত্র মাধ্যমিক পরিক্ষা শেষ করলাম । ছোট থেকেই ক্রিকেট পাগল আমি । গ্রামের ছোটবড় সবার সাথেই ভালো ১টা সম্পর্ক আমার । একজন ছিল যার আমার এই খেলাধুলা ভালো লাগতো না । সে চাইতো আমি সারাদিন পড়ার টেবিলে বসে থাকি । আচ্ছা তোমরাই বলো এটা কি সম্ভব ? ঐ সময় খেলাধুলাই ছিল আমার কাছে সব , কারো মনের অনুভুতি বোঝার সময়ই ছিল না আমার হাতে । তখন সময় না হলেও তার কিছুদিন পরই বুঝতে পারি মনের অনুভূতি , তার টা না আমার নিজের টা । সেই দিন হারিয়ে গিয়েছিলা ভিন্ন একজগতে । তার রুপে মগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম । সেই দিনের পর প্রায় প্রতিদিন স্কুল শেষে তার জন্ন্য দারিয়ে থাকতাম । একদিন কথা হলো নীলা ঃ ভাইয়া আপনি প্রতিদিন আমাদের স্কুলে আসেন কেনো ? আমি ঃ আমি তোমাদের স্কুলের সামনে ? নাহ তো । জীবনেও যাই নাই । নীলা ঃ হাহাহা , আপনি এখোনো আমাদের স্কুলের সামনে আছেন । আমি ঃ ওহ তাই নাকি । কেনো যে আসছি ভুলে গেছি । নীলা ঃ আমি জানি । আমি ঃ কি জানো ? নীলা ঃ আপনি আমাকে ভালোবাসেন তাই না ? আমি ঃ তুমি কিভাবে বুঝলে ? নীলা ঃ ভালো না বাসলে কেউ এভাবে পিছু পিছু ঘুরে না । আমি ঃ তুমি আমাকে ভালোবাসো ? নীলা ঃ জানিনা । (বলেই দৌড় দেয় নীলা) এরপর নীলা আর আমার ভালোবাসার কবিতা এখান থেকেই শুরু হয় । রোজার ঈদের আগের দিন ১টা ঈদ কার্ড দেয় সে আমাকে । সেখানেই সে আমাকে তার ভালোবাসার কথা জানায় । জানো আমি আএ সে প্রথম দিকে চিঠি দিয়ে প্রেম করতাম । চিঠির সেই দিন গুলো সত্ত্যিই অসাধারন ছিল । সে স্কুল শেষ করে ঢাকার উত্তরা ১টা কলেজে ভর্তি হয় । আমিও ও তখন ঢাকা । আমার আর্থিক অবস্থা খারাপ যাচ্ছিল । তাই ১টা অফিসে কম্পিউটার অপারেটর এর পার্ট টাইম চাকরি নেই । অল্প বেতন , কিন্তু চলে যেত আমার । নীলা আর আমার চীঠিতে প্রেমের পর্ব শেষ হয় । নীলার বাবা নীলাকে দামী মোবাইল কিনে দিয়েছে । এখন সারারাত আমাদের কথা হয় । রাত গুলো ইদানিং খুব বড্ড ছোট হয়ে গেছে । কথা বলা শুরু করলেই শেষ হয়ে যায় । নীলা ঃ দুপুর তুমি আমাকে তো ভুলে যাবে না ? (ফোনে) আমি ঃ তোমার কি তাই মনে হয় ? আচ্ছা বলো কি করলে তোমার বিশ্বস হবে যে আমি তোমাকে ছেরে যাবো না ? নীলা ঃ আসো আমরা বিয়ে করি । আমি ঃ কি বলো তুমি এইসব ? পাগল হয়ে গেছো ? নীলা ঃ জানি তুমি এমন কিছু বলবে । তোমরা ছেলেরা এমনি । আমি ঃ আচ্ছা বলো কবে আর কিভাবে বিয়ে করবে ? নীলা ঃ আজ আর এখনি । তুমি কৌশিক আর ফারহিন কে ফোন দিয়ে বলো যে এফবি তে আসতে । ওদের সাক্ষী রেখে আমি আর তুমি আজ বিয়ে করবো । আমি ঃ এই অসাধারন বুদ্ধিগুলান তুমি কই পাও বলো তো ? আচ্ছা আমি ওদের আনছি । সেপ্টেমবারের ১৭ তারিখ আমার আর নীলার বিয়ে হয় , মানে ফেসবুকের বিয়ে । এর কিছুদিন পর আমার জন্মদিন । ওহ আমার আর তার মানে নীলার জন্মদিন একই তারিখে । আগের দিন রাতে ফোন দিয়ে বলছে যে তার সাথে দেখা করতে হবে ।
আমিও খুব খুশি । সারাখন ই মনে চায় নীলাকে দেখি । সব সময় সুজোগ হয় না । কিন্তু আমার পকেটে তো টাকা নাই , মাত্র ৪১০ টাকা আছে । এই টাকা দিয়ে তো কিছুই হবে না । অনেক চেষ্টা করলাম আর কিছু টাকা যোগার করার , পারলাম না । সকাল ৯টায় বের হলাম । বাসে উঠে বনানী আসার পর নষ্ট হয়ে গেলো বাস । নেমে আরেকটা বাসে উঠার সাহস পেলাম না । পকেটে আছেই অল্প টাকা তাই টাকা আর খরচ না করে হেটে আর দৌড়ে পৌছে গেলাম উত্তরা । এসে দেখি রেস্টুরেন্টে আগেই এসে বসে আছে নীলা । কাছে যেতেই দাঁড়িয়ে আমাকে উইশ করলো । আমিও করলাম । পাশে গিয়ে বসলাম ।নীলা ১টা কেক আর ২টা কোল্ড ড্রিঙ্কস অর্ডার করলো । আমি বিল দিতে চাইলাম কিন্তু ও আমকে দিতে দিল না । কেক কেটে ২জন ২জনের জন্মদিন উদযাপন করলাম । সেদিন আমি প্রথম নীলার স্পর্স পাই । নীলার মিষ্টী ঠোট ছুয়ে যায় আমার ঠোটে । তার শিতল স্পর্স আমাকে মাতাল করে দেয় । সেই থেকে নীলার প্রতি পাগলামী টা আমার আরো বেড়ে যায় ।
এভাবে আরো কিছু দিন ভালোই চলে আমাদের সম্পর্ক । একদিন নীলাকে এক ডাক্তার ছেলে দেখতে আসে । নীলাকে পছন্দ করে ফেলে । নীলাকে যে কেউ দেখলেই পছন্দ করবে , অনেক সুন্দর মেয়েটা ।
এর পর থেকেই শুরু হয় নীলা আর আমার ঝামেলা । ঝগরা করা শুরু করে । আমাকে আর আগের মত সময় দেয় না । সেই ছেলের সাথে তার বাবা বিয়ে ঠিক করে । নীলা আমার সাথে একদিন করে ।
নীলা ঃ আমি তোমার সাথে আজ ব্রেকয়াপ করতে এসেছি ।
আমি ঃ মানে ? কি বলছো তুমি ? আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে ।
নীলা ঃ বিয়ে মানে ? কিসের বিয়ে ,ঐটা যাস্ট ১টা মজা ছিলা । ফান ছিল । আমার পক্ষে তোমাকে বিয়ে করা সম্ভব না ।
আমি ঃ আমি ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার বলে আমাকে বিয়ে করা সম্ভব না তাই তো ?
নীলা ঃ তুমি আমাকে বিয়ে করে রাখবে কোথায় ? তোমার মেসে নিয়ে রাখবে ? খাওয়াবে কি ? আলু ভর্তা আর ডিম ?
এর পর আসলে আমার আর বলার কিছু ছিল না । চুপ করে ছিলাম । এক সময় নীলা উঠে চলে যায় ।
২দিন পর নীলার বিয়ে । গ্রামে চলে এসেছে , আমিও এসেছি । নীলার গায়ে হলুদে গিয়েছিলাম । খুব সুন্দর করে সেজেছে , হলুদ শাড়ি পরেছে । খুব খুশি সে । আমার দিকে একবার তাকিয়েছিল । মনে হলো সে চায় না আমি সেখানে থাকি । তাই চলে এলাম । সেদিন জীবনে প্রথম নেশা করি । নেশা করে বাসায় ফিরে না খেয়ে সুয়ে পরি । আম্মু নীলার কথা সবই জানতো তাই আমাকে আর কিছু বললো না । ঘুমিয়ে পরি এক সময় ।
ঘুমিয়ে আছি , মাঝরাত । কে জেনো দরজায় টোকা দিল । বেশ কয়েকবার টোকা দেওয়ার পর দরজা খুলে দেই । খুলে আমি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি । আমার নীলা এসেছে । লাল বেনারশী শাড়ি পরে সেজেগুজে বউ হয়ে এসেছে । কাছে গিয়ে জরিয়ে ধরি ।
নীলা ঃ তুমি এমন কেনো । আমাকে একা ফেলে চলে এলে । তোমাকে ছারা বেচে থাকা কি সম্ভব আমার বলো ?
আমি ঃ সরি শোনা । আর ছেরে আসবো না , তুমিও আমাকে কখনো ছেরে যেয়ো না । বলে হাউমাউ করে কেদে দেই ।
বাবা কি হয়েছে তোর । এমন করছিস কেন ? কার সাথে কথা বলছিস ? কি হয়েছে ? বাজে স্ব্প্ন দেখেছিস ?
আমি ঃ আম্মু ।
আম্মু ঃ স্ব্প্ন দেখেছিস বাবা । আমি তোর চুল টেনে দেই । তুই ঘুমা ।
নীলা স্ব্প্নে এসেছিল । নীলারা বাস্তবে আসার নয় । নীলার আর আমার আরেকটা নাম ছিল । আমাকে নীলা প্রেতাত্তা আর আমি নীলাকে পেত্নী বলে ডাকতাম । সেই নাম আর তার কিছু অভিশপ্ত প্রেমের স্মৃতী আর আর কলংকপুরের ভুত , প্রেতাত্তা পেত্নীর গল্প নিয়ে বেচে আছি । ভুলে যেতে চাই নীলাকে আর নীলার আর আমার অভিশপ্ত প্রেম ।

( পুরো গল্পটাই আমার কল্পনা । এর সাথে বাস্তবতার কোন মিল নাই )
আমার লেখা আরো গল্প পরতে চাইলে আমার পেইজ টি লাইক দিতে পারেন ।
https://www.facebook.com/arshipon15/

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Thank you for your participation .