শনিবার, ২১ জানুয়ারী, ২০১৭

পেত্নীর ভালোবাসা কিন্তু প্রেতাত্তার কাছেই গচ্ছিত থাকবে

পেত্নীর ভালোবাসা কিন্তু প্রেতাত্তার কাছেই গচ্ছিত থাকবে
লেখা ঃ প্রে তা ত্তা



সারাদিন ব্যাস্ত অফিস শেষে ক্লান্ত শরিরে শিরি বেয়ে উঠছে দুপুর । সদ্য  গ্রাজুয়েশন শেষ করে ১টা ছোট মাল্টিন্যাশনাল ফার্মে চাকরি করছে । বাসার সামনে এসে দরজার লক চাবি দিয়ে খুলতে গিয়ে দেখে দরজাটা ভিতর থেকে লাগানো । দুপুর অবাক হয়ে যায় । অবাক হওয়ারই কথা । দুপুর একলা বাসায় থাকে , চাবিও তার কাছে । তাহলে কে ভিতরে । কিছুক্ষন ভেবে কলিংবেল চাপে। কিছুখন পর দরজা খুলে দেই ভিতর থেকে একজন ।

ভিতরের জন কে দেখে দুপুরের আরো বেশি অবাক হওয়ার কথা ছিল , কিন্তু সে অবাক না হয়ে মুগ্ধ হলো । সত্ত্যি সামনে যে দারিয়ে আছে তাকে না দেখে মুগ্ধ না হয়ে উপায় আছে । যেন সর্গ থেকে হুরপরী নেমে এসেছে নীল শাড়ি পরে । নীল শাড়ি , নীল চুরি্‌, কালো ব্লাউজ , কালো টীপ , চোখে আবছা কাজল , সব মিলিয়ে আগুনের নীল আলাভের চেয়েও বেশি সুন্দরী লাগছে রোদেলাকে । ওহ রোদেলা দুপুরের প্রেমিকা । দীর্ঘ ৪ বছর ধরে প্রেম করছে ওরা , দুপুর যখন গ্রাম থেকে এসে ঢাকা ভর্তি হয় তখন থেকে ওদের সম্পর্ক । এরকম প্রবিত্র প্রেম আমি এর আগে দেখিনি ।

রোদেলা ঃ কি স্যার , আপনি কি ঘরে আসবেন না ? নাকি সারাদিন বাইরেই দারিয়ে থাকবেন ?

দুপুরঃ আমার দুচোখ কি বলছে জানো ?

রোদেলা ঃ হ্যা । খুব ভালো করে জানি । সে বলছে আমি আজ ক্লান্তিহীন , আজ আমি এই পেত্নীটাকে দেখবো দুচোখ ভরে । ঠিক তো ????

কথা টা বলে দুজনে হাসতে হাসতে গড়িয়ে পরে । রোদেলা দুপুরের হাত ধরে ভিতরে নিয়ে যায় ।

রোদেলা দুপুরের গলা থেকে টাই খুলে দিয়ে টায়েল দিয়ে বলে ফ্রেশ হয়ে আসতে । দুপুর তাই করে । ফ্রেশ হয়ে রুমে গিয়ে প্রতিদিনের মত সিগারেট ধরিয়ে টানতে থাকে ।

রোদেলা ঃ দুপুর এই বিশ্রি গন্ধ আসছে কোথাই থেকে ( বলতে বলতে রুমে ঢুকে) ।

দুপুর সিগারেট পিছনে লুকায় কিন্তু রোদেলা ততখনে দেখে ফেলেছে । মেয়েটার চোখে পানি চলে এসেছে ।

রোদেলা ঃ তুমি আমার কাছে প্রমিস করেছিলে যে তুমি আর স্মোক করবে না ।

দুপুর রোদেলার কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরে কপালে ১টা চুমু খেয়ে বলে

দুপুর ঃ আজ তোমাকে , মানে পেত্নীকে ছুয়ে প্রেতাত্তা প্রমিস করছে যে প্রেতাত্তা আর কোনোদিন সিগারেট খাবে না । কিন্তু পেত্নীকেউ প্রমিস করতে হবে যে সে প্রেতাত্তাকে কখনো ছেরে যাবে না । কি প্রমিস করো ? (হাত বারিয়ে দেয় দুপুর)

রোদেলা ঃ (দুপুরের বুকে মাথা রেখে আর এক হাত দুপুরের হাতে রেখে) মনে আছে দুপুর ? আমি তোমাকে কথা দিয়েছিলাম যে আমি একদিনের জন্ন্য হলেও তোমার বউ হবো , তোমার সংসার করবো । আমি কিন্তু আমার কথা রেখেছি । তুমিও তোমার কথা রাখবে , আমাকে দেওয়া কোন প্রমিস ভাংবে না কিন্তু ।

দুপুর ঃ জি মহারানী । মহারানী আমার যে এখন খুদা লেগেছে , কিছু কি ব্যবস্থা করেছেন এই অধম রাজার জন্ন্য ।

রোদেলা ঃ জী অধম মহারাজা আপনার জন্ন্য ব্যাবস্থা হয়েছে , আপনি আসুন । আমি টেবিলে সব সাজাচ্ছি ।

রোদেলা টেবিলে সব গুছিয়ে দুপুর কে ডাক  দেয় , দুপুর আসে । টেবিলে দুপুর বসার পর রোদেলা লাইট বন্ধ করে মোম জালিয়ে দেয় ।

দুপুর ঃ ক্যান্ডেললাইট ডিনারের ব্যাবস্থা ? বাহ দারুন তো ।

রোদেলা ঃ আমি আমার প্রেতাত্তাকে আজ নিজের হাতে বেরে খাওয়াবো ।

দুপুর ঃ একি । আমার সব পছন্দের খাবারই তো দেখি তুমি রান্না করেছে । চিংড়ীর মালাইকারী , ঈলিশের পাতুরী । গরুর মাংসো  ভুনা । জান তুমি এতো কিছু কখন করলে ?

রোদেলা ঃ খাওয়ার সময় বেশি কথা বলতে হয় না । চুপ করে খাও । ( বলে রোদেলা হাত পাখা দিয়ে দুপুরকে বাতাস করা শুরু করে)

দুপুর ঃ রোদেলা , বাতি না জললেও ফ্যান কিন্তু চলছে ।

রোদেলা ঃ আমি জানি ।

দুপুর ঃ তাহলে বাতাস করছো যে ?

রোদেলা ঃ স্বামী খাওয়ার সময় তাকে হাত পাখা দিয়ে বাতাস করতে হয়। তুমি কি সেটাও জানো না ?

কথা টা শুনে দুপুর হেসে কুটিকুটি হয়ে যায় ।

খাওয়ার পর্ব শেষ করে দুপুর বেডরুমে গিয়ে শুয়ে পরে । রোদেলা একবাটি পায়েশ নিয়ে এসে দুপুর কে খেতে বলে কিন্তু দুপুর বলে যে সে অনেক খেছে তাই আর খেতে পারবে না ।

তারপর দুপুর আর রোদেলা শুয়ে পরে , বলতে গেলে সারারাত গল্প করে কাটয়ে ভোরের দিকে ঘুমিয়ে পরে ।





সকাল ৬টার মত বাজে । দুপুরের ফোনে মাহাদির ফোন আসে । প্রথমবার টের পায় না , পরেরবার ঘুম ভেঙ্গে যায় দুপুরের । ফোন টা পিক করে দুপুর

দুপুর ঃ কিরে দোস্ত ? এতো সকালে ?

মাহাদী ঃ দোস্ত তুই কোথায় রে ?

দুপুর ঃ এই তো বাসায় ঘুমাচ্ছিলাম । কেন মামা ?

মাহাদি ঃ দোস্ত ১টা ব্যাড নিউজ আছে । রোদেলা গতকাল সন্ধ্যায় রোড এক্সিডেন্টে মারা গেছে । আমি মাত্রই খবরটা পেলাম । তাই তোকে জানালাম ।

দুপুর ঃ ধুর গাধা । রোদেলা আমার বাসায় , আমার সাথেই আছে ।(কথাটা বলে পাসে ফিরে দেখে রোদেলা নেই , সেখানে ১টা চিঠি পরে আছে ) (কাদো কন্ঠে) আমী টকে পোড়ে ফোন দিচ্ছি ।

চিঠিটা হাতে নিয়ে খুলে পড়া শুরু করে দুপুর

আমার সবচাইতে দামী আর প্রীয় মানুষ আমার প্রেতাত্তা

আমাদের জীবন টা খুবই নাটকিও । হাজার রঙ্গে আচ্ছন্য । আর যে এই নাটক টা পরিচালনা করছে সে ও কেমন জানি । এই দেখো বাবু , আমাকে তোমার কাছ থেকে নিয়ে গেলো । হ্যা আমি আর বেচে নেই । এই তুমি কিন্তু কাদবে না । জানো যখন এক্সিডেন্ট টা হয় , খুব রক্ত ঝরছিলো , ব্যথাও হচ্ছিলো অনেক । একটা সময় বুঝতে পারি যে আমি আর বেশিখন নেই এই পৃথিবীতে , জানো তখন আরো বেশি খারাপ লাগছিল এই ভেবে যে আমি চলে গেলে তুমি খুব একা হয়ে যাবে । কে দেখেশুনে রাখবে পেত্নীর এই প্রেতাত্তাটা কে । কিন্তু একটা সময় আমাকে পৃথিবীর মায়া ছেরে চলে আসতে হয় । কিন্তু তোমাকে তো কথা দিয়েছিলাম যে আমি একদিনের জন্ন্য হলেও তোমার হবো । যান আমি কিন্তু আমার কথা রেখেছি ।আর তুমিও কিন্তু তোমার দেওয়া কথাগুলো রাখবে । কোন বাজে কাজ করবে না । আর আমার কথা মনে করে উলটাপালটা কিছু করবে না । তবে চিঠিটা পরার পর খুব কাদবে , তাহলে মন টা হালকা হবে । আর প্লিজ নামাজ পরে আমার জন্ন্য দোয়া করবে । জীবন টা কে নতুন করে সাজাবে । নিজের খেয়াল রাখবে । আর মনে রাখবে “””” পেত্নীর ভালোবাসা কিন্তু প্রেতাত্তার কাছেই গচ্ছিত থাকবে “”””

আল্লাহ হাফেজ ।

চিঠিটা পরে কান্নায় ভেঙ্গে পরে দুপুর ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Thank you for your participation .