রবিবার, ২২ জানুয়ারী, ২০১৭

রহস্যময়ী নীল্মবরী



রহস্যময়ী নীল্মবরী
লেখা : প্রে তা ত্তা



রাত ৮টায় বাস ছারে । রিওন ১টা প্রোডাকশন ফার্মে জব করে । আজ তারা ১টা শুটিং এর কাজে খুলনা যাচ্ছে । ভোর ৪টার দিকে তারা খুলনার খালিশপুর শহরের ১টা সরকারি কোয়াটারে উঠে । জায়গাটা খুবই নির্জন কিন্তু অসম্ভব সুন্দর ।

শুটিং দল কে ৩টা আলাদা জায়গা ভাগ করে থাকার ব্যবস্থা করা হয় । পরিচালক রনি সাহেবকে ১টি বাংলো বাড়িতে ৩ তালার রুমে থাকতে দেওয়া হয় । আর বাকি সবাই বিভিন্ন যায়গায় । রিওন , দুপুর আর রিপন থাকে ১টা বাংলোর বড় ১টা রুমে । পরিচালক সাহেব এর রুম তকে হেটে যেতে মিনিট ১০ এর মত সময় খরচ হবে হয়তো ।

পুরো কোয়াটার এলাকা টাই খুব নির্জন । চারদিকে কেমন জানি ভুতুরে ১টা পরিবেশ ।

রুমে গিয়ে যে যার মত ফ্রেস হয়ে ঘুম দেয় । আজ সারাদিন ছুটি সবার , রনি সাহেব রেকি তে গিয়েছে । সন্ধ্যায় মিটিং কল করেছে । সন্ধ্যায় একে একে টিংকু, রতন, অনিক, উত্তম, বাবু, দুপুর, রিপন, বিপ্লব আর রিওন যে যার জায়গা থেকে এসে রনি সাহেব এর রুমে হাজির । রাত ১১ টার কিছু পর মিটিং শেষ । মিটিং মানে তাদের কাছে একরকম আড্ডাবাজিই বলা চলে ।

পরিচালকের বাসা থেকে নামার সময়  ,

রিপন ঃ রিওন ভাই জায়গা টা কিন্তু অনেক সুন্দর , বউটারে নিয়ে আসতে পারলে ভালো হইতো , তাই না ?

দুপুর ঃ রিপন ভাই আপনি কি বউ ছারা আর কিছু বুঝেন না ?

রিওন ঃ মিয়া একলা আসছেন তো একলাই মজা নেন , বউ বউ কইরা কান্না করে লাভ নাই ।

কথা বলার সাথে সাথেই রিওন দারিয়ে যায় , একটু দূরে ২তালার ১টা বাংলোর বেলকুনির দিকে তাকিয়ে আছে রিওন ।

দুপুর ঃ রিওন ভাই এই ভাই কি দেখেন ? চলেন তো , আমার এমনিতেই ভয় লাগতেছে । আমি শিওর এই এলাকায় ভূত আছে ।

রিওন ঃ অসাধারন ।

রিওন হাটা শুরু করে , পুরো রাস্তায় সে আর কোন কথা বলে না । রিপন আর দুপুর কথা বলতে বলতে চলে যায় ।

পরের দিন ১০টার দিকে শুটিং । রনি সাহেব এর বাংলোর সামনে থেকে ছারে শুটিং এর গাড়ি ।

গাড়িতে কথোপকথন

রনি সাহেব ঃ রিপন সবাই কি আসছে ?

দুপুর ঃ ভাইয়া রিওন ভাই তো আসে নাই , ফোন ও ধরছে না ।

রনি সাহেব ঃ যাও তো দেখো লেট লতিফা টা কোথায় আছে ।

দুপুর আর বিপ্লব গাড়ি থেকে নেমে একটু হাটতেই দেখতে পায় রিওন কে । সে দোতালা বাংলোর সামনে ১টা নারিকেল গাছের সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে বেল্কুনির দিকে তাকিয়ে আছে ।

দুপুর ঃ রিওন ভাই কি মিয়া আপনি । সবাই বাসে বসে আছে আর আপনে ……… চলেন তো

রিওন ঃ দুপুর ভাই মেয়ে টা কে দেখছেন ? কত সুন্দর তাই না ?

দুপুর ঃ কই ভাই আমি তো কাউ কে দেখতে পাচ্ছি না ।

রিওন ঃ আপনাদের আসতে দেখে ভিতরে ঢুকে গেছে ।

বিপ্লব ঃ লেট হয়ে গেছে , চলেন তো ।

এরপর চলে আসে হয় গাড়িতে । তারপর শুটিং । ওইদিনের মত শুটিং শেষ করে সন্ধ্যার দিকে ফিরে আসে । রাত ৮টায় সবার রাতের খাবার রনি সাহেবের বাংলোতে । রিওন আর দুপুর সব সময়ের মত এবার ও আসতে লেট । রনি ভাইএর বাংলোর কাছে এসে রিওন দুপুরকে বলে

রিওন ঃ দুপুর ভাই আপনি সামনে যান আমি আসতেছি ।

দুপুর ঃ ভাই এমনিতেই লেট হয়ে গেছে , আর লেট কইরেন না প্লিজ ।

রিওন ঃ আপনি যান আমি আসতেছি ।

এর পর রিওন সামনের দিকে এগিয়ে যায় ।সাম্নেই দাঁড়িয়ে অসম্ভব সুন্দরী এক ললনা

রিওন ঃ এক্সকিউজমি ।

মেয়েটি পিছনে ফিরে তাকায় ।

মেয়ে ঃ কেমন আছেন ?

রিওন ঃ ভালো । আপনি এই রাতে এমন ১টা নির্জন পরিবেশে একা একা কি করছেন ?

মেয়ে ঃ আচ্ছা আপনি অন্ধকার ভালোবাসেন না ?

রিওন ঃ অন্ধকার কে আবার ভালোবাসা যায় নাকি ? আচ্ছা আপনার নাম ?

মেয়ে ঃ আমার নাম নিলাম্বরী , আপনি তো রিওন তাই না ?

রিওন ঃ আজিব তো , আপনি আমার নাম জানলেন কি করে ?

মেয়েটি এক অসম্ভব মায়াবি হাসিতে ফেটে পরে , তার হাসি দেখে মুগ্ধ হয়ে যায় রিওন । তার মনে হতে থাকে তার জিবনের সব অপ্রাপ্তির সুখ এই হাসিতে লুকিয়ে আছে ।

রিওন ঃ আপনি খুব সুন্দরী । এতো সুন্দরী যে আপনি যেখানে থাকেন সেখানে চাদের আলোর প্রয়োজন হয় না ।

নিলাম্বরী ঃ আপনি খেতে যান , আর একটু লেট করলেই দেখবেন খাবার শেষ । যান যান …………।

বলেই নিলাম্বরী আস্তে দৌড়ে যায় , তার পায়ের নুপুর এর শব্দ । রিওন রনি সাহেবের রুমে ফিরে আসে , কোন রকমে রাতের খাবার খেয়ে ফিরে আসে রুমে । সারা রাত ঘুম হয় না , কানের ভিতর মেয়েটার হাসির শব্দ আর নুপুরের রিমঝিম আওয়াজ তার ঘুম হারাম করে দেয় । রিওনের মনে ১টাই প্রশ্ন জাগে যে ১টা মানুশ এত সুন্দর হয় কি করে ? সে কি মানুশ নাকি অন্ন্য কিছু ? হয়তো আকাশের হুরপড়ি । সারা রাত এই প্রশ্নের উত্তরের পিছনে দৌউড়াদৌ্রি করে রিওন ।

তারপরের দিন সারাদিন রিওন খুজে ফিরে নিলাম্বরীকে । কিন্তু কোথাও খুজে পায় না । রিওন কিন্তু আজ শুটিং যায় নি । সন্ধ্যার দিকে রনি ভাই নিজে রিওন কে ফোন দিয়ে তার রুমে আসতে বলে । রিওন আসে । রনি সাহেবের রুমে আগে থেকেই অন্যরা সবাই ছিল । রিওন মাঝখানে এসে হাজির হয় ।

রিওন ঃ ভাইয়া কেমন আছেন ?

রনি ঃ আমি ভালো । তুই নাকি প্রেমে পরেছিস ? আজ ডেটীং এ গেছিলি তাই  শুটিং এ আসতে পারিস নি ?

রিওন ঃ না ভাইয়া তেমন কিছু না । শরির টা খারপ লাগছিল তাই আর কি ...।

রনি ঃ কাল ও কি শরির খারাপ থাকবে ?

রিওন ঃ না ভাইয়া । কাল ঠিক হয়ে যাবো । শুটিং এও যাবো

রনি ঃ আচ্ছা ঠিক আছে । এখন এই নে যাদব ঘোশের কাচা গোল্লা খা ।

রিওন ঃ (হাতে মিষ্টি নিয়ে) ভাইয়া আমার ভালো লাগছে না । আমি এখন যাই ?

রনি ঃ আচ্ছা ঠিক আছে যা । ভালো করে ঘুম দে , সকালে ঠিক হয়ে যাবি ।

রিওন চলে আসে । ৩ তালা থেকে নেমে হাটা দিয়েছে আর এমন সময় মিষ্টি কন্ঠের গান । পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখে নীলাম্বরী । রিওন নীলাম্বরীর কছে যেতেই নীলাম্বরী গান থামিয়ে দেয় ।

রিওন ঃ গান থামালেন কেনো ?

নীলাম্বরী ঃ আপনি  আসলেন তাই ।

রিওন ঃ অসাধারন গাচ্ছিলেন কিন্তু আপনি ।

নীলাম্বরী ঃ ধন্যবাদ । আচ্ছা আপনার নাকি শরীর খারাপ ?

রিওন ঃ হ্যা কিছুটা । আজ সারাদিন আপনাকে খুজেছি । কোথায় ছিলেন আপনি ?

নীলাম্বরী ঃ আমাকে খুজেছেন ? আমি তো ঐ রুম টা তেই ছিলাম ।

রিওন ঃ বের হন নি রুম থেক ?

নীলাম্বরী ঃ নাহ । আমার রুম থেকে বের হওয়া নিষেধ । আমাকে কেন খুজছিলেন ?

রিওন ঃ এমনি । খুব দেখতে ইচ্ছে করছিল তাই ।

নীলাম্বরী ঃ দেখবেন আবার আমার প্রেমে পরে যাবেন না কিন্তু , তাহলে আপনি শেষ ।

রিওন ঃ এতো সুন্দর ১টা মেয়েকে দেখে প্রেমে না পরে উপায় আছে ?

নীলাম্বরী কথা টা শুনে আবার সেই মায়াবী হাসিতে উজার করে দেয় নিজেকে , আর রিওন সেই হাসিতে মুগ্ধ , সে হাসির মাঝে নিজেকে একদম হারিয়ে ফেলে ।

নীলাম্বরী ঃ আচ্ছা তোমার সংগীরা আসছে , আমি যাই ।

বলেই নীলাম্বরী দৌড় । বাজতে থাকে তার পায়ের নুপুর । পিছন থেকে রিপন

রিপন ঃ ভাই আপনি এখনো যাননি ?

রিওন ঃ হ্যা যাচ্ছিলাম । মাঝপথে নীলাম্বরীর সাথে দেখা , কথা বলছিলাম আর আপনি এলেন ।

রিপন ঃ চলেন যাই ।

রিপন আর রিওন রুমে ফিরে যায় । পরেরদিন সকালে ঘুম থেকে শুটিং এ যায়। দুপুরের কিছু পরে শুটিং শেষ করে ফিরে আসে । এসেই রিওন খুজতে যায় নীলাম্বরীকে । ওই সে রুমটার কাছে যায় । রুম টা তালা । অনেকখন রুমের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে ।বেশ কিছুখন পর এক বয়স্ক লোক এসে রিওন কে চেচিয়ে ডাক দেয় ।

বয়স্কলোক ঃ কে আপনে ? আপনের কি মরনের ইচ্ছে হইছে যে এখনে আসছেন ?

রিওন ঃ আমি রিওন ঃ এখানে ১টা শুটিং এর কাজে এসছি ।

বয়স্কলোক ঃ যেই কাজেই আসেন না কেন , এই জায়গাটা ভালো না ।

রিওন ঃ ভালো না মানে ? কি ব্যাপার খুলে বলুন তো ?

বয়স্কলোক ঃ এখানে মাঝে মাঝে এক রহস্যময়ীকে দেখা যায় । মানুষ না ভূত কেউ বলতে পারে না । এর আগে ২/৩ জনকে মেরে ফেলতে নাকি চাইছিল । পাসের এই লেকটাতেই চুবায় মারতে চাইছিল ।

রিওন ঃ কে মেয়েটা ? আর আপনি তো মিথ্যেও বলতে পারেন ?

বয়স্কলোক ঃ কে মেয়েটা সেটা জানিনা । অনেক সুন্দর আর ইয়ং পোলাপাইন মেয়েটা কে দেখছে । একটূ পাগলী টাইপের ওরা বলে । নাম নাকি নীলাম্বরী , পোলাপাইন এখন নাম দিছে রহস্যময়ী নীল্মাবরী । আর বুইরা বয়সে কেউ মিথ্যা কইনা বাপজান । সাবধানে থাইকো ।

বয়স্কলোক আর রিওনের কথোপকথন এখানেই শেষ । রিওন রুমে ফিরে আসে । রাতের খাবের খেয়ে সে চলে আসে ঐখেন যেখানে গতকাল নীল্মবরীর সাথে দেখা হয়েছিল । সেখানে ১টা উপরে পরা গাছের উপর বসে রিওন সিগারেট খাচ্ছিল একটার পর ১টা । অনেকখনেও না আসায় সিগারেট ফেলে চলে যাওয়ার জন্য উঠে হাটা দেয় রিওন । আর তখনি নীল্মবরী আসে ।

নীল্মবরী ঃ চলে যাচ্ছো কেনো ?

রিওন ঃ তুমি আসছিলে না তাই ।

নীল্মবরী ঃ সিগারেট এর গন্ধ আমি একদমি সহ্য করতে পারি না ।

রিপন ঃ আচ্ছা তুমি নাকি রহস্যময়ি ? অনেক ছেলেকে নাকি মারতেচেয়েছিলে ?

নীল্মবরী ঃ হ্যা ।

রিওন ঃ কেনো ?

নীল্মবরী ঃ মুক্তি পেতে ।

এরপর আরো কিছু কথা হয় । শেষের দিকে কথা গুলো ছিল ।

রিওন ঃ আমি তোমার সাথে যেতে চাই ।

নীল্মবরী ঃ না সম্ভব না ।

রিওন ঃ কেনো না । তুমি ওদের নিয়ে যেতে চাইতে পারো , আমাকে কেনো নয় ?

নীল্মবরী ঃ কারন আমি তোমাকে ভালোবেশে ফেলেছি ।

রিওন ঃ আমিও তোমাকে ভালোবেশে ফেলেছি । সুতরাং আমি তোমার সাথে যাবো তুমি যাওয়ার ব্যাবস্থা করো ।

নীলাম্বরী ঃ আমি পারবো না ।

রিওন খেপে যায় । অনেক খন তর্ক বিতর্ক চলে তাদের মধ্যে । এদিকে অনেক রাত হয়ে যায় । রিপন আর দুপুর অনেক রাতেও ফিরে না আসায় রনি সাহেব কে জানায় । সবাই মিলে একসাথে খোজাখুজি করে । কোথাও খুজে পায় না । সকাল হয়ে যায় । ঐ রুমটার সামনের দেয়ালে রক্ত দিয়ে লেখা ।

আনি রহস্যময়ী নীলাম্বরী বলছি । আমি আজ তোমাদের ছেরে চলে গেলাম । আর কোন ডিস্টার্ব না তোমাদের । আমি আমার সংগী পেয়ে গেছী । সে আর আমি চলে যাচ্ছি কলংকপুরে । সেখানেই থাকবো দুজনে অনন্তকাল ।

শুভ বিদায়।

দুপুরের কিছু পরে রিওনের লাশ ভেষে উঠে লেকে । পুলিশ এসে লাশ নিয়ে যায় । ময়নাতদন্ত হয় তারপর লাশ ঢাকায় । এই মৃত্যর তদন্তও হয় , কিন্তু রিওনের মৃত্যুর রহস্য কেউ জানে না , আর জানে না রহস্যময়ী নীল্মবরীর রহস্য বা দেয়ালের লেখা সেই কথা গুলোর রহস্য । যদি আপনি বা আপনারা কেউ জেনে থাকেন তাহলে প্লিজ আমাকে জনাবেন ।

সমাপ্ত
( পুরো গল্পটাই আমার কল্পনা । এর সাথে বাস্তবতার কোন মিল নাই )
আমার লেখা আরো গল্প পরতে চাইলে আমার পেইজ টি লাইক দিতে পারেন ।
https://www.facebook.com/arshipon15/

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Thank you for your participation .