রবিবার, ২২ জানুয়ারী, ২০১৭

নীল তরন্নিতা

নীল তরন্নিতা
লেখা : প্রে তা ত্তা


বকুল ফুল বকুল ফুল সোনা দিয়া হাত কেন বান্দাইলি …………………… রবিন্দ্র সরবরে বসে গান গাচ্ছিল শিপন , রহিত আর নাঈম । নাঈম আর রহিত ভালোই গায়তে পারে , কিন্তু শিপন গান এর গ ও গাইতে পারে না । তবু গায় , গায়তে ওর ভালো লাগে । গান গাচ্ছে শিপন , হটাত পিছন থেকে ১টা মেয়ে এসে বলে
মেয়ে ঃ এই মিয়া কি পায়ছেন আপনি ? এখানে কি আপনার জন্ন্য আর অন্ন্য কেউ বসতে পারবে না ? গান গায়তে পারেন না গান কেনো ? মানুষদের একটু শান্তি দিন প্লিজ ।
কথা গুলো বলে মেয়েটা চলে যা। শিপন হা করে মেয়েটার দিক তাকিয়ে থাকে । কিছক্ষন পরে শিপন বলে
শিপন ঃ মেয়েটা সত্তিই খুব সুন্দর তাই না ?
ওর কথা শুনে নাঈম আর রহিত হাসতে হাসতে বলে আরে বোকা মেয়েটা তোমাকে অপমান করে গেল আর তুমি কি তার প্রেমে পরে গেলা । তারপর কিছখন পর তারা চলে যায় ।
পরেরদিন আবার অফিস শেষ করে ওরা ৩ জন আসে । তবে আজ আর শিপন গান গায় না । নাঈম গান গাচ্ছে …। কিছুক্ষন পর সেই মেয়ে টি
মেয়ে ঃ এক্সকিউজমি … আমি সরি গতকালের খারাপ ব্যবহার এর জন্ন্য ।
শিপন ঃ আরে না , আপনি তো আর ভুল বলেন নাই । আজ কিন্তু আর আমি গান গাচ্ছি না ।
(মেয়ে টা একটু লজ্জা পায় )
মেয়ে ঃ না আপনি সত্ত্যি খুব ভাল গান করেন , আমি শুনেছি ।
(মেয়েটার কথা শুনে ওরা সবাই হেসে উঠে )
শিপন ঃ আপনি কিন্তু খুব ভালো মিথ্যা বলতে পারেন না , সেটা কি আপনি জানেন ? যাই হোক আমি শিপন , আর ওরা আমার বন্ধু রহিত আর নাঈম ।
মেয়ে ঃ আমি নিলা । খুব ভালো লাগলো আপনাদের সাথে পরিচয় হতে পেরে । আজ আমি উঠি বাড়ি যেতে হবে । আরেকদিন দেখা হবে আসি ।
শিপন ঃ ঠিক আছে । আল্লাহ হাফেজ ।
শিপন মেয়েটার দিকে একপলকে চেয়ে আছে । মেয়ে টা কিছুদুর যাওয়ার পর পিছনে ফিরে ওদের টাটা দেই । শিপন ওদের বলে নীলা সত্ত্যিই অসম্ভব সুন্দর …।
পরেরদিন নীলা সরবরে আসে কিন্তু এসে ওদের খুজে পায় না । মনে মনে ভাবে ওদের নাম্বারটা কাল রেখে দিলেই পারত । কিছক্ষন হাটাহাটির পর চলে যায় । আসলে নীলা খুব একা , ওর তেমন কোন বন্ধুও নাই । তাই হইত শিপন এর সাথে বন্ধুত্ত করার পর ওকে মিস করছে । আবার হয়ত ওর প্রেমেও পরতে পারে ।
আজ নভেম্বরের ৭ তারিখ । আজ শিপনের জন্মদিন । অফিস শেষে একা সরবরে এসেছে । নাঈম আর রহিত আজ অফিসে আসে নাই … তাই শিপন একা । ১টা সিগারেট নিয়ে টানছে আর হাটছে । পিছন থেকে কে জেনো ডাক দিল শিপন বলে । পিছনে তাকিয়ে দেখে নীলা এসেছে । কালো রঙের ১টা ড্রেস পরেছে । দারুন সুন্দর লাগছে ওকে ।
নীলা ঃ কি দেখছো তুমি এমন করে আমাকে ? আমাকে কি দেখতে খুব সুন্দর লাগছে ?
শিপন ঃ সরবরে আজ পড়ি নেমে এসেছে , তাই পড়ি দেখছি …।। আমার মনে হয় পড়িটার জাহান্নামে যাওয়া উচিত ।
নীলাঃ কি … আমি কি করছি যে আমি জাহান্নামে যাব ?
শিপন ঃ তোমার অপরাধ হচ্ছে তুমি অসম্ভব সুন্দর । মানুষকে কেন এত সুন্দর হতে হবে ?
কথা শেষ হতে না হতেই নিলা শিপনের পিঠে আস্তে করে থাপ্পর দেই । তার পর দুজনে হাটতে থাকে …।আর গল্প করে । আজ যাওয়ার আগে নীলা শিপনের নাম্বাব নিয়ে নেয় ।
মাঝরাতে শিপনের ফোন আসে । রিসিভ করে বলে হ্যালো কে । ওই পাস থেকে আমি নীলা ,
শিপন ঃ ওহ নীলা , এত রাতে কী মনে করে ?
নীলা ঃ না ,ম মানে তোমার ফেসবুক আইডি টা দিবা ?
শিপন ঃ হ্যা । Sh Ip On লিখে search দিলেই আমাকে পাবা …।
নীলা ঃ thank you . কি কর তুমি ?
শিপন ঃ ফেসবুকে চ্যট করছি , তুমি ?
এইভাবে শুরু হয় শিপন আর নীলার সম্পরক । খুব তারাতারিই ওরা একে অপরের প্রেমে পরে যায় । খুব ভালোই চলছিল ওদের । প্রতিদিন অফিস শেষে ২জন মিলে সরবরের এককোনায় বসে হাতে হাত রেখে গল্পে জমে উঠতো । এত গল্প যে ওরা কোথায় পেত সেটা শুধু ওরাই যানে ।। আর শুক্রবার নীলা নীল শাড়ি পরে আসত । ছুটির দিন ২ জন ২ জন কে প্রায় সারাদিনই সময় দিত । মাঝে মাঝে নীলা বাসায় থেকে রান্না করে নিয়ে এসে শিপন কে নিজ হাতে খায়িয়ে দিত ।এভাবেই চলে ওদের প্রেম । একসময় ওরা সিদ্ধান্ত নেই যে ওরা বিয়ে করবে । তারপর এক্অসময় তারা নিজেরা বিয়ে ও করে ফেলে ।
ছোট্ট ১টা বাসা নেই । আল্প আসবাবপত্র দিয়েও হলে সুন্দর করে বাসাটা গুছিয়ে ফেলে । ২জনের সংসার চলতে থাকে , শিপনের অল্প টাকার বেতনে চলতে ওদের একটু কষ্ট হয় । তবু সে চালিয়ে যাবার চেষ্টা করে । নীলাও হ্যাপি । একদিন হটাত নীলা অসুস্থ হয়ে পরে , তারপর সে ডাক্তারের কাছে যায় । ফিরে আসার পর থেকে নীলার মন খারাপ । মাঝে মাঝে একা একা কাদে কিন্তু শিপন ধরতে পারে না । নীলা শিপনের সাথে হটাত খারাপ ব্যবহার শুরু করে । তারপর একদিন নিলা এই অভাবের সংসারে থাকবে না বলে চলে যায় । শিপন ওকে অনেক বুঝানোর চেষ্টা করেও ধরে রাখতে পারে না । যাবার আগে সেই প্রথমবার ফিরে দেখার মত পিছনে ফিরে তাকায় , সেইদিন নীলার মুখে হাশি থাকলেও আজ কিন্তু তার ২চোখে পানি ……। নীলা চলে যায় তার বাবার কাছে । আর শিপন পরে থাকে একা । কান্না ছারা শিপনকে আর কিছুই দিয়ে যায় নি । বার বার তার বাবার কাছ থেকে আনার চেষ্টা করেও পারেনি শিপন ।
এভাবে প্রায় ৬ মাস চলে যায় । শিপন অনেক বদলে গেছে , মুখে দাড়ি । আর হাতে সব সময় সিগারেট থাকে ।
এক দুপুরে শিপনের কাছে ফোন আসে নীলার বাবার নাম্বার থেকে । সে শিপন কে তার বাসায় আসতে বলে । শিপন আর কিছু না ভেবে সাথে সাথেই নীলা দের বাসায় যায় ।বাসায় গিয়ে সোফায় বসে আছে শিপন । কিছুখন পর নীলারবাবা আসে । শিপন পাগলের মত দারিয়ে বলে
শিপন ঃ বাবা নীলা কোথায় , আমি ওর সাথে কথা বলতে চাই ।
বাবা ঃ( কাদতে কাদতে ) নীলা আর নেই বাবা , ও তোমাকে মেমরী টা দিয়ে গেছে ।
বলে সে চলে যায় । শিপন যেন কথা গুলো শুনে আকাশ থেকে পরলো । কোন্ রকমে বসে মোবাইলে মেমরী টা ভরে দেখলো একটা ভিডিও আর নীলা আর শিপন এর অনেক গুলো ছবি । ভিডিও টা ওপেন করলো ………………
নীলা হাসপাতালের একটা বেডে শুয়ে ভিডিওটা করেছে , সে কিছু বলছে …। কথা গুলো এমন
নীলা ঃ কেমন আছো শোনামনি । যানি ভালো নাই তুমি । তুমি খুব কষ্ট পেয়েছ তাই না যেদিন আমি তোমাকে ছেরে চলে এসেছি । বিশবাস কর জান আমি তোমাকে ছেরে আসতে চাই নি । আমি এটাও চাই নি তোমাকে কষ্ট দিতে । কিন্তু নিয়তি আমাকে তাই করতে বাধ্য করেছে । হাসপাতালে গিয়ে শুনি আমার ব্রেইন ক্যান্সার হয়েছে । তোমাকে বলে আমি কষ্ট দিতে চাই নাই । তাই পালিয়ে এসেছি তোমাকে একা ফেলে । আসার পর প্রতিটা দিন তোমাকে ছারা খুব কষ্টে কেটেছে । বাবু তোমার আদর আর ভালোবাসা খুব মিস করছি , তোমার হাতের বানানো চা খুব খেতে ইচ্ছে করে । কতদিন হয় তুমি আমার চুল বেধে দাও না । মনে পরে তোমার আমার একবার জর হয়েছিল তারপর তুমি কত …… আর পারছি না আমি । আমাকে ক্ষমা করে দিও বাবু । আর প্লিজ আমার প্রতি তোমার ভালোবাসা টা ধরে রেখ । আমার জন্ন্য মাঝে মাঝে চা বানাবে কিন্তু , আর প্রতিদিন আমার কবরে এসে আমার সাথে দেখা করে যাবে …।। আমি খুব মিস করছি তোমাকে । আমি আর পারবো না শোনা ……… ছোট্ট করে ১টা চুমু দিয়ে ভিডিওটা বন্ধ হয়ে যায় ।
শিপন কিছুখন পর মাথা ঘুরে পরে যায় ।।
পরের দিন থেকে রোজ সকালে শিপন নীলার কবর একবার করে জেয়ারত কর । প্রতিবার ২ কাপ চা বানায় , সিগারেট খাওয়া ছেরে দেই । আর ৫ ওয়াক্ত নামাজ পরে নীলার জন্ন্য দোওয়া করে ।
এইভাবেই চলে শিপন এর বাকি জীবন ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Thank you for your participation .