রবিবার, ২২ জানুয়ারী, ২০১৭

অভিশপ্ত ভালবাসা

অভিশপ্ত ভালবাসা
লেখা : প্রে তা ত্তা



এই বাস ছারবে কখন ?
রহিত শিপনকে জিজ্ঞাস করলো । আজ শিপন , রহিত, সেনোরিটা , লাবন্য আর নাঈম কক্সবাজার যাচ্ছে । পুরো বাস যেনো ওদের ৫জনের অত্যাচারে আত্তহত্যা করবে এমন অবস্থা । হোই হুল্লোর আর বেসুরে গলায় গান গাচ্ছে ওরা । সকাল ৯টার দিক বাস থামলো কক্সবাজারে । হোটেল নিতে নিতে ১১টা বেজে গেলো । হোটেল থেকে কোন রকম রেষ্ট নিয়ে বেরিয়ে গেল বিচ ভ্রমনে । ওরা মেঘলা রিসোরট নামে ১টা রিসোড়টে ঊঠেছে । এই রিসোরটের নামে অনেক ভোতিক কথা প্রচলিত আছে , যদিও ওরা এই ব্যপারে কিছুই যানে না । বিচ থেকে এসে গোসল সেরে বাইরে রেষ্টুরেণ্টে দুপুর এর খাবার খেয়ে আবার এসে বিকেলের ঘুম দেই । সন্ধায় উঠেই আবার বিচে যায় । রাতের সাগর আর সাগরের ঢেউএর শব্দে ওরা হারিয়ে যায় যেন কল্পনার রাজ্যে । শিপন শুনেছিল যে রাতের সাগর তার রুপ দিয়ে যেকোন মানুষকে নাকি তার সব কষ্ট ভুলেইয়ে দিতে পারে । শিপন এর তাই হয়েছে , সে সব ভুলে গেছে । একা একা হাটছে আর পিছে তার সব ব্যথা আর কষ্টগুলো ফেলে রেখে যাচ্ছে ।
হাটছে ঠিক তখন সামনের দিকে দেখে ১টা মেয়ে নিল রঙের শাড়ি পরে বসে আছে । শিপন মেয়েটির সামনে গিয়ে বসে বলে বসতে পারি ?
মেয়ে ঃ বসেই তো পরেছেন ?
শিপন ঃ আপনি এখানে একা কেন ? ভয় লাগে না ?
মেয়ে ঃ আমি একা তাই একা ই থাকি । আর ভয় পাব কাকে ? ভুত দেখে ?
শিপন ঃ না মানে বলছিলাম যে একা একা ১টা মেয়ে !!!!! আর ভুত ভয় পাবেন কেনো ? ভুত বলতে কিছু আছে নাকি ?
মেয়ে ঃ ভুত বলতে কিছু নাই ? আমি নিজেও কিন্তু একটা ভুত ।
শিপন ঃ আপনি ভুত ? great joke……. এত সুন্দর ১টা মেয়ে ভুত ?
মেয়েটা ছোট করে ১টা হাসি দেই …। ওই হাসিতে শিপনের মনে হলো এই দুনিয়ার সব সুখ যেনো এই হাসিতে লুকিয়ে আছে ।
মেয়েটা উঠে চলে যাচ্ছে । তখন শিপন মেয়েকে জিজ্ঞাস করে তার নাম । মেয়ে টি বলে , আমার নাম ? আমার নাম রোদেলা । তারপর মেয়েটা একা একা হেটে সামনের দিকে চলে যায় । আর শিপন ফিরে আসে রহিতদের আড্ডায় , রাত ১২টা প্রযন্ত তারা বিচে থাকে । রুমে ফিরে এসে সবাই ঘুমিয়ে পরে কিন্তু শিপন ঘুমাতে পারে না , তার কল্পনায় বারবার শুধু রোদেলা মেয়েটির সুন্দর মুখটা আর সেই দুনিয়া কাপানো হাসির কথা ভেসে উঠে ।
হটাত বাইরে চোখ পরে শিপনের । দেখে ১টা মেয়ে একা একা হাটছে । হ্যা মেয়েটা তো রোদেলা ।
শিপন ঃ এক্সকিউজমি , আপনি এত রাতে এখানে ?
রোদেলা ঃ আমি রাতে বাইরেই থাকি । আপনি ঘুমান নি ?
শিপন ঃ না ঘুম আসছে না , বারবার আপনার ওই সুন্দর হাসিটা কল্পনায় ভেসে আসছিল । ( কথা শুনে মেয়েটা আবারো তার সেই ঘুম কারানো হাসি দেই ) আচ্ছা আপনি কি সত্যি রাতে না ঘুমিয়ে থাকেন ?
রোদেলা ঃ হ্যা ।
শিপন ঃ আপনি কি এখানেই থাকেন ?
রোদেলা ঃ ওই যে পাহার টা দেখছেন ওই পাহারের পাসে যে পূরোনো বারিটা দেখছেন সেখানেই আমি থাকি । আজ ৬ বছর হয় আমি অইখানে একাই থাকি ।
শিপন ঃ একা মানে ? আর ওই বাড়িটা দেখে তো মনে হচ্ছে না ওইখানে কোন মানুষ থাকে ।
রোদেলা ঃ কোন মানুষ থাকে না ওই বাড়ীতে , শুধু আমিই থাকি , সারাদিন ঘুমাই আর রাতে সাগরের পারে যাই আর ঘুরে দেখি ।
শিপন একটু ভয় পেয়ে যায় ।
শিপন ঃ তাহলে তুমি কি সত্তিই ভূত ?
রোদেলা ঃ আমি প্রেতয়াত্তা । ৬ বছর আগে ওই বাড়িটা তে আমরা থাকতাম । কিছু ভুমিদস্যুরা আমার বাবা মাকে মেরে ফেলে । পরে আমাকেউ মেরে ফেলে । আমার বাবা মার লাশ পায় কিন্তু আমার লাশ ওরা পুতে রাখে ওই পুকুরে । আমাকে কেউ কবর দেই না তাই আমি এখনো ঘুরে ফেরি আত্তা হয়ে । আর আমার বাড়িটাকে পাহার দেই । তুমি ভয় পাচ্ছ না ? আর তোমার নামটা কি ?
শিপনের চোখ দিয়ে পানি পরছে , ছেলেটা ওর প্রথম হাসিতেই প্রেমে পরে যায় । কিন্তু ও কিছুতেই মানতে পারছে না যে এত সুন্দর মেয়েটা ১টা প্রেতাত্তা । যাকে সে ভালোবেসে ফেলেছে সে কোন মানুষ না সে শুধু ১টা আত্তা ।
রোদেলা ঃ কি হলো তোমার ?
শিপন ঃ ওহ হ্যা , আমার নাম শিপন । আর ভয় পাচ্ছি না । তবে কষ্ট হচ্ছে যে এত সুন্দর ১টা মেয়ে কিনা ……
হটাত রোহিত শিপন কে ডাক দেই পিছন থেকে । বলে এই শিপন তুই একা একা কার সাথে কথা বলছিস ? তোকে কি ভুতে ধরলো নাকি । শিপন কোন কথা না বলে রুমে গিয়ে সুয়ে পরে ।
পরেরদিন সকাল থেকে সারাদিন শিপন রোদেলা কে খুজে ফিরে কিন্তু কোথাও খুজে পায় না । সন্ধার পর শিপন বিচে সুয়েছিল এমন সময় রোদেলা ওর পাসে এসে বসে ।
রোদেলা ঃ আজ সারাদিন তুমি আমাকে খুজেছ ? আমি দেখেছি (বলে হেসে ফেলে) ।
শিপন ঃ (রাগের সুরে) তুমি আমাকে দেখেছো কিন্তু আমার কাছে আসো নি কেনো ?
রোদেলা ঃ আরে বোকা আমি দিনে বাইরে আসতে পারি না । আমি তো তোমাদের মত মানুষ না , আমি আত্তা । চাইলেও সব কিছু করতে পারি না । এখন বল সারাদিন কেন খুজলে আমায় ?
শিপন ঃ জানিনা , তবে তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছিল ।
রোদেলা ঃ তাই । দেইখো তুমি আবার যেন আমার প্রেমে পরে যেও না । আমি দেখতে খুব সুন্দর তাই না ?
আর হ্যা আমাদের মানুষের সাথে প্রেম করা নিষেধ । ( বলে সে হেসে দেই, শিপন আবার ও অপলক দ্রিষ্টিতে তার হাসি দেখে )
শিপন ঃ চলো সাগরের পার দিয়ে হেটে আসি ……..।।।…।
এই বলে ওরা দুজন হেটে চলে ……।
এভাবে দিন দিন ওরা একে অনেয়র খুব আপন হয়ে উঠে , হাত ধরে সাগরের পারে হাটে , গান সোনায় , সারা রাত গল্প করে …… ২জন ২জনাকে পেয়ে যেন সব সুখ হাতে পেয়ে গেছে ।
এভাবে ৭দিন কেটে যায় । শিপন এখন পুরোপুরি রোদেলার প্রেমে ফেসে গেছে । আর শিপনদের ঢাকা ফিরে যাওয়ার সময় ও হয়ে গেছে , কিন্তু শিপন না গিয়ে ওর বন্ধুদের পাঠিয়ে দেই । আর ও সারাজিবন রোদেলার সাথে এইভাবে থেকে যাওয়ার ডিসিশন নেই ।
রাত ৮টার দিক শিপন সাগরের দিকে তাকিয়ে আছে , এমন সময় রোদেলা এসে বলে ,
রোদেলা ঃ কি তোমার বন্ধুরা সবাই চলে গেল তুমি গেলে না ?
শিপন ঃ আমি আর কখনই যাবো না । আমি তোমার কাছে থাকবো । আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি ।
রোদেলা ঃ তোমার কি মাথা খারাপ । আমি ১টা আত্তা আর তুমি একজন মানুষ । আমরা কোন দিনই এক হতে পারবো না । প্লিজ তুমি ফিরে যাও ।
শিপন ঃ আমি তোমাকে ভালোবাসি , তোমার কাছেই আমার সব সুখ খুজে পেয়েছি আর তাই আমি তোমার কাছে যেভাবেই হোক যাবো …।। তুমি শুধু কাল আমাকে এসে নিয়ে যেও ।
এই বলে শিপন চলে যায় ।
এর পরের দিন সকালে শিপনের লাশ পরে থাকে সেই পুকুরে । সাথে থাকে ১টা চিঠি , যেখানে লেখা থাকে ঃ

“””” আমি শিপন , আমি সেচ্ছায় আত্তহত্ত্যা করেছি । আমি আমার ভালোবাসার রোদেলার কাছে চলে যাচ্ছি …আমরা চলে যাচ্ছি কলংকপুর । যেখানে আমরা থাকবো মহাপ্লয়নের আগ প্রযন্ত …।।
( পুরো গল্পটাই আমার কল্পনা । এর সাথে বাস্তবতার কোন মিল নাই )

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Thank you for your participation .