রবিবার, ২২ জানুয়ারী, ২০১৭

অভিশপ্ত যাত্রা




#অভিশপ্ত_যাত্রা
লেখা : MD Asadur Rahman - Shipon
 

হটাৎ দুপুরের ফোনটা বেজে উঠে । রানা ফোন দিয়েছে ………

দুপুর ঃ হ্যা বল কি হয়েছে ?

রানা ঃ দোস্ত তুই কোথায় ?

দুপুর ঃ আমি সাভার , কেনো ?

রানা ঃ এখনই ঢাকা আয় , সরাসরি শাকিলের বাসায় । খুব ইমারজেন্সি ।

দুপুর ঃ এখন ৫টা বাজে , কাল আসলে হয় না ?

রানা ঃ না ।

দুপুর ঃ ঠিক আছে । আসছি .

রাত ৯টার পরে বাংলামটরে একসাথে হয় রানা আর দুপুর , সেখান থেকে রাত ১০টার দিক শাকিলের বাসায় হাজির । ঐখানে গিয়ে জানতে পারে শাকিল আর দুপুর যে, আজ রাতে রানা ফেনি যাচ্ছে । রানা তার প্রেমিকা নীল এর সাথে দেখা করতে যাবে । ১১টা ৩০ মিনিটে বাস । বাস স্টান্ডে এসে টিকিট কেটে বাসে গিয়ে বসে । দুপুর আর শাকিলও রানার পিছু ধরে। রানার খুব জ্বর তাই ওকে একা ছাড়তে নারাজ। আর ১টা ট্যুর ও হবে। 

দুপুর ঃ দেখছিস শাকিল রানা কি ১টা বোরিং টুরে নিয়ে যাচ্ছে , সারা বাসে ১টা মেয়েও নাই ।
শাকিল ঃ ওই তোর মুখে কি পেত্নী আর মেয়ে ছারা কোন কথা নাই ?

দুপুর ঃ সরি , যা আর কথাই বলবো না 

রানা ঃ চিন্তা করিস না দুপুর , নীল ওর বান্ধবী নিয়ে আসবে ।

দুপুর ঃ সত্যি মামা ?

রানা ঃ হ্যা ।

বাস চলতে থাকে । বাস কুমিল্লা গিয়ে হিসু ব্রেক দেই ২০ মিনিটের । ওরা সবার পরে নামে বাস থেকে । নামার সময় দেখে ওদের সামনে থেকে ১টা মেয়ে নামছে । শাকিল দুপুরকে বলে , মামা তোমার জিনিশ চলে আসছে । যাও পিছু নাও । এই বলে নেমে ফ্রেসরুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে পাসের মিষ্টির দোকানে আসে , সত্যি কথা বলতে ওরা ওই মেয়েটাকে দেখে আসেনি দোকানে । দোকানে গিয়েঃ

শাকিল ঃ কাকা মিষ্টি পিস কতো করে ?

দোকানদার ঃ দাদা পিস বিক্রি হয় না ।

শাকিল ঃ কিন্তু আমরা তো এখানে খাবো , বেশি নিব না ।

দোকানদার ঃ নেন , মালিকের অর্ডার আছে কেউ খাইতে চাইলে ফ্রি দিতে বলছে ।

ওরা ফ্রি মিষ্টি খেয়ে দোকান থেকে বেড়িয়ে সেলফি তুলে । পিছনে মেয়েটিকে দেখে দুপুর বলে ওই ঐ দেখ মেয়েটা । মেয়েটাকে পিছনে রেখে ছবি তুল ।

ছবি তুলে সবার পরে ওরা বাসে উঠে । দুপুরের কেন জানি মেয়েটাকে নিয়ে সন্দেহ হয় । ওদের বললে ওরা বলে নিশ্চয় তোর ওই মেয়েটাকে কোন প্রেতাত্মা মনে হচ্ছে, তাই না ? বলে শাকিল ।

দুপুর ঃ মেয়েটার হাটা টা খেয়াল কর , দেখ আমার কেন জানি মনে হলো মেয়েটা মাটি থেকে কিছুটা উপর দিয়ে হাঁটছে । আত্মারা মাটি থেকে কিছু উপরে হাঁটে , ওরা মাটিতে হাঁটতে পারে না ।

রানা ঃ সব কিছুর ১টা মাত্রা আছে । এখানে তোর প্রেতাত্মা গবেষনাটা প্লিজ বাদ দে ।
ওরা যার যার মত সিটে গিয়ে বসে । পুরো বাস ওরা তিনজন মাতিয়ে রাখে ।

৩টা ৪০ মিনিটে বাস ফেনি পৌছে । ঐখানে প্রথমবার তাই তেমন কিছু চিনে না । স্টারলাইন বাসের কাউন্টারের লোকের কাছে হোটেলের কথা জিজ্ঞাস করলে সে বলে এখন থাকার জন্য একটা হোটেলও পাবেন না। এক কাজ করেন কাউন্টারে কোন রকম বসে থাকার ব্যাবস্থা আছে । ঐখানে গিয়ে বসে কোন রকম রাত টা পার করতে পারেন । উপায় না দেখে ঐখানে থাকার সিদ্ধান্ত নেয় । সেখানে গিয়ে দেখা গেল আরো অনেকে সেখানে আছে । ওরা গিয়ে একপাসে বসলো । শাকিল ব্যাগ থেকে ১টা চিপসের প্যাকেট বের করে দিয়ে বলল

শাকিল ঃ প্যাকেট টা বাসে পাইছি , চল খেয়ে ফেলি ।
রানা ঃ পানির বোতল বের করে বলে আমিও এটা পাইছি ।
দুপুর ঃ ভালোই তো সবই তো ফ্রি পাচ্ছি ।
রানা খেয়াল ওই মেয়েটা এসে পাসে বসল । রানা শাকিল কে বলল মামা দেখ কে । নিজেদের মধ্যে মেয়েটাকে নিয়ে হাসিঠাট্টা করতে লাগলো । এর ভিতর ডিসিশন নিল যে শাকিলের পক্ষ থেকে ওই মেয়েটাকে দুপুর প্রোপজ করবে । এভাবেই ভোর হয়ে গেল । শাকিল এবং দুপুরকে বলাতে রাজি না হওয়ায় রানা নিজেই মেয়েটার কাছে গিয়ে (ততক্ষনে  সবাই চলে গিয়েছে)

রানা ঃ Excuse me আপু আমি ফেনি তে প্রথম এসেছি । ছাগলনাইয়া কিভাবে যবো বলবেন কি ?

মেয়ে ঃ আমি রিয়া । আমি এখানটা ভালো করে চিনি না সো কোন সাহায্য করতে পারছি না ।

রানা ঃ ঠিক আছে ।

ফিরে এসে রানা ওদের বলে শালির বেটি ভাব নিচ্ছে দোস্ত । এদিকে বারবার দুপুর মেয়েটার দিকে তাকাচ্ছে আর মেয়েটাও দুপুরের দিকে তাকাচ্ছে । কিছুক্ষন পর মেয়েটা এসে রানা কে বলে আমি একা এসেছি,  সামনে যাবো, আপনারা চাইলে আমরা একসাথে যেতে পারি । সাথে সাথেই ওরা রাজি হয়ে যায় । মেয়েটাকে পাশাপাশি রেখে হাঁটছে।

রানা ঃ আপনি একা কেঁন এসেছেন ?

রিয়া ঃ আমি আসলে বাসা থেকে পাঁলিয়ে এসেছি ।

রানা ঃ এখন কোথায় যাবেন ?

রিয়া ঃ এখানে আমার বয়ফ্রেন্ড থাকে , আমি ওর কাছেই যাবো। আপনাদের কারো ১টা ফোন দিবেন আমি রাকিব কে কল করবো ।

দুপুর তার ফোনটা এগিয়ে দিয়ে বলে ফোন করেন । কথা শেষ করে ফোনটা ফিরিয়ে দিয়ে দুপুরকে থ্যাংকস জানায় । আর বলে......

রিয়া ঃ রাকিব আসছে । ততোখন কি আমি আপনাদের সাথে থাকতে পারি ?

শাকিল ঃ হ্যা , কেন না । আসুন সকাল হয়েছে আমরা নাস্তা করে নেই ।

এইবলে তারা হোটেলের খোজে হাঁটা শুরু করে । হটাৎ রানার ফোন বেঁজে উঠে , সে কাকে জেন বলে 
-হ্যা দোস্ত আমি আসতেছি । তুই থাক । রানা কাছে বলে, 
রানাঃ দুপুর সালাউদ্দিন ফোন দিয়েছে ও স্টান্ডে দাঁড়িয়ে আছে । চল । 
দুপুর রানার বুদ্ধিটা বুঝতে পারে। সে বলে চল

দুপুর ঃ সরি আপু । আমাদের বন্ধু চলে এসেছে । আমাদের যেতে হবে ।

এই বলে চলে আসে । শাকিলের এসব বুঝতে একটু সময় লাগে। রানা বলে , আমার মেয়েটাকে সুবিধার মনে হচ্ছিল না তাই এই নাটক । দুপুর ওর সাথে এক মত প্রকাশ করে। পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখে মেয়েটি নেই । তখন তার মনে পরে সে না মেয়েটার হাটা লক্ষ করতে চেয়েছিল । যাই হোক আপদ বিদেয় হয়েছে ।

নিলের সাথে রানার কথা হয়েছে নিল ১০;৩০ এ কলেজে আসবে , সেখানেই রানা আর নিল প্রথমবারের মত দেখা করবে। এর মাঝের সময়টুকু ওরা ফেনি শহরের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখে, ছবি তুলে । ফেনি রেলস্টেশনে অনেকক্ষন সময় কাটায় , অনেক ছবি তুলে । হটাৎ দুপুরের চোখে পরে রিয়া মেয়েটার দিকে । দুপুর রানাকে বলে ওই দেখ এখানেও রিয়া । রানা তাকিয়ে দেখে কেউ নেই । দুপুর অবাক হয়ে যায় । সে কি তাহলে ভুল দেখেছে ।

১০;৩০ এ কলেজে পৌছে যায় ওরা , সাথে নিলের জন্য কিছু গিফট নিয়ে নেয় ।

১০;৩৫ মিনিটে নিল আসে , মুখে নেকাব পরা । নিল বলে আমি ১টা ক্লাস করে বের হব । তোমরা তারপর কোথায় যাবে ঠিক কর ।

রান, শাকিল আর দুপুর অনেকের সাথে কথা বলে ঠিক করে যে তৃপ্তি গার্ডেন যাবে। যেই বলা সেই কাজ, নিল ক্লাস শেষ করে আসলে ১টা সি এন জি নিয়ে তারা সেখানে চলে যায় । জায়গাটা আসলেই সুন্দর, তবে ভিতরে ঢোকার পর শাকিল আর রানা বুঝতে পারে যে আসলে এটা মনে হয় প্রেমিক আর প্রেমিকাদের জন্যই । রানা আর নিল কে প্রেম করার সুজোগ করে দিয়ে শাকিল আর দুপুর পুরো বাগান টা ঘুরে আর ছবি তোলে । হটাৎ দুপুর খেয়াল করে রিয়া মেয়েটাক এখানেও আবার । সে এবার রিয়ার পায়ের দিকে খেয়াল করে দেখে পা টা সত্যিই মাটি থেকে একটু উপরে। আর তার পা থেকে রক্ত ঝরছে । সে শাকিল কে বলে শাকিল দেখ রিয়া । শাকিল তাকিয়ে দেখে কেউ নাই । দুপুর দৌড়ে সেখানে যায় , যেখানে রিয়া দাড়িয়ে ছিল । ঐ বাগানের ১টা পুকুরের ধারে দাড়িয়ে ছিল । সেখানে গিয়ে দুপুর উল্টো করা একটা নৌকা দেখতে পায় ।একজন দূর থেকে দুপুর কে বলছে , ঐ মিয়া ওইখান গেছেন কেন ? ঐখানে যাওয়া নিষেধ, চলে আসেন, ঐখানে কি মরতে গেছেন ?

দুপুর কিছু বুঝতে পারল না । হেঁটে চলে আসছে , হটাৎ তার মনে হলো কে জেন তার কাধে হাত রেখেছে । পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখে কেউ নেই , সে এবার ভয় পেয়ে যায় আর শিউর হয় যে কিছু ১টা প্যারানরমাল ঘটনা তার সাথে ঘটছে । সে শাকিলকে কিছু বলে না । রানা আর নীল ফিরে এলে তারা ৪জন একসাথে বসে ফুসকা খায় আর গল্পে মেতে উঠে । নীল মেয়েটা সত্যিই অনেক সুন্দর । দুপুর আবার রিয়া কে ওই পুকুরের পাশে দেখলো ।

দুপুর ঃ শাকিল চল আমরা সামনে থেকে হেঁটে আসি । ওরা আরেকটু একটু প্রেম করে নিক ।

নীল ঃ আরে না , থাকো তোমরা । একসাথে গল্প করি ।

শাকিল ঃ হইছে হইছে আর ভাব ধরতে হবে না ।

এই বলে দুপুর পুকুরের কাছে এগুতে থাকে আর শাকিল পিছনে পিছনে । পুকুরের কাছে গিয়ে দুপুর অবাক , নৌকাটা একটু আগে উল্টোনো ছিল । দুপুর আস্তে করে পুকুরের পারে নামে পিছন থেকে শাকিল বলে ঐ কই যাচ্ছিস দুপুর ?

দুপুর ঃ আরে অনেকদিন পুকুরের পানিতে মুখ ধোয়া হয় না তাই ।

শাকিল ঃ দাড়া আমিও আসছি ।

দুপুরঃ আয় ।

দুপুর পানি নিয়ে মুখে দিয়ে মুখ ধোয়, দেখে হাতে রক্ত । মাথা তুলে তাকিয়ে দেখে নৌকাটা আবার উল্টানো । দুপুরের পিছন দিকে রিয়া দৌড় দেয় । দুপুর পিছনে দৌড় দেয় । কিছুদুর যাওয়ার পর দেখে রিয়া নেই। হটাৎ শাকিলের চিৎকারে দুপুর আবার পুকুরের পারে ফিরে আসে,  এসে দেখে শাকিল পানিটে হাবুডুবু খাচ্ছে । শাকিল তো সাতার জানে ভালো । কথা না বাড়িয়ে দুপুর তার ব্যাগ থেকে মাদবর দাদার দেওয়া তাবিজ টা বের করে পানিতে লাফ দিয়ে শাকিলকে ধরে উপরে উঠানোর চেষ্টা করে কিন্তু কে জেনো নিচ থেকে পা টেনে ধরে । দুপুর যে হাতে তাবিজ ধরা ছিল সে হাতটা পায়ের কাছে আনতেই সে হাল্কা মনে করে । শাকিলকে উপরে তুলে আনে । এতোখনে অনেক মানুষ জড়ো হয়ে গেছে । রানা আর নীল ও এসেছে ।

রানা ঃ কি হয়ছে সাকিল ?

দুপুর ঃ এখান থেকে আমাদের যত তারাতারি সম্ভব যেতে হবে ।

শাকিল ঃ হ্যা । আমি আর এখানে একটুও থাকবো না ।

দুপুর আর শাকিল ফ্রেসরুমে গিয়ে কাপর চেঞ্জ করে । ফ্রেস রুমে গিয়ে দুপুর খেয়াল করে তার ২পায়ের গোড়ালির ঐখানে গোল করে কেটে গেছে আর রক্ত পরছে , যেমনটা সে রিয়ার পায়ে দেখেছিল ।

একটা সি,এন,জি ভাড়া করে তারা ফেনি সরকারি কলেজের সামনে আসে ।সি,এন,জি থেকে নেমে ওরা হাঁটা ধরে । দুপুর পিছনের দিকে তাকিয়ে দেখে শাকিল সি,এন,জির পিছনে দৌড়াচ্ছে , কোনকিছু না ভেবে দুপুরও শাকিলের পিছনে দৌড় দেয় । অনেক দূর গিয়ে শাকিলের কাছে আসে দুপুর

দুপুর ঃ কি হয়েছে ?

শিকিল ঃ সি,এন,জি তে আমার ব্যাগ রেখে আসছি , যেভাবেই হোক ব্যাগটা আমাকে পেতে হবে ।

এই বলে শাকিল আর দুপুর সি,এন,জি আর সি,এন,জি স্টান্ড গুলোতে খুজতে থাকে । রানাকে ফোন করে সব বলে , রানাও খুজতে থাকে । কিছুক্ষন পর তিনজন তিনদিকে খুজতে যায় ।

শাকিল দুপুর কে ফোন দিয়ে বলে

শাকিল ঃ দুপুর ব্যাগ পাওয়া গেছে , আমি টেকনিকাল কলেজ গেটে আছি । তুই আয় ।

দুপুর ঃ আসছি ।

টেকনিকাল কলেজ গেটে তিনজন আসে , শাকিল অলরেডি ব্যাগটা নিয়ে নিয়েছে ।

দুপুর ঃ কিভাবে খোজ পেলি শাকিল ?

শাকিল ঃ আর বলিস না, রিয়া খোজটা দিল । তৃপ্তির সামনে যখন ব্যাগের খোজ করছিলাম তখন ও কোথা থেকে হটাৎ এসে বলে শাকিল তোমার ব্যাগটা টেকনিকাল কলেজ গেটে ১টা সি,এন,জি ড্রাইভার নিয়ে বসে আছে , তোমাকে খুজছে ।

দুপুর ঃ তুই ওকে জিজ্ঞেস করিস নি যে ও কিভাবে জানলো ?

রানা ঃ আজিব ব্যাপার তো, আমাকেও তো রিয়া বলল । আমি সরকারি কলেজের সামনে দাড়িয়ে ছিলাম । এসে বলল শাকিলকে দেখলাম টেকনিকাল কলেজ গেটে দাড়িয়ে আছে । হাতে ১টা ব্যাগ । তারপর আমি শাকিলকে ফোন দিয়েছি ।

শাকিল ঃ জানিস দুপুর ও যখন চলে যাচ্ছিল তখন ওর পায়ে দেখলাম কাটা দাগ , রক্তও পরছে ।

দুপুর ঃ দেখতো (নিজের পা এগিয়ে দিয়ে) কাটা দাগ ২টা কি এমন নাকি ?

শাকিল ঃ আল্লাহ !!!! (অবাক হয়ে) এটা কিভাবে সম্ভব ?

দুপুর ঃ আমার মনে হয় রিয়া মেয়েটা ১টা প্রেতাত্না । তৃপ্তিতে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা গুলোও ওর ঘটনা । যত তারাতারি সম্ভব আমাদের ফেনি ছাড়তে হবে ।

রানা ঃ হ্যা । আমিও খেয়াল করেছি রিয়া মাটি থেকে একটু উঁচু দিয়েই হাঁটে । দুপুরের কথাটা মনে ছিল আমার, তাই খেয়াল করে দেখেছি । আমার মনে হয় এখনি আমাদের চলে যাওয়া উচিত ।

দুপুর ঃ হ্যা চল ।

সন্ধ্যার ৬টার বাসে উঠে ওরা । বাস কুমিল্লা আসার আগে ২টা বড় আক্সিডেন্ট থেকে বেঁচে যায় । কেনো জানি ওদের মনে হলো এগুলা রিয়াই করাচ্ছে । কিন্তু কেনো মেয়েটা ওদের সাথে এমন করছে ?

কুমিল্লা এসে দুপুরের পাসের সিটের লোকটা নেমে গেল। দুপুরের দুচোখ ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছে ।

বাসটা হটাৎ খুব ঝাকি খেয়ে উঠে । দুপুরের ঘুম ভেঙ্গে যায় । পাশে তাঁকিয়ে দুপুরের মেরুদন্ডের শিরে যেন শীতল ঘাম বেঁয়ে যায় । চিৎকার করতে যাবে এমন সময় রিয়া তার মুখে হাত দিয়ে চেপে ধরে ।

রিয়া ঃ প্লিজ চিৎকার করবে না । আমি তোমার কোন ক্ষতি করবো না । তোমাকে কিছু কথা বলবো আমি ।

(দুপুর নিজের হাত দিয়ে রিয়ার হাত সরিয়ে)

দুপুর ঃ তুমি আসলে কে ? কি চাও ?

রিয়া ঃ আমার নাম রিয়া । আমাকে প্রায় ১ বছর আগে মেরে ফেলা হয়েছে । তুমি এখন আমার আত্মার সাথে কথা বলছো ।

দুপুর ঃ (ভীত কন্ঠে) কি ? তুমি আত্মা ? কিভাবে কি হয়েছে ? আর আমরা তোমাকে কি করেছি যে আমাদের ক্ষতি করতে চাইছো তুমি ?

রিয়া ঃ একটা একটা করে প্রশ্ন করো , গলা আটকে যাবে তো (হাসতে হাসতে) ।

দুপুর ঃ ভুতরা আবার হাসতে জানে ? তাও আবার এত সুন্দর হাসি ?

রিয়া ঃ হাহাহাহাহাহাহাহা(হেসে উঠে) । কেনো ভুতদের কি হাসতে মানা ?

দুপুর ঃ হইছে । এখন আমার প্রশ্নের উত্তর দাও ?

রিয়া । তোমাদের না শুধু , আমি তোমাদের বয়সের সব ছেলেদেরই মারতে চাই । আর তোমার কত বড় সাহষ তুমি ওই নৌকার সামনে যাও । ঐখানেই আমাকে রাকিব মেরে রেখে গেছে ।

দুপুর ঃ খুলে বলতো সব আমাকে ।

রিয়া ঃ আমার বাড়ি ঢাকার মুগদা । আর রাকিবের বাড়ী ফেনি । আমাদের ফেসবুকে রিলেশন হয় । একদিন আমি বাসায় ঝগড়া করে বেড়িয়ে আসি । চলে আসি রাকিবের কাছে। রাকিব আমাকে ওর এক বন্ধুর বাসায় রাখে ৩দিন । আমি বার বার ওকে বিয়ের কথা বললে ও এরিয়ে যায় । আমরা ৩ দিন ১ঘরে ছিলাম । (কেঁদে কেঁদে) পরেরদিন রাতে রাকিব ওর আরো ২টা বন্ধুকে নিয়ে এসে আমাকে ………………… ।

দুপুর ঃ প্লিজ কাঁদবে না ।

রিয়া ঃ তারপর আমাকে বালিস চাপা দিয়ে মেরে ফেলে । আর লাশ রাতের অন্ধকারে ওই পুকুরের ভিতর বস্তায় ভরে ফেলে দেয় আর নৌকা উল্টিয়ে চাপা দিয়ে রাখে । তারপর থেকেই আমার অতৃপ্ত আত্মা ঘুরে বেড়ায় সারা শহর জুড়ে । খুজে ফিরি মুক্তির অপেক্ষায় আর রাকিবের বয়সের ছেলেদের উপর সুজোগ পেলে প্রতিশোধের জ্বালা মেটানোর চেষ্টা করি ।

দুপুর ঃ কিভাবে তোমার মুক্তি হবে ?

রিয়া ঃ কেউ গিয়ে আমার জন্য জানাজা পরলেই আমি মুক্তি পাবো । তুমি আমাকে সাহায্য করবে ?

দুপুর ঃ আগে বলো , দেখি করতে পারি নাকি ।

রিয়া ঃ মুগদা ১৭/৩ বাড়ির ৪তালা আমার বাবা মা কে খবর দিবে যে আমি মারা গেছি আর তাদের বলবে আমার জন্য ১টা গায়েবানা জানাজা পড়িয়ে দিতে । আমার বাবার নাম আবুল কালাম আর মা জান্নাতুন নেসা । পারবে না তুমি ?

দুপুর ঃ (একটু ভেবে ) হ্যা পারব ।

রিয়া দুপুরের কাছ থেকে বিদায় নেয় । রাত ১১টার দিক দুপুর , শাকিল আর রানা ঢাকায় পৌছে । তারপর যার যার বাসায় ফিরে যায় । পরেরদিন বিকেলে দুপুর মুগদা যায় । কিন্তু ওই বাড়িতে এখন আর রিয়ার বাবা মা থাকে না । কোথায় থাকে কেউ জানে না ।

দুপুর ব্যাপারটা শাকিল আর রানার সাথে শেয়ার করে । তারা সিদ্ধান্ত নেই যে তারা রিয়ার জন্য গায়েবানা জানাজার ব্যাবস্থা করবে । আগামি ২৯ তারিখ শুক্রবার মালিবাগ মসজিদে রিয়ার গায়েবানা জানাজা হবে । ইনশাআল্লাহ তারপর রিয়ার অতৃপ্ত আত্তা মুক্তি পাবে সেই অপেক্ষায় আছে দুপুর , রানা আর শাকিল ।

( পুরো গল্পটিই কাল্পনিক, বাস্তবতার সাথে এর কোন মিল নেই)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Thank you for your participation .